জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০২
“তোলাচ্ছিস কেন? তোর পুরো কথা স্পষ্ট শুনতে চাই আমি।”
আদ্রিতা, পুরো আদ্রিস এর মুখোমুখি বসে ছিল। আদ্রিতা ভয়ে একটু পেছন দিকে সরে যেতে নিলে আদ্রিস, ওর হাঁটু ধরে নিজের দিকে টান মারে।
আদ্রিতা এগিয়ে যায় বেশ খানিকটা।
“তোর কাছে সুক্ষ্ম এক্সপ্লেনেশন চেয়েছি আমি আদ্রিতা। এখন আবার ওয়াসরুমে বন্ধ করে রাখব কিন্তু।”
আদ্রিতার চোখ ছলছল হয়ে ওঠে।
“ন না নানা।”
“শুরু কর।”
“৩য় ক্লাস শেষে পরের ক্লাস টি ছিল গণিত। ত গণিত স্যার ক্লাসে আসার পর আমাকে বলল, আদ্রিতা লাইব্রেরি থেকে আমার গাইড টা নিয়ে এসো।
আমি তখন বলেছিলাম ওই বিল্ডিং এ যেতে ভাইয়া না করেছে। কিন্তু স্যার বলল ভাইয়াকে বলবা আমি পাঠিয়েছি। আমি তখন লাইব্রেরিতে যাই। গাইড টা নিয়ে যখন ফিরব তখনই দেখি স্যার আমাট পেছনে দাঁড়িয়ে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
স্যার আপনি এখানে।
স্যার তখন আমার মাথায় হাত রেখেছিল। এরপরেই আপনি চলে এসেছেন।”
আদ্রিস হাত মুঠো করে নেয় শক্ত করে। মনে মনে গালাগাল করতে থাকে,
“শুয়োরের বাচ্চা। পৃথিবী থেকে তোর নাম মুছে দেব।”
আদ্রিস এক টানে আদ্রিতাকে নিজের কোলে বসায়। আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়।
“আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করুন ভাইয়া।”
“আদ্রিতা তুই কি কখনো বড় হবিনা? তুই জানিস না কে তোকে কি ইঙ্গিত করে?”
আদ্রিতা মাথা তুলে তাকায়।
“ইঙ্গিত মানে?”
আদ্রিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আদ্রিতার হাতে হাত রাখে।
“শোন আমি বাদে পৃথিবীর সব পুরুষের টাচ তোর জন্য ব্যাড টাচ, বুঝেছিস? “
আদ্রিতার চোখ দু’টো আদ্রিস এর দিকেই স্থির। আদ্রিস বিনা বাক্যে আদ্রিতাকে নামিয়ে দেয় কোল থেকে।
“পড়তে বস।”
আদ্রিতা মাথা নুইয়ে নেয়। এমনটা না করলে কি বা হতো।
আদ্রিস ভাবতে থাকে,
“তোর জন্য আমাকে আর কত কি করা লাগবে আদ্রিতা। আমাকেত একে একে সবার শত্রু বানিয়ে দিচ্ছিস। অথচ তুই নিজেই জানিস না নিজের জন্য কত ঝামেলা আর মুসিবত পেলে পুষে বেড়াস। এতটা নিষ্পাপ কেউ কিভাবে হতে পারে।”
আদ্রিতাকে বেশি পড়ায়নি আদ্রিস।
রাতের ডিনার টেবিলে খান পরিবারের সবাই উপস্থিত থাকে। এটা সব সময় ঘটে। সারা দিন কর্মব্যস্ততায় থাকলেও ডিনার সবাই এক সাথেই করো৷
আদ্রিতা, মিসেস খান এর সাথে সবাইকে পরিবেশন করছিল।
সবার খাবারের মাঝে হটাৎ আদ্রিস এর কথা শুনে সবাই একটু থেমে যায়।
“পাপা মিস্টার সাইফুল হক আমাদের স্কুলের গণিত প্রফেসর? “
আসরাফ খান উত্তর দিলেন,
“হ্যাঁ খুব ভালো পড়ায়। আদ্রিতা দের গণিত ক্লাস নেয়ত।”
“ওনাকে কাল ফায়ার করবে।”
আসরাফ খান ভ্রু কুঁচকে নিলেন,
“কেন?”
“কারণটা সকাল হতে হতে পেয়ে যাবে।”
কথাটা বলে আদ্রিস উঠে গেল খাবার টেবিল থেকে। সবাই তাকিয়ে রইল সে দিকে। অবশ্য কারোর এতে কোন হেলদুল নেই। আদ্রিস এত স্মার্টলি উত্তর দিয়ে চলে গেল যা দেখে আসরাফ খান অবাক।
“বুঝলে মাধবী ছেলে তোমার ১৯ বছরের হলেও কথা বার্তা ২৯ বছরের মত।”
“আমার ছেলে বুদ্ধিমান। এটা আমার গর্বে বিষয়।”
“হ্যাঁ একটু বেশি বুদ্ধিমান।”
ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।
আদ্রিতা রুমে এসে বিছনা গুছিয়ে নিচ্ছিল। আদ্রিস এর ডাইনিং টেবিলে বলা কথা গুলো ভাবছিল। আদ্রিতা এটাত জানত তাদের নর্থ ক্রাউন স্কুল এন্ড কলেজের, ফাউন্ডার খান কর্পোরেশন। কিন্তু আদ্রিস এর কথায় এত প্রভাব পড়বে জানত না।
আদ্রিতা বালিশ বিছনায় রাখতে রাখতে কথা গুলো ভাবছিল।
হটাৎ পেছন থেকে আদ্রিস এর কন্ঠ শুনতে পেয়ে কেঁপে ওঠে আদ্রিতা,
“তোর রাত হয়নি?”
আদ্রিতা ফিরে তাকায়। আদ্রিস তাকিয়ে আছে আদ্রিতার দিকে,
“ম মানে?”
“মানেটা সোজা তোর রাত হয়নি?”
“হ্যাঁ হয়েছে। ঘুমব ত।”
আদ্রিস এগিয়ে যায় আদ্রিতার দিকে।
আদ্রিতা পিছিয়ে যায় কিছুটা।
“কাল থেকে স্কুলে গিয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলা বন্ধ।”
আদ্রিতা, আদ্রিসের দিকে তাকায়।
“আ আমিত শুধু শ্রাবণের সাথেই কথা বলি। আ আমার আর কেন বন্ধু নেই বিশ্বাস করুন।”
“কাল থেকে বলবি না সেটা বলেছি। এক্সপ্লেনেশন চাইনি।”
“কিন্তু ভাইয়া।”.
আদ্রিস, আদ্রিতার কথা শুনল না বেরিয়ে গেল সে রুম থেকে।
আদ্রিতা তাকিয়ে রইল সে দিকে।
কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। প্রতিটা সিদ্ধান্ত কেন চাপিয়ে দিতে হবে আদ্রিতার উপর।
আদ্রিতা গিয়ে শুয়ে পড়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে।
তার মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে।
শীতের সকাল। বেশ কুয়াশা চারিপাশে। কিছুদিন পর থেকে হয়তা বেশি কুয়াশা পড়বে।
সকাল সকাল আদ্রিতার সভাব দ্রুত ঘুম থেকে ওঠা। আজও বেতিক্রম নয়।
সে ঘুম থেকে উঠে বাগানে চলে এসেছে। এখানেই একটা বন্য টিয়া পাখি আসে আদ্রিতার সাথে দেখা করতে। বলা চলে আদ্রিতার পোশা পাখি। সে রোজ এসে আদ্রিতার থেকে ট্রিট নিয়ে যায়।
আদ্রিতা দেখতে পায় আজও টিয়া পাখিটা চলে এসেছে।
আদ্রিতা খুশি হয়ে যায়।
” পিকো।”
পাখিটার নাম আদ্রিতা রেখেছিল পিকো। আদ্রিতা ভেতর থেকে একটা স্টবেরি এনে পিকোর সামনে দেয়। পিকো ট্রিট পেয়ে অনেক খুশি।
আদ্রিতর কোলে বসে সে স্টবেরিটা খেতে শুরু করেছে।
আদ্রিতা চোখ দু’টো নরম হয়ে আসে। পিকো কে দেখলে ওর মন ভালো হয়ে যায়। আজও বেতিক্রম কিছু নয়।
আদ্রিস আজ একটু বেশি সকালে উঠেছে। বাবার রুমে গিয়ে একটা এনভেলপ রেখে সে বেরিয়ে আসে।
বাবার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসেছিল। বাগানের সাইডের দরজা খোলা দেখে আদ্রিস এগিয়ে যায় সে দিকে। আদ্রিতা বসে আছে পিকো কে কোলে নিয়ে। মেয়েটা মনের সব কথা বলে চলেছে পিকো কে। পিকো বুদ্ধিমান পাখির মত সব শুনছে। যেন আদ্রিতার জন্যই সে সব সেখানে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর পিকো নিজের ট্রিট শেষ করে আদ্রিতার থেকে বিদায় নিয়ে উড়ে যায়।
আদ্রিতাও তাকিয়ে থাকে সে দিকে।
আদ্রিস দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখেছে। আদ্রিতাকে দেখতে সে কখনো বোর হয়নি। তার কখনো খারাপ লাগেনি। মনে হয়েছে সে সব সময় আদ্রিতাকে দেখতে পারবে।
“কি করলি এটা আদ্রিতা? আমার বুকের ভেতরে এত যন্ত্রণা কিভাবে নিবরান হবে? তোকে না পাওয়া পর্যন্ত শান্তির ঘুম যে আমার চোখে নেই রে।”
আদ্রিস কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে রুমে চলে যায়। পর্শু থেকে টেস্ট পরিক্ষা। এরপর এইচএসি।
আদ্রিতাদের পরিক্ষাও নিকটে।
তাদের পরিক্ষা শেষ হলেই আদ্রিতা দের শুরু।
আদ্রিস শুধু ভাবছে সে ভার্সিটিতে যাওয়ার পর আদ্রিতার কি হবে।
এই বলদ টা একা কখনো বাড়ি থেকেও বার হয়না।
আসরাফ খান সকালে অফিসের জন্য রেডি হয়ে আদ্রিস এর দেওয়া এনভেলপ দেখতে পায়।
আসরাফ খান টাই বাঁধার পর এনভেলপ খুলে দেখে। কিছু ছবি এবং লিগাল কাগজ দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
ওই স্যার পাস্টে ২ টা বাচ্চা কে রেপ করেছে। এছাড়াও যত গুলো মামলা আছে সব কিছুর লিগাল ডকুমেন্টস এবং কিছু ছবি।
আসরাফ খান তাকিয়ে আছে সেগুলোর দিকে।
“আদ্রিস তুই কবে থেকে এতটা ভয়ানক হওয়া শুরু করেছিস বাপ। আমারত ভয় লাগছে এবার। “
ওদের পরিক্ষার দিন গুলো ওভাবেই কাটে। আদ্রিস এর কড়া শাসনের মধ্যেই আদ্রিতার পরিক্ষা শেষ হয়। আদ্রিতা বেশ ভালো রেজাল্ট করে। পরের বছরের শুরুর দিকেই আদ্রিস এর পরিক্ষা থাকে। এর ভেতরে গণিত স্যারকেও ফায়ার করিয়েছে আদ্রিস।
স্যারের অবস্থা করুন। সে অন্য কোথাও চাকরিও পাবেনা এমন অবস্থা বানিয়ে ফেলেছে।
আদ্রিসের পরিক্ষাও শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন আদ্রিস ফ্রি। তবে আদ্রিতা ক্লাস ৯ এ ওঠার পর ওকে পড়ালেখা নিয়ে একটু বেশি চাপে রাখে আদ্রিস।
সব বদলে গেলেও আদ্রিস এর কড়া শাসন বদলেনি একটুও।
কথায় কথায় মেয়েটা চড় থাপ্পড় খেতেই থাকে। এখন আর আদ্রিতা তেমন রিয়াক্ট ও করেনা। কারণ তার ছোট ছোট ভুলে আদ্রিস এমনিতেই তাকে শাস্তি দেয়।
আজ মালিহা বেগম [ আদ্রিস এর এক মাত্র খালা ] এবং মিরা [ খালাত বোন] এবং মিরার ছোট বোন ঐশী এবং জারিফ এসেছে খান বাড়িতে।
মিরার বিয়ে ঠিক হয়েছে। মিরা আদ্রিস এর থেকে ২ বছরের বড়। ঐশী এবং জারিফ জমজ ভাই বোন। ওরা আদ্রিতার সাথেই পড়ে।
তবে জারিফ কে আদ্রিস এর সহ্য হয়না। ছেলেটা সময় পেলেই আদ্রিতার আদেশপালন ঘুর ঘুর করে মৌমাছির মত।
মলিহা বেগম এসেছে বোনকে দাওয়াত দিতে।
আদ্রিতা কিচেন থেকে নাস্তা এনে সবার সামনে রাখে।
“আরে আদ্রিতা। কত বড় হয়ে গেছে মাধবী।”
মাধবী বেগম হাসলেন,
“হ্যাঁ সারা জীবন ছোট থাকবে কি।”
“প্রিয়া আর মিশু কোথায়?”
“ওরা টিউশনে গেছে ফিরে আসবে কিছুক্ষণ পর।”
“ওরা টিউশন গেছে ত আদ্রিতা কেন বাড়িতে। আদ্রিতাকেও পাঠাতে পারিস।”
মাধবী বেগমের মুখের হাসিটা সরে যায়।
“আদ্রিতাকে, আদ্রিস পড়ায়। আদ্রিতা এমনিতেও বাহিরে যায় না। ওর ভালো লাগে না।”
আদ্রিতাই জানে এই কথায় কতটা সত্যি। তারত ভালো লাগে না। তারও ইচ্ছে করে কলেজে যাবে বন্ধু বান্ধবী হবে। কিন্তু ওই কালো সান্ডা কি আর সেটা হতে দেয়।
চলবে?.
[ আদ্রিস সাইকো টাইপের। মানে পুরোই সাইকো টাইপের নায়ক হবে। দয়া করে আর কিছু পর্ব পড়ে এরপর মিল অমিল মন্তব্য করে জানিও। আমি কোন গল্প পড়িনা তাই আসলে কিছুই জানি না। ]
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার গল্পের লিংক
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৮
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪