Golpo romantic golpo জেন্টাল মন্সটার

জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩


জেন্টাল_মন্সটার

লামিয়ারহমানমেঘলা

পর্ব_০৩

বহু দিন পর কাজিনরা এক সাথে হওয়ায় খান মেনশনে শুধু খিলখিল হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সবাই মিলে লুডু, কেরাম খেলায় মেতে উঠেছে।
মিশু এবং প্রিয়া ফিরেছে কিছুক্ষণ আগেই।
আদ্রিতা জোড় লুডুতে জরিফের সাথে দলবদ্ধ হয়ে খেলছিল। একটা দাম নিয়ে ঐশী এবং মিশুর সাথে দুজনের ফাইট হতে থাকে।
এক পর্যায়ে জারিফ, আদ্রিতাকে টেনে বলে,

“চল আদ্রিতা এই অসৎ দের সাথে খেলব না।”

আদ্রিতা ভেংচি কাট,

“হ্যাঁ ভাইয়া খেলব না।”

এমন সময় আদ্রিস বাড়িতে প্রবেশ করে সামনের দৃশ্য দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় তার। তবে লিভিং রুমে তখন অনেক মানুষ সিনক্রিয়েট করেনা সেখানে।
আদ্রিস উপরে চলে যেতে যেতে বলে,

“আদ্রিতা ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।”

আদ্রিতা সোজা তাকিয়ে থাকে। মনটা খারাপ হয়ে গেল তার।
ঐশী কিছুটা এমন সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

“আদ্রিতা তুমি বসোনা আমি নিয়ে যাই।”

আদ্রিতার মুখে হাসি ফুটে ওঠে,

“সত্যি যাবে? “

“হ্যাঁ যাব।”

“ঠিক আছে।”

আদ্রিতা ফের খেলায় মন দেয়।
ঐশী রান্নাঘর থেকে পানি নিয়ে আদ্রিস এর রুমের বাহিরে গিয়ে টোকা দেয়।

আদ্রিস সবে সার্ট খুলো গেঞ্জি হাতে নিয়েছে। সে জানে এটা আদ্রিতা তাই ভেতরে আসতে বলে,

“আয়।”

ঐশী ভেতরে আদ্রিস এর সার্ট লেস অবস্থা দেখে কান লাল হয়ে যায়। মেয়েটা ছোট হলেও সব কিছু সে ভালো বোঝে।

“ভাইয়া।”

আদ্রিতা বাদে অন্য কারোর কন্ঠ পেয়ে আদ্রিস দ্রুত গেঞ্জি পরে ফিরে চায়।
ঐশীকে দেখে বিরক্ত হয়ে যায়।

“তুমি কেন এসেছো? আদ্রিতা কোথায়?”

“আদ্রিতা খেলছিলত আমাকে বলল তুমি দিয়ে এসো। ভুল করলাম কি?”

“ভুল নয় ভীষণ বড় ভুল করেছো। এরপর আমার রুমে এভাবে আসবে না।”

“কেন ভাইয়া?”

“বেরিয়ে যাও। চিৎকার করতে চাইনা।”

আদ্রিস এর ঠান্ডা কন্ঠ শুনে ঐশী ভয় পেয়ে যায়। সে বেরিয়ে যায়। আদ্রিস হাত মুঠো করে নেয়।

“বেয়াদব মেয়ে। তোকেত পরে দেখে নেব”


সন্ধ্যার দিকে সবাই ঠিক করে সবাই মিলে বেরিয়ে সামনের গলি থেকে ফুচকা খাবে। সেখানে ফুচকা বেশ নাম করা।
আদ্রিস সোফায় বসে বসে ফোন টিপছিল আর ওদের প্লান শুনছিল।
ঐশী গিয়ে মিরার কানে ফিসফিস করে বলে,

“আপু তুমিত বড়। তুমি বলোনা আদ্রিস ভাইকে তাহলে ভাইয়া অবশ্যই যাবে।”

মিরা, ঐশীর কথা শুনে আদ্রিসের দিকে একবার তাকায়। আদ্রিস এর মনোযোগ তখনো ফোনের দিকেই।
মিরা গিয়ে আদ্রিসের পাশে বসে।

“কি করছিস?”

আদ্রিস, মিরাকে দেখে ফোন বন্ধ করে নেয়,

“নাথিং স্পেশাল আপু। তোমার কি খবর?”

“ভালোই। আমি শুধু ফাহিমের কথাই ভাবি আজ কাল।”

“কংগ্রাচুলেশন আমাদের ভেতর প্রথম তোমারই বিয়ে হচ্ছে।”

“হ্যাঁ এরপর তোরটা হবে।”

“সিরিয়াসলি আপু। ভার্সিটিতে যেতে দিবাত।”

মিরা হাসে।

“সত্যি রে সময়টা কত দ্রুত চলে যায় তাইনা।”

আদ্রিস তখন আদ্রিতার দিকে এক পলক তাকায়।
মেয়েটা হাসছে মন খুলে। ওর হাসির শব্দে পরিবেশ মেতে উঠেছে। আদ্রিস হটাৎ লক্ষ করল চারিদিকের শব্দ গুলো তার কানে আর আসছে না। আদ্রিতার হাসির শব্দ বাদে। আদ্রিতার মায়াবী মুখশ্রীতে হাসিটা বেশ মানায়। চোখ দু’টো তার অলিখিত কবিতা। কিছুক্ষণের জন্য আদ্রিস ভাবে।
সত্যি সময় কত দ্রুতই চলে যায়। কিছুদিন আগেই সে আদ্রিতাকে প্রথম কোলে নিয়েছিল। আজ আদ্রিতা কত বড় হয়ে গিয়েছে।
আদ্রিসের কোন হেলদুল না দেখে মিরা আদ্রিসের কাঁধে হাত রাখে,

“কি দেখছিস?”

আদ্রিসের ধ্যান ফিরে। সে মিরার দিকে ফিরে তাকায়,

“কিছু না।? “

“ভালোবাসিস বুঝি?”

আদ্রিস, মিরার দিকে তাকিয়ে থাকে। মিরা হাসে।

“তোকে আমার থেকে বেশি কে বুঝে বল? “

আদ্রিস, মিরার হাতে হাত রাখে,

“জানিত। তুমি সেরা।”

“আচ্ছা আচ্ছা। চল তাহলে আমরা যাই ফুচকা খেতে।”

“তুমি জানো আমার এসব ভালো লাগেনা।”

“তোর ভালো লাগেনা নাকি আদ্রিতার পেট খারাপ হয় সেই ভয়? কোনটা?”

“সবই যখন জানো তখন জোর করো কেন?”.

” হাপ। একদিন খেলে কিছু হবেনা।”

আদ্রিস, মিরার সাথে পেরে ওঠেনা। ফলশ্রুতিতে ওরা সবাই মিলে সামনের গলিতে ফুচকা খওায়ার জন্য বের হয়।


মেনশন থেকে বেরিয়ে সামনের গলি বেশি দুরে নয়। তাই সবাই পায়ে হেটেই পথ টুকু পার করে।

আদ্রিতা, প্রিয়ার সাথে হাঁটছিল। ওদের পেছনে আদ্রিস এবং মিরা। আদ্রিস রাস্তার পারে ফুটপাতে একটা মহিলা এবং বাচ্চা কে বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
আদ্রিতাকে দেখে প্রিয়া এবং পেছনের আদ্রিস আর মিরাও দাঁড়িয়ে যায়।

“কি হলো থামলি কেন? ( প্রিয়া)

আদ্রিতা ফিরে তাকায় আদ্রিস এর দিকে। আদ্রিস ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আদ্রিতা মিষ্টি হেসে আদ্রিসের সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।

” কিছু টাকা দিন৷”

আদ্রিস ভ্রু কুঁচকে নেয়।
আদ্রিতা তা দেখে বলে,

“দিন না। কত টাকা আপনার।”

আদ্রিস বিরক্ত হয়ে আদ্রিতার হাতে ওয়ালেট তুলে দেয়।
আদ্রিতা সেখান থেকে কিছু খুচরা টাকা নিয়ে আদ্রিস কে ওয়ালেট টা ফিরিয়ে দেয়। এরপর সেই টাকা গুলো বাচ্চা টার হাতে দিয়ে বাচ্চা টার মাথায় আদর করে দেয়।
এ দৃশ্য দেখে, প্রিয়া, আদ্রিস, মিরা তিনজনই মোহিত। আদ্রিতা সত্যি অসাধারণ একটা মেয়ে। সাদা কাগজের মত মনটা।
মিরা আদ্রিসের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসয়ে বলে,

“আজ বুঝলাম আদ্রিতাকে এত ভালোবাসার কারণটা আসলে কি। ও মেয়েকে না ভালোবাসে পারা যায় না৷”

আদ্রিস, মিরার দিকে তাকিয়ে হাসল।


ফুচকার স্টলের ভেতরে বসার ব্যাবস্থা করা আছে।
সবাই সেখানেই বসে এসে।
বাম পাশে একটা গ্যাং ছিল ছেলেদের। আদ্রিস অর্ডার করে ভেতরে প্রবেশ করার পর প্রথম সে দিকেই খেয়াল করে। একটা ছেলে ফোন বের করে আদ্রিতা আর প্রিয়ার দিকেই ক্যামেরা অন করে রেখেছিল।
আদ্রিস পাবলিক প্লেসে মেজাজ গরম করতে চায়না। সে গিয়ে আদ্রিতার পাশে বসে পড়ে। ফলো আদ্রিসের শরীরের পেছনে আদ্রিতা ঢাকা পড়ে।

মিরা বলছিল তার দই ফুচকা পছন্দ। কিন্তু উপস্থিত কারোরই দই ফুচকা ভালো লাগেনা।
আদ্রিস অনেক সময় লক্ষ করে ছেলে গুলো কেমন অসাভাবিক আচরণ করছে।
আদ্রিসের ভীষণ রাগ হাতে লাগে। কিন্তু শুধুমাত্র পাবলিক প্লেস তাই কোন কথা বলেনা।
কিছুক্ষণ পর ফুচকা এলে সবাই খাবার শুরু করে। কিন্তু শুধু আদ্রিস ফোন টিপছে। আদ্রিতা তা লক্ষ করে প্লেট টা আদ্রিসের দিকে এগিয়ে দেয়।
আদ্রিস ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

“হোয়াট?”

“সবাই খেলে একজন না খেলে কেমন দেখায়। একটা খান৷”

আদ্রিতা অনেক কিউট করে কথা গুলো বলে। আদ্রিস তা দেখে বিনা বাক্যে আদ্রিতার প্লেট থেকে ফুচকা উঠিয়ে নেয়।
তা দেখে ঐশীও বলে,

“আদ্রিস ভাইয়া আমার থেকেও নিতে পারো।”

আদ্রিস তার চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দেয়,

“প্রয়োজন নেই।”

ঐশী ভেংচি কাটে।
খাওয়া শেষ হবার পর ওরা দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
মিরার সাথে দেখা করতে কোথা থেকে ফাহিম এসেছে। তাই ওরা কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। এর মধ্যে প্রিয়া টের পায় ওর ব্যাগটা ফেলে এসেছে ভেতরে,

“আদ্রিতা চেয়ারের উপর ব্যাগটা ফেলে এসেছি। একটু করে নিয়ে আয়।”

“আনছি আপু।’

আদ্রিতা ফের ভেতরে প্রবেশ করে। আদ্রিতাকে একা ফিরতে দেখে এবার ছেলে গুলো অমাবস্যার রাতে চাঁদের খোঁজ পেল যেন। ওদের দেখেই বোঝা যায় ওরা প্রচন্ড বখাটে এবং বড়লোকের পোলাও বটে।
আদ্রিতা চেয়ার থেকে ব্যাগটা নিয়ে যখনই পেছনে দেখতে পায় ছেলেগুলো তাকে ঘিরে ফেলেছে। তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে আদ্রিতার সামনে দাঁড়ায়,

” নাম কি?”

আদ্রিতা হাতের ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরে,

“রাস্তা ছাড়ুন। বাইরে ভাইয়া আছে ডাক দেব কিন্তু।”

আদ্রিতার কথা শুনে ছেলেটা বিরাট হাসি দেয়।

“ওলে ওলে। ভাইয়াকে ডাকবে। কিন্তু ওরাত বোধহয় চলে গেল।”

“যায় নি রাস্তা ছাড়ুন।”

ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত বাঁচাল। আদ্রিতার কথা শুনে আদ্রিতার কোমড় পর্যন্ত হাত নিয়ে যায়। কিন্তু স্পর্শ করার আগেই পেছন থেকে কেউ ঝড়ের বেগে তার হাতটা টেনে ধরে মুচড়ে দেয়।
ছেলেটা চিৎকার করে ওঠে।
আদ্রিতা কেঁপে ওঠে। আদ্রিস কে দেখে দৌড়ে আদ্রিসের পেছনে লুকায়।

“এগুলা কি আচরণ আদ্রিস।”.

” চিনতে পেরেছিস তাহলে। ওকে ডিসটার্ব করছিলি কেন?”.

“তোর কি হয় রে?”

“যেই হোক তোর সেটা দিয়ে কাজ নেই।”

ছেলেটা, হাত ছাড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে আদ্রিসের সামনে ধরে। মাত্রই ছবি ক্লিক করে আদ্রিতার ছবিটা বাজে ভাবে ইডিট করাও হয়ে গেছে। আদ্রিসের মুখে রক্ত উঠে যায়। ছেলেটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোনটা ভেঙে অগোনীত টুকরো হয়ে যায়।
ছেলেটা রাগ হয়ে যখন কিছু বলতে যাবে। আদ্রিসের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনা। বেরিয়ে যায়। কিন্তু আদ্রিসের রাগ কমেনি।
ততক্ষণে সবাই ফের ভেতরে চলে এসেছে।
সে পেছনে ফিরে সবার সামনেই আদ্রিতার গালে চড় বসিয়ে দেয়। আদ্রিতা ছিড়ে পড়ে যেতে নিলে মিরা ধরে বসে।

“আদ্রিস স্টপ। এটা পাবলিক প্লেস।”

“গাধার বাচ্চা। ওর মনে থাকেনা এটা পাবলিক প্লেস। শখ কত। আরও খেতে আয় ফুচকা।”

“আদ্রিস স্টপ। আদ্রিতার কি দোষ। আমরাওত ছিলাম সবাই। ছেলেগুলো এতটা বাজে সেটা আমরা কেউই জানতাম না।”

আদ্রিসের শরীর রাগে কাঁপছে,

“সাফাই দিও না আপু। ওর কাজই এটা ইনোসেন্স দেখিয়ে সবাইকে ঘায়েল করা। চেহারা দেখিয়ে বেটাদের বিছনায় যেতে চাস বল।”

আদ্রিতা আরও ভয়ে মিরাকে জড়িয়ে ধরে। আদ্রিসের প্রতিটা কথা আদ্রিতার বুকের ভেতর তীরের মত বিঁধছে।

“আদ্রিস স্টপ। এটা পাবলিক প্লেস।”

আদ্রিস আর কিছু বলেনা হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। মিরা, আদ্রিতার গাল থেকে পানি মুছিয়ে দেয়।

“থাক আপু কাঁদিস না। ওর একটু রাগটা বেশিই।”

আদ্রিতা কিছু বলছে না শুধু হেঁচকি টানছে।
ওরা আর বাহিরে থাকেনা। ফিরে আসে বাড়িতে।


ছেলে চারজনও ফুচকা স্টল থেকে বেরিয়ে বাড়িতে চলে আসে যে যার।
তবে যে ছেলেটা এভি নাম করে আদ্রিতার ছবি বাজে ইডিট করেছিল। ওই ছেলেটাকে মাঝের গলি থেকে কেউ তুলে নিয়ে যায়।
মাঝের গলিটাও নিরব থাকে। ওখানে মূলত সবাই গাজা সেবন করে।


খান মেনশন,

চলবে?

[ পরের পর্ব থ্রিলিং হবে গাইস। আগে থেকেই বলছি গল্পটা থ্রিলার টাইপ। রেসপন্স করিও]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply