Golpo romantic golpo অর্ধাঙ্গিনী গল্পের লিংক সিজন ২

অর্ধাঙ্গিনী সিজন ২ পর্ব ১৯


অর্ধাঙ্গিনী ( দ্বিতীয় পরিচ্ছদ)

নুসাইবা_ইভানা

পর্ব -১৯

নয়না নিচে এসে জিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে। পুরুষমানুষের কোনো সময়ের বালাই নেই নাকি! সম্পূর্ণ রেডি হওয়ার পর তাদের ওয়াশরুমের জরুরি মিটিংয়ের কথা মনে পড়ে!

পেছন থেকে জাহিন বলল, “আসামনের লাল পরিটা জমিনে কী করে নেমে এলো?”

নয়না পিছনে ঘুরে বলল, “আপনি? আপনার কি কোনো লজ্জা-শরম নেই নাকি? এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও চরিত্র ঠিক করতে পারলেন না?”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি—এই কথাটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর সত্যি। হোক সেটা অন্যায়। একতরফা ভালোবাসাই আসল ভালোবাসা।”

“প্লিজ দয়া করে নিজের পাগলামিকে ভালোবাসা বলে ভালোবাসাকে লজ্জিত করবেন না। আপনার ভালো একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত।”

“তুমি আমাকে এত ঘৃণা কেন করো? ভালো না বাসো, দুটো ভালো কথাও তো বলতে পারো?”

“আপনি আমার বয়সে বড় না হলে আমার পায়ের জুতোটা খুলে আপনার গালে মারতাম। ভাগ্যিস আপনি আমার বড়, আবার সম্পর্কে আমার ভাইয়ের মতো।”

জাহিন হেসে বলল, “তুমি দেখতে যতটা সুন্দর, তোমার মুখের ভাষা ঠিক ততটাই তেতো। দেখতে রসগোল্লার মতো, কিন্তু কথা বলো করলার মতো। এক কেজি মধু কিনে দেব, খেয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে। এত সুন্দর চেহারায় তেতো কথা বেমানান।”

“নিজের ঘরে বউ থাকতে ভাবিকে এসব বলতে লজ্জা করে না! অবশ্য আপনার লজ্জা থাকলে তো করবে। আপনি জঘন্য চরিত্রের একজন মানুষ।”

জিয়ান সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে নয়নার বাহুতে হাত রেখে বলল, “জান, বাসায় আমরা কুকুর-বেড়াল পুষি। কথা বলতে ইচ্ছে করলে তাদের সঙ্গে বলবে। মানুষরূপী জানোয়ারদের সঙ্গে কিসের কথা? তুমি কি জানো না, তারা হিংস্র পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট আর ভয়ংকর?”

জাহিন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। নিজের ওপরেই তার বেশি রাগ হচ্ছে। কেন এই মেয়েকে দেখলেই সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না? কেন বারবার এই মেয়ের কাছে দুর্বল হয়ে পড়ে! চোখ বন্ধ করে বলল, “তুমি কেন বেঁচে ফিরলে? পৃথিবীতে হয়তো তুমি থাকবে, নয়তো আমি। আমি জীবিত থেকে তোমাকে অন্য কারো বাহুতে সহ্য করতে পারব না বলেই তো হ*ত্যা করেছিলাম তোমাকে। কিন্তু তুমি বেঁচে ফিরলে।”

জিয়ান ড্রাইভ করছে, নয়না চুপচাপ বসে আছে।

“মন খারাপ করছ কেন, বাটার মাশরুম? আমি আছি তো তোমাকে প্রটেক্ট করার জন্য। কিসের ভয় তোমার?”

“তুমি আর ক’দিন থাকবে? তোমার সব কাগজপত্র ওকে হলে জিম টিম করে বডি ফিটনেস ঠিক করেই তো চলে যাবে নিজের প্রথম ভালোবাসার কাছে।”

“হোয়াট! মাথা নষ্ট হয়েছে তোমার?”

“তো যাবে না?”

“কোনোদিনও না। কখনো তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। তুমিই আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা।”

“আর তোমার বিমান? সে কি তোমার গোপন বউ?”

জিয়ান এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। হাসি সামলে বলল, “তার কাছে তো ফিরতেই হবে। না হলে আমি আমার অর্ধাঙ্গিনীর প্লেন ড্রাইভার হব কী করে? তবে তোমার এইচএসসি শেষ হলে তোমাকেও নিয়ে যাব।”

“কিন্তু এতদিন আমি কী করে তোমাদের বাসায় থাকব?”

“আমাদের বাসায় থাকতে হবে না। তুমি তোমাদের বাসায় থাকবে। আমি যখন আসব, তখন আমার সঙ্গে আমাদের বাসায় গিয়ে থাকবে।”

“বাবা-মা মানবে?”

“বাবা তো মানবেই, কারণ বাবা সবটা জানে। আম্মুকেও বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই মানবে।”

কথার মধ্যেই নয়নার ফোন বেজে উঠল।

নয়না ফোন রিসিভ করে বলল, “আসসালামু আলাইকুম।”

ওপাশ থেকে উত্তর এল, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন, মিস সুনয়না?”

“সরি, আপনি কে? চিনতে পারছি না।”

“আমি ডাক্তার ঈশান।”

“ওহ, ডাক্তার ঈশান! আপনি কেমন আছেন? বাবা কেমন আছেন?”

“এখন মনে পড়ল আংকেলের কথা! আমি একটা নম্বর পাঠাচ্ছি, আপনি উনার সঙ্গে কথা বলে নেবেন। আপনি মিস না করলেও আংকেল আপনাকে অনেক মিস করছেন।”

“ধন্যবাদ, ডাক্তার ঈশান। আপনি এখন ঢাকায়, তাই না?”

“হুম, হলি কেয়ার মেডিকেলে জয়েন করেছি।”

“রাতে ফ্রি থাকলে আমাদের বাসায় ডিনার করবেন। কাছাকাছিই তো, বেশি দূরে না।”

“দেখি।”

“ডাক্তার ঈশান, দেখাদেখির কিছু নেই। আপনি আসছেন, এটাই কনফার্ম।”

“ওকে।”

নয়না কল কেটে দিতেই জিয়ান নয়নার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

নয়না হেসে বলল, “যে ডাক্তারের কথা আপনাকে বলেছিলাম, সেই ডাক্তার। আর সিলেটে যে আংকেলের কাছে ছিলাম, উনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। এটা জানানোর জন্যই কল করেছিল।”

“ওহ।”

“হুম। এখন কি গাড়ি থেকে নামবেন, নাকি গাড়িতেই বসে থাকবেন? আর অনিকেত ভাইয়া, নাহিদ ভাইয়া কখন আসবে?”

“অনিকেত তো আসতে পারবে না বলল। নাহিদ আসবে রাতে।”

🌿

সকালের পেপারের হেডলাইন: অতিরিক্ত মপানে মন্ত্রীপুত্রের অকাল মৃত্যু।
জাহিন পত্রিকার হেডলাইন পড়ে হাসছে। এ জীবনে গোয়েন্দা ট্রেনিং না নিলে সে জানতো না, নিরবে হত্যা কীভাবে করতে হয়, লাশ কোথায় গুম করতে হয়, কোন হত্যাকে কী বলে চালিয়ে দেওয়া যায়—এসবের ট্রেনিং সে নিয়েছে।

মেহনুর জাহিনের পায়ের সামনে বসে জাহিনের পা স্পর্শ করল।

জাহিন রেগে বলল, “এসব কী হচ্ছে! আমি কি কোনো ভন্ড পীর বাবা নাকি যে আমার পায়ে মাথা ঠেকাবে!”

“জাহিন, আমি তোমার বিবাহিত স্ত্রী। আমার জন্য নিজেকে কি একটুও বদলানো যায় না?”

“জাহিন কারো জন্য নিজেকে বদলায় না।”

“তোমার যদি কোনো ভবিষ্যৎ না থাকে, তাহলে কেন আমাকে নিজের সঙ্গে জড়ালে, জাহিন? আমার কী দোষ?”

“তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ আমার। আচ্ছা, তালাক দিলে মেয়েদের কতদিন পর আবার বিয়ে বৈধ হয়?”

মেহনুর অবাক হয়ে গেল। ভয়ে তার মুখ চুপসে গেল। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, “প্লিজ আমাকে ডিভোর্স দিও না। তোমরা ছাড়া পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নেই।”

“তাহলে নিজের মতো থাকো। কখনো আমার কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করবে না।”

“তোমার কি কখনো আমাকে একটু আদর করতে ইচ্ছে করে না?”

“না, করে না। তোর কাছে কয়েকবার গিয়েছিলাম শুধু চাহিদা মেটাতে। আদর, ভালোবাসা—তোর জন্য আমার মধ্যে নেই।”

মিতা বেগম এসে ঠাস করে জাহিনের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন, “তোকে আমি জন্মের সময় গলা টিপে কেন মেরে ফেললাম না? তোর মতো সন্তান আমি জন্ম দিয়েছি! এর চেয়ে আমি নিজে মরে যেতাম, তাও ভালো হতো।”

জাহিন এই সময় মিতা বেগমকে এখানে আসা করেনি। মাথা নিচু করে বসে রইল।

মিতা বেগম মেহনুরের বাহু ধরে বললেন, “ওঠ। এরকম জানোয়ারের পায়ের কাছে বসে ভালোবাসা ভিক্ষা করিস না। ও তোকে কী ডিভোর্স দেবে? তুই নিজে ডিভোর্স দিবি ওকে।”

মেহনুর বলল, “মা, তেমন কিছু না। আমাদের নিজেদের মধ্যে একটু মনোমালিন্য চলছে।”

জাহিন ভেবেছিল মিতা বেগম সবটা জানেন। তাই নিচু স্বরে বলল, “আমি একজন খুনি। তোমার ছেলের বউকে খুন করতে চেয়েছি। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ ভাই। কারণ নিজের দোষে ভাইকেও ফাঁ*সি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছি। তুমি আমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলো। সব দোষ আমার।”

মেহনুর জাহিনের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় এসব না বলতে বারণ করছে। কিন্তু জাহিন বলেই যাচ্ছে।

মিতা বেগমের দেহ যেন মুহূর্তেই অসাড় হয়ে গেল। এমন ছেলে তিনি পেটে ধরেছেন, এতগুলো বছর লালন-পালন করেছেন! নিজের ডান হাতটা তুলে আরেকটা চড় মারতে গেলেন জাহিনের গালে। তার আগেই নিজেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন। মেহনুর দ্রুত মিতা বেগমকে ধরল, নইলে মাথায় বড় আঘাত লাগত।

জাহিনও এগিয়ে এল মিতা বেগমকে ধরতে। মেহনুর ধাক্কা দিয়ে জাহিনকে সরিয়ে দিয়ে বলল, “আপনি কেন মরে যাচ্ছেন না? আপনার মতো মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট আপনি।”

মেহনুর দ্রুত নিচে নেমে সার্ভেন্টদের ডাকল। ততক্ষণে জাহিন মিতা বেগমকে কোলে তুলে নিজেই নিচে নিয়ে এসেছে।

মেহনুর কিছু বলার আগেই জাহিন বলল, “আগে আমার মা, তারপর সব। দ্রুত হসপিটালে নিতে হবে।”

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply