বাবরি চুলওয়ালা পর্ব ১৬
১৬
তনয় আমাকে দেখে অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো, ‘বিনা দাওয়াতে চলে আসলাম।’
আমি থমকে দাঁড়িয়ে থাকি। মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না। সে এগিয়ে এসে বললো, ‘আংকেল কি বাসায় আছেন?’
‘কেন!’
‘আংকেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’
‘কি ব্যাপারে? আমাকে বলুন?’
‘আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কি আর আছে মিস মীরা? এখন যা কথা, সব আপনার বাবার সঙ্গে হবে।’
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। তনয়ের কথার সুর পালটে গেছে। মনে হচ্ছে এই তনয়কে আমি কোনোদিন দেখিনি! সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে মানুষের মাঝে এত পরিবর্তন হয়!
তনয় গেটের ভেতরে উঁকিঝুঁকি মেরে জানতে চাইলো, ‘কই? কাউকে তো দেখতে পাচ্ছিনা। যাই ভেতরে?’
‘না। আপনি আগে বলুন কেন এসেছেন?’
তনয় ঠোঁট বাঁকা করে হাসি দিলো। ওর হাসি সুবিধার মনে হলো না। এমন সময় বাবরি চুল কোথা থেকে উড়ে এসে যেন তনয়কে টেনে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে বললো, ‘তোর সঙ্গে কথা আছে আমার। এদিকে আয়।’
ওরা খানিকটা দূরে গিয়ে কী কথা বললো আমার বোঝার উপায় নেই। তবে কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তনয় গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। বাবরি চুল এসে দাঁড়ালো আমার পাশেই।
আমি বললাম, ‘কি কথা বললেন ওনাকে?’
‘সেটা আমাদের ভেতরেই থাকুক নাহয়। আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি বিষয়টা।’
‘উনি আপনার ভালো বন্ধু তাইনা?’
‘হুম।’
‘মনে হচ্ছে খুব ক্ষেপেছে। আমার জন্য আপনাদের সম্পর্কটা ভেঙে না যায়..’
বাবরিচুল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখের দৃষ্টি উদাস। আমি বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলাম। একবারও পেছনে তাকাতে ইচ্ছে করলো না আমার।
রান্নাঘরে ঢুকতেই মা জিজ্ঞেস করলেন, কে এসেছে?
‘কেউ না।’ মৃদু স্বরে উত্তর দিলাম আমি।
সকাল থেকেই হরেক রকমের খানাদানা বানানো নিয়ে আমার ব্যস্ত সময় পার হলো। বাবরি চুল সকাল থেকেই বাসায়। ইচ্ছে করেই আমি রান্নাঘর থেকে বের হইনি। একবার দেখলাম সে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। একদৃষ্টে চেয়ে আছে আমার দিকে। আমি মাথাটা অসম্ভব নিচু করে রাখি। কয়েক সেকেন্ড পরে মাথা তুলে দেখি আর নাই!
কাজ শেষ করে নিজের রুমে চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম। হঠাৎ করিডোরে সে এসে হাজির। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো, ‘ম্যাডাম কি আজকে শাড়ি পরবেন?’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘কেন! শাড়ি কেন পরবো?’
‘ ফ্যামিলি মিটিং না? আপনার তো আজকে বিয়ের এনাউন্সমেন্ট হবে। শাড়ি পরবেন না কেন শুনি?’
বাবরি চুলওয়ালার এসব আচরণে আমি একেবারেই অভ্যস্ত নই। সে আমার কাছে বরাবরই এক সাদামাটা, হাসিখুশি ধরনের ছেলে। এসব রোমান্টিক কাজ কারবার আমার কাছে একেবারেই নতুন। তার চরিত্রের নতুন এই দিকটি আবিষ্কার করে আমি গতকাল থেকেই তব্ধা খেয়ে আছি!
বাবরিচুল বললো, ‘যাচ্ছেন কেন? বললেন না যে?’
‘ আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেন?’
‘আপনার লজ্জা আছে বুঝি?’
‘মানে কি? আমার লজ্জা নেই বলে আপনার মনে হয়?’
সে হেসে আমার আপাদমস্তক তাকিয়ে বললো, ‘ আমি যে মীরাকে চিনতাম, তার মধ্যে লাজ শরমের বালাই ছিলো না। এখন সত্যিই মীরা বদলে গেছে!’
‘শুধু মীরাই বদলেছে? বাবরি চুলওয়ালা বদলায় নি?’
‘হা হা হা। আমি আবার কী করলাম?’
‘আপনার নতুন নতুন রূপ বের হয়ে আসছে। আপনি যে এত রোমান্টিক তা আমার জানা ছিলো না।’
‘ তাই? কিন্তু আমার তো নিজেকে রোমান্টিক মনে হয় না। প্রেয়সীর সঙ্গে সামান্য সৌজন্যতামূলক আচরণ করতে চেষ্টা করেছি আরকি।’
এবার আমি না হেসে পারলাম না। তার মুখে প্রেয়সী শব্দটা শুনে আমার মনে ঘুমিয়ে থাকা আনন্দের বাচ্চারা নেচে-গেয়ে উঠলো।
আমি তো শুধু তাকে চেয়েছি, আমার নিজের করে। এতকিছু তো কভু চাইনি!
রুমে এসে বসে আছি আমি। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ। সেইসাথে বাবরি চুলওয়ালার কণ্ঠস্বর, ‘আসবো?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। দ্রুত দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ ভেতরে আসা যাবে না। যা বলার এখান থেকে বলুন।’
‘হাহাহা। ভয় পাচ্ছেন আমাকে, মিস মীরা?’
মিস মীরা উচ্চারণ করতে গিয়ে তার ঠোঁটের কোণে এক ধরনের দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো। আমি ভাব নিয়ে বললাম, ‘ভয় পাচ্ছি না। কিন্তু আপনি যত দ্রুত আগাচ্ছেন, ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না।’
‘ইস রে! তাহলে ধীরেধীরে আগাবো?’
‘চুপ করুন তো। আমাকে বলছিলেন না আমার লজ্জা শরম নেই? আসলে আপনারই লজ্জাশরম নেই।’
‘নিজের বউয়ের কাছে কিসের লজ্জা?’
‘চুপ। একদম চুপ। আমি আপনার বউ না। বউ হওয়ার এখনো অনেক পথ বাকি।’
‘পথ শেষ করে দেই?’
‘মানে!’
‘এখনই বিয়ে করে ফেলি?’
আমি শিউরে উঠলাম। এ কেমন অদ্ভুত জ্বালাতন! লোকটাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। আমি লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম। সে বললো, ‘এদিকে এদিকে। ওদিকে কেউ নেই।’
আমি তার দিকে ফিরে বললাম, ‘কেন আসছেন ঝেড়ে কাশুন তো?’
‘এটাই বলতে এসেছি।’
‘কি টা?’
‘এইযে এখনই বিয়ে করে ফেলবো কিনা?’
‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে?’
‘ চেক করে দেখুন তো খারাপ হলো কিনা।’
সে মাথাটা ঝুঁকে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘মাথা খারাপ এভাবে দেখা যায় না।’
‘স্ক্রু ড্রাইভার লাগবে?’
হেসে ফেললাম আমি। সে মাথা সোজা করে দাঁড়ালো। আমি চেষ্টা করেও হাসি লুকাতে পারছি না।
বললাম, ‘আমার ক্যারেক্টরটা আপনার মধ্যে কনভার্ট হয়ে গেছে। আর আপনারটা আমার মধ্যে। বিশ্বাস করুন, আপনার এসব কথাবার্তার সঙ্গে আমি পরিচিত নই। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এটা আপনি।’
‘ভালোই হলো। এখন আপনি চুপচাপ থাকুন, আমি খানিকটা দাপিয়ে বেড়াই। তবে একটা বিষয় জানেন কি মিস মীরা? আমার সমস্ত পাগলামি, আধিখ্যেতা কিংবা রোমান্টিক সংলাপ, সমস্ত কিছু শুধু আপনার সম্মুখেই প্রকাশিত হয়েছে। আর কারো সামনে নয়।’
আমি চুপ করে গেলাম। সে খানিকটা সময় নিয়ে নিজের মধ্যে এক ধরনের সিরিয়াস ভঙ্গী ফুটিয়ে তুললো। তারপর বললো, ‘মিস মীরা, আমি যেটা বলতে এসেছিলাম। আমরা তো দুজনেই এডাল্ট ছেলে মেয়ে। যদিও আপনার মনে আমার জন্য কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। তবুও আমার চোখে এভাবে দুজনের দেখাসাক্ষাৎ মোটেও পছন্দসই না। আমি কখনো মেয়েদের সঙ্গে এতটা ঘনিষ্ঠ হইনি। আমার কাছে মনে হয়, এভাবে দেখা করা বা আড্ডা দেয়াটা অনুচিত।’
আমি দ্রুততার সঙ্গে বললাম, ‘তাহলে কি আর দেখা করবেন না সেটাই বলতে চান?’
‘কথাটা শেষ করতে দিন। আমি আংকেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও এভাবে দুজনের দেখা হওয়া পছন্দ করছেন না।’
‘তো? আমি কি করতে পারি?’
‘আপনি রাজি থাকলে আমাদের বিয়েটা পড়িয়ে রাখতে চাই। আপাতত আপনি এখানেই থাকবেন। কিছু মাসের মধ্যে আমি সবকিছু গুছিয়ে বেশ ধুমধাম করে আপনাকে আমার সংসারে বরণ করে নিয়ে যাবো।’
আমি মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বিয়ের কথা কেউ এভাবে বলে নাকি! তাও কোনো রকম ভণিতা কিংবা উপসংহার ছাড়াই, হুট করে। আমার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক কাঁপন ধরে গেলো। আয়নায় না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম, লজ্জায় আমি লাল হয়ে উঠেছি!
কোনোমত বললাম, ‘আমাকে একটু সময় দিন।’
‘অবশ্যই। আমি জানি, এভাবে হুটহাট বলাটা কেমন যেন হয়ে গেছে। অনেকেরই তো এমন হয়, পাত্র দেখতে এসে হুট করে বিয়ে হয়ে যায়। আমাদের তো অনেকদিন ধরেই বিয়ের আলাপ হচ্ছে তাইনা? আমি অবশ্য তারাহুরো করবো না। আপনি চাইলে সপ্তাহ খানেক সময় নিতে পারেন।’
‘আপনি এখন যান। আমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত জানাবো।’
‘আগে বলুন, সিদ্ধান্ত এটাই থাকবে। মানে পাত্র তো আমিই থাকবো তাইনা?’
আমি হেসে বললাম, ‘এইমুহুর্তে আপনিই একমাত্র পাত্র। এটা চেঞ্জ হবে না। বিয়ের সময়টা নিয়ে আমাকে একটু ভাবতে দিন। আব্বু আম্মুর সঙ্গে কথা বলবো। এখন যান।’
সে চলে যেতে উদ্যত হলে আমি পেছন থেকে বললাম, ‘এই কথাটা আব্বু আম্মু নিজে না বলে আপনাকে কেন পাঠিয়েছে?’
‘পাঠায়নি তো। আমি নিজে থেকে এসেছি।’
‘বিয়ে করার এত শখ?’
‘আগে তো ছিলো না। আপনারাই তো মিলেমিশে শখটা জাগিয়ে দিলেন।’
বলেই সে ফিক করে হেসে ফেললো। কী এক জ্বালা! তার হাসি দেখে আমার ভালোও লাগছে, রাগও লাগছে। সে চলে যাওয়ার পরেও তার হাসির রেশ আমাকে আচ্ছন্ন করে রইলো।
প্রেমে পড়লে মানুষ এমন অদ্ভুতভাবে বদলে যায় কেন! এই বাবরি চুল আর আগের বাবরি চুলকে আমি মেলাতেই পারছি না। অবশ্য নিজেই যতটা বদলেছি, আরেকজনকে আর কীইবা বলবো!
খানিকক্ষণ পর বাবা এলেন আমার রুমে। আমি জানতাম বাবা আসবেন। কিন্তু বাবাকে এত হাসিখুশি দেখাচ্ছে কেন! পাঞ্জাবি পরে, সেজেগুজে প্রস্তুত। মুখে পান খাওয়ার পরে লাল হয়ে থাকা ভাবটা। দেখে মনে হচ্ছে হুট করে বাবার বয়সটা খানিক বেড়ে গিয়েছে। মুরুব্বী হয়ে গেছেন উনি। তবে হাস্যোজ্জ্বল মুরুব্বী। বাড়ির আদরের বাচ্চাকাচ্চার বিয়েতে মুরুব্বীরা যেমন হাসিখুশি থাকেন, সেরকম।
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘ওনাকে জামাই হিসেবে পেয়ে তুমি খুবই গর্বিত মনে হচ্ছে?’
‘হ্যাঁ, তা তো বটেই। তা তো বটেই।’
‘তোমাকে দেখলে মানুষ বলবে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছো।’
‘তা তো বটেই, তা তো বটেই।’
‘ভালো। সবাই আনন্দে আছো। দেখে ভালো লাগছে।’
বাবা আমাকে ডানদিকের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বললেন, ‘আমার মেয়েটা কি আনন্দে নেই?’
আমি লাজুক হাসলাম। বাবা আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললেন, ‘কয়েকটা দিন তোর মুখের দিকে তাকানো যায়নি। তুই কি ভেবেছিস আমি খোঁজ রাখিনা? সবই খবর রাখি। আমার তো মনে হয় এই বিয়েতে সবচেয়ে খুশি আমার মেয়েটা। কথাটা কি আমি ভুল বললাম?’
আমি লজ্জা পেয়ে আহ্লাদী হয়ে বাবার বুকে লুকিয়ে পড়লাম। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, ‘আমি আর মুনযির একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা। যদি তোর আপত্তি না থাকে, ঘরোয়াভাবে আমরা বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাই। এতে করে তোদেরই ভালো হবে। এরপর নাহয় তোদের সময় অনুযায়ী একটা বড়সড় আয়োজন করা যাবে। আসলে তুই আমার ছোট মেয়ে, তোর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। আমি বিয়ের জন্য আলাদা করে টাকা জমিয়ে রেখেছি। কিন্তু মুনযির আবার এসব পছন্দ করে না। ও চায় বিয়ের খরচ নিজেও বহন করতে। ছেলে মানুষ তো, আত্মসম্মান বেশী। আমি আর কি বলবো, আমার মেয়ে ভালো থাকলেই হলো।’
আমি এখনো বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে আছি। আমার অসম্ভব লজ্জা লজ্জা লাগছে। বাবা আস্তে আস্তে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কয়েক সেকেন্ড পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি বলিস মা? তোর কি মতামত?’
আমি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ধীরগলায় বললাম, ‘তোমরা যা ভালো মনে করো।’
‘তোর যদি কিছু বলার থাকে…’
‘তারাতাড়ি হয়ে গেলো না সবকিছু?’
‘আগামী শুক্রবার দিন তারিখ ঠিক করি? তুইও মানসিকভাবে প্রস্তুত হ। কি বলিস মা?’
আমি লাজুক স্বরে উত্তর দিলাম, ‘তোমরা যা ভালো মনে করো।’
‘ আলহামদুলিল্লাহ। মাশাল্লাহ, আমার কলিজা মা। বাবার বুকের অর্ধেকটা ছিড়ে যাচ্ছে তোকে বিয়ে দেয়ার কথা ভাবলেই। কিন্তু, জানি এত কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। এর আগেও দুইবার এমন কষ্ট পেয়েছি। মেয়েদেরকে তো ঘরে আটকে রাখতে পারিনি। মেয়ে পরের ঘরে যাবেই। ভেবেছিলাম তোকে অন্তত নিজের বাসায় রাখবো। ভাগ্যে যা ছিলো তাই তো হবে। তোরা ভালো থাক এটাই চাই।’
আমি বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘আমি কোথাও যাচ্ছিনা আব্বু। আমি তোমার সঙ্গেই থাকবো।’
‘হুম। মুনযির বলছিলো আজকে যদি বিয়ের ঘোষণা দেই, ও তোকে কি যেন দিতে চায়..’
‘কি!’
‘দ্যাখ কথা বলে। বাইরে যাওয়ার পারমিশন চাচ্ছিলো।’
‘যাবো?’
‘যাবি তো অবশ্যই। আজকেই হয়তো শেষ পারমিশন চেয়েছে। এরপর তো আর কোনোদিন পারমিশন চাইবে না। একবার বিয়ে হয়ে গেলে তোর ওপর আমার চাইতে ওর অধিকারই বেশী থাকবে।’
বাবার এই কথাখানি যে কতটা ভারী, আমি এই কথার ওজন নিতে পারলাম না। আবেগপ্রবণ হয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। মুখের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম বাবা কাঁদছেন। আমিও নীরবে অশ্রুসিক্ত হলাম। চোখের জলে ভিজে গেলো গাল। বাবাকে ছাড়তে পারলাম না অনেক্ষণ। মনে হলো বুকের একপাশ আমারও ছিঁড়ে যাচ্ছে যেন!
তড়িঘড়ি করে বের হলাম বাবরি চুলের সঙ্গে। যা ধারণা করেছিলাম, তাই। সে একটা স্বর্ণের আংটি কিংবা নাকফুল কিনবে এরকম ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে একটা ডায়মন্ডের রিং কিনতে আসলো। আমি কোনো বাক্যব্যয় না করেই রিং পছন্দ করলাম। পুরোটা সময় জুড়েই সে হাস্যরসে আমার কান ঝালাপালা করে দিলো। কিন্তু আমার কেন জানি হাসি আসছিলো না। অজানা কোনো এক বিষাদ আমাকে ভীষণ নরম করে রাখলো।
ডায়মন্ডের রিংটা সে নিজের কাছে রাখলো। এরপর বের হয়ে গেলাম একটা শাড়ির দোকানে। আমি যাইনি, সেইই আমাকে নিয়ে এলো। মুখের সামনে ঝুঁকে এসে জানতে চাইলো, ‘কোন কালার শাড়ি পছন্দ আপনার?’
‘আপনার ইচ্ছা।’
সে হেসে বললো, ‘আমি তো আর শাড়ি পরবো না।’
‘ যেভাবে দেখতে চান সেটাই নিন।’
‘যেভাবে দেখতে চাই! বাব্বাহ, মীরা.. আমার জন্য এত টান…?’
সে ভ্রু নাচিয়ে হাসতে লাগলো। আমি একটুও হাসলাম না। যদিও হাসি পেলো খুব। হাসিটাকে লুকিয়ে রেখে বললাম, ‘আপনার কোনো ড্রিম থাকতেই পারে। ডায়মন্ডের রিং পরানোর স্বপ্ন যেহেতু আছে, তারমানে নিশ্চয়ই কল্পনা করে ফেলেছেন কী পরে এঙ্গেজমেন্ট হচ্ছে?’
সে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘উহু। আপনি আপনাকে নিয়ে কিছুই কল্পনা করতে পারিনা। আমার মাথা হ্যাং হয়ে যায়।’
‘কেন!’
‘আপনাকে কোনোদিন পাবো সেটাও তো ভাবতে পারিনি। হ্যাঁ, একবার চেয়েছিলাম এরকম কিছু। যেদিন আপনি আমাকে ব্লেজার কিনে দিয়েছিলেন, সেদিন ভেবেছিলাম আপনাকে একটা শাড়ি কিনে দেই। কিন্তু সেটা তো উচিত হতো না।’
‘ওহ আচ্ছা। তাহলে হোয়াইট কালারের একটা শাড়ি দেখি। অরগাঞ্জার ভেতর?’
সে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘মীরা আপনার যা ভালো লাগে তাই নিন। আমার আর কোনো শখ নেই।’
‘কেন নেই?’
সে আমার কানের এসে ফিসফিস স্বরে বললো, ‘আপনিই তো আমার ভীষণ শখের। আপনাকে পেয়ে গেলে আর কিছু দরকার আছে?’
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। সেও তো আমার খুব শখ করে চাওয়া পুরুষ মানুষ। তাকে পাবো আমিও কি ভেবেছি কোনোদিন! পেয়ে গিয়েই তো আমি খুশি। এত কিছু তো চাইনি কখনো।
শাড়ি কেনা শেষ হবার পর সে জানতে চাইলো, ‘আর কিছু কিনতে চান?’
‘না।’
বাবার কথামতো তার জন্যও এক সেট নতুন পোশাক কিনলাম। ফেরার পথে কিছুক্ষণের জন্য একটা কফিশপে বসেছিলাম আমরা। পুরোটা সময় স্বাভাবিক কথাবার্তার মধ্য দিয়েই কাটলো। রিকশা থেকে নেমে যখন বাড়িতে ঢুকবো, সেইমুহুর্তে সে আমাকে থামতে বলে সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমি জানতে চাইলাম, বলুন?
‘হালকা সাজগোজ করবেন প্লিজ।’
‘বেশী সাজলে কি সমস্যা?’
‘হালকা সাজে আপনাকে বেশী ভালো লাগে। মাইশার বিয়ের দিন আপনি যখন পার্লার থেকে বের হলেন, আমার হার্টবিট ক্ষণিকের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘সত্যি!’
‘হুম। যান এখন।’
আমি বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে করতে মুচকি হাসতে লাগলাম। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি থাকলেও আমার ভেতরে তখন সীমাহীন আনন্দ। ঘুমন্ত আনন্দের বাচ্চাকাচ্চারা এবার ধেইধেই করে নাচতে লাগলো।
বাসায় ঢুকে দেখি বড় আপা, ভাগিনারা ও দুলাভাই এসেছে। বাড়ির ভেতরেও এক ধরনের উৎসব উৎসব ব্যাপার। আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবলাম, এই ব্যাপার কেন? পরক্ষণেই মনে পড়লো, ওহ হো, আজকে তো মীরার বিয়ের এনাউন্সমেন্ট হবে!
চলবে..
(রিভিশন দেয়ার সময় পাইনি। বানান ভুল বা কোনো অসংগতি চোখে পড়লে কমেন্টে জানাবেন। পরে রিভিশন দিয়ে ঠিক করে নিবো।)
Share On:
TAGS: বাবরি চুলওয়ালা, মিশু মনি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৫
-
বাবরি চুলওয়ালা পর্ব ১
-
বাবরি চুলওয়ালা পর্ব ১৮
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৮
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৯
-
বাবরি চুলওয়ালা গল্পের লিংক
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৩
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ৭
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ১৪
-
বাবরি চুল ওয়ালা পর্ব ১২