বেলতুলি – [১৮]
লাবিবা ওয়াহিদ
[অন্যত্র কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
যখন ওরা হাইওয়ে পার হতে নিচ্ছিল, ওমনি মৌনো নিবিড়কে দেখে থমকে যায়। নিবিড় ঠিক রাস্তার ওপারে। সে কী স্বপ্ন দেখছে? মৌনো টেরই পেল না কিছু সেকেন্ডের মধ্যে মৌনোর দিকে একটি প্রাইভেট কার ছুটে আসছে। রাস্তার ওপার থেকে নিবিড় মৌনোকে স্পষ্ট দেখে চেঁচাল,
–“মৌনো, সাবধানে!”
মৌনো মুহূর্তেই হতবুদ্ধি হয়ে গেল। মস্তিষ্ক সেকেন্ডের জন্য কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। যখনই টের পেল প্রাইভেট কার তার খুব কাছাকাছি ওমনি তার মামাতো ভাই শিহাব তার হাত ধরে টেনে নিল। এতে মৌনো বেঁচে গেলেও তার ডান পায়ে আঘাত পেল। মুহূর্তেই সে রাস্তাতেই বসে পড়ে ব্যথায়। সে ব্যথাকে পরোয়া না করে আবারও ঘাড় বাঁকিয়ে পিছে ফিরল, খুঁজল নিবিড়কে। সে সত্যিই কি নিবিড়কে দেখেছে? শুনেছে? খুব কাছ থেকে মৃত্যু দেখা সত্ত্বেও সে নিবিড়কে ভুলতে পারেনি, এখনো কেমন উদগ্রীব হয়ে আছে।
নিবিড় তখন ব্যাগ নিয়েই দ্রুত রাস্তা পার হয়ে আসে। এতক্ষণে বুশরা মৌনোকে ধরে ফের হাইওয়ে থেকে ফুটপাতে নিয়ে যায়। বুশরা, শিহাব কেউই নিবিড়কে চিনল না। নিবিড়ও তাদের খুব একটা পাত্তা না দিয়ে মৌনোর পা দেখতে থাকে, মৌনো চমকে যায় তাকে দেখে। তাহলে সত্যিই সে নিবিড়কে দেখছে? তার সামনে নিবিড়? কিন্তু কতদিন পর? দেড় মাস? নাকি মাস দুইয়ের কাছাকাছি?
নিবিড় মাথা তুলে মৌনোর ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া মুখটায় তাকাল। মৌনোর মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে। সে ঠিক কী নিয়ে ভাবছে সে নিজেও জানে না।
–“মৌনো, ঠিক আছিস? ব্যথা লাগেনি তো?”
নিবিড়ের গলার সুর চিন্তিত হলেও মুখভঙ্গি প্রতিবারের মতোই শক্ত। এই পুরুষকে কোনো কিছুতেই ব্যস্ত কিংবা ভীতু দেখা যায় না। মৌনো উত্তর দিতে পারল না। নিবিড় এবার তার কাঁধ ছুঁলো, হালকা ঝাঁকিয়ে সম্বিৎ ফেরানোর চেষ্টা করল।
–“মৌনো, স্পিক আপ!”
মৌনোর ধ্যান ভাঙে, মুহূর্তেই তার শরীর কাঁপুনি বেড়ে যায়। বুশরা সঙ্গে সঙ্গে তার মাথা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–“মৌনো, ভয় পাস না। ঠিক আছে সব, কিছু হয়নি।”
মুহূর্তেই চারপাশে মাগরিবের আযান দিল। আযানের শব্দেই বুঝি মৌনো শান্ত হলো। এত বড়ো একটা ঘটনা চোখের পলকে হয়ে গেল সে বুঝে উঠতেই পারেনি। এক মুহুর্তের জন্য ভেবেছিল এই বুঝি হায়াত শেষ। শিহাব মৌনোকে শান্ত হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–“শুকরান আলহামদুলিল্লাহ, তোর কিছু হয়নি। আমি তোকে টান না দিলে কী হতো ভাবতে পারছিস?”
নিবিড় এখনো মৌনোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসা। ভদ্রলোক নীরব চোখে মৌনোকে পরখ করে যাচ্ছে, চোয়াল তখনো শক্ত। আযানটা শেষ হতেই নিবিড় মুখ খুলল, সে কি খসখসে রুক্ষ কণ্ঠস্বর!
–“বয়স কত তোর?”
মৌনো নিবিড়ের মুখ দেখেই যা বোঝার বুঝে নিল। এতদিন পর দেখা, আর দেখার মুখেই এত বড়ো এক গণ্ডগোল! এরকম অদ্ভুত দেখা না হলেই পারত। কিন্তু আফসোস, নিবিড়ের সাথে তার স্বাভাবিক কথোপকথন কিংবা সাক্ষাৎ হবে তা আশা করা বোকামি। সে এক মুহূর্তের জন্য এই অপ্রাসঙ্গিক আশাটা করে নিজেকে বোকা প্রমাণিতও করল।
মৌনো মুখ ভার করে বলল,
–“ঊ-ঊনিশ।”
–“ঊনিশ বছর বয়সে বাচ্চার মা হয়ে যেতে দেখেছি আর এখানে তোর ব্রেইন এখনো হাঁটুতে পড়ে আছে। একটা সেকেন্ড এদিক ওদিক হলে কী হতো ভেবেছিস?”
সাধারণ মানুষ অনেকদিন পর সাক্ষাৎ হলে প্রশ্ন করবে, মৌনো চট্টগ্রামে কি করছে? কেন এসেছে? কোথায় থাকছে, কবে ফিরছে ইত্যাদি। আর মৌনো রাস্তায় বসে শুনছে তার ঊনিশ বছর বয়সেও ব্রেইন হাঁটুতে কেন?
ঠিক ছোটোবেলায় পড়ে গেলে মায়েরা যেমন আরেকটা লাগিয়ে দিয়ে বলে, “পড়ে গেছিস কেন?” মৌনোরও ঘটনা সেরকমই লাগছে। অবশ্য, এই নিবিড় ইশতিয়াকের কাছে সে কি-ই বা আশা করে? আগুনের ফোয়ারা যেন সে, যেই সন্নিকটে যাবে– তাকেই জ্বালিয়ে খাক করে দিবে। কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার, এই লেকচার ছাড়া লোকটার সাথে দেখা কেন হতে গেল? পায়ের ব্যথার চেয়ে বড়ো দুঃখ এখন নিবিড়ের রাগ ঝাড়ার প্রতি হচ্ছে।
মৌনো অযুহাত খুঁজল,
–“বিপদ কী বলেকয়ে আসে?”
–“বিপদ বলে কয়ে আসে না, কিন্তু বিপদ তোকেই কেন চেনে? কিসের এত লটকালটকি তোদের?”
নিবিড় থেমে আবার বলল,
–“মানুষ ট্রাফিক রুলস ফলো না করলে এমোনি হবে।”
বলেই বুশরার দিকে তাকাল। এতক্ষণে শিহাব এবং বুশরা নীরবে দুজনের ঝগড়া দেখছিল। শিহাব কিছু বলতে চেয়েছিল কয়েকবার, কিন্তু বুশরা তাকে আটকে রেখেছিল। নিবিড় বলল,
–“ফার্মেসী দেখা যাচ্ছে, কাইন্ডলি হেল্প হার।”
বুশরা তৎক্ষনাৎ মৌনোকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল। ওরা যখন ফার্মেসিতে পৌঁছাল, তখন থেকেই শিহাবের কলের ওপর কল আসছে। বাড়ি থেকে কল করছে, নিশ্চয়ই সন্ধ্যা হয়ে গেছে বলেই বাড়ির লোকেরা এমন ব্যস্ত। শিহাব মিথ্যে বলার ভয়ে কল ধরতে চাইল না। নিবিড় চোখ-মুখ শক্ত করেই দাঁড়ানো, আপাতত মুখে কূলুপ এঁটেছে সে। ফার্মেসীর অল্প বয়সী ছেলেটা মৌনোর পা ধরতে চাইলে নিবিড় বাঁধা দেয়। গাম্ভীর্য বজায় রেখেই বলল,
–“পা না ধরেই চেক করুন।”
মৌনোর ইতঃস্তত নিবিড় ধরতে পেরেছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। মৌনো এক মনে পায়ের দিকে চেয়ে রইলো, সে নিবিড়কে কি করবে? নিবিড়ের বকা খেলে এই মনে হয় তার সামনে আসাই উচিত হয়নি, আবার মুহূর্তেই নিবিড়ের ছোটো ছোটো দিক খেয়াল করাটা তাকে গলিয়ে দেয়। তার কি করা উচিত? রাগ, অভিমান নাকি এড়িয়ে যাওয়া? উত্তর পেল না সে।
মৌনোর পায়ের গোড়ালির কিছুটা উপরে ছিলে গেছে, তেমন চিন্তার কিছু না। শুধু একটু এলকোহল মেডিসিন দিয়ে পরিষ্কার করে দিল- এই যা! নিবিড় নিজেও অন্যকিছু লাগাতে নিষেধ করে দিয়েছে। তবে নিবিড় একটা মলমের নাম বলল, যেটা দিলে নাকি ছিলে যাওয়া জায়গায় দাগ পড়বে না। মৌনোর পা তুলনামূলক বেশ ফরসা, দাগ হলে সহজেই দেখা যাবে। মৌনোও চাইল না দাগ হোক, এমনিতেই তার গায়ে ছোটোবেলায় যেখানে সেখানে উলটে পড়ার বহু দাগ আছে, একসময় সেও যে এশার মতো বিচ্ছু ছিল। সম্ভবত রিমঝিমও ছিল। কিন্তু এশা এখনো জানে না। মা মনে করেন এসব জানলে তার দস্যিপনা আরও বাড়বে।
মৌনো হাঁটতে পারছে, তবে কিছুটা খুড়িয়ে। এই অবস্থায় তাদের সিএনজি ডাকা লাগল। অথচ পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটেই যেতে পারত। সিএনজিতে নিবিড়ও উঠে বসেছে, মৌনোর পাশে। যেন সে বাড়িতে নালিশ দেওয়ার পায়তারা করছে। মৌনো মাঝখানে বসেছে, তার অপর পাশে বুশরা। সে তখনো ঘাড় বাঁকিয়ে বারবার নিবিড়কে পরখ করছে। যেন খুব কঠিন কোনো অংক মেলানোর চেষ্টায় আছে। বুশরা এবং শিহাব একই বয়সের, তার থেকে দুই বছরের বড়ো ওরা। দুজনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। শিহাব সিএনজির সামনের সিটে বসা।
কিন্তু কী আশ্চর্য! নিবিড় তো একবারও কিচ্ছু জিজ্ঞেস করল না তার এখানে আসার বিষয়ে, মৌনো কিভাবে আসল? কোথায় যাচ্ছে? উলটো নিবিড় তাদের সাথে বসে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত, মানুষের তো সামান্যতম কৌতুহলও থাকতে পারে তাই না? এর মানে কি এই লোক নেভিতে গিয়ে জীবনের সব রসকষ খুইয়ে বসেছে? ইয়ামিন মামা জানলে নিশ্চয়ই বলত,
–“খুবই চিন্তার বিষয়, অল্পতে জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা অতিপ্রাকৃত ঘটনা।”
হতেও পারে নিবিড় আগে থেকেই এখানে আসার কথা জানে। তবে এটা নিশ্চিত, সে জানত না তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত দেখা হবে। নিবিড়ের ক্লান্ত মুখ তো তাই বলছে। নিশ্চয়ই সারাদিন ট্রেনিং-য়ে ছিল?
শিহাব আর নিজের কৌতুহল দমাতে পারল না। সামনের সিটে বসেই মুখ খুলল,
–“সরি টু স্যে, আপনি কে? আমি বুঝেছি মৌনোকে আপনি আগে থেকেই চেনেন। কিন্তু আমরা আপনার ঠিকঠাক পরিচয় জানি না।”
নিবিড় ঠান্ডা গলাতেই বলল,
–“নিবিড়, নিবিড় ইশতিয়াক।”
পরমুহূর্তেই মৌনো নিবিড়ের দিকে তাকাল। ঝাঁকুনিতে তাদের বাহু স্পর্শ করছে। মৌনো মিনমিন করে বলল,
–“নি..নিবিড় ভাই, আমাদের প্র-প্রতিবেশি।”
বুশরা অস্ফুট স্বরে বলল,
–“প্রতিবেশি? সে তো থাকবে তোদের বাড়ির পাশে, ঢাকায়। চট্টগ্রামে কি করছে?”
নিবিড় বুশরার ফিসফিসানি শুনতে পেল। সে তিন শব্দে বলল,
–“আমি এখানেই থাকি।”
বুশরা আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। সে এখনো বেশ কনফিউজড, আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেসও করা যায় না। মৌনো তাই তার আগ্রহ ঘুচাতে মিনমিন করে বলল,
–“নেভিতে আছেন ভাইয়া, আশেপাশে কোন কলোনি আছে বলেছিলে না? সম্ভবত ওখানেই থাকে।”
এতক্ষণে বুশরার অংকের শেষটা মিলল। কি আশ্চর্য, তাদের সাথে নেভি সাহেব ঘোরাফেরা করছে? মুখে লাগাম টানতে হবে, আজেবাজে কিছু বলা যাবে না। ঊনিশ থেকে বিশ হলেই তো আবার বিপদ। বুশরার আর সাহস হলো না গলা উঁচিয়ে কিছু বলার।
ওদের কথার মাঝেই ওরা বাংলোর সামনে চলে আসল। ভাড়াটা নিবিড়ই দিল। নির্ধারিত ভাড়াটা এমন ভাবে দিল যেন এই এরিয়া তার বেশ চেনা। শিহাবের অবশ্য সুবিধে হলো, ভাড়া দেওয়ার ঝামেলা পোহাতে হলো না। কিছু টাকা সেভিংস হলো ভেবেই সে তরতাজা অনুভব করল। নিবিড়ের হাতে তখনো বাজারের সেই ব্যাগ, ওতে কি আছে কে জানে?
ইয়ামিন সম্ভবত কিছুটা এগিয়েছিলেন। ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় ওদের দেখতে পেয়ে দ্রুত চলে আসলেন। ওদের দেখে চিন্তিত স্বরে বলল,
–“এত দেরী কেন? আমি সবাইকে ম্যানেজ করেছি, সেঝো ভাই এসেছে! বারবার জিজ্ঞেস করছিল তোদের কথা।”
–“দুঃখিত মামা, আসলে দেরী হয়ে গেল।”
বুশরার কথা শুনে ইয়ামিন এবার নিবিড়ের দিকে তাকাল। উঁচু, লম্বা যুবককে দেখে তার ভ্রু কুঁচকে গেল। ছেলেটাকে তার চেয়েও লম্বা দেখে তার পুরুষ ইগোতে ব্যথা লাগল। সে লম্বায় পাঁচ ফিট দশ! একটুর জন্য ছ’ফিট ছুঁতে পারেনি। কাছাকাছি কলোনি আছে নেভিদের। ওদেরও এমন উঁচা লম্বা দেখে, তার যে কত বুকে ব্যথা হয়। সে ছোটো থেকে লম্বা হওয়ার প্রতি অবসেসড! চারপাশে সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলত সে একদিন ছ’ফিট ছুঁয়ে যাবে। তার সেই অহংকার নিঃশেষ করে দিল আল্লাহ। সেঝো ভাই তো প্রায়ই তাকে খ্যাপায়।
–“তোমাকে যে চিনলাম না?”
–“আমি মশিউর মুন্সীর ছেলে, নিবিড়!”
শিহাব, বুশরা উজবুকের মতো নিবিড়কে চিনতে না পারলেও ইয়ামিনের চিনতে অসুবিধে হলো না তাকে। সে মুহূর্তেই গিয়ে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরল।
–“আরে নিবিড় যে, কত বড়ো হয়ে গেছ। এসএসসি পাশের পর যখন আপার কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম তোমায় স্কুলে পড়তে দেখেছিলাম। মনে আছে আমাকে? চিনেছ? আমি ইয়ামিন, তুমি আমাকে মামু বলে ডাকতে।”
নিবিড়ের সাথে ইয়ামিনের ভাব দেখে মৌনো অবাকই হলো। তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল রাজিয়া শেখের কথা। মা বলেছিলেন ইয়ামিন এখানে এসে বেশিরভাগ নিবিড়ের সাথেই মিশতেন। নিবিড় তার থেকে মাত্র তিন বছরের ছোটো। মানুষের মস্তিষ্ক অনেক কিছুই ভুলে যায়, তেমনই মৌনো ভুলে গিয়েছিল নিবিড়ের সাথে ইয়ামিনের সখ্যতা।
নিবিড় বলল,
–“জি চিনেছি। কেমন আছেন?”
–“ফর্মালিটি ছাড়ো! আমাকে হাইটে হারিয়ে দিবে কে জানত? তাছাড়া তুমি চট্টগ্রামে যে? আপার থেকে শুনেছি তুমি ডিফেন্সে আছ।”
–“জি, সর্বশেষ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার পদে নিযুক্ত হলাম। চট্টগ্রামে বদলি হয়েছি বেশিদিন হয়নি। ট্রেনিং-এ আছি আপাতত।”
ইয়ামিন বাচ্চাদের দূর-ছাই করতে চাইল। কিন্তু মৌনো কিংবা শিহাব, বুশরা এক পাও নড়ল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের আলাপ শুনছে। শিহাব, বুশরা তখনো এই ভদ্রলোককে চেনার চেষ্টা করছে। বুশরা মৌনোর কানে ফিসফিস করে বলল,
–“প্রতিবেশির সাথে এত কিসের সখ্যতা?”
–“থাকতে হয়।” মৌনোর উদাসীনা গলা।
ইয়ামিন ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
–“ধুর, আমিও কী বোকা, রাস্তাতেই আলাপ করতে শুরু করেছি। বাইরে দাঁড়িয়ে কেন, ভেতরে আসো। আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে, বুঝলে? খুব শীঘ্রই সংসার ধর্ম করতে যাচ্ছি। দাওয়াত রইলো, বউভাতে তোমার উপস্থিতি চাই। কোনো ‘না’ শুনছি না।”
নিবিড় মৌনোর দিকে তাকাল। এই খুশির খবরেও নিবিড়ের মুখে হাসি নেই। সে ছোটো করে বলল,
–“আজ সম্ভব না, আমার কলোনি ফিরতে হবে।”
–“যাও, জোর করলাম না। তবে বিয়ের কথা ভুলো না, আসতেই হবে নিবিড়। এটা এই মামার আদেশ।”
–“চেষ্টা করব।”
ইয়ামিন নিবিড়ের নাম্বার নিয়ে তার থেকে বিদায় নিল। শিহাব, বুশরা তাকে অনুসরণ করলেও মৌনো তখনো সেখানে দাঁড়ানো। ওরা কিছুটা যেতেই নিবিড়কে অনুরোধ করল,
–“প্লিজ, এই এক্সিডেন্টের কথা কাউকে বলবেন না।”
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে বলল্,
–“তা কেন?”
–“তারা জানলে আমাকে বের হতে দিবে না। সাত দিন নিশ্চয়ই আমি ঘরে বসে থাকার জন্য আসিনি।”
–“তো থাকবি ঘরে। তোর মতো মানুষের বের হওয়ার কী প্রয়োজন?”
–“না, না। কাউকে বলবেন না।”
–“বলা উচিত। অন্তত নেক্সট টাইমের জন্য সাবধান হবি।”
নিবিড় পিছে ফিরে চলে যেতে নিলে মৌনো পিছুডাক দিল।
–“তাহলে আগামীকাল রেললাইনে ঘুরতে নিয়ে যান।”
নিবিড় থমকে দাঁড়ায় মৌনোর অনাকাঙ্ক্ষিত অনুরোধে। মৌনোও যে লাগাম ছাড়া এরকম কিছু বলে বসবে তা সে নিজেও চিন্তা করেনি। কিন্তু সে জিভ কাটল না, সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। সে নিবিড়ের উত্তর শুনতে চায়। নিবিড় পিছে ফিরে বলল,
–“মাথা ঠিক আছে?”
–“আছে। আপনিই তো বললেন আমি বের হলে বিপদ বাড়াই। তবে আমাকে ঘুরানোর দায়িত্বটা আপনি নিন। কেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাহেব ভয় পাচ্ছেন বুঝি?”
নিবিড় মিনমিন করে একটা শব্দ উচ্চারণ করল,
–“ব্র্যাট!(ছোটো)”
বলেই নিবিড় কোনো জবাব না দিয়েই চলে গেল। মৌনো এদিকে চরম হতাশ হলো। অন্যদের বেলায় নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। আর নিবিড়ের বেলায় নীরবতা স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান।
–“আপনি বড়োই নির্দয় নিবিড় ভাই। কীভাবে যে রত্না আপু আপনার জীবন সঙ্গিনী হবে।”
বুশরা সামনে থেকে ডাকল,
–“কী রে মৌনো, আয়!”
মৌনো শেষবার নিবিড়ের যাওয়ার পানে চেয়ে বলল,
–“আসছি।”
®লাবিবা ওয়াহিদ
চলবে~~~
[যারা গল্পটি পড়ছেন তারা সবাই রেসপন্স করবেন যেন অন্য পাঠকদের ফিডেও পর্বটি পৌঁছায়, অগ্রীম কৃতজ্ঞতা]
বিঃদ্রঃ পর্ব মোটামুটি প্রায় ১৯০০+ এর কাছাকাছি। আজ গল্প দেওয়াটা হুট করেই, কারণ পেজে ২৮ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ হয়েছে। এরপর থেকে মন্তব্যের উপর নেক্সট পর্ব কবে আসবে নির্ধারণ করব। আশা রাখছি আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পাব, আপনারা হতাশ করবেন না আমায়।
Share On:
TAGS: বেলতুলি, লাবিবা ওয়াহিদ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বেলতুলি পর্ব ৪
-
বেলতুলি পর্ব ১
-
বেলতুলি পর্ব ৬
-
বেলতুলি পর্ব ৫
-
বেলতুলি গল্পের লিংক
-
বেলতুলি পর্ব ১৬
-
বেলতুলি পর্ব ৭
-
বেলতুলি পর্ব ৯
-
বেলতুলি পর্ব ১৪
-
বেলতুলি পর্ব ৩