Golpo

চোরাবালির পিছুটানে পর্ব ১


“শুনছো..আমি প্রেগন্যান্ট!”…. কথাটা বলার সাথে সাথে একটা শক্তপোক্ত হাতের চড় বসে গেলো রাহার গালে। সাথে সাথে ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেলো। যার জন্য রাহা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

রাহা ছলছল চোখে সামনে তাকিয়ে বলে,

“রাজ ভাইয়া তুমি মারছো কেনো?”

রাজ চোয়ালে শক্ত করে বলে,

“আমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছিস মানে কি? আমি এই বাচ্চা চাই না!”

রাহার চোখ পানিতে টলমল করছে।

“এই বাচ্চা চাও না মানে? এই বাচ্চা আমার আর তোমার ভালোবাসার অংশ। ওকে চাও না কেনো? আর তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো? তুমি তো খুশি হওয়ার কথা।”

রাজ শক্ত গলায় বলে,

“দেখ, এতকিছুর হিসেব-নিকাশ আমার কাছে চাইবি না। আমার এই বাচ্চা চাই না মানে চাই না।”

রাহা কৌতূহল নিয়ে বলে ,

“কেনো চাও না? তুমি কি আমাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে জানাতে ভয় পাচ্ছো? আমরা তো লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছি আর এখন আমাদের সন্তান আসতে চলেছে। দেখবে সবাই মানবেই।”

রাজ রাহার কথায় আরও রেগে বলে,

“শোন, তোকে লুকিয়ে বিয়ে করেছিলাম বলে যে এখন সবাইকে জানাতে হবে এটা ভুলে যা! আমি জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না।”

রাহা কেঁদে কেঁদে বলে,

“তুমি কি বলছো এগুলো? প্রয়োজন মনে করছো না মানে? তুমি তো আমায় ভালোবাসতে তাই বিয়ে করেছিলে এখন কেনো প্রয়োজন মনে করছো না?”

রাজ গভীর গলায় বলে,

“তোর থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য লুকিয়ে বিয়ে করেছিলাম।”

রাহা কান্না থামিয়ে বলে,

“প্রতিশোধ! কিসের প্রতিশোধ!”

রাজ রাহার কাছে এসে বাঁকা হেসে বলে,

“মনে পড়ে তোর ভাই আমার বোনের সাথে ভালোবাসার নাটক করেছিলো। আমার বোন বাড়ির সবাইকে বলেছিলো সেদিন, সবাই সেটা বিশ্বাসও করেছিলো। এরপরে তোর ভাই কি করলো! সবার সামনে অস্বীকার করলো। সেইদিনের পর থেকে আমার বোন লজ্জায় আর আমাদের সামনে আসেনি।”

রাহা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে কাঁদতে লাগলো। রাজও রাহার সামনে হাঁটুতে ভর করে বসে বলে,

“শুনেছিস আমি কি বলেছি! আমার বোন তোর ভাইয়ের জন্য আর বাসায় ফিরেনি। তোর ভাই আমার বোনের সাথে যা যা করেছে তোর সাথেও আমি তাই তাই করেছি। অবশ্য বেশি বেশি করে ফেলেছি। এখন আমি আমার বোনকে পেয়ে গিয়েছি। ওকে এখন বাড়িতে নিয়ে আসবো। তোকে আর এখন আমার প্রয়োজন নেই!”

রাজের কথা গুলো শুনে রাহার মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। কাপা কণ্ঠে বলে উঠে,

“তুমি আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে এমনটা করলে কেনো? ভুল করেছে আমার ভাই। আর এই বাচ্চা! বাচ্চার কি হবে? বাচ্চাটা এখনও দুনিয়ায় এলো না।”

রাজ শক্ত গলায় বলে,

“বাচ্চা দুনিয়ায় আসেনি যখন, তাহলে আর কোনোদিন আসবে না। আমার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ! তু্ই বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেল!”

রাহা ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে বলে,

“তুমি প্রতিশোধের জন্য একটা নিষ্পাপ প্রাণ মেরে ফেলবে!”

রাজ রাহার চোয়ালে চেপে ধরে বলে,

“এই শোন তোর জ্ঞান শুনতে চাই না আমি! বাচ্চাটা দুনিয়ায় আসবে না মানে আসবে না।”

রাহা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে বলে,

“তাহলে আমায় বিয়ে কেনো করলে? আমায় তো খুব ভালোবেসেছিলে। বউ করেছিলে, দিনের পর দিন আমার উপরে স্বামীর অধিকার দেখিয়েছো। আর বিয়ের সময় তো বলেছিলে সবাইকে জানাবে আর এখন কাপুরুষের মতো কেনো অস্বীকার করছো?”

“চুপ! আর একটা কথাও বলবি না। তোকে বিয়ে করেছি এটার কোনো প্রমান আছে তোর কাছে?”

রাহা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। মুহূর্তেই মনে হলো তার দুনিয়া থমকে দাঁড়িয়েছে। রাজ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে,

“কিরে বল! তোর কাছে প্রমান আছে?”

“না। নেই!”

“তাহলে ধরে নে আমাদের বিয়েই হয়নি। আর রইলো বাচ্চা। বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলিস।”

এই বলে রাজ রাহাকে ছেড়ে দেয়। রাহা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“প্লিজ তুমি বাচ্চাটাকে অন্তত দুনিয়ায় আসতে দাও!”

রাজ রাহার মুখোমুখি হয়ে বলে,

“দেখ, তোকে পনেরো দিন সময় দিচ্ছি, তু্ই কি করে বাচ্চা নষ্ট করবি তোর ব্যাপার। তবে আমি এসে যদি দেখি বাচ্চা টা এখনও কিছু করিসনি তাহলে কি করে বাচ্চাটা নষ্ট করতে হয় আমার থেকে ভালো কেউ জানবে না।”

রাহা রাজের দুগালে হাত রেখে করুন সুরে বলে,

“তুমি এমন টা করতে বলো না, তোমার তো আমার সাথে ভালোবাসা নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া শেষ। তোমার বোনকেও পেয়ে গিয়েছো তাহলে এখন আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি ভাইয়াকে বলবো মিষ্টির জীবনে আবার ফিরে আসতে। তুমি এই বাচ্চাটাকে দুনিয়ায় আসতে দাও। আমি কোনোদিন তোমার কাছে কিচ্ছু চাইবো না।”

রাজ রাহার হাতটা সরিয়ে কঠিন গলায় বলে,

“আমার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ। আমি এই বাচ্চা চাই না। সামনের মাসের ১ তারিখে বাড়িতে আসবো। এর মধ্যে বাচ্চাটা করিয়ে নিবি।”

রাহাকে আর একটা কথা বলারও সুযোগ দিলো না রাজ। উঠে দাঁড়িয়ে রুমের দরজা খুলে চলে গেলো। চলে যাওয়ার আগে রাহার মুখপানে একবার তাকালো। যা রাহা দেখলো না।

রাহা ফ্লোরে হাউমাউ করে কাঁদছে। কি করবে এখন সে? কাউকে বলতেও পারবে না এখন কারণ রাজ তাকে ও তার বাচ্চাকেই অস্বীকার করেছে। এখন বলেও লাভ হবে না।

রাহা চোখ-মুখ মুছে উঠে দাড়ালো। ভেঙে পড়লে হবে না। আর ভেঙে পড়ার মেয়ে রাহা নয়। কঠিন সময়ে ভেঙে পড়ার মতো শিক্ষা তার বাবা-মা দেয়নি।


পরিচয়ে আসা যাক,
রাহা রাজের ছোট চাচার মেয়ে। রাজের বাবার নাম শাহরিয়ার রাশেদ চৌধুরী। মায়ের নাম সায়মা চৌধুরী। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম শাহরিয়ার চৌধুরী রাজ। আর মেয়ের নাম নিশিতা চৌধুরী মিষ্টি।

রাশেদ চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের নাম শাহরিয়ার রুবেল চৌধুরী। তার স্ত্রীর নাম রুমানা চৌধুরী। তাঁদেরও এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম শাহরিয়ার চৌধুরী রাদিফ। আর মেয়ের নাম রাহা চৌধুরী। সবার চোখের মনি রাহা।


এই নিয়ে কয়েক দিন চলে গেলো। রাহা ভেবে পাচ্ছে না কি করবে। একদিকে রাজের অস্বীকার করা আরেকদিকে ভালোবাসার অংশ আসতে চলেছে। এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাহা এই কয়েকদিনে ঘর থেকেই বের হয়নি।

সেইদিন বিকেলেই রাহা বন্ধুদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়িতে থেকে বের হলো। রাহার হাত-পা কাঁপছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এই বাচ্চাটা একা একা কি করে মানুষ করবে!

রাহা একটা রিক্সা নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে গেলো। বাড়িতে গাড়ি ছিলো কিন্তু নিয়ে আসেনি। হঠাৎ রাহার মনে হলো একটা কালো গাড়ি তাকে ফলো করছে। রাহা মনের ভুল ভেবে তেমন একটা আমলে নিলো না।

রাহা হসপিটালের সামনে নেমে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দিলো। হসপিটালে ঢুকতেও রাহার পা দুটো কাঁপছে। চোখ দিয়ে তো জল পড়ছেই। রাহা যেই হসপিটালের ভিতরে ঢুকবে ঠিক তখন একটা অপরিচিত ছেলে এসে ডাক দেয়। রাহা পেছন ফিরে তাকায়।

“আপু আপনার নাম রাহা?”

রাহা স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়,

“হ্যা আমার নাম রাহা!”

ছেলেটি বলে,

“আপু আমার বোন অসুস্থ তো ওই যে গাড়িতে বসে আছে। আপনাকে দেখা মাত্রই আমাকে বললো আপনি নাকি তার বান্ধবী। আর আপনাকে ডেকে নিয়ে আসতে বললো। একটু আমার বোনের সাথে দেখা করবেন?”

রাহা সম্মতি জানিয়ে বলে,

“হুম চলুন!”

রাহা সেই ছেলেটার সাথে একটা গাড়ির কাছে গেলো। গাড়িটা সম্পূর্ণ কালো, বাহিরে থেকে ভিতরের কাউকেই স্পষ্ট বোঝা গেলো না। ছেলেটা বলে,

“আপু আমার বোন ভিতরে আছে। গাড়ির দরজাটা খুলে কথা বলুন!”

রাহা গাড়ির দরজা খুলতেই ভিতরে থেকে আরেকটা ছেলে হেঁচকা টান দিয়ে রাহাকে ভিতরে নিয়ে বসায়। রাহা ভয় পেয়ে বলে,

“আপনারা কারা আর আমাকে ধরেছেন কেনো? আর এখানে না বললেন আমার কোন বান্ধবী ডাকছে। আপনারা কি করতে চাইছেন বলুন তো? আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক ডাকবো!”

একটা ছেলে রাহার মুখের সামনে একটা কাগজ এনে বলে,

“আপু সব বলছি। আগে দেখুনতো এই ঠিকানাটা কোথায়?”

রাহা কাগজটা সামনে নিতেই সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে যায়।

ঘন্টাখানিক পরে রাহার জ্ঞান ফিরলো। চোখ খুলে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করলো। পরক্ষনেই বুঝে গেলো সে তার নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে আছে।

চলবে….

গল্প: #চোরাবালির_পিছুটানে

সূচনা_পর্ব

কলমে: #জেরিন_আক্তার

নতুন গল্প। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না। আর এই পার্টটা ভালো লাগলে বেশি বেশি রেসপন্স করবেন!!!!!!

[হেশট্যাগ ব্যবহার ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply