নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
বোনাস_পর্ব
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌❌❌
১১৯৫০ ক্যারেক্টার। রি চেক দেওয়ার সময় পাইনি ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
নীলা আর ইকরা সবে মাত্র নিজেদের আ্যপার্টমেন্টে প্রবেশ করেছে।মালিক এসে তাদেরকে চাবি দিয়ে গিয়েছে। তারা যেই বিল্ডিংয়ে থাকবে সেটি ৫ তালা এবং তাদের অ্যাপার্টমেন্ট তিন তালায়। সেখানে দুটি রুম, রুমের সাথে অ্যাটাস বাথরুম, কিচেন রুম এবং একটি বড় ড্রয়িং রুম। তারা অন্যদের সাথে মানিয়ে যদি নিতে না পারে তাই আগেই একটি অ্যাপার্টমেন্ট নিজেরা নিয়ে ফেলেছে। কারণ স্কলারশিপ পাওয়ার কারণে পড়াশোনার খরচ নেই। আর প্রথম দিকে তারা পরিবারের থেকে টাকা নিলেও পরবর্তীতে জব করবে এবং নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাবে। বিষয়টি এমন না যে দুজনের পরিবার তাদের টাকা দিতে অক্ষম কিন্তু তারা দুজনেই পরিবারের উপর ডিপেন্ড থাকতে চায়না বেচারি দের মতোন। নীলার মতে নারী দের স্ট্রং থাকতে হয়। আজকাল তো অনেক পুরুষেরাই রান্নাবান্না করতে নিজেদের ইগোতে লাগায় না। জায়গায় নারীরা কেন পিছিয়ে থাকবে?
দুজন মিলে আগে অ্যাপার্টমেন্ট টা ভালো করে দেখলো।নীলার রুমের জানালা দিয়ে আইফেল টাওয়ার দেখা যায়।নীলা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল।ইকরাও নিজের রুম দেখতে লাইলো। রুমটা বেশ পরিপাটি।দুজন মিলে যার যার রুমে শাওয়ার নিয়ে নিল।আজ খাবার বাইরে থেকেই অর্ডার করবে। কারণ সব কিছু তো গোছগাছও করতে হবে।তার উপর আবার কাল থেকেই তাদের ইউনিভার্সিটি খোলা এবং তারা তাদের প্রথম দিনে অবিদ্যমান থাকতে পারবে না। দুজন মিলে শাওয়ার নিয়ে রুম নিজেদের মতোন সেট করতে লাগলো।এর মাঝখানে নীলা খাবার অর্ডার করে ফেলেছে। যতক্ষণে খাবার আসবে ততক্ষণে বসে না থেকে কাজ করলেই তাদের কাজ অর্ধেক হয়ে যাবে।
সব কিছু গোছগাছ খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেল নীলা এবং ইকরা। রুমে এসে বিছানায় এলিয়ে দিল নীলা। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার।হাত বাড়িয়ে বিছানার সাইডে থাকা নিজের ফোন নিলো মায়ের নাম্বারে কল দিবে বলে। মায়ের সাথে কথা বলে তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। বাংলাদেশে এখন অবশ্য ভোর রাত কিন্তু নীলার খুব ইচ্ছে করছে মায়ের সাথে কথা বলতে তাই আর বেশি কিছু না ভেবে মায়ের নাম্বারে কল লাগালো। লায়লা ইসলামের ঘুম হালকাই তাই ফোন আসতেই উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল।এত রাতে ফোন বাজাতে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলেন তিনি।ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন নীলা কল করেছে।কপালে চিন্তার ভাঁজ পরলো।দেরি না করে ফোন রিসিভ করতেই ব্যস্ত কন্ঠছ বলতে লাগলেন _
নীলা মা ঠিক আছিস তুই? শরীর ঠিক আছে তো মা? কিছু কি খেয়েছিস? কষ্ট হচ্ছে কোনো?
স্ত্রীর কথার শব্দ নিলয় মির্জার ঘুমও ভেঙে গেল।তিনিও উঠে বসলেন। স্ত্রীর চিন্তিত মুখ দেখে জিজ্ঞেস করলেন __
কি হয়েছে নীলার মা?
লায়লা ইসলাম ফোনের স্পিকার লাউড করলেন এবং বললেন নীলা কল দিয়েছে।নিলয় মির্জা এইবার নড়ে চড়ে উঠলেন। তখনই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে নীলা বলতে লাগলো _
উফ্ মা এত চিন্তা করছো কেন হুঁ? আমি একদম ঠিক আছি আর হ্যাঁ আমি খেয়েছি। তোমরা বলো কি অবস্থা তোমাদের?
লায়লা ইসলাম এবং নিলয় মির্জা দুজনেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।মেয়ে কখনোই তাদের ছাড়া দূরে থাকেনি তাই চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক।নিলয় মির্জা বলতে শুরু করলেন__
হ্যাঁ মা আমরা ভালো আছি।গতকাল আবির চলে গেছে মেডিকেলে।আর ইবাদ তো তোদের কথা ভেবে এইখান থেকে সেখান হাঁটাহাঁটি করে।
ইবাদের কথা মনে পরতেই নীলার মুখ মলিন হয়ে গেল। সেও ইবাদ কে খুব মিস করছে। হঠাৎ লায়লা ইসলাম আমতা আমতা করে বললেন__
আচ্ছা মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
নীলা বলল_
উফ্ মা এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে? জিজ্ঞেস করো যা ইচ্ছে।
লায়লা ইসলাম স্বামীর দিকে তাকালেন।নিলয় মির্জা নিজের স্ত্রী কে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই অনুমতি পেয়ে লায়লা ইসলাম বলতে শুরু করলেন _
আসলে ইরফানের উপর যেই বিপদ গেলো ভাবছি তার নামে কিছু দান সদকা দিব।তুই কি বলিস?
নীলা বিরক্ত হয়ে মুখ দিয়ে চ শব্দ করে বলতে শুরু
করল __
ইরফান ভাই তো আমার দান সাদকা পেয়েই এই পর্যন্ত এসেছে আমি আর নিজের মূল্যবান কিছু তার পিছনে ব্যয় করতে চাই না। অনেক করেছি ব্যয়। নিজের টাকা, সময়, ভালোবাসা, চোখের পানি, নামাজের মোনাজাত, মানত রোজা।আর না বাবা।
নিলয় মির্জা শব্দ করে হেসে উঠলেন এবং হাসতে হাসতে বললেন_ এই না হলে মির্জা পরিবারের মেয়ে।তুই আসলেই মি…. কথাটি বলেই তিনি থেমে গেলেন।কি বলতে যাচ্ছিলেন উপলব্ধি করতে পেরে জিভে কামড় দিলেন। লায়লা ইসলামও স্বামীর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। নীলা বলতে শুরু করল
হ্যাঁ বাবা আমি তোমারই মেয়ে।এই মির্জা পরিবারের মেয়ে বলে কথা।যাই হোক ফোন রাখছি আমার ঘুম পাচ্ছে।কাল একেবারে ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে কল করব কেমন।
লায়লা ইসলাম বললেন_
আচ্ছা মা সাবধানে থাকিস।
বলে ফোন কেটে দিলেন এবং স্বামী কে বললেন _
আর কতদিন এইভাবে মেয়ের কাছ থেকে সবকিছু গোপন রাখবে? একদিন না একদিন তো সত্য জানাতেই হবে।
নিলয় মির্জা কিছু বললেন না কেবল এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
নীলা ফোন কেটে দিয়ে নিজে নিজে বলতে লাগলো _
আমি আসলেই মিনুর মতোন হয়েছি এইটাই তো বলতে চেয়েছিলে তাই না বাবা? জানি আমি, শুধু এতটুকু না আরো অনেক কিছু জেনে এসেছি বাংলাদেশ থেকে।এখন শুধু এইটা জানা বাকি যে মিনু ফুফু কোথায় থাকে।
এইসব ভাবতে ভাবতেই নীলা পাড়ি দিল ঘুমের রাজ্যে।
মিহাল তৈরি হয়ে আ্যপার্টমেন্টে থেকে বের হতেই দেখলো মুনভি নিজের গাড়ির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেমন আগে প্রায় থাকতো।মিহাল তার দিকে এগিয়ে গেল ঠিক যেমন আগে করতো। কিন্তু পার্থক্য একটাই যে এখন আর কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে না।মিহাল মুনভি কে কিছু না বলেই তার গাড়িতে উঠে বসলো। মুভির ঠোঁট স্মিত হাসি ফুটে উঠল।সে ও গাড়িতে উঠে বসলো।মিহাল ড্রাইভিং সিটে বসলো সবসময়ের মতোন গাড়ি তার থাকুক আর মুনভির সেই সবসময় গাড়ি চালাতো। এখনো ব্যতিক্রম কিছু ঘটলো না।গাড়ি চলতে লাগলো আপন গতিতে। দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা।এই নীরবতা ভেঙে মুনভি বললো__
আমার সেই বিবাহিত গার্লফ্রেন্ড কখন আসবে?
মিহাল ঠোঁট কামড়ে হাসলো মুনভির কথা শুনে। তারপর বলল_
যতটুকু জানি গতকালই চলে এসেছে প্যারিসে।আজ যদি ইউনিভার্সিটিতে আসে তাহলেই দেখা করা সম্ভব।তাই তো বলি আজ ডাক্তার সাহেব নিজে হাসপাতাল ছেড়ে আমার দরজার সামনে কেন।
কথাটি সে মজা করে বলল।
মুনভি মিহালের পিঠে কিল বসিয়ে দিল।মিহাল আর্তনাদ করে উঠলো।মুনভি দাঁতে দাঁত চেপে বলল __
শালা তুই যেভাবে বলছিস যেন আমি আগে কখনো তোর বাড়িতে আসিনি? ওই বিয়াইত্তা বেডিরে দেখতে আসবো আমি আজব! তোর স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে নাকি? আমি বুঝিনা তুই ইউনিভার্সিটির প্রফেসর কি করে আছিস এখনো। ভয় হয় কবে জানি তোর চাকরি চলে যায়।
মিহাল শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল_
দেখিস আবার সেই বিয়াইত্তা বেডির প্রেমে পরে না যাস।
বলেই আবার শব্দ করে হাসতে লাগলো।
মুভির ভীষণ রাগ হলো কিন্তু নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলল_ প্রয়োজন পড়লে তাই করব তোর কোন সমস্যা? মিহাল হাসতে হাসতে মাথা নাড়িয়ে বলল__
না না আমার সমস্যা হতে যাবে কেন? যার বউ সমস্যা তো তার হবে।
মুনভি হঠাৎ জিজ্ঞেস করল_
আচ্ছা মেয়েটা দেখতে কেমন? আর মেয়েটার নাম কি?
মিহাল স্তব্ধ হয়ে গেল। মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। তার চোখে ভেসে উঠলো সেই শিশু মেয়েটির নিষ্পাপ চেহারা।সে আনমনে বলল_
পরী, পুতুল, একদম নিষ্পাপ।যেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী তার জন্য নয়। দেখলে মনে হবে এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে তাকে আগলে রাখতে হবে। ইনস্টল পৃথিবীর অসৎ মানুষগুলো কেবল তাকে কষ্ট দেবে। নাকি সেই কষ্ট পাও থেকে দূরে রাখতে হবে। তাকে আঘাত করার আগেই কলিজা কেঁপে উঠবে। মুখে এতটা মায়া। একবার যে তার মায়ার বাঁধনে ফেসে যাবে সে কখনোই এ বাঁধন থেকে ফিরে আসতে পারবে না। সে নারী যে জাদুকরী।
মুনিভ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিহালের দিকে।মিহাল কে কখনো ই কারোর বিষয়ে এত সুন্দর করে কথা বলতে দেখেনি সে।মিহালের কথার মাঝে বিন্দুমাত্র মিথ্যের ছিটে ফোঁটা নেই। তার কথা শুনে, তার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বলা কথাগুলোর মত সে আসলেই সেই মেয়েটিকে সকল বিপদ থেকে আগলে রাখতে চায়। অথচ আরেকজনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সেই এই মেয়েটিকেই নাকি এখন ব্যবহার করবে।
মুনভি আবার জিজ্ঞেস করল _
নাম কি সে পরীর?
মিহালের ঠোঁট প্রসারিত হলো।সে আনমনে বলতে লাগলো__
নাম? কি জানি? আমি জানি না তো।তবে আমি তাকে নীলাঞ্জনা বলেই ডাকি।
মুনভির এইবার মেজাজ বিগড়ে গেল।মিহাল কেমন জানি ফিল্মের নায়কদের মত কথা বলছে। সে বিরক্ত হয়ে বলল_
আজিব ভাই তুই তোর মামাতো বোনের নাম জানিস না? আরে সে প্রতারক তো আবার তোল মামাতো ভাই এবং খুব খুব খুব খুবই ভালো বন্ধু। তাহলে তার বউয়ের নাম জানিস না তুই? মজা নিচ্ছিস তুই?
মিহালেল হুঁশ ফিরল।সে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল_
আমার এত ইন্টারেস্ট নেই কারো নাম জানার। তাই আমি কখনো জিজ্ঞেস করিনি। আর না সে নিজ থেকে বলেছে।
মুনভি হাঁফ ছাড়ল তারপর বলল_
তাহলে নীলাঞ্জনা নিক নেইম দেওয়ার কারণ কি? সে কি তোকে কোন এক জনমে নীল তিমি উপহার দিয়েছিল?
মিহাল শব্দ করে হেসে উঠলো তারপর বলল_
না নীল রঙের তয়লায় জড়িয়ে ছিল আমার কোলে এবং সাগর ভাসিয়ে দিয়েছিল। যেখানে নীল তিমি অনায়াসে থাকতে পারবে।
মুনভি মিহালের এই কথা শুনে নড়ে চড়ে উঠলো এবং জিজ্ঞেস করল_
এত বেশি কান্না করেছিল?
মিহাল ঠোঁট কামড়ে হাসলো। মনে পড়ে গেল সেই পুরনো স্মৃতি যখন সে তার নীলাঞ্জনা কে করে নিয়েছিল তখন সেই ছোট্ট শিশুটি তার কোলে প্রস্রাব করে দিয়েছিল।মিহাল বরাবর হাজিন মেন্টেন করতো ছোটবেলা থেকেই। তার গায়ে ধুলাবালি লাগলেও সে সেই পোশাক সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে ফেলতো। অথচ সেই ছোট্ট নীলাঞ্জনা যখন তার কোলে প্রস্রাব করে দেয় তখন সে একটু রাগারাগী করেনি। বরং অনেকক্ষণ ছোট্ট নীলাঞ্জনা কে নিজের কোলে রেখেছিল।
এসব কথা মনে পড়তেই মিহালে ঠোঁট প্রসারিত হয়ে উঠল।মিহাল কে একা একা হাসতে দেখে মুনভি আবার মিহালের পিঠে কিল বসিয়ে দিল এবং দাঁতে দাঁত চেপে বলল_
শালা একা একা না হেসে আমাকে বলল।
মিহাল হাসতে হাসতে বলল__
আরে ছোট শিশুরা যা করে আরকি কোলে উঠলে।
মুনভি মিহালের কথা বুঝতে পেরেই শব্দ করে হেসে উঠলো। তারপর দুজনেই হাসতে লাগলো এবং পৌঁছে গেল ইউনিভার্সিটিতে।
আজ মুনভির নাইট শিফটে কাজ তাই ভাবলো মিহালের সাথে দেখা করে আসুক।ইগোর কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়লেও তাদের মনের মধ্যে কোন দূরত্ব তৈরি হয়নি। মন থেকে দুজন দুজনের বন্ধুই রয়ে গেছে। সেই মনের টানে বারবার এক হওয়া।
নীলা আর ইকরা মিলে নিজেদের আ্যপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েছে। সকালে হালকা কিন্তু খেয়ে নিল তারা। পরনে দুজনেরই বোরকা এবং হিজাব। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে লিফটৈ চড়ে উঠলো। এবং নিচে এসেই বুক করে রাখা ক্যাবে উঠে পরলো। নীলা আগেই ক্যাব বুক করে ফেলেছিল।
দুজন মিলে গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলো। সেখানে অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। তাদের বয়সী অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে কাজ করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করছে। আবার রাস্তার ধারে ধারে অনেক লোক নিজেদের ছোটখাটো দোকান নিয়ে বসেছে। হঠাৎ ইকরা নীলা কে জিজ্ঞেস করল_
আচ্ছা আমরা তো আর পরিবারের টাকা নিয়ে চলবো না যতদিন এখানে আছি। তাহলে অবশ্যই আমাদের পার্ট টাইম জব খুঁজতে হবে। তাহলে আমরাও কি রেস্টুরেন্টে কাজ করব? এটাই তো বেশিরভাগ মানুষ করে।
নীলা কিছুক্ষণ জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইল। মূলত সে ভাবছে। তারপর হঠাৎ বলে উঠল __
কেন না আমরা নিজেরাই কোন বিজনেস স্টার্ট করি?
ইকরা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো নীলার পানে।সে মেয়ে সবসময় বলতো আই হেইট বিজনেস এখন সেই মেয়ে কিনা বিজনেস করার জন্য উপদেশ দিচ্ছে। সে যদি জানতো ইরফান এবং আরশির সত্য প্রকাশ পেতেই নীলা এত পরিবর্তন হয়ে যাবে তাহলে সে আরো আগেই আট ঘাট বেঁধে প্রমাণ জোগাড় করতে নেমে পড়তো। কারণ সে আগেই সব কথা কেবল শুনেছে কিন্তু প্রমাণ ছিল না বলে কিছুই করতে পারেনি। নিজের চিন্তা ভাবনা দূরে ফেলে জিজ্ঞেস করল__
কিসের বিজনেস করা যায়? আমার তো বিজনেস সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।
নীলা ইকরার দিকে তাকালো এইবার। সে যতই বলুক সে আর কখনোই কাউকে বিশ্বাস করবে না কিন্তু না চাইতেও ইকরাকে সে বিশ্বাস করে ফেলছে। এই মেয়ে কম সাবধান করেনি তাকে। কিন্তু সেই অন্ধ ভক্ত ছিল। একবার চোখ বন্ধ করে মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছে সে। এখন না হয় চোখ খুলে বিশ্বাস করবে। যদি আবার ঠকতে হয় ঠকবে। ঠকতে ভয় নেই তার, কিন্তু ঠকাতে ভীষণ ভয়।
নীলা ইকরা কে বলল_
চিতই পিঠা আর ভর্তার বিজনেস করবো।
ইকরার চোখ ছানাবড়া।এই মেয়ে বলে কিনা প্যারিসে এসে চিতই পিঠা এবং ভর্তার বিজনেস করবে। সে চিৎকার করে বলল__
তোর মাথা ঠিক আছে? এইসব কে খাবে এখানে। মানুষ হাসাহাসি করবে।
নীলা নির্বিঘ্ন ভঙ্গিতে বলল __
মানুষের হাসাহাসি দিয়ে আমাদের কাজ কি? কোন কাজেই প্রথমে সাফল্য পাওয়া যায় না। জীবনে কিছু পেতে হলে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। আমরা না হয় মানুষের হাসাহাসি সম্মুখীন হব কিছুদিন। আর প্যারিসে কি কোন বাঙালি নেই নাকি? অবশ্যই আছে তারা দেখে নিঃসন্দেহে খাবে। এবং একজনকে খেতে দেখলে আরো ১০ জন এগিয়ে আসবে। আর আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে ব্যক্তি এই পিঠা একবার খাবে তার বারবার খেতে মন চাইবে।আর ভর্তার ক্যাটাগরি অনেকগুলো রাখবো। তার পাশাপাশি এক ভর্তা দুই রকম বানাবো অর্থাৎ অর্ধেক বানাবো বেশি ঝাল দিয়ে এবং অর্ধেক বানাবো কম ঝাল দিয়ে। যাতে বাঙালিরা চাইলে বেশি ঝাল দিয়ে খেতে পারে। এখানকার মানুষ যদি বেশি ঝাল না খায় তাহলে যাতে স্বাভাবিক ঝাল খেতে পারে।”
নীলার এমন উপস্থিত বুদ্ধি দেখে ইকরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তার নীলার প্রতি গর্ব হচ্ছে।সে বুঝে উঠতে পারেনা আরশি কি করে নীলার মত এমন সৎ এবং ভালো মনের মানুষকে ঠকালো। তখনই গাড়ি চালাতে থাকা ড্রাইভার ঘাড় পেছনে ঘুরিয়ে বলল_
বাহ্ আপা আপনার মাথায় তো চমৎকার বুদ্ধি। আমিও একজন বাঙালি। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম তারপর সেখান থেকে এখানে এসেছি। আজ পাঁচ বছর হয়েছে বাংলাদেশে যাই না বাংলাদেশের কোন পিঠাও পার খাইতে পারি না। আপনি যদি এই ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আর কেউ খাক বা না খাক আমি এবং আমার বাঙালি বন্ধুরা থাকবো আপনার রেগুলার কাস্টমার।
নীলা এবং ইকরার ঠোঁটে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল। কারণ একজন কাস্টমার আসলেই আস্তে আস্তে আরও কাস্টমার আসবে। কোন কাজ করার আগে যদি প্রথমে মনোবল পাওয়া যায় তাহলে সে কাজ খুব ভালো করে করা যায়। যেই মনোবলের অভাব ছিল সেই মনোবল তারা পেয়ে গেল এখন শুধু তাদের পরিকল্পনা সম্পন্ন করতে হবে।
AUP তে পৌঁছে গিয়েছে তারা। মুগ্ধ নয়নে পুরো ইউনিভার্সিটি টা দেখছে। এতটা সুন্দর যা বলার বাহিরে। মনে হচ্ছে তারা হলিউডের কোন মুভির শুটিংয়ের মাঝখানে চলে এসেছে। আর আশেপাশে মানুষ দিয়ে ঘেরা। সবাই নিজেদের মতো চলাফেরা করছে। অনেক বাঙালির চেহারা দেখা যাচ্ছে। আবার কিছু বোরখা এবং হিজাব পরিহিত মেয়েদের কেউ দেখা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে পড়াশুনার জায়গায় এবং যার যার সংস্কৃতি যার যার জায়গায়। এখানে সবাই স্বাধীন।
ইকরা নীলাকে বলল__
আমার অনেক তৃষ্ণা পেয়েছে।
নীলা বলল__
আমারও মাথাটা ধরে আছে। তাহলে চল খুঁজে দেখি ক্যান্টিন কোথায়। পেয়ে গেলে তুই পানি খেয়ে নিস এবং আমি কফি নিয়ে নিব।
ইকরা সায় জানালো দুজন মিলে ক্যান্টিন করতে লাগলো। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তারা ক্যান্টিন পেয়ে গেল চলে গেল ক্যান্টিনে।
ক্যান্টিনের ভেতর বসা ছিল মিহাল এবং মুনভি।মিহালের ক্লাস অনেক পরে তাই এখানে বসে আছে। হঠাৎ মুনভির দৃষ্টি গেল এক বোরকা পরিহিত মেয়ের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। মেয়েটির মুখে এত মায়াবী যা সে বলে বোঝাতে পারবে না। গাড়িতে যখন মিহাল একটি মেয়ের বর্ণনা করছিল তখন তার কাছে ওইসব ফিল্মি লাগছিল। কিন্তু এখন এই মেয়েটিকে দেখার পর সেও হয়তো এরকম ভাবে কোন ফিল্মে ডায়লগ বলতে পারবে।
হঠাৎ মেয়েটির পাশে আরেকটি বোরকা পরহিত মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করল_
ইকরা তোর পানি খাওয়া শেষ?
মুনভির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। সে জানতে পারলো যে এই মেয়েটির নাম ইকরা।
তারা দুজন এইদিকেই আসতে লাগলো। নীলার হাতের কফি।
মিহালের ফোনে হঠাৎ কল আসলো।সে কল ধরলো এবং হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো। আর নীলাও ইকরার সাথে কথা বলতে বলতে আসছিল মিহালের হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে ফেরাতে তার হাতে সাথে মিহালের বুকে ধাক্কা লাগল এবং মগ থেকে কফি পড়ে গেল মিহালের পেন্টের উপর। ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে কি ওই কিছু বুঝতে পারল না। আর মুনভি তো ব্যস্ত ছিল ইকরা কে দেখাতে তাই তার কোন হুশ ছিল না। মিহালের হুংকার শুনে তার হুঁশ ফিরল। কি হয়েছে বিষয়টি বুঝতে এসে বাসা থেকে দাঁড়িয়ে উঠল। সে জানে মিহালের কি পরিমান রাগ।
অন্যদিকে নীলা যেইনা সরি বলতে নিচ্ছিল ওমনি মিহালের করা ধমক শুনে তার সরি বলার মুড চলে গেল। সে ভুল করেছে বলেই সরি বলতো হলে। কিন্তু মিহালের করা কন্ঠ তার ঠিক পছন্দ হলো না। এখানে নতুন এসেছে বলে কেউ তার সাথে রুড ব্যবহার করবে এবং সে ছেড়ে দিবে এতটা বেচারী মেয়ে সে না।
মিহাল চিৎকার করে বলল_
ডু ইউ নো হু আই এম?
ক্যান্টিনে যারা উপস্থিত ছিল সবাই তাদের দিকে চেয়ে রইল। ইকরা কিছুটা ভয় পেয়ে নীলার হাত জরিয়ে ধরল। মুনভি বুঝতে পারল পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছি সেই মিহানের কাছে এসে বলল_
থাক বাদ দে ভুল হয়ে গেছে।
মিহাল আবার চিৎকার করে বলল_
আনসার মি. ডু ইউ নো হু আই এম? হুঁ?
নীলা মিহালের চোখে চোখ রেখে বলল __
আইএম নট ইন্টারেস্টেড ইন ইওর নেইম।
তারপর আবার চোখ তাকিয়ে বাংলায় বলল_
আপনি যেই প্যারলাল হোন না কেন হু কেয়ারস?
মিহালের চোখ বড় বড় হয়ে উঠলো। কেউ কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলতে সাহস পায়নি। মুনভিও অবাক চোখে তাকিয়ে রইল মেয়েটির দিকে।
নীলা আবার মিহালের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল _.
ইটস্ মাই বেড। আমি আপনাকে সরি বলতাম কিন্তু তার আগে আপনি রোড ব্যবহার করেছেন তাই আমি আর আপনাকে সরি বলবো না।
কথাগুলো সে ইংলিশে বলল। তারপরই ইকরার হাত ধরে বের হয়ে পড়ল ক্যান্টিন থেকে। সবার দৃষ্টি তাদের দিকে। আর মিহাল তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না কেউ তার সাথে এভাবে কথা বলে গিয়েছে। টিভিদের উপর কাচের গ্লাস ছিল সে সেটি হাতে নিয়ে রাগের মাথায় ফ্লোরে ছুড়ে মারে এবং ক্লাস সঙ্গে সঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। মুনভি কেবল চেয়ে থাকে তার দিকে।
চলবে??? রিচেক দেইনি। পরে দিয়ে দিব। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৬(প্রথমাংশ + শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা গল্পের লিংক
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৯ এর শেষ অংশ
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ১
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৮+বোনাস
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৯ প্রথম অংশ
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ২