সুখময় যন্ত্রনা তুমি সিজন ২ পর্ব ২
neela_rahman
দুপুরে বাসায় এলেন হুমায়ূন রহমান ও ফজলুর রহমান ।সাদাফ একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল শাওয়ার নেয়ার পর খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই।
ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে সাদাফ রুম থেকে বের হল নিচে নামার উদ্দেশ্যে তখন ই নুরের রুমের কাছাকাছি এসে মনে পড়ল নূরকে এই রুমে ঢুকতে দেখেছিল ।পায়ের কদম ধীরে করে এগিয়ে যেতে লাগলো সিঁড়ির কাছে ঠিক তখনই গান শুনতে পেল নূরের কন্ঠে__
তুমি কি বলো আসবে ?
পথ ভোলা নদীর দেশে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসাবো হৃদয়
হবো দুজন মোরা সাথী…….
সাদাফ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল দরজার কাছাকাছি এসে ।পা থেমে গেল সাদাফের ।পা যেন চলছে না ।এক মুহূর্তে গান শুনে ইমপ্রেস হলেও পরমুহূর্তে চিন্তা করল কি পাকনা মেয়ে এতটুকু বয়সে এই ধরনের গান গায়।
তাই কোন কিছু না ভেবে পা চালিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো
ভাববে না এই মেয়েকে নিয়ে সাদাফ।
নিচে এসে দেখলো হুমায়ুন রহমান এবং ফজলুর রহমান সোফার রুমে সাদাফের জন্যই অপেক্ষা করছিল ।সাদাফ ঘুমিয়ে গেছে তাই ডেকে ডিস্টার্ব করেনি ভাবলো এত দূর থেকে জার্নি করে এসেছে ছেলেটা একটু ঘুমোক।
হুমায়ন রহমানকে দেখে পা দুটো চালিয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,” কেমন আছো বাবা?”
হুমায়ূন রহমান সাদাফের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন ,”ভালো আছি তুই কেমন আছিস ?এতদূর জানি করে এসেছিস শরীর ভালো আছে?”
সাদাফ হুমায়ূন রহমানকে ছেড়ে দিয়ে বললো,” হ্যাঁ বাবা কোন সমস্যা নেই ।রেস্ট নিয়েছিলাম ।”
তারপর ডান দিকে তাকিয়ে ফজলুর রহমানকে দেখে ফজলুর রহমান কেউ জড়িয়ে ধরলো।একটু ইতস্তত বোধ হচ্ছিল কিন্তু ছোট আব্বু সাদাবকে অনেক ভালোবাসে ছোটবেলা থেকে অনেক আদর করেছে।
ফজলুর রহমান সব ভুলে গিয়ে সাদাফ কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন ,”ভালো আছিস তুই?”
সাদাফ ফজলুর রহমানকে ছেড়ে বললেন ,”ভালো আছি আব্বু।”
এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে নাম ছিল সাইমন।
সাইমন এসে সাদাফ কে দেখে বলল,” কেমন আছো ভাইয়া ?”
সাদাফ বললো,” ভালো।তুই কেমন আছিস?”
৬ বছর আগে নুর রিমা ছোট থাকলেও সাইমন অতটাও ছোট ছিল না ।সবকিছু জানে ।তাই বললো,” হ্যাঁ এইতো ভালো ।”
আর কিছু বললো না সাদাফ।
নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম টেবিলে খাবার রাখছিলেন সবার জন্য।খাবার সময় হয়ে গিয়েছে ।এমন সময় রুম থেকে ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় বেরিয়ে আসলো তানিয়া।
তানিয়া একটা জিনস আর টি-শার্ট পরে আছে।উপরে একটি পাতলা চাদর। ডিসেম্বর মাস।হালকা শীত শীত ভাব।
তানিয়াকে দেখে ফজলুর রহমান অবাক হলেন ।”ওকে ?ওকে তো কখনো দেখেনি ?”বললো ফজলুর রহমান।হুমায়ুন রহমান জানে এই মেয়ে তানিয়া যার কথা সাদাফ বলেছিল আমেরিকা থাকতে।
ফজলুর রহমানের সামনে সাদাফের কেমন যেন লাগছে ।জিজ্ঞেস করলে কি বলে পরিচয় করিয়ে দিবে যেখানে ফজলুর রহমান শুধু ছোট আব্বুই নয় বরং ………..আর কিছু ভাবতে পারছে না সাদাফ।কেন এ ধরনের সিচুয়েশনে পড়তে হলো ?বাবা যদি আগে থেকে বলে দিত ছোট আব্বুরা এখানে থাকে তাহলে হয়তো এ সিচুয়েশনে পড়তে হতো না।মনে মনে ভাবলো সাদাফ।
তানিয়া হেঁটে এসে সাদাফের পাশে দাঁড়ালো ।দাঁড়িয়ে হুমায়ূন রহমান ও ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললো,”হ্যালো আঙ্কেল ।কেমন আছেন ?”
“এইতো ভালো আছি মা ।তুমি কেমন আছো ?”বললেন হুমায়ূন রহমান।
ফজলুর রহমান বললেন ,”ওকে ?ও কে তো চিনতে পারছি না ভাইয়া ?”
হুমায়ূন রহমান বললেন ,”সাদাফের বন্ধু ।একসাথে এসেছে।”
ফজলুর রহমান চুপ হয়ে গেলেন সাদাফের বন্ধু কথাটি শুনে ।ছেলে মেয়ে বন্ধু আমেরিকা থেকে একসাথে এসেছে কথাটা যেন খুব একটা হজম হলো না তবে উনি অতীত ভুলে যেতে চান ।ভবিষ্যৎ নিয়ে থাকতে চান তাই আর কথা ঘাটাতে চাইলো না । বললো,” ঠিক আছে ভাইয়া চলেন দুপুরে খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। “
মুখ ফুটে কিছু না বলুক মনে মনে হয়তো অতটাও মেনে নিতে পারছে না ফজলুর রহমান ।
হুমায়ূন রহমান বুঝতে পারছে ভাইয়ের মনের পরিস্থিতি হয়তো ফজলুর রহমানের জায়গায় উনি থাকলে উনিও সেম জিনিসটাই ভাবতেন কিন্তু সিচুয়েশনটা হঠাৎ করে এমন হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি ।সাদাফ ও তো বলে আসেনি ।সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আসলে সবাই কে শকড দিয়ে দিয়েছে।
রিমা ও নূর সোজা গিয়ে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার পেতে বসে পড়ল ।এদিকে তানিয়া এসে দেখছে কোন সিটে বসবে ।একটি চেয়ারে বসল সাদাফ। পাশে চেয়ারে নূর বসে আছে ।তানিয়া বললো নূরের দিকে তাকিয়ে ,”এক্সকিউজ মি তুমি কি উঠে যাবে অন্য কোন সিটে?ওখানে চেয়ার খালি আছে।”
সাদাফ অবাক হয়ে গেল এই ছোট্ট একটা বিষয়ে চেয়ার বদলা বদলি কি দরকার আছে ? নুর আগেই বসেছিলো।সাদাফ পরে এসেছে।আর তাছাড়া এক জায়গায় বসে খেলেই তো হত ।সাদাফ তানিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই নূর চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল ।নূরের আত্মসম্মানবোধ-প্রখর ।এমনি এই বাড়িতে থাকছে এটা নূরের খুব একটা পছন্দ নয় ।তার উপরে আবার যদি বলে খাওয়ার সময় চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে তাহলে বসবে না আর চেয়ারে।তাই নুর সাথে সাথে উঠে গেলো।পুরো ঘটনায় অবাক হয়ে গেল বাড়ির সবাই ।ফজলুর রহমানের রাগ হচ্ছে ভীষণ রাগ হচ্ছে ।মেয়েটা ফজলুর রহমানের কলিজা ।খাবার সময় মেয়েটা এভাবে উঠে গেল কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না ভদ্রতার খাতিরে চুপ করে রইল।
সাদাফ মনে মনে একটু বিরক্ত হলো তানিয়ার উপর ।সাদাফ নুরের উঠে যাওয়া দেখে ভেবেছিলো নুর উঠে গিয়ে অন্য কোন চেয়ারে বসবে কিন্তু না ।নুর সবাইকে অবাক করে দিয়ে খাবারে প্লেট নিয়ে সোজা হেটে চলে গেল সোফার রুমে ।অথচ অনেকগুলো চেয়ার খালি ছিল ।সাদাফ বুঝতে পারলো এ পাকনা মেয়েরর আত্মসম্মান একটু বেশি প্রখর।
সামিহা বেগম চুপ করে ছিলেন কিছু বললেন না ।সামিহা বেগম এই বাড়িতে আসতে চাইনি শুধু হুমায়ন রহমানের জোড়াজুড়িতে আসতে হয়েছে। নওরিন আফরোজ যেন রাগে ক্ষোভে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন ।এখন আর তানিয়াকে পছন্দ হচ্ছে না নওরিন আফরোজ এর ।বান্ধবী আছে ঠিক আছে কিন্তু এতটা অধিকারবোধ কেন ?বাড়ির মেয়েকে কেন সিট থেকে উঠতে হবে ও যেয়ে কোন একটি খালি চেয়ারে বসে পড়তে পারতো।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রিমা ও খাবারে প্লেট নিয়ে উঠলো ।উঠে বললো,” আমি নুরের সাথে সোফার রুমে খেয়ে ফেলছি তোমরা এখানে খাও সমস্যা নেই।”
সাইমনের সাথে সাথে উঠে গেল প্লেট নিয়ে । বললো,”আমরা তিনজনই ওখানে খাচ্ছি ।তোমরা এখানে খাও ।”
পুরো ব্যাপারটায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সাদাফ।কি থেকে কি হয়ে গেল ! সবাই একসাথে খাবে তা না শুধুমাত্র একটি বিষয়ের জন্য যেন সবার ভিতরে একটি অসন্তোষ সৃষ্টি হলো ।রাগ উঠলো নূরের উপরও সাদাফের।কি হতো যদি একটু পাশে চেয়ারে যেয়ে বসতো ?এতোটুকু পুচকি মেয়ে কেন এত আত্মসম্মানবোধ দেখাতে হবে ?খাবার টেবিলে পরিবেশটাও নষ্ট করে ফেলল।
নওরিন আফরোজ খাবার সার্ভ করছে সাথে সামিহা বেগম ।সবাই চুপচাপ খাচ্ছে সাদাফ ও খাচ্ছে আর বারবার অবচেতন মনেই আনমনে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে নূরের দিকে ।আর যেন রাগ ধীরে ধীরে বাড়ছে।সবাই একসাথে খেতে চেয়েছিল তা না খাবারের টেবিলে এসেই এরকম একটা সিন ক্রিয়েট করতে হলো ।কি হতো যদি একটু মেনে নিত তানিয়ার উপর তো রাগ হয়েছেই সাথে সাথে রাগ যেয়ে পরল নুরের উপরেও।
খাওয়া শেষ করে প্রত্যেকে যার যার রুমে চলে গেল ।সাদাফ জানালো সাদাফ আর একটু ঘুমাবে ওর খারাপ লাগছে ।আসলে সিচুয়েশন থেকে পালাতে চাইছে সাদাফ খাওয়ার টেবিলে যা হলো এরপরে সবার দিকে তাকাতে একটু লজ্জা পাচ্ছিল ।তানিয়া ও নিজের রুমে চলে গেল ।এত কিছু হয়ে গেছে তানিয়ার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
সন্ধ্যা ছয়টা নওরিন আফরোজ কফি বানিয়েছে সাদাফের জন্য ।বাসায় থাকতে এই সময়টা কফি খেতো ছেলেটা ।এমন সময় নুর উপরে দিকে যাচ্ছে।নওরিন আফরোজ কিছুক্ষণ নুরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।তারপর মনে মনে ভাবলেন কিছু একটা ।বললেন,”নুর একটু এদিকে আয় তো মা ?”
নুর বড় আম্মুর ডাক শুনে উপেক্ষা করল না ।সাথে সাথে এসে বললো,” জি আম্মু ডেকেছিলে?”
নরিন আফরোজ একটি ট্রেতে একটি কফির মগ এবং সাথে কিছু স্ন্যাকস দিয়ে বললো যা তো সাদাফের রুমে দিয়ে আয়।”
নুর অবাক হয়ে গেল ।নুর যাবে সাদাফের রুমে কফি দিতে ?
নুর মুখ খুলে বললো,” আম্মু আমি কেন অন্য কাউকে দিয়ে পাঠাও না। আমার লজ্জা করবে উনাকে যেয়ে কফি দিতে। যদি আমার উপর যদি রেগে যায় ঘুম থেকে ডাকার কারণে তখন?”
নওরিন আফরোজ মুচকি হাসলেন ।তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললেন,” সাদাফ রেগে গেলে তুই মনে হয় চুপ করে থাকবি ?তোকে মনে হয় আমি চিনি না ?তুই যখন মুখ খুলবি তখনই তো বো*মা ফটবে ।”
নুর লজ্জা পেয়ে হাসলো ।তারপর বললো,” এজন্যই তো যেতে চাচ্ছি না ।আজকে মাত্র এসেছে যদি আমার চটর পটর শুনে ফেলে তাহলে কি ভাববে বলতো?”
সত্য হচ্ছে এই পরপর দুটি ঘটনার কারণে নূর আর যেতে চায় না এই লোকের সামনে ।সকালে যখন নুর উচ্ছাসিত হয়েছিলো সাদাফ ভাই আসাতে তখন সাদাফ ধমক দিয়েছিল তানিয়াকে কেন রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে না তাই।আর দুপুরে খাবার টেবিলেও সবার সামনে খাবার নিয়ে উঠে যেতে হয়েছে ।এজন্য আর এই লোকের সামনে যেয়ে কোন কথা বলতে চায় না নূর।
বড়মার আদেশ তাই বাধ্য হয়ে কফি নিয়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে গেল নূর ।দেখল রুমের দরজা চাপানো ।তাই নক না করে ঢুকে পড়ল হঠাৎ ।ঢুকে দেখলো সাদাফ ভাই মাত্র ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে খালি গায়ে একটি হাফপ্যান্ট পড়ে বেরিয়েছে ।নুর অবাক চোখে চেয়ে রইলো সাদাফের দিকে।
নুরকে ঢুকতে দেখা মাত্রই সাদাফ সাথে সাথে বললো,” কি ব্যাপার হোয়াট আর ইউ ডুইং ?আমার রুমে নক না করে প্রবেশ করেছিস কেন?
সাদাফ কে এই অবস্থায় দেখে নূরের ভিতরে যেন কিছু একটা হল ।যেন হৃদয়ের গতিবেগ থেমে গেল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে নুরের ।কিন্তু নূর ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে এলো ।দৃষ্টি এখনো নিবদ্ধ সাদাফের দিকে ।সাদাফ নুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো,” কি চাই?”
নূরের ঘোর কাটল সাদাফের কথায়।সাথে সাথে ভাবনা থেকে বের হলো।মনে মনে বললো,” ছি কি দেখছিল বা কি ভাবছিল ?সাথে সাথে বললো,”চকলেট জুয়েলারি শ্যাম্পু সাবান লোশন কন্ডিশনার হুদা বিউটির আইশ্যাডো প্যালেট আইফোন আর ……….
সাদাফ সাথে সাথে বলে উঠলো,” মানে ?কি বলতে চাইছিস তুই ?”
নুর বললো,” না এগুলো চাই না ।বড় আম্মু কফি দিয়ে পাঠালেন ।বললেন আপনাকে দিতে তাই নিয়ে আসলাম ।”
সাদা বললো,” যাই হোক এরপর থেকে দরোজায় নক করে তারপর ঢুকবি হুটহাট আমার রুমে ঢুকবি না।”
নুর অবাক হয়ে বললো,” আপনি কি মেয়ে মানুষ নাকি ?আপনার কি লুকানোর অনেক কিছু আছে যে নক করে ঢুকতে হবে ?”
সাদাফ বললো,” দেখ নূর মুখে মুখে তর্ক আমার পছন্দ না ।”
নুর বললো,” বড় আম্মু পাঠিয়েছে কফি নিয়ে তাই এসেছি ।আপনার পছন্দ-অপছন্দের হিসাব করতে আসিনি ।”বলে কফি রেখে চলে গেল নুর।
সাদাফ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল নূরের যাওয়ার দিকে ।এই পুচকি মেয়ে কিনা ওকে অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেল ।তাও যেতে যেতে বললো পছন্দ অপছন্দের হিসেব করতে আসেনি ?কত বড় দুঃসাহস হলে এই ধরনের আচরণ করে সাদাফের সাথে।
হুমায়ূণ রহমান দাঁড়িয়ে আছে উল্টো পাশ হয়ে ।ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ।রুমের দরজা বন্ধ । পিনপতন নিরবতা।যেন বাবা ছেলে কোন গোপন কথা বলতে চাইছে তাই কাউকে এখানে প্রবেশ করানো হয়নি
নীরবতা ভেঙে সাদাফ বললো,” আমি ডিভোর্স দিতে এসেছি বাবা ।তুমি নিশ্চয়ই ভালো করেই জানো ছয় বছর আগে জোর করে যে বিয়ে আমাকে করিয়েছিলে সেটা আমি তখনও মেনে নেইনি এখনো মেনে নিব না ।তাই কিভাবে ডিভোর্স করাবে করিয়ে দাও। বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দাদীর অসুস্থতার দোহাই দিয়ে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিয়েছো ।তাই আমি সেখান থেকে সাথে সাথে চলে এসেছিলাম ।ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দিয়েছো তখন আমার ২০ ২১ বছর বাবা নুরের বয়স মাত্র নয় কি দশ। শুধুমাত্র দাদীর শেষ ইচ্ছার কথা বলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করিয়েছিলে দুই ভাই।বলেছিলে বিদেশ থেকে আসার আগেই সব ঝামেলা মিটমাট করিয়ে দিবে।
এখন তো এসে দেখছি ছোট আব্বুর ফুল ফ্যামিলি নুর সবাই এখানেই থাকছে ।ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেছে বলতো ?কতটুকু লজ্জাজনক সিচুয়েশনে আমিও পড়েছি ?নুর না হয় কিছু জানে না বাকি আমরা সবাই তো সবকিছু জানি তাই না?”
হুমায়ূন রহমান মুখ খুললেন। বললেন,”বিয়েটাই যেহেতু মানিস না তাই ডিভোর্স নিয়ে এত ঝামেলা কিসের ?আর তাছাড়া ডিভোর্স হতে হলে তো কিছুদিন সময় লাগবে ।নুরের সাইন লাগবে আর যদি শুধু মুখে মুখে দিতে চাস তাহলেও তো হবে না ।নুরকে সামনে রেখে তোর ডিভোর্স দিতে হবে । আমাকে সপ্তাহ খানেক সময় দে ।এই সময়ের মধ্যে নূর যেন জানতে না পারে নূরের কাছ থেকে যেভাবে ছোটবেলায় মিথ্যা বলে সাইন করিয়ে বিয়ে করিয়ে দিয়েছিলাম এখনো নুরকে না জানিয়ে মিথ্যে বলে সাইন করিয়ে তোকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো। আমি চাইনা নুর ভুলেও কখনো জানতে পারুক তোর সাথে ওর কখনো বিয়ে হয়েছে ।তুই ওর ফেলে যাওয়া স্বামী যেই স্বামী ওকে কখনো মেনে নেয়নি ।আমি চাইনা নুরের কখনো অবচেতন মনেও জানুক ও কখনো তোর স্ত্রী ছিল।”
নুর এর স্ত্রী ও নূরের স্বামী কথাগুলো বারবার কানের কাছে শুনতে শুনতে সাদাফের যেন হঠাৎ করে কেমন লাগছে ।ভালো লাগছে না এই কথাগুলো শুনতে ।যে কথাগুলো ভুলে যেতে চায় সাদাফ কিন্তু অবচেতন মনে বারবার মনে চলে আসে ।নুর ওর বিবাহিত স্ত্রী কিন্তু সাদাফ এই সম্পর্ক মানে না ।তখনও মানেনি জেদের বসে এখনো মানবে না। জেদ করে তখন মানি না বলে ফেলে চলে গিয়েছিল এখনো সেই জেদ পুষে রেখেছে সাদাফ।কোন সমস্যা নেই মানতে কিন্তু সাদাফ এ বিয়ে মানে না তাছাড়া আমেরিকায় গিয়ে তিন বছর পর তানিয়ার সাথে পরিচয় হয় ।তানিয়া যখন ওকে প্রপোজ করে প্রথমে মেনে না নিলেও বাংলাদেশে আসার ছয় মাস আগে তানিয়ার প্রস্তাবের রাজি হয় সাদাফ।
যদিও তানিয়া সাথে সেই রকম কোন প্রেম ভালোবাসা নেই শুধু বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে সাদাফ কারণ সাদাফ জানে সাদাফের বিয়ে হয়েছে ।নুর ওর বিবাহিত স্ত্রী তাই নূরকে ডিভোর্স দেওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো সম্পর্কে এটলিস্ট ধর্মীয়ভাবে বা মন থেকে জড়াতে চায়না সাদাফ।
তানিয়াকে বিয়ে করবে বলেছে নূরের সাথে ডিভোর্স হলে বিয়ে করবে এর আগে তো সম্ভব নয় ।তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সাদাফ।
বাবা ছেলের এই গোপন কথা কেউ আর শুনলো না ।জানলো না ।হুমায়ুন রহমান এক সপ্তাহের সময় নিয়েছে নুরকে ভুলিয়েভালিয়ে কোনভাবে সিগনেচার নিয়ে ডিভোর্স করিয়ে দিবে ।নুরকে কখনোই জানতে দিবেনা সাদাফের সাথে কখনো ওর বিয়ে হয়েছিল। বয়স অল্প হলেও নুরের আত্মসম্মানবোধ প্রখর বুঝতে পারে হুমায়ূন রহমান ।বিশেষ করে আজ খাওয়ার টেবিলে যা হল নূর যদি কোনভাবে শুনতে পারে বিয়ে হয়েছিল এবং সাদাফ ওকে মেনে নেয়নি নূরের আত্মসম্মানবোধ নুরকে কোন অবস্থায় নিয়ে যাবে চিন্তাও করতে পারে না হুমায়ুন রহমান।
পরদিন সকাল।আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসার ফলে সাদাফ ঠিক মতো ঘুমাতে পারছে না ।সাদাফের ভোর সাতটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে ।অনেকক্ষণ চেষ্টা করেছিল ঘুমাতে পারেনি।তাই ভাবলো কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাজা হাওয়া খেয়ে পরে আবার ঘুম দিবে।
এমন সময় সাদাফ লক্ষ্য করল পেয়ারা গাছ থেকে কথা ভেসে আসছে ।একটি মেয়েলি কন্ঠ ।মেয়েলি কন্ঠটিও চিনতে খুব একটা সমস্যা হলো না সাদাফের ।সাদাফ বারান্দার গ্রিল দিয়ে একটু উঁকি মেরে পেয়ারা গাছের দিকে তাকিয়ে দেখলো গাছে বসে পেয়ারা খাচ্ছে কাঠবিড়ালির মত নূর।
পা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে গাছে বসে পেয়ারা খাচ্ছে আর কিছু একটা নিয়ে অভিযোগ করছে গাছের কাছে ।সাদাফ একটু কান খাড়া করল শোনার চেষ্টা করল কি বলছে।
নুর খাচ্ছে আর গাছের সাথে কথা বলছে।”বুঝলি পেয়ারা গাছ আমার স্কুলের একটা ছেলে না আমাকে প্রপোজ করেছে ।বলেছে আমি নাকি দেখতে অনেক সুন্দরী আর আমার গালে টোল পরলে নাকি ফিদা হয়ে যায় ।ফিদা মানে বুঝিস ?মানে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।”
সাদাফ অবাক হয়ে গেল এই পুচকির মেয়ের এত পাকনা মার্কা কথা শুনে ।আর কি বললো,” একটা ছেলে স্কুলে ওকে প্রপোজ করেছে ?ওর গালের হাসি টোল দেখলে নাকি ছেলের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় ?”
সাদাফ মনে করল চোখ বন্ধ করে ওর গালে টোল পড়ে।হ্যাঁ টোল পরলে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগে আর পেয়ারা খাওয়ার সময় সাদাফ লক্ষ্য করেছে দাঁতগুলো ভীষণ সুন্দর।
তাই বলে এই ১৬-১৭ বছর বয়সী একটা মেয়েকে দেখলে একটা ছেলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় ?এটা আবার গর্ব করে গাছের সাথে বলছে ?ভিতরে ভিতরে হাসি আসলেও চেহারায় গুরুগম্বীর ভাব বজায় রাখলো সাদাফ।
শুনতে পেল আবার গাছের সাথে বলছে ,”আমার আবার এইসব ছেলে পছন্দ না বুঝলি ?আমার পছন্দ অনেক লম্বাচুরা হবে ফর্সা হবে মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি মোছ থাকবে ।হ্যান্ডসাম হবে যেন হেটে গেলে মনে হবে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা হেটে যাচ্ছে।”
সাদাফ অবাক হয়ে মনে করার চেষ্টা করল সিদ্ধার্থ মালহোত্রা কে?কার কথা বলছে?
চলবে_
গল্প টার নাম পরিবর্তন করবো। অবশ্য কারন আছে।আগেই জানিয়ে রাখছি। পরিবর্তন করলে বলেই করবো।
Share On:
TAGS: এক শ্রাবণ মেঘের দিনে, নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রনা তুমি সিজন ২
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৪৮+১৪৯+১৫০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৬
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৫৮+১৫৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১+৩২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১