পারসোনাল_নোটিফিকেশন।
পর্ব- তিন (০৩)
প্যাকেটের কথা বলতেই সাজু বলে, প্যাকেট উদ্ধার করতে পেরেছেন? রিশাত তো বললো সে নাকি ঘুম থেকে উঠে প্যাকেট খুঁজে পায়নি।
বিমল মিত্র বলেন, প্যাকেট পাইনি! কিন্তু ঘটনার দিন রিশাত তাদের বাজারের যেই দোকানের নাম বলেছে সেই দোকানটা সেদিন বন্ধ ছিল।
তাদের পাশে আরো কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রিশাতের বাবা, মেজো ভাই, প্রতিবেশী গ্রাম্য ডাক্তার, রিশাতের ভাবির বাবা, মামা, গ্রামের মেম্বার, আরো কিছু মানুষ। যাদের সবার চোখেই কৌতূহল। সবাই এসেছেন রিশাতের কল রেকর্ড শুনতে।
পাঁচ দিন আগে রিশাতের বড়ো ভাবি মা,রা গেছে। গতকাল সন্ধ্যা বেলা আ,ত্ম,হ,ত্যা করেছে রিশাত। কিন্তু রিশাত তার মৃত্যুর আগে নিজের মোবাইলে দীর্ঘ আটত্রিশ মিনিটের ভয়েস রেকর্ড রেখে গেছে। রেকর্ড এতো সহজে পাওয়ার উপায় ছিল না যদি না রিশাত তার টেবিলের উপর এক টুকরো কাগজে লিখে রাখতো যে,
“ আমার যা বলার সবকিছু আমি আমার মোবাইলে রেকর্ড করে রেখে যাচ্ছি। আপনারা সবাই আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন। আপনাদের এই ধারণা আমাকে ভেতর থেকে খুন করেছে। মা-বাবার প্রতি আমার সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। তারা অন্তত আমাকে সাপোর্ট করতে পারতো৷ ”
সাজু এখানে এসেছে সকাল এগারোটায়। রিশাতের বড়ো ভাবির মামা সাজুকে গতকাল রাতে মেইল দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
কাল রাতে তিনি সাজু ভাইকে লিখেছেন,
❝ সেদিন রাতেই খবর পেলাম আমার বোনের মেয়েটা মারা গিয়েছে। আমরা সবাই মিলে ভাগ্নির বাড়িতে গেলাম। ওদের বাড়ির প্রতিটি মানুষের কথা ছিল সন্দেহজনক। তাদের দাবী ছিল আমার ভাগ্নী হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। কিন্তু আমার সন্দেহের কারণেই আমরা থানায় জানাই৷ পুলিশ আসে, সবার সঙ্গে কথা বলে তারা ভাগ্নিকে নিয়ে যায়। থানা থেকে পাঠানো হয় পোস্টমর্টেম করতে। পুলিশ আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে। সবচেয়ে বেশি সন্দেহের তালিকায় সূচনার ছোটো দেবর রিশাতের নাম উঠে আসে৷ কিন্তু সন্ধ্যা বেলা রিশাত তার নিজের ঘরে আত্মহত্যা করেছে। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। থানা পুলিশ তো চলছে, তবুও আমি চাই আপনি আমার ভাগ্নীর খুনিকে বের করুন। ভাগ্নীকে পাওয়া যাবে না জানি, কিন্তু তার খুনীকে শাস্তি দিতে না পারলে আমরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারবো না। আপনার আসার অপেক্ষায় থাকবো৷
গ্রাম- বাবলা তলা।
থানা- মোড়েলগঞ্জ।
জেলা- বাগেরহাট। ❞
এসআই বিমল মিত্র খানিকটা বিরক্ত। পুলিশ এরকম খুন, ডাকাতি, মারামারি, দখলদারি, আন্দোলন, ইত্যাদি সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করেন। হাসপাতালের নার্স যেমন প্রতিদিন ডিউটির সময় রোগীর কান্নার শব্দ শুনে অভ্যস্ত, তেমন করে পুলিশও জানে এইতো জীবন। একজায়গায় সারাদিন বসে থাকলে তাদের চলবে না।
সাজু ভাই বললেন, আগে আমরা রিশাতের রেখে যাওয়া রেকর্ডটা সম্পুর্ণ শেষ করি। তারপর বাস্তবে কি আছে, কি কি ঘটেছে সবকিছু নিয়ে ভাবা যাবে৷ হতে পারে রিশাত পরে যেগুলো দেখেছে, কেন আত্মহত্যা করেছে সবটাই হয়তো রেকর্ডে রয়েছে। রেকর্ড চালু করে আবারও মনোযোগ দিল সাজু।
————————
রিশাত বলছে,
বাজারে যেই ছেলেটা মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে ছেলেটা আমার পরিচিত। ওর নাম সোহাগ৷ আমার কাছে নাম্বার ছিল। ভাবির ঘর থেকে বের হয়ে আমার ঘরে গিয়ে কল দিলাম। কলের একদম শেষ মুহূর্তে সোহাগ কলটা রিসিভ করে।
“ কি রে এতো কল দিলি? কিছু হয়ছে? ”
সোহাগের বাড়ি পশ্চিমপাড়া। এতো তাড়াতাড়ি ভাবির মৃত্যুর খবর সে পাবে না। বললাম ,
“ ভাবির মোবাইল কি তোর কাছে? আজকে সকালে নাকি ঠিক করতে দিয়েছে? ”
“ হ্যাঁ দিয়েছিল। কিন্তু আমি তো সন্ধ্যা বেলা গিয়ে মোবাইল দিয়ে আসলাম। ”
“ কার হাতে দিয়েছিস?
“ তোর ভাবির মোবাইল আর কার হাতে দেবো? যার মোবাইল তার কাছেই দিয়ে এসেছি। তোর মা তখন ছিল সেখানে। ”
আমি লম্বা দম নিয়ে বললাম,
“ কিছুক্ষণ আগে ভাবি মারা গেছে। কীভাবে মারা গেছে আমরা কেউ জানি না। ভাবির মোবাইলটাও খুঁজে পাচ্ছি না। ”
“ তোর ভাবি মারা গেছে? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। সন্ধ্যা বেলাতেই গিয়ে দেখা করে আসলাম। আর এখন বলছিস মারা গেছে। ”
সোহাগের কথা শুনে চিন্তা আরো বাড়ে। মোবাইলটা তো খুঁজে পাচ্ছি না। সোহাগ যদি মোবাইল দিয়ে যায় তাহলে ভাবির মোবাইল কোথায়? আর সবচেয়ে বড় কথা মায়ের সামনে যদি সোহাগ এসে মোবাইল দিয়ে যায় তাহলে মা একটু আগে কেন বললেন ভাবির মোবাইল বাড়িতে নেই।
এসব কথা ভাবতে থাকির, তখনই মা পিছন থেকে বলে ওঠে “ একটা কথা ভুলে গেছি। বউমার ফোন বাড়িতেই ছিল। বাজারের সেই ছেলেটা বাড়িতে এসে দিয়ে গেছে। ”
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল তিনি অপরাধীর মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন। মা’কে সচারাচর এরকম ভঙ্গিতে কখনো দেখিনি। মা বললেন,
“ মেজো বউমাকে নিয়ে বড় বউমা আর কি কি বলেছে রিশাত? তোর মেজো ভাইর কাছে না বলিস কিন্তু আমাকে বল। ”
আশ্চর্য হলাম কারণ মেজো ভাবির বিষয় নিয়ে আমি শুধু মেজো ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে দু’বার প্রশ্ন করেছি। কিন্তু মাত্র পনের কুড়ি মিনিটের মধ্যে ভাইয়া সেই কথা মাকেও বলে দিয়েছে?
আমাকে চুপ থাকতে দেখে মা বললেন, কিরে কথা বলছিস না কেন? নিশ্চয়ই তোর কাছে বউমা কিছু বলেছে। তুই এগুলো জানার পরই তড়িঘড়ি করে বাড়িতে এসেছিস মনে হয় তাই না?
পাশে অন্য ঘরে ভাবির মা-বাবা ও আত্মীয়দের কান্নায় বাতাসে আতঙ্কের ঘ্রাণ। তারমধ্যে আমরা যদি এভাবে গোপনে বারবার কথা বলি তাহলে তো মানুষ সন্দের করবে৷ এসব ভেবে মা’কে বললাম,
“ হ্যাঁ অনেক কিছু বলছে৷ কিন্তু এখন সেসব বলার সময় নাই। চলো ওদিকে যাই। ”
“ গিয়ে কি করবো? বউমার মামা তোর বাবার সাথে নিলয়ের সাথে কথা বলেই থানায় কল দিয়েছে। এই সামান্য কারণে পুলিশ কেন আসবে? মহিলা মানুষের লাশ একবার নিয়ে গেলে কাটাকাটি করে তারপর ফেরত দিবে। ”
আমি মা’কে বললাম, “ যদি ভাবিকে কেউ খুন করে তাহলে তো খুনির ধরা পড়া উচিৎ। আর ওনারা সন্দেহ হলে পুলিশ ডাকতেই পারেন। ”
মা রাগের স্বরে বললেন, “ সন্দেহ করবে কেন? আমরা কি ওদের মেয়েকে খুন করবো? নিজের সন্তান মারা যাবার পর এক বছর পেরিয়ে গেছে তারপরও তো তাকে এই বাড়িতে রেখেছি। ”
মায়ের শক্ত কথার জবাবে বললাম, এমনি এমনি রাখো নাই মা। ভাবি তার মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। তাদের অনেক সম্পত্তি। তাই তোমরা চাইছিলে সব সম্পত্তি আমাদের হোক। এজন্যই তো মেজো ভাই ভাবিকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল৷
মা আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন৷ আমি এভাবে সরাসরি মেজো ভাই ও মায়ের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে কথা বলবো এটা ভাবেন নাই।
আমি মাকে আস্তে করে বললাম,
❝ মা আমি মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ভাবির ঘরে ঢোকার পরে ঘরের দরজা বন্ধ করেছিলাম। কারণ ভয় হচ্ছিল যে তুমি বাবা ভাইয়া যদি কেউ দেখো বা হঠাৎ চলে আসো তাহলে কেলেঙ্কারি হবে। সেজন্য আমি দরজা বন্ধ করে ভাবির বিছানার কাছে গিয়ে তাকে ডাকছিলাম। তুমি তো বাবার সাথে অন্য ঘরে ঘুমাও৷ তাহলে বন্ধ দরজা দিয়ে তুমি ঘরের ভেতর ঢুকলে কীভাবে? নাকি তুমি আমার আগে থেকেই ভাবির ঘরের মধ্যে ঢুকেছিলে? ❞
আমার কথা শুনে মায়ের চোখমুখ শুকিয়ে যায়। কি উত্তর দেবেন খুঁজে পান না৷ আমি বললাম,
❝ ভাবিকে কি তুমি খুন করেছো মা? ❞
.
চলবে…
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,
ফেসবুকের যেকোনো পোস্ট প্রথম এক দুই ঘন্টা যদি রিয়্যাক্ট ও কমেন্ট বেশি আসে তাহলে সেই পোস্ট রিচ ভালো পায় এবং অনেকের টাইমলাইনে সাজেস্টে চলে যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যারা যারা পড়বেন সবাই রিয়্যাক্ট ও কমেন্ট করবেন।
এতটুকু আবদার রাইখেন আমার।
লেখা-
মো: সাইফুল ইসলাম (সজীব)
Share On:
TAGS: পারসোনাল নোটিফিকেশন, সাইফুল ইসলাম (সজীব)
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ৬
-
পারসোনাল নোটিফিকেশন পর্ব ১
-
বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ২
-
বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ৪
-
বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ৩
-
পারসোনাল নোটিফিকেশন গল্পের লিংক
-
পারসোনাল নোটিফিকেশন পর্ব ৪
-
বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ১
-
বিশ্বাস অবিশ্বাস পর্ব ৫
-
পারসোনাল নোটিফিকেশন পর্ব ২