জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০৮
আদ্রিসের গাড়িটা সোজা খান মেনশনের সামনে এসে থামে।
আদ্রিতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
“এ এখানে কেন এলাম? সবাইত”
আদ্রিস ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে আদ্রিতার হাত ধরে টেনে নামিয়েছে।
আদ্রিতা ভয়ে চুপ। আজ বাড়িতে কেউই নেই। আসরাফ খান, নেওয়াজ খানও চলে গিয়েছে। বাড়ির মেইন ডোরে গার্ড ছিল সে আদ্রিসের গাড়ি দেখে দরজা খুলেছে তড়িঘড়ি করে।
আদ্রিস , আদ্রিতাকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে। আদ্রিতা, এত দ্রুত হাঁটতে না পেরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। আদ্রিস বিরক্ত হয়ে ফিরে চায়। আদ্রিতার পায়ের মোচড় লেগেছে।
“আহহহহহ…..”
আদ্রিস নিচু হয়ে আদ্রিতার দিকে তাকায়। আদ্রিতার চোখ খুলে তাকায়। ব্যাথায় চোখে পানি চলে এসেছে।
“ভ ভা ভাইয়া৷”
আদ্রিতার মুখে ভাইয়া শুনে রাগটা আরও বেড়ে গেল আদ্রিসের। আদ্রিতার কনুই ধরে ফের দাঁড় করিয়ে কোন পরওয়া না করেই আদ্রিতাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে যায়। আদ্রিতার পায়ে জোর পায়না। এক প্রকার টানা হেচড়ার ফলেই সে ওত দুর গিয়ে পৌঁছায়।
আদ্রিতাকে, বিছনায় ধাক্কা মারতে আদ্রিতা ছুটে পড়ে সেখানে।
আদ্রিস তখনো রাগে ফুঁসছে। ওর মাথায় থেকে রক্ত পড়ে গলা ভিজে গিয়েছে। কাঁচা হলুদ রঙা পাঞ্জাবি তেও রক্ত লেগে আছে। কিছুটা তার এবং কিছুটা সাহেলের।
আদ্রিতা এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে নিজেকে পিছিয়ে নিতে চায় কিন্তু সক্ষম হয়না।
আদ্রিস ততক্ষণে তার পা ধরে নামিয়ে নেয়।
আদ্রিতার চোখে ভয়। শরীর ঘেমেছে। পরনের শাড়ি লপ্টে আছে শরীরে সাথে। মাথার চুল গুলো ঘাড় এবং কপালের সাথে লেপ্টে আছে ঘামের সাথে। আদ্রিসের মাথায় রাগ ছিল প্রচন্ড কিন্তু হুট করে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আদ্রিসের গলা শুঁকিয়ে আসতে লাগল। আদ্রিতার বুক ক্রমশ ওঠানামা করছে। শাড়িটা নিচ থেকে খুলে গিয়েছে। খোলা পেটের বাম পাশটা দৃশ্যমান।
আদ্রিসের চোখে ভয়ঙ্কর হিংস্রতা। কেমন গভীর ভাবে আদ্রিতাকে পর্যবেক্ষণের করছে।
আদ্রিতা পিছাতেও পারছে না। আদ্রিসের বাম হাতের কবলে তার পা। এতটা জোরে ধরেছে যে পায়ের রক্ত চলাচলও থেমে গিয়েছে।
“ল লাগছে। ছাড়ুন, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
আদ্রিস হুট করেই আদ্রিতার উপর চলে আসে।
আদ্রিতা, তখন দেখতে পায় আদ্রিসের ঘাড়ে লেগেছে। এবং সেই ক্ষত দিয়ে রক্ত চুইয়ে পড়ছে।
আদ্রিতার হাত আপনা আপনি সেখানে চলে যায়।
আদ্রিতার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
“কাঁদছিস কেন?”
আদ্রিতা সব ভুলে প্রশ্ন করে,
“ব্যাথা করে না আপনার? কতটা কেটে গিয়েছে।”
আদ্রিস যখন সাহেলের সাথে ধস্তাধস্তি করছিল তখন রাস্তার ঘর্ষণের ফলে আদ্রিসের ঘাড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।
আদ্রিসের চোখে নেশা। আদ্রিস একটা শুঁকনো ঢোক গিলে,
“করছে না ব্যাথা।”
“কিন্তু রক্ত বের হচ্ছে যে।”
আদ্রিস আর সহ্য পেলনা। নিরবে আদ্রিতার ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে ধরল। আদ্রিতার কাছে এসব নতুন কিন্তু আদ্রিসের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। সে যেটা বুঝতে পারবে আদ্রিতা সেটা বুঝবে না। তবে আদ্রিসের স্পর্শে আদ্রিতা নিরব হয়ে গিয়েছে। না নড়াচড়া করছে না আদ্রিস কে থামাচ্ছে। আদ্রিসের হাত যখন আদ্রিতার পেটে যায়। ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে আদ্রিতা কেঁপে ওঠে। আদ্রিতার কম্পন অনুভব করে আদ্রিস নিজেকে হারিয়ে ফেলছিল। হটাৎ করেই আদ্রিতাকে কামড় দিয়ে বসে আদ্রিস। যার ফলে আদ্রিতা চিৎকার করে ওঠে।
আদ্রিসের ধ্যান ফেরে। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আদ্রিস নিজের অবস্থান দেখে সরে আসে আদ্রিতার থেকে।
আদ্রিতা ধিরে চোখ খুলে তাকায়।
আদ্রিস সেখানে দাঁড়ায় না আর৷ যেতে যেতে বলে,
“ফ্রেশ হয়ে নে। আমার সার্ট পরবি। ফিরে এসে তোর মুখে এসব রংচঙ দেখতে চাইনা। “
আদ্রিস নিচে চলে যায়। আদ্রিতা উঠে বসে। পায়ের দিকে তাকায়। ফুলে উঠেছে পায়ের এক অংশ। আদ্রিতার চোখ ছলছল করে ওঠে।
সে নিচে নামতে ব্যাথা অনুভব করে চিৎকার করে ওঠে। আদ্রিস চিৎকার শুনে ফিরে আসে।
আদ্রিতার পা দেখে এগিয়ে আসে।
“কি হয়েছে?”
“হাটতে পারছি না।”
“তোকে ওখানে ফেলে আসলে ভালো হতো। খামোখা আমি বেতের কাটা পায়ে জড়াই৷”
আদ্রিতা ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় আদ্রিসের দিকে,
“আমি বেতের কাটা?”
“তার থেকেও পেইনফুল তুই। আমার পায়ে ফুটে পুরো শরীর টাকে বিষাক্ত বানিয়ে দেয় এমন বিষ কাটা তুই। আর কিছু শুনতে চাস?”
আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়। সে চুপ হয়ে গিয়েছে। আদ্রিস ওকে ওয়াসরুমে নিয়ে বাথটাবে বসিয়ে নিজের সার্ট প্যান্ট দিয়ে বেরিয়ে আসে।
আদ্রিতা হেঁচকি তোলে নিরবে।
সাওয়ার শেষ করে সে বেরিয়ে আসে। ওয়াসরুমের দরজা খুলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খাটে এসে বসে। আদ্রিস দাঁড়িয়ে ছিল আদ্রিতার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
তবে আদ্রিতাকে নিজ থেকে বিছনার কাছে আসতে দেখে আদ্রিস বেরিয়ে যায়।
আদ্রিতা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। আদ্রিস নিচ থেকে কিছু খাবার এনে আদ্রিতার সামনে রাখে।
“খেয়ে নে।”
“মিরা আপুর বিয়েতে যাব না?”..
“তোকে মেরে বালি চাপা দিয়ে দেব। আর একটা ফালতু প্রশ্ন কর।”
আদ্রিতা আর কিছু বলল না। সে খাবার গুলো খেয়ে নেয়। আদ্রিতাকে ইচ্ছে করেই বেশি খাবার দিয়েছে আদ্রিস। আদ্রিতা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। আদ্রিস দেখে আদ্রিতা গভীর ঘুমে মগ্ন।
আসরাফ খান পুরো বাড়িতে আদ্রিস এবং আদ্রিতাকে চিরুনি তল্লাশি করেছে। পায়নি কোথাও। তিনি এবার ফ্রাস্ট্রেড হয়ে যায়।
মাধবী বেগম তখনো অনুষ্ঠানে ব্যাস্ত।
আসরাফ খান, মাধবী বেগমের হাত ধরে পাশে নিয়ে আসেন।
“ও মা কি হলো তোমার?”
“আদ্রিস কোথায়? আদ্রিতা কেথায়?”
“আদ্রিস কোথায় সে খোঁজ রাখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আদ্রিতা, সাহেলের সাথে গিয়েছে।”
“কোথায়?”
“স্বপ্নে কাঁচা হলুদ আনতে।”
“এনেছে কি?”
“না এখনো আসেনি।”
আসরাফ খান আর কিছু বলেন না।
তবে বেশ সময় কেটে গেল কিছুক্ষণ পর আসরাফ খানের ফোনে ফোন আসে আদ্রিসের।
“তুমি কেথায় আদ্রিস?”.
” ড্যাড আমি বাড়িতে।”
“কেন?”
“সাহেল আদ্রিতাকে ফোর্স করছিল। জঙ্গলের দিকে নিয়ে। আমি সেখান থেকে ওকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি। আমি কাল আসব। এবং সাহেলের বাবা মাকে বলবেন এই কৈফিয়ত তাদের দিতে হবে।”
“সাহেল বেঁচে থাকলে অবশ্যই বিচার হবে।”
আদ্রিসের ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি। তবে সে হাসি আসরাফ খান দেখতে পেল না।
“ড্যাড এখন আমি কি জানি সে বেঁচে আছে না মরে গেছে। ওর মত কুলাঙ্গারের মৃত্যু ভালো।”
কথাটা বলে আদ্রিস ফোন কেটে দেয়। আসরাফ খান ঘামছে। কোন এক অজানা আশঙ্কা তার ভেতর বাসা বেঁধেছে। তিনি মনে প্রাণে চাইছে সাহেল যাতে জীবন্ত থাকে। নাহলে এরপর তাকে সব থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত টা নিতেই হবে।..
রাত ১ টা,
পরিত্যক্ত বাড়িটির ভেতর থেকে ভেসে আসছে কারোর চিৎকার।
ওদিকে কালো হুডি পরিহিত এক ব্যাক্তি সামনে বসে থাকা ছেলেটার সজ্ঞানে তার শরীর চিরে চামড়া আলাদা করছে।
ছেলেটার চিৎকার জেন প্রতিধ্বনি হয়ে রুমটার ভেতরেই থেকে যাচ্ছে। উপরের ঝুলন্ত আলোটা স্থির। রুমে বাতাসের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ছেলেটার হাতের চামড়া আলাদা হয়ে গেলে সে জ্ঞান হারায়। শেষ পর্যন্ত তার চিৎকার ছিল ভয়ানক।
হুডি পরিহিত ছেলেটা তাও থামল না। একে একে লাস থেকে সবটা চামড়া কুচে মাছের মত আলাদা করে ফেলে।
“এই কলিজা অনেক বড়। অনেক বড় এইটা। আমিও দেখতে চাই এই কলিজা টা।”..
কথাটা বলে লাসটার বুক বরাবর ছিড়ে তার ভেতর থেকে হৃদয় খানা বের করে ছেলেটা।
রক্তের শেষ ফোঁটা পর্যন্ত ছেলেটার শরীরে বিস্তৃত হয়ে যায়।
এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য সবার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।
রাত ২ টা। আদ্রিতা নিজের পেটে ঠান্ডা স্পর্শ অনুভব করে। সে ফিরে। আদ্রিস ঘুমিয়ে আছে। আদ্রিতা উঠে বসে। আদ্রিস এত ঠান্ডা কেন। এরপর লক্ষ করে আদ্রিসের শরীরে কম্বল নেই। আদ্রিতা তখন কম্বল টেনে দেয় আদ্রিসের শরীরে। আদ্রিতার কাছে স্বপ্ন ঠেকছে সব। ঘুমের কারণে সে বুঝতে পারছে না এটা সত্যি ঘটছে।
এরপর সে পুনরায় শুয়ে পড়ে এবং ঘুমিয়ে যায়। আদ্রিতা ঘুমিয়ে পড়তে আদ্রিস চোখ খুলে। সে ঠিকঠাক করে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে,
” ইউ স্মেল লাইক এ ভ্যানিলা ডেজার্ট বেবি। আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেলফ।”.
আদ্রিস জানেনা তাদের জীবনে কি ঘনিয়ে আসতে চলেছে।
হলুদের পোগ্রাম শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। মিরা আদ্রিতাকে না দেখে খুঁজছে আদ্রিতাকে।
সবাই খুঁজছে সাহেল, আদ্রিস, আদ্রিতা কেউই নেই।
সবার চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আসরাফ খান ডিনার শেষ করে এসে সবাইকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে? “
“আদ্রিতা, আদ্রিস, সাহেল কেউই ফেরেনি।”
আসরাফ খানের কন্ঠ গম্ভীর হয়ে আসে,
“সাহেল আদ্রিতাকে বাজে ভাবে ছোয়ার জন্য অন্য কোথাও নিয়ে গেছিল। আদ্রিস তাই আদ্রিতাকে নিয়ে মেনশনে গিয়েছে।”
কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক।
সাহেলের মা এগিয়ে আসে,
“কি বলছেন এইসব আমার সাহেল এমন নয়।”
“হয়ত এই কারনেই নিজের বাড়িতে মুখ লুকিয়েছে আপনাদের ফোন ধরছে না সে। কাল আসলে সব কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে।”
সাহেলের মাও কোথাও না কোথাও জানত সাহেলের চরিত্র সম্পর্কে তাই তিনি কথা বাড়ায় না।
এ কথার পর সবাই ঘুমাতে চলে যায়।
চলবে?
[ দু’টো গল্প লিখতে গিয়ে রিচেক দেওয়ার সময় পাইনা। ইনশাআল্লাহ আজ রাতে সব গুলো পর্ব রিচেক দিয়ে দেব। এই পর্বে বানান ভুল থাকলে ইগনোর করবেন। পারলে কাল সকালে আরেকবার পড়ে নিয়েন ]
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭