নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
পর্ব_১০
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌
বিঃদ্রঃ অনেকদিন পর গল্পটা দিলাম আশা করি গঠনমূলক কমেন্ট করে আমাকে উৎসাহ করবেন। যাতে গল্পের প্লট এবং সৌন্দর্য ভালো ভাবে ধরে রাখতে পারি।
মুনভি একবার মিহালের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মিহালের প্যান্টের দিকে।মিহালের ভেজা প্যান্ট দেখে তার এহেন পরিস্থিতিতেও হাসি পেল। মিহালের পেট থেকে একদম উরু পর্যন্ত ভিজে গেছে কফির পরার কারণে।মুনভি শব্দ করে হেসে উঠলো সে।মিহালের দৃষ্টি গেল হাসতে থাকা মুনভির দিকে। মুনভি নিজের পেট চেপে ধরে হাসছে।
মিহাল বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল__
হাসছিস কেন হুঁ?
মুভির হাসতে হাসতে বলল_
এই বসয়ে প্যান্টে হিসু করে দিস? তোকে কি ডাইপার গিফট করতে হবে?
মিহাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মুনভির দিকে। কিন্তু মুনভি এইসবে পরোয়া না করে নিজের মতোন হাসতে লাগলো।
ক্যান্টিনে তখন অনেক স্টুডেন্টই উপস্থিত ছিল। সেখানে লিসা কায়নাত নামক সেই মেয়েটিও উপস্থিত ছিল।সে মিহাল কে কি করে পটানো যায় সারাক্ষণ সেই ধান্দাতেই থাকে। সে যখন দেখল মিহাল এখানে এসে বসছে সেও সঙ্গে সঙ্গে এখানে এসে পরেছিল। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কাহিনী সে নিজ চোখে দেখেছে।তাই এখন মিহালের সামনে ভালো সাজার জন্য মিহালের দিকে এগিয়ে আসলো। মিহাল তখনো রাগে ফুঁসছে। যেখানে সে সবাইকে মুখের ওপর বলে যে সে কারো নাম শুনতে ইন্টারেস্টেড না সেখানে তার মুখের ওপর একটি মেয়ে তাকেই তার কথাটি শুনিয়ে দিল। তা ঠিক হজম হচ্ছে না।
তখনই লিসা তার সামনে এসে টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বলল_
এটা নিন প্রফেসর। আপনার প্যান্ট ভিজে গিয়েছে। মেয়েটির সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। কতবড় আস্পর্দা আপনার উপর কফি ফালিয়ে দিয়ে আবার আপনাকে কথা শুনিয়ে চলে গেল। চিন্তা করবেন না আমি ওকে দেখে নিব। কি করে ওকে এই ক্যাম্পাস থেকে বের করা যায় তার দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিন।
(কথাগুলো সে ইংরেজিতে বলেছে)
মুনভির হাসি এতক্ষণে থেমে গেল লিসার কথা শুনে। একবার লিসার দিকে তাকাল তো আরেকবার নিজের বন্ধুর দিকে তাকালো। সে বুঝতে পারল এই মেয়েটি সেই মেয়ে যার কথা মিহাল আগে তাকে বলেছিল। মিহাল অনেক আগেই তাকে বলেছিল যে তার ইউনিভার্সিটির একটি স্টুডেন্ট সবসময় তার সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করে। মুনভি তো এতদিন কেবল শুনে ছিল মিহালের মুখ থেকে কিন্তু আজ নিজের চোখ দিয়ে দেখল।
মিহালের মাথায় এমনিতেই গরম ছিল। এখন বিগড়ে যাওয়া মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে গেল।সে লিসার হাত থেকে টিস্যু না নিয়ে বরং মুনভিকে বলল _
চল আমার কেবিনে যাই সেখানে এক্সট্রা কাপড় আছে আমি গিয়ে চেঞ্জ করে নেব।
মুনভি বুঝতে পারলো মিহালের মেজাজ এখন অনেক গরম হয়ে আছে। তাই আর বেশি চেঁতালো না কারণ এখন তার যেভাবেই হোক এই ইউনিভার্সিটিতে বারবার আসতে হবে সেই বোরকা পরিহিত মেয়েটিকে দেখার জন্য। যেহেতু মেয়েটির নাম সে জানতে পেরেছে তার মানে মিহালের কাছ থেকে পরবর্তীতে মেয়েটির খোঁজখবর নিতে পারবে। তাই সেও মিহালের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগলো।
অন্যদিকে লিসা হাতে টিস্যু নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তার মিহালের এই অ্যাটিটিউড একদম পছন্দ না। প্রিন্সিপালের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেউ এভাবে ইগনোর করতে পারে এটি তার ধারণার বাইরে। সে যতই মিহালের কাছে আসতে চায় মিহাল ততোই তার থেকে দূরে দূরে যায়।
ইরফান এখন অনেকটাই সুস্থ কিন্তু তার মন? তা যেন প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আজ আরশি আসবে। এই কয়দিন আরশি ছিল না এ বাড়িতে। ইরফানের মা তার খেয়াল রেখেছিল। ইরফান নিজের রুমে বিছানায় পায়ের উপর পা রেখে বসে আছে। বসে বসে একটা কথাই ভাবছে যে তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল অথচ নীলা একবারও তার খোঁজখবর নিল না। তাকে দেখতে আসেনি সেইটা সে মেনে নিতে পারলেও প্যারিসে যাবার পর নীলা একবারও তাকে ফোন দিয়ে কথা বলল না এটা ঠিক সে মেনে নিতে পারছে না। তার উপর নীলা গিয়েছে প্যারিসে যা সব থেকে বড় ভয়ের বিষয়। এখানেই তো তার সকল সত্য লুকিয়ে আছে। যদি নীলার কাছে প্রকাশ পেয়ে যায় তাহলে সে আরো খারাপ হয়ে যাবে এই পরিবারের চোখে। সে যে ধোঁকা দিয়েছিল কাউকে। তারই খুব কাছের আত্মীয় কে। যদি তার পরিবার জানতে পারে যে সে এই পরিবারের সবথেকে কাছের কোন আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিল এবং তাদেরকে ধোকা দিয়ে এসেছিল তাহলে তার পরিবার তাকে ত্যাজ্য করে দেবে। এইসবে ভাবতেই তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। এমন সময় আরশি ঘরে প্রবেশ করল। ইরফান এক নজর তাকালো আরশির দিকে।পরনে তার সাদা রঙের টাইট থ্রি পিস। একদম গায়ের সাথে মিশে আছে। ওড়না কোনো রকম জড়ানো।আগে যখন আরশি তার প্রেমিকা ছিল এবং তখন এইসব ড্রেস যদি পড়তো তার কাছে একটুও খারাপ লাগত না বরং আকর্ষণীয় লাগতো। কিন্তু এখন তার খুব গায়ে লাগছে। কারণ রাস্তা দিয়ে আরশি এটা পরে এসেছে তার মানে অন্যান্য পুরুষরা আরশিকে দেখেছে। সে নিজেও একজন পুরুষ খুব ভালো করেই জানে অন্য পুরুষেরা নারীদের দিকে কিভাবে তাকায়। তার মাথা গরম হয়ে গেল।
সে আরশি কে ধমক দিয়ে বলে উঠলো __
এসব কি ধরনের পোশাক পরেছ তুমি আরশি? ভুলে যেওনা তুমি মির্জা পরিবারের বউ। তোমার মান-সম্মান না থাকলেও মির্জা পরিবারের একটি মান সম্মান আছে। পরবর্তীতে আর এই ধরনের ড্রেস পরে বাইরে আসা যাওয়া করবে না। আর বাড়িতে বড়রা আছে তাদের সামনে এ ধরনের পোশাক পরবে না। এরপর থেকে ঢিলা ঢালা জামাকাপড়বে। বাহিরে গেলে বোরকা পড়ে যাবে।
আরশি সবে মাত্র হাত ব্যাগ টেবিলের উপর রাখলো এমন সময় ইরফানের হুংকার শুনে সে কেঁপে উঠলো। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। তার কিছুক্ষণ সময় লাগলো বুঝতে বিষয়টি। কিন্তু পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলিয়ে ইরফানের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো_
ওহ প্লিজ দয়া করে আমার সঙ্গে এসব নাটক করবে না। তোমার ভালো মানুষ গিরি দেখানোর ইচ্ছা থাকলে নিজের পরিবারের সামনে গিয়ে দেখাও আমাকে দেখাতে এসো না। তুমি কেমন তা এই আরশির খুব ভালো করেই জানা আছে। আর রইল বাকি এইসব ড্রেস পরার কথা তাহলে যখন তোমার সাথে প্রেম করতাম তখন তো খুব ভালো লাগতো আমাকে এইসব ড্রেসে দেখতে। তাহলে এখন কেন ভাল লাগছে না? আগেও আমি দেখতে যেমন ছিলাম এখনও তেমন আছি। আগে যদি এইসব ড্রেসে আমাকে দেখলে বলতে আমাকে হট লাগছে তাহলে এখন কেন ভালো লাগছে না?যখন প্রেমিকা চাই তখন হট, সুইট সিক্সটিন মেয়ে খুঁজ অথচ যখন বউ চাও তখন বোরকাওয়ালী পর্দাশীল মেয়ে খোঁজ। এইটা আবার কোন ধরনের চরিত্র তোমাদের পুরুষদের? আগে নিজের দের চরিত্র ঠিক করো তারপর অন্যদেরকে দোষারোপ কর। আর রইল বাকি মির্জা পরিবারের সম্মানের কথা যেখানে মির্জা পরিবারের বড় ছেলের এই অবস্থা সেখানে সেই পরিবারের সম্মান না থাকাটাই খুব স্বাভাবিক। এবং আমার সম্মানের কথা সেটা তো কবেই চলে গিয়েছে যখন তোমার মতো নির্লজ্জকে বিয়ে করেছিলাম।আর আমাকে ভুলেও নীলা ভাবতে শুরু করবে না যে আমি তোমার জন্য নিজের পছন্দকে বিসর্জন দিয়ে দিব। আমার যেটা ভালো লাগে আমি সেটাই করব। তোমার যদি আমাকে এরকম ভাবে দেখতে অসুবিধা হয় তাহলে নিজের চোখ বেঁধে রাখতে পারো আমার কোন সমস্যা নেই।
কথাগুলো বলেই আরশি আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে গরগট করে বাথরুমে চলে গেল। আর ইরফান সে আগের ন্যায় বিছানায় বসে রইল। তার কানে কেবল একটি কথাই বাজছে_ “আর আমাকে ভুলেও নীলা ভাবতে শুরু করবে না যে আমি তোমার জন্য নিজের পছন্দকে বিসর্জন দিয়ে দিব।” আসলে তো তার অপছন্দের সকল কিছু নীলা বিসর্জন দিয়েছিল। যদি সেগুলো নীলার খুব পছন্দের ছিল তবুও সেগুলো থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে। তার মনে পড়ে গেল অতীতের একটি স্মৃতি_
নীলার বয়স তখন ১১ বছর হবে। অর্থাৎ নিলার জন্মদিন আজ। পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যেহেতু নীলার নীল রং খুব পছন্দ তাই পুরো বাড়ি নীল রঙের এস্থেটিক ভাবে সাজানো হয়েছে । ছোট্ট নিলাও আজ নীল রঙের গ্রাউন পরে নীলপরী সেজেছে। নীলা যখন নিজের রুমে তৈরি হচ্ছিল তখন ইরফান তার ঘরে আসে। এবং তাকে নীল রঙের কাপড়ে দেখে মুখ কুঁচকে ফেলে। তার বরাবরই এই রংটা একদম পছন্দ না। সে নীলার দিকে এগিয়ে গেল।নীলা তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা বাঁধছিল।সে আয়না দিয়ে ইরফান কে দেখতে পেল এবং ইরফানের চেহারাতে যেই বিরক্তির চাপ স্পষ্ট ছিল সেই বিরক্তির চাপ সে দেখতে পেল।সে পেছন ফিরে ইরফান কে জিজ্ঞেস
করল _
ভাইয়া কি হয়েছে?তোমার মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?
ইরফান কপাল কুঁচকে বলল_
তুই নীল রঙের জামা পরেছিস কেন? জানিস না এই রং আমার সব থেকে অপছন্দের। একদম বাজে দেখাচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে নীলার মুখ চুপসে গেল।সে গত রাতে কয়েকটি মার্কেট ঘুরে তারপর এই গ্রাউন কিনেছিল। নীল গ্রাউনটি তার খুব পছন্দ হয়েছিল। নিজের জন্মদিনের জন্য নিজে পছন্দ করে কিনেছিল। বাড়ির সবাই তাকে দেখে অনেক প্রশংসা করে গিয়েছে যে আজ তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। অথচ তার ইরফান ভাই বলছে তাকে নাকি একদম বাজে দেখাচ্ছে। নিষ্পাপ মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। জন্মদিন নিয়ে এসে খুব খুশি ছিল এক নিমিষেই তার সকল খুশি হাওয়া হয়ে গেল। ভেবেছিল তার ইরফান ভাইয়া তার অনেক প্রশংসা করবে। অথচ তার ইরফান ভাইয়া তার প্রশংসা না করে উল্টো আরো তাকে বলল যে তাকে নাকি বাজে দেখাচ্ছে। সে মনোক্ষুণ্ন হলো।মলিন মুখ করে বলল__
তাহলে কি এই রঙের পোশাক চেঞ্জ করে ফেলব?
ইরফান বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বলে উঠলো_
হ্যাঁ অবশ্যই এক্ষুনি এই রঙের জামাটি চেঞ্জ করুন। একদম বিট খুটে লাগছে তোকে।
কথাটি বলি গটগট করে বের হয়ে গেল ইরফান রুম থেকে। আর নীলা অশ্রুসিক্ত নয়নে ইরফানের দিকে চেয়ে রইল। তারপর আর দেরি না করে সেই এই রঙের জামাটি চেঞ্জ করে অন্য একটি জামা পরলো। সবাই যখন তাকে জিজ্ঞেস করলো যে কেন সে নীল রঙের গ্রাউন চেঞ্জ করে ফেলেছে তখন সে কিছু একটা বাহানা করে ফেলল। সেই দিন নীলার মন অনেকটাই খারাপ ছিল কারণ সে নিজের পছন্দের জামাটি পড়তে পারেনি। কিন্তু নিজেকে একটি কথা বলে শান্তনা দিয়েছিল যে তার দাদীএকবার তাকে বলেছিল যে তার ইরফান ভাইয়ের সাথে তাকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং সে যেন সবসময় তার ইরফান ভাইয়ের কথা শুনে। তার ইরফান ভাইয়া যা বলবে তাই যেন সে করে। তাহলে নাকি বিয়ের পর তার ইরফান ভাই তাকে অনেক ভালবাসবে। তাই তো নীলা নিজের পছন্দের সবকিছু আস্তে আস্তে বিসর্জন দিতে লাগলো ইরফানের জন্য। ছোটবেলা থেকেই সে প্রতিবাদী হলেও কখনো এসব বিষয় নিয়ে সে প্রতিবাদ করেনি। তার দাদীমা সব সময় বলতো ভালোবাসার জন্য নাকি ছাড় দিতে হয় এবং সে সবসময় ছাড় দিয়ে এসেছিল।
এসব ভাবতে ভাবতেই ইরফান বর্তমানে ফিরে এলো। তারপর একা একা বলল__
তুমি ঠিকই বলেছো আরশি তুমি কখনোই নীলার মত হতে পারবে না। নীলার মতো হতে গেলে তোমাকে আরো হাজার বার জন্ম নিতে হবে। নীলা আমাকে যতটা ভালোবেসেছে তা কখনোই কেউ বাসেন। এবং আমি এটা খুব দেরি করে উপলব্ধি করলাম।
(এই টুকু রিচেক দেই না।পরে দিয়ে দিব।)
নীলা আর ইকরা মিলে তাদের ক্লাস রুমে বসে আছে। অলরেডি তারা দুইটা ক্লাস করে ফেলেছে। এখন গ্রুপিং ক্লাস হবে। ইকরা আলাদা ক্লাসে চলে যাবে তার গ্রুপিং সাবজেক্টের জন্য। আর নীলার এখন ইকনোমিক ক্লাস হবে। ইকরা বের হয়ে যেতেই নীলা নিজের সিটে একা একা বসে রইলো। অবশ্য ক্লাস করার মাঝ দিয়ে তাদের দু একজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। হয়তো আস্তে আস্তে সামনে আরো নতুন বন্ধু পাবে তারা। লিসা ক্লাসে প্রবেশ করল। সে অন্যান্য ক্লাস মিস দিলেও কখনো ইকনোমিক ক্লাস মিস দেয় না। কারণ ইকোনোমিক টিচার আর কেউই না তার ক্রাশ মিহাল খান। তাই তো একদম ভদ্র ছাত্রীর মত ক্লাসের পড়া রেডি করে ক্লাসে প্রবেশ করেছে। কিন্তু ক্লাসে আসতেই ফাস্ট বেঞ্চে দেখতে পেল বোরকা পরিহিত সেই মেয়েটিকে যে ক্যান্টিনে মিহালের উপর কফি ফেলে দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথা গরম হয়ে গেল। সকালবেলা মিহাল তাকে যে ইগনোর করেছিল সেই রাগ এখন আবার চলে বসলো তার মাথায়।
নীলা নিজের আসনে বসে সামনে বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিল। এমন সময় লিসা এসে নীলার হাত থেকে বই নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলল এবং ইংরেজিতে বলল__
তোমার তো সাহস কম না ইউনিভার্সিটিতে এসে ইউনিভার্সিটির টিচারকে কথা শোনাও। ভুল করে সরি বলার বদলে উল্টো টিচারকে কথা শুনিয়ে এসেছো তুমি। তুমি জানো আমি কে? চাইলে এক্ষুনি তোমাকে এই ইউনিভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারি। বেরিয়ে যাও ওই ক্লাস থেকে। কোন সাহসে এই ক্লাসে বসেছো? যেই টিচারকে অপমান করলে সেই টিচারের ক্লাস করতে লজ্জা করবে না তোমার? নির্লজ্জের মতো বসে না থেকে চলে যাও।
নীলা স্তব্ধ হয়ে গেল এমন আকস্মিক ঘটনার কারণে। এরকম কিছু জন্য প্রস্তুত ছিল না। ঘটনাটি বুঝতে তার অনেকক্ষণ সময় লাগলো। কিন্তু পরক্ষণেই তার মুখশ্রীর ধরণ বদলে গেল। স্বাভাবিক মুখশ্রীতে রাগের আভা ফুটে উঠলো। খেয়ে বসা থেকে উঠে পড়ল এবং মেয়েটির চোখে চোখ রেখে ইংরেজিতে বলতে লাগলো_
তোমার সাহস কি করে হলো আমার পারমিশন ছাড়া আমার বই মাটিতে ছুড়ে ফেলার? এতো ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়ো অথচ কোন আদব কায়দা জানো না? নিজের যোগ্যতায় আমি এখানে এসেছি কারোর কোন অধিকার নেই আমাকে এইখান থেকে বের করে দেওয়ার। তাই আমার থেকে দূরে থাকবে। আমি কাউকে ভয় পেয়ে চলবো না। নেক্সট টাইম যদি আমার জিনিসপত্রে হাত লাগাও তাহলে তোমার হাত ভেঙে ফেলতে আমি দ্বিতীয়বার ভাববো না।
কথাগুলো বলেই নীলা নিচে পড়ে থাকা নিজের বই তুলে নিল এবং সুন্দর করে বইটি মুছে বেঞ্চের উপর রাখল। ক্লাসের সবাই নীলার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ আবার খুব খুশি হচ্ছে কারণ লিসা প্রিন্সিপালের মেয়ে বলে সবার উপর জোর খাটায় কেউই ভয়ে কিছু বলতে পারেনা। আর যারা লিসার মত সাহসী তাদেরকে লিসা নিজের টিমে নিয়ে ফেলে ফলস্বরূপ দুর্বলরা ভয়ে ভয়ে চলে। কিন্তু নীলা প্রথম যে কিনা ইউনিভার্সিটি’তে প্রথম দিনে এসেই নিজের সাহসিকতা প্রকাশ করেছে। সবাই সম্মানের দৃষ্টিতে দেখছে নীলাকে। লিসার মুখ লাগে লাল হয়ে রয়েছে। এই অপমান তার সহ্য হলো না। কেউ কখনো তার চোখে চোখ রেখে কথা বলা সাহস পায়নি অথচ এই নতুন মেয়ে তাকে অপমান করছে। সে জিনা কিছু বলতে যাবে অমনি পিছন থেকে গম্ভীর পুরুষালী ভেসে কণ্ঠ আসলো__
কি হচ্ছে এখানে?
মিহাল প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে রেখে ক্লাস রুমের ভেতর প্রবেশ করতে করতে ইংরেজিতে কথাটি বলল। সবার দৃষ্টি এখন মিহালের দিকে।মিহাল কে দেখে সবাই যার যার সিটে গিয়ে বসলো। কেবল লিসা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। সে মিহাল কে দেখে ঠোঁট উল্টিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল__
কিছু না স্যার এই নতুন মেয়েটি ইউনিভার্সিটি তে আসার পর থেকেই একের পর এক ঝামেলা করে যাচ্ছে। ওকে ক্লাস থেকে বের করে দেন আপনি।
নীলা অবাক হয়ে এতক্ষন দেখছিল নিজের অর্থনীতির শিক্ষককে। যার সাথে সে ভার্সিটিতে এসে ঝগড়া করেছিল সেই যে তার শিক্ষক এইটা সেই কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু তার মানে এই না যে সে ভয় পাবে। ভয় তো তারা পায় যারা ভুল কিছু করে সে তো ভুল কিছু করেনি। কিন্তু সে আরেক দফা অবাক হল লিসার কথা শুনে। সে তো কোন উল্টাপাল্টা ঝামেলা করেনি।মিহাল লিসা কে যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলা বলে উঠলো__
স্যার আমি জানতাম না যে এই কলেজের টিচাররা নিজেদের জন্য পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিজেদের স্টুডেন্টদেরকে রেখে দেয়। আর সেই স্টুডেন্টরা টিচারদের তোতা পাখি হয়ে অন্যদের সাথে ঝগড়া করে। ইউনিভার্সিটিতে আসার পর অনেক নতুন নিয়ম জানতে পারলাম।
নীলার কথা শুনে মিহাল কিছুটা অবাক হলো।সে ক্লাসরুমে ঢুকেই প্রথম নীলাকে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছিল সঙ্গে রেগে গিয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণেই সে নিজেকে বোঝালো যে এইটা তার প্রফেশন। আর প্রফেশনে সে ব্যক্তিগত কিছু আনবে না তাই এমন ভাব ধরল যে সে নীলাকে চেনে না। কিন্তু এখন নীলার কথা শুনে সে আরেক দফা অবাক হল। তার জানামতে এই ইউনিভার্সিটিতে তো এমন কোন নিয়ম নেই। মেয়েটি কি বলছে এই কথাটি বুঝতে তার কিছুটা সময় লাগলো।
আর লিসা তার তো গা জ্বলে উঠলো নীলার কথা শুনে।নীলা তাকে ডিরেক্টলি বলছে সে নাকি শিক্ষকদের তোতাপাখি। এত বড় অপমান তার হজম হলো না।
সে যেই না কিছু বলতে যাবে ওমনি মিহাল বলে উঠলো_ সাইলেন্ট। আমি কোন ফালতু কথা শুনতে আসিনি এখানে। এন্ড ইউ_ সে লিসার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল _
আমি কাকে ক্লাসে রাখব আর কাকে রাখবো না সেটা তোমাকে বুঝতে হবে না। আমার ক্লাস আমি বুঝে নেব। আর কে ইউনিভার্সিটিতে ঝামেলা করছে আর করছে না সেটা আমরা শিক্ষকরা দেখব তোমাকে দেখতে হবে না। আর এখানে হচ্ছেটা কি?
লিসা হকচকিয়ে গেল এবং কিছুটা ভয় পেল কারণ মিহাল বরাবরই ক্লাসের ডিসিপ্লিন ঠিক রাখতে পছন্দ করে। আর সেই জায়গায় সে ক্লাসে প্রবেশ করে প্রথমেই নীলার বই মাটিতে ছুড়ে ফেলেছে। এইটা যদি মিহাল জানতে পারে তাহলে নিশ্চিত তাকে এ ক্লাস থেকে বের করে দেবে। তাই সে ভয়ের শুকনো ঢোক গিলল।
এমন সময় পিছন থেকে কয়েকজন মিলে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। তাদের অনেক আগে থেকেই লিসার উপর জেদ ছিল এই সুযোগে তারা লিসার সত্যটা বলে দিল। সমস্ত ঘটনা শুনে মিহালের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।সে বরাবরই বই খাতা এইসব কে প্রচন্ড সম্মান করে। সে যায়গায় তার স্টুডেন্ট তার ক্লাস আগ মুহূর্তে অন্য আরেক স্টুডেন্টদের বই মেঝেতে ছুড়ে ফেলেছে। বইকে অপমান করা মানে তাকে অপমান করা। এবং যে একবার মিহাল খানকে অপমান করবে তাকে অনেক বড় শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।সে লিসার দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো__
যার বই তুমি নিচে ফেলেছো তাকে সরি বলো।
সবাই অবাক হয়ে গেল কারণ লিসা কখনোই কাউকে সরি বলেনি।
মিহাল আবার ধমক দিয়ে উঠতেই লিসা নীলা কে সরি বলল।নীলা জবাবে ইটস্ ওকে বলল।
তখনি মিহাল লিসা কে বলল__
আমার ক্লাস থেকে এক্ষুনি বের হয়ে যাও। যে বিদ্যাকে অপমান করে তার কোন জায়গা নেই আমার ক্লাসে। আগামী এক সপ্তাহ তুমি আমার ক্লাস থেকে সাসপেন্ড। এক সপ্তাহ পর নিজের গার্ডিয়ান নিয়ে আসবি আমার কাছে তারপরই তোমাকে আমার ক্লাস করতে দিব। নাউ গেট লস্ট।
শেষের কথাটি মিহাল অনেক চোরের চিৎকার করে বলল। লিসা আর দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড় দিয়ে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে পড়ল। সবাই চেয়ে রইল লিসার যাওয়ার দিকে।
আর নীলা সে চুপচাপ বসে রইল। আর মনে মনে বলতে লাগলো__
প্যারে লাল কে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটাও খারাপ নয়।
আসলেই কি প্যারে লাল এতটা খারাপ? আপনারা জানাবেন। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
চলবে তো…..?
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ১
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৭
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৯ এর শেষ অংশ
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ২
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৬(প্রথমাংশ + শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৯ প্রথম অংশ