সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব ১৫৮
ফোন পাওয়ার পর থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য তোর জোর শুরু হয়ে গিয়েছে ।যদিও ভিসা পাসপোর্ট আগে থেকে কমপ্লিট করে রেখেছে সাদাফ যেহেতু জানতো যেতেই হবে ।শুধু ডেট ফিক্সড ছিল না টিকিট কাটা হয়েছে আগামী তিন দিন পরের টিকিট।
অনেক প্রিপারেশন বাকি অনেক শপিং করা বাকি ।সবকিছু করতে হবে এই দুই তিন দিনে মধ্যে।নূর এবং সাদাফ বের হয়েছে শপিং এর জন্য ।আমেরিকায় ঠান্ডা প্রচুর নুর ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না তাই শীতের কাপড় চোপড় বেশি করে কিনে নিয়ে যেতে হবে।
যদিও শীতের কাপড়-চোপড় প্রচুর আছে কিন্তু সেগুলো নিয়ে যাবে না নুর ।সবকিছু নতুন চাই তার।ছোট মানুষ তার উপরে মেয়ে মানুষ।
তার উপরে হানিমুন ।ম্যাডামের কথা শুনতেই হবে ।সাদাফ সুবোধ বালকের মত নূরের পেছনে পেছনে শপিং করতে গেল ।সারাদিন রিমা সায়মন সাদাফ নুর শপিং শেষে বাসায় ফিরল।
নুরের যেন উৎসাহ উদ্দীপনার কোন কমতি নেই ।নূর জানে না ট্রিটমেন্টের জন্য যাওয়া হচ্ছে।শুধু জানে ডাক্তার দেখানো হবে একবার।নুরের তো খুব খুশি লাগছে হানিমুন তাও আমেরিকায় খুব ভালো লাগছে নুরের ।শপিং করে শেষ করে খাওয়া-দাওয়া করে যেন কোন ক্লান্তি নেই আবার প্যাকিং এ বসে গিয়েছে ।কি কি নিবে কি কি নিবে না একটার পর একটা ব্যাগ গুছিয়ে যাচ্ছে নূর।
সাদাফ বিছানায় শুয়ে শুয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কিরে রেডি সব ?প্যাকিং করা শেষ ?”
নুর বললো,” কই শেষ ?মাত্র দুটো ব্যাগ ভরলাম ।এখনো আমার জুতো গোছানো বাকি আছে কসমেটিক গোছানো বাকি আছে ।আপনার ব্যাগ গোছানো বাকি আছে ।১৫ দিনের জন্য যাচ্ছি এটা কি কম সময়? আবার বলেছেন সময় বেশিও লাগতে পারে ।তাহলে আমার তো প্রিপারেশন নিয়ে যেতে হবে যদি সময় বেশি লাগে তখন কাপড়-চোপড় কোথায় পাবো ?”
সাদাফ অবাক হয়ে গেল ।”কোথায় পাবি মানে ?এই দুই ব্যাগ ভর্তি কাপড় এগুলি পড়বি।”বললো সাদাফ।
নুর বললো,” পাগল হয়েছেন ?একবার ছবিতে যে ড্রেস পড়বো পরবর্তীতে সেই ড্রেস পরে আর কোন ছবি আমি তুলতে পারব না ।তাহলে ড্রেস পরে কি লাভ?”
সাদাফ বললো,” ড্রেস পরে কি লাভ ?মানে তোর কি মনে হয় তুই সারাদিন বাইরে থাকবি একটা পর একটা ড্রেস পরে বাইরে বের হবি আর ফটোশুট করবি ?হানিমুনে যাচ্ছি তোকে তো আমি রুম থেকে বের হতে দিব না ।রুমে থাকবি কাপড় চোপড় এতো প্রয়োজন নাই যত কম পড়া যায় ততই ভালো।
আমি তো বলছি এত কাপড়-চোপড় নেওয়ারই প্রয়োজন নাই ।ছোট ছোট কিছু লাগবে সেটা আমি ওখানে গিয়ে কিনে দিবো।”
“খবরদার আরেকটা বাজে কথা বলবেন না ।মুখ খুলে খালি আপনি বাজে কথা বলেন।
আর আপনি এখনও আমাকে তুই করে বলেন কেন ?কত মানুষকে দেখি কত সুন্দর করে বউকে আদর করে তুমি করে বলে ।জানু সো*না করে বলে।আমি কি এখনো আপনার চাচাতো বোন ছোট বোন যে আপনি আমাকে তুই করে বলেন?”
সাদাফ অবাক হয়ে তাকালো নুরের দিকে ।তারপর বললো,”আমি কি তোর চাচাতো বড় ভাই তুইও তোমাকে আপনি করে বলিস ।আমিও তো বন্ধুদের দেখি বউরা কত সুন্দর হ্যাঁ গো ওগো শুনছো কত সুন্দর রোমান্টিক ভাবে ডাকে আর তুই পারিস না সবার সামনে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকিস।”
নুর বললো,” আমার তো লজ্জা করে ।আমি আর আপনি কি এক নাকি ?”
সাদাফ সরু চোখে তাকালো নুরের দিকে ।তারপর বললো,” তুই আর আমি এক না মানে? এখনো এক হতে পারিনি?”
বলেই সাদাফ সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো ।দরোজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সাদাফ।নুর অবাক হলো কথা শেষ না করে দরজার দিকে যাচ্ছে কেন লোকটা ?রাগ করেছে নাকি?
নুর জিজ্ঞেস করলো,” কোথায় যাচ্ছেন ?কি হয়েছে ?রাগ করেছেন নাকি ?”
সাদাফ সাথে সাথে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ,”না দরজা লাগাতে এসেছি ।”
নুর অবাক হয়ে গেল ।”কেন দরজা লাগাতে গিয়েছেন ?”জানতে চাইলো নুর।
সাদাফ বললো,”যা এতদিন করতে পারিনি তাই করব ।”
নুর অবাক হয়ে জানতে চাইলো,” কি করতে পারেননি ?”
“এক হতে পারিনি তাই দরজা লাগিয়ে আসলাম। আয় কাছে আয় আজ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাব আজ ।আর কোন ফাঁ*ক রাখবো না মাঝখানে।”বললো সাদাফ।
নুর বললো,” দেখুন কাছে আসবেন না ।আমি কাজ করছি ।সাদাফ বললো,” দেখতে চাচ্ছি আজ এমন ভাবে দেখব কখনো তুই বলতে পারবি না তুই আর আমি আলাদা ।মিলে মিশে একাকার হয়ে যাব ।”
বলেই নূরের হাত ধরে ফেলল সাদাফ।
সাথে সাথে নুর বলে ফেললো,” ভুল হয়েছে আমার ।সরি সরি ।আপনি আর আমি এক ।আর মিলে মিশে একাকার হতে হবে না ।স্বীকার করে নিলাম আপনি আর আমি আলাদা না।”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।একটু ঝুঁকে বিছানায় বসেই নিচে বসে থাকা নূরের কানে কাছে ঝুঁকে বললো,” আর একটু পরে স্বীকার করতি ?প্রসেস টা শুরু করতাম একাকার হওয়ার তারপরে ।এখন স্বীকার করলি কেন?”
নুরসলজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো হাত ছুটানোর জন্য মোচমোচরি করতে করতে বললো,” ছাড়ুন ! আমার অনেক কাজ আছে ।এখন কিছু হবে না।”
সাদাফ বললো,” এখন তখন বলে কিছু নাই ।আমার মুড ইজ অন আমার এখন চাই মানে এখনই চাই ।”বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সাদাফ।তারপর এক ঝটকায় নূরকে কোলে তুলে নিল ।তারপর ফিসফিস করে বললো ,”বউ আমার বলে এখন নাকি মিলেমিশে একাকার হতে পারি নাই এত বড় অপবাদ মেনে নেওয়া যায় না ।আমার পুরু*ষত্বে আঘাত দিয়েছিস তুই ।আজকে মিলেমিশে একাকার হবোই।”
বলেই নূরকে ধীরে ধীরে বিছানার দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। নুর লজ্জায় সাদাফের বুকে মাথা গুঁজে দিল।
টিকিট কা*টা হলো তিনদিন পরে ।আজ সকাল থেকেই সব প্রিপারেশন নেওয়া শেষ। রাতেই ফ্লাইট সবাই ওদেরকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে যাবে ।১৫ দিনের জন্য যাচ্ছে তাতেই সামিহা বেগম নওরিন আফরোজ যাওয়ার জন্য ব্যাগে খাবার ভরে দিচ্ছেন। সাদাফ অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে আমেরিকার মতো জায়গায় এখন ব্যাগে করে নাকি খাবার নিয়ে যাবে ।তাও মাত্র ১৫ দিনের জন্য যাচ্ছে ।কিন্তু মায়েদের কিছু বলা যাবে না এতে তাদের আবার মুড অফ হয়ে যাবে। সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে আটটার দিকে বাসা থেকে বের হবে ।হুমায়ুন রহমান ফজলুর রহমান রিমা নূর সামিহা বেগম নরিন আফরোজ সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
খাওয়া শেষ হলেই রওনা দিবে তাই একটু আগে খেতে বসেছে আজকে ।এয়ারপোর্টে যাবে শুধু হুমায়ূণ রহমান ফজলুর রহমান ও সায়মন। আর কাউকে নেওয়া হবে না। কারণ আসতে আসতে রাত হবে তাই সাদাফ সবাইকে যেতে মানা করেছে।
নূরের খাওয়া শেষ হাত ধুতে যাওয়ার জন্য উঠবে ওমনি নূরের কি হলো জানেনা ।নূর ধপাস করে নিচে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল ।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ।সাদাফের যেন কলিজাটা খাচা ভে*ঙ্গে উড়ে গেল এমন মনে হচ্ছে ।দৌড়ে গিয়ে সাদাফ নূরকে ধরল।
ফজলুর রহমান হুমায়ন রহমান ও দৌড়ে নূরের কাছে এলেন ।ফজলুর রহমান সাথে সাথে ডাক্তার কে ফোন দিলেন ।ডাক্তার বললেন ,”এক্ষুনি হসপিটালে নিয়ে আসুন।”
চোখে মুখে পানি দিচ্ছে কিন্তু কোনভাবেই জ্ঞান ফিরছে না ।সামিহা বেগম নওরিন আফরোজ কান্না করছে ।রিমা পানির উপরে পানি ছিটা দিয়ে যাচ্ছে ।সাদাফ নুরকে বুকে নিয়ে বলছে ,”নূর চোখ খোল ।কি হয়েছে নূর চোখ খোল।”
সায়মন গাড়ি রেডি করে সাথে সাথে বললো,” ভাইয়া গাড়ি রেডি করেছি ।তাড়াতাড়ি নূরকে নিয়ে এসো ।”
কথাটা শোনা মাত্রই সাদাফ এক মিনিটও দেরি করেনি ।নূরকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে।
চলবে__
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman #family #Romantic
পর্ব_১৫৯
সাদাফ নুর কে কোলে নিয়ে গাড়িতে পিছনে সিটে বসলো ।আজ ড্রাইভ করবে না ।সায়মন ড্রাইভিং সিটে বসলো ।ফজলুর রহমান সাথে উঠলেন।হুমায়ুন রহমান নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম রিমা কে নিয়ে আরেক গাড়িতে আসলেন।
হসপিটালে আসার সাথে সাথে সাদাফ গাড়ি থেকে নেমে নূরকে কোলে নেয়া অবস্থায় হসপিটালে ভিতর প্রবেশ করল।
ডক্টরের সাথে রাস্তায় কথা হয়েছে সে অনুযায়ী ডক্টর ইমারজেন্সিতে ওয়েট করছিল নূরের জন্য ।যেহেতু নূর রেগুলার পেশেন্ট তাই ডক্টর দেরী করলেন না সাথে সাথে ইমারজেন্সিতে নূর কে চেকআপ করা শুরু করলো ।নুর এখনো জ্ঞানহীন অবস্থায় আছে এমন অবস্থায় কিছু টেস্ট লিখলেন সম্ভাব্য যত ধরনের টেস্ট আছে সবগুলোই লিখে দিলেন হঠাৎ কলাপস হবার কারন জানতে।এবং জানতে চাইলেন কতদিন হলো বিয়ে হয়েছে এবং সাংসারিক অন্যান্য কথাও জানলেন।
নুর যেহেতু এখনো জ্ঞান ফেরেনি তাই B-HCG নামক আর একটি টেস্ট যা রক্ত দিয়ে করতে হয় সেটিও লিখে দিলেন কারন ইউরিন টেস্ট এর মাধ্যমে আইডেন্টিফাই করতে আরও সময় লাগবে।তাই ব্লাড টেস্ট দিলেন।তবে কাউকে কিছু বললেন না ভাবলেন রিপোর্ট আসলে একবারে কথা বলবেন।
১ ঘন্টা পর রিপোর্টগুলো সব চলে আসলে ডক্টর নূরের আগে রিপোর্টগুলো যেহেতু সব জানেন বর্তমান রিপোর্টগুলো দেখতে লাগলেন ।দেখতে দেখতে সব রিপোর্ট চেক করা শেষে ফজলুর রহমান এবং সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললেন,” আপনাদের তো আজ আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল তাই না ?”
সাদাফ হ্যা সূচক মাথায় নাড়লো।ডক্টর বললেন ,”আমেরিকায় যেতে হবে না ।বাসায় রেস্ট করুক। প্রয়োজন হলে আমরা সেই ডক্টরের সাথে পার্সোনালি যোগাযোগ করে ওর ফলোআপ গুলো জেনে নিব ।যেন অবস্থায় ওকে কি ধরনের ট্রিটমেন্ট দেওয়া যেতে পারে তাই জানতে পারেন যদি চান।তবে দরকার নেই।কারণ ওকে এই অবস্থায় এতদূর জার্নি করানো টা ঠিক হবে না তাও এমন স্টেজে।”
ফজলুর রহমানের কপাল ঘামছে ।সাদাফের ভিতরে টেনশন ডাক্তার কি বলছে বুঝতে পারছে না ।কেন যেতে হবে না বা নুরের কি হল ?সাদাফ বললো ,”কি হয়েছে আমাদেরকে খুলে বলুন কেন চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যেতে হবে না?”
সাদাফের দিকে তাকালেন ডক্টর।তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর মুচকি এসে বললেন ,”ইউ আর গোয়িং টু বি এ ফাদার।তাই আমেরিকা এই মুহূর্তে যেতে হবে না ।নূরের শরীর এতটা ধকল এতটা জার্নি সইতে পারবেনা ।আর তাছাড়া যার জন্য যাচ্ছিলে তার প্রয়োজন নেই তবে নূর এর ট্রিটমেন্ট দরকার ।ওকে ট্রিটমেন্টের উপরে থাকতে হবে সেটা বাংলাদেশেই সম্ভব।
প্রয়োজন পরে সে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ফিউচার ফলোআপ গুলো ওনার থেকে নিতে পারো তবে তোমাদের জন্য সুখবর এইটাই নূর মা হতে চলেছে ।তবে ওকে একটু দেখে রাখতে হবে। একতো নূরের ওভারিতে সিস্ট দ্বিতীয়ত ওর বয়স অল্প আর এই প্রাইমারি স্টেজে ওকে বেশি মুভ না করানোই ভালো ।মাত্র ফোর টু ফাইভ উইক্স প্রেগন্যান্সি। এজন্যই নূর কলাপ্স হয়ে গিয়েছে ।ও এই অসুস্থতা হয়তো নিতে পারবে না ।প্রথম প্রথম দুই তিন মাস একটু কষ্ট হবে তারপর ইনশাল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে ।তবে ওকে সব সময় ওষুধের উপরে থাকতে হবে যেন সিস্ট বড় না হয়ে যায়।”
সাধাফ হা করে শুনলো শুধু।ফজলুর রহমানের ও একই অবস্থা। যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না ।কি বললো ডক্টর ?তাছাড়া সাদাফ মনে মনে ভাবতে লাগলো ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল প্রত্যেকবার তাহলে নূর প্রেগন্যান্ট হলো কি করে?
সাদাফ ভাবল প্রত্যেকবার তো নিজ হাতে খাইয়ে দেয় নি হয়তো নূর কোন একবার ভুলে গিয়েছিল খেতে তাই ।তবে সাদাফ কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছে ডক্টরকে ।ফজলুর রহমান বললেন আমি বাহিরে যাচ্ছি সবাইকে সুখবর দিতে তুই কথা বল।
ফজলুর রহমান বের হয়ে যেতেই সাদাফ বললো,” আমি প্রত্যেকবার ওকে একটি পিল খাইয়েছিলাম ।প্রবলেম হবে নাতো ?”
ডক্টর বললো,” না সেটা কোন সমস্যা না কনসিভ যেন না হয় সেজন্য হয়তো দিয়েছিলেন কিন্তু যেহেতু কনসিভ করেছে তাই আর কোন সমস্যা নেই ।আর তারপরও ২-৩ মাস পর নুরের একটা আলট্রাসনোগ্রাফি করে নিবেন ।দেখবেন কোন সমস্যা আছে কিনা। আশা করি সমস্যা হবে না কারণ আই পিল (Emergency Contraceptive Pill) খাওয়ার পরও যদি প্রেগনেন্সি থেকে যায়, তাহলে সাধারণত বাচ্চার কোনো জন্মগত সমস্যা হয় না।”
সাদাফের এটাই জানার ছিল বাকি যা জানার ধীরে ধীরে জানবে ।সাদাফ ডক্টর কে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠল ।চেম্বার থেকে বের হয়ে ইমারজেন্সি দিকে গেল ।নূরের এখনো জ্ঞান ফিরেনি শুয়ে আছে নূর ।নুরকে সারপ্রাইজ দিবে এই মুহূর্তে জানাবেও না ।বাসায় নিয়ে গিয়ে তারপর বলবে।
ফজলুর রহমান হুমায়ূন রহমান নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম রিমা সায়মন সবাই কে জানালেন নুর মা হচ্ছে।সবাই খুশিতে কেদে দিবে এমন অবস্থা? সাদাফ কে আসতে দেখে হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে ।হুমায়ন রহমান জানতেন ছেলেটা উপরে না বুঝালেও ভিতরে ভিতরে নূরের জন্য ঠিক কতটা কষ্ট পাচ্ছিল কতটা ভে*ঙে পড়েছিল।
সাদাফ খুশিতে কান্না করে দিল ।হুমায়ূনুর রহমান ছাড়লেন সাদাফকে ।চোখের পানি মুছে দিলেন।বললেন,” ভিতরে যা।”সাদাব সবার দিকে তাকিয়ে বললো,” নূরকে এই মুহূর্তে বলা প্রয়োজন নেই ওকে আমরা বাসায় গিয়ে সারপ্রাইজ দিব।”
সবাই মেনে নিল সাদাফের সিদ্ধান্ত ।সাদাফ ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল নূরের রুমের কাছে ।দেখল নূর এখনো ঘুমিয়ে আছে। ও ছোট্ট পরী ছোট্ট নুর ছোট্ট শিশু বাচ্চাদের মত লাগছে এই মেয়ে নাকি ৯ মাস পর একটি সন্তানের মা হবে ?ভাবতেই অবাক লাগছে সাদাফের কাছে। সাদাফ যত্ন করবে করবে নিজ হাতে যত্ন করবে নুরের।ডাক্তার যেহেতু বলেছে ২-৩ মাস রিস্ক আছে যেহেতু নূরের বয়স অল্প এছাড়ানোর অসুস্থ তাই সাদাফ সারাদিন সারারাত নিজ হাতে যত্ন করবে নূরের ।প্রয়োজন পড়ে তিন মাস পরে অফিসে জয়েন করবে। কিন্তু নূরকে বিছানা থেকে এক পাও নামতে দিবেন না ।নূরের হাত ধরে চোখে পানি ফেলছে আর মনে মনে ভাবছে সাদাফ।
বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এই মনমুগ্ধকর দৃশ্যটি অবলোকন করছে পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য ।সবার চোখে জল তবে আজ খুশির আজ কারো মনে কোন দুঃখ নেই কোন হতাশা নেই ।সবাই খুশিতে যেন পা*গল হয়ে যাবে এমন অবস্থা।
আরো আধাঘন্টা পর নূরের হুঁশ ফিরলো ।যেন লম্বা একটি ঘুম দিয়ে উঠেছে নূর ।চেহারায় তেমন ক্লান্তির কোন ছাপ নেই সুন্দর একটি ঘুম দিয়েছিল।
সাদাফ তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।নূর চোখ পিটপিট করে খুলল ।এক মিনিট এদিক ওদিক তাকালো।যেন নূর বুঝতে পারছে না কোথায় আছে কি হচ্ছে হঠাৎ নুরে মনে পড়ল ওদের না আজ এয়ার পোর্টে থাকার কথা ।আমেরিকা যাবে ।
সাথে সাথে সাদাফের হাত ধরে বললো,” আমরা যাব না ?”
সাদাফ জিজ্ঞেস করলো,” কোথায় ?”
নূর বললো,” আমেরিকা হানিমুনে?”
সাদাফ অবাক হয়ে গেল ।ঘুম থেকে উঠেই আমেরিকা যাওয়ার কথা অবশ্য নূর অনেক শখ করেছিল আমেরিকা যাবে তাই হয়তো ঘুম থেকে উঠে মনে পড়েছে। এখন তো ওদের এয়ারপোর্টে থাকার কথা।
সাদাফ আমতা আমতা করে বললো,” তোর শরীরটা ভালো নেই নুর।ভালো হলে পরে যাব ।প্রয়োজন পড়লে পরে টিকিট কাটবো।”
নুর সাথে সাথে হসপিটালে বেডে উঠে বসল । বললো,” আমি সুস্থ আছি চলুন আমেরিকা যাবো।”
সাদাফ বুঝতে পারছে না কি বলবে বাচ্চা নুরকে ।যে নিজেই বাচ্চার মা হতে চলেছে ।
সাদাফ বললো,”না নূর তুই অসুস্থ দেখিস না ?একটু আগে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলি ।ডাক্তার বলেছে এখন তোকে কোথাও নেওয়া যাবে না সুস্থ হলে তারপর।”
নুর বললো,” ওষুধ দিলে ঠিক হয়ে যাবে ।ডাক্তার কে বলুন ওষুধ দিয়ে দিতে আমি ঘুমাতে ঘুমাতে চলে যাব ।”
সাদাফ বললো,”না নুর দীর্ঘ সময়ের জন্য অসুস্থ হয়েছিস সুস্থ হলে তারপর নিয়ে যাব এখন না।পা*গলামি করিস না।”
“মানে আমাদের হানিমুন ক্যানসেল ।যাওয়া হবে না ।”মন খারাপ করে বললো নুর।
সাদাফ বললো,” হানিমুনে গেলে যা হতো তা আমরা এখানেই করব।”
নুর বললো,” আমি আমেরিকা বেড়ানোর কথা বলেছি হানিমুন মানে ঐসব বলিনি ।আপনি খালি মুখ খুললেই বাজে কথা বলেন।”
সাদাফ মুখে কিছুই বলল না ।সাথে সাথে জড়িয়ে ধরল নূরকে । বললো,” ধন্যবাদ নুর তুই একটা ভুল করেছিলি যার জন্য এত বড় পুরস্কার পেলাম।”
নুর কিছুই বুঝতে পারছে না ।সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” তাহলে চলুন বাসায় চলুন ।আমার হসপিটালে ভালো লাগছে না ।”
সাদাফ বললো ,”ঠিক আছে চল ।”
বলেই নূরকে দাঁড়াতে দিল না ।একটি হুইল চেয়ার নিয়ে এসে চেয়ারে বসিয়ে নূরকে হসপিটাল থেকে বের করল।
নুর ধরে নিয়েছে নুর অসুস্থ কারণ না হলে আমেরিকা যাওয়া ক্যান্সেল হতো না।নুর কখনো প্রেগনেন্ট হতে পারে বা অন্য কিছু এটা নূরের মাথায় আসার কথাই না যেখানে নূর জানে নূরের মা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নূরের স্বপ্নেও একথা আসেনি যে নুর প্রেগনেন্ট হতে পারে ।
বাসায় নিয়ে আসা হলো নুরকে ।রাত বাজে দশটা।নূর বিছানায় রেস্ট করছিল হঠাৎ নুর বিছানা থেকে নামবে এমন সময় দৌড়ে এলো সাদাফ।বললো,” কি করছিস ?তুই বিছানা থেকে নামছিস কেন ?কি লাগবে বল আমাকে বল আমি এনে দিচ্ছি।”
নুর বললো,” আমার ক্ষুধা পেয়েছে কিছু খেতে ইচ্ছে করছে ।”
“আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দে আমি এক্ষুনি যাব গিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে এখনই আসবো ।খবরদার বিছানা থেকে নামবি না ।”বলেই সাদাব দৌড়ে নিচে চলে গেল।
নিচে সবাই বসে ছিল ।সাদাফকে নিচে নামতে দেখেই সামিহা বেগম বললো,” কি হয়েছে ?নিচে নামছিস কেন ?”
সাদাফ বললো ,”আম্মুর নুরের ক্ষুধা পেয়েছে তাড়াতাড়ি কিছু রেডি করে দাও ।এই সময় কি কি খেতে পারবে সে অনুযায়ী কিছু রেডি করে দাও।”
সামিহা বেগম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সাদাফের দিকে ।তাকিয়ে রইলেন বাড়ি প্রত্যেকটা মানুষ ।সাদাফের খুশি যেন ধরছে না ।এই খুশি সাদাফ বাবা হবে এজন্য না এই খুশি শুধু মাত্র নূর মা হতে পারবে সেজন্য খুশি।
আর বেশি নেই।সিজন ২ এর জন্য প্রস্তুত থাকুন।
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৪১+১৪২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯+১০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৩
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১২৫+১২৬+১২৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৬১(শেষ)
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৪৮+১৪৯+১৫০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৫৬+১৫৭