romantic golpo tomar hasite সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৫৬+১৫৭


সুখময়যন্ত্রনাতুমি পর্ব ১৫৬

neela_rahman

familytime

family

সাদাফ তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে নূরের দিকে ।নূরের ভিতর টা কেমন যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে সবকিছু ।হঠাৎ করে নূরের মনে পড়ল নূরের হাতে একটি গিফট বক্স ।নূর যেন সিচুয়েশন থেকে পালাতে চাইছে ।সাথে সাথে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” দেখুন না আপনার বন্ধুরা আমাকে গিফট দিয়েছে ।আসুন দুজনে একসাথে খুলি।”
সাদাফের ঘোর কাটলো নূরের কথায় ।সাথে সাথে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো গিফটের বক্সের দিকে ।এটাতো গিফটের বক্স না যেন এটম বোম খুললেই ব্লা*স্ট হবে নুরের সামনে ।নুর লজ্জা পাবে নুর অনেক ছোট এসব নিয়ে নূরের সাথে কখনো কথা হয়নি আলোচনা হয়নি বা নূর কখনো দেখেনি ।দেখলেই নূর লজ্জা শেষ হয়ে যাবে।
সাদাফ যদিও জানেনা ভিতরে কি কি থাকতে পারে তবে ধারণা করতে পারে কি কি দিতে পারে বন্ধুরা ।তাই দৌড়ে এসে গিফটের বক্সটা হাতে নিয়ে বললো,”থাক এটা কালকে খুলিস আজকে খোলার কোনো প্রয়োজন নেই।”

নুর সাথে সাথে বললো,” না না আজকে খুলবো ।আমার গিফটের বক্স খুলতে খুব ভালো লাগে ।এতক্ষণ যে কি করে ধৈর্য ধারণ করেছিলাম শুধুমাত্র আপনার জন্য ।অপেক্ষা করছিলাম ভাইয়ারা বলে গিয়েছিলো আপনার সাথে একসাথে যেন খুলি। তাই খুলিনি।”

“শালার ঘরের শালারা কি একটা বিচ্ছিরি সিচুয়েশনে ফেলে দিয়েছে সাদাফ কে।ওর ছোট পরী যে এখন একটু পরে লজ্জা কাচুমাচু হয়ে যাবে সেই লজ্জায় ফেলতেই এই কাজগুলো করেছে শালারা।”মনে মনে ভাবলো সাদাফ।

সাদাফ শেষ চেষ্টা করলো । বললো,” দেখ নূর ওরা কিন্তু অনেক দুষ্টু ওরা কিন্তু পচা জিনিস দিতে পারে ।দেখলে তুই লজ্জা পেতে পারিস ভয়ও পেতে পারিস এর চেয়ে বরং আমি খুলবো যদি মনে হয় তোর প্রয়োজনীয় কোন জিনিস আছে তাহলে আমি তোকে দিব আর না হলে ফেলে দিব কেমন?”

নুর বলল ,”না ভাইয়ারা বলেছে এখানে আপনার জন্য গিফট আছে আমার জন্য ও আছে ।সাবা আপুও বলেছে।তাহলে পছন্দ হবে না কেন ?গিফট কি কেউ পছন্দ না করার জন্য দেয় ?কত ভালবেসে দিয়েছে গিফট গুলো আমাকে ?ঠিক আছে আপনি না খুলেন আমি একা একাই খুলছি ।”

বলেই সাদাফের হাত থেকে বক্সটি টান দিলে নূর।
সাদাফ নুরকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা সরুপ বক্সটি ধরে টান দিলো। দুজনের টানা হেচঁড়ায় বক্সটি ছিঁড়ে গেল ।ছিড়ে গিয়ে সবগুলো গিফট একে একে বাইরে বেরিয়ে এলো।

“পিল , কন*ম বিভিন্ন ফ্লেভারের। চিত্তাকর্ষক নাইটি ব্লাক পিনক হোয়াইট। হ্যান্ড*কাফ ডার্ক ডিসায়ার চকলেট ,স্ট্রবেরি, সুইট হানি কি নেই?”
সাদাফ চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল এগুলো দেখে।সাদাফ ভেবেছিল এই ধরনের কিছু কিন্তু এত ধরনের কিছু এত ধরনের আইটেম এক রাতের জন্যই দিয়েছে এগুলো যেন নিজেও হজম করতে পারছে না ।সাদাফ বড় বড় চোখ করে তাকালো নূরের দিকে ।নূরের দৃষ্টি এখনও গিফট গুলোর দিকে যেন পাথর হয়ে গেছে ।বরফ হয়ে গেছে যেন মুখে কোন কথা নেই।

নূরের যেন আর কোন দিকে দৃষ্টি নেই ।শুধু ড্রেসগুলোর দিকে প্যাকেট করা প্যাকেটের উপরে ছবি ছবিগুলো দেখে যেন নূর কিছু বলতে ভুলে গেল ।জাস্ট মাত্রই হাত পা কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেল নূরের ।সাদাফ সবই খেয়াল করছে ।দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে গিফট গুলো একে এসে সব কিছু বক্সের ভিতরে ঢুকাতে লাগলো। ঢুকাতে গিয়ে দুই একটি প্যাকেট নিচে পড়ে গেল ।নূর তাকালো সেদিকে ।তাকিয়ে যেন অবাক হয়ে গেল প্রত্যেকটি প্যাকেটের উপরে যে ছবিগুলো আছে দেখে নূরের আর কিছু বুঝতে বাকি নেই। হ্যান্ডকাফ এর প্যাকেটে অব্দি হ্যানডকাফের ব্যবহার বিধির ছবি।

নূর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বলল ,”এগুলো কি দিয়েছে আপনার বন্ধুরা আমাকে ? ছিঃ আমি এখন তাদের সামনে গিয়ে কিভাবে দাঁড়াবো ?কিভাবে তাকাবো আমার তো লজ্জা ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে।”

কাঁদতে কাঁদতে নূরের আবার দৃষ্টি পড়ল চকলেটের দিকে ।আর স্ট্রবেরির দিকে ।এই দুটো জিনিসই ওর প্রিয় ।বললো যাক এই দুইটা জিনিস একটু কাজের ।কিন্তু এগুলো কি দিয়েছে আপনার বন্ধুরা ?বলে চকলেটের প্যাকেটটি খুলতে লাগলো নুর ।সাদাফ বোকা হয়ে গেল এই চকলেট তো সাধারণ কোন চকলেট নয়। এই চকলেট খেলে যে ভিতরে একটু ডার্ক ডি*সায়ার উৎপন্ন হবে সেটা কি বোকা নুর জানে ?উপরে লেখা আছে নাম।

নূর যেই চকলেট টা খুলে মুখে পড়বে তার আগে সাদাফ চকলেট টা নিয়ে নূরের মুখ থেকে খেয়ে ফেললো।বলেলো,”আমি একটু খেয়ে দেখি কেমন।”

নুর অবাক হয়ে গেল এত বড় মানুষ চকলেটের জন্য এরকম করছে ?

নুর আরেকটু ভেঙে চকলেট মুখে দিবে সেটাও সাদাফ সাথে সাথে নিজের মুখে পুরে ফেললো। তারপর নূরের হাত সবটুকুই ছিনিয়ে নিয়ে নুর কিছু বুঝে ওঠার আগে পুরো চকলেটটা নিজের মুখে দিয়ে দিল।

নুর অবাক হয়ে গেল ।সাথে সাথে বলে উঠলো ,”কি করলেন এটা ?চকলেট গুলোতো আমার জন্য ছিল ।আপনি কেন খেলেন ?খেলেন তো খেলেন সম্পূর্ণ টাই খেলেন। আমার জন্য একটুও রাখলেন না।”

সাদাব সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিতে রাজি কিন্তু নূরকে এই মুহূর্তে বলতে চাচ্ছে না এটা কি ধরনের চকলেট ছিল ।আর নুর খেলে নুরের কষ্ট হতো।তাই বললো,” আমার না খুব ক্ষুধা পেয়েছিল প্লিজ মাফ করে দে নুর ।তোকে আমি সত্যি চকলেট কিনে দিবো আজকে এটা আমি খেয়ে ফেলেছি কিছু মনে করিস না।”

হুমায়ূন রহমান ও নওরিন আফরোজ বসে গল্প করছে ।আজ তাদের সুখের দিন ।তার ছেলেটা বহু সাধনার পর তার শখের নারীকে বিয়ে করতে পেরেছে ।সবকিছু যেন ঠিকঠাক হচ্ছে মনের মত হচ্ছে যেন সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে হুমায়ূন রহমানের কাছে।

নওরিন আফরোজ কিছুক্ষণ ধরে ইতি উতি করছিল কিছু কথা বলার জন্য ।ভাবল আজ উনি এত খুশি নিশ্চয়ই আজকে কিছু বললে উনি রাগ করতে পারবে না ।মেনে নিবেন।তাই নওরিন আফরোজ বললেন ,”আমি আপনাকে একটি কথা বলতে চাচ্ছিলাম যদি শুনতেন।”

হুমায়ূন রহমান অবাক হয়ে তাকালো নরিন আফরোজের দিকে ।এত রাতে কি কথা থাকতে পারে ।তাই এপাশ ফিরে বললেন,”কি হয়েছে বলো ?”

নওরিন আফরোজ আমতা আমতা করলেন কিছুক্ষণ ।তারপরে বললেন ,”আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর এই সিদ্ধান্ত আপনার মেনে নিতেই হবে ।যদি না করেন তাহলে চলবে না। আপনাদের দুই ভাইয়ের কোন কথাই আমরা দুই বউ শুনবো না ।আমরা দুজন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা মেনে নিতে হবে না হলে আমরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব ।যেহেতু আমাদের বলার কিছু নেই কোন অধিকার নেই তাহলে আমরা থেকে কি করব?”

হুমায়ূন রহমান বুঝতে পারছে নওরিন আফরোজ কোন বোমা ফাটাবে। যেহেতু আগে এত ভূমিকা করছে ব্লাকমেইল করছে তার মানে বড় ধরনের কিছু ।হুমায়ুন রহমান উঠে বসলেন ।বসে নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”সত্যি করে বল কি হয়েছে?”

নরিন আফরোজ বুঝতে পারলেন ধরা খেয়ে গেছে ।তাই কোন ভূমিকা না করে বললেন ,”আমি চাই রিমার বাইরে বিয়ে হবে না ।রিমা কে আমরা সাইমনের সাথে বিয়ে দিব আর এই ব্যাপারে আপনাদের কাছ থেকে কোন না শুনতে চাই না ।সাইমনকে আমার খুবই পছন্দ ।এক বছর পর ওর লেখাপড়া শেষ হবে কোম্পানিতে জয়েন করবে বা চাকরি করবে যাই করুক রিমাকে আমি দূরে যেতে দেব না ।নূর যেমন এই বাড়ির মেয়ে এই বাড়ির বউ হয়েছে আমার মেয়েও এই বাড়ির মেয়ে এই বাড়ির বউ হবে ।আমার কথা ফাইনাল আমি এবং সামিহা রাজি বাকিটা আপনারা দুই ভাই সিদ্ধান্ত নিবেন তবে সিদ্ধান্ত যেন না না হয়।”

হুমায়ূন রহমান জাস্ট জানার জন্য জিজ্ঞেস করলেন সিদ্ধান্ত না হলে কি হবে ?

নরিন আফরোজ হুমকি দিয়ে বললেন ,”দুটি জিনিস হতে পারে এক আমি আর সামিহা বাড়ি ছেড়ে চলে যাব ।আর না হলে আপনি সাইমনকে বাড়ি থেকে হয়তো বের করে দিবেন ।সায়মন কে বাড়ি থেকে বের করলেই ওকে আমরা বাহিরে নিয়ে বিয়ে করিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে ভাড়া রাখবো। তবে এই বিয়ে হবে এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেন ছেলে বউ নিয়ে বাড়িতে থাকবে নাকি ফ্ল্যাটে থাকবে।”

হুমায়ন রহমান বোকা হয়ে গেলেন মাঝরাতে তার স্ত্রী তাকে একি শোনালো ?আর এই সিদ্ধান্ত যে উনি একা নিতে পারবে না মেয়ে ওনার হলেও ছেলেটা যে ছোট ভাইয়ের।

এদিকে ফজলুর রহমান ও সামিহা বেগম কথা বলছিলেন।সামিহা বেগম ও বোমা ফাটালেন ।কোন ভূমিকা না করে বললেন ,”আমার একটি কথা আছে কথা যদি শুনেন ভালো আর যদি না শোনেন তাহলে কিছু করার নেই ।আমাদের যেভাবে ভালো লাগবে সেভাবেই করব।”

ফজলুর রহমান বললেন ,”কি বিষয়ে কথা বলছ ?আজ মাত্র মেয়ের বিয়ে দিলাম খুশির দিন এর মধ্যে তুমি আবার কি ভেজাল লাগাতে চাইছো?”

সামিহা বেগম কোন ভূমিকা না করে বললেন ,”আমি সাইমনের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি এবং পাত্রী দূরের কেউ নয় আমাদের রিমা ।রিমা কে আমার খুব পছন্দ রিমা অন্য কারো বউ হবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না ।ছোটবেলা থেকেই ঐ সাইমনের সব কাজকর্ম করে ।খুবই লক্ষী মেয়েটা ।সায়মানের সাথে খুব মানাবে ।আর আপনার বাঁদর ছেলের জন্য বাহিরে বউ খুঁজতে হবে না। বাঁদরের গলার মুক্তার মালা আল্লাহ আমাদের বাড়িতে দিয়ে দিয়েছে ।”

ফজলুর রহমান তাকিয়ে রইলেন সামিহার দিকে ।সামিহা বেগমের সাহসের তারিফ না করে পারলেন না ।কিরকম ঠাস ঠাস কথা বলে ফেললেন ।নূরের সময় আমতা আমতা করলেও এবার যেন সমস্ত রাগ ঝাড়লেন ফজলুর রহমানের উপর।ফজলুর রহমান ভাবলেন ছেলেটা তার একার হল মেয়েটা তো শুধু তার একার নয় ।বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলতে হবে ।না বলে সামিহা কে কিছু বলা যাবে না তাই সামিহার দিকে তাকিয়ে বললেন ,”এখন ঘুমাও এটা নিয়ে কাল সকালে কথা হবে এখন না।”

সামিহা বেগম ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”কথা বলেন আর যাই করেন সিদ্ধান্ত এটাই সাইমনের বউ শুধু রিমাই হবে আর কেউ না।”

এদিকে সাদাফের রুমে চকলেট খাওয়ার ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যে সাদাফের কপাল ঘামতে শুরু করলো ।অস্বস্তি হচ্ছে গরম লাগছে সাদাফের। সাদাফের কেমন যেন লাগছে ।হাত দুটো বারবার মুষ্টিবদ্ধ করছে আর খুলছে ।নূর কানের দুল খুলতে খুলতে বললো,”আপনি এরকম করছেন কেন কিছু কি হয়েছে?”

পা*গলি নুর কে কে বুঝাবে চকলেট খাওয়ার পর সাদাফের কি হয়েছে আর ওটা কিসের চকলেট ছিল ।সাদাফ বুঝাতে পারছে না শুধু ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।

নিচের কমেন্ট এ দেয়া লিংকে ক্লিক করে এড দিয়ে রাখুন।কোন প্রবলেম হলে আইডি খুজে পেতে কষ্ট হবে না।

সুখময়যন্ত্রনাতুমি

neela_rahman #family #familytime

পর্ব ১৫৭

সাদাফ ঘামছে প্রচুর ঘামছে ।শরীর যেন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে এমন অনুভূত হচ্ছে কিন্তু আসলে জ্বর না শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে ।নূর ড্রেসিং টেবিলের সামনে কানের দুল খুলে রেখে চুলে হাত দেবে এমন সময় দেখল সাদাফের অবস্থা।

জোরে জোরে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে সাদাফ। এত দূর থেকেও নুর অনুভব করতে পারছে সাদাফের নিঃশ্বাস ভারী ও ঘন হয়ে আসছে ।সাদাফ ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল পা দুটো নিচে ঝুলে রয়েছে । শার্টের বোতাম গুলো একটা একটা করে খুলতে লাগলো।নুর সাথে সাথে দৌড়ে এসে সাদাফ এর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেন ?আপনার কি অনেক খারাপ লাগছে?”

বলেই নূর সাথে সাথে সাদাফের কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখল শরীরে তাপমাত্রা অনেক ।নুর ভাবলো জ্বর এসেছে ।তাই বললো,” আপনার তো ভীষণ জ্বর ।আমি কাউকে ডাকবো ?”

সাদাফ বললো,” না কাউকে ডাকতে হবে না।”

সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নুরের দিকে।নুরের মনে হচ্ছে সাদাফের খুব সমস্যা হচ্ছে ।নুর উঠতে পারছে না কি করবে ভাবছে।সাদাফ কাউকে ডাকতে ও দিচ্ছে না ।নুর বললো,” আপনার কি ভীষণ খারাপ লাগছে ?কি করবো আমি বলুন ?”

সাদা বললো,” কিছু করতে হবে না ।তুই বুঝবি না ।আমি ওয়াশরুমে যাবো ।”

নুর বললো,” কেন ?”
সাদাফ বললো ,”মাথায় পানি ঢালবো।”

নূর বললো,” আপনার জ্বর এসেছে আপনার কষ্ট করে যেতে হবে না ।আমি এখানে পানি আর কাপড় নিয়ে আসছি ।আপনার এখানে বসে বসে পট্টি দিয়ে দিব।”

সাদাফ দেখছে নুর কে।সাদাফের পছন্দের সিঁদুর রঙা শাড়ী।যেনো ডানা কা*টা পরী।সাদাফ জানে সাদাফের পট্টি তে কাজ হবে না ।কি করে বুঝাবে নুর কে।

নুর ভাবলো কি করা যায় ?বললো,”তাহলে আমি বালতি করে পানি নিয়ে আসছি ।আপনি শুয়ে থাকুন ।আমি মাথায় পানি ঢেলে দিব ।”

সাদাফ বললো,” কোন কিছুতে জ্বর কমবে না নূর। আমাকে ওয়াশরুমে যেতে দে ।”

নুর সাদাফের হাত ধরে বললো,”কি করছেন আপনি ?এই শরীরে ওয়াশরুমে যেয়ে কি করবেন ?”
সাদাফ বললো,” আমাকে শাওয়ার নিতে হবে। অস্থির লাগছে আমার ।মনে হচ্ছে ভিতরে হৃদপিণ্ড আরেকটু হলে ফেটে যাবে।”

নুর বুঝতে পারছে না কি করবে ।নুরের যেন কান্না পাচ্ছে ।সাদাফের হাত ধরে বললো,” কি হয়েছে বলুন না ?আপনি এমন কেন করছেন ?আমাকে বলুন আপনার কি হচ্ছে? কি করলে আপনার এই অস্থিরতা যাবে ?জ্বর কমে যাবে ?কোন ওষুধ খেলে কি করলে আমাকে খুলে বলুন ।আমি সব করছি ।”

সাদাফ নুরের দিকে তাকালো ।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে ।নুরের দিকে তাকিয়ে বললো,” কোন ওষুধ কোন কিছুতেই কাজ হবে না নুর।”

নুর বললো,” তাহলে কিসে কাজ হবে ?কি লাগবে আপনার ?বলুন ।”

সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে আছে ।বুকের ভিতর হৃদপিণ্ড যেমন দ্রিম দ্রিম করছে মনে হচ্ছে ফেটে যাবে।অস্থিরতা বেড়ে চলেছে ।সাদাফ খপ করে ধরল নূরের হাত।

নূর চমকে উঠল ।এভাবে নুরের হাত ধরেছে কেন ?নুর তাকালো সাদাফের দিকে । দেখলো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদাফ। নুরকে আর কিছু বুঝে উঠতে না দিয়েই সাথে সাথে নুরকে হেচকা টানে সাদাফ নিজের বুকে নিয়ে নিল।

ঘোর লাগা কন্ঠে ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললো,” তোকে লাগবে নূর ।ভীষণভাবে লাগবে ।খুব বাজেভাবে লাগবে ।কোন প্রশ্ন করিস না।”

নূরের ভয় লাগছে ।কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে বুকের ভিতর ।সাদাফের স্পর্শে শিহরন বয়ে যাচ্ছে ।ভয় ও হচ্ছে।আগে তো কখনো সাদাফ ভাই এরকম করেনি ।এতটা অস্থির এতটা উতলা কোন কিছুর জন্য হয়নি ।মনে হচ্ছে যেন এই মুহূর্তে সত্যি নূরকেই লাগবে ।নূরকে না পেলে যেন সাদাফ ভাই বাঁ*চবে না যেভাবে বলছে।

নূর সাদাবের বুকে শুয়ে তাকিয়ে রইল সাদাফের দিকে ।সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বললো,” কোন প্রশ্ন করিস না নূর ।চুপচাপ যা হচ্ছে হতে দে।”

বলেই নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নূরের উপরে শরীরে ভার ছেড়ে দিল সাদাফ।নুরের হাত দুটো চে*পে ধরে বিছানায় নূরের ঠোঁট আঁকড়ে ধরল।

যেন সাদাফের আজন্ম পিপাসা যা কোনোভাবেই মিটছে না নূরের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যেন সমস্ত পিপাসা মিটিয়ে নিচ্ছে সাদাফ।

সাদাফের সারা শরীরের গরম উষ্ণ ছোঁয়ায় নূরের যেন মনে হচ্ছে শরীরে আ*গুন ধরে গিয়েছে।

নূর আর কিছু বুঝতে চায় না ।ভাবতে চায় না ।চুপচাপ সয়ে নিল সব।চোখ বন্ধ করে ফেলল নূর।

যে চকলেট টি সাদাফ সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলেছে সম্পূর্ণ খাওয়ার কারণে ঠিক এতটাই প্রভাব পড়েছে সাদাফের উপর যদি অর্ধেক করে খেত বা অল্প খেত তাহলে হয়তো এতটা বাজে প্রভাব পড়তো না ।জাস্ট হালকা একটু ডিজায়ার সৃষ্টি হতো।

নুর সয়ে নিল সাদাফের করা প্রত্যেকটি আগ্রাসী স্পর্শ ।সাদাফ আজ অতিরিক্ত আগ্রাসী হয়ে গিয়েছে ।সাদাফের দাঁত শিরশির করছে কিছু কিছু সময় সাদাফ সহ্য করতে না পেরে নূরের কাঁধে হালকা কা*মড় দিয়েছিল।নুর সহ্য করে নিয়েছে সব ।

ভোর চারটা নূরের যেন সারা শরীর আজ ব্যথা করছে ।এতটা হয়তো কখনো এরকম হয়নি ।সাদাফ ভিতরে ভিতরে খুব অনুতপ্ত ।কিন্তু সাদাফের ও যে কিছু করার ছিল না ।সম্পূর্ণ চকলেট খেয়ে ফেলার কারণে এরকম হয়েছে সাদাফের ।সাদাফ নূরের কাছে হাটু ভেঙে বিছানার কাছে বসে বললো,” খারাপ লাগছে সোনা?”

নূরের চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে বিধ্বস্ত অবস্থা ।ঠোঁটের একপাশে একটু ফুলে গিয়েছে সাদাফের আগ্রাসী স্পর্শের কারনে।সাদাফ ঠোঁটে বুড়ো আঙ্গুল ছুঁয়ে বললো,” আই এম সরি ।আমি কোন কিছু ইচ্ছে করে করিনি।

ভুল হয়ে গেছে আমার ক্ষমা করে দে প্লিজ ।”

নূর সাদাফ কে কোন ভাবে দোষী মনে করে না ।জানে হয়তো কিছু একটা হয়েছিল ।কি হয়েছিল বুঝতে পারছে না তবে এতোটুকু জানে স্বাভাবিক ছিল না সাদাব ভাই।

কারণ এতদিনে সাদাফ ভাইয়ের স্পর্শ জানা হয়ে গিয়েছে নুরের।সাদাফ ভাইয়ের প্রত্যেকটি স্পর্শ পড়তে পারে নূর ।প্রত্যেকটি স্পর্শের ভাষা জানে নূর।

নূর এ যন্ত্রণা নিয়েই বললো,” না কিছু হয়নি ।ঠিক আছে আমি ।”

সাদাফ জানে নুর ঠিক নেই ।নূরের কষ্ট হচ্ছে ।সাদাফ নুরের হাত দুটো নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে বললো,”আই এম সরি ।আমার কিছু করার ছিল না ।প্লিজ ক্ষমা করে দে।”

নুর ধীরে ধীরে সোয়া থেকে একটু উঠে বসলো ।বসতে কষ্ট হচ্ছিল নূরের কিন্তু সাদাফের হাত দুটো ধরে বললো,” আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে না ।আমি আপনাকে চিনি ।আমি আপনাকে জানি ।আমি জানি আপনি হয়তো অসুস্থ ছিলেন না হলে আপনি কখনোই এরকম করেন না।”

সাদাফ নুরের হাটুতে মাথা রেখে বললো,” আই এম সরি নূর। দাঁড়া আমি এখনই তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি আর ওষুধ নিয়ে আসছি ।ওষুধ খেয়ে ঘুমালে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

নুর আটকালো না ।নূরের ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন ।ব্যথা করছে শরীরে ভিষন ।সাদাফ ৫ মিনিটের মধ্যেই নূরের জন্য ফ্রিজ থেকে কিছু খাবার এবং ওষুধ নিয়ে আসলো ।নূরকে যত্ন করে খাবারগুলো খাইয়ে দিতে লাগলো ।নুর ঠোঁটে একটু ব্যাথা লাগছিল তারা খুব যত্ন করে ছোট ছোট লোকমা করে নূরের মুখে খাবার তুলে দিল।

খাবার খাইয়ে দিয়ে ব্যথার ওষুধ খাওয়ালো ।ওষুধ খাইয়ে দিয়ে নুরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,” তুই ঘুমা আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি পাশে বসে ।”

নুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো সাদাফ।নুর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।এই লোকটি নুরের একান্তই নুরের। এই লোকটি কে কখনো কেউ পাবে না ।সাদাফের ভালোবাসা আগ্রাসী স্পর্শ শুধুমাত্র নূরের ।ভাবতে ভাবতে নূর ঘুমিয়ে গেল কখন বলতেও পারবেনা।

সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে আছে ।ঠোঁটের ফোলা অংশটির দিকে তাকিয়ে আছে ।ঠোটের ফোলা অংশে হালকা করে একটু চুমু খেলো সাদাফ।চুমু খেয়ে নূরের পাশে শুয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।

সকাল ১০ টা ।সাদাফ নুর এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি ।নূরের ওষুধের সাথে একটু ঘুমের ওষুধও মিলিয়ে দিয়েছিল সাদাফ যেন সারারাত জাযগার কারণে সমস্যা না হয় ।ঘুমাতে পারে ঠিকমতো। দশটা বাজতেই সাদাফের চোখ খুলে গেল ।ঘুম থেকে উঠে দেখলো নূর ঘুমিয়ে আছে ।ঠোঁটের ফোলা ভাবটা কমে গিয়েছে খুব একটা বোঝা যায় না।

রাগ হলো ভীষণ বন্ধুদের উপর ।শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ ট্রেস হয়ে বের হয়ে নুরকে ঘুমাতে দিয়ে চলে গেল সাদাফ সোহানদের রুমে ।

সোহানদের রুমে নক করতেই সোহান দরজা খুলল ।সাদাফ রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। বললো,” কাল এগুলো কি করেছিস ?কি খাইয়েছিস? সারারাত আমার মাথা ডিস্টার্ব ছিল খেয়ে এগুলো ।সম্পূর্ণ চকলেট আমার খেতে হয়েছে নুর যাতে খেতে না পারে সেজন্য ।এরকম কেউ করে ?”

সোহান বললো,” সম্পূর্ণটা তুই খেয়েছিস ?তুই ঠিক আছিস তো মামা ?”

সোহান সাথে সাথে কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখল জ্বর জ্বর ভাব ।বললো,” সম্পূর্ণটা খেতে গেলি কেন ?দিয়েছি ঠিক আছে তুই একটু খেতি। নুর না বুঝুক তুই তো বুঝতি জিনিসটা কি?”

সাদাফ বললো,” নূর মুখে দিয়ে ফেলবে ওই মুহূর্তে আমার মাথায় কিছু আসছিল না ওর মুখের সামনে থেকে নিয়েই আমি মুখে দিয়ে ফেলেছি ।”

সোহান বললো,” তাহলে এটা আমাদের কি দোষ ?তুই নিয়ে ফেলে দিতি ?তুই খেয়েছিস এখন তুই বোঝ ।যাই হোক তোর বউ ঠিক আছে তো?”

সাদাব সোহানের দিকে তাকালো । বললো,” না খুব একটা ঠিক নেই ।বুঝতেই পারছিস তারপরও আমি ওকে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি ।এরকম ভয়ং*কর কাজ আর কখনো কারো সাথে করিস না ফাজিলের দলগুলো।”

সাদাফের কথাগুলো শুনে রুমে হাসির রোল পড়ে গেল ।সবাই হাসতে হাসতে শেষ ।সাদাফ এর অবস্থার কথা শুনে।

সন্ধ্যায় রিসেপশন নূরের ব্যথা কিছুটা কমলেও কাঁধের মধ্যে কয়েকটা দাগ রয়ে গেছে যা সুন্দর করে না ঢেকে না দিলে বা কিছু লাগিয়ে সেটাকে ঠিক না করে দিলে মানুষ হয়তো দেখে ফেলতে পারে ।সাদাফ সাবা কে বলে দিল এগুলো যাতে বিউটিশিয়ানদের বলে দেয়া হয় ।সাবা সে অনুযায়ী কাজ করল ।বিউটিশিয়ানদের বলে দেয়া হলো দাগ গুলো সুন্দর করে ঢেকে রাখার জন্য নুর যাতে বুঝতে না পারে ।নুরের বয়স কম নুর লজ্জা পাবে সবার সামনে এগুলো রিভিল হয়ে গেলে।

রিসেপশনের জন্য প্রস্তুত নূর ।বিউটিশিয়ানরা যখন নূরের কাঁধে হাত দিয়ে ফাউন্ডেশন ভালো করে লাগিয়ে দাগগুলো মুছে ফেলছিল ঠিক তখনই নূরের চোখ পরল দাগ গুলোর দিকে ।নূর সাথে সাথে চোখ নিচু করে ফেলল।

বিউটিশিয়ানরা নুরের মুখোমুখি বসে আর কিছু বলল না ।চুপচাপ নূরকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিল ।নুর আয়নার দিকে তাকালো দেখল না সবকিছু ঠিকঠাক আছে কোন কিছু বুঝা যায় না।

নুরকে দেখে আরেকবার যেন ক্রাশ খেলো সাদাফ।নুরকে যতবার দেখে ততবারই যেন হুশ হারিয়ে ফেলে সাদাফ।এতটা মোহনীয় রূপে নূর বারবার নিজেকে প্রেজেন্ট করে সাদাফের সামনে ।অথচ কত হালকা মেকআপ যেন মনে হয় মুখে কিছুই দেয়নি তারপরও কতটা সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে নূর কে।

এক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে সাদাফ।নুরু চোখ মেলে তাকালো সাদাফের দিকে ।দুজনকে একসাথে রিসেপশনের জন্য স্টেজে বসানো হলো ।সুন্দর আনন্দমুখর পরিবেশে দুজনের রিসিপশন শেষ হয়ে গেল ।সবাই যার যার মত চলে গেল আজ আর কোন মেহমান বাসায় থাকবে না ।ফ্যামিলির সবাই একসাথে বাড়িতে ফিরল।

১৫ দিন পর। সাদাফের যে বন্ধু ডক্টর ফোন দিল সাদাফকে ।সাদাফ ফোন দেখেই রুমের বাইরে ব্যালকনিতে গিয়ে ফোন ধরল ।বন্ধু জানালো আমেরিকা যে রিপোর্টগুলো পাঠানো হয়েছে উনি স্টাডি করেছেন এবং উনি বলেছেন চিকিৎসা সম্ভব খুব একটা সমস্যা হবে না ।তবে আমেরিকা যেতে হবে একবার দেখিয়ে আনতে। উনি যেভাবে ট্রিটমেন্ট করে দিবে বা ফলোআপ দিবে সেই অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করতে হবে ।বাংলাদেশে এসেও ফলোআপ করতে পারবে।শুধুমাত্র একবার ওনার সাথে দেখা করতে হবে।সাদাফ বললো,”ঠিক আছে ।”

বলে ফোন রেখে দিল ।সাদাফ জানে আমেরিকা একবার হলেও যেতে হবে ।তাই ঠিক করে রেখেছে হানিমুন এর উদ্দেশ্যে যাবে সেখানে গিয়েই ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিবে।

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply