Golpo romantic golpo দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ

দ্যা আনপ্রেডিক্টেবল লাভ পর্ব ২


দ্যাআনপ্রেডিক্টেবললাভ

পর্ব : ০২
লেখক_ #Jahirul_islam_Mahir.

☘️

আহা ভয় পেও না। তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে কে পাচার না করে ছাড়বো না।

আদনানের এমন কথা শুনে আদ্রিয়ানার ভয় আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।

আ….. আমাকে ছেড়ে দেন প্লীজ। আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি তাহলে কেনো আমাকে পাচার করে দিতে চাইছেন ?

ক্ষতি করো নিই ?

আদ্রিয়ানা না বোধন মাথা নাড়ায়।

প্রতিতালয় থেকে তোমাকে কত টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে এসেছি ভুলে গেছো ? পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়ে তোমাকে তো আর এমনি এমনি নিয়ে আসে নিই।

তা…তাহলে কেনো নিয়ে এসেছেন ?

আহা এক কথা কয়বার বলবো ? বললাম না পাচার করে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি। বিদেশীদের কাছে তোমাকে এক কোটি টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিবো।

ও….ওরা কি আমার মতো মেয়ে কে এএক কোটি টাকা দিয়ে কিনবে ?

কেনো কিনবে না। তুমি দেখতে খুব সুন্দর আছো।

আদ্রিয়ানা কিছু বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনাজল।

এই মেয়ে কান্না করছো কেনো ? কান্না বন্ধ করো।

আদ্রিয়ানা কান্না করেই যাচ্ছে। থামার কোন নাম নেই।

তুমি কি কান্না বন্ধ করবে না কি আমি এক্ষুনি বিদেশিদের কে কল দিবো ?

আদ্রিয়ানা দ্রুত চোখের জল মুছে নিয়ে বলে,
আ….আমি কান্না করছি না তো। আপনি প্লীজ ওদের কে কল দিবেন না।

তাহলে খাবার টা খেয়ে শুয়ে পড়ো।

আদ্রিয়ানা আদনানের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

কি বলছি বুঝতে পারো নিই ? বলছি খাবার টা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি তোমার পাশের রুমেই আছি।

এতটুকু বলে থেমে যায় আদনান। আদ্রিয়ানার দিকে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানার দিকে ঝুঁকে আবার বলে।

কিছু দরকার হলে বা ভয় পেলে আদনান বলে ডাক দিও কেমন।

এই কথা বলে একটা চোখ টিপ দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় আদনান। আদ্রিয়ানা আদনানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

আজব মানুষ তো ! একবার বলে পাছার করে দিবে। একবার বলে তুমি শুধু আমার, একবার বলে আদনান বলে ডাক দিও। মানুষ টা আসলে কি চাই ? মতলব কি এই আ.. আদনানের ?

আদ্রিয়ানা কথা টা বলে শেষ করতে না করতেই রুমে থাকা মাইক্রোসফটে আদনানের কন্ঠ ভেসে ওঠে।

শুনো মেয়ে তুমি যদি দিন রাত এক করেও ভাবতে থাকো তাহলে ও আমার মতলব বুঝতে পারবে না। সো ভাবা বন্ধ করে খাবার টা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট।

এই বেডা আমার বলা কথা গুলো শুনলো কেমনে ?

মাইক্রোসফট থেকে আবার ও আদনানের কথা ভেসে আসে।

শুনেছি কোন এক ভাবে। শুনো মেয়ে তোমাকে আবার ও বলছি ভাবাভাবি বাদ দিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

আদ্রিয়ানা আদনানের কথা মতো খাবারের প্লেট টা হাতে তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। আদ্রিয়ানা খাচ্ছে তা রুম থেকে সিসি টিভি ফুটেজের মাধ্যমে আদনান দেখছে। মিনিট দশেকের মধ্যে আদ্রিয়ানার খাওয়া হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষে আদ্রিয়ানা শুয়ে পড়ে। শুয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আদ্রিয়ানা হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।

আদনান সিসি টিভি ফুটেজের মাধ্যমে আদ্রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা খুব সুন্দর, কিন্তু ওর জীবনটা খুব খারাপ।

আদনান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, তোমাকে আমি বাঁচাবো, আদ্রিয়ানা। তোমাকে একটা সুন্দর জীবন দিবো আমি। তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো। জহির আদনানের প্রিয়তমা হয়ে।

কথা টা বলে ফোন হাতে তুলে নেয় আদনান। কল দেয় ওর এ্যাসিস্ট্যান্ট আজিজ কে। রিং পড়ার সাথে সাথেই রিসিভ হয়ে যায়।

আসসালামুয়ালাইকুম স্যার ?

ওয়ালাইকুমুস সালাম।

স্যার কোন সমস্যা ?

তেমন কোন সমস্যা নেই।

তাহলে ? এতো রাতে ফোন দেওয়া কারণ?

কাল আমার Engagement চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি সেন্টার টা বুকিং করো। আর চট্টগ্রাম শহরের সবাই কে ইনবাইট করো। প্রয়োজনে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দাও।

ওকেই স্যার।

আদনান ফোন কেটে দেয়। ঘুমন্ত আদ্রিয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজে ও শুয়ে পড়ে।

☘️

পরের দিন সকালে মিষ্টি রোদের আলো মুখে পড়তেই আদ্রিয়ানার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আদ্রিয়ানা চোখ খুলতেই দেখে আদনান তার পাশে বসে আছে।

আদনান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, গুড মর্নিং, আদ্রিয়ানা।

আদ্রিয়ানা উঠে বসে বলে, আ…আপনি এখানে? কি কি চাই আপনার?

আদনান বলে, তোমাকে চাই।

মানে ?

মানে হচ্ছে তোমাকে আমার চাই। থাকবে আমার সাথে ?

আদ্রিয়ানা বলে, কখনো না। আমি আপনার মতো মানুষের সাথে থাকবো না।

আদনান হেসে বলে, ঠিক আছে, তুমি থাকবে না। কিন্তু তোমাকে আমি ছাড়বো না।

কি সব বলছেন আপনি ?

কি বলছি বুঝো নিই ?

নাহ।

আদনান আদ্রিয়ানা কাছে গিয়ে বলে।
আজকে তোমাকে পাচার করে দেওয়া হবে। বিদেশিদের সাথে কথা বলে ডিল ফাইনাল করে ফেলছি।

ন…..না প্লীজ এমন করবেন না। আমাকে পাছার করবেন না প্লীজ।

জহির আদনান একবার যদি কিছু ফাইনাল করে ফেলে তাহলে তা আর কখনোই কেনসেল করে না। বাই দা ওয়ে খাবার রেখে গেলাম ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।

এই কথা বলে আদনান চলে যায়। আদ্রিয়ানা কান্নায় ভেঙে পড়ে। আজকে তাঁকে পাচার করে দেওয়া হবে। আদ্রিয়ানার চোখ দিয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনাজল। পরক্ষনেই সেই জল মুছে নেয়।

আদ্রিয়ানা তুই কেন কান্না করছিস ? যা হচ্ছে তা মেনে নে। তোর ভাগ্যে যা লিখা ছিলো তাই হচ্ছে। কান্না করে তো আর ভাগ্যে কে পরিবর্তন করতে পারবি না। কান্না বন্ধ কর আদ্রিয়ানা কান্না বন্ধ কর।

এই কথা বলে নিজেই নিজেকে শান্তানা দেয় আদ্রিয়ানা। চোখের পানি ভালো করে মুছে ফ্রেশ হতে চলে যায়। মিনিট দশেকের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। আদনানের রেখে যাওয়া খাবার টা খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ হলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় আদ্রিয়ানা। নিজেকে বুঝিয়ে নিলে ও চোখে মুখে এখনো ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। সে ভাবছে আদনান কি তাঁকে সত্যি সত্যি পাচার করে দিবে। এই ভাবনাটা তাঁর মন কে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

☘️

দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। আদ্রিয়ানা এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, এখনো চোখে মুখে ভয়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট। সে ভাবছে, কি হবে তার সাথে? আদনান তাকে পাচার করে দিবে, নাকি অন্য কিছু করবে?

হঠাৎ আদনানের গলা শুনে আদ্রিয়ানা পিছনে তাকায়।

আদনান বলে, আদ্রিয়ানা, এখানে কি করছো ? খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নাও?

আদ্রিয়ানা ভয়ে ভয়ে বলে, ন…না।

আদনান হেসে বলে,
ভয় পাচ্ছো বুঝি? আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

আদ্রিয়ানা অবাক দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকায়। মানুষ টা আসলে কি চাই ? একবার পাচার করে দিবে বলে ভয় দেখায়। আরেকবার কেয়ার করতে আসে। এই আদনানের মনে কি চলছে ?

আদনানের কথায় আদ্রিয়ানার ভাবনার সুতা টান পড়ে।

আমার মনে আসলে কি চলছে এটাই ভাবছো তাই না মেয়ে ?

হে…..না তো।

আদনান মুচকি হেসে বলে,
কাবাটের মধ্যে তোমার কিছু ড্রেস রাখা আছে। যেটা ইচ্ছে হয় সেটা নিয়ে গোসল করে আসো যাও।

আদনানের কথা মতো আদ্রিয়ানা কাবাট থেকে একটা কালো রঙের থ্রি পিস নিয়ে গোসল করতে চলে যায়। আধা ঘন্টার মধ্যে গোসল করে বের হয়ে আসে। আদনান হা করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানার দিকে। মাত্র সাওয়ার নেওয়ার আদ্রিয়ানা কে স্নিগ্ধ লাগছে। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। গায়ের রং ফর্সা হওয়ায় কালো রং এর থ্রিপিস টা ভালো মানিয়েছে। আদনানের চোখ যেনো আদ্রিয়ানার উপর থেকে সরছেই না! আদনান কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ানার অস্বস্তি বোধ হয়। আদ্রিয়ানা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

এভাবে কি দেখছেন?

আদনান একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলে, ন…না তো! তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, তাই দেখছি আর কি!

আদ্রিয়ানা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

আদনান আবার বলে,
চলো খাবার খেয়ে নাও, অনেক বেলা হয়ে গেছে।

আদ্রিয়ানা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে খেতে বসে। আদ্রিয়ানা খাচ্ছে আদনান আদ্রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে।

মি…মিস্টার আদনান খাবেন?

হে…?

দে…. দেখুন মিস্টার আদনান খাওয়ার সময় কেউ যদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে আমার অস্বস্তি লাগে। এমন কি সরম ও করে।

ওও আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খাও আমি গেলাম। পাশের রুমেই আছি দরকার হলে ডাক দিও।

এই কথা বলে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় আদনান। সামনের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে ও আবার থেমে যায়। পিছনে ঘুরে আদ্রিয়ানার দিকে ঝুঁকে বলে।

কিভাবে ডাকতে বলছি মনে আছে তো ?

হু…. হুম আছে।

এখন একবার ডাক দাও তো।

এ….এখন তো কোন কিছুর দরকার হয় নিই। দরকার হলে ডাক দিবো।

আদনান মুচকি হেসে আদ্রিয়ানার কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। আদ্রিয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আদনান চলে যাওয়ার পর আদ্রিয়ানা খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সব কিছু গুছিয়ে রেখে রেখে আবার ও বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। চারদিকে জঙ্গল আর জঙ্গল।আদ্রিয়ানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারদিকের জঙ্গল দেখছে। এটা যেনো তার জীবনের প্রতীক – অন্ধকার, অজানা আর ভয়ংকর।

জঙ্গল যেমন বাইরে থেকে দেখতে শান্ত আর সুন্দর, ভেতরে তেমনই বিপদ আর অজানার ভয়। আদ্রিয়ানার জীবনটাও এখন ঠিক তেমনই – বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না ভেতরে কি ঘটছে। আদনানের মতো অজানা মানুষের সাথে সে এখন এই জঙ্গলের মতোই একটা অজানা পরিবেশে আটকে আছে। এই জঙ্গল যেনো আদ্রিয়ানার ভেতরের ভয় আর অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। সে জানেনা কি হবে,

চলবে

( ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ )

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply