Born to be villains Golpo romantic golpo

Born to be villains পর্ব ১৩


Born_to_be_villains

methuburi_মিথুবুড়ি

পর্ব_১৩

❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌

‘সামনে লেকচার দিচ্ছেন প্রফেসর আনাম। আক্ষরিক অর্থে তিনি একজন সার্জন। সপ্তাহে দুইদিন ভার্সিটিতে লেকচার দেন। অন্যদিন হলে প্রতিটি লেকচার পূর্ণ মনোযোগ আর গুরুত্ব দিয়ে নোট করতো। কিন্তু আজ কিছুতেই ক্লাসে মন বসছে না এলিজাবেথের। লোকটা অবচেতন মোহে আবিষ্ট করছে তাকে ফোনের দিকে। শেষমেশ হার মেনে নিল ইমামা। সে চুপিসারে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে হোয়াটসঅ্যাপে গেল।

‘সরাসরি লিখল, “হোয়াট ক্যান ইয়্যু ডু ফর মি।”

‘ইমামা ভেবেছিল রিপ্লাই আসতে হয়তো সময় লাগবে। তবে না। এমন দ্রুত গতিতে প্রত্যুত্তর এল, যেন অপর পাশের মানুষটা আর টেক্সটের জন্যই অপেক্ষা করছিল৷

“আই ক্যান রি-ক্রিয়েট অল ইয়্যুর বুক সিনস৷”

‘হিমস্পর্শী শিহরণে শিউরে উঠল ইমামা। হঠাৎই হৃদয়কুঠুরে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লেপ্টে থাকে পুরুষালি শরীরের সুঘ্রাণটা আবারও নাকের ডগা ঘেঁষে বেড়ায়।

‘ইমামা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে লিখল,”হোয়াট ইজ ইয়্যুর ইনটেনশন উইথ মি?”

“সেটা নাহয় সময় বলে দিবে৷”

‘অকারণেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ইমামা দম নিল। তারপর অভ্যন্তরীণ কৌতুহল ধীরে ধীরে উগড়ে দিতে থাকে।

“আমি আপনার নাম জানতে চাই৷”

“নাম জেনে কী হবে?”টেকনিক্যালি তার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল সে।

‘তেরছা জবাবে ইমামার নাকের ডগায় বিরক্তি ফুটে ওঠে। ও তিক্ততার সাথে লিখল,”আশ্চর্য! সেভ করার জন্য তো নাম লাগবে। নাকি ব্লক করে দিব?

‘এবারের উত্তরটা এল খুব রসিকতার সহিত,

“হাহাহাহা…..আমাকে ব্লক করার ক্ষমতা আপনার নেই, মেডাম৷ সেটা আপনিও খুব ভালো করে জানেন। আর রইল নাম্বার সেভ করার কথা! আপাতত নাহয় মর্জিমাফিক একটা দিয়ে রাখুন। পরে নাহয় চেঞ্জ করা যাবে। কারণ, আমি এখনো আপনাকে আদর করিনি৷ আদর সম্পর্কে পরিবর্তন আনে, জানেন তো?” চাতুর্যের সঙ্গে এবারও প্রশ্নটা ফেলে রাখল সে।

‘এটা সত্য ইমামা তাকে ব্লক দিতে পারবে না। দিতে পারে না সে। অজস্রবার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হয়েছে সে। অদৃশ্য কোনো শক্ত প্রতিবারই তার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে। অথচ, সেখানে সে ম্যাডবিস্টের প্রতিটি নাম্বার ব্লক করতে সক্ষম হয়েছে।

‘ইমামা বুঝতে পারছে ‘হি হিজ হার্ড নাট টু ক্র্যাক।’ তাই সে বিকল্প পথে পা রাখল। কটাক্ষ করে লিখল,

“চিঠিগুলোতে আপনার নাম থাকে না কেন? নাকি আপনার পরিচয়ের মতোই চিঠিতে মিশে থাকা অনুভূতিগুলোও মিথ্যে?”

‘আর এখানেই ধরা খেল সে। কট্টর প্রশ্নবানে লজ্জিত কিংবা জ্বলে উঠার পরিবর্তে সুনিপুণ কৌশলে পাল্টা প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দেওয়া হলো তার দিকে।

“ওগুলোকে চিঠি বলে?”

‘এক মুহুর্তের জন্য থেমে গেল ইমামা। হাতের গতি হারাল।কিয়ৎক্ষণ অবুঝ ভঙ্গিতে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখে বিস্ময়মিশ্রিত হতবাক ফুটিয়ে লিখল,

“মানে?”

“চিঠি আর চিরকুটের মধ্যে পার্থক্যটা কি জানেন?”

‘হঠাৎ করেই নিজেকে সংকীর্ণ বোধের মনে হলো। সত্যি, এই মুহূর্তে চিঠি আর চিরকুটের পার্থক্যটাও ঠিক ধরতে পারছে না সে। তার এই অপটু জ্ঞান দেখে হয়তো সে তাচ্ছিল্যই করল। তাইতো পার্থক্যটা সে নিজেই তুলে ধরল,

“চিঠিতে প্রেরকের নাম থাকে। চিঠি সাধারণত ডাকের মাধ্যমে আসে। আর চিরকুট লোকমারফত দেওয়া হয়—যেখানে নাম-ধাম লিখে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

‘লজ্জায় মাথা কাটা যাবার অবস্থা প্রায়। ইমামাকে এভাবে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলতে দেখে ইবরাত ভ্রু কুঁচকে তাকাল তার দিকে। অন্যদিকে ল্যাপটপের স্ক্রিনে ইমামার আরক্ত মুখ দেখে ঠোঁটের এক কোণ এলিয়ে হাসল রিচার্ড।

‘ক্ষণমধ্যেই ইমামা নিজেকে ধাতস্থ পরে আরেকটি প্রশ্ন ছুড়ল নিশানা বরাবর,”আমি আপনার আসল পরিচয় জানতে চাই। একটা নাম না জানা অজ্ঞাত মানুষের সাথে আমি কথা বলতে পারবো না। সম্পর্কে জড়ানো তো দূরের ব্যাপার।”

“আসল পরিচয় বলতে?”

“একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেন না। আমি আপনার সম্পর্কে সবকিছু জানি। শুধু জানতে চাই, যেটা আমি জানি না।”

‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে হাসল ইমামার মুখের দিকে। এবারও এতো সহজে ধরা দিতে চাইল না সে। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলল,

“ওয়েট, একটা লিংক পাঠাচ্ছি। হতে পারে ভবিষ্যতে আপনার কাজে দিবে আইরোনি করার জন্য।”

‘পরপরই একটা লিংক এল। ইমামা কৌতুহলবসত লিংকে ক্লিক করল। সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় স্থির হয়ে গেল ও। চোখ দু’টো বিস্ময়ে বড় হয়ে উঠল৷ মনে হলো যেন বুকটা এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল৷

‘ও কাঁপা কাঁপা হাতে লিখল,”মা-মানে, আপনি গ্যাংস্টার?”

‘স্ক্রিনের এককোণে তখনও ক্ষীণ আওয়াজে বাজছে, Iam gangster wife, to and anybody killa.”

‘ওপাশের জবাবটা এবারও রহস্যে ঘেরা, “মেবি ইয়েস, মেবি নো, হু ন্যোজ!!!! “

‘ইমামা গালিগালাজ পারে না, তবু আজ প্রবল ইচ্ছে হলো বলতে,”আপনি আমার বালের গ্যাংস্টার। সামনে আসার সাহস নেই, আবার মুখে বড় বড় কথা মারায়।”

‘অপর প্রান্তের লোকটা বোধহয় কোনও জাদু জানে। নয়তো এই মুহূর্তে কীভাবে বলে ফেলল,

“সামনে আসলে তো খেতে ইচ্ছে করবে।”

“কাকে?” হতবিহ্বল ইমামা চট করে লিখে ফেলার পর পস্তাল।

“অবশ্যই তোমাকে।”

“আই’ম নট ফুড।”

“বাট ইউ আর মাই মোস্ট ফেব ডেজার্ট।”

“রিডিকিউলাস।”

“হাউ কিউট ইয়্যু আর, বেইবি।”

‘এবার ইমামার মনে প্রবল ইচ্ছা ঝেঁকে বসল একনজর তাকে দেখার। আজ সে একটা জিনিস ভালো করে টের পেল: এই রহস্যময় লোকটার সঙ্গে কথা বললে আর কোনো বিরহ তাকে ছুঁতে পারবে না। পরিবার থেকে দুরত্ব, বন্ধুত্বের সাথে ফাঁক, একের পর এক রহস্যে ডুবে যাওয়া—এসব কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যতক্ষণ লোকটা তার সাথে থাকে, ততক্ষণ সে নিজেকে নিরাপদ মনে করে, যতই সে দূরে থাকুক না কেন।

‘ইমামা ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে লিখল, “আমি আপনাকে দেখতে চাই৷”

“প্রেমে পড়ার জন্য বুঝি দেখতে হয়?”

“হয় না বুঝি?”

“আমি তো না দেখেও হাজার বছর ভালোবেসে যেতে পারব।”

“এতো মানুষের ভীড়ে আপনাকে খুঁজে বের করার জন্য হলেও তো দেখতে হবে। এমন তো কিছু ক্লু দিন, যাতে করে হাজারের ভীড়ে আপনাকে চিনতে পারব, মিস্টার।”

‘এবার রিপ্লাই আসতে একটু সময় লেগেছিল। কিন্তু যখন এলো ইমামা অনুভব করল তার নিঃশ্বাস হঠাৎই থেমে গেছে। একইভাবে সে-ও থেমে গেছে সেই সমুদ্র নীল চোখের গভীরে। অজান্তেই এক হাত চলে গেল তার বুকে, যেখানে হৃদয় ধকধক করছে। কিন্তু অবাক করার মতো সেই ধকনিও থেমে গেছে। স্থির হয়ে আছে সময়ের মাঝেই। মোহাচ্ছন্ন হয়ে নিগূঢ় দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনের দিকে।

‘অনিন্দ্যসুন্দর চোখের মালিক স্থির ও দৃঢ় বাক্যে সমুদ্র নীল চোখের নিচে লিখল,

“আশা করি এবার হাজারের মধ্যে থেকেও আপনি আমাকে চিনতে পারবেন।”

‘লোকটি ভুল বলেনি। তার চোখ অসীম নীল আকাশের মতো গভীর চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি তাকে হাজারের লোকের ভীড়ের মধ্যে থেকে আলাদা করে তাকে আলোকিত করবে। হঠাৎই ইমামার মনে পড়ে গেল প্রচলিত একটি কথা—The plan was to never fall in love, but his eyes…..

‘মুহূর্তের মধ্যেই সমস্ত সংযম ভেঙে পড়ল, দ্বিধা উবে গেল, সব অনিশ্চয়তা মাটিতে মিশে গেল। ইমামা বুঝল সে নিজেকে হারাতে বসেছে।লোকটা ঠিকই তাকে তার জালে জড়িয়ে নিয়েছে। তার কথায় ঠিক ছিল, ইমামা তার প্রেমে পড়বে; সে বাধ্য করবে তার প্রেমে পড়তে।

“আই নো ইউ’আর ট্রাইং টু ট্র্যাপ মি, রাইট? আই উইল কিল ইউ ইফ ইউ এভার ট্রুলি ট্রাই সামথিং লাইক দ্যাট।”

‘রিচার্ড হাসল তার বোকা হরিণীর মুখে অবুঝের মতো কথা গুনে। তবে সে খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল,

“Do you have weapons?”

‘থতমত খেয়ে গেল ইমামা। সত্যিই তো তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই। কিন্তু এই মুহুর্তে এটা স্বীকার করা মানে, হার মানা। হঠাৎ ইমামার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকল বলপেনের ওপর। তৎক্ষনাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। সে বলপেনের তীক্ষ্ণ, ধারালো নিপ বের করে সেটার ছবি তুলে পাঠিয়ে লিখল,

“My weapon.”

‘রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে সরু এক ব্যঙ্গহাসি ফুটল। কিন্তু পরমুহূর্তেই হতচকিত দৃষ্টিতে থমকে গেল ইমামা। কেউ এতটা ধূর্ত আর কপট হতে পারে এই ভাবনাতেই জমে গেল সে। স্ক্রিনে ওর ভেবাচেকা খাওয়া অভিব্যক্তি দেখে রিচার্ড নিচের ঠোঁটটা টেনে নিয়ে ধূর্ত হাসল৷

‘কথার মোড় ঘুরিয়ে উল্টো ইমামাকে বিব্রত করে দেয় রিচার্ড। জবাব না দিয়ে এমন কথা বলল, যাতে ইমামা আরও লজ্জায় পড়ে গেল। সে ছবিটি ক্রোপ করে ইমামার হাতের বড় বড় নখের ছবির সাথে একটি খোলা পিঠের ছবি পাঠিয়ে লিখল,

“Your battlefield babie.”রিচার্ড উঠে দাঁড়ায়। বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্ক্রিনে নিক্ষেপ করে দীর্ঘ, দৃপ্ত পদক্ষেপে কনফারেন্স রুমের দিকে এগিয়ে যায়৷

‘ভড়কে গেল ইমামা। চিবুক শক্ত হয় ওর। দাঁতে দাঁত চেপে লিখল,

“Such a characterless.”

“I’m a gentleman to others, but characterless only for you, Sweety.”

‘রিপ্লাই-এর গতি দেখে ইমামার মনে হলো উত্তর যেন আগেই প্রস্তুত ছিল। সে বুঝতে পারল, এই লোককে এত সহজে টলানো যাবে না। ইমামা আবার লিখল,

“আপনার হাইট?” ও খুঁটিয়ে, খাঁটিয়ে সব জানতে চায়। তাকে দেখার প্রতি তার লাস্যময়ী হৃদয়ে অসীম আগ্রহ জেগেছে আজ।

‘আরও ঝড়ের বেগে রিপ্লাই এল এবার। কিন্তু কোনো মেসেজ নয়, একটা ভিডিও। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সুবিশাল একটি অফিস কক্ষ। যতটুকু দৃশ্যমান তাতে পুরো কেবিনটি আভিজাত্যপূর্ণ। ফোনটি টেবিলের ওপর ক্যামেরা চালু অবস্থায় রাখা ছিল, এমনভাবে যে ছাদ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ ক্যামেরার সামনে একটি ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়ালো, পিঠ দেখা যাচ্ছিল শুধু। শরীরে কালো স্যুট। সেই ছায়ামূর্তি হঠাৎ
শরীর টানার ভঙ্গিতে হাত উপরে উঠতেই তার হাতে ছাদ ছুঁয়ে গেল।

‘ইমামা চমকে উঠল। সে অবাক। লোকটির এমন চালাকি দেখে বারবার শিহরিত হয়। সেই সাথে তার উচ্চতা দেখে বাধ্য হয়ে শুকনো ঢোক গিলল।

‘পরপর কয়েকবার ইমামা লিখল,

“6.2?”

“6.3!”

‘ইমামা বারবার ভিডিয়োটি দেখতে থাকে। লোকটির কাঁধের দিকে তাকাতেই মনে পড়ে গেল পার্টির রাতের সেই একঝলক দৃষ্টি। অজান্তেই ঠোঁটে হাসি ফুটল। তখন লেকচারের ফাঁকে প্রফেসর আনাম কয়েকবার ইমামাকে অন্যমনস্কভাবে লক্ষ্য করছিল। ফোনের দিকে তাকিয়ে ওকে হালকা হাসতে দেখলেই হঠাৎ ডেকে উঠল,

“ইমামা!”

‘ইমামা চমকে উঠে দাঁড়াল। প্রফেসর আনাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

“What’s on your phone?”

‘ফাঁকা ঢোকের সঙ্গে ইমামা থমকে যায়। ক্লাসের সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইবরাত দাঁত গ্রাস করে নিরবভাবে দৃষ্টি রাখছে তার ওপর। সে কয়েকবার সাবধান করেছিল ওকে, কিন্তু ইমামা ফোনে এতটাই মগ্ন ছিল যে…

‘প্রফেসর আনাম আবার বলল,”আন্সার মি।”

‘ইমামা বুঝতে পারছে না কী জবাব দিবে। অপ্রস্তুত ভাব তার চেহারায়। রিচার্ড তখন কনফারেন্স রুমের সবচেয়ে উঁচু চেয়ারে বসে আছে। তার সামনে চারটি ভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী বসে আছেন। আজ বড় একটি ডিলের মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রিচার্ড? সে ছিল না সেখানে। অথচ এখানে তার একটা মতামত সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করছে। সকলে অপেক্ষায় আছে শুধুমাত্র তার একটা সইয়ের জন্য।

‘কিন্তু তার মনোযোগ কনফারেন্সের রুমের দিকে ছিল না। সে একদৃষ্টিতে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকি‌য়ে আছে পলকহীন দৃষ্টিতে, আর বজ্রগতিতে ফোনের কিবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছে ফোনের দিকে না চেয়েই।

‘রিচার্ডের পাশে প্রাচীরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে লুকাস। হঠাৎ, রিচার্ডের অনুভূতিশূণ মুখে তেজের আঁচ অনুভব করতেই সে সতর্ক হলো। রিচার্ড শক্ত চিবুক ধরে লুকাসের দিকে তাকাল। তার সমুদ্র নীল চোখের সাদা অংশ রক্তলাল হয়ে উঠেছে। রিচার্ডের দৃষ্টি পড়তেই লুকাস তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কাউকে ফোন করল।

‘ইমামা তখনও চুপ। অসহায় লাগছে তাকে। প্রফেসর আনাম পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই কঠোর। তিনি শক্ত গলায় কিছু বলার আগে, স্বয়ং প্রিন্সিপাল এসে তাকে ডাকল। প্রফেসর আনাম ইশারায় ইমামাকে বসতে বসে বেরিয়ে গেল।সবকিছু আবারও আগের মতো অস্থিরতা, অপেক্ষা আর রোমাঞ্চ হয়ে যায়।

‘ইমামা এবার লিখল,”আমি কীভাবে বিশ্বাস করবো এটা আপনিই?”

…………

“প্রমাণ দিন।”

“কেমন প্রমাণ?”

“আপনার কোনো এক সিক্রেট বলুন আমাকে, যেটা আর কেউ জানে না।”

“আমি খুব ভয় পেলে কিংবা নার্ভাস ফিল করলে আমার হাত কাঁপে। এই সিক্রেট আর কেউ জানে না। আমার দূর্বলতা আপনিই প্রথম জানলেন, এলিজান।”

‘ইমামা একটু আশ্চর্য হলো বটে। তবে এটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামালো না। পরবর্তী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,

“আপনার বয়স কতো?”

“বুড়ো হওয়ার ফাস্ট স্টেজে আছি।”

“কত?”

“১৪-২-১৯৯৪।”

“একত্রিত?”

“হিসেবে যা আসে।”

“ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্তর না দিয়ে, সোজা উত্তর দিতে কি আপনার কষ্ট হয়?”

“ডক্টরকে জিজ্ঞেস করতে হবে৷”

“কী?”

“সোজা উত্তর দিলে ঠিক কোন জায়গায় কষ্ট হয়।”

“যত্তসব….

“২৪-১২-২০০২, রাইট?”

‘ইমামা অবাক হয় না। যে লোক বাড়ির সমস্ত গার্ড কিনে নিতে পারে, তারা দ্বারা সামান্য জন্মসাল বের করা অসম্ভব না। ইমামা তার মতো এতো পেঁচাল না।

“হুমম।”

‘ফাদার দীর্ঘক্ষণ ধরে কনফারেন্স রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ঠিক পিছনে লুকাস ভীতু চোখে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে, আর শুকনো ঢোক গিলছে বারবার। রিচার্ড ফোন আর ল্যাপটপে এতোটাই ডুবে ছিল যে ফাদারের উপস্থিতি টেরই পাননি। ফাদারের চিবুক ক্রমশ শক্ত হয়ে উঠছে। দু’হাত শক্ত করে মুঠোবদ্ধ করে রেখেছেন। কনফারেন্স রুমে উপস্থিত বাকি টপ বিজনেসম্যানরা থমথমে মুখে বসে আছে; তাদের কারোরই সাহস নেই সামনের মানুষটার বিপরীতে একটি শব্দ উচ্চারণ করার।

‘ফাদারের চোয়ালের ক্রোধের স্ফূরণ আরও তীব্র হয়ে উঠছে। তার সাথে বাড়ছে বিস্ময় রিচার্ডকে এভাবে দেখে। তার রিদ তো এমন ছিল না। যে ছেলেটা টাইম ওয়েস্ট মনে করে কোনো সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট চালায় না, প্রয়োজন ছাড়া ফোন–ল্যাপটপ হাতে নেয় না—যার পৃথিবি ঘুরে কাজ, ডিল টাকা সে রিচার্ড আজ ল্যাপটপের সামনে এভাবে বসে আছে? এভাবে ব্যস্ত হাতে ফোন চালাচ্ছে? আর সেই চোখের দৃষ্টি…? এত বছরে তিনি কখনো রিচার্ডের চোখে এই চাহনি দেখেননি।

‘আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না ফাদার। ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ল্যাপটপটা ছুঁড়ে ফেললেন নিচে। তারপর চিৎকার করে উঠলেন,

“হোয়াট দ্য হেল ইজ গোয়িং অন হেয়ার? এটা মিটিং রুম, কোনো গেমিং জোন না। রিদ, কী হয়েছে তোমার? কী চাইছো তুমি? সারাক্ষণ ল্যাপটপের সামনে বসে থাকা আর হাতে ফোন নিয়ে তুমি আসলে করো কী? টুয়েন্টি-ফোর আওয়ার্স মনিটরিং রুমে কি কাজ তোমার? কোন দুনিয়ায় বাস করছো তুমি? ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে তুলে দিয়ে ঠিক কোন জগতে আছো তুমি? যে রিচার্ড কায়নাত লাভ ছাড়া কিছু বোঝে না, যার একটি ডিল মানেই ভাগ্যের মোড় ঘোরা, সেই রিচার্ড কায়নাত ছয় বিলিয়ন টাকা লস করলো কীভাবে? তুমি কি আদৌ নিজের মধ্যে আছো?”

‘ফাদারের গর্জন তখনও কনফারেন্স রুমের কোণে কোণে ধ্বনিত হচ্ছে। উপস্থিত সবাই আতঙ্কে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে। সবার মুখে স্পষ্ট ভীতি। লুকাস ভয়ার্ত চোখে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চোখেমুখে আতঙ্ক ছায়া ফেললেও রিচার্ডের মুখ শান্ত। সে ধীরে ফোনটা নামিয়ে রাখল। চোখ বন্ধ করে ক্রোধ সংবরণে নিজের মতো করে চেষ্টা করছে। ফাদার সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওকে পরখ করলেন, তারপর সন্দিহান গলায় বললেন,

“কোনোভাবে তুমি আমার মেয়েকে….

‘সম্পূর্ণ বাক্য শেষ হওয়ার আগেই রিচার্ড বিস্ফোরিত হলো। থমকে যাওয়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হলে মানুষ যেমন ঝাঁকিয়ে উঠে, ঠিক তেমনভাবেই দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠল ফাদারের দিকে,

“ডু নট ফরগেট, ইউ আর টকিং টু আ কিং!”

‘রিচার্ডের বজ্রকণ্ঠে সবাই কেঁপে উঠে এক পা করে পিছিয়ে গেল। লুকাসের মতো ঠাঁটবাঁটা মানুষটাও পিছিয়ে গেল। কেবল ফাদার অটল। এ যেন গভীর অরণ্যে দুই হিংস্রের মুখোমুখি সংঘর্ষ।

“দিস ইজ মাই কিংডম, ওকে?” রিচার্ডের রক্তাভ চোখে চোখ রেখে বললেন ফাদার।

‘রিচার্ড আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। রাগে ফনা তুলে ওঠা সাপের মতো হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে। ফাদার বিষ চোখে তাকিয়ে থাকে রিচার্ডের যাওয়ার পানে৷


‘নিজের আঁকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে অবাক বিস্ময়ে হা হয়ে রইল ইমামা। যেন নিজের হাতেই তৈরি করা এক স্বপ্নপুরুষকে প্রথমবার দেখছে সে। বিস্ময় আর মুগ্ধতা দু’টোই ঝলমল করছে তার চোখে। লোকটা কি সত্যিই বাস্তবেও এতটা অপার্থিব সুন্দর?

‘ইদানীং যে মানুষটাকে নিয়ে সে দিনরাত ভাবছে, তার প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি দৃষ্টির ভাঁজ সব খুঁটিনাটি জোড়া দিয়ে আজ রঙে ফুটিয়ে তুলেছে ইমামা। চোখে দিয়েছে গাঢ় নীল আভা, বাঁ-গালে একটা ক্ষতের চিহ্ন, ডান গালে সৌন্দর্যের প্রতীক, একটা টোল, চোয়ালে এঁকেছে কঠোর তীক্ষ্ণতা। যার কথায় এত ধার, তার মুখাবয়বেও সেই ধার তো হবে নিশ্চয়ই! আর পোশাকে দিয়েছে কালো রঙ। কেন যেন লোকটার সবকিছুতেই ইমামার মনে হয় কালোই তার রং, কালোই তার ছায়া। অন্য কোনো রঙ তার শরীর ছুঁতে পারে না। অন্য কোনো আভা তাকে ঘিরে ধরতে পারে না।

‘রংতুলি নামিয়ে ইমামা ঘড়ির দিকে তাকাল। বারোটা বেজে পনেরো. ঈগলটার আসার সময় হয়ে গিয়েছে। এতদিনে ঈগলটার প্রতি ইমামার মায়া জমে গেছে! রোজই অপেক্ষা করে কখন সেটি জানালার ধারে ভিড়বে। মায়াও এখন তার সাথে অপেক্ষায় থাকে। প্রথমদিকে ঈগলটিকে দেখে ভয়ে সিঁটকে থাকত সে; কিন্তু ইমামার মতোই তার ভয়ও এখন গলে গেছে।

‘ইমামা মায়াকে কোলে তুলে জানালার পাশে দাঁড়াতেই দূর আকাশ চিরে ঈগলটি নেমে এল। আজ তার নখে ঝুলছে ব্ল্যাক রোজ আর ছোট্ট একটি চিরকুট। চিরকুটে কেবল দু’টি শব্দ…

“স্যরি, বিউটিফুল।”

‘ইমামার পাথুরে-নরম মুখে হাসি ফুটে উঠল। তখন মেসেজিং-এর মাঝখানে হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়ার অপরাধবোধটুকুর জন্য যে এই আয়োজন তা ইমামা বুঝে নেয় এক মুহূর্তেই। মায়াকে কোল থেকে নামিয়ে ফোন হাতে নিল। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে লিখল,

“Stop being so husbandable
if you can’t be my husband”

‘নিজের মধ্যে এই আমূল পরিবর্তন দেখে ইমামা কিছুটা অবাকই হলো বটে৷ কখনো ভাবেনি, সেও এমন চিপ পিকআপ লাইন মারবে।

‘তবে রিপ্লাইটাও খুব একটা সুবিধার ছিল না।

“let’s go on a trip in the monsoon,
I’ll make you a mom soon.”

‘ইমামার পেটের ভেতর গুড়গুড় করে নাড়া দিয়ে উঠল। পরপর আরেকটি মেসেজ আসলো,

“Are you Hungry? Because i can your belly full for 9 months.”

‘ইমামা দ্রুত হাত থেকে ফোন রেখে দিল। বুঝতে পারল, সে ভুল মানুষের সাথে পিক-আপ লাইন মারতে গিয়েছে। কারণ সে ছিল ফ্লার্টিং মাস্টার।

‘হাত ধোঁয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেল সে। হাত ধুয়ে বের হয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেল নতুন আরেকটা নাম্বার থেকে একটি ভয়েস ক্লিপ এসেছে। ইমামা বুঝতে পারে এটা সেই শয়তানটা। স্পিকারটা কানের কাছে তুলে ভয়েস ওপেন করতেই হঠাৎ বাইকের এক্সজোস্টের কর্কশ গর্জনে পুরো শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। বিরক্তিতে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে টাইপ করল,

“ইউ বাঞ্চ অব ব্লাডি ফুলস, ইফ আই ক্যাচ ইউ, ফার্স্ট আই উইল ডিসট্রয় ইওর বাইক।”

‘শীতল পুরুষালী হাস্কি সুরে আরেকটি ভয়েস এল,

“ওয়ানা রাইড মাই বাইক?”

‘ইমামার রাগ আজ দ্রুত বাড়ছে। ওর চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে। নিজেকে বহু কসরতে সামলে নিয়ে লিখল,

“রুটস অব ইভিল, আই কান্ট রাইড।”

“নো, বেবি। ইউ ডোন্ট নিড টু… ইউ জাস্ট নিড টু রাইড দ্য বাইক।”

“হোয়াট রাবিশ? আর ইউ ইনসেন?” ঘৃণায় চোখ লাল হয়ে যায়।

“নোপ… আই’ম জাস্ট ক্রেজি অ্যাবাউট ইউ, মাই বিউটিফুল ওয়াইফ।”

‘আবারও সেই একই কথা। রাগেশ্রী মুখে আরও কিছু বিশ্রি ভাষায় গালি দিতে যাবে, তখনই ঘটল এক আতঙ্কজনক ঘটনা৷ ইমামা কিছু লেখার আগেই তার কাছ থেকে অলৌকিক ভাবে মেসেজ চলে যায়৷

“ভাবি হয় বাচ্চা! আর ভাবি মায়ের সমতুল্য।
আরেকবার ভাবিকে পঁচা কথা বললে, ভাই কিন্তু কান মুলে দিবে।”

‘হতবিহ্বল ইমামার চোয়াল ঝুলে যায়। ততধিক বিস্ময়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কলি কোমল ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল। তেমনি অধিক বিস্ময় নিয়ে ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো,

“মানে, কে বলছিস তুই?”

‘আবার একই ঘটনা। অলৌকিক ভাবে আরেকটি মেসেজ ছুটল তার তরফ থেকে। তবে এবার ছিল নিঃশব্দ হুমকি,

“ইয়্যুর স্টেপ ফাদার৷”

‘অত্যাধিক বিস্ময় আর ভীতি ঘন কুয়াশার মতো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো ওকে। এসব কী হচ্ছে! নাকি ফোন হ্যাক হয়েছে? কিন্তু এমন নিম্ন কাজ করে করতে পারে! কিছু মনে হতেই অগ্নিশর্মা রাগে চিৎকার করে উঠল ইমামা,

“আর.কে (রিচার্ড কায়নাত)”

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply