Golpo romantic golpo অর্ধাঙ্গিনী গল্পের লিংক সিজন ২

অর্ধাঙ্গিনী সিজন ২ পর্ব ২৪


অর্ধাঙ্গিনী ( দ্বিতীয় পরিচ্ছদ)

নুসাইবা_ইভানা

পর্ব -২৪

নয়না বলল, “সত্যি সত্যি তুষিকে হত্যা করে ফেলেনি তো? আমার ভয় করছে। তুমি জানো, তুষি কোনোদিন সুখের মুখ দেখেনি। যখনই ও বলত এই পৃথিবীতে ওকে ভালোবাসার কেউ নেই, তখন আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বলতাম, ‘ভবিষ্যতে একজন আসবে, তোকে অনেক অনেক ভালোবাসা দেবে। তোর সব সুখ জমা হচ্ছে, তুষি। একদিন সুদে-আসলে ফেরত পাবি।’ এ জীবন ওর সাথে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে না।” নয়না কাঁদছে।

জিয়ান নয়নার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, “শান্ত হও, পাখি। কিছু হবে না তুষির। অন্তর তুষিকে অনেক সুখে রাখবে।”

অনিকেত জিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “শোন, কাল সকালে আন্টিকে বাসায় শিফট কর। আর হ্যাঁ, আন্টিকে কোনো রকমের টেনশন দিবি না। আমি আসি তবে।” অনিকেত এক পলক নয়নার দিকে তাকালো। আচ্ছা, নয়নাকে দেখে এত তৃপ্তি পাচ্ছে কেন? রক্তের সম্পর্কে তাই? নাকি হৃদয়ের বন্ধন? দু’ভাইবোন একসাথে বড় হলে কত সুন্দর একটা অতীত থাকত তাদের।

জিয়ান বলল, “কিরে, তুই কি কিছু ভাবছিস? তুই না চলে গেলি?”

“গেট পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এলাম। ভাবছি আজ রাতটা তোদের সাথে কাটিয়ে দিব।”

জিয়ান নয়নার দিকে সরে অনিকেতকে জায়গা করে দিল বসার জন্য।

মনে মনে বেশ অবাক হলো অনিকেত। সে তো বাসায় চলে যাবে, তাহলে হুট করে থেকে যাওয়ার কথা কেন বলল? জিয়ানের জন্য নাকি নিজের বোনের জন্য?

অনিকেত ফোন বের করে সায়নাকে টেক্সট করলো: “তোমার মামি হসপিটালে ভর্তি। আজ রাতে জিয়ানের সামনে হসপিটালে থাকবো। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, জান।”

সায়না এতক্ষণ ধরে অনিকেতের অপেক্ষায় ছিল। অনিকেতের টেক্সট দেখে রিপ্লাই করলো: “ওকে, ডিয়ার হাবি। নিজের খেয়াল রেখো। আর হ্যাঁ, মামি এখন কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ, এখন মোটামুটি সুস্থ।”

“ভর্তি থাকতে হবে কতদিন?”

“কাল সকালেই ডিসচার্জ করে দেবে। বাসায় যত্ন করলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।”

মেহনুর সবার দিকে কলা আর রুটি এগিয়ে দিয়ে বলল, “খেয়ে নাও কিছু।”

জিয়ান হাত বাড়িয়ে খাবার হাতে তুলে নিল। নয়না মাথা নিচু করে রেখে নিরবে কাঁদছে। নয়না জানে জাহিন একটা সাইকো। তাকে হত্যাচেষ্টা করার সময় সামান্য পানিটুকুও পান করতে দেয়নি। তৃষ্ণায় ছটফট করছিল, অথচ ঠিক কয়েক মুহূর্ত পর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। নয়না মেহনুরের দিকে তাকিয়ে বলল, “জাহিনকে ফোন করুন। জিজ্ঞেস করুন তুষির সাথে কী করেছে।”

মেহনুর এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। কিছু সময় পর বলল, “তুষি কে?”

“তুষি আমার ফ্রেন্ড। আপনার সাইকো হাজব্যান্ড তুষিকে কিডন্যাপ করেছে। ফোন করুন, বলুন তুষির কিছু হলে এবার তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না ফাঁসির দড়ি থেকে।”

অনিকেত বলল, “রিল্যাক্স হও, বোন। জাহিন অতটা খারাপ মানুষ না।”

“খারাপ মানুষ না? খারাপ মানুষ না তবে অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। আমি সাক্ষী তার নির্মমতার। আমাকে কীভাবে টর্চার করেছিল আমি জানি, আপনি না। তাই আপনার কাছে খারাপ মানুষ না। তবে আমার কাছে সে একজন সাইকো।”

জিয়ান নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “তুমি এখানে থাকো, আমি দেখি কী করা যায়। সত্যি যদি জাহিন তুষির সাথে কিছু করে থাকে তাহলে আমি নিজে ওর শাস্তি নিশ্চিত করব।”

জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলল, “আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি নিজেকে ঠিক রাখবে। একটুও কান্নাকাটি করবে না। রুটি, কলা খেয়ে পানি খাও।”

মেহনুর সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবতে পারছে না অন্য কোনো মেয়ের সাথে জাহিনের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। পেটের ওপর হাত রেখে মনে মনে বলল, তুই কেন আমার মতো কপালপোড়া হলি? কেন তোর কপালে এত জঘন্য একজন বাবা জুটল?

নয়না নিজের পাশে ইশারা করে মেহনুরকে বসতে বলল।

🌿

অন্তর এখনো বসে আছে বকুলতলার সেই বন্ধ টি-স্টলের বেঞ্চে। মাথা নিচের দিকে রেখে দু’হাতে চেপে ধরে বসে আছে। রাত অনেকটা গড়িয়ে গেছে। মোবাইলের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে তুষির হাসোজ্জ্বল একটা ছবি। ধীরে ধীরে মোবাইলের স্ক্রিনের আলো নিভে গেল, তবু চোখ সেদিকেই আটকে আছে অন্তরের। কানে বাজছে তুষির বলা একটা কথা: “পরশু থেকে আমি ভালো থাকব তোমার ভালোবাসায়।” নয়নার ফোনটা আসার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেমন অস্থির লাগছে। চুপচাপ বসে আছে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে। জাহিন কোথায় নিয়ে যেতে পারে তুষিকে? কিছুক্ষণ ভাবার পর মাথায় কিছু একটা এল জাহিনের। দ্রুত উঠে গাড়িতে এসে বসল।

ড্রাইভার বলল, “স্যার, বাসায় যাব?”

“নাহ। আমাদের ডেরায় চলো। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছাতে হবে।”

“স্যার, আপনি তো বহুদিন আগে থেকে সেখানে যাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছেন।”

“দেখো, এখন আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। দ্রুত ড্রাইভ করো। আমাকে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছাতে হবে। যেভাবেই হোক তুষিকে বাঁচাতে হবে।”

🌿

জাহিন গোডাউনে পৌঁছে লাইট অন করে আঁতকে উঠল। তুষি পড়ে আছে ফ্লোরে। গন্ধে পেট গুলিয়ে উঠছে। মশা-মাছি ভনভন করছে তুষির দেহের চারপাশে। তুষির শরীর ফুলে ফেঁপে উঠেছে। শরীর কেমন কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। অন্তর হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল খানিকটা দূরে। সে হত্যা করে ফেলল তুষিকে! কী জবাব দেব আমি অন্তরকে? কেন, কেন আমার দ্বারা এত বড় একটা ভুল হলো? আমি কী করব এখন? সুইসাইড। আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। মনে পড়ল সেদিন রাতের দৃশ্য… তুষি বারবার বলছিল, “আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি অন্তরের ভালোবাসার জন্য বাঁচতে চাই। অন্তত অন্তরের জন্য আমার জীবন ভিক্ষা দাও।” কত করুণভাবে বলেছিল কথাগুলো, অথচ নির্দয়ের মতো এভাবেই ফেলে রেখে চলে গেলাম! জাহিন জোরে চিৎকার দিল। বন্ধ রুমের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে তা আবার ফিরে এল জাহিনের কানে। তার মস্তিষ্কে ফিসফিস করে কেউ যেন বলছে, “শেষ করে ফেল নিজেকে। তুই জঘন্য একজন মানুষ।”

অন্তর এসে থমকে দাঁড়াল। লাশ দেখে সে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। দুর্গন্ধ এসে নাকে বাড়ি খাচ্ছে।

অন্তর জাহিনের কলার ধরে এলোপাথাড়ি মারতে লাগল।

জাহিন চুপচাপ মার খেয়ে যাচ্ছে। কী বলবে, তার তো কথা বলার মতো মুখ নেই।

অন্তর জাহিনকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলল। ক্লান্ত হয়ে একবার দৃষ্টি দিল লাশের দিকে। আঙুলগুলো ফুলে আছে। আচ্ছা, আংটিটা নেই কেন হাতে? এটা তুষি তো নাকি অন্য কেউ?

অন্তর চোখের পানি মুছে বলল, “এটা কে?”

কিন্তু ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে আছে তুষির ওড়না।

জাহিন নিজের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা রক্ত মুছে অন্তরের কাঁধে হাত রেখে বলল, “বিশ্বাস কর, আমি শুধু তুষিকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। তোর ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে চাইনি।”

অন্তর ঘুরে জাহিনের বুক বরাবর একটা লাথি মারল। জাহিন খানিকটা দূরে ছিটকে পড়ল। গর্জে উঠে অন্তর বলল, “তোর মতো মানুষ আমার বন্ধু—এটা ভাবতে আমার ঘৃণা হয়। তোর কী এমন ক্ষতি করেছিলাম আমি? তুই আমার বোনের হত্যাকারীদের সেইফ করেছিস। আর এখন আমার ভালোবাসার মানুষটাকে শেষ করে ফেললি? তুই জানিস, এই মেয়েটা এতটুকু জীবনে কোনোদিন সুখের মুখ দেখেনি। একটু ভালোবাসার উষ্ণতা কোনোদিন পায়নি। তোর মানুষ হত্যার নেশা উঠেছিল যখন, তুই আমাকে কেন হত্যা করলি না? আমি অন্তর কথা দিচ্ছি, তোকে আমি এরচেয়ে ভয়ংকর মৃত্যু দেব।” অন্তর তেড়ে এসে জাহিনের গলা চেপে ধরল দু’হাতে।

জাহিন কোনো প্রতিবাদ করছে না। সে যেন মৃত্যুর অপেক্ষায় আছে। জাহিনের চোখ লাল হয়ে পানি চলে এসেছে। শ্বাস আটকে যাচ্ছে। মুখ থেকে লালা বের হচ্ছে। অন্তর পূর্ণ শক্তি দিয়ে জাহিনের গলা টিপে ধরে আছে।

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply