Born_to_be_villains
methuburi_মিথুবুড়ি
❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌ কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
(২)
‘অবিদিত কিছু প্রশ্ন থাকে, যা মস্তিষ্কের ভেতর গোলকধাঁধার মতো ঘুরে ফিরে বেড়ায়। অথচ তার সঠিক কোনো উত্তর মেলে না। কিন্তু সেই অবর্ণনীয় প্রশ্নগুলোই শূলের মতো বিঁধে, বিঁধে শরীর-মন জুড়ে কষ্ট ছড়িয়ে দেয়। সেই বিভীষিকাময় সকালের পর আজ তিনদিন। এরইমধ্যে ঘটেছে গিয়েছে কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনা। যা ইমামার মনকে আরও উতলা ও অস্থির করে তুলছে। মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে নানান প্রশ্ন। যার কোনো সুরাহা নেই। মিলছে না যথাযথ উত্তর।
‘ইমামা নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে তার হাতে থাকা রেড রোজটার দিকে। কে সে-ই অজ্ঞাত মানব, যে তাকে তিনদিন যাবত রেড রোজ দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। সেদিন ইমান ওয়াসিমের ধমকে সকলে ভেতরে চলে আসে। তারপর সিডের লা-শের টুকরো গুলোর সাথে কী হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই ইমামার। সে তার রুমে পৌঁছাতেই চোখ গেল জানালার কাছে। স্বচ্ছ, সাদা পর্দার নিচে অবিন্যস্ত ভাবে পড়ে ছিল একটি ব্ল্যাক রোজ। ইমামা সেদিন বিষয়টি আমলে নেয়নি; স্বাভাবিক ভাবে নিলেও পরবর্তীতে যখন রোজ একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে, তখন বিষয়টি তার মনকে বিচলিত করে তুলে। সুপ্ত মনে হানা দেয় নানান প্রশ্ন৷ কে সে—যে প্রতি রাতে তার জন্য লাল গোলাপ রেখে যায়! কী উদ্দেশ্য তার!
‘যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে তা হলো—সিড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে। সে কারণে তদন্ত চলছে কঠোরভাবে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, এখনও পর্যন্ত তাকে একবারও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়নি। অথচ সেদিন রাতে পার্টিতে ইমামা সিডকে আঘাত করেছিল গুরুতর ভাবে। সেদিক থেকে সন্দেহের তীর সবার আগে তার দিকেই আসার কথা।
‘সিসিটিভি ফুটেজই সব প্রমাণ করে দেওয়ার কথা ছিল। দেখা যেত ইমামা সিডকে আঘাত করেছে এবং তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ফুটেজ থেকে সেই মুহূর্তগুলোই কেটে দেওয়া হয়েছে। যখন ইমামা ওয়াশরুমে গিয়েছিল, কিংবা তর্কের একপর্যায়ে সিডকে আঘাত করেছিল এসব কিছুই নেই। বরং থেকে গেছে শুধু একটি আপত্তিকর দৃশ্য। এর বাইরে নেই ইমামার কাঁদতে কাঁদতে চলে আসার দৃশ্য, কিংবা সিডের বেরিয়ে যাওয়ার পথের কোনো রেকর্ডও।
‘তাহলে কী কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ইমামাকে রক্ষা করছে? কিন্তু কে? কেনই বা করবে? আর কে-ই বা সিডকে এত নৃ-শং-সভা-বে হ-ত্যা করল?
‘বাথরুমের শেষ ফুটেজে দেখা যায় সিড এক মেয়ের সঙ্গে ছিল। পরে পুলিশ মেয়েটিকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মেয়েটি এতটাই ট্রমাটাইজড যে মুখ খোলাই যাচ্ছে না। ইমামা জানে ইমান ওয়াসিম কোনোদিনই তার মেয়ের ওপর খুনের দায় চাপতে দেবে না। কিন্তু এখানকার রহস্য অন্যরকম। কোথাও এক অদৃশ্য হাত ইমামাকে আড়াল থেকে রক্ষা করছে।
‘কিন্তু কে সে? কে সেই খুনি? কে আড়াল থেকে তাকে আগলে রাখছে? আর কে সেই অজ্ঞাত মানুষ, যে অন্ধকারে ফুল দিয়ে যায়? প্রশ্নগুলো নিঃশব্দে কিলবিল করে যাচ্ছে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে।
‘সব প্রশ্ন, কৌতুহল মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াল ইমামা। এসবের চক্করে তিনদিন ধরে ভার্সিটিতে যাওয়া হচ্ছে না। সামনে ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম। গোসলের উদ্দেশ্য কেবিনেটে কাছে যেতেই সে মাদকীয় ঘ্রাণ নাকের ডগায় এসে ভারি খেল। অবচেতনেই নারী কায়ায় আনচান, আনচান একটা ভাব ছড়িয়ে পড়ল বেচঈন। শিহরণ ধ্বনিত এক ঘোরে কেবিনেট খুলে ভেতর থেকে বের করে আনল সেই কালো কোট টা। যা দিয়ে সেদিনের সেই পার্টির ভিড়ে অজ্ঞাত কেউ একজন তার উন্মুক্ত পিঠ ঢেকে দিয়েছিল। ইমামা সেই লোকটার মুখ দেখেনি। ঝাপসা চোখে দেখেছে কেবল সুদীর্ঘ, বলিষ্ঠ অবয়ব আর পুরুষ্টু সৌষ্ঠব পিঠ। আর সবশেষে দেখেছিল হাত। স্পষ্টভাবে মনে আছে ডান হাতের পিঠে খোদাই করা সেই অদ্ভুত কারুকার্য।
‘কোট থেকে ভেসে আসা পারফিউমের গাঢ় ঘ্রাণ ইমামাকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে। মনে হয় কোটের ভেতর লুকানো আছে কোনো অদৃশ্য চুম্বক, যা তাকে টেনে নিচ্ছে অজানা এক গভীরতায়। এই ঘ্রাণের পারফিউমের খোঁজ ল বহুবার করেছে, অথচ কোথাও পায়নি। ইমামা কোটটা শক্ত করে নাকের সাথে চেপে ধরে দীর্ঘশ্বাসে শুষে নিল তার সমস্ত সুগন্ধ। পরপরই অজান্তেই ঠোঁট থেকে ঝরে পড়ল ফিসফিসে শব্দ,
“আমি আপনাকে খুঁজে বের করবই, মিস্টার।”
‘জামা নিয়ে শাওয়ারে চলে গেল ইমামা। মিনিটখানেক বাদেই নরম তনুতে সাদা বাথরোব পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। এই বদঅভ্যাস টা তার ছোট থেকেই। বাথরুমে জামা পাল্টাতে পারে না সে। তবে রহস্যজনক ভাবে সে গা থেকে বাথরোব টা খুলে ফেলতেই পাশের ছোট কেবিনেটের ওপর রাখা পুতুলের মুখটা অন্যদিকে ঘুরে গেল।
‘ইমামা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে সরাসরি ডাইনিং টেবিলে এল। ডাইনিংয়ে উপস্থিতি আছেন ইমন ওয়াসিম। মেয়ের জন্য পাশের চেয়ারটা খালি রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ইমামা গিয়ে বসল তার ভাইয়ের পাশে। শ্যামবর্ণ ইমন এক ঝলক চোখ তুলে বোনের দিকে তাকিয়ে এক টুকরো হাসি ছুঁড়ে নিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
‘আশ্চর্যের বিষয় হলো ইমন ওয়াসিম আর তার স্ত্রী নীহারিকা দু’জনেরই গায়ের রঙ চাপা। অথচ ইমামার রঙ গোলাপের মতো উজ্জ্বল। ইমনও বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে চাপা রঙ। কিন্তু ইমামার মুখাবয়বের সঙ্গে কারও মিল নেই। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর হল ইমামার চুল প্রকৃতিগতভাবেই লাল।
এই অদ্ভুত বৈপরীত্য নিয়ে চারপাশে বিস্ময়ের ঢেউ উঠতে থাকে সবসময়। লোকমুখে নানা ফিসফাস চলে। যার কিছু ইমামার কানেও পৌঁছায়। মাঝেমধ্যেই নিজেকেও তীব্র বিস্ময়ে আচ্ছন্ন করে ফেলে প্রশ্নটা। অথচ কোনো সঠিক উত্তর সে কোনোদিনই পায়নি। যতবার জিজ্ঞেস করেছে ইমন ওয়াসিম ততবারই এড়িয়ে গেছেন নীরবে।
‘বরাবরের মতোই আজও মিসেস নীহারিকা ছেলের প্লেটে খাবার তুলে দিলেও ইমামার প্লেটে দিলেন না। ইমামার উপস্থিতি অদৃশ্য এক কারণে তার চিবুকে একধরনের গাম্ভীর্যতার রেখা টেনে আনে সবসময়। ইমান ওয়াসিম চোখ রাঙিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেও, মিসেস নীহারিকা নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে।
‘ইমামা বুক মথিত দীর্ঘশ্বাসটা আলগোছে ফেলে, প্লেটে খাবার নিতে যাবে, তার আগেই ইমন আগ বাড়িয়ে বোনের প্লেটে খাবার তুলে দিল। ইমামা হাসল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে। তারপর খাওয়ায় মন দিল। পিনপতন নীরবতা টেবিল জুড়ে।
‘ইমান ওয়াসিম খেতে, খেতে ইমামার উদ্দেশ্য জলদগম্ভীর গলায় বললেন,
“কেউ যদি সিডের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে তুমি বলবে, তুমি কিছুই জানো না। ওকে?”
‘ইমামা সবিনয়ে মাথা নাড়িয়ে “জী বাবা” বলল।
‘প্রতিদিনের মতো আজও ক্ষিপ্ত চোখে বডিগার্ডদের দিকে তাকাল ইমামা। ক্যাম্পাসের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে চিড়বিড়িয়ে উঠল,
“চলুন, ভেতরে যাই, একসাথে ক্লাস করি!”
‘কালো পোশাকের দু’জন গম্ভীর মুখে সরে গিয়ে পাশের চায়ের দোকানে বসল। এই যে বসল, ইমামার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত একদণ্ড নড়বে না এখান থেকে। বিরক্তির ফোঁস নিশ্বাস ছেড়ে সরাসরি লাইব্রেরির দিকে হাঁটা ধরল সে। লাইব্রেরিতে তার জন্য অপেক্ষা করছে ইবরাত। তাদের আড্ডা শুরুতে এখানেই জমে। তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ক্লাসে যাওয়া হয়৷
‘ইবরাত ইমামাকে দেখামাত্র উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে মৃদু চেঁচিয়ে উঠল, “এই ইমু, তোর আসতে আজ এতো দেরি হলো যে?”
‘ইমামা ইবরাতের পাশে বসতে, বসতে প্রত্যুত্তর করল,
“রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল রে।”
‘ইবরাত ইমামার দিকে ঘুরে পায়ের ওপর পা তুলে বসল। চোখেমুখে টানটান উত্তেজনা নিয়ে বলল,
“ওহ! আচ্ছা ঘটনা শুনেছিস?”
‘ইমামা কাঁধ থেকে ব্যাগ রেখে প্রশ্নবিহ্বল চোখে তাকাল ইবারাতের দিকে, “কী?”
“রোহিত তিনদিন ধরে মিসিং।”
‘কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল তার,”সেকি, কী বলিস?”
“আরে হে। তুই তো এতোদিন আসলি না,তাই কিছুই জানিস না।”
“তা হঠাৎ করে কোথায় গায়েব হলো জানোয়ারটা!”
‘ইবরাত চোখেমুখে অদ্ভুত ভঙ্গিমা টেনে বলল,
“গায়েব হয়নি, বল তোর ওপর গায়েবি বরকত রহম হয়েছে। দোয়া করি, শ্লা আর কোনোদিন ফিরে না আসুক৷”
‘ইমামা সাই জানিয়ে মাথা নাড়াল। দু-হাত তুলে মোনাজাত ধরে বলল,”হুম, যা বলেছিস। আমিন।”
‘ইবরাতও দু-হাত তুলে মোনাজাত ধরল,”ছুম্মা আমিন।”
‘হঠাৎ পিছন থেকে গৌড়ব এসে ইবরাতের মাথায় গাট্টা মেরে পাশে বসতে বসতে ব্যঙ্গ করে বলল,
“আইছে আমার মওলানিরা। এতো আমিন আমিন না করে আমাকে সালাম কর৷”
‘ইবরাত ব্যাথা কপাল খিঁচে খেঁকিয়ে উঠল গৌড়বের ওপর,
“তোকে ক্যান সালাম করতে যাবো রে গরুর বাচ্চা?”
‘গৌরব পরনের পোলো শার্টের কলার উঁচিয়ে হিরো, হিরো ভাব নিয়ে বলল,”এই-যে এতো বড় উপকার করলাম।”
‘ইবরাতের কণ্ঠে আঁচড়ে পড়া ঝাঁঝ, “অপকার ছাড়া তুই আবার উপকারও করতে পারিস বুঝি?”
‘ইবরাতের চুল টেনে দিয়ে ঝাড়ি মারল গৌরব, “চুপ থাক। দীর্ঘদিন যাবত দেখছি, শ্লা রোহিত আমাদের রাশিয়ান ইমু…. ওহ স্যরি বিদেশি অ্যাপস কে খুব জ্বালাতন করছে, ভাবলাম কিছু করা উচিত। যেহেতু আমি একজন বড় মাপের মানুষ। পরে দিলাম বেটাকে গায়েব করে।”
‘ইমামা চোখ রাঙাল গৌরবকে। গৌরব উলটে ভেংচি কাটল তার দিকে তাকিয়ে। ইবরাত বিদ্রুপ করে বলল,
“হাহাহহা… হোয়াইট আ চাপা। একজন ডিজিপির ছেলেকে তোর মতো চুনোপুঁটি গায়েব করে দিবে, বললেই হয়ে গেল, নাহ?”
‘গৌরব ইবরাতের দিকে তর্জনী তুলে শাসিয়ে বলে উঠল,
“এই ইবুর ছাও, সাবধানে কথা বলবি বলে দিলাম। আমার মধ্যে হেডাম না থাকলে কর্ণেলের মেয়েকে পটাতে পারতাম না৷”
‘ইবরাত তাচ্ছিল্য করে হাসল, বলল, “এতো হেডাম আছে বলেই বিয়ে করতে চাস সেটা এখনও বাড়িতে জানাতে পারছিস না।”
‘গৌরব কিছু বলতে যাবে, তার আগেই হিয়ার আগমন ঘটল। হিয়া গৌরবের পাশে বসতে, বসতে বলল,
“তোমার যে কত সাহস আছে, সেটা আমার দেখা হয়ে গিয়েছে এতোদিনে। আর কথা বল না তুমি। তোমার সব জোর তোমার মুখেই।”
‘গৌরব খোপ করে হিয়াকে জাপটে ধরে তার রোজকার ম্যালোড্রামা শুরু করে দিল৷
“আরে জান, রাগলে তো তোমাকে আরও সুন্দর লাগে। ঝগড়া করব, না চুমু খাবো কনফিউজড হয়ে যাই আমি৷”
‘ইবরাত ঝট করে গৌরবের বাহু থেকে হিয়াকে টেনে সরিয়ে নিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,
“এই যে মুহুর্তেই কথার জালে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে বাটপার।”
‘গৌরব অবুঝ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টালো। ইনিয়েবিনিয়ে বলতে লাগল,
“কই অন্যদিকে গেলাম রে, হারামি? আমি ঝগড়াতেই আছি। আচ্ছা শোন, সামনের মাসে বড় দাদান অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। আগে আজরাইল টা বিদায় হোক। তারপর ধীরস্থিরভাবে মা-কে ধরতে হবে। যদি না মানে, নো প্রবলেম। মুন্সিগঞ্জ ছোট্ট পিসির তিন রুমের ছোটখাটো একটা বাগানবাড়ি আছে। পিসি আমার ছেঁকা খাওয়া আনম্যারিড মহীয়সী নারী। কয়দিন পর তো এমনিতেই মরে যাবে। পিসি মারা গেলে তার বাড়ি তো আমারই। পরে তিন রুমে দৌড়াইয়া, দৌড়াইয়া প্রেম করমু খালি। দেখমু কোন হালাই বাঁধা দিতে আসে৷”
‘হিয়া নাক সিটকিয়ে উঠল, “ছিঃ মুখের কী ভাষা৷”
‘গৌরব বির্বণ মুখে হিয়ার দিকে তাকাল। সরলহাস্যে অকপটে জানতে চাইল,”আমার মুখের ভাষা খারাপ জান?”
“হ্যাঁ, খুব খারাপ৷”
‘সঙ্গে, সঙ্গে তেতে উঠল গৌরব। সরাসরি আঙুল তুলল হিয়ার নাক বরাবর। বলল,
“শালি তোর মন পড়ার জন্য যতটা কষ্ট করি, এই শ্রম যদি পড়াশোনার পিছনে দিতাম, তাহলে এতোদিনে আইপিএস অফিসার হয়ে যেতাম।”
‘পাশের টেবিলের মেয়েটা গৌরবের কথায় ফিক করে হেসে দিল। ইমামা গম্ভীর মুখে তাকাতেই মেয়েটা মুখে হাত চেপে ধরল। শালিকের মতো চঞ্চল আর বাঁচাল প্রকৃতির এই ছেলেটার কথা বলার সময় আশপাশ নিয়ে বিন্দুবৎ হুঁশ থাকে না। ইবরাত টেবিলের নিচ দিয়ে গৌরবের পায়ে লাথি মারল জোরেশোরে।
‘হিশা গৌরবের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কি-হ আমি শালি?”
‘গৌরব জিভ কেটে তড়াক মাথা নাড়াল,”না না না! তুমি তো আমার জান৷”
‘হিয়া দাঁতে, দাঁত চাপল,”তাহলে মাত্র কী বললে?”
“কি? আমি কিছু বলছি?” গৌরব তার ঠোঁট টেনে ধরল,”এই ঠোঁট, শ্লা তুই আবার কখন কী বললি? জুতা চিনছ শ্লা?” তারপর সে তার কান টেনে ধরল,”এটা আমার জান। কান খুলে শুনে রাখ—আমার জান৷”
‘তবুও হিয়া মানে না। সে ন্যাকাকান্না জুড়ে দিল। অনবরত মাথা ঝাঁকাতে, ঝাঁকাতে ছদ্ম রাগ নিয়ে বলল,
“না, আমি জানি তুই আমাকেই শালি বলেছিস।”
“এই যে দেখ, তুইতোকারি শুরু হয়ে গেছে। আমার মতো ইনোসেন্ট বয়ফেন্ড তুমি পুরো তল্লাটে খুঁজে পাবা? যদি পাও তবে ব্রেকাপ, আর না পেলে আই লাভ ইউ।”
‘হিয়া অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে গৌরবের দিকে। সে খুব ভালো করেই জানে—এখন যদি সে ঘুনাক্ষরেও বলে খুঁজে দেখবে, তাহলে পুরো ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ দোষ তার ওপর চাপিয়ে দিবে এই জাদরেল, বজ্জাতমার্কা অসভ্য ছেলেটা। শুরু করবে হ্যানত্যান। আহাজারির সুরে জনে, জনে গিয়ে বলবে—হিয়া চিট্রেট অন মি। ঈশ্বরের দেওয়া চোখ দিয়ে ও আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখে। আমার মতো সুদর্শন ছেলে রেখেও পরপুরুষের দিকে তাকাই। এটা শোনার আগে ঈশ্বর আমাকে মেয়ে বানিয়ে দিল না কেন? আমি কেন সাইন্স ল্যাবের কঙ্কাল হলাম না? কেন, কেন, কেন?
‘বিপদসীমার দিকে পা বাড়ালো না হিয়া। সে মিইয়ে গিয়ে ছোট্ট করে বলল, “আই লাভ ইউ টু। চিটার।”
‘সন্তুষ্টিতে হাসতে গিয়েও হাসল না গৌরব। ভ্রু কুঁচকে সুনিপুণ বিস্ময়ে, ঠোঁট উলটে জানতে চাইল,
“আবার কী চিটারি করলাম?”
“এই যে কথার জালে ফাঁসিয়ে দাও৷”
‘গৌরব বিগলিত হেসে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কলার উঁচিয়ে বলল, “কথার জাল না সোনা। এটা প্রেমের জাল সোনা।”
‘ইমামা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও ইবরাতের ধৈর্য আর কুলালো না। সে বিরক্ত হয়ে টেবিল চাপড়ে ঝাঁঝিয়ে উঠল,
“এই, থামলি তরা? যত্তসব নাটকের দল। আর যেনো কেউ প্রেম করে না।”
‘গৌরব ইবরাতের চুল টেনে ওকে বসিয়ে দিল। খোঁচা মেরে বলল,
“সবাই করে। শুধু তুই পারছিস না। সেজন্য তো এতো জ্বলে, সেটা বল।”
‘ইবরাত রাগে কটমট করতে করতে বলে উঠল,”জ্বলে আমার জুতো।”
‘অবাক হয় গৌরব। সে দ্রুত টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে আগুন খুঁজতে খুঁজতে ছদ্ম উত্তেজনা নিয়ে বলতে থাকে,
“কই দেখি। কল এম্বুলেন্স, প্লিজজ।”
‘ক্রোধে গজগজ করতে করতে আরেকটা লাথি বসাল ইবরাত। তবে এবার একদম জায়গামতো। গৌরব জায়গামতো হাত চেপে ধরে চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। অসহনীয় ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি বের হয়। হিয়া উদ্বেলিত চিত্তে দ্রুত গৌরবের কাছে এগিয়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অবিরাম প্রশ্রয়ী হাতে৷ ইমামা ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে। এটা আর নতুন কিছু নয়; ইবরাত আর গৌরবের মাঝে টম এন্ড জেরির মতো এমন ফাইট সবসময় চলতেই থাকে।
“তোরে আইজকা খাইছি।” ক্ষ্যাপা ঘাড়ের মতো খেঁকিয়ে ওঠে ইবরাতের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল গৌরব, তার আগেই হাজির হলো কারিব আর অর্ক। অর্ক দূর থেকে দু-হাত মেলে হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে, আসতে কৌতুক করে সুর তুলল,
“ও সোনা মিস ইউ, ও মিস ইউ, তোকে কাছে চাই৷”
‘গৌরব তার দিক পরিবর্তন করে তৎক্ষনাৎ ইউটার্ন নেয়। উলটো ঘুরে ছুটে এসে অর্ককে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে হিয়াকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল৷
“এই শ্লা, তোর সোনা, সোনা নিজের কাছে রাখবি। আমার গালফেন্ডের দিকে নজর দিস ক্যান রে? বাঙ্গির নাতি।”
‘অর্ক হেসে ইবরাতের পাশে গিয়ে বসল। কারিব বসল ইমামার পাশে। কারিব পাশে বসতেই ইমামা একটু সরে বসল। এতে করে আকষ্মিকভাবে কারিবের ফর্সা আদল মলিন হয়ে আসে। তবে সে তা বুঝতে দিল না কাউকে। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
‘অর্ক গৌরবের দিকে তাকিয়ে ঠেস মেরে বলল,”নটকীর পোলা, তুই তো আগে বলতি, বন্ধুর গালফেন্ড মানেই নিজের গালফেন্ড।”
‘গৌরব শয়তানি হাসি দিয়ে ভ্রু নাচাতে, নাচাতে বলল,”তাইলে তোর বউ মানে তো আমারও বউ। দে তবে তোর বউটারে নিয়া দুইদিনের জন্য মালদ্বীপ থেকে ঘুরে আসি।”
‘অর্ক সঙ্গে, সঙ্গে পায়ের জুতো খুলে গৌরবের দিকে তেড়েফুঁড়ে যায়। গৌরব আর একমুহূর্তও লাইব্রেরিতে দাঁড়াল না। জীবন হাতে নিয়ে, মানসম্মান পিছনে ফেলে দিল এক দৌঁড়। অর্কও জুতা হাতে ছুটল গৌরবের পিছু। ওরা চলে যেতেই উচ্চশব্দে হেসে উঠল বাকিরা। ওরা যেখানেই যাই, মুহুর্তেই জায়গাটা গরম করে ফেলে৷
‘ইমামা ওঠে দাঁড়াল। সকলকে তাড়া দিয়ে বলল,”চল, ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে।”
‘সবাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। ছয়জনের এই বন্ধুমহল। তাদের পরিচয় স্কুলজীবন থেকে। একসাথে বেড়ে ওঠা, একসাথে পথচলা। তবে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবে আলাদা। এই যেমন ইবরাত—যাকে দেখে, তাকেই তার ভালো লাগে। ঠিক তার উল্টো চরিত্র ইমামা; তার কাউকেই ভালোলাগে না। গৌরব আর হিয়া কলেজজীবন থেকে প্রেমে বাঁধা। এখনও সেই সম্পর্ক অটুট। তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীর।
‘অর্ক পাঁচ বছর ধরে পাশের স্কুলের এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল। পরে তা পূর্ণতা দিতে গোপনে হালাল বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারকে জানানো না হলেও সকলে জানে তাদের গোপন বিয়ের কথা।
‘তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম কারিব। সে কলেজ লাইফ থেকেই ইমামাকে পছন্দ করে। কিন্তু বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে ভেবে কখনোই প্রকাশ করেনি। তার মতো বাকিরাও সব জেনেও চুপ থেকেছে। বন্ধুত্বের ভারসাম্য নষ্ট হোক, তা কেউই চায়নি।
‘এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে তাদের। অন্যদিকে ইমামার অবস্থান আলাদা। সাবেক সংসদ সদস্যের মেয়ে হওয়ায় বাবার কড়া শাসন আর সর্বক্ষণ বডিগার্ডের নজরদারির ভেতরেই তার চলাফেরা। প্রেমে জড়ানোর মতো কোনো চিন্তাভাবনাই কখনো তার মাথায় আসেনি। তাছাড়া কারিবকে সে কেবল বন্ধু হিসেবেই দেখে, এর বাইরে আর কিছু নয়।
‘ইবরাত হঠাৎ প্রশ্ন ছুড়ল,”সিডের খু*নিকে কি ধরা গিয়েছে রে?”
‘ইমামা নিরেট ঠান্ডা সুরে জবাব দেয়,”আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।”
“তোর কষ্ট হচ্ছে না ওর জন্য? আই মিন তোদের তো বিয়ে ঠিক ছিল।”
“বিয়ে ঠিক ছিল, কিন্তু কোনো সম্পর্ক ছিল না।”
‘ইবরাত আর বাড়তি প্রশ্ন করল না। ইমামা স্পষ্টভাষী। যা বলার সরাসরি বলে দেয় গম্ভীর গলায়। ইমামার মনে যে সিডকে নিয়ে কোনো অনুভূতি নেই, তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইল না ইবরাতের মনে—ইমামার পাথরের কোমল মুখের অনুভূতিশূণ্য অভিব্যক্তি দেখে।
‘ক্লাস শেষে উত্তপ্ত মেজাজে গাড়ির দিকে এগোচ্ছিল ইমামা। অন্যরা আজ অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছে। বাতাসে ওর রেশমী চুলগুলো উড়ছে। চোয়ালের পেশিগুলো টানটান হয়ে আছে। ক্রোধের রেখা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে মুখে।
‘বাংলাদেশের মতো কৌতূহলী প্রজাতির ভিড়ে ওর ব্যতিক্রমী গায়ের রং, লাল চুল আর আলাদা চেহারা নিয়ে সবসময়ই কানাঘুষা লেগেই থাকে। কখনো, কখনো তো কেউ কেউ কৌতূহল সামলাতে না পেরে সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দেখে আসল না নাকি কৃত্রিম। কিন্তু কেউ যখন ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে ছুঁয়ে দেয় তখন সেটা নোংরামির নিচুতম পর্যায়ে পৌঁছায়। এই তো, ক্লাস থেকে বেরোনোর সময় ভিড়ের মধ্যে এক ছেলেকে ওর কাঁধে হাত দিয়েছে। ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠছে।
‘ইমামার গেইটের কাছে যেতেই সিআইডি অফিসার মাহেশের মুখোমুখি হলো । তার সাথে আছেন আরও দু’জন সহকারী। অফিসার মাহেশ ইমামার পথ আঁটকে দাঁড়িয়েছে। ইমামা গম্ভীর মুখে অফিসার মাহেশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কী সমস্যা?”
‘অফিসার মাহেশ এই মেয়ের কণ্ঠে থাকা তেজ আচঁ করতে পেরে নিম্ন অধর কামড়ে হাসলেন। ভঙ্গিমা স্থির রেখে পেশাদার গলায় সরাসরি বলল,
“সমস্যা নেই তো। তবে সমাধান করতে এসেছি। আই মিন তদন্ত করতে এসেছি৷”
‘ইমামা সর্দপে প্রশ্ন ছুড়ল,” আমার পথ আঁটকে দাঁড়িয়েছেন কেন?”
‘রহস্যময় হাসি সরছে না অফিসারের ঠোঁট থেকে। সে একটু ঝুঁকে এলো ইমামার দিকে। ফিসফিস করে বলল,
“আমি না তো, ক্লু।”
‘প্রস্তর-কঠিন মুখে হতবাক ভাবভঙ্গি ফুটে উঠল ইমামার। সুচারু দৃষ্টিতে তাকাল অফিসার মাহেশের দিকে। নিষ্কপট স্বরে শুধু বলল,”মানে?”
‘অফিসার মাহেশ আবারও কুটিল হাসল। হাতের গোড়ালি ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,”কেন যেনো দু’টো কেসেই মেইন সাসপেক্ট হিসেবে আপনার নাম উঠে আসছে বার বার।”
“হোয়াট?”
“জী। ওই মেয়েটি মুখ খুলেছে। জানা গেছে পার্টির দিন সিড আর আপনার মধ্যে বেশ তর্ক হয়েছিল। তাছাড়া ডিজিপির ছেলে রোহিত দীর্ঘদিন ধরে আপনাকে ডিস্টার্ব করছিল—সে নিখোঁজ হওয়ার পরই আমরা ব্যাপারটা জানতে পারি। দেখুন মিস, আপনি তো যথেষ্ট বুদ্ধিমতী এজ আই গেইস। নিজেই বলুন তো, আপনার কী মনে হয় না দু’টো কেসের সঙ্গে আপনি কোনো না কোনোভাবে জড়িত?”
“প্রমাণ?”
‘অফিসার মাহেশ বুঝতে পারল না। সে ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বলল,”এক্সকিউজ মি?”
‘ইমামা ফের কঠিন মুখে উচ্চারণ করল,”কী প্রমাণ আছে আপনার কাছে, যে আমি এসবের সঙ্গে জড়িত?”
‘অফিসার মাহেশ কিছু বলার আগেই পিছন থেকে ভেসে এলো গুরুগম্ভীর কণ্ঠ,
“প্রমাণ ছাড়া পুলিশি জেরা বেআইনি। টরচার আইনে ন্যূনতম পাঁচ বছরের জেল, দণ্ডবিধির ৩৩০–৩৩১ ধারায় সাত থেকে দশ বছরের সাজাও হতে পারে। এটা কিন্তু ছোটখাটো অপরাধ নয়, অফিসার।”
‘ইমামা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকাল। প্রফেসর আনাম এসে দাঁড়িয়েছেন ওর পাশে। কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও ইমামা নিজেকে সামলে নিল।
‘প্রফেসর আনাম আবার বললেন,
“প্রমাণ ছাড়া একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হ্যারাস করলে ছাত্ররা কিন্তু মেনে নেবে না অফিসার। শ্যাল আই টেল দেম দ্যাট ইউ আর হ্যারাসিং আ স্টুডেন্ট হিয়ার উইদাউট এনি এভিডেন্স?”
‘কয়েক মুহূর্ত রাগান্বিত দৃষ্টিতে আনামের দিকে তাকিয়ে থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল অফিসার মাহেশ ও তার সহকারী রা। তিনি চলে যেতেই ইমামা দ্রুত ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রফেসর আনাম ঘোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইমামার দিকে যতক্ষণ না ইমামা দৃষ্টির আড়ালে মিলিয়ে গেল।
‘গাড়ি চলছে নিদিষ্ট গন্তব্যের পথ ধরে। হঠাৎ করে ইমামার ফোনে ক্রিং করে শব্দ বেজে উঠল। ফোনের নীল পর্দায় ভাসতে থাকা নোটিফিকেশনে চাপ দিতেই একটি ভিডিও প্লে হল। স্ক্রিনে ফুটে উঠল এক নৃশংস দৃশ্য….
‘উপর থেকে ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রোহিতকে ধাতব টেবিলের ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার হাত-পা লোহার চেইনে শক্ত করে বাঁধা। মুখে কালো টেপ। এক অন্ধকার ছায়াময় মানুষের মাথার উপরের অংশই শুধু দৃশ্যমান। কালো হ্যান্ডগ্লাভস পরা সে সিরিজ দিয়ে রোহিতের শরীর থেকে র-ক্ত বের করছে। তারপর বের করা র-ক্তগুলো রাখছে একটা লোহার বালতিতে। বালতি টি ভরতেই সে নিজের ওপর র-ক্তগুলো ঢেলে গোসল করে নিল প্রথমে।
‘এরপর শুরু হয় অসহনীয় নৃ-শং-স-তা। সে প্রথমে সুইচের মতো কেনো এক জিনিস দিয়ে রোহিতের হাত-পায়ের রগ টেনে বের করে আনে। অতঃপর শি-রা-উপশি-রাগুলো স্টিলের পাত্রে জমা করে। পাশেই বাঁধা ছিল এক জংলী কুকুর। স্টিলের পাত্রটি তার সামনে নিয়ে যেতেই লাল রঙের জিভ বের করে মুহূর্তের মধ্যে সেই শিরা-উপশিরাগুলো গিলে ফেলে সে।
‘কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত আসে যখন সে রোহিতের চোখগুলো একে একে খুলে ফেলা হয় কাঁটাচামচ দিয়ে।তবে এবার চোখগুলো কুকুরকে না দিয়ে নিজের হাত দিয়ে চেপে গলিয়ে ফেলল। তারপর মনিযুগল ফেটে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা কালো তরল ঢেলে দিল রোহিতের মুখের ভেতর। রোহিতের গলায় থেকে উগরে বমি বের হয়। কিন্তু সে বমিগুলোও ছাড়ে না। সে ধীরে ধীরে রোহিতের পেট খোলে এবং বমি ফেরার পদ্ধতিতে আবারও পেটের ভেতর ঢেলে দেয় বমি।
‘এরপর সে আস্তে আস্তে রোহিতের বুক খোলে কলিজা এবং হার্ট বের করে স্টিলের পাত্রে রাখে। পাত্রের ভেতরের অঙ্গ কুকুরকে দিলে সে আগ্রাসীভাবে তা খায়। শেষ হলে সে আবারও ফিরে আসে রোহিতের ক্ষ-তবি-ক্ষ-ত দেহের কাছে। এতটুকু দৃশ্য দেখে ইমামা আর সামলাতে পারে না নিজেকে। হাত থেকে ফোন ছুঁড়ে ফেলল। ভয়ের শিহরণে পুরো শরীর কাঁপছে।
‘ঠিক তখনই পাশ দিয়ে তুমুল গতিতে একটি বাইক তার গাড়ি অতিক্রম করে গেল। সাইলেন্সারের শোরে চমকে উঠল ইমামা। সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল কালো ডেনিম জ্যাকেট পরিহিত একজন বাইকার। বাইকটি ছিল খুবই সৌখিন ভাবে মডিফাইড করা একটি স্পোর্টস বাইক। ব্ল্যাকমাম্মা। ইমামার নজরে ধরা পড়ল সেই লোকের ডান হাতের পিঠে খোদাই করা এক অদ্ভুত ট্যাটু। একটি সাপের মাথা। বাকি অংশ জ্যাকেটের নিচে ঢাকা।
‘গাড়ি কিছুদূর যেতেই জ্যামে ফেঁসে গেল। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে এখনও। শরীর বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝরছে অবিশ্রাম। হঠাৎ শোরগোলে দৃষ্টি ছুটল জানালার বাইরে। সামনেই তাকাতেই দ্বিতীয় দফায় চমকে উঠল ইমামা। রাস্তার অপরপ্রান্তে বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। একজন স্পট ডেট। কিন্তু সে আর কেউ নয়, সে-ই ছেলেটা—যে ইমামার কাঁধে হাত দিয়েছিল। ছেলেটার এক হাত শরীর থেকে আলাদা হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। এ ঘটনায় শিউরে উঠল ইমামা। এসব কী হচ্ছে তার সাথে!
‘কম্পিত চোখের দৃষ্টি গেল পায়েই দাঁড়িয়ে থাকা সেই ব্ল্যাকমাম্মার ওপর। ইমামার শংকিত মনে প্রশ্নের জন্ম নিবে, তখনই কর্কশ শব্দে ফোনটা ভেসে উঠল। কিয়ৎক্ষণ অবুঝ ভঙ্গিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নিল ইমামা। আকষ্মিকভাবে তাকে ভরকে দিয়ে ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভারি কণ্ঠের অদ্ভুত সম্মোধন,
“হাউ আর বেইব?”
“কে আপনি?”
‘ইমামার গম্ভীর গলার প্রশ্নের পিঠে ওপাশ থেকে ভেসে এলো হাস্কি স্বর,
“আই’ম ইওর বেইবি, ইউ আর মাই বেইব।”
“কী যা-তা বলছেন? আমি ইমামা৷”
“ইউ আর নট ইমামা বেইব।”
‘এবার কেঁপে উঠল ইমামা। মনে হলো ওপাশের ব্যক্তিটির কণ্ঠস্বর মাত্রাধিক ভারি। নিজস্ব ওজন রয়েছে তার কণ্ঠে, যা সাধারণ আর কারোর নেই।
‘শক্ত ঢোকে শুকনো গলা সিক্ত করে ইমামা বলল,
“মানে? আমি ইমামা নই, মানে কী?”
“ইউ আর…
“হোয়াইট?”
“ইউ আর মাইন।”
‘পুরুষালি গভীর, আকর্ষণীয় হাস্কি কণ্ঠে তিনটি শব্দ উচ্চারণ হলো। তারপর হঠাৎ যেমন কল এসেছিল, তেমনি হঠাৎ কল কেটে গেল। কল কেটে গেলেও প্রশ্ন থিতু হলো ইমামার মনে। ঠোঁট থেকে নিঃশব্দে ঝরে পড়ল,
“আমি ইমামা না?”
❌
Share On:
TAGS: born to be villains, মিথুবুড়ি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
Born to be villains পর্ব ৪
-
Born to be villains পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
Born to be villains পর্ব ১০+বোনাস
-
Born to be villains পর্ব ৯
-
Born to be villains পর্ব ৮
-
Born to be villains পর্ব ১২
-
Born to be villains পর্ব ৬
-
Born to be villains পর্ব ১১
-
Born to be villains গল্পের লিংক
-
Born to be villains পর্ব ৭