৯.
Dark_Desire
ডার্ক_ডিজায়ার
দূর্বা_এহসান
“আই মিস ইউ টু, জান”
বলতে বলতেই মেয়েটাকে নিজেও জড়িয়ে ধরলো মৃন্ময়।
দুই হাত শক্ত করে তার কোমরে।মুখটা মেয়েটার কাঁধের পাশে রাখল। নিঃশ্বাস এক হয়ে যাচ্ছে।তাদের শরীরের উষ্ণতা একে অপরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।চারপাশের শব্দ থেমে গেছে, শুধু শোনা যাচ্ছে নিঃশ্বাসের গতি।
“তুমি জানো না, আমি কেমন পুড়েছি তোমাকে ছাড়া”
ফিসফিস করে বলল মৃন্ময়।মেয়েটা কিছু বলল না। তার চোখে নেশা আছে। মৃন্ময় মুখ তুলে তাকাল, মেয়েটার ঠোঁটে আঙুল রাখল।
“চুপ ,কিছু বলো না। আমি তোমাকে এখন চাই। এই মুহূর্তে। ঠিক যেভাবে আগুন অক্সিজেন চায়।”
মেয়েটা নিঃশব্দে চোখ বন্ধ করল। মৃন্ময় তার গাল ছুঁয়ে বলল, “তুমি বুঝো না জান, আমি যখন তোমার কাছ থেকে দূরে ছিলাম, তখনও তোমার স্মেল মিস করেছি। তোমার কণ্ঠ ঘুরে বেড়াত দেয়ালের মধ্যে। আমি ঘুমাতে পারতাম না।”
মেয়েটা চোখ নামিয়ে ফেলল, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেল। মৃন্ময় আবার এগিয়ে এল, কানে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি জানো, আমি কত রাত তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছি? কতবার মনে হয়েছে, যদি হাত বাড়াই, তোমার গলা ছুঁয়ে ফেলব? আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচি না জান—,আমি তোমায় নিয়েই বাঁচি।”
হঠাৎ মেয়েটা তার বুকে মাথা রাখল। ধুকপুকানি এত জোরে বাজছে, যেন ওরা দুজনেই একই শরীরে বন্দী।
মৃন্ময় ধীরে বলল, “এইবার আর আলাদা হবো না। এইবার তুমি শুধু আমার।”
মেয়েটা চুপ করে রইল। তারপরে হঠাৎ ই মৃন্ময়ের ঠোঁটের দিকে এগোতে লাগলো
- কোনো কিছু পরে যাওয়ার শব্দে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো তরু।এসব তার কল্পনা ছিল! ভাবতে ভাবতেই সামনে তাকালো। মেয়েটা নিচে পরে আছে।তাকালো মৃন্ময়ের দিকে। রাগে ফুঁসছে ও।
মেয়েটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল মৃন্ময়কে। মৃন্ময় এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে হঠাৎ এক ঝটকায় মেয়েটাকে সরিয়ে দিয়েছে।ধাক্কাটা এমন জোরে যে মেয়েটা পেছনে হোঁচট খেল।চারপাশের কয়েকজন ঘুরে তাকালো। তবু মৃন্ময় একটাও শব্দ করলো না।শুধু ঠোঁটের কোণে ঠান্ডা একটা হাসি।
“জান নিয়ে নিবো।”
বলল সে নিচু স্বরে।কিন্তু কণ্ঠে এমন এক শীতলতা যে মেয়েটার চোখে এক মুহূর্তের জন্য ভয় দেখা দিল।
তরু স্থির দাঁড়িয়ে আছে। চোখে একরাশ অবিশ্বাস, ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু কোনো শব্দ নেই। মৃন্ময়ের মুখ শক্ত হয়ে গেছে। চোখে ঠান্ডা, তিক্ততা।মেয়েটা হতভম্ব। কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু কথাগুলো গলায় আটকে গেল। সে মৃন্ময়ের চোখে তাকালো।সেখানে কোনো কোমলতা নেই।
তরু পাশে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ আগেও যার বুক জ্বলে যাচ্ছিল রাগে, সেই তরুর ঠোঁটে এবার একটুখানি হাসি ফুটে উঠল।চোখে একরাশ তৃপ্তি।যেন হঠাৎ বুঝে গেল, মৃন্ময়ের ভেতরের মানুষটা আসলে কাকে বেছে নিয়েছে।
মৃন্ময় তরুর এক হাত ধরে উচু করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ফের যদি এমন বেহায়াপনা দেখেছি না, রজনী? সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো”
রজনী তাকিয়ে থাকলো ওদের হাতের দিকে।রাগে চোখ লাল হয়ে উঠেছে তার।সেই দৃষ্টি সরাসরি তরুর মুখে চলে গেলো।তরুর সাথে চোখাচোখি হতেই রাগ যেনো আরো বেড়ে দ্বিগুণ হলো।
“এসব নাটক বাদ দে,চল এখন।চাচাজান অপেক্ষা করছেন।”
মৃন্ময় একবারও পেছনে তাকালো না। ঠান্ডা মুখে বলল,
“চলো, পাখি।”
তরু চুপচাপ এগিয়ে এল। রজনী তখনও নিচে, ঠোঁট কাঁপছে। চোখে রাগ, অপমান।মৃন্ময় তরুর হাত ধরে এগিয়ে গেল বাইরে, এয়ারপোর্টের কাঁচের দরজা পেরিয়ে।
বাইরে রাত নেমেছে।রাস্তার বাতিগুলো বৃষ্টিভেজা পিচের ওপর সোনালি দাগ টেনে রেখেছে।গাড়িটা একপাশে রাখা।তরু উঠে বসল সামনের সিটে। মৃন্ময় দরজা বন্ধ করল, তারপর স্টিয়ারিং ধরল। রজনী পিছনের সিটে বসলো।কিছুক্ষণ কেউ কিছু বলল না। শুধু উইন্ডশিল্ডে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দ।
গাড়ি চলতে শুরু করল।তরু একবার তাকাল মৃন্ময়ের দিকে। ওই চোখে সে ছাড়া আর কেউ নেই।তরু বুকের বা পাশে কেমন চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো। সে এত কিছু করার পরেও কেনো তাকে ঘৃনা করেনা এই মানুষটা? মুখ ফিরিয়ে নিলো তরু। সে কোনোভাবেই আবার এই লোকটার প্রতি দুর্বল হতে চায়না।কোনোভাবেই না।
” না তরুপ্রভা,তুই দুর্বল হতে পারিস না।এই লোক যতটা ভালো দেখায় ততটা ভালো মোটেই না”
নিজেকে নিজেই বলে তরু।
সে সিটে আলগোছে মাথা রাখে। চোখ ধীরে ধীরে ভারি হয়ে আসে। শরীরের ক্লান্তি আর মনের দ্বিমুখী ভাবনাগুলো মিলে তাকে ঘুমের অচেনা রাজ্যে টেনে নিয়ে যায়। মৃন্ময় দেখলো। চুপচাপ নিজের কাধে তরুর মাথা রাখলো। তরুর নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে নিয়মিত হয়ে আসছে। মৃন্ময় তার হাত টেনে নিল কোলে। যেন কোনো শিশুকে জড়িয়ে ধরেছে। ছোট্ট কম্পন থেকে স্পর্শের উষ্ণতা সবই এক সঙ্গে মিলিত হয়ে একটা শান্তি তৈরি করল তার মনে।
———————————
গাড়িটা ধীরে ধীরে থামল খান ভিলার সামনে।রজনী একটাও কথা না বলে দরজা খুলে নেমে গেল।
মৃন্ময় আর সেখানে দাড়ালো না। ইতোমধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ফার্মহাউজের দিকে রওনা দিলো সে।
পৌঁছে,কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসে রইল। তারপর নিঃশ্বাস ফেলল ধীরে। তরু তখনো ঘুমিয়ে। মুখে ক্লান্তির ছাপ, চুলের গোছা গালে লেগে আছে।বাইরের আলোয় তার মুখটা যেন আরও শান্ত লাগছে।
মৃন্ময় কিছু না ভেবে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল, তরুকে আলতো করে কোলে তুলে নিল।তরু হালকা নড়ল, তারপর আবার শান্ত হয়ে গেল।বৃষ্টির মধ্যে সে এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে।এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে তরু।ছাতা বেয়ে টুপটুপ করে জল পড়ছে।
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল মৃন্ময়। ঘরে আলো জ্বলছে।হলুদ আর হালকা নীলের মিশ্রণ।তরুকে নিয়ে সে সোজা শোবার ঘরে গেল। বিছানার ওপর আলগোছে শুইয়ে দিল, জুতো খুলে রাখল পাশে।তরুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো,ঘুমের মধ্যে মুখে এক শান্ত ছায়া। কিন্তু চোখের কোণে শুকনো অশ্রুর দাগ এখনো আছে।
মৃন্ময় হাত বাড়িয়ে ওর চুল সরিয়ে দিল কপাল থেকে। তারপর বলল,
“পাখি,মৃন্ময় শুধু তোমার।”
তারপর জানালার দিকে তাকাল। বাইরে বৃষ্টি তখনো ঝরছে।
মনে হল, এ রাতটা কেবল তাদের দুজনের।
মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। বাইরে তখনো বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ। জানালার কাঁচে জল জমে গেছে। ঘরে .আলো জ্বলছে।মৃন্ময় তখনো জেগে আছে। বিছানার পাশে বসে চুপচাপ তাকিয়ে আছে তরুর দিকে।
হঠাৎ তরুর শরীরটা হালকা কেঁপে উঠল।মৃন্ময় তড়িঘড়ি এগিয়ে গেল। কপালে হাত রাখতেই বুঝল জ্বর আরো বেড়েছে। ভয়ের কারণে এই জ্বর টা। লোকটাকে মারতে দেখেছিল নিজের চোখে।
“পাখি…”
মৃন্ময়ের গলায় একরাশ আতঙ্ক।তরু অচেতন ঘুমের ভেতর কিছু অস্পষ্ট শব্দ করল। মুখটা কুঁচকে উঠল।মৃন্ময় উঠে গেল দ্রুত।টেবিল থেকে ঠান্ডা পানি আর তোয়ালে এনে কপালে রাখল। এক হাতে ওর চুল সরিয়ে দিচ্ছে, অন্য হাতে তোয়ালেটা আলতো করে চাপ দিচ্ছে।
বাইরে বজ্রপাত হলো একবার। আলো ঝলসে উঠল ঘরের ভেতর।তরুর ঠোঁট কাঁপছে।নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে গেছে।
“আমি আছি,পাখি।কিছু হবে না”
ফিসফিস করে বলল মৃন্ময়।কিছুক্ষণ পর তরু আধা চোখ খুলে তাকাল। চোখে ধোঁয়াটে দৃষ্টি।দুর্বল এক হাত মৃন্ময় এর হাতের উপর রাখলো।কণ্ঠটা ভাঙা,
“কাছে থাকুন”
“হ্যাঁ, আছি। এখানেই আছি”
বলল সে, কপালে হাত রেখে।তরু কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। ক্লান্ত মুখটা আবার শান্ত হয়ে এল।মৃন্ময় চুপচাপ ওর হাত নিজের হাতে নিয়ে রাখল। সেই হাত গরম, কিন্তু নরমও।তরুর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। শরীরটা কাঁপছে হালকা।ঠোঁট নড়ছে। কিন্তু কথাগুলো ভাঙা, অস্পষ্ট।[ রাইটারের পেজের নাম — দূর্বা এহসান : Durba Ehsan ]
“তুমি.,,,কেনো এমন করলে?”
শব্দগুলো ধীরে বেরিয়ে এল ওর মুখ থেকে।মৃন্ময় ঝুঁকে গেল কাছে।
“কি বলছো পাখি?”
তরু চোখ বন্ধ রেখেই বিড়বিড় করল,
“তুমি বলেছিলে কখনও কাঁদাবে না,তবু কাঁদিয়েছো। আমি ঘৃণা করি তোমায়।”
একটু থেমে নিঃশ্বাস নিল, যেন ভেতরে জমে থাকা কোনো স্মৃতি তাকে ছিঁড়ে ফেলছে।
“ঘৃণা করি।কিন্তু তুমিই কেন মনে পড়ো বারবার?”
মৃন্ময়ের হাত কেঁপে উঠল।সে নিঃশব্দে তরুর হাতটা আরও শক্ত করে ধরল।তরুর গলা কাঁপছে, চোখের কোণে ঘাম আর অশ্রু মিশে গেছে।
“তুমি জানো ,কতো রাত আমি প্রার্থনা করেছি তোমায় ভুলে যেতে?কিন্তু প্রতিবারই মনে পড়েছে তোমাকে”
তরুর কণ্ঠটা ক্ষীণ হয়ে এল, প্রায় ফিসফিসের মতো,
“তুমি পুড়িয়ে দিয়েছো আমায়, মৃন্ময়।আবার সেই আগুনেই বাঁচতেও শিখিয়েছো। তুমি বাধ্য করেছো তোমাকে ছেড়ে যেতে,আমি তো যেতে চাইনি।
নিস্তব্ধ হয়ে গেল মৃন্ময়। সে বাধ্য করেছে!তরু তখন নিস্তব্ধ।
এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল কানের পাশে।মৃন্ময় সেই অশ্রু মুছে দিল আঙুলের ডগায়।তারপর তরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
“আমি জানি, তুমি আমায় ঘৃণা করো।তবু আমি থাকব, যতক্ষণ না তোর সব ঘৃণার নিচে লুকানো সেই ভালোবাসাটা আবার জেগে ওঠে।”
বাইরে দূরে বজ্রপাতের আলো এক মুহূর্তের জন্য তাদের মুখে ছায়া ফেলল।তরুর ঠোঁটে কাঁপুনি, নিঃশব্দে ফিসফিস করে উঠল,
“আমি তোমায় ভুলতে পারি না…”
আর তারপরই আবার ঘুমের গভীরে তলিয়ে গেল।বাইরে তখন বৃষ্টি থেমে গেছে।শুধু জানালার কাচ বেয়ে নামছে টুপটুপ জল, ঘরের ভেতরে হালকা আলো জ্বলছে। বাতাসে ভিজে মাটির গন্ধ।
মৃন্ময় চুপচাপ তরুর পায়ের কাছে গেলো।ওর দুটো পা নিজের কোলে তুলে নিলো। হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে।যেন প্রতিটি ছোঁয়ায় ওর কষ্টটা কিছুটা করে লাঘব করতে চায়।
তরুর মুখে এখনো ঘামের বিন্দু। নিঃশ্বাস ভারী, কিন্তু মুখটা আগের চেয়ে শান্ত।গায়ে এখনও জ্বর।
“তুমি নিজের ইচ্ছায় চলে গিয়েছিলে।আমি অপেক্ষা করেছিলাম।দিন গুনে গুনে।তবু আসোনি।তাহলে এখন কেন বলছ নিজে থেকে যায়নি?”
রাতটা দীর্ঘ হলো।বৃষ্টি থেমে গেল একসময়, শুধু দূরে পাখির ডাকে ভোরের আভাস মিলল।মৃন্ময় তখনো বসে।চোখের নিচে ক্লান্তি।তবু দৃষ্টি নরম।তরুর জ্বর কিছুটা কমে গেছে।মৃন্ময় একবার তাকাল জানালার দিকে, তারপর তরুর মুখের দিকে।
নরম আলোয় তরুকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে যেন শান্ত কোনো শিশুর মতো ঘুমোচ্ছে ।
চলবে,,,
Share On:
TAGS: ডার্ক ডিজায়ার, দূর্বা এহসান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ২
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১
-
ডার্ক সাইড অফ লাভ পর্ব ১
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৬
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৭
-
ডার্ক ডিজায়ার গল্পের লিংক
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৫
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৭
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৩
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১২