একশ্রাবণমেঘের_দিনে
neela_rahman
পর্ব ৬
সবাই নিচে রেডি হয়ে বসে আছে । শহীদুল খান ও সাজ্জাদ খান চলে গেছেন অফিসে।শ্রাবণ এখন উপর থেকে নিচে নামেনি । তানিয়া মাত্র রুম থেকে বের হয়ে দেখল লামিয়া এবং সিয়াম রেডি হয়ে বসে আছে ।রাফি খুব টিপটপ হয়ে এসেছে এই প্রথম মেঘলার সাথে কোথাও বাইরে বের হবে ।এতদিন তো বড়রা কেউ ছিলনা তাই মেঘলা সাথে বাইরে কোথাও যেতে পারিনি।
সিয়াম আড় চোখে তাকাল লামিয়ার দিকে ।লামিয়া আজকে একটু সাজুগুজু করেছে আর শাড়ি ও পড়েছে ।সুন্দর লাগছে অনেক লামিয়াকে কিন্তু সিয়াম মুখ ফুটে কিছুই বলল না ।চুপচাপ বসে রইল।
শ্রাবণ ধীরে ধীরে নিজের রুম থেকে বের হল ।বের হয়ে দরজা চাপাতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলো মেঘলা নিজের রুম থেকে বের হল ।একদম সিম্পল যেন ঘরের ভিতরেই জাস্ট একটু পরিপাটি করে কোথাও যাচ্ছে এই অবস্থা ।কিন্তু অদ্ভুত লাগছে মেঘলা কে ।চুল পরিপাটি করে সুন্দর করে ছেড়ে রেখেছে কোমর সমান চুলগুলো। কোমর ছাপিয়ে আরো নিচে পড়েছে ।কপালটা ঢেকে আছে কিছু বেবি হেয়ার দিয়ে।কপাল ঢেকে যাচ্ছে চুল দিয়ে একটু পর পর কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছে গুজে দিচ্ছে মেঘলা কিন্তু আবার ঝরঝরিয়ে পড়ে যাচ্ছে চুলগুলো ।হঠাৎ করে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলল শ্রাবণ ।এত খুঁটিয়ে খুটিয়ে কেন দেখছিল মেঘলা কে জানো না। মেঘলা দেখল শ্রাবণ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ শ্রাবণের সামনে দিয়ে হেঁটে একটু একটু করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল মেঘলা ।শ্রাবনের সাথে কোন কথাই বলল না।
শ্রাবণ তাকিয়ে থেকে শুধু মেঘলার নিচে যাওয়া দেখল ।নিজেও ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো ।এসে রাফির উদ্দেশ্যে বললো,” কিরে সবাই রেডি ?তাহলে চলো বের হওয়া যাক ।”
এমন সময় আসমা বেগম বললেন,” সাবিহা শরীরটা ভালো না তাই তোরা যা আমি আর একা যাব না।”
সবাই উঠে দাঁড়ালো যাওয়ার জন্য ।তানিয়া এসে সাদাফ তানিয়া এসে শ্রাবণের পাশে দাঁড়ালো ।মেঘলা কে ঘিরে দাঁড়ালো রাফি। সিয়াম ও লামিয়া উঠে দাড়িয়ে বললো,” ঠিক আছে তাহলে চলো যাই ।”
সমস্যা হলো গাড়িতে। গাড়িতে ছয়জনে জাগা হবে না তাই রাফি বলে উঠলো ,”তাহলে আমরা রিক্সা দিয়ে ঘুরবো আজকে পুরো ঢাকা শহর ।দুপুরে লাঞ্চ করব ।করে বিকালের সময় আমরা একটু ঘুরে টুরে সন্ধ্যায় মুভি দেখে চটপটি ফুচকা খেয়ে তারপর বাসায় আসবো।”
শ্রাবণ রাফির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,” তুই আবার মেয়েদের মত কবে থেকে চটপটি ফুচকা খাওয়া পছন্দ করিস ?”
রাফি লাজুক হেসে বললো,” আমি না মেঘলার খুব পছন্দ ।ঢাকায় আসার পর মেঘলা একদিন বাইরে চটপটি ফুচকা খেতে যেতে পারেনি ।তাই আজকে ওকে আমি চটপটি ফুচকা খাওয়াবো।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে তাকালো রাফির দিকে ।তারপর বললো,”তুই খাওয়াবি? কতো টাকা আছে পকেটে দেখি ডাম্বেল?”
রাফি বললো,” ওই একই।তুমি আর আমি তো একই।তোমার সব কিছুই তো আমার?”
শ্রাবণ বললো,” ঠিক আছে চল ।রিকশা ডাকতে হবে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ বললো,” সিয়াম রিক্সা ডাকত।”
সিয়াম এদিক ওদিক খুজে তিনটি রিকশা ডেকে নিয়ে আসলো। রাফি সাথে সাথে মেঘলার হাত ধরে বললো,” আমি আর মেঘলা একসাথে রিকশায় বসবো ।”
এদিকে তানিয়া বলে বসলো তাহলে আমি আর শ্রাবণ বসছি ।
মাঝখান দিয়ে চুপ রইলো সিয়াম আর লামিয়া ।বাধ্য হয়ে সিয়াম আর লামিয়া এক রিক্সায় উঠলো।
শ্রাবনের কেমন অদ্ভুত লাগছে তানিয়া সাথে এক রিকশায় বসতে ।তবে আর চোখে আর চোখে একটু পরপর পিছনে তাকিয়ে দেখছে মেঘলা ও রাফি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে রিকশায়। শ্রাবণ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ওদের দিকে।শ্রাবণ মনে মনে ভাবলো ,”এই ছোট বাচ্চার সাথে আরেক বাচ্চার কি এমন কথা থাকতে পারে হেসে হেসে কথা বলছে দুজন?”
শ্রাবণ আবারও সামনের দিকে তাকালো ।তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইল ।এদিকে তানিয়ার ভালো লাগছে রিক্সায় একটু ক্লোজ হয়ে কাছাকাছি বসতে পেরেছে তাই।গাড়িতে তো অনেক দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হয়। এদিকে বারবার একটু পর পর ঝাকিতে কাছাকাছি হলেও শ্রাবণ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে একদম রিকশায় সাইড হয়ে বসছে যেন গায়ে না লাগে।
ব্যাপারটা ভালো লাগছে না তানিয়ার বিরক্ত লাগছে ।রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে একটি আইসক্রিম পার্লারের কাছে এসে রাফি বললো ভাইয়া আইসক্রিম খাব।
শ্রাবণ সিয়ামকে নিয়ে সাথে করে গেল নিয়ে রাস্তার ওপারে ।গিয়ে অনেক কতগুলো আইসক্রিম নিয়ে এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করল কার কোন ফ্লেভারের পছন্দ ?
লামিয়া ম্যাংগো ফ্লেভার আইসক্রিম নিলো সিয়াম নিলো চকলেট ফ্লেভারের । বাকি রইল দুটি স্ট্রবেরি এবং দুটো চকলেট ।শ্রাবণ রাফির দিকে তাকিয়ে বললো,” কোন ফ্লেভার খাবি?”
রাফি বললো ,”আমাকে স্ট্রবেরি দাও।”
শ্রাবণ চোখ সরু করে তাকালো রাফির দিকে । বললো,” তোর না চকলেট ফ্লেভারে পছন্দ তাই তো নিয়ে এলাম ।”
রাফি লাজুক হেসে বললো,” মেঘলার স্ট্রবেরি ফ্লেভার পছন্দ তাই আমিও এখন থেকে স্ট্রবেরি ফ্লেভার খাবো।”
শ্রাবণের কথাটা বিরক্ত লাগলো শুনতে ।তাই একটি স্ট্রবেরি ফ্লেভার মেঘলার হাতে দিল ।মেঘলা চোখ তুলে তাকাল শ্রাবণের দিকে ।এক মুহূর্ত যেন চোখাচোখি হল শ্রাবণের সাথে।হাত থেকে স্ট্রবেরি ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে খুলতে লাগল মেঘলা ।এদিকে শ্রাবণ সাথে সাথে দুটো আইসক্রিম রাফির হাতে দিয়ে বললো,” এক মিনিট দাড়া।”
রাফিক কিছু বুঝে উঠতে পারলো না ।সাথে সাথে শ্রাবণ স্ট্রবেরি ফ্লেভার আইসক্রিমটা খুলে মুখ দিয়ে বললো,” হ্যাঁ নাইস ফ্লেভারটা খারাপ না।”
রাফি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে বললো,”এ কি করলে ভাইয়া ?তুমি এটা খেলে কেন ?এটা তো আমি খাব?”
শ্রাবণ বললো ,”ও সরি ভুল হয়ে গেছে ।আমি ভাবলাম তোর পছন্দ তাহলে একটু টেস্ট করে দেখি আমার ছোট ভাইয়ের পছন্দ কেমন ?আর সমস্যা কি দুইটা চকলেট ফ্লেভার আছে তোর পছন্দের তুই দুইটা আইসক্রিম খা।”
বলেই রাফির চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে একটু সামনে এগিয়ে গেল শ্রাবণ ।এদিকে মেঘলা দিকে হতাশ নয়নে তাকিয়ে রইল রাফি। মেঘলা সাথে ম্যাচিং করে খেতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না থাক কোন সমস্যা নেই ।সামনে সবকিছু মেঘনার পছন্দের করবে।
বাহিরে একটু ঘুরাঘুরি করে হয়ে গেল দুপুরে লাঞ্চ টাইম ।বসুন্ধরায় ফুড কর্নারে বসে আছে সবাই ।সবার পছন্দের মেনু সিলেক্ট করে অর্ডার করবে শ্রাবণ তাই সবাইকে দেখাচ্ছে।
সবার সবার মত পছন্দের খাবার নাম্বার সহ চয়েজ করে বলে দিল ।মেঘলা টার্ন আসতেই শ্রাবণ নিজের পছন্দ অনুযায়ী দুটি অর্ডার করে দিয়ে বললো,” এটাই দুইটা অর্ডার করছি সমস্যা নেই খেতে ভালো ট্রাই করে দেখ।”
মেঘলা অবাক হয়ে গেল সবাইকে সুযোগ দিল চুজ করার কিন্তু মেঘলাকে কোন সুযোগ দিল না ।নিজেই চয়েস করে বলল ,”এটা ভালো ট্রাই করে দেখ ।”
মেঘলা চুপচাপ বসে রইল কোন কথা বলতে চায় না ।পরিবেশ নষ্ট করতে চায় না।
তবে মনে মনে ভাবলো ,”বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিল তার মানে কি এই মেঘলা কে খাবার চয়েজের সুযোগও দিবেনা ।নিজে নিজে সব দায়িত্ব পালন করে ফেলবে?”
টেবিলের খাবার সার্ভ করা হলো ।সবার খাবার একেকজনের একেক রকম কিন্তু মেঘলা এবং শ্রাবণের খাবার এক রকম এবং একটি মেনু হওয়ায় একসাথে সার্ভ করা হলো।
কোয়ানটিটি এবং সবকিছু মিলিয়ে একসাথে সার্ভ করার কারণে সমস্যায় পড়ে গেল শ্রাবণ ।মেঘলা দিকে তাকিয়ে বললো,” তাহলে তুই চেয়ারটা নিয়ে একটু এদিকে এগিয়ে আয় এত দূর থেকে খেতে পারবি না।”
কেউ কোন কিছু মনে না করলেও তানিয়া বিষয়টি ভালো লাগছেনা ।এক প্লেটে কেন খাবে ?তাই মুখ ফুটে বলে ফেললো,” ওকে আলাদা একটা প্লেটে দিলেই তো হয়।”
মেঘলা ও বললো,” ঠিক আছে ভাইয়া আমাকে আরেকটা আলাদা প্লেটের করে দিন আমি আলাদাই খাচ্ছি।”
শ্রাবণ আর কিছু না ভেবে পড়ে ওয়েটার কে ডেকে আলাদা একটা প্লেট দিতে বলল । বললো,” আলাদা সারভিং ডিশ দেওয়ার জন্য যাতে আলাদা সার্ভ করতে পারে।”
সবাই ধীরে ধীরে খাওয়া শেষ করল ।খাওয়া শেষ করে সবাই বসুন্ধরা সিটি মলের ই কিছু কিছু শপ ঘুরে দেখতে লাগলো ।মুভির যে টিকিট কেটেছে সেটি সন্ধ্যা আটটা থেকে ।এখনো হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে তাই এই সময় বাইরে যাবে না সবগুলো শপ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে ।তানিয়ায় নিজের কাছে অনেক টাকা আছে তাই নিজে ঘুরে ঘুরে শপিং করতে লাগলো ।এদিকে লামিয়া এবং রাফি নিজেরা পছন্দ করছে জানে ভাইয়া আছে প্রয়োজন হলে টাকা দিবে ।রাফি জানে শপিং করতে বললে করবে না মেঘলা তাই মেঘলার জন্য নিজে কিছু কিনবে। মেঘলা বলেছিলো গিফ্ট কেনার সময় তাকে ভেবেই কিনতে হয়।
চুপচাপ একটি শপের কাছে দাঁড়িয়ে রইল মেঘলা। সিয়াম এই সিচুয়েশন এরাতে একটু নিচে গিয়েছে ।বাবার কাছে ফোন করে কিছু টাকা চেয়েছিল সেই টাকায় বিকাশে পাঠিয়েছে ।বিকাশে থেকে টাকা তোলার জন্য নিচে গিয়েছে আর যেহেতু মেঘলা এর আগে পরে কখনো ঢাকায় এসে বসুন্ধরা থেকে শপিং করেনি তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।
রেলিঙের কাছে দাঁড়িয়ে বিষয়টি খেয়াল করল শ্রাবণ ।দুদিনের করা ব্যবহারে মেঘলা কষ্ট পেয়েছে তাই এগিয়ে গিয়ে মেঘলা সামনে গিয়ে বললো,” তুই কেনো সব ঘুরে দেখছিস না ?তোর কি কিছু পছন্দ হচ্ছে না কেনার জন্য?”
মেঘলা সাথে সাথে উত্তর দিল ,”আমি কিছু দেখিনি ।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে জানতে চাইলে কেন?
মেঘলা বললো,” আমার এখন কিছু প্রয়োজন নেই আর অপ্রয়োজনে আমি শপিং করি না ।আর তাছাড়া আমি টাকা নিয়ে আসিনি ।”
শ্রাবণ বললো,” তো টাকা নিয়ে আসতে হবে কেন ?আমি তো টাকা নিয়ে এসেছি ।লামিয়া কিনছে রাফি কিনছে তুই কিনলে সমস্যা কি? “
মেঘলা বললো,” এমনি কোন সমস্যা নেই ।আমি নিজের টাকা শপিং করতে পছন্দ করি বাবা দিলে তবেই করি।”
শ্রাবণ বললো,” তো আমার টাকা কি বাইরের টাকা ? আমার টাকা কি তোর টাকা না ?”
মেঘলা সাথে সাথে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল ,”না ।আপনার টাকা আমার টাকা না।”
শ্রাবণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে।
চলবে__
একশ্রাবণমেঘের_দিনে
neela_rahman
পর্ব ৭
শ্রাবণ রাগে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে ।এই পুচকি মেয়ের সাথে যতই সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে বড় ভাই হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু না ,এই মেয়ের আত্মসম্মান এই মেয়ের ইগো কোন ভাবে দুজনের মধ্যে থেকে সরছে না যেন বড় একটি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মনে মনে ভাবল ,”যদি সবকিছু ঠিকঠাক খাকতো বা সেই সম্পর্ক মেনে নিত তাহলে তো অবশ্যই ওর টাকার উপর সবার আগে মেঘলার অধিকার থাকতো ।অথচ কি অবলীলায় বলে দিল শ্রাবণের টাকায় ওর কোন অধিকার নেই। শ্রাবণের টাকা মেঘলার টাকা না।”
এমন সময় রাফি দৌড়ে দোকান থেকে বের হয়ে এলো হাতে একটি পুতুল নিয়ে ।পুতুলটি এনে মেঘলার কোলে দিয়ে বলল ,”এই নাও তোমার পুতুল আমি তোমাকে গিফট করলাম।”
মেঘলা কোলের পুতুলটি দেখে মুচকি হাসলো ।পছন্দ হয়েছে মেঘলার ।রাফি সাথে সাথে মেঘলা হাসি দেখেই লজ্জা পেয়ে গেল ।তারপর তাকালো শ্রাবণের দিকে।
শ্রাবণ জানে কেন তাকিয়েছে কিন্তু শ্রাবণ এখানে আর কিছুই বলল না রাফি কে।এখানে যদি রাফিকে টাকা নিয়ে খোঁচা দেয় তাহলে হয়তো মেঘলা গিফটটা নিবে না ।তাই চুপচাপ শ্রাবণ চলে গেলো।গিয়ে দোকানে বিল মিটিয়ে দিলো।
দোকান থেকে বের হওয়ার সময় শ্রাবণের চোখ আটকে গেল একটি পুতুলের দিকে ।পুতুলটি দেখে মনে পড়ে গেল মেঘলার সেই ছোট্টবেলার বলা কথাটি ।মেঘলা বলেছিলো,”যে পুতুল কথা বলতে পারে এমন একটি পুতুল নিয়ে এসো।”
শ্রাবণ কি মনে করে জানো পুতুলটি হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো ।আবারো মনে পড়লো যখন মানুষ কেউ কারো জন্য উপহার কিনতে চায় তাকে চিন্তা করে অনুভব করে সেই অনুভবটাই মূল্যবান গিফট কিছুই নয়।
শ্রাবণ অনুভব করলো মেঘলা ছোট্টবেলা চেয়েছিলে একটা পুতুল ।কথা বলা পুতুল ।কত সহজ আবদার ছিল ।একটি পুতুল হলেই হয়ে যেত।একটি লিপস্টিক একটি আলতা একটি শাড়ি একটি কাজল কত সহজ ভাবে সাবলীল ভাবে আবদার করেছিল বিয়ের জন্য ।শুধু এতোটুকুই চাওয়া পাওয়া ছিল অথচ বড় হয়ে এতটা ইগোয়েস্টিক হয়েছে চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকেও কিছু নিতে রাজি নয়।
সপের সেলসম্যান এসে জানালো ,”পুতুলটি আপনি যা শিখিয়ে দিবেন তাই বলবে ।ট্রাই করে দেখতে পারেন।”
শ্রাবণ ট্রাই করার জন্য বললো,” আমার বেশি আত্মসম্মান আমার বেশি ইগো ।”
পুতুল টি সাথে সাথে রিপ্লাই দিলো ,”আমার বেশি আত্মসম্মান আমার বেশি ইগো।”
শ্রাবণ মুচকি হেসে দিল ।তারপর সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে বললো,” এটিও প্যাক করে দিন।”
প্যাক করে দেওয়ার সাথে সাথে শ্রাবণ প্যাকেটটি নিয়ে বের হলো দোকান থেকে ।কিন্তু কাউকে কিছু বলল না এই মুহূর্তে বললে এই ঘাড় তারা মেয়ে এই ছোট্ট উপহারটি নিবে না ।তাই নিজের হাতে নিয়ে চুপচাপ এসে দেখলো তানিয়া ও এসেছে ।লামিয়াও এসেছে নিচে থেকে সিয়াম ও টাকা নিয়ে চলে এসেছে।
সিয়াম উপরে এসেই মেঘলা কে বললো,” কিছু কিনবি চল ?তোকে সপে নিয়ে যাই ।”
বলার সাথে সাথেই মেঘলা সিয়ামের হাতে ধরে এ দোকান ওই দোকান ঘুরতে লাগলো ।ব্যাপারটা খুব ইগোতে লাগলো শ্রাবণের ।কি হতো যদি ওর কাছ থেকে টাকা চাইতো বা ও এতবার বলার পর টাকাটা নিতো ।একটু বেশি আত্মসম্মান দেখাচ্ছে মেয়েটা মনে মনে ভাবলো শ্রাবণ।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ চলে গেল নিচে রাফির দিকে ।রাফি এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে ।মুখে মুচকি হাসি ।শ্রাবণ বললো,” হাসছিস কেন?”
রাফি বললো ,”এই প্রথম আমি মেঘলাকে কোন গিফট করতে পেরেছি ।মেঘলার মুখের হাসি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
শ্রাবণ রাফির দিকে তাকিয়ে বললো,” তাই ?তুই গিট করেছিস ?কয় টাকা নিয়ে এসেছিস পকেটে ?কয় টাকা আছে তোর ?কিনে দিলাম আমি আর গিফট দেওয়ার মালিক তুই হয়ে গেলি?”
রাফি শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,” ঠিক আছে যাও বাবার কাছ থেকে এই পুতুলটি টাকা তোমাকে নিয়ে দিব ।আর টাকাই সবকিছু না বুঝলে?গিফট কেনার সময় আমি ওর কথা চিন্তা করেছি হেসেছি অনুভব করেছি ওকে ।এটাই সবথেকে বেশি ম্যাটার করে ।বুঝছো ?”বলেই মেঘলার পিছনে ছুটলো রাফি।
শ্রাবণ জানে এই কথাগুলো মেঘলার শিখানো ।মেঘলার কথাগুলোই উগরে দিল রাফি।কারণ শ্রাবণ শুনেছিল মেঘলা ও রাফির কথাগুলো।
মুভি শুরু হতে আর সময় মাত্র বাকি বিশ মিনিট ।সবাই তাড়াহুড়া করে যাচ্ছে থিয়েটারের দিকে ।হঠাৎ আহ শব্দে পিছনে ঘুরে তাকালো সবাই ।দেখলে মেঘলা পায়ে হাত দিয়ে নিচে বসে আছে ।চলন্ত সিঁড়িতে ছিল রাফি এবং তানিয়া লামিয়া।সিয়াম কোল্ড কফি এবং কিছু স্নাক্স নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে।রাফি দেখামাত্র উল্টো পথে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবেই রাস্তা ফুরাচ্ছে না।
এদিকে সবার আগে শ্রাবণ উপরে থাকায় দেখা মাত্রই অন্য সিঁড়ি দিয়ে সাথে সাথে নেমে গেলো। শ্রাবণ দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করল ,”কি হয়েছে ?”
শ্রাবণের কথায় কোন উত্তর না দিয়ে তাকালো শ্রাবণের দিকে ।তাকিয়ে আবার নিজের পা ডলতে লাগলো। ভিষন ব্যাথা পেয়েছে পায়ে মেঘলা।
এমন সময় নিচে নেমে এলো রাফি ।উপর থেকে দেখছে তানিয়া ও লামিয়া।
রাফি মেঘলার সেই পায়ে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো কি হয়েছে ।রাফির ভীষণ মন খারাপ যেন আরেকটু হলে কান্না করে দিবে ।শ্রাবণ তাকিয়ে রইল রাফির দিকে ।না কোন ভাবে এই ছেলের অনুভূতি বুঝতে পারছে না শ্রাবণ।কথায় কথায় এত আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে যে মেঘলা হাসলে হাসছে মেঘলা কাঁদলে কাঁদছে। মেঘলা ব্যথা পেলে তার অনুভূতি যেন রাফির হচ্ছে।
রাফি মেঘলাকে ধরে উঠানোর চেষ্টা করছে ।এদিকে রাফি তুলতে পারছে না মেঘলা কে।মেঘলা ও কোন ভাবে উঠতে পারছিল না ।তাই শ্রাবণ চট করেই মেঘলাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল ।হাঁটা শুরু করল সিড়ির দিকে।রাফি বললো,” এটা কি করলে ভাইয়া ?তুমি ওকে কোলে তুলে নিলে কেন ?ওকে তো আমি কোলে করে নিয়ে যাব।”
শ্রাবণ একটু ঘাড় কাত করে তাকালো রাফির দিকে ।দেখল ছোট্ট একটি টিং টিং শরীরের বাচ্চা ।ও নাকি কোলে করে নিবে মেঘলা কে ! তারপর বললো,” বড় হ বড় হয়ে নিস। তোর হয়ে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব আমি পালন করে দিচ্ছি।”
এদিকে মেঘলা ব্যথা এবং লজ্জায় কুকুরে রইলো শ্রাবণের বুকে।দুই হাত দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে আছে শ্রাবণের ।শ্রাবণ এই প্রথম জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে এত ঘনিষ্ঠ ভাবে নিজের সাথে মিশতে দিয়েছে ।বুকে করে আগলে নিয়ে চলন্ত সিঁড়িতে উঠল শ্রাবণ।
পিছনে হা হয়ে তাকিয়ে রইল রাফি।উপর থেকে জ্বলন্ত দুটি চোখ তাকিয়ে রইল শ্রাবণ এবং মেঘলার দিকে ।যেন আরেকটু হলে ঝলসে দিবে দুজনকে।
তানিয়া তো কখনো হাতও ধরে না ধরবে কি তানিয়া ধরতে চাইলেও কখনো শরীরের সাথে ঘেঁষতে দেয় না শ্রাবণ।রিকশায়ও আসার সময় এমন হয়ে বসে ছিল যেন আরেকটু হলে পরে যেত ।আর এখন নিজের চাচাতো সুন্দরী বোন পেয়ে তার সাথে ডলাডলি করে বুকের সাথে লাগিয়ে কোলে নিয়ে হাটছে।যতই বোন হোক আপন বোন তো নয়।মনে মনে ভাবতে লাগলো তানিয়া।এই মেয়ের প্রতি শুরু থেকে কেন যেন মনে হয় শ্রাবণের আদিখ্যেতা একটু বেশি ।সবার সামনে রাগ করলেও অপমান করলো বারবার ঘুরে ফিরে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকে বিষয়টি তানিয়া খেয়াল করে।
রেলিং এ হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে ধরে জ্ব*লন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওদের দুজনের দিকে ।এদিকে চলন্ত সিঁড়িতে ওঠার কারণে ভয় দুটো হাত দিয়ে ঘাড় খামচে ধরে আছে মেঘলা শ্রাবণের।
উপরে এসে আর নামালো না শ্রাবণ মেঘলাকে কোল থেকে ।সরাসরি থিয়েটারের দিকে হাঁটতে লাগলো ।মেঘলা ধীরে ধীরে বললো ,”কি করছেন ?নামান এখান থেকে আমার ভাইয়া আমাকে নিয়ে যাবে ।”
শ্রাবণ বললো ,”আমিও তোর বড় ভাইয়া হই।সকালেই তো বললাম বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করব ।তাহলে এরকম করছিস কেন ?সিয়াম তোর ভাই হয় আমি হইনা?”
কি বলবে মেঘলা ?কথাটি সত্য ।সিয়াম ও ভাই উনিও ভাই ।হয়তো আপন না তবুও তো রক্তের ভাই।
তাই মেঘলা ত্যাড়ামো করলো না ।পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে এমনি শীতের দিন তার উপরে ব্যথা পেয়েছে এজন্য আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না মেঘলা।
সবাই শ্রাবণ এবং মেঘনার পিছু পিছু আসতে লাগলো ।থিয়েটারের ভিতরে ঢুকে কে কোথায় বসবে কোন কিছু ঠিক না করে শ্রাবণ মেঘলাকে কোলে করে নিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেল।
মেঘলাকে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসিয়ে তার পাশে বসল শ্রাবণ। মেঘলার পাশের যে সিট খালি ছিল সেটি রাখা হয়েছে রাফির জন্য ।ওই পাশে রাফি বসবে ।শ্রাবণের পাশে বসলো তানিয়া ।তানিয়া পাশের লামিয়া এবং সবার পরে স্নাক্স নিয়ে এসে বসল সিয়াম।
তানিয়া শ্রাবণের সাথে বসলেও শ্রাবণের বাম পাশে বসেছে মেঘলা এবং তার বাম পাশে রাফি।
মেঘলা সিটে বসলেও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা করছিল মেঘলার। কেমন যেন করছিল ছটফট ।পা বারবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল ।শ্রাবণ খেয়াল করল সবকিছু । শ্রাবণ দেখল রাফি হঠাৎ করে নিচে বসে গেল বসে মেঘলার পা নিজের হাঁটুতে উঠিয়ে একটু একটু করে পায়ে মালিশ করে দিতে লাগলো।বললো,” ব্যাথা কমেছে?”
মেঘলা বললো,” না।”
শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল এই দৃশ্যটির দিকে ।দৃশ্যটি কোন মতে ভালো লাগছে না শ্রাবণের ।কেন জানে না সবকিছুই যেন অতিরিক্ত মনে হচ্ছে।
রাফি যদিও ছোট তবুও রাফি প্রথম ভালোবাসা মেঘলা এটি বুঝতে পারছে শ্রাবণ ।রাফি এখন থেকেই মেঘলাকে ভালোবাসার যে স্বপ্নের জাল বুনছে তা প্রত্যেকটি পড়তে পড়তে অনুভব করতে পারছে শ্রাবণ।
কিন্তু এই সম্পর্ক ভুল ।এই চিন্তা ভুল। এটা কখনোই হবে না শ্রাবণ জানে ।কিন্তু ছোট্ট রাফি কি জানে যাকে ঘিরে ভালোবাসা স্বপ্ন জাল বুনছে তা কখনোই পূরণ হবে না?
শ্রাবণ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাফিকে বললো,” তুই উঠে বস আমি দেখছি । তুই পারবি না।”
রাফি বললো,” আমি পারবো।তুমি বলো কি করতে হবে?”
শ্রাবণ তাকালো রাফির দিকে।বললো,”বড় হয়ে করিস এখন তোর বড় হয়ে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দে।”
রাফি পারছিল না তাই রাফি চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো ।শ্রাবণ নিচে বসে মেঘলার পা নিজের হাঁটুতে নিয়ে মালিশ করতে লাগলো। মেঘলা যেন হৃদয়টা দুলে উঠলো হঠাৎ শ্রাবণের স্পর্শে ।শ্রাবণ কম্পন বুঝতে পারলো মেঘলার। হঠাৎ স্পর্শ করায় কেঁপে উঠেছিল মেঘলা ।শ্রাবন তাকালো মেঘলার দিকে।
চলবে_
Neela Rahman
ভুলে অন্য আইডি তে দিয়ে ফেলেছিলাম। দুঃখিত
Share On:
TAGS: এক শ্রাবণ মেঘের দিনে, নীলা রহমান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০৪+১০৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৫
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১১১+১১২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৫+১৩৬
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১১৪+১১৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৪
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১২৩+১২৪
-
এক শ্রাবণ মেঘের দিনে পর্ব ২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯