সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব ১৪৩
তোকে অনেক কষ্ট করে ছেড়ে যেতে হয় আমার নুর আমি শুধু জানি ।যেদিন আমি তোকে ছেড়ে আমেরিকা চলে যাই সেদিন দুই ঘন্টা তোকে বুকে নিয়ে বসেছিলাম আমি সবার চোখের আড়ালে ।তুই দুই ঘন্টা অনেক ছটফট করেছিস বারবার সরে যেতে চেয়েছিস কিন্তু আমি কোন না কোন বাহানায় আবার তোকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম।
শাড়ি পড়ে এভাবে আমার সাথে বসে থাকতে তোর অস্বস্তি হচ্ছিল তোর ভালো লাগছিল না তুই বারবার ছুটে চলে যেতে চাচ্ছিলি। কিন্তু আবার জোর করে ধরে তোর কাঁধে মাথা রেখে আবার আমি বসে থাকতাম ।আমার যে কি ভীষণ কান্না পাচ্ছিল ।Nurun Nahar Nila
অতঃপর চলে আসলো সেই মুহূর্ত এয়ারপোর্টে যখন সবাই বিদায় দেওয়ার জন্য আসলো তুই আমার হাত ধরে বারবার ঝাকাতে ঝাকাতে আমাকে মনে করে দিয়েছিলি আমার কিন্তু একটা সুন্দর পুতুল অনেকগুলো ক্লিপ আর অনেকগুলো চকলেট লাগবে ।তাহলে আমরা বা*সর করবো ঠিক আছে?
আমিও বলেছিলাম হ্যাঁ ঠিক আছে কথাগুলো তুই যেন ভুলে যাস না ।আমি তো মনে রাখবো ।তুই বলেছিলি প্রমিস করেছিলি তিনবার চারবার করে প্রমিস কিন্তু তুই মনে রাখিস নি।
আমেরিকা পৌঁছানোর পর কতগুলো দিন আমার শুধু বিষন্নতায় কেটেছে ।না আমার ক্লাস ভালো লাগতো না আমার বাহিরে কোথাও যেতে ভালো লাগতো দিনভর আমি শুধু তোকে কোলে নিয়ে কবুল করা ছবিটি দেখতাম আর বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতাম ।এভাবে মাস খানেক কে*টে যায় বিষন্নতায়।
তুই এত দুষ্টু এত চঞ্চল হয়ে ছিলি নূর কিভাবে তুই আমাকে এত সহজে ভুলে গেলি ?যখনই আমি ফোন দিতাম শুনতাম নূর বাহিরে খেলতে চলে গিয়েছে ।আচ্ছা তোর কি একবার আমার কথা মনে পড়তো না ?দিন ভরা যে সাদাফ ভাই সাদাফ ভাই বলে পিছু পিছু ঘুরতি সেই সাদাফ ভাই তো তোর চোখের সামনে ছিল না ।তুই কি নিষ্ঠুর ভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলি নূর!
পরে ভাবলাম আমি তো তোকে কোনদিন কোন বন্ধু হতে দেইনি কারো সাথে মিশতে দিইনি খেলতে দেইনি ।দিনভর আমার সাথে রেখেছি ।কিন্তু আমি যাওয়ার পর তুই বাহিরে গিয়েছিলি বন্ধুদের সাথে খেলতে শিখেছিলি তাই তোর অবচেতন মনে ধীরে ধীরে সাদাফ কে মুছে ফেলেছিললো।
তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তোকে এবার তোর মত একটু বড় হতে দিব ।সব সময় তো আমি আটকে রেখে ছিলাম এবার আর আটকে রাখবো না ।তোকে তোর মত বড় হতে দিব ।একদিন তুই খেলছিলি তোকে দেখার আমার ভীষণ সাধ হলো ।তখন আমার বন্ধুর স্মার্ট ফোন ছিল নতুন নতুন কিনে ছিল ওকে আমি বললাম একটু ভিডিও কলে তোকে দেখাতে।
ও ভিডিও কল দিলো তোকে দেখানোর জন্য ।কি সুন্দর করে টুকটুক করে খেলছিলি তুই ।হঠাৎ খেলতে খেলতে পড়ে গেলি তোর হাত পা ছুলে গেল ।তোর অবচেতন মন সাদাফ ভাই বলে চিৎকার করে উঠলো।আমার কলি*জায় লেগেছিলো নুর তোর ডাক।আমার বন্ধু জিজ্ঞেস করল যে মলম লাগিয়ে দিবে কিনা ?আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল ।কিন্তু অন্য কেউ তোকে স্পর্শ করবে কেনো?তাই বললাম না চুপচাপ তোকে যেন বাড়িতে দিয়ে আসে।
এভাবে চলে গেল এক বছর ।ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ার শেষ করে তখন সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম ।
তুই কি জানিস আমেরিকা একটি মেয়ে আমাকে খুব চাইতো?
বলেই সাদাফ নূরের পা ধরে বসে থেকেই তাকালো নুরের দিকে ।যেন নূরের রিঅ্যাকশন দেখতে চাইছে ।নূর চটক করে তাকালো সাদাফের দিকে ।নূরের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ।একটি মেয়ে চায় সাদাফ ভাই কে? ছয়টি বছর বিদেশে ছিল কি হয়েছিল তার জীবনে ?কিছুই তো নূর জানে না ।
নুরের জানতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে ।আগ্রহ ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে সাদাফের দিকে ।কিন্তু চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে বারবার ।যেন সাদাব অন্যরকম কিছু বললেই কেঁদে দিবে নূর ।নুর মানতেই পারছে না কোন একটি মেয়ে সাদাবকে চাইতো।নুর ছাড়া অন্য কোন মেয়ের কথা সাদাফের মুখে।
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল ।”মেয়েটি প্রতিদিন ডরমেটরি তে আমাকে এক নজর দেখার জন্য বসে থাকতো ।ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো ।কখনো আমি একটু বেলকনিতে আসবো বা কখন একটু বারান্দায় জানালায় দাঁড়াবো ও আমাকে এক নজর দেখবে ।আমাদের ডরমেটরির পাশেই ওর বাড়ি ছিল ।তাই ও সারাক্ষণ এখানেও ওত পেতে বসে থাকতো আমাকে দেখার জন্য।
যেমন আমার নজর দুটি শুধু তোকে দেখার জন্য ওত পেতে থাকতো ।ঠিক সেই রকম ছিল মেয়েটি।
নূরের চোখ ছলছল হয়ে গেলো। নিঃশ্বাস ভারী।সাদাফ লক্ষ্য করছে সব কিছুই দেখছে আরেকটু হলে যেন নুর কান্না করে দিবে ।কিন্তু সাদাফ আজ বলবে সব কিছু বলবে ।নুরকেও যে একটু শাস্তি পেতে হবে ।কেন নূর কথায় কথায় বলে ফেলল আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন ?ওকেও সে যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে যে যন্ত্রনা সাদা ৬ বছর সহ্য করেছে ।ওকে ছয় মুহূর্তের জন্য হল সহ্য করতে হবে সাদাফ কে হারানোর ভয়।
সাদাফ বললো,” মেয়েটি দেখতে ভীষণ সুন্দরী ছিল ।এক কথায় নজর কাড়া সুন্দরী ।চাইলেও যে কোন পুরুষ তাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না ।কিন্তু ওই যে আমার চোখে তো তুই ছিলি আমার চোখ দুটো অন্ধ হয়েছিল ।তোর মধ্যে ।তাই হয়তো ওই সৌন্দর্য আমি দেখতে পেতাম না ।কিন্তু মেয়েটি ভীষণ ভালো ছিল জানিস?
আমাকে নিরবে নিরবে ভালোবেসে গিয়েছে কখনো কোন সময় ডিস্টার্ব করত না ।ভালোবাসি বলতে আসতো না ।মাঝেমধ্যে ফুল রেখে যেত কার্ড রেখে যেত সিঁড়ির কাছে ।আমি দেখতাম বুঝতে পারতাম এটিও দুষ্টু মেয়েটিরই কাজ মেয়েটি তখন ১৬ বছর বয়সী হবে।
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া একটি মেয়ে ছিল রিহা।কিন্তু এই কথা বলে মেয়েটিকে আমি দূরে সরাবো কি করে যেখানে আমি আগে একটি বাচ্চা মেয়েকে মন দিয়ে বসে আছি ?তাই এই যুক্তি দিয়ে আমি ওকে সরাতে পারছিলাম না।
নূর এবার অধৈর্য্য হচ্ছে ।সরাতে পারছিল না মানে কি ?চোখ দুটো চিকচিক করছে নুরের।চোখের মনি দুটো এদিক ওদিক শুধু দিকবিদিক ঘুরছে যেন সাদাফকে অবলোকন করতে চাইছে ।কিছু কি হয়েছিল তাদের মধ্যে ছয় বছরে ?তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক হয়েছিল কি? ওর হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে রাখল ।
সাদাফ খেয়াল করছে নুরের হাতের দিকে ।নূরের পা দুটো মনে হয় এবার একটু কাপতে শুরু করল।
[আমরা অনেক সময় সহজে বলে ফেলি আমাকে ছেড়ে দাও বা আমাকে ছেড়ে চলে যাও ।কিন্তু সেই প্রিয় মানুষটি ছেড়ে গেছে বা চলে যাবে এই অনুভূতিটা যে কতটা ভয়ংকর হয়তো সাদাফ নুর কে সেটাই বুঝাতে চাচ্ছিল ]
নূরের পা দুটো হালকা করে একটু ধরল সাদাফ ।নূরের পা দুটোর কম্পন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো ।সাদাফ জানতে চাচ্ছে বুঝতে চাচ্ছে নুরের মনোভাব।
কি কি হয়েছিল দুজনের মধ্যে ভাবছে নুর।
সাদাফ খেয়াল করল ।তারপর আবার বলতে শুরু করলো সাদাফ।
“একদিন কি করে যেন হঠাৎ করে মেয়েটি আমার ডরমেটরিতে রুম পর্যন্ত চলে এল ।জানিনা কি করে সেটিং করেছিল ?কি করে কি ডরমেটরি তে এলো?আমি একাই ছিলাম হয়তো জানতো মেয়েটি ।দরজার নক করলে আমি যখন খুলে দিলাম ওকে দেখে আমি বোকা হয়ে গেলাম ।এই মেয়ে এখানে কি করে এলো ?
আর আমার এখানেই বা কি ?তবে মেয়েটি যে জেনে এসেছে রুমে কেউ নেই তা আমি শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম কারণ মেয়েটি হাতে করে একটি গিফট নিয়ে এসেছিল ।তা যে আমার জন্যই নিয়ে এসেছে তাও আমি জানতাম কারণ মাঝেমধ্যে সিঁড়ির কাছে গিফট আমার নামে রেখে যেত এই মেয়েটি।
যখন আমার দরজায় দাঁড়ানো ঠিক তখন আমার পা জোড়া ঠকঠক করে কাঁপছিল ।এমন একটা সিচুয়েশনের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না ।
নূরের পায়ের কম্পন যেন আরো বাড়তে লাগলো ।যেন চাইলেও নূর আর কন্ট্রোল করতে পারবেনা ।চোখের পানি দিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল ।সাদাফ এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে।
চলবে_
Neela Rahman
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
Romantic
পর্ব ১৪৪
নূরের কেমন লাগছে নুর বলে বোঝাতে পারবে না ।স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারছে না সাদাফের মুখ থেকে এতটা গভীরভাবে কখনো কোন মেয়ের কথা শুনবে ।অথচ সাদাফ যখন থাকবে না অন্যত্র সংসার করবে একই বাড়িতে থেকে কিভাবে মেনে নিবে নুর?
নুর দু হাতে নিজের মাথা ধরে ফেললো ।ভাবতে পারছে না কিছুই
ভাবতে পারছে না ।
সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।তারপর বললো,” মেয়েটিকে আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম এখানে কিভাবে এল কেন এলো ?মেয়েটি বললো আমার সাথে দেখা করতে এসেছে আমাকে নাকি ওর ভীষণ পছন্দ।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম ।একতো ডরমেটরির রুমে কেউ নেই আমি একা তার উপরে ও একটি মেয়ে মানুষ আর ভীষণ সুন্দরী ।আর যে কেউ দেখে আমাদেরকে খারাপ ভাববে ।দরজায় তখনো দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ করে মেয়েটি ………নূর চট করে তাকালো সাদাফের দিকে ।চোখে পানি টলমল করছে।
নুরের দিকে তাকিয়ে,”আমাকে পাশ কাটিয়ে ভিতর ঢুকে গেল মেয়েটি ।আমি অবাক হয়ে রইলাম ।কি করব বুঝতে পারছিলাম না ।গেটে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি দরজা লাগিয়ে ভিতরে যাব ।এরকম ভ*য়ংকর একটা সিচুয়েশন আমার মাথা কাজ করছিল না ।তাই আমি দরজা হালকা চাপিয়ে ভিতরে গেলাম দরজা লাগালাম না।”
নূরের সহ্য হচ্ছে না ।মন খারাপ ছাপিয়ে এখন যেন ভিতরে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে ।কেন দরজা চাপিয়ে ভিতরে নিয়ে গেল মেয়েটিকে নিয়ে?অসভ্য লোকটি কেন দরজা থেকে বিদায় করল না ?তাহলে কি তাহলে কি কিছু হয়েছিল ওনাদের মধ্যে ?৬ বছর তো কম নয় !এমন তো নয় যে নূরকে ভুলে গিয়েছিল সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল!
আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে পরিবার আত্মীয়-স্বজন পরিচিত কেউ নেই সেখানে ছয়টা বছর একা কাটিয়েছে সে কি এতটাই ভাল ছিল কারো সাথে কি মেশে নি? কত কিছু তো শোনে নূর যদি সেরকম হয়ে থাকে ? যদি লিভ ইন এ থাকে?না নুর আর ভাবতে পারছে না ।আর কিছু ভাবতে চাচ্ছে না।
নূরের শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বাড়তে লাগলো ।সাদাফ সবই অনুভব করছে।
নূরের দিকে তাকিয়ে একটু থেমে সাদাফ আবার বলতে শুরু করল ।”ভিতরে ঢুকে আমি যখন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম কেন এসেছো এবার মেয়েটি উপহারটি আমার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল এটি দেওয়ার জন্য ।আর তোমাকে দেখতে আমার ভীষণ ইচ্ছে করছিল ।আমি অবাক হয়ে গেলাম মেয়েটি এত ছোট অথচ আমাকে তুমি করে বলছে প্রথম সামনাসামনি দেখায়।
অবশ্য জন্মের পর থেকে আমেরিকায় থাকে তাই একটু এডভান্স বুঝতে পারিস আমাদের দেশের মতো এতটা
করা বাধা নিয়মের মধ্যে বড় হয়নি ।একটু ওপেন মাইন্ডেড ।যেমন পশ্চিমাদেশ গুলোর মেয়েরা হয়ে থাকে ।বুঝতে পারছিস নিশ্চয়ই ?এসব ওদের কাছে কোন ব্যাপার না ।কিন্তু আমার অবাক লাগছিল।
এরপর হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই মেয়েটি দুকদম এগিয়ে এসে একদম আমার সামনে চলে আসলো ।আমি দু কদম পিছিয়ে যাব তারও সুযোগ পেলাম না ।হঠাৎ করে মেয়েটি আমাকে……
“কি মেয়েটি আপনাকে ?”প্রশ্ন করে বসলো নূর ।
আর তর সইছেনা নূরের ।জানতে হবে সবকিছু জানতে হবে ।কি করে এসেছে ৬ বছর এই লোক ।অথচ ছয় বছর নূর না জানলেও এই লোক তো জানত তার একটা বিবাহিত স্ত্রী আছে দেশে।নুরের এখন রাগ হচ্ছে ভীষণ রাগ হচ্ছে।Nurun Nahar Nila
সাদাফ চুপ করে রইল ।মাথা নিচু করে ফেললো যেন নূরের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না এমন একটা ভাব ।নুরের রাগ হচ্ছে ।গা জ্ব*লে যাচ্ছে।লোকটা এখনো মুখ খুলছে না কেনো?সাথে সাথে নূর আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না ।সাদাফের কলার ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো ধমকে সুরে ,”বলছেন না কেন ?মুখ খুলছেন না কেন কি করে এসেছেন?”
সাদাফ অপরাধীর মতো মুখ তুলে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে বললো,” কি বললে খুশি হবে নূর ?কিছু করে এসেছি নাকি কিছু করে আসিনি ?কি শুনলে খুশি হবি এটা যে সেই মেয়ে এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে আমি আমেরিকা ফিরে গেলে সে মেয়ে আমাকে বিয়ে করে ফেলবে নাকি এটা শুনে খুশি হবি আমি কখনই সেই মেয়েকে গ্রহণ করব না কারণ আমার নুর আমার আসক্তি আমার জীবন আমার সাথে সব সময় থাকবে ?কি শুনে খুশি হবি নুর?”
“প্রশ্ন করবেন না আমি প্রশ্ন করেছি আগে উত্তর দিন কি হয়েছিল তখন?”রাগে গজগজ করতে করতে বললো নুর।
সাদাফ বললো ,”কি আসে যায় কি হয়েছিল !তুই তো এমনিও আমাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিস ।তোর তো খুশি হওয়া দরকার তোর বিরহে সাদাফ বেশি দিন পুড়বে না ।কেউ একজন আছে যে এখনো সাদাফের জন্য অপেক্ষা করে আছে ।তুই যাকে অবহেলা করে সরিয়ে দিবি সে সাদরে গ্রহণ করে নিবে।
তাহলে কি যায় আসে নূর তোর তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না ?তোর কি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে যদি বলি সেদিন আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিল ?তোর কি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে যদি বলি যে না কিছু হয়নি ?আমি ঘৃণা করে ওর ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম কোনটা শুনলে খুশি হবি নুর?
তুই আমাকে অবহেলা করে আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করে না বুঝে দূরে সরে দিয়ে আমাকে কষ্টে রাখতে চাস?নাকি চাস আমি তোর থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র কারো সাথে সংসার করি তোর চোখের সামনে বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াই এটা দেখে খুশি হতে চাস?
নূরের হাত কাঁপছে ।কাঁপা কাঁপা হাত দুটো দিয়ে ছেড়ে দিল সাদাফের কলার ।পা দুটো কাপছে।কান্না কান্না স্বরে বললো,” বলছেন না কেন কি হয়েছিল সেদিন ?না হলে কিন্তু আমি বিরাট কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবো এক্ষুনি বলুন বলছি।”
সদাফ নুরের হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।ধরে নুরের চোখে পানি মুছতে মুছতে বললো,” সেদিন কিছু হয়নি নূর সেদিন আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম ।ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলাম ।কিন্তু এটাও সত্য সে এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।তুই যদি আমাকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিস একদিন না একদিন ওই মেয়ে ঠিকই আমাকে পেয়ে যাবে।
কারণ তুই যদি আমাকে দূরে সরিয়ে থাকতে পারিস আমার ভালোবাসাকে অবহেলা করে থাকতে পারিস তোর উপরে রাগ করে হলেও তোকে দেখানোর জন্য হলেও আমি এইখানে এই মেয়েকে নিয়ে এসে একটা সংসার পাতবো। তোর চোখের সামনে আমি বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াবো ।তুই দেখবি আর জ্ব*লবি।”
নুর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
সাদাফ বললো,”এখন বল তুই কি এটাই চাস আমাকে অবহেলা করে আমাকে সরিয়ে দিবি শুধুমাত্র একটা সন্তানের সমস্যার জন্য ?যদি আমার আজকে বাচ্চা না হত এই সমস্যাটা যদি আমার হতো তাহলে কি তুই সরে যেতি? যেতি না ।তাহলে তুই এতটা মহৎ নিজেকে ভাবতে পারলে আমাকে এত নিচু ভাবার কারণ কি নুর ?আমার ভালোবাসা কি তোকে কখনো স্পর্শ করেনি?
সন্তানের জন্য নিজের স্বামীর সুখের জন্য স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে মহৎ হতে চাইছিস তাহলে সেই স্বামী যদি অন্যত্র কারো সাথে সুখী হয় তাহলে তোর এত গায়ে লাগছে কেন নূর?
অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার ধরিয়া রাখার মতো বিড়ম্বনায় পৃথিবীতে আর নাই ।তুই বল তুই অধিকার ছেড়ে দিবি নাকি আমার উপর সারা জীবনের মতো অধিকার প্রতিষ্ঠা করবি বল?”
নূর এবার চিৎকার করে কেঁদে দিল ।সহ্য করতে পারছে না নুর নিজের এই অপূর্ণতা ।কিন্তু এটাও সত্য সাদাফ কেউ ছাড়তে পারবে না বুঝে গিয়েছে নুর।সাদাফ কে ছাড়া ওর চলবে না ।এটা মানতেই পারবে না নূর সাদাফ কে অন্য কেউ ভালবাসে সাদাফ এইভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে কখনো অন্য কোন মেয়েকে দেখবে ।
এটা নূরের মেনে নেওয়া সম্ভব নয় এর থেকে তো ম*রে যাওয়া ও অনেক ভালো।
সাদাফ এটাই চাচ্ছিল ওই মেয়ের গল্পটি বলে যেন নূর নিজে থেকে অনুধাবন করতে পারে মুখে ছেড়ে দিব বলাটা যত সহজ আসলে বাস্তবে ছাড়াটা তত সহজ নয় ।কিন্তু নূরকে একটু কঠিন ভাবে যে বোঝাতেই হত না হলেও ছোট্ট নূর এত বড় কথাটি বুঝতে পারত না।
নূর দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করছে ।সাদাফ নুরের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে হাতে পৃষ্ঠে চুমু খেতে খেতে বললো ,”আমি সেদিন সেই মেয়েকে বলেছিলাম দেশে আমার একটা পরীর চেয়েও সুন্দর বউ আছে ।ছোট্ট লাল টুকটুকে বউ আছে যে আমার জন্য প্রতীক্ষা করবে যদিও মিথ্যা ছিল তুই আমার জন্য প্রতীক্ষা করিস নি।
কিন্তু আমি করেছি ।প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটি মুহূর্ত কাউন্ট করেছি ।প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমি তোকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করেছি নুর যার ফল আজকে তুই আমার চোখের সামনে।
শুধু ভালবাসলে হয় না নুর ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয় ।ধরে রাখতে হয় ।তার উপরে কর্তৃত্ব ফলাতে হয় ।অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয় তার উপরে জোর করতে হয় ।যার প্রত্যেকটা আমি তোর উপরে করেছি ।কারণ আমি তোকে ভালোবেসেছি তোর উপরে তাই কর্তৃত্ব অধিকার সব কিছুই প্রতিষ্ঠা করেছি।”
চলবে_
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৩+৩৪
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৫
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯+৩০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৯