নির্লজ্জ_ভালোবাসা
লেখিকাসুমিচোধুরী
পর্ব ৫২ ( ১৮+ এলার্ট)
🚫রোমান্টিক যারা পছন্দ করেন শুধু তারাই পড়বেন! আর যারা পছন্দ করেন না অনুরোধ রইল পড়বেন না আর বাজে মন্তব্য করে যাবেন না। আর কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ🚫
টানা পাঁচ মিনিট ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে থাকার পর আয়ান যখন তিথিকে ছাড়ল, তখন দুজনেরই দম বন্ধ হওয়ার দশা। ঝুলে থাকা অবস্থায় শরীরের সবটুকু শক্তি যেন ওই একটা চুম্বনেই শেষ হয়ে গেছে। তিথি দিশেহারা হয়ে আয়ানের নগ্ন কাঁধ জাপটে ধরে হাপরের মতো বড় বড় শ্বাস নিতে লাগল। আয়ানের তপ্ত নিশ্বাস তখন তিথির ভেজা ঠোঁটে আছড়ে পড়ছে। মুহূর্তের মধ্যে আয়ান তার কোমরে থাকা রশিটা দিয়ে নিজেকে আর তিথিকে একদম আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল। এখন আর পড়ে যাওয়ার ভয় নেই, বরং একটা শরীর অন্যটার সাথে সিমেন্টের মতো লেপ্টে আছে।
তিথি কাঁপতে কাঁপতে আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে বলল।
“আয়ান, তুমি একটা আস্ত পাগল, সাইকো! এই মরণঝুঁকির মধ্যে তুমি এসব কী করছো? আমাদের প্রাণটাও তো যেতে পারতো!”
আয়ান বাঁকা হাসল, সেই হাসিতে বুনো আকাঙ্ক্ষা। ডান হাতে ওপরের রশিটা শক্ত করে ধরে অন্য হাতে তিথির উন্মুক্ত পিঠ নিজের দিকে পিষে ধরল। তারপর আচমকা তিথির ঘাড়ের নরম চামড়ায় বুনো এক কামড় বসিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল।
“এটা হবে আমাদের জীবনের বেস্ট আদর! পুরো ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে আয়ান খান তোকে আজ মেঘের মতো উড়ে উড়ে আদর করেছে। এমন বাসর পৃথিবীর আর কোনো প্রেমিক কোনোদিন করতে পারেনি।”
তিথি যন্ত্রণায় আর কামনার তীব্রতায় একটা তীব্র চিৎকার করে উঠল। ভয়ে আর উত্তেজনায় ওর শরীর নীল হয়ে আসছে। সে আয়ানের ঘাড় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আকুতি জানাল।
“প্লিজ আয়ান ভাইয়া, নিচে নামো আমার খুব খারাপ লাগছে, সারা শরীর কেমন করছে!”
আয়ান ওর কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে কামুক কণ্ঠে বলল।
“দাঁড়া, তোর খারাপ লাগা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি।”
বলেই আয়ান নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে তিথিকে দেয়াল থেকে একটু পিছিয়ে শূন্যে এক জোরালো দোল দিল। তারপর শুরু হলো তার সেই মাতাল করা আদিম আদর। শূন্যে ঝুলে থাকা অবস্থায় আয়ানের হাতের ছোঁয়া আর ঠোঁটের ঘর্ষণে তিথি সুখের এক অতল সাগরে হারিয়ে যেতে লাগল। তার মনে হচ্ছে জানপাখিটা বুঝি শরীর ছেড়ে এখনই উড়ে যাবে। সে আয়ানের ঘাড়ের ভাঁজে মুখ গুঁজে দিয়ে পাগলের মতো গোঙাতে লাগল। ধস্তাধস্তি আর এই উত্তাল দুলুনির চোটে তিথির শাড়ির বাঁধন আলগা হয়ে একসময় সাপের মতো নিচে বাগানের মাটিতে পড়ে গেল। অন্ধকার রাতে শূন্যে ঝুলে থাকা দুই নগ্নপ্রায় শরীর যেন সার্কাস খেলার মতো দুলছে আর একে অপরের ভেতরে মিশে যেতে চাইছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ান প্রচণ্ড হাঁপিয়ে উঠল। রশি ধরে রাখার শেষ শক্তিটুকুও যেন নিংড়ে বের হয়ে গেছে। সে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে তিথির ঘাড়ের ওপর মুখ গুঁজে দিয়ে হতাশ আর তৃষ্ণার্ত গলায় বলে উঠল।
“ধুর বাল! এইভাবে ঝুলে থেকে ঠিকমতো শক্তিই খাটাতে পারছি না। এইভাবে তৃপ্তি করে বাসর করা যায় না। চল নিচে নামি,নিচে নেমে তোকে বুঝিয়ে দেব আসল বাসর কাকে বলে!”
আয়ান অতি সন্তর্পণে নিজের কোমর থেকে রশির বাঁধন আলগা করল। তারপর তিথিকে এক হাতে শক্ত করে জাপটে ধরে, অন্য হাতে রশি বেয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে এল। ঘাসের ওপর পা রাখতেই দুজনের বুকের ধড়ফড়ানি যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। খোলা আকাশের নিচে তারা দুজনেই হাঁপাতে হাঁপাতে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। তিথি দেখল তার শাড়িটা পাশে পড়ে আছে, সে লজ্জা ঢাকতে যেই না ওটা তুলতে যাবে, অমনি আয়ান চিলের মতো ছোঁ মেরে তাকে পাজা করে কোলে তুলে নিল।
তিথি বুঝতে পারছে, আজ তার আর নিস্তার নেই। এই নির্জন রাতে চিৎকার দিলে বাড়ির সবাই চোর ভেবে ছুটে আসবে, আর তখন এই অবস্থায় ধরা পড়লে লজ্জার কোনো শেষ থাকবে না। সেই অপমানের ভয়ে তিথি নিজের ঠোঁট কামড়ে সবটুকু আর্তনাদ গিলে ফেলল। আয়ান তিথিকে নিয়ে সুইমিংপুলের পাশে দুলতে থাকা বড় দোলনাটার কাছে এল। সেখানে বসে তিথিকে নিজের কোলের ওপর এমনভাবে বসিয়ে নিল যে দুজনের শরীরের কোনো ব্যবধান রইল না।
আয়ান তিথির ঘামাচল কপালে নিজের তপ্ত কপাল ঠেকিয়ে গাঢ় স্বরে বলল।
“তিথি, আমার আদরটা শুধু চোখ বন্ধ করে অনুভব কর। আজ তোকে আমি সুখের এমন এক জোয়ারে ভাসাবো যা তুই স্বপ্নেও ভাবিসনি। হয়তো একটু ব্যথা লাগবে, কিন্তু কথা দিচ্ছি সেই ব্যথাটা তোর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি আর কাঙ্ক্ষিত ব্যথা মনে হবে।”
বলেই আয়ান তিথির কোমর ধরে এক ঝটকায় তাকে নিজের শরীরের সাথে পিষে ফেলল। মুহূর্তের মধ্যে তিথির চোখ উল্টে এল, ভেতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল যা সে ঠোঁট কামড়ে আটকে দিল। আয়ান তিথিকে নিয়ে কামনার সেই অতল সমুদ্রে ডুব দিল। তাদের শরীরের আদিম উন্মাদনায় দোলনাটা মচমচ শব্দ করে দুলতে লাগল, যেন ওটাও তাদের এই মাতাল করা বাসর উপভোগ করছে।
তিথি আয়ানের ঘাড়ের শক্ত রগগুলো আঁকড়ে ধরে চোখ বুজে পড়ে রইল। তার মনে হচ্ছে সে এক অদ্ভুত মায়াবী সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে, আর প্রতিটি রোমকূপে অনুভূত হচ্ছে এক তীব্র শিহরণ। এমন সুখ সে জীবনে কোনোদিন কল্পনাও করেনি। আয়ানের প্রতিটি ছোঁয়ায় তিথি বুঝতে পারছে তার শরীর আজ কেবল সুখে পরিণত হচ্ছে সে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিয়ে আয়ানের ভালোবাসার আগুনে পুড়ে ছাই হতে চাইল।
আয়ান বেশ কিছুক্ষণ উত্তাল উন্মাদনায় মেতে থাকার পর আবারও হাঁপিয়ে উঠল। সে তিথিকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগল। শ্বাস নেওয়ার মাঝে তিথি ক্লান্ত গলায় কিছু বলতে চাইল, কিন্তু আয়ান তাকে সেই সুযোগই দিল না। সে চট করে তিথির ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের প্রগাঢ় বন্ধনীতে আটকে দিল। তারপর তিথিকে একদম ছোট বাচ্চাদের মতো কোলে তুলে নিয়ে ধীরপায়ে হেঁটে বাগানের ঘন আম গাছটার নিচে চলে এল। জায়গাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার, কেবল সামনের দিক থেকে আবছা আলো এসে পড়ায় এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
আয়ান তিথিকে পরম যত্নে গাছের গোঁড়ায় নরম মাটির ওপর শুইয়ে দিল। নিজের শরীরের পুরো উত্তাপ তিথির ওপর ছেড়ে দিয়ে সে তিথির ঠোঁট জোড়া মুক্তি দিল। আয়ান তখনো হাঁপাচ্ছে,তার কপাল থেকে ঘাম ঝরে তিথির গলায় গিয়ে পড়ছে। আয়ান তার ঘামভেজা ঠোঁট দিয়ে তিথির কপালে এক উষ্ণ চুমু খেল। তিথিও ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ছে, সে অতি কষ্টে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল।
“তু তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে?”
আয়ান তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় আর তৃষ্ণার্ত হাসি দিল। তারপর তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে তপ্ত নিশ্বাসে ফিসফিস করে বলল।
“শেষ হয়নি তো! মাত্র তো দুইটা গেম গেল, আরও দুইটা বাকি আছে। এখানে একটা হবে, আর একদম লাস্ট গেমটা হবে ওই সুইমিংপুলের শীতল পানিতে।”
তিথি শিউরে উঠে আবারও প্রতিবাদ করতে চাইল, কিন্তু তার আগেই আয়ান বুনো আক্রোশে তিথির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সে তিথির দুহাত মাটির সাথে শক্ত করে পিষে ধরল। এবারের আয়ান আগের চেয়েও অনেক বেশি বেপরোয়া, অনেক বেশি আদিম।তার প্রতিটি বুনো স্পর্শে এমন এক তীব্রতা ছিল যে তিথির মুখ দিয়ে বারবার অস্ফুট গোঙানি বেরিয়ে আসছিল। আয়ান কোনো মিনতি কানে নিল না, সে আবারও তিথির ঠোঁটগুলো নিজের ঠোঁট দিয়ে এমনভাবে চেপে ধরল যেন সে তিথির শেষ নিশ্বাসটুকুও আজ শুষে নেবে। মাটির সোঁদা গন্ধে আর রাতের নিস্তব্ধতায় দুই শরীর একাকার হয়ে গেল।
আয়ান বেশ কিছুক্ষণ পর তিথির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিল। তিথি যন্ত্রণায় আর তীব্র আদরের আতিশয্যে আয়ানের চুল শক্ত করে মুঠি করে ধরল। তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। তিথি ভাঙা গলায় আর্তনাদ করে বলল।
“আয়ান ভাইয়া, পারছি না আমি… প্লিজ দয়া করো! আমার ভেতরটা মনে হচ্ছে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।”
আয়ান তখন একদম নিয়ন্ত্রণহীন, কামনার এক চরম শিখরে পৌঁছে গেছে সে। তিথির কাতর মিনতি যেন আয়ানের কানেই পৌঁছালো না। তিথি ব্যথায় আর সুখে বারবার জোরে জোরে গোঙাচ্ছে, সেই শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা চিরে দিচ্ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আয়ান নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে তিথির কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে এল। আয়ান তপ্ত নিশ্বাসে ফিসফিস করে বলল।
“আমার পেত্নি কলিজার বউটা, প্লিজ এভাবে চিৎকার মারিস না। বুঝিসই তো আমরা এখন ঘরের বাহিরে আছি, কেউ শুনে ফেললে বিপদ হবে। আমি… আমি আসলে আমার শক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছি না, তুই আমার ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিস। প্লিজ আমার রাক্ষসী বউটা, আর কিছুক্ষণ সহ্য কর।”
আয়ানের কণ্ঠস্বরে এক অদ্ভুত নেশা আর আকুতি ঝরে পড়ছে। সে তিথির ঘাড়ের কাছে নিজের মুখ ঘষতে লাগল, যাতে তিথির গোঙানিগুলো বাইরের বাতাসে না ছড়িয়ে আয়ানের বুকেই আটকে থাকে। মাটির ওপর শুয়ে থাকা তিথি দেখল আকাশের চাঁদটা যেন আজ তাদের এই বেপরোয়া বাসর দেখে লজ্জায় মেঘের আড়ালে মুখ লুকাচ্ছে।
তিথির চোখ থেকে নোনা অশ্রু গড়িয়ে গাল বেয়ে ঘাসের ওপর পড়তে লাগল। সে ব্যথায় নীল হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ সেই উন্মাদনা চলার পর আয়ান বুঝতে পারল তার ভেতরের তীব্রতা এবার চরম সীমায় পৌঁছেছে। শেষ মুহূর্তের সেই টানটান উত্তেজনায় আয়ান আর দেরি করল না। সে নিমেষের মধ্যে তিথিকে আবারও নিজের বলিষ্ঠ বাহুর ডোরে আগলে নিয়ে কোলে তুলে নিল।
আয়ান দ্রুতপায়ে সুইমিংপুলের একদম কিনারে এসে দাঁড়াল। তিথি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আয়ান তাকে নিয়ে এক বিশাল লাফ দিয়ে কনকনে শীতল পানির গভীরে নেমে পড়ল। পানির সেই ঝাপটায় তিথির শরীরের সবটুকু ক্লান্তি যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। কিন্তু আয়ান তাকে এক মুহূর্তও শান্ত হতে দিল না। পানির নিচে সেই শীতল স্পর্শের মাঝেই তাদের শরীরের তপ্ত মিলন আবার নতুন গতি পেল।
নীলচে জলের ঢেউগুলো তাদের শরীরকে ঘিরে আছড়ে পড়ছিল। আয়ান তিথিকে পানির সাথে আর নিজের শরীরের সাথে এমনভাবে লেপ্টে নিল যে তাদের অস্তিত্ব এক হয়ে গেল। অবশেষে, সেই শীতল পানির গভীরেই তাদের দীর্ঘ ও বেপরোয়া বাসর রাতের সেই অভাবনীয় মিলন শেষ বারের মতো পূর্ণতা পেল। চারপাশ একদম নিস্তব্ধ হয়ে এল, কেবল সুইমিংপুলের পানির মৃদু কলকল শব্দ আর তাদের দুজনের ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস রাতের বাতাসে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। সমাপ্তি হলো এক পাগলামি ভরা, জেদ আর ভালোবাসার চরম এক রাতের।
আয়ান পানি থেকে তিথিকে কোলে তুলে নিয়ে ডাঙায় উঠল। তিথি আয়ানের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে থরথর করে কাঁপছে, তাদের দুজনের শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আয়ানের ভেজা চুলের পানি টুপটুপ করে তিথির মুখে আর গালে পড়ছে, যা তিথির কাঁপুনি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আয়ান তিথিকে নিয়ে অতি সন্তর্পণে সেই ব্যালকনির সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিল।
তিথি দাঁড়াতে গেল, কিন্তু তার পা দুটো যেন ব্যথায় আর ক্লান্তিতে জমে পাথর হয়ে গেছে। শরীরের সবটুকু শক্তি যেন সেই পানির নিচেই শেষ হয়ে গেছে। আয়ান নিচ থেকে পড়ে থাকা শাড়িটা তুলে তিথির গায়ে আলতো করে পেঁচিয়ে দিল। তিথি তখনো শীতে আর আতঙ্কে কাঁপছে। সে আয়ানের দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
“তুমি যে এতটা সাইকো হতে পারো তা আমার মনের ভুলেও জানা ছিল না। একটা আস্ত মাথা ম্যান্টাল পাগল তুমি! নিজের জীবনের পরোয়া নেই, আমার কথা তো একবারও ভাবলে না!”
আয়ান তিথির কথা শুনে শব্দ করে হাসল না, বরং তার সেই চেনা বাঁকা হাসিটা দিল। সে তিথির ভেজা চুলে আঙুল চালিয়ে মুখটা একটু উঁচু করে ধরল। আয়ানের চোখে তখনো সেই নেশা আর বিজয়ের আভা। আয়ান ফিসফিস করে বলল।
“পাগল তো তোকে কাছে পাওয়ার দিন থেকেই হয়ে গেছি রে তিথি। আর এই পাগলামিটা না থাকলে কি আর আজকের এই রাতটা এমন ইতিহাস হয়ে থাকত? এখন বেশি কথা না বলে চল, রশি বেয়ে উপরে উঠতে হবে। নাকি এখন এই অবস্থাতেই সদর দরজা দিয়ে ঢুকে সবাইকে আমাদের এই বাসরের গল্প শোনাবি?”
আয়ানের কথা শুনে তিথি প্রায় চিৎকার করে ওঠার মতো গলায় বলল।
“কীহহ! এখন এই অবসন্ন শরীর নিয়ে আমি আবার রশি বেয়ে উপরে উঠব? তুমি কি আমার শরীরে একবিন্দু শক্তিও অবশিষ্ট রেখেছ? একটা দানবের মতো নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে শুধু নিজের চাহিদা মেটালে। আমার সারা শরীর ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে, আমি এক পা নড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি!”
আয়ান তিথির এমন অসহায় আর্তনাদ শুনে একদলা তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল। তার ঠোঁটের কোণে সেই পরিচিত বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। সে তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে কামুক কণ্ঠে বলল।
“ভালোই তো হয়েছে! এখন প্রতিটা পদক্ষেপে, শরীরের প্রতিটা ভাজে তোর মনে হবে যে সেখানে আমার ছোঁয়া আছে। এই ব্যথাটাই তোকে সারা রাত মনে করিয়ে দেবে তুই আয়ান খানের বউ আর ব্যথাটা আয়ানের আদরের ব্যথা।”
তিথি আর কোনো উত্তর দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না। তার শরীর তখনো ঠান্ডায় আর ক্লান্তিতে থরথর করে কাঁপছে। আয়ান এবার তিথিকে একবার আপাদমস্তক খুঁটিয়ে দেখল। তারপর কোনো কথা না বলে আয়ান হঠাৎ সেই ঝুলে থাকা রশিটা দুহাতে শক্ত করে ধরল। তিথি অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখল, আয়ান একাই অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে রশি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করেছে।
তিথি নিচে দাঁড়িয়ে হতভম্ব হয়ে ভাবছে, এই মানুষটা কি আসলেই রক্ত-মাংসের মানুষ? এত কিছু হওয়ার পর তার শরীরে এত শক্তি কোথা থেকে আসে! সে একা উপরে উঠে যাচ্ছে কেন? তাকে কি নিচে এই অন্ধকারেই ফেলে রেখে যাবে?
তিথির ভাবনার মাঝেই আয়ান ওপরে উঠে গিয়ে একবার বুক ভরে শ্বাস নিল। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নিয়ে আয়ান ওপর থেকে ঝুঁকে তিথির দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল।
“রশিটা ধর। তুই শুধু দুই হাতে শক্ত করে ধরে থাকবি, আমি টেনে তুলবো। একদম ভয় পাবি না।”
তিথি প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও শরীরের ব্যথায় আর নিচ থেকে ওপরে ওঠার শক্তি পাচ্ছিল না। সে ধীরে ধীরে রশিটা দুহাতে শক্ত করে মুঠো করে ধরল। আয়ান ওপর থেকে নিজের সবটুকু গায়ের জোর খাটিয়ে রশিটা টেনে টেনে তিথিকে ওপরে তুলতে লাগল। তিথি যখন রেলিংয়ের কাছাকাছি পৌঁছাল, আয়ান দ্রুত হাত বাড়িয়ে তাকে একদম পাজা করে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড় করিয়ে দিল।
পায়ের নিচে শক্ত মেঝে পেতেই তিথির যেন হুঁশ ফিরল। আয়ানের শরীরের স্পর্শ আর বাইরের সেই উন্মাতাল স্মৃতিগুলো তখনো তার শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। তিথি এক মুহূর্তও আর সেখানে দাঁড়াল না। অনেক কষ্টে শরীরটা টেনে টেনে পা টেনে হেঁটে সে রুমে ঢুকল। আয়ান তখনো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নিজের হাঁপানো শ্বাস সামলাচ্ছে। তিথি দ্রুত আলমারি থেকে নিজের শুকনো জামাকাপড় বের করে নিল এবং আয়ানের দিকে একবারও না তাকিয়ে সোজাসুজি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল।
গোসল শেষ করে তিথি শুকনো কাপড় পরে রুমে আসার সাথে সাথেই আয়ান এক অদ্ভুত চোখের ইশারা দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। তিথি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে বিরবির করে তাকে গালি দিতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আয়ান গোসল শেষ করে কোমরে শুধু একটা তোয়ালে জড়িয়ে বের হয়ে এল। আয়ানকে এই অবস্থায় দেখে তিথি দ্রুত নিজের নজর সরিয়ে নিল এবং অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
“অসভ্য! লাজ-শরম সব কি ধুয়ে মুছে খেয়ে ফেলেছ?”
আয়ানের কানে তিথির কথাগুলো ঠিকই পৌঁছাল। আয়ান তোয়ালে দিয়ে নিজের ভেজা চুল মুছতে মুছতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল।
“এইভাবে নাক কুঁচকানোর দরকার নেই। এমনিতেই তুই আমার সব দেখেছিস, আর আমিও তোরটা দেখেছি। নতুন করে লুকানোর তো কিছু নেই!”
আয়ানের মুখে এমন নির্লজ্জ কথা শুনে তিথির রাগে আর লজ্জায় কান দিয়ে যেন আগুন বের হতে লাগল। তার ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে আয়ানের মাথার সব চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। আয়ান আলমারি থেকে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে পরে নিল। তারপর তিথিকে ওভাবে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হেসে বলল।
“কিরে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নাকি আবারও গেম খেলবি?”
তিথি এবার একদম রাগে ফেটে পড়ল। সে চিৎকার করে বলল।
“কিছু খেলমু না! দরজা খুলে দাও। লক করে রেখেছ কেন? আমি আমার রুমে যাব!”
তিথির কথা শুনে আয়ান সেই শয়তানি হাসিটা দিল। সে আগে থেকেই জানত তিথি চলে যেতে চাইবে, তাই সে সতর্ক হয়ে আগেই দরজা চাবি দিয়ে লক করে রেখেছে। আয়ান ধীরে ধীরে তিথির দিকে এগোতে শুরু করল। তার চোখের সেই শিকারি দৃষ্টিটা আবার ফিরে এসেছে। আয়ান ধীরলয়ে বলল।
“কোথায় যাবি?”
তিথি ভয়ে আর রাগে পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে মিশে গেল। সে আর্তনাদ করে বলল।
“আমার রুমে যাব! তোমার চাহিদা তো মিটেই গিয়েছে, এখন আর আটকে রেখেছ কেন? আমাকে যেতে দাও! আমি তোমার মতো একটা জানোয়ারের সাথে এক ঘরে আর এক মুহূর্তও থাকব না!”
আয়ান এগোতে এগোতে তিথিকে এক হাতে দেয়ালের সাথে আবদ্ধ করে ফেলল। আয়ানের চোখের দৃষ্টিতে একরোখা জেদ। সে তিথির খুব কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে গাঢ় স্বরে বলল।
“তোকে কে বলেছে আমার চাহিদা মিটেছে? আমার চাহিদা তখনি মিটবে যখন তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো, সকাল বেলা উঠে তোর মুখটা আগে দেখবো। সকাল বেলা ঘুম ভাঙলে যখন তোকে আমার বুকের মাঝে আবিষ্কার করবো, তখনি আমার চাহিদা মিটবে। শোন, এখন থেকেই এইটাই তোর রুম। এই রুম থেকে বের হওয়ার কথা ভুলেও কল্পনা করবি না, বুঝেছিস?”
কথাটা শেষ করেই আয়ান কোনো সুযোগ না দিয়ে তিথিকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিল। তিথি অপ্রস্তুত হয়ে হাত-পা ছুড়ে ছটফট করতে লাগল, কিন্তু আয়ানের লৌহকঠিন বাঁধন আলগা হলো না। আয়ান তিথিকে বিছানায় নিয়ে এসে শুইয়ে দিল এবং মুহূর্তেই তাকে কোলবালিশের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করল। তিথি আয়ানের শক্ত বুকের ওপর দুই হাত দিয়ে অনবরত ধাক্কা দিতে দিতে চেঁচিয়ে বলল।
“আয়ান ভাইয়া, ছাড়ো বলছি! আমার একদম সহ্য হচ্ছে না তোমাকে। প্লিজ মুক্তি দাও আমাকে!”
আয়ান এবার চোখ না খুলেই তিথিকে আরও শক্ত করে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিল। তার কণ্ঠস্বরে একধরনের গম্ভীর হুঁশিয়ারি ছিল। সে চিবুক চেপে ধরে বলল।
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি বউ! একবার শাওয়ার নেওয়াইছি, আবার বাধ্য করিস না শাওয়ার নেওয়াইতে। চুপচাপ এই বুকের মধ্যে পড়ে থাক, নইলে রাতটা কিন্তু আরও লম্বা হবে।”
আয়ানের এই সোজাসাপ্টা হুমকিতে তিথি একদম জমে গেল। সে জানে, এই মানুষটা যা বলে তা করতে দ্বিধা করে না। রাতের সেই উত্তাল স্মৃতির রেশ এখনো তিথির শরীরে টাটকা। সে আর ধস্তাধস্তি করার সাহস পেল না। আয়ানের গায়ের ঘ্রাণ আর তার বুকের ধকধকানি শুনতে শুনতে তিথি স্থির হয়ে পড়ে রইল।
রাতটা শেষের পথে, ভোরের হালকা একটা ঠান্ডা আভা চারপাশকে ঘিরে ধরেছে। আরশির হঠাৎ ঘুম ভাঙল দূর থেকে ভেসে আসা একটা মিষ্টি অথচ বিষণ্ণ গিটারের আওয়াজে। সে পাশে তাকিয়ে দেখে বিছানায় শিহাব নেই। আরশি চোখ ডলতে ডলতে বিছানা থেকে নেমে আলস্য ভেঙে হেঁটে হেঁটে ব্যালকনিতে এলো। দরজায় দাঁড়াতেই সে দেখল ব্যালকনির চেয়ারে বসে শিহাব আপনমনে গিটার বাজাচ্ছে। ভোরের আবছা আলোয় শিহাবের অবয়বটা এক রহস্যময় রূপ নিয়েছে। হঠাৎ আরশি শুনতে পেল শিহাবের সেই দরদী কণ্ঠের গান।
শিহাব চোখ বন্ধ করে গিটারে আঙুল চালিয়ে গেয়ে উঠল।
“~কেন যে তোর মনের মতো হইতে পারলাম না~
~কত ভালোবাসি তোরে কইতে পারলাম না~”
আরশি দরজায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইল। শিহাবের গলার সেই সুর যেন ভোরের বাতাসের সাথে মিশে তার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিহাব আবারও গিটারে ঝংকার তুলল, তার কণ্ঠস্বর এবার আরও গভীর আর হাহাকারে ভরা।
~মনের দুঃখ মনে রইল~
~মনের দুঃখ মনে রইল~
~সয়লাম বেদনা~
গানের প্রতিটা শব্দ শিহাবের বুক চিরে বেরিয়ে আসছে। সে আবারও ধরল।
“~কেন যে তোর মনের মতো হইতে পারলাম না~
~কত ভালোবাসি তোরে কইতে পারলাম না~”
গানটা শেষ করে শিহাবের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কম্পমান সুরটা থমকে গেল। সে তখনো বুঝতে পারেনি আরশি পেছনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখেছে আর শুনেছে। শিহাবের কাঁধ দুটো যেন ক্লান্তিতে নুইয়ে আছে।
আরশি ধীরে ধীরে শিহাবের পাশে এসে দাঁড়াল। ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস তাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শিহাবের চারপাশে যেন এক বিষণ্ণতার দেয়াল তৈরি হয়ে আছে। শিহাব যখন নিজের পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারল, তখন সে চমকে তাকাল। আরশিকে দেখে শিহাবের বুকটা ধক করে উঠল। সে ভাবতেও পারেনি আরশি তার এই দুর্বল মুহূর্তটা দেখে ফেলবে।
শিহাব তাড়াতাড়ি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে ফেলার চেষ্টা করল। তার কণ্ঠস্বর কাঁপছে, কথাগুলো ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারছে না সে। শিহাব আমতা আমতা করে বলল।
“আ-আ-আরশি, তুমি এখানে? ঘুমাওনি?।”
শিহাবের অপ্রস্তুত চেহারা দেখে আরশির বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। যে মানুষটা সবসময় পাহাড়ের মতো অটল থাকে, সেই মানুষটার চোখের জল আরশিকে এক নিমিষেই অপরাধী করে দিল। আরশি কোনো উত্তর দিল না, শুধু অপলক দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল। শিহাব গিটারটা একপাশে সরিয়ে রেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। সে আরশির চোখের দিকে তাকাতে পারছে না, বারবার নজর সরিয়ে নিচ্ছে। শিহাব আবার বলল।
“আসলে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তো, তাই একটু গিটারটা নিয়ে বসলাম।”
আরশি এবার সাহস করে শিহাবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল।
“জানেন, আমি কখনো কাউকে ভালোবাসিনি। কারও প্রতি মন খুলে দেওয়ার সাহস কোনোদিন পাইনি। কাউকে নিয়ে কখনো স্বপ্ন দেখিনি, ভবিষ্যতে কোনো কল্পচিত্রও আঁকিনি। আমার হৃদয়ে কারও জন্য কখনো সকাল ফুটেনি, কারও জন্য সন্ধ্যা নেমে আসেনি। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে।”
আরশি এবার ব্যালকনির রেলিংটা দুই হাতে শক্ত করে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
“আমার একাকিত্বের জীবনে আপনিই সেই পুরুষ, যাকে দেখে প্রথমবার মনে হলো আমি তার সাথে থাকতে চাই।”
আরশি এবার এক ঝটকায় শিহাবের সামনে এসে দাঁড়াল। তার কণ্ঠস্বর এবার একদম কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে, চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। আরশি আর নিজেকে সামলাতে পারল না,সে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল।
“হ্যাঁ শিহাব, আমি আপনার সাথে থাকতে চাই। আমাকে আপনি কখনো ছেড়ে দিয়েন না। যদি কোনোদিন আমায় ভালো বাসতে না পারেন, আমি কখনো আপনাকে দোষ দেবো না। আপনার বুকের মাঝে ঘুমাতে না দিলেও আমার কোনো অভিযোগ থাকবে না।”
আরশি এবার অসহায়ভাবে নিজের হাত দুটো জোড় করে শিহাবের সামনে দাঁড়াল। তার গলার স্বর কান্নায় ভেঙে পড়ল।
“যদি আপনার পায়ের কাছে সামান্য একটু আশ্রয় পান, তবে শুধু সেই সামান্য আশ্রয়টুকুই আমাকে দিয়েন। আমি সেই সামান্য আশ্রয়টুকু আঁকড়ে ধরে সারা জীবন কাটিয়ে দেব একবিন্দু অভিযোগ ছাড়া, একবিন্দু আফসোস ছাড়া।”
কথাগুলো বলেই আরশি শিহাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। শিহাবের বুকের মাঝে মুখ গুঁজে দিয়ে আরশি তার হৃদপিণ্ডের ধকধকানি শুনতে পাচ্ছিল। কান্নায় ভেঙে পড়া গলায় আরশি আবার বলতে লাগল।
“শিহাব, আমি আপনাকে ভালোবাসি! আমি এই জীবনটা আপনার সাথেই কাটাতে চাই। আমি জানি, আমি হয়তো কোনোদিন তুরার জায়গাটা নিতে পারব না, তার শূন্যস্থান পূরণ করার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি শিহাব, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আপনাকে ভালো রাখতে। চেষ্টা করব আপনার ওই বিষণ্ণ মুখে অন্তত একটুখানি হাসি ফোটাতে। প্লিজ শিহাব, তবুও আমাকে কখনো ছেড়ে দিয়েন না!”
আরশির কথাগুলো শুনে শিহাব একদম পাথর হয়ে গেল। তার মনে হলো পায়ের নিচের মাটিটা যেন দুলছে। মুখ থেকে এক টুকরো শব্দ বের হচ্ছে না, মনে হচ্ছে গলার স্বর কেউ অদৃশ্য কোনো শক্তিতে টেনে ধরে রেখেছে। শিহাবের সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে, কেবল বুকের বাম পাশে এক তীব্র স্পন্দন সে অনুভব করতে পারছে।
আরশির চোখের পানি শিহাবের টি-শার্টের ওপর দিয়ে চুঁইয়ে তার উষ্ণ চামড়া স্পর্শ করছে। সেই নোনা জলের উত্তাপ শিহাবের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে আছড়ে পড়ল। শিহাব স্তব্ধ হয়ে সামনের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল। যে আরশিকে সে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরের কেউ মনে করত, সেই আরশি আজ তার বুকে মুখ গুঁজে এভাবে নিংড়ে দেওয়া ভালোবাসার কথা বলছে!
শিহাবকে কিছু বলতে না দেখে আরশি এবার ধীরে ধীরে শিহাবকে ছেড়ে দিল। সে নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে ওড়নার খুঁট দিয়ে চোখের পানি মুছল। একটা দীর্ঘ নীরবতা ব্যালকনিতে ঝুলে রইল। আরশি আশা করেছিল শিহাব হয়তো অন্তত তাকে একটু সান্ত্বনা দেবে, কিন্তু শিহাবের প্রতিক্রিয়া তাকে অবাক করে দিল।শিহাব একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। তারপর খুব নিরুত্তাপ গলায় বলল।
“আমার খুব ঘুম আসছে, এখন ঘুমাবো। গুড নাইট।”
কথাটা বলেই শিহাব আরশির উত্তরের অপেক্ষা না করে গুমোট মুখে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার এই নির্লিপ্ততা আরশিকে এক মুহূর্তের জন্য পাথরের মতো স্তব্ধ করে দিল। আরশি ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে রইল, ভোরের ঠান্ডা হাওয়া তার ভেজা গালে এসে লাগছে।আরশি শিহাবের চলে যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলল।
“জানি আজ আমার কথার উত্তরগুলো আপনার কাছে নেই। আমাকে এভাবে এড়িয়ে গিয়ে বাঁচতে চাইছেন তো? কিন্তু শিহাব, আরশিও এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না! এই কথাগুলোর উত্তর আপনাকে দিতেই হবে, আজ হোক বা কাল। এর জন্য আমাকে যা যা করতে হয় আমি সব করব। আপনার ওই পাথরের মতো মনে আমি ভালোবাসা জাগিয়েই ছাড়ব।”
রানিং…!
Share On:
TAGS: নির্লজ্জ ভালোবাসা, প্রিঁয়ঁসেঁনীঁ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৩৮
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১৩
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা সূচনা পর্ব
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ২৪
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪১
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৩
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১৪,১৫
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫০
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৬