Golpo romantic golpo নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা

নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৯ এর শেষ অংশ


নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা

নাজনীননেছানাবিলা

পর্ব_৯ এর শেষ অংশ

অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌❌

মিহাল ইউনিভার্সিটিতে লেকচার শেষ করে বাড়ি ফিরল।এপার্টমেন্টে প্রবেশ করেই দেখলো তার মা ড্রয়িং রুমের সোফায় থুতনিতে হাত রেখে বসে আছে।মিহাল এসে নিজেরে মায়ের পাশে বসল। ইসরাতুল নিজের ছেলের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে নরম স্বরে বললেন__
তোর বাবা তার পরিবারের এক মাত্র সন্তান বলে তুই কখনোই কোনো চাচা, জেঠার ভালোবাসা পাসনি। কিন্তু আমার কারণে তুই তোর মামাদের ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হলি। হিসেবে তুই বড় ছেলে অথচ তুই তোর মামাদের ভালোবাসা পেলি না।তাও তোর তিন তিনটে মামা।

কথাগুলো বলেই নিজের ওড়না দিয়ে মুখে চেপে ধরলেন কান্না আটকানোর জন্য । এবং সেখান থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন। মিহাল নিজের মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।না সে নিজের মায়ের কষ্ট দেখতে পারছে আর না পারছে নিজের মায়ের কষ্ট কমিয়ে দিতে। সে তো একবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে নিজেই ঠকে গেছে।সে চলে গেল অতীতের ভাবনায় যেগুলো তাকে তার বাবা বলেছিল।

অতীত __
ইসরাতুলের পুরো নাম ইসরাতুল মিনা মির্জা সে হলো মির্জা পরিবারের সব ছোট মেয়ে মেয়ে এবং ভাইদের জানের টুকরো।তার বড় তিন ভাই আছেন।যাদের নাম ইমরান মির্জা, নিলয় মির্জা এবং আকাশ মির্জা।তারা তিন ভাই দের বয়সের মাঝে তেমন ব্যবধান নেই। ইমরান মির্জা থেকে নিলয় মির্জা প্রায় ৩ বছরের ছোট এবং আকাশ মির্জা আবার নিলয় মির্জা থেকে ৩ বছরের ছোট।আর ইসরাতুল মিনা মির্জা আকাশ মির্জার দুই বছরের ছোট। তিন ভাই মিলে আদর করে তাকে মিনু বলে ডাকতো। কারণ তাদের মা বাবা তাকে ইসরাতুল বলে ডাকতো আর প্রতিবেশীরা এবং আত্মীয় স্বজনরা মিনা বলে ডাকতো। তাই তারা একটু ভিন্নভাবে ডাকবে বলে আদর করে মিনাকে মিনু বলে ডাকত।

ছোট থেকেই মিনা বড়ো হয়েছে তার ভাইদের কোলে পিঠে। তাদের বাড়ির এক পাশে থাকতো খান পরিবার।খান বংশে ছিল একজন ছেলে যার নাম মুবিন খান।( মিহালের বাবা)তিনি ইমরান মির্জার সমবয়সী ছিলেন।আর একই পাড়াতে থাকার কারণে ইমরান মির্জার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। ফলস্বরূপ মুবিন খান ছিলেন ইমরান মির্জার বন্ধু। এবং প্রায় সই তিনি মির্জা বাড়িতে আসতেন।আর তাদের বাড়ির পাশের বাড়ি ছিল চৌধুরী বাড়ি।তাদের ছিল এক মেয়ে যার নাম ছিল মিনু চৌধুরী।(মুনভির মা)তিনি ইসরাতুল মিনা মির্জার সমবয়সী ছিলেন।তারা একই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু মাস ছিল আলাদা। মিনু চৌধুরী কয়েক মাস বড় ছিলেন ইসরাতুল মিনা মির্জা থেকে। তারা দুজন একসাথেই বেড়ে উঠেছেন। আর তাদের নামে অনেকটাই মিল। একজন মিনু তো আরেকজন মিনা যাকে তার ভাই রা আদর করে মিনু বলেই ডাকতো। অনেক সময় তো এমন হয়েছে যে তারা দুজন যদি একসাথে বসে আছে আর সেই সময় যদি কেউ মিনু বলে ডেকেছে তাহলে দুজনেই একসাথে তাকিয়েছে।সময়ের সাথে সাথে হয়ে যায় দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড।

মুবিন খানের যখন বয়স ছিল ২২ তখন ইসরাতুল মিনার বয়স ছিল ১৪ তখন থেকেই মুবিন খানের মিনা কে মনে ধরেছিল। কিন্তু বয়সের ব্যবধান এবং বন্ধুত্বের খাতিরে তিনি নিজের মনের আশা মনে রেখেছিলেন। তিনি চাইতেন মিনা যখন বড় হবে তখন তিনি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবেন।আর তার ছিল আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড যার নাম শাহরিয়ার মামুন।সে প্রায় সই তাদের বাড়িতে আসতো এবং কাকতালীয়ভাবে তার মনে ধরে মিনু কে। অর্থাৎ দুই বেস্ট ভালোবেসে ফেলে অন্য দুইটা বেস্ট ফ্রেন্ড কে।
তারপর __
হঠাৎ মিহালালের ভাবনায় ছেদ ঘটে ফোন বেজে উঠাতে।সে নিজের মাথা থেকে সকল চিন্তাভাবনা দূর করে ফোন ধরে এবং কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে যায়।

বাকি অতীত গল্পের সাথে সাথে জানতে পারবেন।


প্যারিস শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এলো দুই তরুণী। দুজনের পরনেই বোরকা এবং হিজাব। দুজনের দুই হাতে দুই লাগেজ। দুজন মিলে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে এলো। উদ্দেশ্য এখন তাদের ক্যাব নিয়ে প্যারিসের ৭ম অ্যারোন্ডিসমেন্টে যাওয়ার।American University of Paris তো সেখানেই। তারা আগেই ইউনিভার্সিটির হেইড এর সাথে মেইল আদান প্রদান করে সব জেনে নিয়েছিল সেখানে কোথায় কোথায় তারা থাকতে পারবে। সব বুঝে তারা দুজন মিলে একটি অ্যাপার্টমেন্ট নিল। আগেই সেটার জন্য অ্যাডভান্স প্রেমেন্ট করে ফেলেছিল। নীলা যেহেতু পরিবারের সাথে আগে out of country চলাফেরা করেছে তাই তার এখানে চলাফেরা করতে অসুবিধা হচ্ছে না কিন্তু ইকরা কিছুটা ভয় পাচ্ছে। এবং ভয় পাওয়াটাও স্বাভাবিক।

নীলা তাকে ভরসা দিয়ে বলল_
ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তো আছি।
এতে ইকরার ভয় কমে এলো।

ক্যাব আসতেই তারা উঠে পরলো এবং দুজনেই গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের সুন্দর দৃশ্য মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগলো।তারা এয়ার পোর্টে পৌঁছিয়েই আগে পরিবারকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা পৌঁছে গেছে। এর মাঝে নীলর আর ইরফানের সাথে কথা হয়নি। যখন বাংলাদেশে ছিল তখন ফ্লাইটে উঠার আগে ফোন করে কেবল নিজের চাচা চাচিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু একবারও ইরফান কে দেখতে চায়নি। ভাঙ্গা আয়নায় নিজের মুখ দেখা এবং চলার সময় কালো বিড়ালের পথ কাঁটা দুটিই তার কাছে কুসংস্কার লাগলে এখন তার মতে ইরফান যদি কোনো বস্তু হয় তাহলে সেটা হল ভাঙ্গা আয়না এবং কোন প্রাণী হলেই কালো বিড়াল। যে দুটি শুভ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পথে সে কোন বাধা রাখল না।এর জন্যই বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটে উঠার আগে সে ইরফানের সাথে কথা বলেনি। সেই জায়গায় ইরফানের চেহারা দেখাতে অনেক দূরের কথা। আর এমনিতেও ইমরান মির্জা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ইরফানের তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। কেবল হাত পা ছুলে গিয়েছে এবং কপাল কেটে গিয়েছে এইসব শুনে তার আর ইচ্ছে করেনি ইরফানের সাথে কথা বলার। তার কাছে দুধের দুধ এবং পানির পানি হয়ে গিয়েছে যে ইরফান এইসব নাটক করেছে। কিন্তু সে এখনো এটা বের করতে পারেনি যে ইরফান কেন তার প্যারিসে যাওয়া নিয়ে এত চিন্তিত ছিল। তারমানে এমন কিছু আছে যা ইরফান জানে কিন্তু সে জানে না। এবং তাকে যে করেই হোক সত্যটা জানতে হবে।


ইরফান কে সেইদিনই হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দিয়েছিল। কিন্তু তার শরীরের ক্ষত থেকে বড় ক্ষত হয়েছিল তার মনে। সে কোনোভাবেই নীলার উপেক্ষা মেনে নিতে পারছিল না। তার ওপর মনে ভয় জাগতে শুরু করল যে নীলা প্যারিসে গিয়ে না সব সত্য জেনে ফেলে। তাহলে সে ধরা পড়ে যাবে কোনো এক ব্যক্তির কাছে। এবং সেই ব্যক্তির কাছে একবার যে ধরা পড়ে তার বেঁচে ফেরা খুব মুশকিল। কারণ সেই ব্যক্তি ভালোর ভালো এবং খারাপের খারাপ।আর যারা তার সাথে প্রতারণা করে তাদেরকে তো সে প্রয়োজন পড়লে কবর থেকে খুঁজে বের করে হলেও নিজের সামনে দাঁড় করাবে। এজন্যই তো ইরফান প্যারিস ছেড়ে বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে চলে এলো। কারণ নিজের বাড়ি তার সব থেকে বড় সেফ জোন। এখানে তার বাবা চাচারা আছে যার ফলে সেই ব্যক্তিটি এখানে আসবে না। সে এই কারণেই আরশি কে বলেছিল যে আগে নীলাকে বিয়ে করে তারপর নীলাকে ডিভোর্স দিয়ে সে আরশি কে বিয়ে করবে। কিন্তু আরশি তাকে একই কথা বলেছে যে বিয়ে করলে কেবল তাকেই করতে হবে।তখন ইরফান বলেছিল তাহলে নীলার সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে এর মধ্যেই দুজন বিয়ে করে ফেলুক। কিন্তু আরশির কথা ছিল একদম যেদিন নীলা এবং তার বিয়ে হবে সেই দিনই সে বিয়ে করে সেই বাড়িতে উঠবে। ইরফান না করতে চাইলে আরশি বলে তারা যখন প্যারিসে লিভিনে থাকতো তখন তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি এবং ভিডিও আরশির কাছে আছে। যদি ইরফান তার কথা না শুনে তাহলে আরশি এইসব ইরফানের পরিবারকে দেখাবে। এবং এই কারণে ইরফান ভয় পেয়ে যায়। কারণ তার পরিবার যদি এসব কথা জানতে পারে তাহলে তাকে তেজ্যপুত্র করে দিবে। যার ফলে সে আরশির কথা শুনে।

কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে যে সে আরশির সাথে রিলেশনে গিয়ে কি বড় ভুল করেছে। সর্বপ্রথম নীলাকে হারালো। তারপর নীলা তাকে নিজের বিজনেসের অংশ দিয়ে দিত সেই অংশ হারিয়ে ফেলল। পরিবারের কাছে নিজের সম্মান হারালো। নীলার মত কেউ একজন ছিল যে তাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসতো সেই ভালোবাসা হারালো। এখন তার যে অবস্থা এই অবস্থাতেই যদি নীলা আগের মত থাকতো তাহলে সারাক্ষণ তার পাশে বসে থাকতে হবে এবং তার সেবা যত্ন করতো। অথচ সে যখন হাসপাতালে ছিল তখনই আরশি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পরিবারের কাছে মিথ্যা বাহানা করে নিজের মামার বাড়ি চলে গেছে যাতে তাকে তার সেবা না করতে হয়। যখন প্যারিস ছিল তখন আরশি প্রতিদিন এসে তার খোঁজ-খবর নিত। এভাবেই আস্তে আস্তে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়। এবং বন্ধুত্ব থেকেই হয়ে যায় প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমের প্রস্তাব টা অবশ্যই ইরফান নিজেই দিয়েছিল। কারণ নীলা তাকে ভালবাসলেও কখনো কাছে ঘেষতে দেয়নি। কিন্তু আরশিকে যদি সে ভুলেও ছুঁয়ে ফেলেছে তাহলে আরশি কখনো দূরে সরেনি।এতেই সে লাই পেয়ে বসে।সে ভাবতে শুরু করে আর আরশি মনের কথা বুঝে যা নীলা এত বছরে কখনোই বুঝতে পারেনি। তার মতে আরশি খুব স্মার্ট কিন্তু নীলা না।

কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত সে পস্তাচ্ছে। এখন সে বুঝতে পারছে জীবনে সবথেকে বেশি প্রয়োজন ভালোবাসার এবং যত্নের। তাইতো রুমে বসে বসে এখন তাকে চুইংগাম চাবাতে হচ্ছে। আফসোস নামক জিনিসটা মানুষকে কুরে কুরে খায়। যা এখন তার ভেতর কে তোলপাড় করে দিচ্ছে।

চলবে _)
বোনাস পর্বে নীলা এবং মিহালের দেখা হবে 👀

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply