একশ্রাবণমেঘের_দিনে
neela_rahman
পর্ব ৮
মেঘলা নিজের অর্ধেক খাওয়া কোল্ড ড্রিঙ্কস টি ধরে রাখলো নিজের ডানহাতে।এদিকে মুভি দেখায় বিভোর শ্রাবণ। নিজের অজান্তেই মেঘলার হাতের কোল্ড ড্রিঙ্কস টি নিয়েই স্ট্র তে চুমুক দিয়েই যেন বোকা হয়ে গেল ।মনে পরল এটি তো ওর নয় ।
ওর কোল্ড ড্রিংকস ওর ডান হাতেই আছে ।মনের ভুলে মেঘলার টি নিয়ে নিয়েছে ।সাথে সাথে ঘুরে তাকালো মেঘলা দিকে ।
দেখল মেঘলা অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।শ্রাবণ একটি শুকনো ঢোক গিললো।
মেঘলা বললো,” এটি আমার ছিল । আপনারটা তো আপনার ডান হাতে ।আপনি আমার টিতে চুমুক দিয়ে খেলেন কেন ?এখন আমি কোনটা খাবো?”
শ্রাবণ ভুল স্বীকার করতে নারাজ ।তাই বললো,” তো কি হয়েছে নে তুই আমার টা নে। আমার কোন ছোঁয়াচে রোগ নেই যে আমার খাওয়া ড্রিংকস খেলে তোর কোন ছোঁয়াচে রোগ হয়ে যাবে।”
মেঘলা বললো,” তাই বলে আমি অন্যেরটা কেন খাব ?”
নিজের আধা খাওয়া কোল্ড ড্রিঙ্কস ধরিয়ে দিল মেঘলার হাতে।বললো,” অন্য মানে ?আমি তোর বড় ভাই হই ।আর একই র*ক্ত বইছে তোর আর আমার শরীরে ।তাই রোগবালাই কিছু থেকে থাকলে আমাদের দুজনেরই আছে সমান সমান।”
মেঘলা অবাক হয়ে গেল শ্রাবণের যুক্তি শুনে। অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ আর মেঘলার দিকে তাকিয়ে থাকলো না ।সাথে সাথে সামনের দিকে তাকালো ।মনে মনে ভাবল ,”তোকে ছাড় দিয়েছি তাই কোল্ড্রিংসের উপর দিয়ে গেল ।
যদি তুই জানতি আমি তোর বিয়ে করা স্বামী হই তাহলে তো ঠিকই মুখে মুখ লাগিয়ে চু*মু খেতি । আরো কতো কি?তখন মনে থাকত না অন্যের টা কেন খাবো?”
শ্রাবণ নিজের মনের কথায় নিজেই আবার বিরক্ত হয়ে গেল ।ছিঃ কি ধরনের কথা ভাবছে শ্রাবণ এই মেয়ের সাথে যুক্তি তর্কে লাগতে গেলে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা মনে চলে আসে শ্রাবণের ।
তাই চুপচাপ মুভি দেখায় মনোযোগ দিল ।এদিকে তানিয়া আ*গুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ওদের কথা বোঝার চেষ্টা করছিল ।কথা শুনতে না পারলেও এতটুকু জানে দুজন ফিসফিস করে কোন কথা বলছিল যেটি মোটেও সহ্য হলো না তানিয়ার।
এদিকে লামিয়া এবং সিয়াম দুইজন পাশাপাশি বসেছে কিন্তু সিয়াম তেমন কোন কথাই বলছে না ।সামনে তাকিয়ে মুভি দেখছে।লামিয়ার সাথে সিয়াম সবসময় একটু রিজার্ভ থাকে ।লামিয়া বারবার আর চোখে তাকাচ্ছে সিয়ামের দিকে কিন্তু সিয়ামের কোন হেলদুল নেই।
লামিয়া সামনে স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে কিন্তু মুভি দেখায় মন নেই।মনে মনে ভাবছে একটা লোক এত রিজার্ভ কি করে থাকতে পারে ?প্রায় মাসখানেকের বেশি হয়ে গেল এখানে এসেছে ।অথচ লামিয়া চাচাতো বোন সে হিসেবে তো একটু কথাবার্তা বলতে পারে।
শুধু কোন প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় কিছু বললে হা হু করে উত্তর দেয় ।যেন মনের ভিতরে কোন কথা নেই ।লামিয়া যে কথা বলতে চায় সিয়ামের সাথে সিয়াম যেন বুঝি না কিছু।
রাফি বারবার আড় চোখে তাকায় মেঘলা দিকে ।মেঘলা রাফির দিকে তাকিয়ে বললো,” কি হলো বারবার তাকাচ্ছ কেন ?”
রাফি বললো,” তোমাকে দেখছি ।”
মেঘলা বললো,”মুভি দেখো পা*গল।”
মেঘলার মুখ থেকে পাগল শুনে রাফি যেন আরেকবার ক্রাশ খেলো মেঘলার উপরে ।ইস কি ভালো লাগছে মেঘলা ওকে কত আদর করে পাগল বলেছে। রাফি এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল মেঘলা দিকে ।হঠাৎ আড় চোখে তাকালো শ্রাবণ বাম দিকে।দেখলো রাফির দৃষ্টি থিয়েটারের স্ক্রীনের দিকে নয় রাফির দৃষ্টি মেঘলার দিকে।
শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফেলে ডান দিকে তাকাতেই দেখল তানিয়া আবার ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণ তানিয়ার দিকে তাকাতেই তানিয়া বললো,” কি হচ্ছে এসব?”
শ্রাবণ কিছু বুঝতে পারল না ।তাই জিজ্ঞেস করলো,” কি হচ্ছে এসব মানে ?কি হচ্ছে ?”
তানিয়া বললো,” তাই তো জানতে চাচ্ছি ।মুভিতে মনোযোগ নেই তোমার তুমি শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছো।”
শ্রাবণ বললো ,”তোমারও তো মুভিতে মনোযোগ নেই ।তুমিও তো এদিক ওদিক তাকাচ্ছ না হলে বুঝলে কি করে আমি কোথায় তাকাচ্ছি।”
তানিয়া বললো,”স্বাভাবিক তোমার দিকে আমি তাকিয়ে ছিলাম।”
শ্রাবণ বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে মুভি দেখো ।পরে কথা বলব ।”
বলেই সোজা-সাটান হয়ে বসে চোখের দৃষ্টি দিল আবার মুভির স্ক্রিনে।
মুভি দেখা শেষ হতে শ্রাবণ বললো,” সবাই বের হউক তারপরে বের হও ।আমরা ধীরে ধীরে বের হই আস্তে ধীরে সবাই বের হওয়ার পর ।শ্রাবণ দেখল মেঘলার হাত ধরে রাফি ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোতে লাগলো ।শ্রাবণ ওদেরকে জায়গা করে দিল যাওয়ার জন্য ।বাহিরে এসে ওয়েট করতে লাগলো গাড়ীর।রাত হয়ে গিয়েছে অনেক তাই বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়েছিল গাড়ি পাঠিয়ে দিতে।
পিছনে একটু চাপাচাপি হবে কিন্তু কিছু করার নেই গাড়ি দিয়ে যেতে হবে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
ড্রাইভার গাড়ি চাবি শ্রাবণের হাতে দিয়েই চলে গেল রিক্সা করে ।শ্রাবণ কার ড্রাইভ করছে ।পাশে বসলো সিয়াম আর পিছনে তানিয়া রাফি মেঘলা ও লামিয়া। চারজন ই স্লিম তাই খুব একটা চাপাচাপি হলো না ।সুন্দর মতোই বাসায় চলে আসলো।
শ্রাবণ কার পার্কিংয়ে রাখছে ।সবাই ভিতরে ঢুকে গেল ।মেঘলাকে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখে সাথে সাথে সাজ্জাদ খান উঠে বললো,” কি হয়েছে মেঘলার ব্যথা পেয়েছে কি করে?”
মেঘলা কিছু বলার আগেই রাফি বলে উঠলো ,”একটু হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিল ছোট আব্বু তেমন কিছু নয় ।ঠিক হয়ে যাবে রাতে ওষুধ খেলেই।”
এখনো রাফি হাত ধরেছিল মেঘলার ।সাজ্জাদ খান বললেন ,”হ্যাঁ তুই থাকতে তো মেঘলার কোন চিন্তা নেই। যা ওকে উপরে নিয়ে যা আমি ওষুধ পাঠাচ্ছি।”
তানিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল ভিতরে ঢুকেনি ।হয়তো শ্রাবণের জন্য অপেক্ষা করছিল ।শ্রাবণ দরজার কাছে আসতেই তানিয়া হঠাৎ শ্রাবণকে বললো,” তোমার সাথে কিছু কথা আছে এক মিনিট ভিতরে যাওয়ার আগে একটু কথা শুনে যাও।”
শ্রাবণ ভাবলো না জানি কি কথা তাই সামনে দাঁড়িয়ে বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে বলো।”
তানিয়া বললো,”আমার কিন্তু এসব পছন্দ হচ্ছে না।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে জানতে চাইলেও এসব মানে ?কোন সব ?
তানিয়া স্ট্রেট ফরওয়ার্ড কথা বলা মেয়ে । বললো,” মেঘলার সাথে তোমার এত কথা মেঘলাকে ঘিরে তোমার এত চিন্তা এগুলো আমার পছন্দ হচ্ছে না।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে গেল তানিয়ার কথায় ।কিছুক্ষণ অবাক নয়নে তাকিয়ে থেকে বললো,” তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ ও আমার আপন চাচার মেয়ে ।ও আমার চাচাতো বোন হয় ।একি বাড়ি তে থাকি আমরা আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা থাকবে অন্তরঙ্গতা থাকবে।
বরং এর চাইতেও বেশি থাকত যদি আমরা একত্রে থাকতাম। আমি বড় ভাই হই ওর ওইখানে বড় ভাই হিসেবে যতটুকু কেয়ার করা দরকার ছিল হয়তো তার চাইতে কমই করেছি।
আর তোমার যদি এটা পছন্দ না হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই ।কারণ ওরা সবাই আমার ভাই বোন ওদের সাথে আমার অন্তরঙ্গতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”
তানিয়া জানে এমন উত্তরই পাবে তাই এই বিষয় নিয়ে কথা বলায় ভুল ।তাই কথা ঘুরিয়ে বললো,” আচ্ছা ঠিক আছে পাপার সাথে কথা বলেছিলাম ।বাবা বলল এই সপ্তাহের মধ্যে এনগেজমেন্ট ডেট ফিক্সড করলে পাপা এটেন্ড করতে পারবে।”
শ্রাবণ বললো,” এটেন্ড করতে পারবে মানে ?নিজের মেয়ের এংগেজমেন্ট আসবে কথা বলবে সব কিছু ঠিক করবে ।উনি তো গেস্ট না যে এটেন্ড করবে।”
তানিয়া শ্রাবণের কথায় থতমতো খেয়ে গেল । বললো,” ওই না আসলে বাবা তো দেশে নেই আমেরিকায় আছে তাই বলল কথাবার্তা বলে এগিয়ে রাখতে উনি টাইম মতো চলে আসবে।”
শ্রাবণ বললো ,”আমি তো বললাম এক সপ্তাহ খানিক সময় লাগবে ।বাবার কিছু কাজ আছে কাজগুলো গুছিয়েই বাবা ডেট ফিক্সড করে দিবে ।চলো ভিতরে যাই ।”
বলেই শ্রাবণ সোজা ড্রয়িং রুমের দিকে হাটা শুরু করল আর পিছনে ঘুরে তাকালো না।
মুভি দেখার সময় স্ন্যাকস তারপরে কোলড্রিংস আরো অন্যান্য কিছু খেয়েছিল বিধায় রাতে আর কেউ খেলো না ।কারণ তেমন ক্ষুধা পায়নি কারই।রাত বাজে ১১ টা ।সবাই টায়ার্ড থাকায় ঘুমিয়ে গিয়েছে ।শ্রাবণ ল্যাপটপে বসে কিছু কাজ করছিল। মাথাটা ধরেছিল ভীষণ কফি খেতে ইচ্ছে করছে ।তাই কাউকে ডিস্টার্ব না করে নিজেই বের হলো রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানানোর উদ্দেশ্যে।
শ্রাবণ রুম থেকে বের হয়ে মেঘলা রুম পার করে যাবে ঠিক এমন সময় মেঘলার রুমে একটি আওয়াজ পেল ।সাথে সাথে মেঘলা রুমের দিকে তাকালো শ্রাবণ ।মেঘলা দরজা খোলায় ছিল চাপানো তাই সাথে সাথে শ্রাবণ কিছু না ভেবেই ভেতরে ঢুকে পড়ল।
রুমে ঢুকে দেখল হয়তো বিড়াল বা অন্য কিছু একটা কারণে শব্দ হয়েছে কারন মেঘলা বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে ।ঘুমের কি শ্রী দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেল শ্রাবণের ।একটি টি শার্ট পড়েছিল এবং প্লাজো ।প্লাজো হাটুর উপরে উঠে আছে ।
ফর্সা সরু পা বের হয়ে আছে। ড্রিম লাইটের আলোয় যেনো চাঁদের আলোর মতো রুপালি লাগছে।চোখ উঠলো আরেকটু উপরে। টিশার্ট পেট থেকে একটু উপরে উঠে গেছে।কোমর পেট অবধি সব দেখা যাচ্ছে।
শ্রাবণ শুকনো ঢোক গিললো।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে। কিছুক্ষণ কিভাবে অপলক চেয়ে থেকে ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসলো মেঘলার কাছে ।হাঁটু ভেঙ্গে মেঘলার বিছানায় মেঘলার মুখোমুখি বসলো ।বসে আবার দৃষ্টি দিল পায়ে।
পা থেকে দৃষ্টি ধীরে ধীরে উঠতে লাগলো কোমরে পেটে উন্মুক্ত নাভি তে।দৃষ্টি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলো শ্রাবণের।
চলবে_
লুচু বেডায় বউকে দেখে শুকনো ঢোক গিলতে থাকুক।আমি লেপের নিচে ঢুকলাম।😛🫣
একশ্রাবণমেঘের_দিনে
neela_rahman
পর্ব_৯
রুমে এসে সাথে সাথে শুয়ে পড়লো বিছানায় ।বুকের ভিতরে কেমন যেন লাগছে ।ছটফট লাগছে কিছু একটা ।বিছানার এপাশে ওপাশ করছে শ্রাবণ।ঘুমাতে পারছেনা ।চোখ দুটো বন্ধ করলে বারবার শুধু মেঘলার কথা মনে পড়ছে ।মেঘলার রুমে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে পড়ছে শ্রাবণের।
শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে ফেললো। বন্ধ করে ভাবতে লাগলো কিছুক্ষণ আগে ঘটনাগুলো ।চিৎ হয়ে উল্টেপাল্টে শুয়ে ছিল মেঘলা। শ্রাবণ মেঘলার পাশে বসে অনেকক্ষণ ধরে চেয়েছিল মেঘলার দিকে ।পা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি বুলিয়েছিল শ্রাবণ।
নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে শ্রাবণ ।কেন ঐ মুহূর্তে চাচাতো বোনের নজরে দেখতে পারেনি ?কেন শুধু একটি পুরুষের নজরে দেখেছিল শ্রাবণ মেঘলাকে ?চোখ দুটো শুধু ওই মুহূর্তে মেঘলাকে ছোট বোন হিসেবে নয় একজন নারী হিসেবে দেখেছে।
অস্বীকার করবে না শ্রাবণ শেষ মুহূর্তে গিয়ে শুধু এটাই চিন্তা করেছিল মুহূর্ত খানেকের জন্য হলেও ভুল করে হলেও মেঘলা ওর বিবাহিত স্ত্রী ।চেয়ে দেখতে দোষের তো কিছু নেই।
নিজের চিন্তা ভাবনার উপরে নিজেরি ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে শ্রাবণের ।কেন ওই মুহূর্তে নিজের মন এক মুহূর্তের জন্য হলে ও দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো।এমন তো নয় ওর প্রতি কোনো ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল বা অন্য কিছু ?অধিকার বোধ কোত্থেকে হল ?কেন মনে হল ও মেঘলাকে ওই অবস্থায় দেখতে পারে ওর অধিকার আছে !
চোখ দুটো সাথে সাথে খুলে ফেললো শ্রাবণ ।না চোখ বন্ধ করতে পারছে না ।আজ আর ঘুম হবে না ।নির্ঘুম হয়তো কাটিয়ে দিতে হবে সম্পূর্ণ রাত। শ্রাবণ চলে গেলো বারান্দায়। সি*গারেট ধরালো।
পরদিন সকাল ৯ টা ।ঘুম থেকে উঠেই শ্রাবণ কে শহিদুল খান জানিয়েছিল দেখা করার জন্য ।জরুরি কিছু কথা আছে শ্রাবণের সাথে। ঘুম থেকে উঠেই বাবার রুমে গিয়ে গেল।
শহিদুল খান জানালেন উকিলের সাথে কথা বল কিভাবে কি করবে ।কাগজ রেডি করে দিতে বল ।আগামীকালকের মধ্যে আশা করা যায় আমি ওর থেকে সিগনেচার নিয়ে দিতে পারবো।
শ্রাবণ থমকে গেল এক মুহূর্তের জন্য ।তারপর বললো,” জি ঠিক আছে আমি আমাদের উকিলের সাথে কথা বলছি।”
শহিদুল খান তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে ।আজ ছেলের দৃষ্টি যেন একটুও স্বাভাবিক নয় ।রাতভর হয়তো ঘুমায়নি তবে কেন ঘুমায়নি জানতে চাইলো না শহিদুল খান ।যেখানে ছেলে এখনো পর্যন্ত ডিভোর্সের ব্যাপারে নিশ্চিত সেখানে আর ঘাটিয়ে কোন লাভ নেই ।উনি হয়তো ভেবেছিলেন দু একদিন থাকলে মেঘলাকে দেখলে ডিভোর্সের কথা মাথায় নাও আসতে পারে।
শহিদুল খান বললেন ,”কাগজ সাইন করে সাবমিট করলে আশা করা যায় ডিভোর্স হয়ে যাবে ।টেনশন করো না । ডিভোর্সের পর তুমি যা চাও তাই হবে। জীবনটা তোমার তাই আমি সেই জীবনে একবার হস্তক্ষেপ করলেও দ্বিতীয়বার আর হস্তক্ষেপ করতে চাই না ।তবে বলব যা করবে ভেবেচিন্তে কর যদিও তোমার জীবন তারপরও যদি ভালো না থাকো তাহলে আমরা পিতা-মাতা হিসেবে কষ্ট পাবো।”
শ্রাবণ বাবার সাথে কথা শেষ করে চুপচাপ বাইরে বের হয়ে এলো ।নিজের রুমে বারান্দায় গিয়ে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে সি*গারেট ধরালো ।দুই একটা টান দিতেই হঠাৎ ডান দিক থেকে শব্দ ভেসে এলো পেয়ারা নিয়ে কিছু একটা বলছে ।
ডান দিকে ঘাড় কাত করে তাকাতে দেখল গাছে চড়ে আছে মেঘলা নিচে আর কেউ না রাফি দাঁড়িয়ে আছে ।মেঘলা উপর থেকে বলছে ,”পেয়ারা গুলো ধরতে পারবে তো ?ফেলে দিবে না তো ?”
নিচে রাফি বললো ,” আমার জীবন থাকতে আমি পেয়ারা পড়তে দিবোনা ।তুমি নিশ্চিন্তে ফেলতে পারো ।”
শ্রাবণ সাথে সাথে সি*গারেটটি নিভিয়ে ফেলল।
গাছের এত উপরে উঠে পেয়ারা পাড়ছে দেখে ভয় লাগতেছে শ্রাবণের ।সাথে সাথে সিগারেট ফেলেই নিচের দিকে সিঁড়ি বের হনহনিয়ে নেমে গেল শ্রাবণ।
তাড়াহুড়া করে হেঁটে এসে শ্রাবণ গাছের নিচে দাঁড়াতেই দেখল রাফি উপরদিকে হাত দুটো ধরে আছে ।যেন পেয়ারা ছাড়লে ধরতে পারে।
মেঘলা একটি কুর্তি এবং পায়জামা পড়ে আছে ।কিন্তু গায়ে কোন ওড়না নেই ।শ্রাবণের দেখেই বিরক্ত লাগলো ।এইভাবে ধিঙগি একটা মেয়ে কেন গাছে চড়েছে তাও এই ড্রেস এ।যদি পড়ে যায় পা পিছলে তখন কি হবে? মনে মনে ভাবলো শ্রাবণ।
মেঘলা আর নিচে তাকালো না । বললো,” রেডি ?পেয়ারা ছাড়ছি আমি ।”
বলেই ৪-৫টি পেয়ারা বড় ডাল সহ নিচে ছেড়ে দিল। পেয়ারার ডালগুলো একে অপরের সাথে সুতা দিয়ে বাধা ছিল তাই একটি ঝোপার মতো হয়েছে ।মেঘলা আর কোন কথা না বলে উপর থেকে ঝোপাটি নিচে ছেড়ে দিল ।রাফি ধরার চেষ্টা করছে ।রাফি হাত উঁচু করে তাকিয়ে আছে কিন্তু পেয়ারা কোথাও দেখতে পেল না ।হঠাৎ দেখল দুটো হাতের উপর পেয়ারা গুলো ঝুলে আছে।
হাত অনুসরণ করে সাথে সাথে রাফি পিছনে তাকিয়ে দেখল লম্বা শ্রাবণ দুই হাতে পেয়ারা ঝোপা গুলো ধরে আছে ।রাফি বললো,” তুমি ধরলে কেন ভাইয়া ?পেয়ারাগুলোতে ধরার কথা ছিল আমার।”
শ্রাবণ বললো,” বড় হলে ধরিস ।তোর হয়ে এখন দায়িত্ব আমি পালন করে দিচ্ছি ।আর তাছাড়া তুই ছোট তুই এতগুলো পেয়ারা ধরতে পারতি ?পেয়ারার ভারে তো তোর টিং টিং শরীরটা নিচে পড়ে যেত।”
রাফি কি বলবে বুঝতে পারলো না ।রাফি শুকনা তাই বলে টিং টিং না। বড় ভাই সব সময় মেঘলার সামনে ওকে কেন অপমান করে বুঝতে পারছে না রাফি।
রাফি কিছু বলবে তার আগেই দেখল মেঘলা উপর থেকে বলছে পেয়ারা ধরেছো রাফি ?আরো কয়েকটা পারব ?
রাফি বললো,” থাক আর পারতে হবে না পরে পেড়ো।”
মেঘলা কিছু বলবে তার আগেই শ্রাবণ বলে উঠলো ,”তুই এইভাবে গাছে উঠেছিস কেন ?গাছ থেকে পড়ে গেলে কি হবে?”
কথাটি শোনার সাথে সাথে চমকে উঠেছিল মেঘলা ।যার জন্য পা পিছলে গেল এবং যে ডালে পা রেখেছিল পেয়ারা গাছের ডাল নরম হাওয়ায় সেই পাতলা ডালটি ভেঙ্গে সাথে সাথে মেঘলা ঝুলে রইল পেয়ারা গাছে ডালের সাথে।
শ্রাবণ অবাক হয়ে গেল ।রাফি মেঘলা বলে চিৎকার দিয়ে উঠল ।শ্রাবণ সাথে সাথে মেঘলা ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে বললো,” ডাল ছেড়ে দে মেঘলা আমি আছি নিচে ধরবো।”
পেয়ারা গাছের ভাঙা ডাল ধরে ঝুলে আছে মেঘলা । শ্রাবণ হাত উপরে করে দাঁড়িয়ে আছে ধরার জন্য ।বলছে ,”হাত ছাড়।আমি আছি।ভয় নেই।”
মেঘলা বলছে ,”না আমার ভয় হচ্ছে আমি ছাড়তে পারবো না ।”শ্রাবণ বললো,” স্যার মেঘলা পা*গলামি করিস না ।আমি নিচে আছি বিশ্বাস কর আমি ধরবো।”
এমনিতেই পা ব্যাথা ছিলো তারপর পিছলে আবারো ব্যথা পেয়েছে মেঘলা ।ছুলে গিয়েছে র*ক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে পায়ে তার উপরে ভয় হচ্ছে মেঘলার ।যদি ধরতে না পারে তখন কি হবে?
রাফি যেন আরেকটু হলে কান্না করে দিবে ।রাফি রাগ লাগছে ভীষণ রাগ লাগছে কেন রাফি একটু বড় হলো না ?কোন বিপদেই মেঘলা কে সাহায্য করতে পারেনা রাফি ।রাফি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছে ,”আল্লাহ মেঘলাকে বাঁচিয়ে দাও মেঘলা যেন কিছু না হয়।”
রাফি তাকিয়ে আছে চাতক পাখির মতো উপরের দিকে ।মেঘলা ঝুলে আছে পেয়ারা গাছে ডালের সাথে ।বারবার শ্রাবণ বলছে ,”মেঘলা ছাড় ।বলছি ছাড় আমি ধরব বলছি। বিশ্বাস কর আমি নিচে আছি তোকে এক চুল পরিমাণ কষ্ট পেতে দেবো না ।একটুও নিচে পড়তে দিবো না ।”
মেঘলা তাকালো শ্রাবণের চোখের দিকে ।শ্রাবণ উদ্বিগ্ন হয়ে চেয়েছিল মেঘলা দিকে ।চোখ দিয়ে ইশারা করছে কিছু হবে না ছেড়ে দে মেঘলা । মেঘলা চোখ বন্ধ করে ফেললো। কারণ দেখেছিল ডাল আর একটু হলে এমনি ছিরে যাবে।
আল্লাহর নাম নিয়ে মেঘলা ডাল ছেড়ে দিলো । চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো রাফি।শ্রাবণ তার কথা রেখেছে মেঘলাকে পড়তে দেয়নি ।সাথে সাথে মেঘলাকে ধরে ফেললো। তবে মেঘলাকে ধরতে গিয়ে হয়ে গেল বিপত্তি ।মেঘলার ড্রেসের এক কোনা ছিড়ে গিয়ে কোমর বের হয়ে গেল।
এদিকে ভয়ে মেঘলা শ্রাবণের কোলে পরা মাত্রই শ্রাবণকে আষ্টেপৃষ্ঠে গলা ধরে জড়িয়ে এমন ভাবে ধরেছে যেন শ্রাবন ঠিক মত নিঃশ্বাসটা নিতে পারছে না।
শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে শ্রাবণের গলায় মুখ গুঁজে দিয়েছে মেঘলা ।মেঘলা ভয় পাচ্ছে মেঘলা জোরে জোরে নেওয়া নিঃশ্বাস বলে দিচ্ছে মেঘলা ঠিক কতটা ভয় পেয়েছে ।শ্রাবণ মেঘলাকে ধাতস্থ হতে দিল ।কিছুই বলল না ।শুধু দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখল মেঘলা কে।
শ্রাবণ মেঘলা জামা ছেড়ার কারণে শব্দ পেয়েছিল ।শ্রাবণের অবাধ্য চোখ আবার গেল মেঘলার কোমরের দিকে ।দেখলো কোমর বের হয়ে আছে ।এভাবে মেঘলা ভিতর যেতে পারবেনা পা দিয়েও রক্ত পড়ছে ।বুঝতে পারছে পায়ে ব্যথা পেয়েছে আবার মেয়েটা।
রাফি চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু ভয় পেয়েছে খুব।
শ্রাবণ কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বা মুখ দিয়ে কিছু না বলে মেঘলার উন্মুক্ত কোমরে হাত এমন ভাবে রাখল যেন কেউ মেঘলার জামার অংশ ছেড়ার কারণে কোমর দেখতে না পায়।
শ্রাবণ আর কোন কথা বলল না ।আর যেহেতু মেঘলা পায়ে আবার ব্যথা পেয়েছে তাই নিচেও নামিয়ে দিল না ।এইভাবেই কোলে নেওয়া অবস্থায় মেঘলা কে নিয়ে শ্রাবণ ধীরে ধীরে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল ।
নিচের ড্রইংরুমে বসে ছিল সবাই ।নাস্তা খাওয়ার জন্য সবাই রেডি হচ্ছিল এমন সময় এইরকম একটি দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ।
সাজ্জাদ খান শিড়ি বেয়ে নাম ছিল ।শহিদুল খান নিচে পেপার পড়ছিল ।সাবিহা সুলতানা এবং আসমা বেগম টেবিলে খাবার গোছাচ্ছিল ।তানিয়া ড্রয়িং রুমে বসেছিল ।লামিয়া এবং সিয়াম ও টেবিলে বসেছিল সবাই হা হয়ে গেল দৃশ্যটি দেখে ।
শ্রাবণকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শ্রাবণের গলায় মুখ গুঁজে দিয়েছে মেঘলা ।শ্রাবণও দুই হাত দিয়ে যেন ছোট্ট একটি খরগোশকে নিজের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে ঠিক এমন ভাবে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে লাগলো শ্রাবণ ।তানিয়া জ্বলন্ত চোখ দুটো চেয়ে রইল শ্রাবণের দিকে।
চলবে_
Share On:
TAGS: এক শ্রাবণ মেঘের দিনে, নীলা রহমান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৭+১৩৮
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯২
-
এক শ্রাবণ মেঘের দিনে পর্ব ৪+৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৫৬+১৫৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৫+১৩৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৫+২৬
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৩+১৩৪