Golpo romantic golpo অর্ধাঙ্গিনী গল্পের লিংক সিজন ২

অর্ধাঙ্গিনী সিজন ২ পর্ব ২৫


অর্ধাঙ্গিনী ( দ্বিতীয় পরিচ্ছদ)

নুসাইবা_ইভানা

পর্ব২৫

অন্তর জাহিনের গলা ছেড়ে দিয়ে লাশের একদম কাছে এসে বসল। নিজের মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে খেয়াল করে তাকিয়ে রইল লাশের মুখের দিকে। পচা গন্ধে পেট গুলিয়ে বমি আসল। অন্যদিকে সরে এসে হড়হড় করে বমি করে দিল।

পা বিছিয়ে বসে বলল, “এটা তো তুষি না। তুষি কে কোথায় রেখেছিস? ভালোয় ভালোয় বলে দে, জাহিন।”

“আমি জানি না তুষি কোথায়।” বলেই বের হয়ে এল গোডাউন থেকে। রুমে এসে চোখেমুখে পানি দিয়ে বেডের উপর পড়ে রইল। অন্তর এল কিছুক্ষণ পর।

জাহিনের পাশে বসে বলল, “তুই আমাকে তুষির ঠিকানা বল।”

“আমি জানি না। এই মেয়েটাকে তুষি ভেবে কিডন্যাপ করে এনেছিলাম। আম্মুর অসুস্থতার কথা শুনে দ্রুত চলে গেছি। আজ এসে দেখি এই অবস্থা।”

অন্তর জাহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “মানুষ মারতে তোর হাত কাঁপে না! না জানি কার মায়ের বুক খালি করেছিস তুই। জাহিন, তোকে আমি শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি, বল তুষি কোথায়?”

“সত্যি বলছি, আমি জানি না।”

অন্তর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি এখন যাচ্ছি, জাহিন। যদি কোনোদিন জানতে পারি তুষির কিডন্যাপের সাথে তোর কোনো হাত আছে, আমি আল্লাহ তায়ালার কসম করে বলছি—তোকে আমি নিজের হাতে খুন করব।”

অন্তর চলে যেতেই জাহিন চোখ বুঁজে ফেলল। তার চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল। তুষি যে আর এই পৃথিবীতে নেই—এই কঠিন সত্য বলার সাহস তার নেই। মিথ্যে বলেও কেমন ভেতরে ভেঙে পড়েছে। জাহিন ছাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিছু কিছু ভুল কখনো শোধরানো যায় না। আমার ভুলের মাশুল হিসেবে আমার জীবন দিয়ে দিতে হবে। এত মহৎ কেউ হতে পারে? নিজের জীবন শেষ করে দেওয়া কি এতই সহজ? আমি বাঁচতে চাই। কিন্তু এ সমাজে আমার বাঁচার কোনো অধিকার নেই।”

পুরনো একটা পরিত্যক্ত ভবনের ঘরে পড়ে আছে তুষির লাশটা। শরীর কেমন কালচে হয়ে ফুলে উঠেছে। সামনে বসে আছে একজন মধ্যবয়সী নারী, সে কাঁদছে। বাড়িতে আরও দুজন মহিলা—তারা চুলায় গরম পানি বসিয়েছে। এরা তুষিকে শেষ গোসল করিয়ে সাদা কাফনের কাপড় পরিয়ে জীবনের শেষ সাজ সাজাবে। এরপর তুষির অস্তিত্ব এই দুনিয়া থেকে মুছে যাবে। লাশের মিছিলে হারিয়ে যাবে তুষির নাম। শেষবারের মতো তুষিকে একবারের জন্যও অন্তর দেখবে না! জানবেও না কোথায় আজ তার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীর সমাধি তৈরি হচ্ছে!

মধ্যবয়সী মহিলা জাহিনকে কল করে বলল, “আর এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর লাশ কী করব আমরা?”

জাহিন বলল, “লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে তুলে দেবেন। লাশের সাথে আপনি যাবেন। লাশ দাফন হবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বদ্দি বাজারের এক গ্রামে।”

“আপনি আসবেন না?”

“না, আপাতত আমি আসব না। তবে আমার পাঁচজন লোক থাকবে। আপনি ভয় পাবেন না। আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।”

কল ডিসকানেক্ট হতেই মহিলা ওড়নার আঁচল দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা নোনা পানি মুছে নিল। তুষির লাশ এনে প্রথমে বরফের উপর রেখেছিল গন্ধ দূর করার জন্য।

“মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায় মৃত্যুকে?” মহিলাটি তুষির কাফনের মুখ বন্ধ করে বলল, “মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় না। কারণ জন্ম যখন হয়েছে, মরতে একদিন হবেই। কিন্তু মানুষ প্রিয় মানুষকে ছেড়ে যেতে ভয় পায়, ভালোবাসার মানুষদের চিরতরে হারিয়ে ফেলতে ভয় পায়। মানুষ মূলত মৃত্যুকে নয়, সুন্দর পৃথিবীকে ছেড়ে যেতে ভয় পায়। অবশেষে সব ভয় জয় করে প্রিয় মানুষদের একা রেখে মৃত্যুর কাছে পরাজয় স্বীকার করতেই হয়। পরপারে ভালো থেকো তুষি। এই জীবনে যা কষ্ট সহ্য করেছ, পরপারে তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কবরে ভালো রাখুক।”

🌿

নয়না অস্থির হয়ে ঘরে পায়চারি করছে। অনিকেত নয়নাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

নয়না অনিকেতের দিকে তাকাল। রাগ হচ্ছে অনিকেতের উপর। কেমন অতিরিক্ত দরদ দেখাচ্ছে!

অনিকেত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

“কী সমস্যা আপনার?” বলেই অনিকেতের দিকে তাকাল।

নয়নার চোখে এই প্রথম অনিকেতের চেহারার সাথে তার বাবার চেহারার মিল খুঁজে পেল! নয়না খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “প্লিজ ভাইয়া, আপনি গিয়ে আপনার জায়গায় বসুন।”

অনিকেত বসে পড়ল।

নয়না জিয়ানকে কল করল।

ওপাশ থেকে রিসিভ করে বলল, “জাহিন আর অন্তর—কারো কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। দুজনের একজনও কল রিসিভ করছে না।”

নয়না বলল, “এত রাতে তুমি ওদের কোথায় খুঁজবে? চলে এসো হসপিটালে। সকালে সোজা থানায় গিয়ে কেস ফাইল করব।”

নয়না ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল।

অনিকেত জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”

“অন্তর ভাই ফোন ধরছে না,” নয়না কাঁদোকাঁদো গলায় বলল। “আমার বুকটা কেমন করছে। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। আর এই রাতটা এত দীর্ঘ কেন!”

অনিকেত নয়নার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, “পানি খেয়ে একটু রিল্যাক্স করুন। আমরা সকালের মধ্যে কোনো খোঁজ না পেলে থানায় যাব।”

ঠিক তখনই নয়নার ফোনে একটা অজানা নম্বর থেকে মেসেজ:

“তুষি বেঁচে নেই। আজ রাতেই তার দাফন সম্পন্ন হবে। প্লিজ এই কথাটা এখন কাউকে বলবেন না। যদি এখন কথাটা গোপন রাখেন, তাহলে পরবর্তী সব আপডেট জানানো হবে আপনাকে।”

নয়নার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল।

অনিকেত বলল, “কী হয়েছে, সুনয়না?”

নয়না ফিসফিস করে কিছু বলল, কিন্তু তার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। ফ্লোরে বসে পড়ল নয়না।

🌿
দুঃস্বপ্নের মতো ভয়ংকর একটা রাতের পর অবশেষে নতুন ভোরের আলো ফুটেছে। নয়না হসপিটালের কেবিনের এক কোণে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করল। নামাজ শেষে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, “আমি কী করে মেনে নেব যে তুই আর এই পৃথিবীতে নেই! এভাবে কেন ফাঁকি দিলি আমাকে? একবার কি আমার সাথে দেখা করতে পারতি না?”

নয়নার ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উঠল। কাঁপা-কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে—তুষির কাফন জড়ানো ছবি। কবরের ছবি। নিচে তুষির কবরের ঠিকানা লেখা। নয়না চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিল।

মিতা বেগম হাতের ইশারায় নয়নাকে কাছে ডাকছেন।

নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে মিতা বেগমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

মিতা বেগম বললেন, “কাঁদিস কেন? আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি। বাসায় যাব কখন আমরা?”

মিতা বেগম নয়নাকে আরও কাছে ডাকলেন। এরপর নিজের হাতে নয়নার চোখের পানি মুছে দিলেন।

নয়না মুখ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। সহ্য করতে না পেরে কেবিন থেকে বেরিয়ে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। কান্না করতে করতে নয়না কথা বলতে পারছে না।

জিয়ান নয়নাকে জড়িয়ে রেখেছে। নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কী হয়েছে তোমার, জান? বলো আমাকে?”

নয়না মুখ থেকে কথা বের করতে পারল না। নিজের মোবাইলটা জিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিল।

জিয়ান ছবিগুলো দেখে বলল, “এটা কি তুষি?”

নয়না হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।

জিয়ান নয়নাকে আরও গভীর মমতায় জড়িয়ে ধরে বলল, “শান্ত হও। আম্মুকে বাসায় রেখে আমরা যাব আড়াইহাজার।”

সবাই মিলে একসাথে চৌধুরী বাড়িতে এল সকাল নয়টায়। নয়না কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে।

মিতা বেগমকে নামিয়ে দিয়ে জিয়ান আর নয়না চলে গেল।

নাজিম চৌধুরী, অনিকেত, ঈশান, মেহনুর বাসায় এল।

মিতা বেগমকে বাসায় রেখে অনিকেত বলল, “আন্টি, আমার তো হসপিটালে ডিউটি আছে। এখন আমাকে যেতে হবে। পরে এক সময় আসব।”

ডাক্তার ঈশান আর ডাক্তার অনিকেত একসাথে চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হল। পাশের বিল্ডিংয়ের বারান্দা থেকে দুজন মেয়ে বলল, “চৌধুরী বাড়ি নাকি হ্যান্ডসাম গার্ডেন! ইয়ার, এই বাসার ছেলেগুলো জাস্ট মাখন!”

“মাখন হলেও বা কী? একটাকেও তো পটাতে পারিনি।”

“বাদ দে, আমাদের পেছনে ঘুরে যতসব ফাতরা পোলাপান। এরকম একটা হ্যান্ডসাম, গুডলুকিং ছেলে কি আমাদের পটাতে আসতে পারে না?”

আরেকজন হেসে বলল, “যেয়ে দেখ, এদেরকেই মেয়েরা পটায়।”

“নাহ, পটাবে ছেলেরা।”

“বাদ দে, যে পটাক আমাদের কী?”

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply