সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
valentinesday
promotion
পর্ব ১৪৫
“কি করেছিস আমার জন্য নূর ?কোন ধরনের পাগলামি করেছিস ?যেসব পাগলামি আমি তোর জন্য করেছি তার এক ছিটে ফুটাও করেছিস ?অথচ যখন একটু তোকে পাওয়ার সময় হল কি এক অদ্ভুত কারণ দেখিয়ে তুই অবহেলা করে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলি!
আমি এতটাই ফেলনা এতটাই অযোগ্য তোর কাছে ?শুধুমাত্র তুই মা হতে পারবি না আর তো মনে হল আমি তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালবাসবো তোর প্রতি আমি অবহেলা করব ?আমাকে তোর এত ছোট মনে হল নূর ?আমার এই ১৭ বছরের ভালোবাসা তোর কাছে কি কিছুই মনে হয়নি?
আর এখন যেই শুনেছিস আমি অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে পারবো বাধবো তখন তোর খারাপ লাগছে ?!তাই না ?আমার কাছে চাচ্ছিস ডিভোর্স তো আমি তোর কাছে চাইতে পারি না সাথে থাকার অধিকার?কোন যুক্তিতে কত বড় সাহস তোর কোন সাহসে তুই বললি তুই আমাকে ছেড়ে দিতে ?ডিভোর্স দিতে শুনি আমি? আমার থেকে ডিভোর্স চাওয়ার সময় তোর বুক কাপে নি?একবারও মনে হয়নি তোর সাদাফ ম*রে যেতে পারে ?মনে হয় নি তোর কাছে?
তাই তুই যদি আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলতে পারিস আমাকে ছেড়ে থাকতে পারিস তাহলে তোর চোখের সামনে আমি এ বাড়িতে নতুন সংসার কেন করতে পারব না?”ক্লান্ত বিদ্ধস্ত অবস্থায় কথা গুলো বললো সাদাফ।
নুর নিজের ভুল বুঝতে পারছে ।কিন্তু সাদাফের বলা শেষের কথাটি আর নিতে পারল না ।সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে সাদাফের কলার ধরে বললো,” খবরদার একবারও ভাববেন না আমি ছোট তাই আপনাকে ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যাব ।চুপসে যাব ।
বউ হই আপনার ।ছোট হই আর বড়। এদিক ওদিক যদি কোনভাবে কিছু করার চেষ্টা করেন সত্যি করে বলছি সংসার করা তো দূর বেঁচে থাকবেন কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই ।একেবারে গলাটা কেটে ফেলবো আমি ।”কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল নূর রাগে ক্ষোভে।
সাদাফ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।কাজ হয়েছে ।এটাই চাচ্ছিল সাদাফ ।এই কথাগুলোই নূরের মুখ থেকে বের করতে চাচ্ছিল সাদাফ ।নুরের হাত ধরল। ধরে পাগলের মত চুমু খেতে লাগলো নুরের হাতে।
তারপর বলল ,”বুঝতে পেরেছিস এবার কি কি বলে ফেলেছিলি তুই আমাকে ?মুখে বলা যতটা সহজ নুর বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা ততটাই কঠিন ।যত সহজে তুই ডিভোর্স চেয়েছিস আমার কাছ থেকে ততটা সহজে তুই আমার কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে বাঁচতে পারবি না ।
আমার সংসার তুই তোর চোখের সামনে দেখতে পারবি না ।তাহলে এই মহৎ হওয়ার নাটক কেন ?কোন সমাজের জন্য কাদের ভয়তে এগুলো করেছিস ?আমি চেয়েছি তোর কাছে সন্তান ?আমি একবারও বলেছি আমার লাগবেই? আরে সন্তানের চাহিদা কার না আছে ?তোর আছে আমার আছে পৃথিবীর প্রত্যেকটা নারী পুরুষের আছে ।
কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস কর আমাকে শুধু আজকে কেন আজ থেকে ৫০ বছর পরও যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমি কাকে চাই আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিব আমি শুধু নূরকে চাই ।প্রয়োজন নেই আমার কোন সন্তান ।তুই যদি পথ থেকে একটি সন্তানকে কুড়িয়ে এনে মমতা দিয়ে তাকে আগলে রেখে নিজে সন্তানের পরিচয় দিতে পারিস আমি খুশি খুশি সেই সন্তানকে নিজের পিতৃ পরিচয় দিব।
আরে পা*গলী মা হওয়ার জন্য জরায়ু লাগেনা ।মা হওয়ার জন্য বুকের ভিতর কোমল একটা মাতৃ হৃদয় লাগে ।যেটা তোর আছে ।তুই তো মা হতে পারবি গর্ভে ধারণা না করিস আমরা এডপ করে নিতে পারব ।তাকে কি আমরা আমাদের সন্তানের মত পালন করতে পারবো না ?কিন্তু আমার জীবন থেকে তুই তোর জীবন থেকে আমি হারিয়ে গেলে আমরা কি কখনো কাউকে পাব? সন্তানের রিপ্লেসমেন্ট না হয় অন্য কোন সন্তান দত্তক নিয়ে নিতে পারব কিন্তু তুই আমার বা আমি তো রিপ্লেসমেন্ট কোথায় পাব নুর?”
নুর বুঝতে পারছে নিজের প্রত্যেকটা ভুল ।বুঝতে পারছে ।নুর জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিল ।সাদাফ নুরের পা জোড়া ছেড়ে খাটে উঠে বসল ।বসে নূরকে জড়িয়ে ধরে গালে কপালে ঠোটে চু*মু খেতে লাগলো।
নূর জড়িয়ে ধরল সাদাফ কে শক্ত করে ।জড়িয়ে ধরে বললো,” আমি যে মেনে নিতে পারছিলাম না আমার অপূর্ণতা ।আমি কখনো মা হতে পারবো না যার জন্য আপনিও কখনো বাবা হতে পারবেন না ।আমার হৃদয় ভে*ঙ্গে খানখান হয়ে গেছে আমি কি করবো বলুন?
কিন্তু আপনাকে আমি ছাড়তে পারবো না ।এটা আমার ভুল ছিল আপনাকে আমি কোন কিছুর বিনিময় ছাড়তে পারবো না ।একটা সন্তান কেন হাজার সন্তানের বিনিময়ে আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো না।
বলুন অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাবেন না কথা দিন আমাকে ।কখনো আমাকে অবহেলা করবেন না সন্তানের জন্য। আপনার চোখে একটু অবহেলা দেখলে যে আমি মরে যাব ।যে চোখে শুধুমাত্র আমার জন্য অপেক্ষা আমার জন্য ভালোবাসা রেখেছি সেই চোখে যদি আমি একটু অবহেলা দেখি আমি মরে যাব সত্যি সত্যি।”কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল নূর ।
সাদাফের হৃদয়টা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে নুরের নুরের আর্তনাদ শুনে।নুরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ,”পাগলি শুধু এই জীবন কেন পৃথিবীতে যদি আমি শতবার জন্মগ্রহণ করি আমার শুধু নূরকেই চাই ॥চাই না আমার কোন সন্তান।
সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাক তুই শুধু আমার থাক নুর ।আমার আর কিছু লাগবে না ।”বলেই নূরের ঠোঁট আঁকড়ে ধরে চু*মু খেতে লাগলো সাদাফ।
চলবে__
Neela Rahman
🚫গল্পটা প্রায় শেষের পথে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ।শেষ যেদিন হবে ঠিক তার পরের দিনে আমি সিজনটু নিয়ে আসব ।সেম হিরো হবে সেম হিরোইন হবে পরিবার সেম থাকবে তবে তাদের গল্পটা ভিন্ন থাকবে ।এর থেকেও সুন্দর হবে গল্পটা ।প্রত্যেকটি চরিত্রের আলাদা একটি গল্প থাকবে এবং আমি খুব মন থেকে লিখব ।এটা তো হঠাৎ করে লিখে ফেলেছিলাম সেটা আরো সুন্দর পরিণত হাতে লিখব ।পড়বেন তো আপনারা সবাই?🚫
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
wishdom #Healing
neela_rahman
পর্ব ১৪৬
ড্রয়িং রুমে বসেছিল সবাই ।সবাই ভাবছে কি হচ্ছে উপরে ?নূর এমন রিয়েকশন করছে।অলরেডি সবাই বুঝে গিয়েছে কারণ ফজলুর রহমান রুমে ঢুকে যখন নিজের ব্যাগ চেক করেছে ফাইলপত্র দেখে বুঝে গিয়েছে নুর ফাইল দেখেছে।
ফজলুর রহমান সাথে সাথে হুমায়ূন রহমানকে জানান যে নুর জানতে পেরেছে ।তাই সকাল থেকে নূর রুমের মধ্যে নিজেকে ব*ন্দী করে রেখেছে ।ফজলুর রহমান বললেন,” সাদাফ যেহেতু এসেছে নুরকে বুঝাবে আমার মনে হয় এখন পরিবারের সবাইকে জানিয়ে দেওয়া উচিত নূরের সমস্যাটা সম্পর্কে।”
নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম রিমা সাইমন সবাই অবাক হয়ে আছে ।কি বলবে সবাইকে তাই ভাবছে।হুমায়ুর রহমান ফজলুর রহমান চুপচাপ মাথা নিচু করে বললেন,” তোমাদেরকে জরুরী একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি।”
সাদাফ নুরের রুমে আছে ।ওখানেই থাকুক ।সাদাফ সব কিছু জানে অলরেডি নুর ও জেনে গিয়েছে। এখন তোমাদের জানানোর পালা । নওরিন আফরোজ বললেন ,”কি বলছেন আমাদের তো বুকটা কাপছে তাড়াতাড়ি সুন্দর করে বলুন কি হয়েছে ?”
সামিহা বেগম বলছে ,”এত ভূমিকা করছেন কেন কি হয়েছে নূরের?”
“নুর হয়তো কখোনো মা হতে পারবে না।তবে ট্রিটমেন্ট এ যদি ওর বডি সাড়া দেয় তাহলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”বললেন ফজলুর রহমান।
কথাটি শোনা মাত্র সামিহা বেগম সোফার উপরে ধাপ করে বসে পড়লেন ।কি বললেন উনি ! এই মাত্র কি বললেন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সামিহা বেগম ।তার মেয়ে তার মেয়ে মা হতে পারবেনা এত বড় কথা লুকিয়ে রেখেছে তার কাছ থেকে!
নওরিন আফরোজ যেন বোকা বনে গেলেন ।কি বলবেন কি রিএকশন দিবেন বুঝতে পারছে না ।নাকি ভুলই শুনলেন তাকিয়ে রইলেন হুমায়ূন রহমানের দিকে ।হুমায়র রহমান মাথা নিচু করে বসে আছে তার মানে কথাটি সত্য।
সাইমন বলে উঠল ,”কি বলছো বাবা ?কবে তুমি শুনলে এ কথা ?এই যে কিছুদিন আগে নুর হসপিটালে ভর্তি হয়েছে তখন বলেছে ডাক্তার ?এক ডাক্তার বলেছে আমরা আরো দশটা ডাক্তার দেখাবো।”
রিমার ও ভীষণ খারাপ লাগছে কথাটি শুনে বারবার শুধু নূরের মুখটা মনে পড়ছে ।নুর তো বাচ্চা ছেলে মেয়ে কত ভালোবাসে ওর সাথে কেন এমন হতে হলো।
ফজলুর রহমান বললেন ,”অবাক হইয়ো না ।এই ঘটনা এই তিন চারদিন আগের ঘটনা নয় এটি হচ্ছে চার বছর আগে প্রথমবার যখন নুরকে হসপিটালে ভর্তি করেছিলাম তখন কার।বাসায় তোমরা কেউ ছিলে না শুধু আমি আর সামিহা ছিলাম ।সামিহাকে তখন জানাইনি হসপিটাল ডক্টর কি বলেছিল ।চুপচাপ নুরের ট্রিটমেন্ট করিয়েছি ওষুধ খাইয়েছি নুর নিজেও জানত না তবে নূর আজকে সকালে ফাইল দেখে জেনে গিয়েছে।
তখন থেকে ঘরবন্দি রয়েছে আমার মেয়েটা ।কাউকে কিছু বলতে পারছে না ।হয়তো কেঁদেছে অনেক কেঁদেছে চিৎকার করেছে কিন্তু ওর চিৎকার হয়তো আমাদের কারো কান অব্দি পৌঁছায়নি ।কিছুক্ষণ আগে যখন রুমে গিয়ে আমি ফাইল চেক করলাম তখনই আমার বুকটা কেঁপে উঠেছে কারণ ফাইলটা আমি এভাবে রাখিনি ।বুঝলাম এখানে নূরের হাত পড়েছিল।
কিন্তু সাদাফ নুরের পাশে আছে সমস্যা নেই ।সাদাফ ওকে সামলে নিবে ।তোমরা সবাই এমন ভাবে ওর সামনে থাকবে যেন এটাতে তোমাদের কিছু যায় আসে না ।আমি জানি যায় আসেনা কিন্তু কেউ ওকে সহমর্মিতা জানাতে বা সান্ত্বনা দিতে যাবে না ।এটা তোমাদের মাথায় রাখবে না ।কিছুক্ষণ পর সাদাফ যখন ওকে নিয়ে নামবে এসব নিয়ে তোমরা ভাববে না ।ওর সাথে কোন আলোচনা করবে না।
সামিহা বেগমের চোখ দিয়ে গড় গড়িয়ে পানি ঝরতে লাগলো ।নওরিন আফরোজ সাথে সাথে এসে বললেন ,”এই পা*গলি তুই কাঁদছিস কেন ?তুই মা হয়ে কাঁদলে আমার নূর কি করবে ?ও তো বাচ্চা মেয়ে ?ও তো আরও কান্নাকাটি করবে ।আমাদের কারো কিছু যায় আসে না নুর মা হতে পারুক না পারুক ।আমাদের চাই নূর সুস্থ থাকুক নুর ভালো থাকুক।”
সামিহা নরিন আফরোজ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন ,” তোমাদের মন অনেক বড় ভাবি।ভাবি আমার মেয়েটা ………আচ্ছা সাদাফ কি করবে ?সাদাফ কি সারাজীবন মেনে নিবে যদি কখনো সন্তান না হয় নুরের?”
ফজলুর রহমান সাথে সাথে বললেন ,”সাদাফের কোন সমস্যা নেই ।সাদাফ সব ভাবে গ্রহণ করতে রাজি । ভালো বাসে নুর কে।আমি ও সংসয়ে ছিলাম।তবে আর নেই।তাই আমিও ওদের সম্পর্কটাকে মেনে নিয়েছি ।সামনে সপ্তাহে ওদের ধুমধাম করে বিয়ে দিব আমি।
আমি চাইনা বাড়িতে কোন শোকের মাতম লেগে থাকুক ।বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে আনন্দ হবে ।সাদাফ আর নুরের ধুমধাম করে বিয়ে হবে।সাদাফ আজকে থেকে এই বাড়িতেই থাকবে ।যেতে দিবোনা ও যতই বলুক। আর সামনে সপ্তাহে ওদের ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে ওদের হানিমুনে পাঠাবো ।সেখানে নূরের ট্রিটমেন্ট হবে সবকিছু আমরা গোছগাছ করে ফেলেছি ।তোমরা শুধু একটু স্বাভাবিক থেকো।”
সবাই চুপচাপ স্বাভাবিকভাবেই নিচে বসে আছে যেন অভিনয় করছে ।চা খাচ্ছে নাস্তা খাচ্ছে ।যেনো কিছুই হয়নি এমন।সাদাফ নুরের হাত ধরে শিড়ি বেয়ে নিচে নামছে ।নুর শিক্ত চোখে তাকালো সবার দিকে ।সবাই কি কিছু জানে ?কিছু বুঝতে পেরেছে ?নাকি শুধু সাদাফ ভাই নুর জানে আর বাবা ছাড়া কেউ জানে না? ভাবছে নুর।
নূরের পা জোড়া যেন থেমে যাচ্ছে ।হাত মুষ্টিবদ্ধ হতেই সাদাফ টের পেল নুরের দ্বিধাদ্বন্দ ।সাদাফ নুরের হাতের আঙুলে ভাজে ভাজে আঙুল গলিয়ে দিয়ে বললো,” নিচে আয় ।”
ধীরে ধীরে নূরকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সাদাফ।চোখের ইশারায় ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান কে বুঝালেন সব ঠিক আছে।তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বললো,”আমাদের চা নাস্তা কোথায় আম্মু,আমাদেরকে ভুলে গিয়েছো?”
কাঁদতে কাঁদতে নূরে চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে ।কিন্তু সামিহা বেগম নওরিন আফরোজ এমন ভান করলেন যেন কিছু বোঝেন নি বা জানেন না ।বললেন,”হ্যাঁ বস বস। তাড়াতাড়ি নাস্তা দিচ্ছি ।তোরা তো উপরে গল্প করছিলি তাই আর ডাকলাম না।”
নুর কে সোফায় বসিয়ে সাদাফ পাশে বসলো ।তারপর সাইমনের দিকে তাকিয়ে বললো,” কিরে কি অবস্থা তোর ?লেখাপড়া কেমন যাচ্ছে ?শুনলাম খুব সিরিয়াস হয়ে নাকি পড়ছিস দুদিন ধরে?”
সাইমন মুচকি হেসে বললো ,”হ্যাঁ প্রতিষ্ঠিত হতে হবে ।তোমার মত হতে হবে।তাই।”
রিমা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল ।এখন রিমা জানে কেন সাইমন মন দিয়ে পড়ছে কেন প্রতিষ্ঠিত হতে চাচ্ছে!
ফজলুর রহমান সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন ,”ভাইজান আপনি বলেন আমরা কি ঠিক করেছি ?”
হুমায়ান রহমান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” তোর জন্য একটা সুখবর আছে ।একটা না একচুয়ালি দুইটা সুখবর আছে ।এক যেটা নিয়ে কোন না বলা চলবে না সেটা হচ্ছে আজকে থেকে তুই এই বাড়িতে থাকবি ।আমরা কোন না শুনবো না।
দুই সামনের সপ্তাহে ধুমধাম করে তোদের বিয়ে দেওয়া হবে ।এটাই আমরা এতক্ষন বসে প্ল্যান করছিলাম।”
সাদাফ বললো,” বিয়ে হোক এখানে থাকার কি দরকার?”
সবাই বলে উঠলো ,”না কোন কথা চলবে না।”
নূর সাথে সাথে চট করে তাকালো হুমায়ন রহমানের দিকে ও ফজলুর রহমানের দিকে ।তার মানে কি তারা মেনে নিয়েছে এই বিয়ে ?নূরের এক মন খুশি হল আরেক মন যেন খুশি হতে পারছে না ।যদিও সবকিছু মেনে নিয়েছে কিন্তু কেনো যেনো এখন নূরের মধ্যে কিছু একটা কিন্তু থেকেই যায় ।থেকে থেকে তো নূরের মন খারাপ হবে এখন।
সাদাফ বুঝতে পারছে নূরের হয়তো আবার মন খারাপ হতে যাচ্ছে ।তাই বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে ।কে কি করবে এখন থেকে প্লান শুরু করে দাও ।অনুষ্ঠান কিন্তু অনেক সুন্দর হওয়া চাই যেমন আমার নূরের পছন্দ সেরকম হওয়া চাই।”
রিমা বলে উঠলো ,”ইস নূরের পছন্দ হলেই হবে আমি যে বরের একমাত্র বোন আমার পছন্দই পছন্দ ।”
সাইমন বলল ,”তুই চুপ করে থাক ।তোর আবার কিসের পছন্দ ?যেমন আমার বোন চাইবে সেরকমই হবে।কারন বিয়েটা আমার বোনের।”
রিমা সায়মনের দিকে তাকিয়ে বলল ,”বেশি কথা বলছ কিন্তু তুমি ?”
সাইমন বললো,” তুই চুপ কর তুই বেশি কথা বলিস।”
নওরিন আফরোজ বললেন,” আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে সবার পছন্দ অনুযায়ী হবে ।কোন সমস্যা নেই ।তাহলে কি আমরা আগামীকাল থেকে সবকিছু আয়োজন শুরু করে দিব ?কারণ সময় কম।কেনাকাটা দায়িত্ব আমাদের উপরে ছেড়ে দিন যা যা শপিং করা লাগে আমরা এগুলো করে নিব ।বাহিরে যাবতীয় যা যা কাজ এগুলো সাইমন সাদাফ এবং আপনারা ভাগ করে নিন।”
নুর তাকিয়ে দেখল সবার আনন্দ বিয়ে ঘিরে।তাকালেন বাবার দিকে। ফজলুর রহমান ও তাকালো নুরের দিকে।যেনো চোখ দিয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাদাফ বললো ,”আমার বিয়ে আমি কি কাজ করব ?আমি তো রিল্যাক্স করবো ।ঘুরব ফিরব মজা করব ।সাইমনকে কাজ দাও ও তো এখন খুব সিরিয়াস ।কাদের কাদের দাওয়াত দেওয়া হবে লিস্ট ওকে দিয়ে দাও ও পার্সোনালি যেয়ে যেয়ে দাওয়াত দিয়ে আসবে ।দেখি কতটা দায়িত্ববান হয়েছে আমার ছোট ভাই।”
সায়মন চট করে বলে ফেলল ,”আমি একা যাবো কেন ?সাথে রিমা ও যাবে ।”
নরিন আফরোজ সাথে সাথে তাকালো সাইমনের দিকে ।সাইমন মাথাটা নিচু করে ফেলল ।নরিন আফরোজ আর না করলো না যেহেতু সবার সামনে বলেছে না করলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়।
এভাবেই বিয়ের আলাপচারিতা চলতে লাগলো ।রাতে ডিনার শেষে সবাই যার যার রুমে গিয়ে রেস্ট করছে ।রাতবাজে বারোটা ।নূর রুমে শুয়ে আছে।
নুরের ভাবতে ভালো লাগছে আজ সাদাফ ভাই এই বাড়িতে আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবে ।
এদিকে সাদাফের ঘুম আসছে না ।মোবাইলটা হাতে নিয়ে চট করে ফোন লাগালো নুরকে ।দুই রিং হওয়ার সাথে সাথে নূর ফোন ধরে হ্যালো বলতেই সাদাফ বললো ,”কে যেন বলেছিল আমাকে অনেক ভালোবাসে ।আমি নাকি অন্য কারো দিকে তাকালে আমার গলাটা কেটে ফেলবে। অথচ সেই ভালোবাসা স্বামী যে পাশের রুমে একা শুয়ে আছে একা একা ঘুমাতে পারছে না সেটা কি সেই বউয়ের খেয়াল আছে?
কোলবালিশ নিয়ে যদি শুয়ে থাকব তাহলে বিয়ে করেছিলাম কেন ?তাও কি একবার বিয়ে করেছি জন্মের পর থেকে বিয়ে করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছি কিন্তু বউকে কাছে পাচ্ছি না।
আবার সামনের সপ্তাহে বিয়ে করব ।এরপর কি বউকে একবারে নিজের কাছে পাবো নাকি বউ আবার নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে?”
সাদাফের আক্ষেপ ভরা কথাগুলো শুনে নূর হেসে ফেলল ।সাদাফের কলি*জাটা যেন ঠান্ডা হয়ে গেল নূরের হাসিটা শুনে ।
তারপর ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো ,”আমার ঘুম আসছে না ।কেউ কি আসবে আমার রুমে একটু মাথায় তেল মালিশ করে দিতে ?চুল টেনে দিতে ?আর কিছু করবো না সত্যি সত্যি শুধু একটু মাথা চুলগুলো টেনে দিবে।”
নুর লজ্জায় চুপ করে রইল ।নূর বিশ্বাস করে না এই লোককে ।শুধু চুল টানিয়ে ছেড়ে দিবে এটা তো মোটেও বিশ্বাস করে না নূর।
চলবে__
আপনাদের কি মনে হয়?নুর যা ভাবছে তাই ঠিক? সাদাফ কি শুধু চুল টানিয়ে ছেড়ে দিবে??
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
promotion #healing
neela_rahman
পর্ব ১৪৭
নুর রুমে বসে ভাবছে যাবে কি যাবে না ?কিন্তু নূরে ও জানে এই ভাবনা মূল্যহীন কারণ ও শেষ পর্যন্ত যাবে ।তাই হাতে তেল নিয়ে নিল একটি বাটিতে করে তারপর সোজা হাঁটা ধরল সাদাফের রুমের দিকে।
দরজার কাছে আসতেই থেমে গেল নুরের কদম। নুরের লজ্জা লাগছে ।বিয়ের পরে এই প্রথম সাদাফ এর রুমে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ।ঢুকবে কি ঢুকবে না কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে কি মনে করবে সবাই।এসব ভাবনার মাঝেই সাদাফ বলে উঠল ,”নূর ভিতর আয় ।কতক্ষন বাহিরে থাকবি।”
নুর চমকে উঠলো।কি করে বুঝলো আমি এসেছি?নুর দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
নুর দরজা ঠেলে ঢুকেই টেবিলে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ।কেমন যেন লাগছে আজকে নিজের বাড়িতে সবাই আছে ।অদ্ভুত লাগছে নূরের কাছে ।আজকে আর চুপে চুপে আসেনি কিন্তু সবাই যদি জেনে যায় কি একটা লজ্জার মধ্যে পড়ে যাবে নূর।
নুরের অবস্থা দেখে সাদাফের মনে মনে হাঁসি পাচ্ছে তাই ঠান্ডা স্বরে বললো ,”দুরে দাড়িয়ে আছিস কেনো? কাছে আয়।”
নুর আমতা আমতা করে বললো,” তেল নিয়ে এসেছি। মাথায় দিবেন বলেছিলেন।”
সাদাফ বললো,” তেল টেবিলে রেখে এখানে আয়।আমার কাছে।”
নুর বলল ,”তেল রেখে আসবো মানে ?আপনি না বললেন মাথায় তেল দিবেন ?”
সাদাফ বলল ,”দিব সময় কি পার হয়ে যাচ্ছে নাকি ?তেলটা রেখে তুই আগে বিছানার কাছে আয় ।কিছুক্ষন চুল টেনে দিবি তারপর যাওয়ার সময় তেল মালিশ করে দিয়ে যাবি।”
নুর তেল রাখলো টেবিলের উপর ।তারপর ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল বিছানার কাছে।
নূর বিছানার কাছে এগিয়ে আসতেই সাদাফ বললো,” এখানে পা মেলে-বস আমি তোর পায়ের উপরে মাথা রেখে শুভ তুই চুল টেনে দিবি।”
নুর চুপচাপ খাটের উপরে পা মেলে বসলো ।কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে লোকটার মতিগতির উপর।সাদাফ জানে নুর কি ভাবছে।তাই নুর কে বললো,” দিনভর শুধু এসব ভাবিস? এত পচা বুদ্ধি তোর মাথায় কোত্থেকে আসে ?সারাদিন এসব ভাবিস তাই না?”
নুর নিজের ভাবনায় লজ্জা পেয়ে গেল ।কি বুঝাতে চাইলো লোকটি ?উনার মধ্যে কিছু নেই সব ভাবনা শুধু নূরের মাথার মধ্যেই?
নূরের ভাবনা চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ করে সাদা নূরের মাথা ধরে কোলে শুয়ে থাকা অবস্থায় ঠোটে চুমু খেলো জোর করে ।বললো ,”তুই যা ভেবেছিলি সব ঠিক ভেবেছিলি ।তোর মাথার মধ্যে পচা চিন্তা ঘোরে আর আমি পচা কাজ করবো এখন। তোর কি মনে হয় আমি এমনি এমনি থেকেছি? সারাদিন অনেক প্যারা দিয়েছিস তুই।এখন সব উশুল করবো।”
বলেই নুর কে বিছানায় চেপে ধরলো সাদাফ।নুর বললো,”কি করছেন ? ছাড়ুন।কেও এসে পড়লে খুব বাজে হবে সিচুয়েশনে।”
সাদাফ বললো,”কেও আসবে না। আচ্ছা দাড়া দরজা লাগিয়ে আসছি।”
বলেই নুর কে ছেড়ে দরজা লাগাতে গেলো সাদাফ।নুর চুপচাপ বসে আছে। কিছু করার নেই।
সাদাফ দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,” তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন ?আমার বিয়ে করা বউ তুই ।দুইদিন পরে আমার রুমে প্রতিদিন থাকবি তো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?”
নুর বললো,” বিয়ের পরে সেটা আলাদা ব্যাপার কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে।”
” লজ্জা কিছু নেই ।কেউ আমার রুমের আশেপাশেও আসবে না ।কারো এত বড় সাহস নেই ।”
বলেই লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জালিয়ে দিল সাদাফ।
সাদাফ নুরের কাছে এসে নূরের কোলে শুয়ে বললো,” এবার মাথার চুল টেনে দে ।”
নুর ধীরে ধীরে সাদাফের মাথার চুল টেনে দিতে লাগলো। সাদাফ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে ।এটা নূর ওর প্রেয়সী ।ওর আদরের ছোট বউ ।অনেক শখের বউ।
নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে বললো,” আমি তোকে অনেক ভালোবাসি নুর ।ভীষণ ভালোবাসি ।কখনও আমাকে ছেড়ে দূরে থাকার কথা চিন্তাও করিস না ।তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না ।”বলেই নূরের কোমরে পেঁচিয়ে পেটে মুখ গুঁজে দিল সাদাফ।
চলবে_
ভীষণ ছোট হলো ।হঠাৎ আমার বাড়িতে মায়ের শরীর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে পুরোটা লিখে কমপ্লিট করতে পারলাম না ।যতটুকু কমপ্লিট হয়েছে দিলাম।
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৭+২৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০৬+১০৭+১০৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮১
-
এক শ্রাবণ মেঘের দিনে গল্পের লিংক
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৪৮+১৪৯+১৫০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১২০+১২১+১২২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯১