দ্যাআনপ্রেডিক্টেবললাভ
পর্ব : ০৩
লেখক_Jahirul_islam_Mahir
☘️
বিকেল পাঁচটা। আদনান রেডি হচ্ছে। একেবারে হিরোর মতো! স্যুট-বুট পরে রেডি হয়ে নেয়। মিররের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো সেট করে নেয়। পছন্দের পারফিউমটা স্প্রে করে নেয়। দেখতে হ্যান্ডসাম লাগছে, চেহারায় একটা মিষ্টি ভাব – পুরো ব্যাপারটাই যেনো একটা রোমান্টিক মুভি! চোখে সানগ্লাস, মুখে একটা লুপ্ত হাসি। গলায় একটা সিম্পল কিন্তু সুন্দর টাই, হাতে একটা স্মার্ট ওয়াচ – এঙ্গেজমেন্টের জামাই হিসেবে জহির আদনান একেবারে পারফেক্ট! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শেষ বারের মতো দেখে নেয়। পা বাড়ায় আদ্রিয়ানার রুমের দিকে।
আদনান আদ্রিয়ানার রুমে এসে দেখে আদ্রিয়ানা রুমে নেই। আদ্রিয়ানাকে রুমে না পেয়ে বারান্দায় চলে যায় আদনান। আদ্রিয়ানা বারান্দায় থাকা দোলনায় বসে আছে। আদনান আদ্রিয়ানার দিকে এগিয়ে যায়। তাঁর পর শান্ত কন্ঠে বলে,
এই মেয়ে চলো।
আদ্রিয়ানা আদনানের দিকে চোখ তুলে তাকায়। আদনানের উপর আদ্রিয়ানার চোখ আটকে যায়। এক মুহূর্তের জন্য আদনানকে দেখে আদ্রিয়ানার চোখ যেনো থমকে যায়! আদনানকে একেবারে হিরোর মতো লাগছে – স্যুট-বুটে, সানগ্লাসে, টাই-ওয়াচে সে যেনো একেবারে পারফেক্ট! আদ্রিয়ানা কিছুক্ষণ আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর শান্ত গলায় বলে,
ক…. কোথায়?
বিদেশিরা আজ সন্ধ্যা সাতটায় তোমাকে যেখানে নিতে আসবে সেখানেই যাবো।
আদ্রিয়ানা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কারণ আদ্রিয়ানা এটা বুঝতে পেরেছে যে আদনান তাকে সত্যি সত্যি পাচার করবে। আদ্রিয়ানা শান্ত কন্ঠে বলে, চলুন।
আদ্রিয়ানার মুখে চলুন কথা টা শুনে বেশ অবাক হয় আদনান। আদনানের চোখে বিস্ময়! সে ভাবেনি আদ্রিয়ানা এত সহজে রাজি হয়ে যাবে! আদনান একটু সন্দেহের চোখে আদ্রিয়ানার দিকে তাকায়।
“তুমি… তুমি ঠিক আছো তো ?” জ্বর আসেনিই তো আবার?
আদ্রিয়ানা শান্ত গলায় বলে, “আমি ঠিক আছি চলুন।”
আদনান মাথা নেড়ে বলে, “ঠিক আছে, চলো।”
আদনান আদ্রিয়ানাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়, গাড়ি চলছে তার আপন বেগে। আদ্রিয়ানা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আদনান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর আদ্রিয়ানার দিকে তাকাচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের নাম করা বিউটি পার্লারের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করে আদনান। আদ্রিয়ানা চোখ খুলে তাকায়। আদনান গাড়ি থেকে নেমে আদ্রিয়ানাকেও নামায়। আদ্রিয়ানা গাড়ি থেকে নেমে দেখে সে বর্তমানে একটা বড় পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদনান আদ্রিয়ানাকে পার্লারের ভেতরে নিয়ে যায়। আদনান আদ্রিয়ানার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে দেখে আদ্রিয়ানা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে।
পার্লারের ভেতরে ঢুকে আদনান একটা স্টাইলে বলে, “আদ্রিয়ানাকে রেডি করে দাও। আজকে তার স্পেশাল ডে।”
এতটুকু বলে আদনান থামে। আদ্রিয়ানার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে,
বিকস আজ তাকে পাচার করে দেওয়া হবে।
পার্লারের মেয়েরা হেসে বলে, “ওকে, স্যার।”
আদ্রিয়ানার চোখে ভয়, সে বুঝতে পারছে না কি হতে যাচ্ছে। আদনান আদ্রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি এখানে থাকো, আমি আসছি।” আদ্রিয়ানা কিছু বলতে যাবে, কিন্তু আদনান চলে যায়। আদ্রিয়ানা অস্বস্তিতে পড়ে যায়, কি করবে বুঝতে পারছে না।
পার্লারের মেয়েরা আদ্রিয়ানাকে ঘিরে ধরে আদ্রিয়ানাকে সাজানো শুরু করে। ঘন্টা খানেকের মধ্যে আদ্রিয়ানার সাজ কমপ্লিট হয়ে যায়। লরেক্স লিভারি লাকা রেড গাউনে তাকে যেনো হুরপরী লাগছে! গাউনের সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, চোখে স্মোকি আই শ্যাডো, ঠোঁটে রেড লিপস্টিক – পুরো ব্যাপারটাই যেনো একটা স্বপ্ন! চুলগুলো একটা স্টাইলিশ আপডো করে সাজানো – এঙ্গেজমেন্টের বউ হিসেবে সে একেবারে পারফেক্ট! আদ্রিয়ানা নিজেকে দেখে বেশ অবাক হয়। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি আসলেই সেই না কি অন্য কেউ। পার্লারে থাকা একটা মেয়ের কথায় আদ্রিয়ানা বাস্তবে ফিরে।
“ম্যাম, আপনাকে একেবারে পরীর মতো লাগছে!” স্যার তো আপনার উপর থেকে চোখ ফিরাতেই পারবে না। আমি সিউর স্যার আজকে নতুন করে আবার আপনার প্রেমে পড়বে।
আদ্রিয়ানা নিজেকে আবার আয়নায় দেখে, তার চোখে এখনো বিস্ময়।
পার্লারের মেয়েরা বলে, “স্যার আপনাকে নিতে এসেছেন, চলুন।”
পার্লারের একটা মেয়ে আদ্রিয়ানার হাতে একটা সুন্দর পাসবেগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“এটা নিন, ম্যাম।”
আদ্রিয়ানা পাসবেগ নিয়ে নেয়, তার হাত কাঁপছে। পার্লার থেকে বেরিয়ে আদ্রিয়ানা দেখে আদনান দাঁড়িয়ে আছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে একেবারে হিরো! আদনানের চোখে একটা প্রশংসার দৃষ্টি, আদ্রিয়ানাকে দেখে সে মুগ্ধ! আদ্রিয়ানা উপর থেকে চোখ ফিরাতে পারছে না। আদনানের অজান্তেই আদনানের হাত চলে যায় বুকের বাঁ পাশে। আদনানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ানার অস্বস্তি বোধ হয়। আদ্রিয়ানার পিছনে থাকা দুইটা মেয়ে হেসে উঠে। ওদের হাসির শব্দে আদনান বাস্তবে ফিরে।
দ্বিতীয়বারের মতো আদ্রিয়ানার দিকে তাকিয়ে আদনান বলে, “তোমাকে অসাধারণ লাগছে!”
আদ্রিয়ানা কিছু বলে না, শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। আদনান আদ্রিয়ানার হাত ধরে নিয়ে যায়, গাড়ির দিকে। আদনান আদ্রিয়ানাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে। আদনান গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়। গাড়ি চলছে তার আপন বেগে। আদনান ঠিকভাবে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারছে না। কারণ আদ্রিয়ানাকে দেখার পর আদনান আর নিজের মধ্যে নেই। আদনান কোনরকমে গাড়ি চালাচ্ছে, কিন্তু তার বেহায়া চোখ ঘুরেফিরে বার বার আদ্রিয়ানার দিকে যাচ্ছে। আদ্রিয়ানা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, তার চোখে একটা শূন্যতা। আদনান একটু পর পর আদ্রিয়ানার দিকে তাকাচ্ছে, আর নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। গাড়ির ভেতরে একটা অস্বস্তিকর নীরবতা। আদনান একটু কাশি দিয়ে বলে,
“আ…আদ্রিয়ানা, তুমি ঠিক আছো?”
আদ্রিয়ানা শান্ত গলায় ছোট করে বলে, “হ্যাঁ।”
আদনান আবার চুপ হয়ে যায়। গাড়ি চলছে, কিন্তু আদনানের মন পড়ে আছে আদ্রিয়ানার দিকে। আদনান যে তার দিকে বার বার তাকাচ্ছে তা আদ্রিয়ানার চোখ এড়ায়নি। আদনানকে বার বার তাকাতে দেখে আদ্রিয়ানার অস্বস্তি বোধ হয়। তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“আচ্ছা মিস্টার আদনান, এই সবের মানে কি?
কোন সবের?
আমাকে এইভাবে সাজিয়েছেন কেনো ?
যাতে তোমাকে দেখার সাথে সাথে বিদেশিরা তোমাকে পছন্দ করে ফেলে।
ওও আচ্ছা।
হুম।
তার মানে সত্যি সত্যি আপনি আমাকে পাচার করে দিবেন?”
“অবশ্যই।”
আদ্রিয়ানা আর কিছু বলে না। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আদনান কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দেয়।
☘️
চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় কমিটিসেন্টারের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করে আদনান। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির উপর পাশে এগিয়ে যায় আদনান। গাড়ির দরজা খুলে আদ্রিয়ানার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“আমার হাত ধরে নামো।”
আদ্রিয়ানা আদনানের দিকে তাকায়। আদনান আবার বলে,
“কি বলছি বুঝতে পারো নিই? বলছি আমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামো।”
আদ্রিয়ানা আদনানের হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।
আদনান মুচকি হেঁসে বলে, “আমার হাত জড়িয়ে ধরো।”
“মানে?”
“মানে আমার হাতটা জড়িয়ে ধরো।”
“আ…আমি আপনার হাত জড়িয়ে ধরতে যাবো কেনো?”
“তোমাকে যা বলছি তাই করো, নয়তো…”
বাকিটুকু উচ্চারণ করতে পারে না আদনান, তার আগেই আদ্রিয়ানা আদনানের হাত জড়িয়ে ধরে। আদনান মুচকি হেসে বলে, “গুড গার্ল। এইবার চলো।” আদনান আর আদ্রিয়ানা কমিউনিটি সেন্টারের দিকে এগিয়ে যায়।
কমিউনিটি সেন্টারের ভিতরে পা রাখতেই আদ্রিয়ানা অবাক হয়ে যায়। পুরো কমিউনিটি সেন্টার লাইটিংয়ের আলোয় ঝলমল করছে। কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম পাশে একদমই শেষ মাথায় একটা বড় স্টেজ। স্টেজে উঠার রাস্তার দুই পাশে বিছানো হয়েছে সাদা ফুলের পাপড়ি আর সুন্দর লরেক্স ফুলের পাপড়ি। সাদা গোলাপ আর নীল গোলাপ ফুল দিয়ে স্টেজটা সাজানো হয়েছে। গোলাপের পাপড়ি দিয়ে স্টেজের চারপাশে ডিজাইন করা। লিলির ফুল দিয়ে স্টেজের উপরে একটা সুন্দর তোরণ বানানো। আর গাঁদা ফুল দিয়ে স্টেজের নিচে একটা কার্পেটের মতো করা। লাইটিং করা হয়েছে উজ্জ্বল আর রোমান্টিক ভাবে। স্টেজের চারপাশে লাইটের ঝাড়বাতি ঝুলছে। আর স্টেজের উপরে লাইটের একটা সুন্দর ডিজাইন করা হয়েছে, যেটা গোলাপি আর সাদা রঙের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।
এতো কিছু দেখে আদ্রিয়ানা যেমন অবাক হয় ঠিক তেমন আদ্রিয়ানার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগে। কি হচ্ছে এইসব? আদনান তাকে পাচার করে দিবে বলে কোথায় নিয়ে এসেছে? আদ্রিয়ানার মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সে আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আদনান আদ্রিয়ানার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“চলো স্টেজে যাওয়া যাক।”
আদনানের বলা কথাটা মনে হয় আদ্রিয়ানার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আদ্রিয়ানা আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান হাতের থুরি বাজিয়ে বলে,
“কোথায় হারিয়ে গেলে?
হ্যাঁ?
চলো।
” আদনান আদ্রিয়ানাকে নিয়ে স্টেজে উঠে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সবাই হাতের তালি দিয়ে উঠে। আদ্রিয়ানা চারদিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়। আদনান আদ্রিয়ানার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে আদ্রিয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। রিংটা আদ্রিয়ানার দিকে এগিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ানার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আদ্রিয়ানা, তুমি আমার জীবনের প্রথম সূর্য, যে আমার দিনকে আলো দিয়েছে।
তুমি আমার রাতের চাঁদ, যে আমার অন্ধকারকে আলোকিত করেছে।
তোমার হাসিতে আমার হৃদয় জেগে ওঠে,
তোমার চোখে আমার স্বপ্ন দেখা দেয়। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়, যে আমার জীবনকে পূর্ণ করেছে।
আদ্রিয়ানা, তুমি কি আমার হবে? তুমি কি আমার সাথে জীবন কাটাবে? তুমি কি আমার হাত ধরে পথ চলবে? তুমি কি আমার সাথে স্বপ্ন দেখবে? আদ্রিয়ানা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি আমার জীবনের সবকিছু আদ্রিয়ানা। আদ্রিয়ানা, Will you marry me?”
সময়ের অভাবে রিচেক দেওয়া হয় নিই।
চলবে
Share On:
TAGS: জাহিরুল ইসলাম মাহির, দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ পর্ব ২
-
দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ পর্ব ৬
-
দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ গল্পের লিংক
-
দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ পর্ব ৪
-
দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ পর্ব ৫
-
দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ পর্ব ১