একশ্রাবণমেঘেরদিনে #সুখময়যন্ত্রনা_তুমি
neela_rahman
পর্ব ৪
“হ্যালো পাপা তোমরা কখন আসবে বাড়িতে ?”প্রশ্ন করলো তানিয়া।তানিয়া প্রশ্নের উত্তর দিল জহির সাহেব । বললো,” আমাদের আর তিন চার দিন লাগবে আম্মু ।তুমি থাকো এখানে সমস্যা নেই আর তাছাড়া আমাদের তো কনসেন্ট আছেই ।কোন প্রবলেম নেই আমরা সময়মতো পৌঁছে যাব।”
“ঠিক আছে পাপা তবে তোমাদের এখানে এসে কথা বললে ভাল হত ।যদিও শ্রাবণ এখনো ওর বাবার সাথে কথা বলেনি বললে তোমাদেরকে জানাবো ।তোমরা তাদের সাথে কথা বলে ডেটটা ফিক্সড করে নিও।আগে না হয় এনগেজমেন্টটা হয়ে থাকলো একমাস পরে বিয়ে করবো সমস্যা নেই ।তোমাদের ট্যুর শেষ হলে তারপরেই অনুষ্ঠান করব।”বললো তানিয়া।
তানিয়ার বাবা জহির সাহেব ফোন রেখে দিলেন ।পুরো নাম জহির রায়হান। বিজনেস ম্যান। বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরেই থাকে।মেয়ের সাথে কথা বলা শেষে ফোন রাখলেন জহির রায়হান।তানিয়া ফোন রেখে দিল ।আর ৩-৪ দিন পরে ফিরবে জহির রায়হান।তিন চারদিন এই বাড়িতেই থাকতে হবে ।তানিয়া রুম থেকে বের হয়ে নিচের দিকে আসলো সবার সাথে একটু কথা বলতে হবে ।পরিচিতি বাড়াতে হবে কয়দিন পরে এ বাড়ির বউ হবে ।এখনো কারো সাথে তেমন একটা ভালো করে কথাবার্তা হলো না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পার করেছে দিন তানিয়া।
তানিয়া নিচে আসতেই দেখল শ্রাবণ ড্রয়িং রুমে বসে তার বাবা এবং ছোট বাবার সাথে কথা বলছে ।অন্য সোফায় বসে আছে লামিয়া(রিমা) এবং সিয়াম(সায়মন)। দুপুরে খাবার টেবিলে বসে সবার নাম শুনেছিল তানিয়া তাই এখন আর চিনতে সমস্যা হয় না। কিন্তু চোখ এদিক ওদিক ঘুরিয়ে তানিয়া কোথাও মেঘলা কে দেখতে পেল না ।মেঘলা কে দেখলে কেমন যেন লাগে তানিয়ার ।লামিয়া ও সুন্দরী তবে লামিয়া তো শ্রাবণের আপন বোন তাই সমস্যা হয় না কিন্তু মেঘলা এত সুন্দরী মেঘলা কে শ্রাবণের আশেপাশে দেখলে কেন যেন ভালো লাগে না তানিয়ার ।শ্রাবণের আশেপাশে কোন সুন্দরী মেয়ে তানিয়া সহ্য করতে পারে না ।যদিও শ্রাবণের সাথে ওর কখনো সেরকম সখ্যতা বা ভালোবাসার সম্পর্ক হয়নি তবে শ্রাবণ ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে।
হয়তো তানিয়ার প্রতি এতটা টান শ্রাবণ অনুভব করে না তাই সবকিছুতেই হিংসে বা জেলাসি হয় তানিয়ার।
তানিয়া এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চুপচাপ হেঁটে এসে ড্রয়িং রুমে শ্রাবণের পাশে বসে পড়ল । শ্রাবণ হঠাৎ যেন চমকে উঠল তানিয়া পাশে বসায় ।কখনো শ্রাবণের সাথে তানিয়ার এত ঘনিষ্ঠতা ছিলে না বা নেই যে এতো টা পাশাপাশি বসবে ।তাও বাবা এবং ছোট আব্বু রয়েছে এখানে ।শ্রাবণ তানিয়াকে ইশারা করলে একটু সরে বসতে ।তানিয়া যেন শ্রাবণের ইশারা বুঝতে পারল একটু সরে বসলেও একেবারে উঠে গেল না।
যেন তানিয়া সবাইকে শ্রাবণের উপর নিজের অধিকারবোধ দেখাতে চায় ।তাদের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ সেটা বোঝাতে চায় যদিও শ্রাবণ এসব কিছুই মনে করে না ।হ্যাঁ বিয়েতে রাজি হয়েছে বন্ধুত্ব আছে।কিন্তু দুজনের মধ্যে প্রেম ঘটিত কোনো ব্যাপার নেই ।টান বা মোহ সেটা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
হঠাৎ দরজার কাছেই শব্দ হলো জোরে ভাইয়া বলে চিৎকার করছে কেও।শ্রাবণ বুঝতে পারল রাফি এসেছে ।সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ।দেখল দৌড়ে দৌড়ে রাফি আসছে ।ভিডিও কলে সবসময় রাফির সাথে কথা হতো ।রাফি এসেই শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে বললো,” ভাইয়া।”
শ্রাবণ রাফির গাল টেনে বললো,” কিরে কত বড় হয়ে গেছিস তুই ?একটা ডাম্বেল বাচ্চা রেখে গিয়েছিলাম এখন তো ডাম্বেল টা বড় হয়ে গেছে।”
রাফি সাথে সাথে গাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,” ভাইয়া ডাম্বেল বলবে না আমি এখন বড় হয়েছি ।আমার গার্লফ্রেন্ড আছে এখানে ।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে গেল । বললো,” গার্লফ্রেন্ড ?তোর ?তাও এখানে ?কে?”
রাফি বললো,” বাবা এতো প্রশ্ন তাও এক সাথে?রাফি সাথে সাথে সিঁড়ির দিকে আঙ্গুল তাক করে দেখালো ওই যে মেঘলা ।আমার মেঘলা ও আমার গার্লফ্রেন্ড হয়।”
সাথে সাথেই সবাই হেসে উঠলো।সিয়াম বললো,” ইচড়ে পাকা একটা।”
শ্রাবণ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সিঁড়ির দিকে ।দেখল মেঘলা নাম ছিল ।শ্রাবণের হাসিটা যেন হঠাৎ উবে গেল । চোখ সরিয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে বললো,” ও তো তোর বড় হয় ?ও কি করে তোর গার্লফ্রেন্ড হবে?”
রাফি বললো,” তা আমি জানিনা ।ও আমার বড় হোক আর যাই হোক ,বড় হয়ে আমি ওকে বিয়ে করব ।কারণ আমি ওকে ভালবাসি ।ওকে আমার ভীষণ ভালো লাগে ভাইয়া।”
শ্রাবণ আবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মেঘলার দিকে ।এদিকে রাফিও তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে ।দুই ভাইয়ের দৃষ্টি মেঘলার দিকে । দুজনের দৃষ্টি মেঘলার দিকে থাকলেও দুজনে দৃষ্টির অর্থ যেন এক নয় ।একজন তাকে আছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরেকজন তাকিয়ে আছে এই সম্পর্ক আর থাকবে না কিছুদিন পর মুক্ত হয়ে যাবে এ সম্পর্ক থেকে তাই অনুশোচনা বা অপরাধবোধ জানে না তবে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ মেঘলার দিকে।
মেঘলা নিচে নেমে এলো কিন্তু তাকালো না শ্রাবণের দিকে বা তানিয়ার দিকে ।রাফির দিকে তাকিয়ে বললো,” কিরে রাফি কখন আসলি তুই ?”
রাফির মনটা খারাপ হয়ে গেল ।মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো,” কতবার বলেছি তুমি আমাকে তুই করে বলবে না তুমি করে বলবে।”
মেঘলা বললো,” কেন রাফি?”
রাফি বললো,”আছে কারণ আছে তুমি আমাকে তুমি করে বলবে ।কখনো তুই করে বলবে না।”
মেঘলা হাসতে হাসতে রাফির মাথা চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,” ঠিক আছে তুমি করে বলবো এবার খুশি রাফি সো*না?”
রাফির প্রথম ভালোবাসা মেঘলা ।মেঘলার মুখে রাফি সো*না কথাটা শুনে যেন রাফির হৃদয়ের স্পন্দন কয়েকটি থেমে গেল।
মেঘলার দিকে তাকিয়ে লাজুক এসে বললো,” ঠিক আছে খুশি ।”
এদিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল শ্রাবণ ।কি হচ্ছে সামনে ?ছোট পুঁচকে একটা বাচ্চা আরো পুঁচকে একটা বাচ্চাকে ভালোবেসে যাচ্ছে তাও সবার সামনে ! আর এই মেয়ে ও বলি হারি কি সুন্দর করে চুল এলোমেলো করে দিয়ে রাফি সো*না বলে ডাকছে। শুধু শুধু বাচ্চা ছেলেটাকে আশা দিচ্ছে যেখানে কখনোই কিছু হবার নয় ।বয়সের পার্থক্য দুজনের চার বছর প্লাস। মনে মনে বিরক্ত হলো মেঘলার প্রতি শ্রাবণ।মেয়েদের এসব ন্যাকামোর কারণেই ছেলেরা ধ্বংস হয়ে যায় ।এখন রাফি ছোটবেলা থেকে ওকে ভালোবেসে বড় হচ্ছে অথচ কি বাজে ভাবে না প্রতারিত হবে কিছুদিন পর।
মেঘলা গিয়ে লামিয়ার সাথে সোফায় বসতেই রাফি শ্রাবণের হাত টেনে বললো,” ভাই আমাদের জন্য কি কি নিয়ে এসেছ তাড়াতাড়ি খুলে দেখাও।”
শ্রাবণ বাড়ির কেয়ারটেকার মনিরকে দিয়ে উপর থেকে দুটো লাগেজ নামিয়ে আনালো ।নামিয়ে আনতেই সবাইকে ডাকলো। সাবিহা সুলতানা এবং আসমা বেগম দুজনও আসলেন। শহিদুল খান এবং সাজ্জাদ খান পাশাপাশি বসে আছেন ।বাচ্চাদের ব্যাপার-স্যাপার কি সব নিয়ে এসেছে বাচ্চারা খুলে দেখবে তাই তারা ততটা ঘাটালেন না।
লামিয়া রাফি তানিয়া সবাই উৎসুক হয়ে ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে ।শ্রাবণ খুশি মনে ব্যাগ খুলছিল একটি একটি করে উপহার বের করতে শুরু করল। সর্বপ্রথম বের করল রাফির জন্য একটি আ্যপল ওয়াচ।একটি আইপ্যাড। গেইমস।
লামিয়ার জন্য শ্যাম্পু কন্ডিশনার হুদা বিউটি লিপস্টিক ফাউন্ডেশন কি কিনে নি।সবকিছু সেট করে নিয়ে এক প্যাকেটে করে নিয়ে এসেছে বোনের জন্য ।সবকিছু তুলে দিল লামিয়ার হাতে ।লামিয়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে শ্রাবণকে চু*মু খেয়ে বলে ধন্যবাদ ভাইয়া।
শহিদুল খানের জন্য একটি অ্যাপেল ওয়াচ এবং প্রেশার মাপার ডিজিটাল যন্ত্র তাছাড়া আরো কিছু টুকিটাকি জিনিস গিফট করলো ওনার পছন্দের। ছোট আব্বু সাজ্জাদ খানের জন্য দুটো পারফিউম ।সাজ্জাদ খানের আবার পারফিউমের খুব শখ তাই ভালো ব্র্যান্ডের দুটি পারফিউম গিফট করলো। যদিও শ্রাবণের মাথায় তাদের কথা ছিল না কিন্তু যেহেতু এখানে সবাই উপস্থিত আছে তাই শ্রাবণ নিজের জন্য যা এনেছে সেটাই ছোট আব্বুর হাতে তুলে দিল ।যদিও সাজ্জাদ খান বুঝতে পেরেছে তবু ভদ্রতার খাতিরে নিয়ে নিল কারণ যেহেতু শ্রাবণ জানতো না সাজ্জাদ খান তার ফুল ফ্যামিলি নিয়ে এখানে আছে তাই ওকে অতটা দোষ দেওয়া যাবে না ।তাই ভদ্রতার খাতিরে পারফিউমের বোতল দুটো হাতে নিয়ে নিল।
সিয়াম জানে এখন যা বের করে সিয়ামের হাতে দেওয়া হবে এটাও সিয়ামের জন্য আনা হয়নি কারণ সিয়ামরা এখানে ছিল এটা শ্রাবণ ভাইয়ের জানার কথা নয়।
সিয়াম কে শ্রাবণ নিজের আরেকটি ল্যাপটপ যেটি নিজের জন্য নিয়েছিল সেটি দিলো।ওর বর্তমান ল্যাপটপ টা একটু প্রবলেম থাকার কারণে নতুন টা এনেছিলো।তবে এখন আনপ্যাক করা হয়নি বুদ্ধি করে সিয়ামের হাতে দিয়ে বলল এটি তোর।
সাবিহা সুলতানা এবং মা আসমা বেগমের জন্য দুটো খুব সুন্দর পাকিস্তানি চাঁদর আমেরিকা পাকিস্তানের স্টল বসেছিল সেখান থেকে দুটো নিয়ে ছিল দুটোই দুজনকে দিয়ে দিল এবং সাথে রান্নাঘরের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ভালো ভালো ব্র্যান্ডের জিনিস যেগুলো মহিলা মানুষের পছন্দ সেগুলি তুলে দিল।
সমস্যা হয়ে গেল মেঘলার জন্য কিছু নেই কারণ লামিয়ার জন্য যেগুলো এনেছে সেগুলো শুধু একটা প্যাকেট করা তাই সেগুলো খুলে আলাদা করে দিতে পারেনি ।এখন মেঘলা কে কি দিবে আমতা আমতা করতে লাগলো শ্রাবণ।শ্রাবণ এরকম একটি বিদঘুটে সিচুয়েশন থেকে বাঁচতে কি করবে বুঝতে পারছিল না ।সবার কথা মনে রাখা উচিত ছিল শ্রাবণের যদিও তারা এই বাড়িতে ছিল না কিন্তু শ্রাবন একদম তাদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে ফেলেনি শুধু বিয়েটা মানে না ।নিজেকে নিজে চাপড়াতে ইচ্ছে করছে শ্রাবণের ।কেমন একটা বাজে সিচুয়েশন হয়ে গেল সবার সামনে।
শ্রাবণ লাগেজের ভিতরে হাত দিয়ে বুদ্ধি করে নিজের জন্য কেনা নতুন আইফোনটা বের করে মেঘলা দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ,”নে এটি তোর জন্য।”
মেঘলা সাথে সাথে বললো,”না লাগবে না।এত দামি উপহার যেটা আমার জন্য আনেননি সেটা শুধু শুধু আমাকে দিতে হবে না লোক দেখানো জন্য।লোক দেখানো কোন কিছুই আমার পছন্দ না।”
এই সিচুয়েশনটা থেকে বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু মেঘলা স্ট্রেট ফরোয়ার্ড সবকিছু বলে দিল ।মেঘলা আবার বললো,”যেহেতু আমাদের জন্য আনেননি সেহেতু আমাদেরকে দিয়ে এগুলো শুধু শুধু নাটক করে লাভ কি ?আপনি তো এগুলো আমাদের জন্য আনেননি ।এগুলো আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস নিজের প্রয়োজনে এনেছেন ।লোক দেখানোর জন্য কোনদিনও কিছু করবেন না। আর আমরা তো আশা করেও ছিলাম না যে আপনি আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসবেন ।তাই এটা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না ।”
সুন্দর সাবলীল ভাবে কথাটা বলেই মেঘলা সোফা থেকে উঠে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সিঁড়ির কাছে।সাজ্জাদ খান মাথা নিচু করে বসে রইল ।সাজ্জাদ খান জানতো হয়তো এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি হবে ।সাথে চুপচাপ বসে রইল সিয়াম।
আসমা বেগম এবং সাবিহা সুলতানা ও চুপ হয়ে গেলেন ।সাবিহা সুলতানা লজ্জায় বললেন ,”ভাবি আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি কাজ আছে ।”
বলেই শাল টা হাতে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন ।আসমা বেগমের মেজাজ গরম হলো ছেলে প্রতি ।খুব গরম হলো ।এমন তো নয় সম্পর্কে একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে ছোট আব্বু বা তার ফ্যামিলির সাথে ।শুধু বিয়েটাই মানে না তাহলে কারো জন্য কেন কিছু নিয়ে আসলো না? আর আনে নি যখন তখন সবার সামনে কেন লাগেজ খুলে বসলো ?
এদিকে তানিয়া মিটিমিটি হাসছে ।তানিয়ার খুব ভালো লাগছে মেঘলার অপমান দেখে।কেন যেন মেঘলাকে মানতে পারছে না তানিয়া ।হয়তো মেঘলা সৌন্দর্যের জন্য বা আসার পর থেকে মেঘলা সাথে এই সব ছোট ছোট ঘটনার জন্য।
এদিকে শ্রাবণ হতবাক হয়ে বসে রইল ।সত্যি সত্যি নিজেকে জুতোপেটা করতে ইচ্ছে হচ্ছে কেন এমন ধরনের একটা সিচুয়েশন তৈরি হলো ?আরো রাগ হলো মেঘলার উপর কি হতো যদি ফোনটা নিতো ?ফোনটা তো ইউজ করা না একদম প্যাক করা ব্র্যান্ড নিউ। ঠিক আছে না হয় শ্রাবণ আনতে ভুলে গিয়েছে কিন্তু ও কি নিতে পারত না ?এতটা আত্মসম্মান এতটা ইগো কেন থাকবে এতোটুকু পুচকে একটা মেয়ের?
রাফির মন খারাপ হলো ।লামিয়া ও মন খারাপ করে বসে রইল ।সাজ্জাদ খান বললেন,” ভাইয়া আমি একটু উপরে যাচ্ছি ।”
বলেই উপরের দিকে চলে গেলেন ।সিয়াম ধীরে ধীরে উঠে উপরের দিকে চলে গেল। রাফি শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বললো,” তুমি মেঘলার জন্য কেন কিছু নিয়ে আসনি ভাইয়া?কতটা মন খারাপ হয়েছে আমার মেঘলার?”
শ্রাবণ মাথা নত করে রইলো।
তানিয়া বললো,” এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না রাফি ।ও মন খারাপ করলে কি? ওরা যেখানে আছে তা তো তোমার শ্রাবণ ভাইয়া জানতো না।”
তুমি চুপ করো।মেঘলা কে নিয়ে একটা কথাও বলবে না।ওর মন খারাপ মানে আমারও মন খারাপ।বলেই ,” উপহার গুলো রেখে দৌড়ে উপরে চলে গেলো রাফি।”
শ্রাবণ নির্বাক বসে রইলো।
চলবে_
যদি সুখময় যন্ত্রনা তুমি বই বের না হতো তাহলে এত সমস্যা হত না ।তাই এই শেষবার আপনাদেরকে বুঝিয়ে বললাম আশা করি প্রবলেমটা বুঝবেন । চরিত্র নাম পরিবর্তন করতেই হবে যেহেতু আমি এই গল্পের নাম চরিত্র গুলো নিয়ে চুক্তি বদ্ধ।যেহেতু একটি বই বের হবে সেহেতু প্রকাশক রাজি হবে না এই নামে অন্য কোন গল্প লিখলে তাদের সমস্যা হবে।সিকোয়েল হলে সমস্যা হতো না।
একশ্রাবণমেঘের_দিনে
পর্ব ৫
neela_rahman
রাফি দৌড়ে এলো মেঘলার রুমে ।মেঘলা টেবিল গুছাচ্ছিলো দাঁড়িয়ে ।রাফি মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,” তোমার কি মন খারাপ হয়েছে মেঘলা ?”
মেঘলা চোখ দুটো সরু করে কুচকে জানতে চাইলো মন খারাপ হবে কেন?”
রাফি বললো,” এই যে ভাইয়া তোমার জন্য কোন গিফট আনিনি তাই।”
মেঘলা হাসলো ।হেসে বললো,” ভাইয়া কি জানতো আমরা এখানে আছি যে আমাদের জন্য গিফট নিয়ে আসবে?”
রাফি বললো,” তা অবশ্য জানতো না কিন্তু তুমি মোবাইলটা নিলে না কেন ?আমি হলে তো নিয়ে নিতাম ।এত দামি একটা ফোন।”
মেঘলা চেয়ারে বসলো ।বসে রাফির দুটো হাত ধরে রাফির চোখে চোখ রেখে বললো,” ভাইয়া ওটা নিজের ব্যবহারের জন্য এনেছে নিশ্চয়ই ।ওনার প্রয়োজন অথবা পছন্দ করে কিনেছিল ।শুধু শুধু লোক দেখানোর জন্য বা লজ্জা এড়াতে আমাকে দিয়ে দিতে চেয়েছিল ।এটা কি ঠিক হত কারো প্রয়োজনীয় জিনিসটা আমি নিয়ে নিতাম? মোটেও ঠিক হতো না ।হ্যাঁ আমাদের জন্য যদি কিছু থাকতো যেটা আমাদের উদ্দেশ্য করে এনেছে তাহলে আমি সেটা অবশ্যই নিতাম ।কারণ জিনিস নয় অনুভূতিটাই ম্যাটার করে ।তুমি যখন একজনের জন্য একটা উপহার কিনবে তাকে চিন্তা করে তাকে অনুভব করে কিনবে। কিন্তু তুমি তার জন্য কিছু কিনোনি শুধুমাত্র মানুষকে দেখানোর জন্য তাকে দিয়ে দিবে আর সেই সুযোগে আমি অত দামী একটা ফোন নিয়ে নিব এটা মোটেও ঠিক হতো না।”
রাফি বুঝতে পারলো । বললো,” তুমি আসলে অনেক ভালো ।তোমার ভিতরে একটুও লোভ নেই ।এজন্যই তো আমি তোমাকে এত ……..”
মেঘলা বললো,” এত কি ?”
রাফি বললো,” না কিছুনা ।যখন সময় হবে তখন বলব ।তবে তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ মেঘলা।”
মেঘলা চেয়ার থেকে উঠে আবারো রাফির সিল্কি সুন্দর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,” তোমাকে ও আমার ভীষণ পছন্দ ।”দুজনেই হেসে উঠলো ।
কথাগুলো দরজায় দাঁড়িয়ে শুনলো শ্রাবণ।
কথাগুলো শুনে শ্রাবণ ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল নিজের রুমের দিকে ।শ্রাবনে রুমে যেতে হলে মেঘলার রুমটা পার করে যেতে হয় ।তাই না চাইতেও যখন দুজন কথা বলছিল পা থেমে গিয়েছিল শ্রাবণের। অবচেতন মনেই একটু কথাগুলো শুনে ছিল।
শ্রাবণ নিজের রুমে চলে এলো ।সব কিছু কেমন বিরক্ত লাগছে খাপ ছাড়া লাগছে। বিছানায় বসে পা ঝুলিয়ে শুয়ে পড়ল চিত হয়ে শ্রাবণ। বন্ধ করল চোখ।মনে করলো সেই ৬ বছর আগের অতীত। যেদিন বেড়াতে গিয়েছিল দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে ছোট্ট মেঘলাকে দেখে গাল টিপে বলেছিল ,”তোমার নাম কি ?”যদিও শ্রাবণ নাম জানতো কিন্তু চার বছর পর দেখেছে তাই জানতে চাইলো।
মেঘলা বলেছিল ,”আমি মেঘলা তোমার নাম কি?”
শ্রাবণ জবাবে বলেছিল ,”আমার নাম শ্রাবণ ।আমি তোমার ভাইয়া হই।”
সেদিন যেতে যেতে রাত হয়ে গিয়েছিল তাই খাওয়া দাওয়া করে সবাই শুয়ে পড়েছিল ।কারো সাথে তেমন কোন কথা হয়নি ।সকাল সকাল শীতের দিন ছিল ।সবাই বাইরে খেজুরের রস খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।আনোয়ারা বেগম শ্রাবণের দাদু শ্রাবণের জন্য রস রুমেই পাঠালেন মেঘলা কে দিয়ে।
হঠাৎ করে শ্রাবণ রুমের ভিতরে টুকটুক শব্দ পেল ।চোখ পিটপিট করে খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো ছোট্ট মেঘলা হাতে একটি গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শ্রাবণ চোখ খুলে শুয়ে থেকেই বললো,” কি হয়েছে মেঘলা ?সকাল-সকাল আমার রুমে কি করছিস?”
মেঘলা বললো,” দাদু পাঠিয়েছে খেজুরের রস তোমার জন্য ।বলেছে তোমাকে উঠিয়ে খাইয়ে তারপর যেতে।”
শ্রাবণ শোয়া থেকে উঠল ।গায়ে একটি লেপ জড়ানো ছিল ।লেপটি হালকা একটু সরিয়ে বললো,” তাই ?দাদু আর কি বলেছে ?”
মেঘলা বললো,” দাদু বলেছে তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।”
বলেই মেঘলা গ্লাসটি এগিয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ অবাক হলো।বললো,”ওমা তাই ?আমার বউ হওয়ার এত শখ মেঘলা ?”
মেঘলা বললো ,”হ্যাঁ অনেক শখ।”
শ্রাবণ অবাক হলো।দুষ্টুমি করে জানতে চাইলো,”কেন সখ ?”
মেঘলা বললো,” তুমি অনেক সুন্দর তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
শ্রাবণ বললো,” তাই ?তুইও তো অনেক সুন্দর তোকে ও আমার পছন্দ হয়েছে।”
মেঘলা বললো,” তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে ?”
শ্রাবণ বললো,”এত শখ আমার বউ হওয়ার ?”
মেঘলা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল ।সাথে সাথে হেসে দিল দাঁতগুলো ।কি যে সুন্দর শ্রাবণ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে।হাসলে গালে টোল পরে মেঘলার।শ্রাবণ মেঘলা গালে টোলের জায়গায় দুটি আঙুল দেখে বললো,” ঠিক আছে যা বিয়ে করবো। শুধু তোর এই টোল পড়া হাসির জন্য।
কিন্তু একটি শর্ত আছে ।”
মেঘলা সাথে সাথে গ্লাসটি শ্রাবণে হাতে দিয়ে বললো,” কি শর্ত ?”
শ্রাবণ বললো ,”আমার পিঠ পাড়িয়ে দে ।এ বিছানায় শুয়ে আমার পিঠ ব্যথা করছে ।আমি এখন শুবো। তুই আমার পিঠে দাঁড়িয়ে পাড়িয়ে দিবি কতক্ষণ।”
মেঘলা খুশি হয়ে গেল ।এই শর্ত তো এমন কিছুই নয় ।দাদীর হাত পা তো কতই টিপে আর এখানে তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু পাড়া দিতে হবে ।মেঘলা বলে ,”আচ্ছা ঠিক আছে ।তাহলে বিয়ে করবে তো ?”
শ্রাবণ বলে ,”আচ্ছা যা বিয়ে করবো এবার আয় পাড়িয়ে দে।”
শ্রাবণ উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তেই মেঘলা শ্রাবণের পিঠে দাঁড়ালো ।হালকা ছোট্ট একটি মেয়ে কিছুই যেন টের পাচ্ছে না শ্রাবণ।বললো ,”আচ্ছা আমাকে বিয়ে করলে তোকে কি কি দিতে হবে বলতো ?”
মেঘলা বলল,”একটা শাড়ি দিতে হবে আর একটা কাজল দিতে হবে একটা আলতা দিতে হবে একটা লিপস্টিক দিতে হবে।”
শ্রাবণ হাসলো। বললো,” মাত্র এগুলো , কিন্তু তোর অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে ।আমি তো আমেরিকা চলে যাব ।আমাকে তো আর দেখতেও পাবি না ।”
মেঘলা পা থেমে গেল ।সাথে সাথে শ্রাবণের পিঠে বসে পড়লো।বললো,” তাহলে আমি তোমাকে কি করে দেখব?”
শ্রাবণ অবাক হয়ে গেল মেঘলা উচ্ছ্বাসিত হয়ে শ্রাবণের পিঠে বসে পড়েছে তাই। শ্রাবণ বললো,” আচ্ছা আগে পারা দে তারপর বলছি ।”
মেঘলা বললো,” ঠিক আছে ।”বলেই আবার পিঠে দাঁড়িয়ে পাড়া দিতে লাগলো।
শ্রাবণ বললো,” আমার জন্য ৬-৭ বছর অপেক্ষা করতে হবে ।কিন্তু আমি তো এত বছরে বুড়ো হয়ে যাব তুই তো ছোট্ট একটা বাচ্চা তোর কি বুড়ো জামাই পছন্দ হবে?”
মেঘলা বললো,” হবে তো ।তোমাকে আমার সব সময় পছন্দ হবে তুমি অনেক সুন্দর।”
শ্রাবণ বোকা মেঘলা সাথে কথা বলে মজা পাচ্ছে ।তাই দুষ্টুমির ছলে অনেক কথাই বলছে ।বললো,”ও আচ্ছা ঠিক আছে বিদেশ থেকে আসার সময় তোর জন্য কি কি আনতে হবে বল তো ?তখন তো তুই আমার ছোট্ট একটা বউ থাকবি ।ছোট্ট বউর জন্য আমার কি আনতে হবে ?”
মেঘলা বললো ,”আমার জন্য একটা পুতুল নিয়ে এসো।ওই যে কথা বলে যে?”
শ্রাবণ বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ।কিন্তু তুই বিয়ে করিস না ।আমার জন্য অপেক্ষা করিস ।যদিও আমি একটু বুড়া হয়ে যাব তারপরও মানিয়ে নিস কেমন?”
মেঘলা বললো,” আচ্ছা তাহলে এখন খেজুরের রস খেয়ে নাও ।না হলে দাদু আমাকে বকবে ।বলবে আমি তোমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খেজুরের রস খাওয়াইনি।”
শ্রাবণ বললো,”আচ্ছা ঠিক আছে ।তুই পিঠ থেকে নাম ।আমি উঠছি ।”
মেঘলা সাথে সাথে পিঠ থেকে নেমে বিছানা থেকে নিচে নেমে দাঁড়ালো ।শ্রাবণ শোয়া থেকে উঠে খেজুরের রসটি এক চুমুকে খেয়ে শেষ করে বলল ,”ধন্যবাদ।”
বলেই তাকিয়ে দেখল মেঘলা আবার টোল পড়া গালে হাসছে । শ্রাবণ জিজ্ঞেস করল ,”হাসছিস কেন ?”
মেঘলা বললো,”তুমি তো আজকে থেকে আমার জামাই ।তুমি বলেছ আমাকে বিয়ে করবে ।এজন্য হাসছি ।”
বলেই সাথে সাথে মেঘলা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল । শ্রাবণ বোকা চোখে চেয়ে রইলো মেঘলার যাওয়ার দিকে।
সেদিন মেঘলা রুম থেকে বের হয়ে সাথে সাথে দাদীর রুমে গিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল শ্রাবণ ওকে বিয়ে করতে রাজি ।এমনকি বাবা ছোট আব্বু সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল শ্রাবণ বিয়ে করতে রাজি ।
সাথে সাথে শ্রাবণের চোখ খুলে গেল। সেদিনের মেঘনার করা ছোট্ট একটি ভুলের কারণেই দুজনের বিয়ে হয়ে যায় । শ্রাবণ তাই মেঘলাকে মানতে পারছিল না ।কেন মেঘলা যেয়ে সবার কাছে বলল দুজনের বিয়ের কথা। শ্রাবণ তো দুস্টুমি করেছিলো।
বাস্তবতা ছিল এইটাই বাবা ছোট আব্বু দাদী সবার উপরে রাগ ঝেড়েছিল মেঘলার উপরে ।আসলে মেঘলা তো ছোট ছিল বুঝতো না বিয়ে কি সংসার কি ? শ্রাবণ তো দুষ্টুমি করেছিল কিন্তু বড়রা এই দুষ্টুমি টাকেই সিরিয়াস মনে করে দাদীর অসুস্থতার বাহানা করে ব্লাকমেইল করে বিয়েটা করিয়ে দিয়েছিল।
শ্রাবণ শোয়া থেকে উঠে বসলো। এসব ভাবতে চায় না শ্রাবণ কিন্তু এমন এমন সিচুয়েশন সামনে চলে আসছে বারবার স্মৃতিতে অতীতের কথা গুলো মনে পড়ে যায় । শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।বারান্দায় গিয়ে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে সিগারেট ধরালো ।তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে।
এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে পিছনে তাকালো শ্রাবণ। দেখল তানিয়া রুমে ঢুকেছে।
তানিয়া রুমে সিগারেটের গন্ধ পেয়ে বারান্দায় উঁকি মারল ।শ্রাবণ বললো,” আমি বারান্দায় বারান্দায় আসতে পারো।”
তানিয়া এসে বারান্দায় শ্রাবণের পাশাপাশি দাঁড়ালো ।শ্রাবণ অবচেতন মনে একটু সরে গিয়ে দূরে দাঁড়ালো।
শ্রাবণ কিছু বলছে না তানিয়া বিরক্ত লাগছে ।সব সময় এরকম উপেক্ষা ।তানিয়াকে সবসময় সেধে কথা বলতে হয় ।এবারও সেধে তানিয়া কথা শুরু করলো।তানিয়া বললো,” তুমি কি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছ বিয়ের করা ব্যাপারে?”
শ্রাবণ অবাক হয়ে তাকালো তানিয়ার দিকে । বললো,” মাত্রই তো কালকে এলাম আজকেই বিয়ের কথা বলব ?দুটো দিন যাক আর আগে এনগেজমেন্ট হবে পরে বিয়ে ।আর তাছাড়া এক সপ্তাহ সময় লাগবে এংগেজমেন্ট এর ডেট ফিক্সড করার ।”
তানিয়া অবাক হয়ে বললো,” এক সপ্তাহ সময় লাগবে কেন?”
শ্রাবণ জানাতে পারলো না বা জানাতে চাইলো না কেনো।আগে মেঘলা সাথে ডিভোর্স হবে তারপর ওর সাথে এনগেজমেন্ট ।ডিভোর্স না করে অন্য কোন সম্পর্কে জড়াতে চায় না শ্রাবণ।
তাই বললো,” বাবার কিছু জরুরী কাজ আছে সে কাজগুলো শেষ না করে এনগেজমেন্টের ডেট ফিক্সড করবে না ।হালকা-পাতলা কথা হয়েছিল আমার বাকি কথা আর দুইদিন পরে বলব।”
তানিয়া মেনে নিল শ্রাবণের কথা কারণ মেনে না নিয়ে উপায় নেই ।জোর করা যাবেনা ।তানিয়া ধীরে ধীরে শ্রাবণের একটি হাত ধরলে শ্রাবণ বললো ,”কি করছো ?দরজা খোলা যে কোন সময় যে কেউ চলে আসতে পারে ।আর তাছাড়া হাত ধরাধরি সম্পর্ক কবে হলো আমাদের?”
তানিয়া বললো,” সামনে বিয়ে করতে যাচ্ছি হাতটাও ধরতে পারবো না ?এতটুকু অধিকার আমার নেই ?”
শ্রাবণ বললো,” বিয়ে হয়ে নেক তারপর আর তাছাড়া বাড়ি ভর্তি ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়ে আছে ॥আমার রুমে দরজা খোলা থাকে যে কোন সময় যে কেউ চলে আসতে পারে ।তাই হাত ছাড়ো ।”
বলেই শব্দ পেয়ে যেই তাকালো দরজার দিকে দেখলো দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা।
তানিয়া এখনো হাত ছাড়েনি শ্রাবণের ।মেঘলাকে দেখে কেন যেন আর হাত ছাড়েনি শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে চাইলো কিন্তু শ্রাবণ মেঘলাকে দেখে সাথে সাথে অবচেতন মনে হাত-ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিল নিজের হাত তানিয়া থেকে।
তানিয়া সাথে সাথে বলে উঠলো ,”মেঘলা তুমি দরজা নক করে আসো নি কেন ?”
শ্রাবন ঘাড় ঘুরিয়ে সাথে সাথে তাকালো তানিয়ার দিকে। বললো,” আমার রুমে দরজা খোলা থাকে যে কেউ যখন তখন আসতে পারে ।দরজার নক করে কারই আসতে হয় না ।মেঘলার কেন দরজা নক করে আসতে হবে?”
তানিয়া কিছু বলবে তার আগেই মেঘলা বললো,” আমি দুঃখিত আসলে আমি আসতে চাইনি বড় আম্মু আপনাদের জন্য কফি পাঠিয়েছে।
আবারো দুঃখিত দরজার নক না করে ঢোকার জন্য ।”
বলেই টেবিলে কফি মগ এবং কিছু স্ন্যাক্স রেখে সাথে সাথে পা বাড়িয়ে চলে গেল মেঘলা।
শ্রাবণ তাকিয়ে রইল দরজার দিকে মেঘলার চলে যাওয়া দেখল। শ্রাবণ বুঝে পায়না সেদিনের সেই পুঁচকে মেয়েটি যে সেধে সেধে শ্রাবণকে বিয়ে করার জন্য বলতে এসেছিল কতটুকু নির্লজ্জ বেহায়া ছিল আর এখন এতটা আত্মসম্মান এই বয়সে কোত্থেকে গজিয়ে গেল?
মেঘলা যেহেতু অন্য কোন কিছু জানেনা তাই দুদিন ধরে কেন শ্রাবণের সাথে এমন আচরণ করছে শ্রাবণ বুঝে পায়না। সবার সাথে তো ভালো আচরণ করে হেসে হেসে কথা বলে রাফির তো চুল ধরে ধরে আদর করে কথা বলে তাহলে শুধু শ্রাবণের সাথেই এরকম উপেক্ষা করে কথা বলে কেন ?দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো শ্রাবণ।
পর দিন সকালে নাস্তা টেবিলে বসে আছে সবাই ।মেঘলা আগের মতই খাবার নিয়ে সোফার রুমে বসে খাচ্ছে সাথে যোগ দিয়েছে রাফি।মেঘলার চামচু। মেঘলা খাচ্ছে আর টিভি দেখছে ।শ্রাবণ আড় চোখে বারবার সোফার রুমের দিকে তাকিয়ে আছে ।তানিয়ার ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। আর চোখে তাকিয়ে ছিল মেঘলার দিকে তানিয়া খেয়াল করেছে একবার। বিভিন্ন কিছু চাওয়ার বাহানায় শ্রাবণকে বারবার ব্যস্ত রাখছে ।শ্রাবণ এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তারপর অবচেতন মনের চোখ চলে যাচ্ছে বারবার সোফা রুমের দিকে।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই ড্রয়িং রুমে বসলো ।কফি খাবে তাই।সাবিহা সুলতানা ও আসমা বেগম রান্না ঘর থেকে কফি নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসলেন ।এমন সময় রাফি শ্রাবণে হাত ধরে বললো,” ভাইয়া আজকে আমরা ঘুরতে যাব সারাদিন ঘুরবো তুমি কিন্তু না করবে না।”
শহিদুল খান ও সাজ্জাদ খান বললো,” তোমরা যেও আমরা যাব না ।”
সাজ্জাদ খান বললেন ,”আমার অফিস আছে আর ভাইয়ার হয়তো জরুরি মিটিং আছে।”
শ্রাবণ বললো ,”আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাব যা রেডি হয়ে আয় সবাই ।”
লামিয়ার সাথে সাথে ইয়ে বলে চিৎকার করে বললো,” মেঘলা চল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে নামতে হবে ।”
মেঘলা বললো ,”আমি তো যাব না ।আমার শরীর ভালো লাগছে না ।”
বলেই সোফা থেকে উঠে চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।
এদিকে সিয়াম পড়লো ঝামেলায়। কি বলবে বোন না গেলে ও যাবে না ।তাই উঠে আমতা আমতা করে বললো,” আসলে আমারও ভালো লাগছে না তাই আমিও যাব না।”
লামিয়ার রাগ হলো ভীষণ রাগ হল মেঘলার উপর এবং সিয়ামের উপরে ।ওদের ছাড়া কিভাবে ঘুরতে যাবে ?লামিয়ার কি ভালো লাগবে ?
রাফি মন খারাপ করে সোফায় বসে পড়ল । বললো,” মেঘলা না গেলে আমি যাব না ভাইয়া।”
তানিয়া বলে উঠলো ,”এই একটি মেয়ের জন্য সব সময় ঝামেলা লেগে যায় ।শুধু শুধু সবকিছুতেই বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে।”
কথাটি আস্তে বললেও শ্রাবণের কানে গেল ।শ্রাবণের চোয়াল শক্ত হলো ।তাকালো উপরের দিকে ।দেখল মেঘলা দরজা খুলে রুমে মাত্র প্রবেশ করল ।শ্রাবণ উল্টো ঘুরেই সাথে সাথে পা চালিয়ে শিড়ি বেয়ে উপরে গেল তবে কেউ কিছু মনে করলো না ।ভাবলেও হয়তো নিজের কাজে যাচ্ছে।
আসমা বেগম তাকালেন সাবিহা সুলতানা দিকে ।সাবিহা সুলতানা নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন ।আসমা বেগম ইবা কি বলবেন যেতে না চাইলে মেঘলা কে তো জোর করা যাবে না ।আর কোন সম্পর্কেই বা জোর করবে ?সব সম্পর্ক ই তো ত্যাগ করে ফেলতে চায় ছেলেটা !
মেঘলা মাত্র রুমে ঢুকেছে দরজা লাগায় নি।পড়ার জন্য চেয়ারে বসবে ঠিক এমন সময় শ্রাবণ রুমের ভিতর ঢুকে দরজা চাপিয়ে দিল।
দরজা শব্দ পেতেই মেঘলা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে ।চেহারার রাগি রাগি ভাব।সিড়ি বেয়ে উঠেই হাঁপিয়ে গেছে ।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে শ্রাবণ ।মেঘলা বললো,” আপনি এখানে কেন কিছু বলবেন?”
শ্রাবণ একটু ধাতস্থ হল ।তারপর ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে এলো মেঘলার পড়ার টেবিলের কাছে ।বললো,” সমস্যা কি তোর ?সবকিছুতে এরকম ত্যাড়ামি করছিস কেন ?বাড়াবাড়ি করছিস কেন?”
মেঘলা বললো,” বাড়াবাড়ি করছি মানে ?কি বাড়াবাড়ি করছি ?আমি কি বলতে পারব না আমার যেতে ভালো লাগছে না ?নাকি মন না চাইলে আমার যেতেই হবে আপনাদের বাড়িতে থাকি এজন্য আপনাদের খুশি করার জন্য?”
শ্রাবন অবাক হয়ে গেলো।জানতে চাইলো,” কোন কথা কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস তুই ?এখানে থাকা বা খুশি করার কথা বলেছি?
রাফি বায়না ধরেছে বেড়াতে যাবে তুই না গেলে রাফি যাবে না ।লামিয়া যাবে না ।তুই না গেলে সিয়াম যাবেনা ।তাহলে কাকে নিয়ে যাব আমি ?এই ত্যাড়ামি করার কোন মানে আছে ?অনেক সময় মন না চাইলে অনেক কিছু করতে হয়। তাকে সামাজিকতা বলে ।”
মেঘলা জানে মেঘলার কথাটা ভুল ছিল ।রাফি এতো উচ্ছ্বাসিত হয়ে ঘুরতে যাবে বলেছে মেঘলা না গেলে যাবে না জানে মেঘলা ।একটু ভুল আছে মেঘলার কিন্তু কেন যেন এই দুই দিনে করা শ্রাবণের উপেক্ষা গুলো মেনে দিতে পারেনি মেঘলা ।তাই বললো,”সামাজিকতা শিক্ষা কি আপনি আমাকে দিবেন?”
শ্রাবণ অবাক হয়ে তাকালো মেঘলার দিকে ।তারপরে রাগ দেখিয়ে বললো,” প্রয়োজন হলে তাই দিব।”
মেঘলা এবার চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,” আপনার এমন কোন অধিকার নেই আপনি আমাকে সামাজিকতার শিক্ষা দিবেন ।তার জন্য আমার বাবা-মা ভাই আছে ।”
শ্রাবণ রাগের বসে একবার বলে ফেলতে চাইলো সবচাইতে বেশি অধিকার ওরি আছে যদি ফলাতে চায় কিন্তু নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো,” তোর বড় ভাই হই সেই অধিকারে আমি তোকে শিক্ষা দিতেই পারি।
নাকি এটা অস্বীকার করবি আমি তোর আপন চাচার বড় ছেলে হই না ।আমি তো চাচাতো ভাই হই না?”
মেঘলা একটু মুচকি হাসলো। শ্রাবণ তাকিয়ে রইল মেঘলা হাসির দিকে ।গালে টোল পড়া হাসিটি দেখে যেন শ্রাবণের রাগ অর্ধেক এমনি কমে গেছে ।তারপরও শ্রাবণ তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে ।মেঘলা বলল ,”তাই ?আপনি বড় ভাই হন ?আমার বড় ভাইয়ের কোন কাজটি করেছেন আপনি শুনি?”
“তুই বল বড় ভাইয়ের কোন কাজটি আমি করিনি ?”বললো শ্রাবণ।
মেঘলা বললো,”এই যে দুদিন ধরে এসেছেন কারণে অকারণে আমাকে উপেক্ষা করেছেন ছোট করেছেন অপমানিত করেছেন এটা কি করে বড় ভাইয়ের কাজ হয়?লামিয়া আপু বা রাফির সাথে তো এমন করেন নি?”
শ্রাবণ থেমে গেল ।শ্রাবণ জানে দুই দিন কারণে অকারণে শুধু শুধু মেঘলা সাথে একটু রাগ দেখানো হয়ে গিয়েছে ।অকারনে নয় সে বিয়েটাকে কেন্দ্র করে কিন্তু যে বিয়ের কথা জানেনা মেঘলা ।মেঘলা কেন মেনে নেবে শ্রাবণের এই ব্যবহারগুলো।
শ্রাবণ চুপ করে রইলো ।মেঘলার কথার কোন উত্তর নেই শ্রাবণের কাছে ।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নীরবতা ভেঙ্গে বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে চল ।এখন থেকে বড় ভাইয়ের সব দায়িত্ব পালন করব ।দুদিনের কথা ভুলে যা। শুধু শুধু আর রাগ দেখাবো না তোর উপরে ।তোর উপরে কেন কারো উপরে দেখাবো না। এবার রেডি হয়ে নিচে আয় ।তুই না গেলে পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাবে ।কেউ যাবে না নিশ্চয়ই তুই এটা চাস না সবার মন খারাপ হয়ে যাক তোর আর আমার ঝামেলার জন্য?
আর আমি দুঃখিত বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি ।এখন থেকে বড় ভাইয়ের সব দায়িত্ব পালন করব ।এবারের মত মাফ করে দে ।”বলেই তাকালো শ্রাবণ মেঘলার দিকে।
মেঘলার এবার যেন মনটা একটু নরম হলো ।চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,” ঠিক আছে আপনি যান ।আমি রেডি হয়ে নিচে আসছি ।”
শ্রাবণ একটু মুচকি হাসলো ।হেসে বললো ,”ঠিক আছে ১০ মিনিট সময় দিলাম ।১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসবি ।আমি সবাইকে গিয়ে বলছি আমাদের মেঘলা রানী যাবে ।ঠিক আছে ?”
বলেই সাথে সাথে শ্রাবণ রুম থেকে বের হয়ে গেল ।শ্রাবণের আজ অস্বাভাবিকভাবে কেন যেন ভিতর থেকে ভালো লাগছে ।মনে হচ্ছে একটা বোঝা নেমে গেল আর কিছু না হোক চাচাতো ভাই হিসেবেও তো দায়িত্ব পালন করতে পারে ।শুধু শুধু একটা সম্পর্ক টেনে সবার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার কি প্রয়োজন ?যেখানে মেঘলা সেই সম্পর্ক জানেই না। তাই শ্রাবণ মনে মনে ঠিক করল,” এখন থেকে আমি মেঘলা চাচাতো ভাই ।বড় ভাই ।এটাই থাকবে পরিচয়।”
বলেই নিচের দিকে রেলিং ধরে ঝুলে বললো,” মেঘলা যাবে সবাই রেডি হয়ে নিচে আয়।”
তানিয়া বিরক্ত হয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে রইল উপরের দিকে ।সাজ্জাদ খান এবং শহিদুল খান অবাক হয়ে গেল তারমানে শ্রাবণ উপরে গিয়ে মেঘলা কে রাজি করিয়েছে যাওয়ার জন্য ?শহিদুল খানের যেন মনের মধ্যে একটু আশা ফুটলো ।যদি এভাবে ছেলেটা ধীরে ধীরে নিজের ভুলটা বুঝতে পারতো যদি সবকিছু মেনে নিত।
চলবে__
Share On:
TAGS: এক শ্রাবণ মেঘের দিনে, নীলা রহমান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৬০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০৯+১১০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯+৩০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৪
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৩+১৩৪