জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_১৬
আদ্রিসের হাত আদ্রিতার মাথার পেছনে। আদ্রিতাকে নিজের সাথে চেপে ধরেছে। তবে জেন্টাল ভাবে। যেন আদ্রিতা পড়ে না যায়।
আদ্রিতা আদ্রিসের কান্ডে অবাক হয়েই ছিল এমন সময় কারোর পায়ের শব্দ শুনে আদ্রিতা ঘাবড়ে যায়। আদ্রিসকে বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে করে আদ্রিস নড়েনা কিন্তু আদ্রিতার হাত দু’টো ধরে মাথার উপর চেপে ধরে।
আদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়। কেউ আসছে এভাবে দেখলে কি হবে। আদ্রিতা প্রচন্ড নড়ানড়ি করছে। আদ্রিস বিরক্ত হয়ে মাথা তুলে। আদ্রিতা এবার আদ্রিসকে ধাক্কা দিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়।
আদ্রিস কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে কারোর পদধ্বনি শোনা যায়।
আদ্রিস ফিরে চায়। প্রিয়া হাতে খাবার ট্রে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে,
“নিন বড় ভাই খেয়ে নিন।’
কথাটা বলে প্রিয়া বেরিয়ে যায়।
প্রিয়াকে এত দ্রুত বের হতে দেখে আদ্রিস ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
প্রিয়া বেরিয়ে বুকে হাত রাখে,
” ভাই কি দেখে ফেললাম আমি। ভাইয়া কি পাগল। পারলে খেয়েই ফেলে আদ্রিতাকে। আল্লাহ আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আদ্রিস ভাই এমন কেন। আদ্রিতা বার উম উম করছিল। আর ভাইয়া।
পাগল একটা।”
আদ্রিতা ফেরে প্রিয়া চলে গেলে।
আদ্রিস, আদ্রিতার দিকে তাকায়।
“কে মেরেছে?”
আদ্রিতা মাথা নামিয়ে নেয়।
“বাদ দিন।”
“কেন?”
“মিশু আপু মেরেছে।”
“কেন?”
“ওনার একটা জামা নষ্ট করে দিয়েছি তাই।”
[মিথ্যা বলল আদ্রিতা। ]
আদ্রিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে আদ্রিতা সত্যি বলছে না। ঠিক আছে সত্যি নাই বলুক সে বার করে নেবে।
আদ্রিস খাবার বেড়ে আদ্রিতার হাতে দেয়।
“খাইয়ে দে।”
“আমি?”
“হুম৷”
আদ্রিতা খাবার খাওয়ানো শুরু করে আদ্রিস কে। আদ্রিস খেতে খেতে ফোন স্ক্রল করছে।
আদ্রিসের শেষ হলে সে আদ্রিতাকেও খাইয়ে দেয়।
আসরাফ খান সবাইকে নিয়ে লিভিং রুমে বসে আছে।
আদ্রিস, নওশাদ মির্জার মুখোমুখি বসে আছে।
“বলুন আঙ্কেল কি বলবেন।’
” আমি আমার ছেলে রাফিনের সাথে প্রিয়ার বিয়ে দিয়ে চাই।”
আদ্রিস, বাবার দিকে তাকায়। আসরাফ খানের ঠোঁটে বিরাট হাসি।
আদ্রিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“তার বাবা লাভবান হবার জন্য কত কি করতে পারে।”
“ত আপনার ছেলে কত দুর পড়ালেখা করেছে?”
“এইত ডিগ্রি করছে। আসলে ইন্টারের পর পড়ালেখায় তেমন কোন ঝোঁক দেয়নিত। আমার বিজনেস সামলায়।”
“আমার বোন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করছে ফিজিক্সে।”
নওশাদ মির্জার মুখে লেগে থাকা হাসিটা উড়ে যায়। তার সাথে আসরাফ খানও।
“আদ্রিস কেমন কথা এগুলো? “
“বাবা তুমি এমন একটা ভ্যাড়ার সাথে আমার বোনের বিয়ে দিতে চাও যে অনার্স টা পর্যন্ত করেনি? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তোমার ছেলের রাশিয়া থাকে।।তোমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আর তুমি এন একটা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চাও।”
“ব্যাস আদ্রিস অনেক হয়েছে। তুমি এভাবে আমাকে অপমান করতে পারোনা।”
“অপমান করলাম কই আঙ্কেল? সত্য বললাম যে।”
“আদ্রিস বেশি হয়ে যাচ্ছে।”
“আমার বোন আপনার ছেলে সাথে বিয়ে দেবনা আঙ্কেল।”
“আদ্রিস অনেক হয়েছে থামো। আমি প্রিয়ার সাথে রাফিনের বিয়েটা দিতে চাই।”
“তুমি চাইলে কি হবে ড্যাড? প্রিয়া কি চায়?”
“প্রিয়ার চাওয়া না চাওয়াতে কিছু আশে যায় না। আমি ওর বাবা আমি যা চাইব তাই হবে।”
“বাহ। বাহ৷ আপনার কাছে নিজের প্রফিট টাই বড়?”
আসরাফ খান ঘাবড়ে গেলেন।
“আ আব ন না সেটা নয়।”
আদ্রিসের খালু আফজান শেখ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ান,
“আচ্ছা থাক থাক আদ্রিস, ইয়াং ম্যান থামো। ভাইয়া আপনিও থামেন। উই আর সরি মি.মির্জা। আদ্রিস না চাইলে ওর বোনকে জোর করে বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব নয়।”
নওশাদ মির্জা রেগে মেগে আফজাল শেখের দিকে তাকায়।
“মি.শেখ আপনাদের ছেলে এত অভদ্র জানতাম না।”
কথাটা বলে তিনি বেরিয়ে যায় তার স্ত্রী কে নিয়ে।
আসরাফ খান ওদের পেছন পেছন চলে যায়।
নেওয়াজ খান এগিয়ে আসেন আদ্রিসের কাছে,
“বাবাকে এত রাগাও কেন তুমি?”
আদ্রিস, নেওয়াজ খানের মুখের দিকে তাকায়
“হুহ, চাচা আপনার মত কাপুরুষের মুখে এ কথা মানায় না।’
আদ্রিস সরে যায় সে খান থেকে। নেওয়াজ খান অবাক হয়ে তাকায়।
” কি বেয়াদব ছেলে।’
প্রিয়ার রুমে বসে আছে আদ্রিতা।
প্রিয়া পানি পান করছে বোতল থেকে এমন সময় মিশু আর ঐশীও আসে সেখানে।।
ঐশী, আদ্রিতাকে দেখে ভেংচি কাটে।
“প্রিয়া আপু জানো কি হয়েছে?”
প্রিয়া বোতলের মুখ লাগিয়ে টেবিলে রাখে,
“কি?”
“বাহিরের মেয়েটাকে বের হতে বলো সব খুলে বলছি।”
প্রিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
“বাহিরের মেয়ে কে?”
ঐশী , ইসারা করে আদ্রিতাকে দেখায়। আদ্রিতা সেটা বুঝতে পেরে যখন উঠতে যাবে। প্রিয়া এসে আদ্রিতার হাত ধরে বসে।
“ভুল বলছো ঐশী আদ্রিতা এ বংশের মেয়ে। যদি বাহিরের কেউ হয় এখানে সেটা শেখ বংশের কেউ হতে পারে।’
ঐশী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
” আপু ভুলে যেও না কিছুদিন পর আমার আর আদ্রিস ভাইয়ার বিয়ে হবে।’
কথাটা শোনা মাত্র আদ্রিতা মাথা তুলে তাকায়। হটাৎ এমন কিছু শোনার জন্য আদ্রিতা প্রস্তুত ছিলনা।
প্রিয়া বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়,
“তা তোমার আর ভাইয়ার যে বিয়ে কথাটা আদ্রিস ভাইয়া জানে কি?”
“জানবে। যখন হবে সবাই জানবে।’
প্রিয়া বিরক্ত হয়। বেয়াহা মেয়ে ছেলের সাথে মুখ লাগতেও এনার্জি লাগে। এই মুহুর্তে সে সেটা পাচ্ছে না।
” ডেয়ার ঐশী। প্লিজ বলো তোমার কি প্রয়োজন। বা কি বলতে এসেছিলে?”
ঐশী খুশি হয়ে চেয়ারে বসে,
“এইত এই ভাবেই ভাইয়ের বউকে সম্মান করতে শেখো।’
প্রিয়া মনে মনে বলে,
” পারলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেই।”
“কিছু বলছো মনে মনে?”
“না না কি বলব। তুমিই বলো। আমার আসলে ঝগড়া করার এনার্জি নাই।”.
ঐশী সব খুলে বলে লিভিং রুমে যা যা হয়েছে।
” ও আচ্ছা। ভালোই হয়েছে। আদ্রিস ভাইয়া বেস্ট টাই করবে আমার জন্য।’
“হ্যাঁ তোমার ভাইটা একেবারে জেন্টাল ম্যান।”
প্রিয়ার মনে পড়ে যায় কিছুক্ষণ আগের কথা। সে আদ্রিতার দিকে তাকায়। এমন ভাবে চেপে ধরে রেখেছিল যেন মেয়েটার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় টুকু পায়নি। বিয়ের আগেই এমন ভয়ানক। বিয়ের পর কি করবে। ওত একটা সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করবে না। আদ্রিতার গলায় দাগ হয়ে আছে। কাছ থেকে দেখলে দাঁতের ছাপ বোঝা যায়। আদ্রিতার ঠোঁট টাও স্বালেন হয়ে আছে।
আদ্রিস আর জেন্টাল। সম্ভব এটা। আদ্রিস যদি জেন্টাল হয়, তাহলে ওটা জেন্টাল ম্যান নয় ওটা হবে #জেন্টাল_মন্সটার।
“কি হলো প্রিয়া আপু হারিয়ে গেলে কি?’
” হ হ্যা। না না। কোথায় হারিয়ে যাব।’
“বলো আদ্রিস একটা জেন্টাল ম্যান তাই না?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। জেন্টাল ম্যান নাকি মন্সটার সেটা ওর ভবিষ্যৎ বউই বুঝবে। আমরা বোন মানুষ আমরা কি বুঝব বলো।”
কথাটা বলার সময় প্রিয়া, আদ্রিতাকে কনুই দিয়ে গুঁতা দেয়। আদ্রুতা লজ্জা পেয়ে যায়। তারও কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়ে যায়।
ঐশী, প্রিয়ার কনুই দিয়ে আঘাত করাটা দেখে ফেলে।
ঐশী বিরক্ত হয়।
প্রিয়া এবার কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,
“খালামনি, আর আঙ্কেল, জারিফত চলে গিয়েছে। তুমি যাওনি ঐশী?”
ঐশী এবার বাঁকা হাসে,
“নাহ আমি যাবনা। আমি আজ থেকে এখানেই থাকব।”
কথাটা শোনা মাত্র উপস্থিত সবাই কিহ বলে ওঠে। তাদের ভেতর মিশুও ছিল। ঐশী এক দু দিন ভালোই থাকে। কিন্তু ওকে এর বেশি সহ্য করা কারোর পক্ষে সম্ভব না।
আদ্রিতা কিহ বলেনি। ও তাকিয়ে থাকে মিশু আর প্রিয়ার দিকে।
ঐশী ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“কিহ মানে কি? থাকতে পারিনা? মিশু আপু তুমিও?”
“আরে না না ওভাবে বলিনি। বলেছি কিইইই। কত মজা হবে ঐশী তাহলে।’
ঐশী হেসে দেয়।
” হ্যাঁ অনেক মজা হবে। আমি চেষ্টা করব আদ্রিসের সব কাজ নিজের হাতে করার।’
প্রিয়া চোখ উল্টে নেয়।
“রোজ রোজ ড্রামা আর সিক্রেট দেখার জন্য প্রস্তুত হতে হবে দেখছি।’
” কিছু বললে প্রিয়া আপু?”
“কই নাত। কিছু বলিনি।’
আদ্রিতা সবার মাঝেই বসে ছিল। এমন সময় হটাৎ প্রিয়ার রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে আদ্রিস।
“এ আদ্রিতা।’
রুক্ষ গুরুগম্ভীর আর বেয়াদব মার্কা ডাক এটা।
আদ্রিতা ফিরে চায়। আদ্রিস দাঁড়িয়ে দরজার কাছে।
ঐশী আদ্রিসকে দেখে উঠে দাঁড়ায়,
” আদ্রিস। আমাকে বলো কি হয়েছে! “
“তোমার নাম কি আদ্রিতা?”
“না।”
“তাহলে যাকে ডেকেছি তাকে সাড়া দিয়ে সময় দেও।”
ঐশী চুপ হয়ে যায়। প্রিয়া মুখ টিপে হাসে,
“রুমে আয়। কাজ আছে।’
আদ্রিতা হেঁটে আদ্রিসের পিছু পিছু যায়।
আদ্রিতার ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে একটা বাড়ি দিয়ে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।
জ্বালিয়ে ছাড়ল।
আদ্রিতার ভাবনার মাঝে হটাৎ আদ্রিতা হাতে টান খেয়ে সোজা আদ্রিসের বুকে আছড়ে পড়ে। আদ্রিতা হটাৎ হওয়া কান্ডে অবাক হয়ে যায়।
” আমাকে মারলে তোর বাচ্চা জন্মের আগেই ড্যাড হারাবে। তাই আমাকে মারার কথা কল্পনা করিস না।”
“ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।”
“ত আমার তাতে কি?”
“আপনার না হোক আমার ঠিকই হবে।’
আদ্রিস, বাঁকা হেসে আদ্রিতাকে টেনে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
এদিকে ঠিক বিপরীত পাশ থেকে আদ্রিসের এসব কান্ড দেখছিল মাধবী বেগম। চোখে তার ক্রোধ স্পষ্ট।
” দু টাকার রাস্তার মেয়ের জন্য আমার ছেলেটা এতটা ভয়ানক হয়ে উঠবে। তাও আমাদের বিরুদ্ধেই। এটার একটা ব্যাবস্থা করতেই হচ্ছে।”
চলবে?
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৯
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭