Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৪৮+১৪৯+১৫০


সুখময়যন্ত্রনাতুমি পর্ব ১৪৮

inspirational

valentinesday

neela_rahman

সাদাফ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।নুরের কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে ।আজকে নিজের বাড়িতে এভাবে সাদাফের ঘরে বসে সাদাফের চুল টেনে দিচ্ছে নুর।কিছুক্ষণ পর আমতা আমতা করে বললো,” চুলে তেল দিয়ে এখন আমি রুমে যাই ।”

সাদাফ বললো,” না যেতে হবে না।”

বলেই নূরের কোমর পেঁচিয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিল সাদাব ।নূর যেন থ হয়ে গেল ।ঠিক এই জিনিসটা কে ভয় পাচ্ছিল নুর ।এখন কি করে যাবে রুমে।ভালো করে জানে নুর সাদাফ ওকে মোটেও যেতে দিবে না।

সাদাফের স্পর্শ ধীরে ধীরে গভীর হতে লাগলো ।সাদাফ মুখ তুলে তাকাল নুরের দিকে ।নূর তাকিয়ে আছে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সাদাফের দিকে ।কেমন যেন লাগছে সংকোচ বোধ হচ্ছে নূরের অনেক ।সবচাইতে বড় সংকোচ এটাই যে আজকে এই বাড়িতে সবাই আছে সাদাফের রুমে লজ্জা কাটাতে পারছে না নূর।

নুর আবার আমতা আমতা করে বললো,” প্লিজ যাই না আর তো মাত্র কয়েকটা দিন ।”

সাদাফ বললো ,”না আর কয়েকটা দিন কেন একটা দিন ও একটা মুহূর্ত আমি তোকে ছাড়া থাকবো না ।”

বলেই নূরকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিল সাদাফ।

সারাদিন আমাকে অনেক জ্বালা যন্ত্রণা দিয়েছিস অনেক প্যারায় রেখেছিস এখন তোর পালা শোধ বোধ করব ।”

বলেই নূরের ঠোঁট আঁকড়ে ধরল সাদাফ।

সকাল ৯ টা।দরজা নক করা শব্দে সাদাফের ঘুম ভেঙে গেল। নূরের দিকে তাকালো ।দেখলো নূরের মাত্র ঘুম ভে*ঙেছে ।চোখ পিটপিট করে তাকালো সাদাফের দিকে তাকিয়ে ঘুমো ঘুমো অবস্থায় বললো,” নূর যাকে যেন নক করছে যেয়ে দরজা খোল।

নুর অবাক হয়ে গেল ।সারারাত সাদাফের রুমে ছিল এখন বাহিরে কেউ নক করছে তার মানে এখন যেই হোক দেখে ফেলবে নূর এই রুমে ।নূর চেয়েছিল সকাল ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে চুপিচুপি চলে যাবে দেখবে না।

নুরের নিজের চুল নিজের ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে ।নুর সাদাফের দিকে তাকিয়ে স্পষ্টভাবে না করে দিল । বললো,” আমি পারবো না আপনি যেয়ে দরজা খুলেন ।বারবার বলেছিলাম আমি রাতেই চলে যাই আপনি আমাকে যেতে দিলেন না।”

সাদাফ বললো,” তো কি হয়েছে নিজের স্বামীর ঘরে আছিস ।অন্য কারো ঘরে না ।যা তো যেয়ে দরজাটা খোল ।পা*গলামি করিস না ।যা প্লিজ।সারারাত আমি অনেক ক্লান্ত পরিশ্রম করেছি অনেক খাটিয়েছিস আমাকে ।এবার একটু ঘুমাতে দে প্লিজ যেয়ে দরজাটা খোল।”

নুর বললো,”আমি খাটিয়েছি মানে?
অসম্ভব আমি খুলতে পারবো না ।”

বলে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিল নুর ।সাদাফ অবাক হয়ে গেল ।কি আর করবে নিজেই উঠল ।উঠে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে এগিয়ে দরজা খুলতেই নওরিন আফরোজ বললো ,”ঘুম থেকে উঠেছিস ?ও সরি ডিস্টার্ব করলাম তুই তো এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস না ।তাই আর কি ভাবলাম বলে …….এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো ।”

সাদাফ বললো ,”কি হয়েছে কি দেখছো ?”

নওরিন আফরোজ বললেন,” নূর কোথায়? সবাই নিচে আছে নুরকে ওর রুমে পাঠা ।কেউ দেখবে না ।”

বলেই নওরিন আফরোজ চুপচাপ চলে গেল ।সাদাফ হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে এই প্রথম মায়ের সামনে একটু লজ্জা পেল সাদাফ।এবার বুঝতে পারল নুর কেন ওয়াশরুমে দৌড় দিয়েছে।

সাদাফ দরজা লাগিয়ে ঘুরেই ওয়াশরুম পর্যন্ত গেল। দরজা নক করে বললো,” এবার বের হ চলে গিয়েছে ।”

ধীরে ধীরে ওয়াশরুমের দরজা খুললো নুর। বললো,” এখন কি হবে সবাই জেনে যাবে আমি এ রুমে ছিলাম ।সবকিছু আপনার জন্য।”

সাদাফ নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।হেসে নূরকে আরেকটু খ্যাপানোর জন্য বললো,” হ্যাঁ মা এসেছিল মা অলরেডি জেনে গিয়েছে তুই এখানে ।আর এখন সবাই সবকিছু জানবে এটাও জানবে তোর সাথে আমার রাতের বেলা সবকিছু হয়েছে।”

নূর সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” ছিঃ। আপনি এত বাজে লোক ।”

বলেই সাদাবকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল বের হবার উদ্দেশ্যে ।সাদাফ বললো,” এক মিনিট দাঁড়া।”

নুর দাঁড়ালো ।ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে দিকে তাকাতেই দেখলো সাদাফ প্রায় ওর কাছাকাছি চলে এসেছে ।নুর অবাক হলো ।সাদাফ দুহাতের আঁজলে নুরের মুখ টি ধরে কপালে একটি চু*মু খেলো ।তারপর বলল ,”আমার এমন লজ্জাবতী লাজুক লতা নূর খুব পছন্দ।”

নিজের রুমে যেতে যেতে হঠাৎ করে সামনে পড়লো রিমা ।নূর কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ।রিমা নুরকে দেখে মিষ্টি মিষ্টি হেসে নুরের দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল ,”কি ব্যাপার কোথায় ছিলি?”

নুর বলল ,”কোথায় থাকবো রুমে ছিলাম।”

রিমা বলল ,”রুমে তো ছিলি জানি কিন্তু কার রুমে ?তোর রুম থেকে মাত্র এলাম তুই রুমে ছিলিনা।”

নুর বললো,”একটু আগে ছিলাম ।আমি একটু বাহিরে গিয়েছিলাম ।”

রিমা বলল ,”আমি সকাল আটটা থেকে তোর রুমে শুয়ে ছিলাম ।দেখতে চাচ্ছিলাম তুই কখন আসিস ।”

নুর আর কিছুই বলতে পারলো না ।চুপচাপ মাথা নিচু করে ফেলল ।রিমার কাছে এসে বললো,”পাগলি লজ্জা পাচ্ছিস কেন ?ভাইয়া তোর বিয়ে করা স্বামী হয় থাকতেই পারিস ।আর তাছাড়া দুইদিন তো তার বাড়িতে থেকেও এসেছিলি ।তখন লজ্জা লাগেনি ?এখন লজ্জা লাগছে কেন? আর সম্পর্কে আমি তোর ননদ হই ননদ ।হ্যাঁ বয়সে বড় সম্পর্কে বোন ।মাত্র এক বছর বড় তাতে কি ?তুই আমাকে ননদ হিসেবে ট্রিট করবি। আমি তোকে ভাবি বলে ডাকবো কেমন?”
নুর লজ্জায় মুচকি হাসলো । বললো,” ঠিক আছে ।”

বলে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল ।রিমা নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

এদিকে খাবার টেবিলে বসে বিয়ের সমস্ত আয়োজন নিয়ে কথা বলছে ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান। সাদাফ গোসল করে একটি ট্রাউজার ও টি-শার্ট পরে নিচে নামছে ।নূর এখনো নিচে নামেনি ।সাদাফ বুঝতে পারছে নুরের লজ্জা লাগছে তাই একটু সময় দিলো নূরকে নিজে থেকে নিচে নামার।

সাদাফকে দেখে ফজলুর রহমান বললেন,” হ্যাঁ বস আমরা এভাবে প্লান করেছি এগুলো একটু দেখ।”
বাড়িতে নূরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলে একদমই নিষেধ ।তাই চিকিৎসা বিষয়ে যত কথা অফিসে গিয়ে বলবে সাদাফ এভাবেই জানিয়ে দিয়েছে সবাইকে।

বিয়ের প্ল্যান নিয়ে আলোচনা মাঝখানেই হঠাৎ খেয়াল করলো নূর ধীরে ধীরে চোরের মত সিঁড়ি দিয়ে নামছে ।না জানি রাতভর কি চুরি করেছে ধরা খাওয়ার ভয়ে নামছে ।সাদাফের হাসি পেল খুব হাসি পেলো।কিন্তু বাবাদের সামনে বা পরিবারে কারো সামনে হাসতে চাইলো না ।তাই দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে চুপচাপ দেখতে লাগলো।

নুর সবার সামনে এসে মাথা নিচু করে চেয়ার টেনে বসলো ।সাদাফ কাজের মাঝখানে খাবারের প্লেট নিয়ে নূরের প্লেটে সার্ভ করতে লাগলো ।ফজলুর রহমান তাকিয়ে রইলেন সাদাফের দিকে ।কতটা যত্ন নিচ্ছে নূরের ।দেখে উনি অভিভূত হলেন ।মনে মনে নিজেকে গালি দিলেন কত শত ।কয়েকটা দিন শুধু শুধু ছেলেটাকে কষ্ট দিয়েছে মেনে নেয়নি।

অথচ সাদাফ সবসময় নুরকে এভাবেই পাগলের মতো ভালোবাসতো ।জানতো তারপরও মনে কোথাও একটা সন্দেহ ছিল ।যাক সন্দেহটা দূর হয়েছে এখন আর কখনোই নুরকে সাদাফের কাছ থেকে দূরে রাখবে না ফজলুর রহমান।

চলবে__

সুখময়যন্ত্রনাতুমি পর্ব ১৪৯

inspirational

valentinesday

neela_rahman

আজ বিকালে যাবে নুর রিমা নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম সায়মন ও সাদাফ শপিং এ।পুরো বাড়ির যাবতীয় শপিং ও অন্যান্য কাপড়-চোপড় নূরের শাড়ি লেহেঙ্গা বাকি যা যা প্রয়োজনীয় শপিং করবে ।সাইমনের যা যা প্রয়োজন কিনে নিবে।সাথে রিমার ।

প্রথমে শুরু হল নূরের শপিং দিয়ে। লাল টুকটুকে একটি বেনারসি পছন্দ করলো ।সেটিও নেওয়া হলো। তবে সাদাফের পছন্দ হলো সিঁদুর রঙা বা অরেনজিস রেড টেইপের একটি শাড়ী।সাদাফের মন যেনো পরে আছে সেই শাড়ীর উপরে।তাই সবাই শাড়ীর দোকান থেকে একটু সরতেই সেই শাড়ীটিও সাদাফ চুপিচুপি নিয়ে নিল নূরের জন্য।

এরপর নূরের জন্য নেয়া হলো লেহেঙ্গা গোল্ডেন কালার।

একে একে ম্যাচিং করে সবকিছুই নেওয়া হল ।জুয়েলারি থেকে শুরু করে জুতা অর্নামেন্টস আরো অনেক কিছুই নেওয়া হলো নূরের ।সব কিছু নূরের পছন্দ এবং সবার পছন্দ অনুযায়ী।

এরপর শুরু হলো রিমার শপিং ।শপিং করতে করতে শপিং করা শেষ হয়ে গেলে রিমার একটি ছোট্ট আংটি খুব পছন্দ হলো ।সায়মন দুর থেকে খেয়াল করল। নিজের কাছে অনেক ছোট লাগছে সাইমনের কারণ সায়মনের কাছে টাকা নেই রিমার পছন্দ হয়েছে জেনেও জিনিসটা কিনে দিতে পারবে না ।এদিকে রিমা অনেক কিছু শপিং করার কারণে মুখ ফুটে আর আংটির কথাটি কাউকে বলল না।

সাদাফ সাইমনের দিকে তাকিয়ে বললো,” মন খারাপ কেন? কি হয়েছে ?কিছু লাগবে ?কিছু পছন্দ হয়েছে তোর টাকা লাগবে?

সায়মন আমতা আমতা করলো। সব সময় সাদাফের কাছ থেকে টাকা নেয় আজকে কেন যেন টাকা নিতে খুব লজ্জা লাগছিল ।সাইমন বললো ,”না ভাইয়া লাগবেনা ।”সাদাফ বুঝতে পেরেছিল সায়মনের কিছু একটা হয়তো পছন্দ হয়েছিল কারণ একটা আংটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে সাইমনকে।

ক্রেডিট কার্ডটি বের করে সাদাফ সায়মনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” আমার বিয়ে উপলক্ষে এটা তোর গিফট যা ইচ্ছা হয় শপিং কর কোন হেজিটেড করবি না আমার টাকা কি তোর টাকা না?”

সাইমন সাদাফ কে জড়িয়ে ধরে বললো,” ধন্যবাদ ভাইয়া ।অসংখ্য ধন্যবাদ ।আমি চাকরি পেয়ে প্রথম বেতন দিয়ে তোমাকে টাকাটা ফেরত দিয়ে দিব ।তবে এর আগে পরে যেগুলো নিয়েছি সেগুলো কিন্তু দিব না। আজকে যা খরচ করব সেই টাকাটাই তোমাকে ফেরত দিয়ে দিব।”

সাদাফ সায়মনকে ছেড়ে সাইমনের দিকে তাকিয়ে বললো,” ঠিক আছে দিস যা ইচ্ছা হয় দিস ।সমস্যা নেই ।কার্ড দিয়ে দিলাম যা ইচ্ছা হয় শপিং কর ।”

সাইমন চলে গেল দোকানের ভিতর ।সাদাফ জানে সায়মন একটি আংটি দেখেছিল কার জন্য দেখেছিল হয়তো সেটাও মনে মনে জানে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে সাদাফ কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলল না।

এদিকে নূর একটি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সামিহা বেগম ও নওরিন আফরোজ দোকানের ভিতর কিছু একটা দেখছে।সাদাফ এগিয়ে গেল নূরের কাছে ।গিয়ে বললো,” কি হয়েছে কিছু পছন্দ হয়েছে আর কিছু কিনবি?”

নুর বললো,” না আর কত শপিং করব ?অনেক শপিং করা হয়েছে ।”

সাদাফ বললো ,”তারপরও দেখ তোর বিয়ে যা যা ইচ্ছে হয় যা যা ভালো লাগে সব কিছু কিনে নে।

নুর বললো,” লাগবে না যদি মনে হয় কিছু প্রয়োজন তখন আপনাকে বলব নিয়ে যাবেন ।”

সাদাফ দাঁড়িয়ে রইলো।তারপর বললো,” দাড়া দুটো কফি নিয়ে আসি কফি খাই। আম্মুরা শপিং করুক।”

সাদাফ কফি নিয়ে চলে আসলো ।নূরের হাতে একটি দিয়ে কফি বললো,” আচ্ছা নুর হানিমুনে কোথায় যাবি?”

নুর অনেকক্ষণ ভাবলো ।ভেবে বললো ,”কক্সবাজার ।”

সাদাফ বললো ,”একটু বড়লোক হ ।স্বামীর টাকা হানিমুনে যাবি কক্সবাজার যাবি কেন ?দেশের বাইরে কোথায় যাবি ?আমেরিকা যাবি ?আমি যেখানে ৬ বছর ছিলাম কোথায় ছিলাম কিভাবে ছিলাম সব দেখিয়ে আনব।”

নূরের হাসিটা বন্ধ হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল আমেরিকা কেন ?তারপর ঠাস করে বলে ফেললো,” ও আপনার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়েছে ?আমেরিকা তাকে দেখতে যাবেন ?এত যখন মিস করছেন তাহলে নিয়ে আসলেন না কেন ?আর আপনি বা ফেরত আসলেন কেন?”

সাদাফ নুরের কথা শুনে ভাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ।কি বলে এই মেয়ে ?সাদাফ শুধু বলেছে আমেরিকা হানিমুনে নিয়ে যাবে ।সেখানে গার্লফ্রেন্ড হলো কোত্থেকে ?গার্লফ্রেন্ডকে মিস করবে কোত্থেকে ?আর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে কোত্থেকে ?কোন জায়গা থেকে কোন জায়গায় চলে গিয়েছে নূর ?এজন্যই বলে মেয়ে মানুষের কানে বেশি কথা দিতে নেই। ভুলে শুধু বলেছিল একটা মেয়ে ওকে পছন্দ করে।

সাদাফ চুপ করে রইল কিছুক্ষণ তারপর বললো,” এতগুলো কথা আমি কখন বললাম নূর?”

নুর বললো,” বলেন নি কিন্তু আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আপনি এগুলো বলতে চাচ্ছেন ।”

সাদাফ বললো,” ১৭ বছর বয়সে তুই এত পাকা পেকে গিয়েছিস তুই আমার চেহারা দেখে বলে দিতে পারিস আমি গার্লফ্রেন্ডকে মিস করছি যে গার্লফ্রেন্ড নেই?”

“ভুলেও ১৭ বছর বলে আমাকে ছোট হিসেবে ট্রিট করবেন না ।মনে রাখবেন আমি আপনার বউ হই। আর বউরা সবকিছু এমনি বুঝতে পারে ।আপনার চেহারা মধ্যে লেখা আছে আপনি মেয়েটাকে মিস করছেন।”বললো নুর।

সাদাফের মুখের ভাষা হারিয়ে গেল ।কি বলবে নূরকে ?বুঝে উঠতে পারছে না ।এজন্যই বলে বয়সে বেশি ছোট হলে বউ যা হয় আর কি ! না কিছু বলা যায় না তাদের পাকা কথা সহ্য করা যায়।
সাদাফ একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।তারপর নূরকে উচিৎ জবাব দেওয়ার জন্য বললো,” তুই ভুল বুঝেছিস ।আমি অন্য কিছু একটা মিস করছি ।”

নূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” কি মিস করছেন ?”

“গতকাল শুধু একবার হয়েছিল ।আমি মিনিমাম ৩-৪ বার মিস করছিলাম ।নিজের বাড়িতে বুঝতে পারছিস একটু এনার্জি বেশি ছিল।”বললো সাদাফ।

নূর সাদাফের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,” ছিঃ আপনি এত নোংরা কথা বলেন? দাঁড়াবো না আপনার সাথে আর ।”

বলেই দোকানের ভিতরে চলে গেল ।সাদাফ মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রইলো ।যাক উচিত জবাব দিতে পেরেছে ছোট্ট কাঁচামরিচ নূরকে।

চলবে_

সুখময়যন্ত্রনাতুমি পর্ব ১৫০

neela_rahman #valentinesday #promotion

শপিং শেষ করে বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে সময় হয়ে গেল রাত আটটা ।আজকে কেউ রান্নাবান্না করবে না ।বাহিরে থেকে খাবার অর্ডার করেছে সবাই আজকে বাহিরের খাবার খাবে ।এরই মধ্যে বাসায় পৌঁছে গিয়েছেন ফজলুর রহমান এবং হুমায়ুন রহমান তাদের সবার মন অনেক খুশি।

এই প্রথম বাড়িতে ধুমধাম করে বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে হবে আর ছোট মেয়ের ভাবতে পারছে না।

নুরের বিয়ে হলে হয়তো কান্নার রোল পড়ে যেত মেয়েটা বাড়ি থেকে চলে যাবে ভেবে কিন্তু এখন খুশীর যেন কোন সীমা নেই ।ছেলেও এই বাড়ির মেয়েও এবারের বিদায়ের কোন ফাংশন নেই শুধু আনন্দ আর আনন্দ ।রিমা এবং নূর সোফায় বসে গল্প করছে ।রিমা সিলেক্ট করছে হলুদের দিন ওরা কিভাবে কি করবে সবকিছু।
নুরের বন্ধু বান্ধবী কেউ রিমা ফোন করে দাওয়াত দিয়েছে ।নুরু কথা বলেছিল এর মধ্যে সাদাফ ও ওর ফ্রেন্ড সার্কেল সবাইকে তিন দিন আগে থেকে ইনভাইট করেছে ।সবাই এই বাড়িতেই থাকবে তিন দিন আগে থেকে।

সাবার হাসবেন্ড চলে এসেছে তবে অনেক কষ্ট করে রাজি করানো হয়েছে সাবাও দুইদিন আগে এই বাড়িতে চলে আসবে ।হলুদের দিন এবং বিয়ের দিন।

এর মধ্যে সাইমনেরও ফ্রেন্ড সার্কেল কিছু ইনভাইট করেছে খুব ধুমধাম হবে ।দুইদিন আগে থেকে বাড়িতে থাকার প্রিপারেশনের জন্য সব রুম সুন্দর করে গোছগাছ করানোর কাজে আগামীকাল থেকে লাগানো হবে লোক।

সাতটি রুম যা বিভিন্ন কারনে ব্যবহার হতো কিছু গেস্টরুম কিছু এমনি পড়ে থাকত সেগুলো সব পরিষ্কার করে ঢালাও বিছানা করে বন্ধু-বান্ধবদের জন্য রাখা হচ্ছে।

ফজলুর রহমান সাইমনের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”এই যে লিস্ট শুধু এই কয়েকজন লোককে তুই যেয়ে পার্সোনালি দাওয়াত দিয়ে আসবি ।সাইমন লিস্ট চেক করল ।বাবার দিকে তাকালো ।দেখল মাত্র এই কয়জন কম করে হলেও ৫০ জন। ঢাকা শহরে ৫০ লোকের বাড়িতে পার্সোনালি যেয়ে দাওয়াত দেওয়া তারপরও আবার সেই লোকেরা একেক জন একেক জায়গায় থাকে এটা যে কি ঝুককির কাজ কে বলবে?বাবা বুঝে শুনে কাজটা ওকে দিয়েছে।

সাইমন ঠিক করে ফেলল,” এই দুই দিনের মধ্যে এ দাওয়াতের কাজটা শেষ করবে ।বাইক নিয়ে বের হবে রিমা কে সাথে নিয়ে যাবে ।একা একা ও কখনো যাবে না। শুধু কি ওর বোনের বিয়ে নাকি ওর তো ভাইয়ের বিয়ে ওর ওতো কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

রাতের বেলা সবাই একসাথে ডিনারে বসেছে ।রাত ৯ টা ।সাদাফ নূরের প্লেটে কাঁটা বেছে বেছে মাছ দিচ্ছে ।নুর লজ্জা পেয়ে গেলো।সবার সামনে কি শুরু করেছে এই লোক?মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফজলুর রহমান ও সামিহা বেগম ।সামিহা বেগমের তো এমনি সাদাফতে জামাই হিসেবে ভীষণ পছন্দ ছেলে তো লক্ষী ছেলেই।

এত কিছু জানার পরও নূরের প্রতি সাদাফের ভালোবাসা মুগ্ধতা ও যত্ন দেখে সামিহা বেগমের চোখে পানি চলে আসলো ।সামিহা বেগম এক মুহূর্ত আর এখানে দাঁড়ালো না ।চোখের পানি মুছতে মুছতে কাউকে না দেখিয়েই রান্না ঘরে চলে গেল ।নওরেন আফরোজ খেয়াল করল। তরকারি আনার বাহানায় একটি বাটি নিয়ে নরিন আফরোজ পিছনে পিছনে রান্না ঘরে গেল ।দেখলো সামিহা বেগম রান্নাঘরে কোনায় বসে মুখ চেপে কান্না করছে।Nurun Nahar Nila

নওরিন আফরোজ সাথে সাথে গিয়ে ধরল সামিহা বেগম কে।বলল কি হয়েছে পা*গলামি করছিস কেন ?তুই এরকম কান্না করছিস চিন্তা করত যদি নূরের কানে কোনভাবে যায় ওর কি হবে ?সবকিছু ভুলার চেষ্টা করছে তোর কি মনে হয় নুর ভুলে গিয়েছে সব ?নূর অভিনয় করছে।

তাহলে আমরা যদি ওর কাছে ধরা খেয়ে যাই ও কোন ভাবে বুঝতে পারে আমাদের খারাপ লাগছে বাকি তাহলে ও কি মনে করবে বল ?ওর কষ্টটা যে আরো বেড়ে যাবে ।পাগলামি করিস না সামিহা চোখে পানি মোছ তাড়াতাড়ি বাইরে চল ।সামিহা বলল ,”আমি কি করবো ভাবি আমার যে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে মেয়ের দিকে তাকালে।”

কি করবি মানে ?শক্ত হবি ।আমরা সবাই সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিয়েছি তুইও মেনে নে ।ভাগ্যের উপরে কারো জোর নাই ।ওর বাবা ওর স্বামী সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে নুরের এই সমস্যাটা যেন দূর হয়ে যায় ।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ ।চল ।”বললেন নওরিন আফরোজ।

সামিহা বেগম ও উঠে দাঁড়ালেন।চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে বললেন,” ঠিক আছে চলো।আর কাঁদবো না।”

রাত এগারোটা ।শপিংমলে সেই যে নূর কে খ্যাপানোর জন্য কথাগুলো বলেছিল তারপর আর নূর সাদাফের সাথে সরাসরি কোন কথা বলেনি ।সাদাফের এখন ভালো লাগছে না ।রাত হয়েছে এখন যে নুর কে চাই একটু বুকে নিয়ে ঘুমাবে নুরকে ।কিন্তু এই পাগলি মেয়েকে কে বুঝাবে ?পাগলি মেয়ে আজকে নিশ্চয়ই আসবে না ।লজ্জায় ঘরে বসে থাকবে।

রিমা দরজা নক করার শব্দ পেয়ে জিজ্ঞেস করলো ,”কে?”

সাইমন বললো ,”আমি দরজা খোল ।”

রিমা উঠে এসে দরজা খুলে দিল ।সায়মন বাহিরে দাঁড়িয়ে রইল তারপর জিজ্ঞেস করল ,”আমি কি ভিতরে আসতে পারি?”

রিমা এবার অবাক হল ।সাইমনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো ,”অনুমতি কবে থেকে নেয়া শুরু করলে ?আগে তো ধুপ ধাপ রুমে চলে আসতে ।”

সাইমন বললো ,”আজকে থেকে অনুমতি নেওয়া শুরু করলাম ।আগের মত আর করা যাবে না।”

রিমা বলল ,”ঠিক আছে ভিতরে এসো ।”
সাইমন ভিতরে এসেই হাত বাড়িয়ে দিল রিমার দিকে ।রিমা অবাক হয়ে তাকালো হাতের দিকে । বললো,” কি ?সাইমন হাতের মুঠো খুলে দেখালো একটি আংটি।রিমা অবাক হয়ে তাকালো আংটির দিকে ।এটাতো দোকানে পছন্দ করেছিল রিমা কিন্তু কাউকে কিছু বলিনি।

সায়মন বুঝলো কি করে ?ভাবলো রিমা।তারপর রিমা সাথে সাথে আংটি টি হাতে নিয়ে বললো,” এই আংটি তুমি কি করে পেলে ?এটা তো অনেক দাম ছিল তুমি টাকা কোত্থেকে পেলে?”

সাইমন রিমা চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখে বললো,” টাকা পেয়েছি এক জায়গা থেকে তবে অনুভূতিটা আমার ।টাকাটা পরে চাকরি পেয়ে দিয়ে দিব বলেছি তবে এই যে অনুভূতিটা এই যে খুশি তোর চোখে আজকে দেখতে পারলাম এটা তো পড়ে দেখতে পেতাম না ।তাই সাথে সাথে নিয়ে নিয়েছি।”

রিমা হাতের আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” পরিয়ে দাও ।”
সাইমন রিমার দিকে একবার তাকালো ।তারপর হাতে আংটি পরিয়ে দিয়ে বললো,” নে আমাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেল।”

রিমার সাথে সাথে খুশি হয়ে সাইমনকে জড়িয়ে ধরল ।সায়মন যেন এক কদম পিছিয়ে গেল হঠাৎ রিমা ধাক্কা খেয়ে ।পরে বললো,” ছাড় বলছি না হলে আমিও ধরে ফেলব তখন কিন্তু ছাড়া পাবি না।”

এদিকে নুর ঘুমানোর প্রিপারেশন নিচ্ছে আবার বারবার আড় চোখে মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে ।”আজকে কি হলো লোকটা এখনো ফোন করছে না কেন ?এমনি সামনে পেলে তো আবোল-তাবোল কথা বলে মাথা খেয়ে ফেলে ।কিন্তু আজকে এখনো ফোন করছে না ।কোন গার্লফ্রেন্ডকে ফোন করেছে নাকি ?”

ভাবতেই আড় চোখে আর একটু ঝুঁকে এসে তাকালো মোবাইলের দিকে।

হঠাৎ মোবাইলের শব্দ পেল ।একটি মেসেজ। ওপেন করে দেখলো একটি থ্রেড ।”২ মিনিটের মধ্যে রুমে আয় নাহলে তৃতীয় মিনিটে আমি তোর রুমে চলে আসব।”

চলবে__

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply