সুখময়যন্ত্রনাতুমি শেষ পর্ব
neela_rahman
পর্ব ১৬১
অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আজ নুরকে ।সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হঠাৎ পাঞ্জাবীতে টান অনুভব করল ।টান আর অন্য কেউ না দিয়েছে ওর কলিজা ওর পরী ।
নিচে তাকিয়ে দেখলো পরী অনেক সুন্দর করে সাজুগুজু করে সাদাফ কে টানছে।
সাদাফ জানে এখন কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে ।এতদিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সাদাফ।পরী সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” তুমি আম্মুর দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?আম্মুকে আমার চেয়ে সুন্দর?”
সাদাফ জানে এই প্রশ্নের উত্তর কখনো হ্যাঁ হতে পারবে না ।তাই হাঁটু ভে*ঙ্গে নিচু হয়ে বসে পরীকে ছোট্ট একটি পাপ্পি দিয়ে বললো,” আমার পরীর চেয়ে কেউ বেশি সুন্দর না।”
পরী খুশি হয়ে গেল ।সাদাফ ওকে সুন্দর বললে পৃথিবীর আর কোন কিছু প্রয়োজন হয় না পরীর ।কিন্তু মনে মনে বিরক্ত হল নুর।এখন আর সাদাফ একটু তারিফ করতে পারে না নুরের।সবকিছুতে ভাগ বসিয়ে ফেলেছে পরী। সাদাফ জানে নূরের মন খারাপ হয়েছে ।নুরকে ততটা সময় দিতে পারেনা সাদাফ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ পরী ওকে দখল করে রাখে।
দুজনের মধ্যে অসম একটি প্রতিযোগিতা চলে যেখানে কেউ জিততে রাজি নয় বা কেউ হারতে রাজি নয়।
সাদাফ কে দিনরাত পরিশ্রম করতে হয় দুজনকেই জিতিয়ে রাখার জন্য।
পরী খুশি হয়ে চলে গেল একপাশে ।নূর দাঁড়িয়ে রইল মেজাজ খারাপ হয়েছিল ওর ।কখনো লোকটি নুর কে একটু সুন্দর বলতে পারে না।
একটু এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল নূরকে । বললো,” তুই কি এখনো ছোট রয়ে গেছিস নুর?তোর ছোট্ট পরী যে আগে সুন্দরী শুনতে চায় যদি আমি ওকে বলি ওর থেকে বেশি তুই সুন্দর তখনও কান্না করবে ।ও কান্না করলে আবার তুই নিজেই কান্না করবি ।দুজনকে আমি কি করে থামাবো?
তাই একজনকে আগে খুশি করে দিলাম ।এখন আমার ছোট্ট নূরকে আমি খুশি করব।”
বলেই নূরের গালে একটি চুমু একে বলল ,”আমার চোখে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী তুই ।আর পরী তো আমার বাচ্চা ও তো আমার চোখে সবসময় সুন্দরী হবে।”
স্টেজে বসে আছে সবাই ।কাজী রিমার দিকে তাকিয়ে কবুল বলতে বললে রিমা সুন্দর করে কবুল বলে দিল ।কোন হেজিটেশন নেই ।কিসের হেজিটেশন করবে ?তিন বছর আগেই তো বোমা ফাটিয়ে ছিল সাদাফ সবার সামনে ।বলে ফেলেছিল সাদাফ ভাইয়া সায়মন ও রিমার বিয়ে করিয়ে দাও ।বাস আর কি ?বড় আব্বু আর আব্বু কোনভাবেই না করতে পারেনি।
নওরিন সামিহা বেগমের আর কিছুই করতে হয়নি যা করার সাদাফ করে দিয়েছিল ।যখন সায়মনের প্রথম জব হয় সেদিনই এসে সাদাফ বলে দেয় সাইমনের সাথে রিমার বিয়ে হবে ।তবে এখন নয় দুই বছর পর রিমার পড়া শেষ হবে তারপর।
তখন দুজনে আকদ করিয়ে রেখেছিল ।কবুলটা করানো হয়নি ।আজ শুধু কবুল বললো।আনুষ্ঠানিকতা তাই রিমার মধ্যে কোন হেজিটেশন নেই ।এবার সাইমনের দিকে তাকিয়ে কাজী কবুল বলতে বললে সায়মন খুশি খুশি কবুল বলে দিল।
নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম খুশিতে আপ্লুত হয়ে গেলেন ।রিমাকে দোয়া করে বললেন ,”দোয়া করি তোদের জীবনে ও ছোট্ট পরীর মত এরকম একটা পরী আসুক ।”
পরীর মাথার মধ্যে কথাটা ঢুকে গেল ।ওর মত একটা পরী কি করে আসবে।
পড়ি তো একটাই পড়ি আবার ছোট আব্বু কাছে কিভাবে আসবে?
ঘরে বসে আছে রিমা ।সায়মন দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ।সাদাফ সাইমন এর পকেটে টাকা গুঁজে দিয়ে গেল ।যদিও সাদাফের টাকা সায়মনের প্রয়োজন নেই তারপরও বড় ভাই হিসেবে উপহার দিয়ে গেল।
নুর দাঁড়িয়েছে দরজায় ।সায়মন বললো,” টাকা তো দিবেই টাকা তো তোমার ঘরেই যাবে ।”
সেজন্য নূর বললো, “এত কথা শুনতে চাই না টাকা দাও ৫০ হাজার টাকা না হলে তুমি ভিতরে যেতে পারবে না।”
সাদাফ ৫০ হাজার টাকা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ।সাইমন সেই ৫০ হাজার টাকার সাথে আরও ৫০ হাজার টাকা মোট ১ লাখ টাকা নূরের হাতে দিয়ে বলল ৫০ হাজার আমার পরি আপুর জন্য আর ৫০হাজার টাকা আমার ছোট্ট পরীটার জন্য।
রিমা বাসর ঘরে ঘুমটা দিয়ে সুন্দর করে বসে আছে ।সাইমন ঢুকলো ।ঢুকেই অবাক হয়ে গেল এত লাজুক ভাবে বসে আছে রিমা কল্পনাও করতে পারেনি কখনো।
সাইমন বিছানায় এসে রিমার পাশে বসল ।বসে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছে এত বড় লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে রিমা সায়মন অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে ।এই মেয়ের মধ্যে এত লজ্জা কোত্থেকে আসলো ?হঠাৎ করে রিমা ঠাস করে ঘুমটা খুলে ফেললো। বললো,”আর কত সময় লাগাবে ?এমনিতে কতক্ষণ ধরে বসে আছি তার ওপর এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছো পুতুলের মত হা করে ।ঘুমটা তাও যে খুলতে হবে ।এটা কি তোমাকে শিখিয়ে দিতে হবে?”
সাইমন এবার হাফ ছেড়ে বাঁচল ।যাক রিমা পরিচিত চেহারায় ফিরে এসেছে ।বিছানায় বসে বললো ,”এরকমই হয় চাচাতো বোন বিয়ে করলে তারা আর বউ থাকে না ।চাচাতো বউ হয়ে যায়। বিয়ে হয়েছে লজ্জা পাবি বাসর রাত লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে থাকবি আমি এসে তোর লজ্জা ভেঙ্গে দিব তা না দেখে মনে হচ্ছে যে বাসর ঘরে আমার বউ না চাচাতো বোন বসে আছে।”
রিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাইমনের দিকে ।এবার যেন রিমা সত্যি একটু লজ্জা পেল ।এই শখের পুরুষ রিমার।কত ভালবেসেছে রিমাকে এই লোকটা। না চাইতেই পেয়ে গিয়েছে তার জন্য অবহেলা করবে না ।রিমা যত্ন করবে নিজের শখের পুরুষের ।তাই রিমা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো ।দাঁড়িয়েই নওরিন আফরোজ এর কথা মনে করল ।স্বামীকে সম্মান করতে হয় ।তাই রিমা সাথে সাথে দুহাত দিয়ে পায়ে ধরে সালাম করে বসলো সাইমন কে।
সায়মন অবাক হয়ে গেল । বললো,” তোকে একটু লজ্জা পেতে বলেছি তাই বলে পায়ে ধরে সালাম করতে বলিনি ।এতটা আবার আমার হজম হবে না ।রিমা সায়মনের বুকে একটি জোরে ঘুসি মেরে বলল সব কিছুতে তোমার বাধা।
সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে রইল ।ঠোঁটে ছোট্ট রেখেলএকটি চু*মু একে দিলো রিমাকে ।বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,” আজকে আমার সব স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জানিস ?কত ভয় পেতাম যদি কখনো আমারে স্বপ্নটা পূরণ না হয় তাহলে কি হবে?”
“স্বপ্ন পূরণ হবে না কেন ?দুজন মিলে স্বপ্ন দেখেছি খোলা চোখে স্বপ্ন দেখেছি এই স্বপ্ন তো পূরণ হতেই হত।”বললো রিমা।
রিমা সায়মনের হাত ধরে টেনে নিতে নিতে বিছানার কাছে নিয়ে গেল ।তারপর মোহনীয় রূপে তাকালো সাইমনের দিকে । বললো,” চলো বাসর রাতটা শুরু করে দেই না হলে সময় পাওয়া যাবে না ।”
সাইমন হাসতে হাসতে তাকিয়ে রইলো রিমার দিকে। এ রিমা কেই সাইমনের পছন্দ ।প্রয়োজন নেই লজ্জাবতী লাজুক লতার ।রিমা যেমন আছে তেমনটাই ভালোবেসে ছিল তাহলে এই রিমাকেই চাই সাইমনের।
বিছানায় শুয়ে আছে সাদাফ মাঝখানে ।নূর আর পরী দুজন দুই পাশে কারণ দুজনেরই সাদাফকে চায় ।সমান সমান ভাবে কেউ বেশি না কেউ কম না ।তাই বাধ্য হয়ে সাদাফের মাঝখানে শুতে হয়।
সাদাফ কে জড়িয়ে ধরে আছে নুর।পরীর যেন সহ্য হলো না ।পরী বললো,” ছাড়ো তুমি আমার পাপাকে তুমি সবসময় জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো কেন?”
নুর বিরক্ত হয়ে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে বললো,” আপনার মেয়ে আপনাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ।আপনার মেয়ে পচা।”
পরীর মনে পরল ওর মনের ভিতর একটা প্রশ্ন আছে যেটি করতে হবে ।সাথে সাথে সাদাফ কে টেনে বললো,” পাপা তোমাদের যখন বিয়ে হয়েছিল আমি কোথায় ছিলাম?”
সাদাফ সরল মনে উত্তর দিল ,”বিয়ের আগে তুমি আমার কাছে ছিলে বিয়ের পর তোমার আম্মুর পেটে দিয়েছি ।সাথে সাথে করে বুদ্ধি খুলে গেল ।জানতে চাইলো,”পাপা তাহলে আম্মুর পেটে আমাকে কি করে দিয়েছিলে?”
দাদু বলেছে ছোট আব্বুর আমার মত একটা পরী হবে ।তাহলে পরী টা এখন ছোট আব্বুর কাছে আছে আম্মু কে কি করে পেটে দেবে ?তুমি কিভাবে দিয়েছিলে পাপা ?”
সাদাফ বোকা হয়ে গেল প্রশ্ন শুনে ।এখন এই প্রশ্নের উত্তর কি করে দিবে মেয়েকে।
সাদাফ বললো,” তুমি আমার বুকের মধ্যে ছিলে তোমার আম্মুকে আমি চোখ বন্ধ করতে বলেছিলাম ।তোমার আম্মু চোখ বন্ধ করেছিল ।আমার বুকের থেকে নিয়ে আমি একটি জাদু করে তোমার আম্মুর পেটে দিয়েছিলাম।”
পরদিন সকাল নাস্তা টেবিলে বসে আছে সবাই। হুমায়ুন রহমান এবং ফজলুর রহমানের যেনো খুশির শেষ নেই।
পরী এসে জড়িয়ে ধরলো হুমায়ূন রহমান কে। হুমায়ূন রহমানের ও ফজলুর রহমানের কলিজা পরী।পরী সবার সামনে বললো,”জানো দাদু আমি আগে পাপার ভিতরে ছিলাম পাপা বিয়ের পর আমাকে জাদু করে আম্মুর পেটে দিয়েছে।”
কথাটি শুনেই ফজলুর রহমানের কাশি উঠে গেলো।সবাই লজ্জায় এদিক ওদিক তাকালো।নুর লজজায় মাথা নিচু করে ফেললো।
সাদাফ নির্বিকার। হুমায়ূন রহমান ভাবলেন নাতী টা ছেলের মতোই হয়েছে ঠোঁট কাটা।
হুমায়ূন রহমান বললেন ,”ঠিক আছে দাদু ।এখন খাও ।এসব কথা বলতে হয় না টেবিলের মধ্যে ।”
রিমা কন্ট্রোল করে থাকতে পারলো না ।হাসির রোল পড়ে গেল টেবিলে।
সমাপ্ত_
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রনা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫১
-
এক শ্রাবণ মেঘের দিনে পর্ব ৪+৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০১+১০২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩+২৪
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০৬+১০৭+১০৮
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৭