“আদ্রিস ভাইয়া প্লিজ দরজা খুলে দিন। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না। প্লিজ আমার ভয় করছে। এখানে অনেক অন্ধকার আদ্রিস ভাইয়া প্লিজ। আমি আর কখনো ওই ছেলেটার কাছে পর্যন্ত যাবনা। আমার সত্যি ভয় করছে। আমায় এত বড় শাস্তি দিবেন না।”
আদ্রিতার কন্ঠ ভাঙা ভাঙা বেশ অনেকক্ষণ ধরেই সে চিৎকার করে চলেছে ওয়াশরুমের ভেতর থেক। দরজায় বাড়ি মারতে মারতে আদ্রিতার হাতের তালু পর্যন্ত রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু রুমে বসে থাকা আদ্রিস এর কোন হেলদুল নেই, সে ফোন টিপছে মন দিয়ে। তবে ঠোঁটের কোণায় বক্র হাসি। যেন আদ্রিতার চিৎকার তাকে শান্তি দিচ্ছে। আদ্রিতার আকুতি মিনতি এক অন্য রাজ্যের ভালো লাগা দিচ্ছে আদ্রিস কে। আদ্রিতা এভাবে আরও ১০ টা মিনিট ধরে আদ্রিস এর কাছে ক্ষমা চায় দরজা খুলে দিতে বলে কিন্তু আদ্রিস সেটা শুনেই শুনেনা।
এরপর আদ্রিতা চুপ হয়ে যায়। আদ্রিতাকে চুপ হতে দেখে আদ্রিস বাঁকা হাসে।
ওয়াসরুমের দরজার সামনে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এনজয় আদ্রিতা। আমি ফিরে যাচ্ছি কলেজে। ততক্ষণে নিজের পছন্দের প্রাণীটার সঙ্গে সময় কাটা।”
কথাটা বলে আদ্রিস বেরিয়ে যায়। নিজের রুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে যায়।
আদ্রিতা হাঁটু জড়িয়ে নেয়। বুকের সাথে হাঁটু বেঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়।
“আ আদ্রিস ভা ভাইয়া। প প্লিজ আদ্রিস ভাইয়া দরজা খুলে দিন না। “
চিৎকার করতে করতে এখন আদ্রিতার ভেতর আর কেন শক্তি অবশিষ্ট নেই। গলা কাঁপছে তার ভয়ঙ্কর ভাবে। ওদিকে আদ্রিসের কোন হেলদুলের শব্দ পাচ্ছে না আদ্রিতা। তাহলে আদ্রিস চলে গিয়েছে নিশ্চিত। আদ্রিতা আরও ভয় পেয়ে যায়।
হটাৎ পায়ের কাছে কিছু একটা স্পর্শ হতে আদ্রিতা আবারো উঠে দাঁড়ায়।
তার ভয় বাড়ছে। ওয়াসরুমটা পুরাই অন্ধকার কোথাও কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
আদ্রিতা আবারো ওয়াসরুমের দরজায় গিয়ে বাড়ি মারে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়না।
আদ্রিস এর রুম থেকে শব্দ বাহিরেই যায় না।
কেউ কিভাবে শুনবে।
আদ্রিতা অনুভব করে অন্ধকারে তার শরীরে কিছু বেয়ে উঠছে। এই ভয়ে আদ্রিতা জ্ঞান হারায়।
পুরো একটা দিন কেটে গেল। দুপুর থেকে সন্ধ্যা।
খান মেনশনে আদ্রিস এর বাইক প্রবেশ করে। পরনে তার ডেনিম জ্যাকেট ভেতরে সাদা টি সার্ট আর ব্লু জিন্স।
বেশ উজ্জ্বল ফর্সা ছেলেটা। তবে মুখশ্রীতে এখনো তেমন দাঁড়ি উঠেনি। বাম হাতে খুব দামি একটা হাত ঘড়ি। কাঁধে কলেজ ব্যাগ। আদ্রিত বাইকের চাবি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
মাধবী বেগম ( আদ্রিস এর মা মিসেস খান) লিভিং রুমে ছিলেন। আদ্রিস কে একা আসতে দেখে অবাক হলেন,
“আদ্রিস, আদ্রিতা কোথায়? রোজত তুই ৪ টা বাজলে ওকে এগিয়ে দিয়ে জাস। আজ দিয়ে গেলি না। ভাবছি হয়ত কোন সমস্যা আছে আসার সময় নিয়ে আসবি। কিন্তু এখন একা আসছিস যে?”
“মম প্লিজ আমি কি আদ্রিতার চাকর নাকি। ও কি করল কি না করল সেটা কেন আমি দেখতে যাব? আর দেখো একা একাই চলে আসবে। “
মাধবী বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আদ্রিস এর মুখের দিকে।
আদ্রিস সেটা তোয়াক্কা না করে চলে যায় উপরে নিজের রুমে।
মাধবী বেগম, আর বেশি ভাবলেন না।
এমন সময় প্রিয়া এবং মিশুও চলে আসে।
[ আদ্রিস খান, আসরাফ খান এবং মাধবী বেগমের বড় ছেলে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কিছুদিন পরেই টেস্ট এরপর ইন্টার পরিক্ষা। প্রিয়া হলো আদ্রিস এর ছোট বোন। সে এবার ক্লাস ১০ এ পড়ে। মিশু এবং আদ্রিতা দুই বোন।
মিশু ক্লাস ৯ এ পড়ে। আদ্রিতা ক্লাস ৮ এ পড়ে। মিশু এবং আদ্রিতা রিনিতা বেগম এবং নেওয়াজ খান এর দুই মেয়ে। ওরা গ্রামে থাকত। রিনিতা বেগম এর মৃত্যুর পর আসরাফ খান ভাইকে দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে থাকতে দেয়নি। নিয়ে এসেছে শহরে। এবং নিজের সাথে বিজনেস এ যোগ করিয়েছে।
আদ্রিস খান বংশের বড় সন্তান তাই তার কথার কদর বেশি সব সময় ]
আদ্রিস রুমে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখে আদ্রিতা ফ্লোরে পড়ে আছে জ্ঞান হারিয়ে।
আদ্রিস, আদ্রিতাকে পাজ কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দেয়। দু চার বার আদ্রিতার গালে ট্যাপ করলে আদ্রিতার জ্ঞান ফিরে।
জ্ঞান ফিরতে আদ্রিস কে সামনে দেখে আদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়।
“ভয় নেই কিছু বলছি না। যা নিজের রুমে যা। মম এর সাথে দেখা হলে বলবি রুমে ছিলি ঘুমিয়ে গেছিলি। বুঝতে পেরেছিস?”
আদ্রিতা ভয়ে ভয়ে বলে,
“ঠ ঠিক আছে।”
“কথার নড়চড় হলে তোকে ছাঁদ থেকে ফেলে দেব বেয়াদব।”
আদ্রিতা তখনো কিছু বলেনা। আদ্রিস কে কিছু বলার মানে হলো নিজের জন্য শাস্তি প্রস্তুত করা।
আদ্রিতা উঠে নিজের রুমে চলে আসে। লিভিং রুম ফাকা ছিল তাই কেউ তাকে দেখেনি। নিজের রুমে এসে আদ্রিতা ভয়ে কাঁপতে থাকে।
হাঁটু ভাজ করে বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়।
আদ্রিস সেই যখন আদ্রিতারা এ বাড়িতে এসেছে তখন থেকেই আদ্রিতার উপর পুরো নিয়ন্ত্রিত করে।
এমনকি প্রিয়া এবং মিশু অনেক স্কুলে থাকলেও আদ্রিতা শুধুমাত্র আদ্রিস এর সাথে একই স্কুল এন্ড কলেজে আছে।
আদ্রিস ছোট থেকেই আদ্রিতার সম্পর্ক সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে। আদ্রিতার বাবাও কখনো প্রতিবাদ করেনি।
আদ্রিতার গায়ে কেউ হাত উঠাক এটা আদ্রিস সইবে না কখনো কিন্তু নিজে এক সাথে শত খানেক চড় থাপ্পড় মারলেও সমস্যা নাই।
সবাই জানে আদ্রিস কতটা পজেটিভ আদ্রিতার জন্য। এ কারণেই মাধবী বেগম অবাক হয় যখন দেখে আদ্রিস, আদ্রিতাকে নিয়ে আসেনি।
আদ্রিতা বহু বার বাবাকে বলেছে তবে বদলে বাবার কোন রেসপন্স পায়নি উল্টে আদ্রিস এর ভয়ানক পানিসমেন্ট পেয়েছে। এখন আদ্রিতা একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছে।
আদ্রিস জানত আদ্রিতা ঠিক কতটদ ভয় পায় অন্ধকার। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই অন্ধকার আদ্রিতার চরি শত্রু। তবুও আজ একটা পুরো দিন আদ্রিতাকে ওয়াসরুমে আঁটকে রাখল। আদ্রিতার তেমন দোষও ছিলনা। আদ্রিস এমনই কখনো আদ্রিতার কথাই শুনেনা। আদ্রিতাকে কোন কথা বলার সুযোগ ই দেয়না।
আদ্রিতার এসব কল্পনার মাঝেই দরজায় কেউ টোকা দেয়।
“আদ্রিতা আছিস মা? “
মাধবী বেগমের কন্ঠ শুনে আদ্রিতা চোখ মুছে নেয়।
“জি বড় মা আছি।”
“দরজা খোল মা কোথায় ছিলি সারা দিন?”
আদ্রিতা দরজা খুলে।
মাধবী বেগম আদ্রিতাকে স্কুল ড্রেসে দেখে অবাক হয়।
“কিরে মা তুই জামা বদলাস নি?”
“ও ওই বিকালে যখন ভাইয়া বাড়িতে দিয়ে গেছিল তখন তুমি ঘুম ছিলে। আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিল তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম।”
মাধবী বেগম বেশ বুঝতে পারে আদ্রিতা মিথ্যা বলছে। আদ্রিতার কন্ঠ কাঁপছে। তবে তিনি আর কিছু বলেন না।
“ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবি।”
“জি।”
মাধবী বেগম চলে গেলে আদ্রিতা দরজা বন্ধ করে। কিছু সময় বসে থেকে ওয়াসরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে চুল বেঁধে বাহিরে চলে আসে।
লিভিং রুমে প্রবেশ করে দেখে প্রিয়া এবং মিশু চলে এসেছে। ওরা কোচিং করে স্কুলের পর তাই ফিরতে দেরি হয়। কিন্তু আদ্রিতা কোচিং করেনা। সেই অনুমতি তার নেই। আদ্রিতাকে পড়ায় আদ্রিস। রোজ রাতে যতটা সময় আদ্রিস জেগে থাকে ততটা সময় আদ্রিতা না চাইতেও জেগে থাকে। এটা যেন বাধ্যতামূলক।
“হেই আদ্রিতা। ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন এদিকে এসো।”
“হ্যাঁ আদ্রিতা এদিয়ে আয়।”
প্রিয়া এবং মিশুর ডাকে ধ্যান ফিরে আদ্রিতার।
“আমার খিদে পেয়েছে আমি একটু খেয়ে আসি আপু।”
“কেন তুমি খাও নি?” (।প্রিয়া)
“আ আসলে ঘুমিয়ে গেছিলাম।”
“ওহ। যাও।”
আদ্রিতা কিচেনের দিকে যেতে নিলে হটাৎ শিড়ির উপর থেকে আদ্রিস এর ঢাক পড়ে
“আদ্রিতা। দু প্লেট খাবার আর বই নিয়ে আমার রুমে আয় জলদি।”
আদ্রিতা অবাক হয়। এখন আবার কেন ডাকছে তাকে।
“কিন্তু ভাইয়া আমি খাব। আপনি একটু কষ্ট করে নিয়ে নিন।’
আদ্রিস ফোনে মুখ গুঁজে ছিল। আদ্রিতার কথা শুনে মাথা তুলে তাকায়। আদ্রিস এর চোখ দু’টো দেখে,
আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়। ধির কন্ঠে বলে,
” আনছি।”
এরপর আদ্রিতা কিচেনে গিয়ে খাবার বেড়ে নেয়। আর আদ্রিস এর রুমে চলে যায়।
প্রিয়া বা মিশুর কাছে এটা নতুন কিছু নয়। তাই তারা কিছুই বলেনা।
আদ্রিতা খাবার প্লেট হাতে আদ্রিস এর রুমের দরজায় নক করে
“কাম ইন।”
আদ্রিতা ভেতরে প্রবেশ করে আদ্রিস এর সামনে খাবার প্লেট দু’টো রাখে।
আদ্রিস মাথা তুলে তাকায়।
“তোর বই কোথায়?”
“আ আমি কিছু খেয়ে নি তারপর পড়তে৷ “
আদ্রিতার পুরো কথা শেষ হবার আগেই আদ্রিস বলে,
“বই নিয়ে আয়।”
“কিন্তু ভাইয়া..”
“আই সেইড বই নিয়ে আয়। এই কথা এরপর যত গুলো বার আমাকে দিয়ে বলাবি সেই কয়টা বেতাঘাত পাবি। এখন তুই বল কি করবি।”
এমন সময় আদ্রিতার পেট থেকে শব্দ বের হয়।
আদ্রিস তা শুনে হাসে।
আদ্রিতা খুবই লজ্জা পায়। এবং বেরিয়ে যায়। নিচ থেকে বই খাতা নিয়ে আবার আদ্রিস এর রুমে চলে যায়।
প্রিয়া আর মিশু তাদের রুমে পড়ছে। ওদের জীবন কত সুন্দর। আদ্রিতার হিংসা হয়। সবার জীবন এক রকম আর তার জীবন টা ত্যানা ছেড়া।
আদ্রিতা পুনরায় আদ্রিস এর রুমে আসতে আদ্রিস খাবার তুলে আদ্রিতার মুখের সামনে ধরে।
আদ্রিতার দু’টো চোখ আদ্রিস এর বাড়িয়ে দেওয়া খাবারের দিকে স্থির।
“কিরে? আমি তোর জন্য সারা জীবন বসে থাকব নাকি?”
“ইয়ে মানে আমি খেয়ে নেব।”
“কথা দিচ্ছি এই রাতে তোর কপালে খাবার জুটবে না।”
আদ্রিতা ভয়ে ভয়ে খাবার খেয়ে নেয়।
আদ্রিস পুরোটা খাবার আদ্রিতাকে খাইয়ে এরপর নিকজেও খেয়ে নেয়।
এরপর আদ্রিতাকে প্লেট নিচে রেখে আসতে বলে।
আদ্রিতা প্লেট নিচে রেখে ফের আদ্রিস এর রুমে চলে যায়।
আদ্রিস দরজার কাছেই ছিল। আদ্রিতা আসতে আদ্রিস দরজা বন্ধ করে আদ্রিতাকে দেয়ালে পিন করে ধরে।
আদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়।
“সত্যি করে বল টিফিন টাইমের আগে ওখানে তুই কি করছিলি?”
আদ্রিতার চোখ ছলছল হয়ে ওঠে,
“আ আমার কোন দোষ নেই। বিশ্বাস করুন।
আসলে….
চলবে?
জেন্টাল_মন্সটার
পর্ব_০১
লামিয়ারহমানমেঘলা
[ রেসপন্স না আসলে রিমুভ করব বলা আছে। আর হ্যা আদ্রিস এর চরিত্র টা ভয়ঙ্কর এখানে। যদি গল্প বড় হয় তাহলে সুন্দর একটা উপাখ্যান উপহার পেতে চলেছো]
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩