#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_২
না হওয়া সতীনের জামাই ফারাজ এলাহীর কাছে একটা কল দেই। কল দিয়ে কী বলব? আমার ভাইয়া ওরফে ছাইয়া, জানেন ভার্সিটির সিনিয়র পেম না ডিম ওই ছেলেটা দিলো আমায় খাইয়া? তৃষা পারলে ব্রেন থেকে এই স্মৃতি গুলো ডিলিট দিতো।
ভার্সিটির প্রথম দিনটাই এমন জঘন্য যাওয়ার খুব কী প্রয়োজন ছিল? ওই ব্যাটা প্রেমকে ইঁদুর মারার ঔষধ খাইয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তৃষার। দুনিয়ায় কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে কী নেই তৃষাকে এই হাইব্রিড করলার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। তবে একটু শান্তি তো লাগছেই। লাগবে না? ওই প্রেমের হাওয়া যে লিক করে এসেছে তৃষা। মানে তার বাইকের। সকালে যেই বাইকটা তাকে মুতুজলে ফেলেছিল ওই বাইকের নাম্বারটা কেবল পেছন থেকে এক ঝলক দেখেছে। ওই করলার বাইকের নাম্বারের সঙ্গে মিলে যায়। তৃষাকে চুমু দিতে বলা তাই না? গায়ে গন্ধ বলে অপমান করা? একেবারে বুড়িগঙ্গার কালো পঁচা জলে চুবিয়ে রোদে শুকাতে ইচ্ছে করছে তৃষার। সে চিনে তৃষা কে? অসভ্য লোক। সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে যে প্রেম করতে হয় তা ওই মগা কী জানে না? ভাব দেখায় শাহরুখ খান, আচরণ তো নায়ক বগাখানের মতো।
তৃষা কাজী বাড়ি বাড়ির ছোট মেয়ে। চট্টগ্রামের শান্তিবাগ শ্যামলী আবাসিক এলাকায় তাদের বাড়ি। তার বাবা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা গৃহিণী। মূলত মায়ের থেকেই সাজগোছের স্বভাবটা পেয়েছে। জন্মের পর থেকে মাকে কখনো পরিপাটি ছাড়া দেখেনি সে। খোদার ত্রিশটা দিন ফকফকা, চকচকা থেকেছেন। তৃষার ছোট একটা বিচ্ছু ভাই আছে। নাম তইমুর। ক্লাস টেইনে পড়ে। এই বান্দার কথা বললেও কম পরে যাবে। বাথরুমেও ফোন নিয়ে যায়। ফোনের সঙ্গে তার যেই সম্পর্ক সেটা মনে হয় কালো জাদু করেও নষ্ট করা যাবে না।
তৃষা দূরন্ত চালাক বললেও ভুল হবে আবার বোকা বললেও। মানে এই মেয়ে কাজের না,আবার অনেক কাজের। পড়ালেখার মেধা প্রখর। তবে ওই মেধা খালি পড়ালেখাতেই কাজে লাগে। বাকি সব কিছুতে জিরো পার্সেন্ট ও কাজে লাগে না। আর যদি বলা হয় রূপ? হ্যাঁ ওই একটা আছে বলেই তো মাথার মধ্যে ব্রেনটা একটু কম। না মানে ব্রেন আছে কিন্তু সে অলসতার কারণে কাজে লাগায় না। তৃষার ঠোঁটের কাছে তিল আছে। তিলটা তাকে আর্কষণীয় করে। ওইসব টোল-ফোল তো তার পরে না কিন্তু হাসলে গজ দাঁতটা অবশ্য দেখা যায়। সেই ছোটো বেলার কথা। এক ফাইভে পড়া ছেলে তার গজ দাঁতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল। সেই থেকে তৃষা তার দাঁতের বিরাট যত্ন নেয়। বলাতো যায় না দাঁতের নজরও তো লেগে যেতে পারে? তখন দাঁত পড়ে গেলে কিংবা পোকা ধরলে তো দেয়াল ভেঙে সাংবাদিক এসে যদি জিজ্ঞেস করে, ‘আপনার টুথপেষ্টে কি নুন আছে?’
–
পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি অলি-গলি পেরিয়ে বুড়িগঙ্গার উত্তর তীরে অবস্থিত সোয়ারিঘাটের নির্জনতা আজ অন্যরকম। নদীর কালো ঢেউ কেবল ধপধপ করে উঠছে। অন্ধকারে ডোবা রাত, শুধু দূরে কাকের মতো কিছু কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, তারপর আবার সব স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই স্তব্ধতার মাঝেই প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মরিয়া হয়ে ছুটে চলছে এক তরুণী। বিয়ে হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। যেই হাতের মেহেদীর রঙ এখনো পুরোপুরি ওঠেনি সেই হাতই আজ মাটি খুঁড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। শ্বাসকষ্টে বুকে ধড়ফড়ানি, হৃদস্পন্দন যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। তার অপরাধ কী? সে জানে না। সে শুধু জানে—তার পেছনে ছুটে আসা কালো হুডি আর মুখোশ পড়া মানুষটা তাকে খুন করবে। খুনটাও যেনতেন খুন নয়—নির্মমতার সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া খুন।
মেয়েটি অন্ধকার গলি পেরোতে না পেরোতেই ধপাস করে পড়ে যায় মাটিতে। হাঁটু চিরে ইটের ধারালো কোণা মাংসে ঢুকে যায়। ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর আগেই শুনতে পায় একটা গান। ফোনে ছাড়া সেই গান। গানের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে কেউ।
মেয়েটির বুকের ভেতর ভয়ের পাথর জমে ওঠে। চোখে অন্ধকার ঘনীভূত হয়। দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই হঠাৎ ঠান্ডা এক চাকু তার গলার ভেতর ঢুকে যায়,সোজা কণ্ঠনালির গভীরে। “গটগট” শব্দে রক্ত ছিটকে বেরোয়, একেবারে লাল ঝর্ণার প্রবাহের মতোই। মরণের সাথে সাথে ভয় বেড়ে যায়। কারণ গানটা এখনো বাজছে। সেই মানুষটা গাইছে গলা মিলিয়ে,
~কোন ভুলে তুমি শুলে বলো এই ফুলশয্যায়? স্বপ্নের লাশ কাঁদে নিয়ে ওরা কেন চলে যায়? প্রেম আমার… ওওও প্রেম আমার!~
মেয়েটি ছটফট করে, গলার ভেতর থেকে ভোঁতা শব্দ বেরোয়, জবাই করা পশুর মতো। মুখোশপরা খুনি একদৃষ্টে তাকিয়ে উপভোগ করে তার নিস্তেজ দেহের টানাপোড়ন। অভিশপ্ত এক হাসি ভেসে ওঠে মুখোশের আড়াল থেকে। ধীরে ধীরে মুখোশ খুলে ফেলে সে। চোখে উন্মাদনায় মেশানো উত্তেজনা, ঠোঁটে প্রশান্তির বাঁকা হাসি। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। হঠাৎ সে এক ঝটকায় চাকুটা গলার ভেতর ঘুরিয়ে দিল। রুহু কেঁপে উঠল। চোখগুলো বিস্ফারিত হয়ে ফেটে পড়তে চাইলেও পারল না। এই রাতের আঁধারে সোয়ারি ঘাট পেরিয়ে এই নির্জন জায়গায় কেউ নেই মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য। মেয়েটি ছটফট করছে। তবে সেই দৃশ্য তেমন একটা উপভোগ করতে পারছে না লোকটি। এখানে কোনো থ্রিল থ্রিল ব্যাপার আছে নাকি? সে এক ঝটকায় গলা থেকে চাকু বের করে পর পর চারটে কোপ বসালো চোখের মণির ওপর। গলে,ছিটকে একেবারে কালো মণিটা নরম হয়ে গেছে। চোখগুলো নরম হয়ে গলে পড়ল। গালের ওপর ছিটকে পড়ল লাল-কালো রক্তমাখা মাংসের টুকরো। মেয়েটি ততক্ষণে মৃত। মৃত্যুর কারণ জানার আগেই মৃত। মৃতদেহের ওপর ঝুঁকে খুনি হাত বাড়ালো, মেয়েটির লম্বা কালো চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে বলল, ‘বাহ চুলগুলো বেশ তো! আমার যে এগুলোই চাই।’
তারপর এক ঝটকায় হুডির পকেট থেকে কেঁচি বের করে ঘেচাং শব্দে গোড়া থেকে কেটে ফেলল পুরো চুল। হাতে নিয়ে এমন ভাবে দেখল যেন যে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। চোখে-মুখে আবার সেই তৃপ্তিদায়ক হাসির রেখা। চুলগুলো পকেটে ঢুকিয়ে দিলো সন্তুষ্টির হাসি মুখে নিয়ে। তারপর সোজা উঠে দাঁড়াল। কী গরম পড়েছে আজ। এত গরমে তো প্রতারকদের খুন করতে কষ্ট হয় তাই না? সে হুডিটা খুলে হাতে নিল। পরনে একটা সাদা রঙের শার্ট ছিল। শার্টের বুকের কাছের বোতামটা খুলে হাঁটতে হাঁটতে সেখান থেকে চলে গেল। লাশটা যে কিছু না বলা প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করতে করতে ওপারে দাবি নিয়ে চলে গেল তাতে তার কিছু যায় আসে না। সকালে এই লাশ নিয়ে বড় হই-হট্টগোল বাঁধবে। জলদি বাড়ি ফিরে ঘুম দিতে হবে। নইলে সকালে খবরে ব্রকিং নিউজটা শুনবে কী করে? মানুষকে জানতে হবে না, জানতে হবে না একটা প্রতারকের শেষ পরিনতি কী ছিল? যাওয়ার সময় সে এক নাগালে গান গাইল,
~প্রেম আমার ওওওও প্রেম আমার~
–
নেওয়াজ কুঠি। কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় অবস্থিত সেকেলে একটা জমিদারী বাড়ি। যদিও এই বাড়ি দেখতে তেমন হলেও জমিদারদের বাড়ি নয়। একসময় ইংরেজরা তৈরি করেছিল। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে নেওয়াজ বাড়ির পূর্বপুরুষ কিনে রাখে। তারপর সিদ্দিক নেওয়াজ বাড়িটিকে পুনরায় সংশোধন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে নেওয়াজদের এই কুঠি। নেওয়াজ পুরান ঢাকার নামি-দামি বংশ। তাদের মশলার ব্যবসা আছে। দেশে-বিদেশে নদীপথে মশলা রপ্তানি করে থাকেন। পুরান ঢাকার নামী-দামী আড়ত গুলোর মধ্যে শতাংশ তাদের নিজস্ব। নেওয়াজ বাড়ির আসল কর্তা সিদ্দিক নেওয়াজ। এই বয়সে এসেও একা হাতে সব সামলাচ্ছেন। ছেলে একটা আছে। তবে সে এখন থেকেও নেই। নিজের আপন বলতে একমাত্র নাতি প্রেম নেওয়াজ আছে। তবে সে তো মশাই বদমেজাজি হয়েছে একটা। বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি, এখানে-সেখানে ঘুরে ফটোগ্রাফি, গিটার একটা নিয়ে রাত জেগে আড্ডা দেওয়া এসব ছাড়া আর তার কাজ কী? কই দাদার বয়স হয়েছে ব্যবসার হাল নিজে ধরবে, তা তো নয় উল্টো রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরলে এই বুড়োকেই সামাল দিতে হয়। তবে আর নয়। এবার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত এই মহাশয় লাইনে আসার পাত্র নয়। হয়েছে একটা বুনো হায়না। মুখ-হাত দুটোই সবার আগে চলে। বাচ্চা-কাচ্চা না হলে নাতির এই স্বভাব বোধহয় আর ঠিক হচ্ছে না। সংসারের পানি গায়ে পড়লে বখাটেপনা সারবে।
সিদ্দিক নেওয়াজ সকাল সকাল উঠেই চেচামেচি করেন। দৌড়ে আসেন তার মেয়ে হেতিজা। হেতিজারা আগে রাজশাহী থাকত। স্বামী মরেছে সেই ছোট মেয়েটা হওয়ার পর। শেষে এত অভাব অনটন দেখে সিদ্দিক নিজের কাছে এনে রাখেন। হেতিজার ঘরে দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলেটা একেবারে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে বলা চলে। স্পেশাল ফোর্সের অফিসার। তার কথা বলার ভঙ্গিমা থেকে শুরু করে সবই আলাদা। বেশি কথা বলে না। তবে যা বলে তা কম কোথায়? এই বাড়িতে প্রেম নেওয়াজের ভক্তের থেকে প্রত্যুষ দেওয়ানের ভক্ত বেশি। মেয়ের মায়েরা লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকেন বিয়ের কথা বলার জন্য। সরকারি চাকরিজীবি তাও আবার ইন্টেলিজেন্স স্পেশাল ফোর্সের অফিসার? ড্যাশিং লুক, মারাত্মক চাহুনি কোনটার অভাব তার? প্রত্যুষ নাস্তার টেবিলে বসে বোন প্রেমান্তিকে জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে প্রেমা প্রেম কোথায়? নাস্তা করবে না?’
‘সে তো রাত করে ফিরেছে। আমি ডেকে আনি?’
‘ইচ্ছে।’
প্রেমা মুখটা ভেংচি কেটে ঢেঙঢেঙিয়ে প্রেমের ঘরের দিকে গেল। নেওয়াজদের এই এত বড় সীমানার মধ্যে দু’টো বাড়ি। একটা নেওয়াজ কুঠী। অন্যটা হাউজ ওফ লাভ। একটা বাগান বাড়ি। প্রেমের পঁচিশ তম জন্মদিনে দাদা তাকে বাড়িটি একেবারে নিজের নামে লিখে দিয়েছেন। এখন এখানে কম সেখানেই বেশি থাকা হয়। কাঠের তৈরি একটা বাড়ি। চারপাশ নিজের মতো করে সাজিয়েছে। বাড়িটা দোতলা তবে বেশি বড় নয়। চারপাশটা কেমন যেন ভয়ানক ভয়ানক লাগে। প্রকট দুপুরে কিংবা রাতে ভয়ে ওইদিকে মানুষ যেতে চায় না। যদিও প্রেম তার ত্রিশ সীমানায় কাউকে যেতেও দেয় না। রান্না থেকে ঘরের কাজ সে নিজে সামলায়। একবার দাদু কাজের মেয়েকে রুমে পাঠিয়েছিল। সেই মেয়ে তো সকাল সকাল খালি গায়ে উপুর হয়ে শুয়ে থাকা প্রেম কে দেখে প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে একেবারে শেষ। প্রেমকে কফি দিতে এসেছে নাকি প্রেমকে চোখে খেতে এসেছে সে নিজেই ভালো জানে। প্রেম খালি একবার বলেছিল, ‘দেখাদেখি করে চোখের স্বাদ মিটবে তবে বাকিগুলো? কাম। প্রেমময় তৃষ্ণায় তোমায় একটু তৃষ্ণাত্ব করি। কোনটা দিয়ে শুরু করব ডার্লিং?’
সেই মেয়ে ওইদিন নতুন কাজে এসেছিল। দু’দিনও টিকতে পারেনি। প্রেমের সঙ্গে দেখা হলেই কাম হেয়ার কাম হেয়ার বলত সে চোখ মেরে। মেয়ের আর সাহসই হয়নি ওই বাড়িতে কাজ করার কিংবা আর প্রেমের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার।
প্রেমা ঘরে ঢুকতেই দেখল প্রেম বিছানায় শুয়ে আছে। জুতাগুলোও খুলেনি। গায়ে সাদা একটা শার্ট। দেখে মনে হচ্ছে রাতে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজই না করে এসেছে। প্রেমার ইচ্ছে করছে প্রেমের ঘাড় ছুঁই ছুঁই কার্লি চুলগুলোতে একটু হাত বুলিয়ে দিতে। সে মিটিমিটি হেসে বলল, ‘ও প্রেম ভাই। নাস্তা খাবে না?’
প্রেম নড়েচড়ে বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘তোমার বাল খাবো। যাও নিয়ে আসো।’
‘একটু সুন্দর করে বললে তো সবই নিয়ে আসতে পারি।’
‘সুন্দর তোমার..’ বলেও থেমে গেল প্রেম। ‘তোকে না বলেছি আমার ঘরে আসবি না?’
‘এমন করো কেন?’
‘সকাল সকাল পিরিতের প্যাচাল পারিস না তো। তোকে দেখলেই আমার মাথার রগ গুলো নড়ে উঠে।’
‘কেন সুন্দর লাগছে না? নতুন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে এসেছি।’
‘খালি ফেসওয়াশ করলেই হয় রে মগী? একটু ব্রেনওয়াশেরও তো দরকার আছে।’
প্রেমা আর অপমান নিতে পারছে না। রোজ রোজ এত অপমান! আর মানা যাচ্ছে না। এই লোককে বিয়ে করে মানুষ বানাতে হবে। কিন্তু সে তাকে বিয়ে করলে তো! প্রেমা গাল ফুলিয়ে উঠে পড়ে। সে যাওয়ার পরই প্রেম উঠে একটা সিগারেট ধরায়। দূর বাল আজকে লেট হয়ে গেল। জলদি ভার্সিটি যাওয়ার কথা ছিল। ওই শালী বাঁদরমুখি তার বাইকের হাওয়া লিক করে পালিয়েছে কাল। ওর ভেতর এত আগুন কিসের? প্রেম আজ গলাটা চেপে ধরে বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে ওর আগুন নিভাবে।
নাস্তা তো দূরে থাক। আর তীব্র মেজাজ খারাপ নিয়ে কারো সঙ্গে দেখা না করেই প্রেম ভার্সিটি যায়। তখন ক্লাস চলছে পুরোদমে। প্রেমের হাঁটার গতি দেখেই সবাই বুঝতে পারছে আজ কারোর ওপর তাল পড়বে। প্রেমের সবচেয়ে কাছের মানুষ হচ্ছে অঙ্কুর। গুরু গুরু বলে ডেকে মাথা খায় ছেলেটা। সেও আজকে প্রেমের এই রূপ দেখে আন্দাজ করতে পারছে ভয়াবহ কিছু হতে চলেছে। প্রেম সরাসরি তৃষার ক্লাসরুমে গিয়ে পুরো জমজমাট চলা ক্লাসের মাঝে এসে পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে একেবারে তৃষার কপাল বরাবরের ধরে। তৃষার মধ্যে কোনো রিয়াকশন দেই। তাকে ভয় দেখানোর জন্য এত সস্তা খেলনা গুলি? সে ফোনটা বের করে প্রেমকে বলল, ‘এই এই ভালো করে ধরো। চেহারাটা যেন এমনই গুন্ডা গুন্ডা লাগে। এই শিমলা একটা ছবি তুলে দে তো। ইন্সট্রাগামে পোস্ট করব।’
রীতিমতো তখন ক্লাস পুরো চুপচাপ। স্যার নিজেও চুপসে আছেন। প্রেমের মেজাজ তখন আরো খারাপ হয়েছে। সে পুরো ক্লাসের মধ্যে তৃষার গলা চেপে ধরে বলল, ‘বান্দির বাচ্চা তোর সাথে প্রেম ইতরামো করে রে? এই অঙ্কুর হলের রুমের চাবি দে তো। শালীকে বুঝিয়ে দেই পিস্তল আমার আসল না খেলনা?
চলবে?
#প্রেমতৃষা
#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_৩
তৃষাকে হলের রুমে এনে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করল প্রেম। ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলতে যাবার আগেই তৃষা গলা উঁচু করে বলল, ‘এই ভাই ওয়েট। মুখে অনেক দামি মেকাপ করেছি। এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেললে তো সব মেকাপ বিছানার চাদরে গিয়ে লাগবে। আমি নিজ থেকেই যাচ্ছি, দেখি আপনি আপনার কোন ক্যালমা দেখান।’
প্রেম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ‘আজকেও বাঁদরমুখি দেখছি ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছো? তাও কড়া লাল! অনেক সুন্দর লাগছে। আসলেই তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে পৃথিবীর বুকে একপিসই। ওয়েট একটা ছবি তুলে রুহুটাকে শান্ত করি।’
তৃষা প্রথমে মুখ বাঁকিয়ে রাগ দেখালেও ভেতরে ভেতরে হাসি চেপে রাখল। মনে মনে ভাবল, অবশেষে এই ছেলেও তার রূপের খাঁচায় বন্দী হয়েছে। সে বলল,
‘মাফ করে দিয়েছি। গাধা পড়ে হলেও আমার মর্ম বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক সিনিয়র ভাইয়া। নেন আপনার তো আইফোন। তুলেন, তুলেন একটা কড়া ছবি তুলেন।’
প্রেম উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘সুন্দরী আপু একটু পাউট করেন। আপনাকে পাউট করলে বেবিডল লাগবে।’
প্রশংসা শুনে তৃষার মাথা আরও উঁচু হলো। গর্বভরে ঠোঁট বাঁকিয়ে পোজ দিতেই প্রেম ক্লিক করে ছবি তুলল। তারপর গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল, ‘হয়ে গেছে। নাম্বারটা যদি দিতেন পাঠিয়ে দিতাম।’
তৃষা ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘যে-সে মানুষকে তৃষা নুজায়াত নাম্বার দেয় না ভাইয়া।’
প্রেম গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছেন আপু। কষ্ট পেলাম। বুক ভরা ব্যথা নিয়ে না হয় আপনাকে আপনার ছবিটাই দেখাই?’
‘ফাস্ট রাবিশ ভাইয়া।’
প্রেম এক মুহূর্তে কাছে এসে ফোনটা সামনে ধরে ছবিটা দেখায় তৃষাকে। তারপর বলে, ‘দেখ খবিশ মাইয়া তোর ছবি।’
তৃষার সেই ছবি দেখে প্রেমের চুল ছিঁড়ে ফেলতে হচ্ছে করছে। এটা কী দেখালো? একটা বানর লাল লিপস্টিক ঠোঁটে ঘষে, মুখটা পাউট করে রেখেছে? তৃষার রূপ নিয়ে মজা নেওয়া?
‘আপনি নিজের থোমা খানা আয়নায় দেখেছেন? গরিলার মতো দেখতে।’
প্রেম ভ্রু কুঁচকে ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘এই মেয়ে দেব নাকি ডিম থেরাপি?’
তৃষা মুচকি হেসে জবাব দিল, ‘আপনার ওপর ট্রাই করে দেখান। ভালো লাগলে পরে আমি সার্ভিস নিয়ে দেখব।’
‘মুখে মুখে তর্ক ছাড়া আর কিছু পারো না?’
‘আরো অনেক কিছু পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে পারব না। আমার একটা ডিমান্ড আছে না?’
‘তোমার রিমান্ড আমি লাথি মেরে জানালা দিয়ে ফেলব।’
‘কখন ফেলবেন একটু আগে ভাবে জানিয়ে দিয়েন। আমার বান্ধুবী শিমলা মরিচকে বলব নিচে থেকে ক্যাচ ধরতে। আমার ডিমান্ডের সেই দাম। বিক্রি করলে মালামাল হয়ে যাবেন।’
প্রেম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। তেড়ে এসে তৃষার চুল মুঠি করে ধরতেই তৃষা চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে ছাড় বেডা চুল ছাড়। চুল সব এমনিতেই পড়ে যাচ্ছে। ছাড় কইলাম।’
এত চেঁচামেচিতে প্রেম খানিকটা থমকে গেল। ভাবল, এভাবে চিৎকার করলে বাইরে থেকে কেউ কিছু ভেবে বসতে পারে। তাড়াতাড়ি চুল ছেড়ে দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে বলল, ‘আরে কিছু করেছি নাকি? এমন ভাবে চেঁচানোর মানে কী?’
তৃষা মুখ ছাড়িয়েই আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘ ও মোর খোদা, মরে গেলুম রে প্রেম। প্রেম তুই আর প্রেম দিস না।’
প্রেম স্তব্ধ হয়ে বলল, ‘নাউজুবিল্লাহ। মেয়ে তোমার ভয় নেই?’
তৃষা গম্ভীর গলায় বলল, ‘ভয়কে রোজ আমি কিনি বেঁচি। এখন, ধাক্কা দিব নাকি সাইট দিবেন? উফস ছেলে-পুলেদের জন্য পড়ালেখা করতে পারছি না ঠিক মতো।’
‘এই যাচ্ছো কোথা?’
‘চুপ করেন ব্যাটা। আপনার মুখ করে দেব ভোঁতা।’
‘চুপ থাক। যে কারণে এখানে তোকে আনা তা তো এখনো বাকি।’
‘কী?’
প্রেম গভীর দৃষ্টি মেলে কাছে এগিয়ে এলো। হাতা গুটিয়ে শার্টের বোতাম খোলা শুরু করতেই তৃষার বুক ধকধক করতে লাগল। এ কী! সত্যিই কি ছেলের উদ্দেশ্য খারাপ? এক পা করে কাছে আসতেই তৃষা চোখ-মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে গেল।
ঠিক তখনই প্রেম পাশ কাটিয়ে তার পেছন থেকে ইয়ারফোনটা তুলে নিল। হেসে বলল, ‘চোখ খুল বাঁদরমুখি। ইমরান হাশমির সিনেমা চলছে না এখানে।’
বিছানায় শুয়ে ইয়ারফোন কানে গুঁজে আবার বলল, ‘পাক্কা দশ মিনিটের মধ্যে ঘরটা ঝাড়–পোঁছ দিয়ে কফি নিয়ে আসবে। বুঝেলে বাঁদরমুখি?
তৃষা দাঁত কামড়ে ভেতরে ভেতরে গজরাল, ‘এখানে এনে আদিখ্যেতা দেখাবে ভেবেছিলাম, আরে গিন্নিপনা করাচ্ছে! এখানে এনে রেগ দেওয়া হচ্ছে? দেব নাকি ঝাঁটা দিয়ে মাথায় একটা ৪০০ বোল্ডের বারি?শালা একেবারে হাইব্রিড করলা—খেতে তিতা, কিন্তু পুষ্টিকর!
–
লাশের সামনে বসে আছে প্রত্যুষ। এই নিয়ে দু’টো লাশ পেলো। দু’টোই মেয়ে। দু’টোর মাথার চুল কেটে নেওয়া হয়েছে। খুনে চুল কেটে নিয়ে হয়তো বুঝিয়ে রেখে যায় তার খুনের প্যার্টান কেমন? লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে বলে প্রত্যুষ চোখের সানগ্লাসটা ঠিকঠাক মতো লাগিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে একদল সাংবাদিক তাকে ঘিরে ধরে, ‘স্যার এই নিয়ে এমন ভাবে দুটো মেয়ে খুন হলো। আপনারা এখনো কিছু করতে পারলেন না যে? তাহলে কী এভাবেই একটার পর একটা খুন হবে? আর আমাদের মেয়ে মানুষকে এভাবে ভয়ের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকতে হবে?’
‘ তদন্ত আর বাদাম ভাজা কিন্তু এক জিনিস নয়। যে চাইলেই ভেজে খেয়ে ফেললাম। সাইট প্লিজ।’
প্রত্যুষ মিডিয়ার মাঝ থেকে কোনোমতে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল। মাথাটা নষ্ট করে দিবে এবারের বিষয়। পুলিশ সামাল দিতে পারছে না বলে এমন ঠুনকো একটা লেইম বিষয় তার মতো কর্মকার্তাদের প্রশাসন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন সরকারের ওপর তো যাওয়া যাবে না। গেলে চাকরি থাকবে কী? প্রত্যুষ গাড়িতে বসতেই বাসা থেকে প্রেমান্তুির কল এলো। সে তড়িঘড়ি করে বলল, ‘ভাইয়ারে মা তোমার জন্য আবারও পাত্রী দেখতে গেছে। এবার মনে হয় ভাবি ঘরে আসবেই?’
‘হোয়াট ননসেন্স! আবার?
–
যুবরাজ সরকারের মেজাজ তুঙ্গে। সকাল থেকেই মাথা নষ্ট। হেডলাইনে বড় বড় করে ছাপা হয়েছে এমপি সাহেবের হবু বউ বিয়ের আগের দিন রাতে পালিয়েছে। কী লজ্জা! কী লজ্জা! জীবনে বিয়ে করবে না করবে না বলে ধ্যান ধরে বসে থাকা মানুষটা এত বছর পর একটা বিচ্ছুকে কিনা শেষে মন দিল? ব্যাটি হতচ্ছাড়ি পালিয়েছে তো পালিয়েছে সঙ্গে এমপির মনটাও সঙ্গে নিয়ে গেছে। ফেরত দিয়ে যেতে পারত অন্তত। কিন্তু আর নয় ওই ধানিলঙ্কাকে খুঁজে বের করতেই হবে। ইতিমধ্যে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। ওকে না পেলে ওর মাকে তুলে আনবে যুবরাজ। যুবরাজ দাঁত চেপে বলল, ‘শুনো তৃষাকে না পেলে ওর মাকে তুলে আনবে?’
পাশে দাঁড়ানো এসিস্ট্যান্ট রাফসান অবাক হয়ে বলল, ‘ছি স্যার মেয়ে না পেয়ে মেয়ের মাকে?’
যুবরাজ গর্জে উঠল, ‘আরে বিয়ে করব বলেছি? ওনাকে জিম্মি করে ওনার মেয়েকে হুমকি দেব।’
রাফসান ধীর স্বরে জবাব দিল, ‘হুমকি যে দিবেন? তার আগে তো ওনার মেয়েকে খুঁজে বের করেন।’
‘তুমি চুপ থাকো গবেট কোথাকার।’ যুবরাজ ধমক দিল।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাফসান হঠাৎ বলে উঠল, ‘স্যার আপনি চাইলে কিন্তু মাথা ঠাণ্ডার করার একটা টোটকা বলতে পারি।’
যুবরাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী?’
‘আগে বলুন আপনার ঠিক মাথাটাই তো গরম হয়েছে তাই না?’
‘হ্যাঁ তো?’
রাফসান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘তাহলে মাথাটা কেটে হিমবাহে রেখে আসি? বিশ্বাস করেন স্যার আপনার মাথা আর কখনো গরম হবে না। কত জনকে এই বুদ্ধি দিলাম।’
যুবরাজ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ওরা এখন কই?’
রাফসান বত্রিশটা দাঁত বের করে হেসে জবাব দিল, ‘ইয়ে মানে কবরে।’
–
সন্ধ্যা তখন নেমে এসেছে পুরান ঢাকার আদি মহল্লা নাজিরাবাদে। এলাকার প্রকৃত চেহারাটাই আলাদা। নাজিরাবাদকে সময়ের গহ্বরে আটকে থাকা এক মহল্লা বললে ভুল হবে না। সরু সরু আঁকাবাঁকা গলি, ইটের দেওয়ালে খসে পড়া চুনকাম, কোথাও কোথাও শ্যাওলা জমে সবুজ হয়ে আছে। পুরনো নকশার কাঠের বারান্দা দুলতে দুলতে ঝুলে থাকে, তার নিচে দোকানপাটে ভিড় লেগেই আছে। এক পাশে ভাঙাচোরা টিনের চালা থেকে টুপটাপ করে পানি ঝরে, অন্য পাশে কড়াইতে ভাজার শব্দের সঙ্গে মিশে আসছে পুরান ঢাকার বিশেষ গন্ধ। কাবাব, বুটের ঝাল ভর্তা, চটপটির তীব্র মশলা, আবার কোথাও কোথাও আগরবাতির ধোঁয়া। এমন গলির ভেতরেই সন্ধ্যাবেলায় একা ঘুরতে বের হয়েছিল তৃষা। বান্ধবী শিমলা আসেনি, তাই একা একাই ঘুরবে বলে ঠিক করে সে। প্রথমে মনে হয়েছিল একটু হাঁটাহাঁটি করবে, পুরান ঢাকার আসল গলি দেখবে। সরু গলির মাথায় ম্লান কানা বাতি, দালানের চালে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তারের ফাঁক দিয়ে আলো ছিটকে আসছে।কিন্তু নাজিরাবাদের গলি তো কোনো সাধারণ রাস্তা নয়। এ এক গোলকধাঁধা। বাঁক পেরোলেই আরেক বাঁক, একটা গলি গিয়ে মিলেছে তিনটে নতুন গলির সঙ্গে। কোনটা ধরে বেরোতে হবে—এ সিদ্ধান্ত নেওয়া মুশকিল। তৃষা অজান্তেই পথ হারিয়ে ফেলল। তৃষার ফোনে ডাটাও নেই। গুগল ম্যাপ দেখবে কেমন করে? কী অভাব চলে এলো রে। হঠাৎ সামনের গলিটায় ঢুকতেই সাত-আটটা কুকুরকে বসে থাকতে দেখল। মহল্লায় নতুন মানুষ এসেছে তা কী তাদের বুঝতে বাকি? একসঙ্গে সবগুলো কুকুর উঠে দাঁড়ায়। ঘেউ ঘেউ করতে করতে এগিয়ে আসে।
একটা জরুরী কাজে প্রত্যুষ তদন্ত করতে গলির সাত নাম্বার বিল্ডিংটায় এসেছিল ঘন্টাখানেক আগে। একাই এসেছে আজকে। এই গলিতে গাড়ি ঢুকালে মানুষের দম নেওয়ার জায়গা নেই। তাই বাইক নিয়ে এসেছে। কাজ শেষে নিচে এসে বাইক চালু করতেই প্রত্যুষ আঁতকে উঠল। থেমে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করল। আবারও শোনা গেল চিৎকার, সঙ্গে প্রচণ্ড ঘেউ ঘেউ। সে এক মুহূর্তও দেরি করল না। দৌড়ে ছুটল গলির সেই দিকে। কারণ প্রত্যুষের বোঝার বাকি রইল না কোনো মেয়ে যে বিপদে পড়েছে। এখানে কুকুরের কামড় খাওয়া সাধারণ বিষয়! তাও আবার মেয়ে মানুষ। প্রত্যুষ দৌড়ে সামনের দিকে এগোতেই মাথায় ধপ করে আকাশ ভেঙে পড়ল। গোলাপি সালোয়ার-কামিজ পরা, খোলা চুলে একটা মেয়েকে আবিষ্কার করল। তবে ওই কুকুরগুলো মেয়েটিকে নয় বরং মেয়েটি কুকুরগুলোকে তাড়া করছে। ইট হাতে তুলে দৌড়ানি দিতে দিতে চেঁচিয়ে বলছে, ‘শালার গরীব কুকুরের বংশধর। মানুষ চিনিস তোরা? তৃষার পথ আটকে তার সঙ্গে বিরোধিতা করা? আজ খাইছে তোদের।’
কুকুরগুলো প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটে প্রত্যুষের পাশ হাঁতরে ছুটে পালালো। এখানে এসেছিল মেয়েটাকে সাহায্য করতে কিন্তু এখন তো দেখছে কুকুরগুলোর সাহায্য লাগবে। কুকুর বলে কী তারা মানুষ না? তৃষা দৌড়ে এসে প্রত্যুষকে ডিঙিয়ে কুকুরগুলোর পেছনে যাওয়ার আগেই ম্যানহোলের সঙ্গে পড়ে থাকা ইটের টুকরোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গিয়ে পড়ে প্রত্যুষের ওপর। দু’জনে পড়তে পড়তে শেষ রক্ষা হয়। তৃষা ততক্ষণে প্রত্যুষের দিকে তাকায়। চোখে চোখ রাখতেই কোথায় যেন একটা গান বেজে উঠে,
~তুমহে দেখা তো ইয়ে জানা সানাম। পিয়ার হোতা হে দিবানা সানাম। আব ইয়াছে কাহা যায়ে হাম। তেরি বাহোমে মার যায়ে হামমমমমম।~
চলবে?
Share On:
TAGS: ইশরাত জাহান জেরিন, প্রেমতৃষ্ণা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৮+৯+১০
-
প্রেমতৃষা গল্পের লিংক
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৫+১৬
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪+৫
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৩+১৪
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১১+১২
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৬+৭
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৭+১৮
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৯+২০