#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_৯
গাড়িতে বসে সাদাফ চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিল আর আড় চোখে আর চোখে নুরকে দেখছে ।নূর বাহিরে যে দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে ছিল আর গাড়ির ভিতর বা সাদাফের দিকে তাকিয়ে দেখেনি একবারের জন্যেও না।
নুরকে দেখে সাদাফের ভিতরে যে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল তাকি জানে এই অবুঝ মেয়েটি ?জানে না ।কিন্তু গাল ফুলিয়ে বসে আছে ।ভাবছে সাদাফ ওর দিকে তাকিয়ে ও দেখেনি। কিন্তু একটু সাজুগুজুতেই যে নুরকে এতটা সুন্দর লাগে তা এখনই প্রকাশ করা যাবে না তাহলে সারাক্ষণ এভাবে সাজুগুজু করে থাকতে চাইবে।
ভাবলো সাদাফ।
সাদাফ একটু সামনে গিয়ে গাড়িটা একটু সাইড করে ব্রেক করলো।তারপর এক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল ।নুর এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে একবারের জন্য ভিতর দিকে তাকাচ্ছে না ।সাদাফ বুঝলো তার অভিমানী নূর অনেক অভিমান করেছে কিন্তু এই মুহূর্তে রাস্তায় অভিমান ভাঙানোর সময় নেই কি করবে বুঝতে পারছে না তাকিয়ে রইল নূরের দিকে।
ঠিক মিনিট খানেক পর বলল ,”নুর আমার দিকে তাকা ।”নুর তাকালো না ।সাদাফ এক ধমক দিল নুর কে।বললো,”আমি বলেছি আমার দিকে তাকা ।শুনতে পায় না?” ধমকের সাথে সাথে নূর পিছনে ঘুরে সাদাফের দিকে তাকালো।
সাথে সাথে নূর টের পেল সাদা খুব জোরে নূরের ঠোঁট ঘষছে কিছু একটা দিয়ে । ব্যা*থায় কুকিয়ে উঠলো নুর।দেখল টিস্যু দিয়ে নূরের ঠোঁট থেকে লিপ গ্রস মুছে দিচ্ছে সাদাফ। মুছতে মুছতে তারপরে বলল ,”এগুলো আর লাগাবি না।
আমার সামনে এগুলো ছাড়াই সুন্দর আর আমি না দেখলে এগুলো লাগিয়ে কাকে সৌন্দর্য দেখাবি ?অন্য কাউকে?
নূর বলল ,”তাই বলে এভাবে মুছবেন? এত জোড়ে জোড়ে ঘষে ঘষে ব্যথা দিয়ে মুছতে হবে ?আমাকে বললে তো আমি মুছে ফেলতাম। ঠোঁট তো ছুলে গেলো আমার।
সাদাফ বললো ,”আমি বলায় না নিজের হাতে করায় বিশ্বাসী ।তোকে বললে তুই কিভাবে না কিভাবে মুছবি তাতে আমার বিশ্বাস নেই। তাই আমি নিজের হাতে সুন্দর করে মুছে দিলাম।”পর্ব নয় গতকাল পোস্ট করেছে যারা ওইটা ফেইক।আমি লেখিকা নীলা রহমান।
নুর ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইল সাদাফের দিকে ।মনে মনে ভাবতে লাগলো ,”এই লোকটা এমন কেন কালকে তো ঠিকই কত সুন্দর করে আদর করে যত্ন করে নূরকে কত কিছু বুঝালো ।আর এখন চটাং চটাং কথা বলে বুঝাচ্ছে এই লোকটাকে বুঝাই যায় না।
এখন বুঝতে পারছে নুর এই লোকটা নিশ্চয়ই আমাকে পছন্দ করেনা পছন্দ করলে মুভিতে দেখেছে গার্লফ্রেন্ডরা সাজুগুজু করলে বয়ফ্রেন্ড তাদের কত তারিফ করে ।আর এই লোক কিভাবে ঘষে ঘষে ঠোঁটটা ছুলে ফেললো একটু লিপস্টিক উঠানোর জন্য ।একটি বার বলল না নূর তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
মানুষ কাওকে ভালোবাসলে তার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বলে অথচ উনি শুধু ব*কার উপরেই রাখে।
নুর অভিমানে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকিয়ে রইল সাদাফ গাড়ি চালাতে শুরু করল মনে মনে ভাবল নুর এখনো অনেক ছোট ওকে অত সায় দেওয়া যাবে না একবার যদি প্রকাশ করে ফেলে সাজালে সুন্দর লাগে তাহলে দিনভর সাজুগুজু করে ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করবে যেটা সাদা চায় না।
তাই ধীরে কিন্তু স্পষ্ট আওয়াজে বলল ,”আর সাজুগুজু করে আমার সামনে কখনো আসবি না। মেকি বানোয়াট কোন কিছুই আমার পছন্দ নয় আমার একদম অরিজিনাল পছন্দ প্রাকৃতিক পছন্দ।”
স্কুলের গেটে চলে আসলো সাদাব কথাগুলো বলতে বলতেই তারপর বলল নাম চুপচাপ সোজা স্কুলে যাবি এদিক ওদিক যেন যেতে না দেখি।
তারপর কি মনে করে যেন বলল ,”দাঁড়া সেদিন কি বলেছিলি ?ক্লাস টেনের একটা ছেলে তোকে প্রপোজ করেছে ?তোকে ভালোবাসি বলেছে ?আর ছেলেটা অনেক হ্যান্ডসাম ?কোন ছেলেটা চল আজকে দেখে যাব।”
নুর পড়ে গেল মুশকিলে ।এখন কিভাবে ছেলেটাকে দেখাবে ?কিভাবে যেয়ে বলবে ছেলেটা প্রপোজ করেছে ।লজ্জা শেষ হয়ে যাবে নুর ।আর তাছাড়া সাদাফ যদি খারাপ কিছু করে বসে সেই ছেলেকে ?ভয়ে নুরের হাতপা কাঁ*পা কা*পি শুরু হয়ে গেলো নুরের।বলল ,”থাক না ভাইয়া আজকে না অন্য একদিন দেখা করিয়ে দিব ।”
বলেই দৌড়ে স্কুলে গেট পার হয়ে গেল নূর।
সাদাফ এমনিও যেত না এটা শুধু নূরকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে ।যাতে ওই ছেলে থেকে দূরে দূরে থাকে ।যাতে মনে করে সাদাফ কথাটা আমলে নিয়েছে এবং যেকোনো সময় ওই ছেলেকে দেখতে চাইতে পারে তাই এ কথাটা বলেছিল সাদাফ।
অফিসে এসে সাদাফ জানতে পারল আজকে একটু বাইরে ইন্সপেকশনে যেতে হবে ।বাহিরে ওদের দুইটা ফ্যাক্টরি আছে সেগুলো ভিজিটে যেতে হবে ।এতদিন শুধু অফিসিয়াল কাজ করেছে আজ স্বশরীরে ফ্যাক্টরি ভিজিটে যাবে তাই ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান রেডি হয়ে সাদাফের কেবিনে আসলো।
হুমায়ুন বলল,” মাত্রই আসলি?”
সাদাফ বলল ,”হ্যাঁ বাবা ওই নুরকে স্কুলে দিয়ে আসতে হয় তাই অনেক সময় দুই তিন মিনিট লেট হয়ে যায় ।কিছু মনে করো না ।মায়ের আদেশ এটা আমার মানতেই হবে।”
নওরিন আফরোজ এর কথা বলায় সাথে সাথে হুমায়ূণ রহমান দমে গেলেন কারণ জানেন স্ত্রী যখন একবার বলেছেন নুর কে স্কুলে দিয়ে আসতে হবে তাহলে এখানে আর দ্বিতীয় কোন কথা বলার জায়গা নেই ।আর তাছাড়া নূর বড় হয়েছে কাউকে না কাউকে স্কুলে দিয়ে আসতেই হবে । নীলা রহমান লেখিকা।তাই সাদাফ দিয়ে আসলে আরো বেটার হয় কোন সমস্যা নেই।
ফজলুর রহমান বলল ,”বাচালি টেনসনে থাকতাম মেয়েটাকে নিয়ে ।যাওয়ার সময় আমি ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিব ।ড্রাইভার নিয়ে যাবে ।সকালে ড্রাইভার একটু ব্যস্ত থাকে তাই সমস্যা হয়ে যায় আর তুই যেহেতু দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিস প্রতিদিন সকালে তুই স্কুলে দিয়ে আসবি তাহলে আমার আর কোন টেনশন নেই।
ছোটবেলা থেকে নূরের সমস্ত কাজ তো তুই করেছিস এক কথায় আমি আর সামিহা তো শুধু মনে হয় জন্মই দিয়েছি নূরের সব কাজ তো তুই করতি ।কোলে পিঠে করে তুই মানুষ করলি মাঝখানে ছয়টা বছর শুধু লেখাপড়ার জন্য বাহিরে ছিলি । লেখিকা নীলা রহমান।এখন আবার এসে দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিস ।সত্যি কথা বলতে তুই থাকলে আমার আর কোন চিন্তা নেই নূরের ব্যাপারে কারণ তুই নূরের জন্য সব সময় বেস্ট কাজটাই করবি।
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ফ্যাক্টরিতে পৌঁছে গেল সাদাফ হুমায়ুন রহমান ও ফজলুর রহমান ।গাড়ি থেকে নেমে ফ্যাক্টরির দিখে চোখ বুলিয়ে সাদাফ বললো ,”এটা আমাদের ফ্যাক্টরি ?ছয় বছর আগে তো একটু অন্যরকম দেখেছিলাম ।সম্পূর্ণই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।”
ফজলুর রহমান বলল ,”হ্যাঁ ছয় বছর অনেক সময় ।তুই যাওয়ার বছরখানেক পরে সবকিছু আবার পরিবর্তন করা হয়েছিল।”
তারপর হুমায়ুন রহমান বলল ,”আয় ভিতরে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”
আর আজকে এই ফ্যাক্টরি ভিজিট করে আমরা সরাসরি বাসায় যাব অফিসে আর যাব না অফিসে তেমন কোন কাজ নেই আজকের দিনটা আমরা সবাই পরিবারের সাথে কাটাবো বললেও ফজলুর রহমান।
সাদাফ জানে কেন এ কথা বলছে কারণ আগামীকাল নূরের জন্মদিন ১৬ থেকে ১৭ তে পড়বে তাই সাদাফ বললো ঠিকাছে।
মনে মনে ভাবলো ১৭তে মাত্র পা দিল এখনো আরো বহু দূর যেতে বাকি।
ফ্যাক্টরিতে ঢুকতেই কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা সবাই সংবর্ধনা জানালেন সাদাফ কে। লেখিকা নীলা রহমান।তারা আগে জানতে পেরেছিলেন বসের ছেলে আসবে এবং বসের পর পরবর্তীতে সাদাফ সবকিছু দেখাশোনা করবে ।তাই সাদাফ তাদের ইমিডিয়েট বস ।এখন থেকে সাদাফ কেই সব রিপোর্ট করতে হবে।
কর্মীবৃন্দদের সাথে সংবর্ধনা পর্ব শেষ করে বিশেষ বিশেষ কিছু কর্মকর্তাকে কাবিনে ডাকা হল ।এখানে সাদাফের জন্য আলাদা একটি কাবিন তৈরি করা হয়েছে।
সেই কেবিনেই ডাকা হল সবাইকে একে একে সবাই উপস্থিত হলো একাউন্ট ডিপার্টমেন্ট ,আইটি ডিপার্টমেন্ট ,প্রোডাকশন টিম ও এইচ আর থেকেও কর্মকর্তা উপস্থিত হল ।এই চারজনকে নিয়েই আজকে মূলত মিটিংটা হবে।
প্রায় ঘন্টা খানেক এ চারজনের সাথে কথাবার্তা বলে মিটিং শেষ করল ।শেষমেশ সাদাফ বলল ,”প্রোডাকশন বাড়াতে হবে প্রয়োজন পরলে লোক বেশি নিয়োগ দিন ।পার আওয়ার প্রোডাকশন না বাড়লে আমাদের শিপম্যান যেতে প্রবলেম হবে ।শিপমেন্ট যেন টাইম মতো যায় প্রয়োজন পড়লে তাদেরকে এক্সট্রা ভাতা দিয়ে মোটিভেশন দিয়ে দুই ঘন্টা করে ওভারটাইম করিয়ে নিন।
এবং অবশ্যই সেটা পারিশ্রমিক দিয়ে এবং একটা প্রণোদনা দিয়ে কারণ শুধু টাকা দিয়ে একজন কর্মীর মনোবল আপনি কিনতে পারবেন না তার সাথে ভালোবাসার শ্রদ্ধা সম্মান এবং টাকা চারটা জিনিসই আপনাকে পে করতে হবে।
যদি প্রত্যেক ওয়ার্কার দুই ঘন্টা করে ওভারটাইম করতে রাজি হয় তাহলে আমরা সময়মতো শিপমেন্ট পৌঁছাতে পারবো ।তাই প্রয়োজন পড়লে আপনারা কথা বলুন না পারলে তাদের সাথে আমার মিটিং ফিক্সড করুন আমি নিজে তাদের সাথে কথা বলব ।”
প্রোডাকশন অফিসার বললেন ,”জি স্যার তাদের সাথে কথা বলব অলরেডি তাদের সাথে কিছু কথা হয়েছে দুই ঘন্টা ওভারটাইম করতে রাজি তবে তাদের ওভারটাইম কত টাকা করে ধরতে হবে সেটা নিয়ে একটু বার্গেনিং ছিল আপনি যেহেতু বলেছেন তাদের খুশি মত করতে তাহলে তাদের ন্যায্য মূল্য দিয়েই আমরা প্রোডাকশন বাড়ানোর চেষ্টা করব।”
এবার এইচ আর ডিপার্টমেন্টের লোকের দিকে তাকিয়ে বলল ,”এইচআর এর ডিপার্টমেন্ট থেকে ভালো একজন লোক নিয়োগ দিন যিনি সার্বক্ষণিকভাবে কর্মীদেরকে প্রেষণা ও প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখবে এবং সরাসরি কর্মীরা আপনার কাছে না যেয়ে তার কাছে জানাবে ।তাদের কোন দাবি-দাওয়া বা তার কোন সমস্যা হলে সেই লোকের কাছে জানাবে।”
অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের দিকে তাকিয়ে সাদাফ বলল ,”কর্মীদের বেসিক সেলারি পার আওয়ার যত টাকা করে পরে তার থেকে দুই তিন টাকা করে বেশি দিন যাতে ওরাও খুশি থাকে এবং আমাদের শিপমেন্টের কাজটাও সময় মত দিতে পারি।”
ফজলুর রহমান এবং হুমায়ূন রহমান ইমপ্রেস হলেন ছেলে লেখাপড়া করে এসেছে কিন্তু এই বিজনেসে ছেলে এতটা দক্ষ হয়ে উঠেছে সেটা বুঝতে পারেনি ।মাত্র দুদিন হলো জয়েন করেছে কিন্তু মনে হবে কত বছর ধরে চালাচ্ছে সাদাফ।
বেলা চারটা ইতিমধ্যে বাসায় পৌঁছে গিয়েছে নুর ।সাদাফ ড্রাইভার এর সাথে কথা বলে জেনে নিয়েছে ।সাদাফের লাঞ্চ শেষ ।এখন তারা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে ।চাচা যেহেতু বলেছে আজকে আর অফিস যাবে না তাই সাদাফ তার মত আজ কা*জ করতে পারবে ।
যেহেতু আগামী কাল একটি বিশেষ দিন এবং একটি বিশেষ সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে সাদাফ যা অন্য কারো সাথে শেয়ার করবে না ।সবকিছু নিজে একা একা করবে বাকি পরিবার যা সারপ্রাইজ দিবে তার সাথে সাদাফ থাকবে সমস্যা নেই।
বাসায় পৌঁছে নুর নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে রইল ।নূরের মন খারাপ ।আগামীকাল নূরের জীবনের একটি বিশেষ দিন অথচ বাড়ির কেউ এটা নিয়ে কোন কিছু বলছে না ।কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না কোন শপিং হচ্ছে না সবকিছু কেমন যেন ঠান্ডা।
গতবছর তো জন্মদিনের আগে পাপা শপিং করিয়ে দিয়েছিল বড় আব্বু কত কিছু দিয়েছিল বড় আম্মুর পছন্দ মত খাবার রান্না করেছিল সামিয়া বেগম শপিং করে দিয়েছিল ।কিন্তু এখন এসব কিছুই হচ্ছে না ।সাইমন আর রিমাটাও আজ বাসায় নেই ।
এখনো তারা বাসায় ফেরেনি। নীলা রহমান ।আর সাদাফ ভাই তো হয়তো জানেই না নুরের জন্ম দিন খাল।এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো নুর ।স্কুল থেকে এসেছে অথচ স্কুলের ইউনিফর্ম টাও চেঞ্জ করেনি এভাবেই ঘুমিয়ে গেল।
চলবে………………….
ভালো লাগলে বেশি বেশি করে লাইক শেয়ার কমেন্ট করবেন।
#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_১০
নুর ঘুম থেকে উঠলো সন্ধ্যা ছটায় ।উঠে দেখল নিচে ড্রয়িং রুমে সবাই চা নাস্তা করছে ।নুরু হেলতে দুলতে এসে সোফায় বসল কিন্তু সাদাফের দিকে তাকালো না ।সাদাফ আড় চোখে খেয়াল করছে নুরের সমস্ত গতিবিধি কিন্তু কিছু বলছে না।
চা খেতে খেতে সবার সাথে গল্পে ব্যস্ত রইলো সাদাফ।নূরের অভিমানের পাল্লা ভারী হচ্ছে ।নুর না হয় খেয়াল করছে না কিন্তু সাদাফ কেন ওর দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না ।খেয়াল করছে না ।তাহলে কি গতকালকে সব কিছু ভুলে গিয়েছে সাদাফ ভাই !এই ভালো এই খারাপ।নুরের যেনো কোন অনুভূতি নেই।
যখন নুর অনেক ভয় পেত তখন তো ঠিকই পিছনে ঘুরঘুর করতে হাত ধরে বসে থাকতো কত কিছু করত ।আর এখন যখন নূর একটু একটু সাদাফ কে পছন্দ করে তখন ওনার ভাব বেড়ে গেছে ।
মনে মনে ভাবতে লাগলো নুর।
হঠাৎ সবার সাথে এসে যুক্ত হলো সাইমন ও রিমা ।সাইমন রিমা কে বলল ,”কিরে রিমা আগামী কালকে তোর প্লান কি ?”
রিমা বলল ,”তেমন কিছু না ।বাইরে যাব একটু ঘুরবো ফিরব ।”
নূর চট করে তাকালো রিমা ও সাইমনের দিকে ।একি ওরাও ভুলে গিয়েছে ওর জন্মদিনের কথা।
নুরের অনেক অভিমান হচ্ছে ।কেউ জন্মদিনের কথা তুলছে না ।কেউ কিছু বলছে না কেউ মনেই রাখেনি নুরের কথা।
গত বছর সবাই মনে রেখেছিল কত ভালোবাসা দিয়েছিলো উইশ করেছিলো।কত গিফট করেছিল কিন্তু এবছর কারো মনে নেই ।সাদাফ ভাইয়ের ও মনে নেই ।নূরের খুব অভিমান হচ্ছে । গল্পের লেখিকা নীলা রহমান। গল্প ঘর চুরি করে দীপা রহমান নামে চালাচ্ছেন।চোখ দুটো ছলছল করছে ।না এখানে আর বসে থাকবে না চুপচাপ উঠে নিজের রুমে চলে যাবে ।তাই নূর উঠলো চুপচাপ নিজের রুমে যাওয়ার জন্য এমন সময় নওরিন আফরোজ বলল ,”দুপুরে খাসনি বস আমি খাইয়ে দিব তার পরে যাবি ।না খেয়ে না খেয়ে একদম হ্যাংলা পাতলা হয়ে যাচ্ছে।”
নুর বলল ,”না বড় আম্মু ।আমি এখন খাব না ।”
সামিহা বেগম বললো ,”একবারে থা*প্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব ।মুখে মুখে তর্ক ?বস চুপচাপ দুপুরে খেয়েছিস তুই ?এখন খাবিনা সারাদিন না খেয়ে থাকবি?”
“আহা, মেয়েটাকে বকছো কেন সামিহা ?”বলল হুমায়ূন রহমান ।তারপরে বলল ,”চুপচাপ সুন্দর করে বুঝিয়ে খাওয়াও ।এত বকাঝকা করো কেন মেয়েটা কে ?তোমাদের জন্য মেয়েটা খাওয়ার রুচি কম যেভাবে জোর করো এ জন্য ওর আরও খেতে ইচ্ছা করে না।”
সামিহা বেগম বললেন ,”ভাইজান আপনার জন্য আর ওনার জন্য কিছু বলতে পারি না ।কিছু বলতে গেলেই আপনারা আমাদেরকে আরো তেড়ে আসেন যার জন্য আরও বেয়াদব হচ্ছে মেয়েগুলো।
শুধু নূর কেন রিমার ও খাওয়া দাওয়া মনোযোগ কম ।তারপরও রিমা একটু যা খায় নূর তো খাওয়া দাওয়া জোর করে না খাওয়ালে খাবেই না আর আপনি বলছেন জোর করতে না।”
“আমাকে টানছো কেনো ছোট আম্মু?? আমি কিন্ত খাই।” বললো রিমা। নীলা রহমান
“হুম খাস তো চড়ুই পাখির আধার খাস।”বললো সায়মন।
সাদাফ সবার কথা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনছে একটি কথাও বলছে না ।চুপচাপ বসে আড় চোখে শুধু নুরকে দেখছে।
নুরের অভিমান হল খুব অভিমান হল ।আগামীকাল ওর জন্মদিন জন্মদিনের কথা কারো মনে নেই অথচ সবাই পড়ে আছে খাওয়া নিয়ে ।নুর উঠে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল খাবে না কথাও বলবে না কারো সাথে।
সাদাফ একটি বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো খুব কষ্ট হচ্ছিল নুরকে এভাবে বোঝানো যে জন্মদিনের কথা কারো মনে নেই ।তারপর সোফায় গায়ে এলিয়ে দিয়ে সাইমন ও রিমা কে বলল ,”তোরা প্রস্তুত তো যা যা বলেছি করেছিস।”
সাইমন বলল ,”হ্যাঁ ভাইয়া আমার তরফ থেকে ডান ।রিমা তোর কি খবর ?”
রিমা বললো ,”হ্যাঁ ভাইয়া আমিও ডান ।এখন শুধু আমাদের ডেকোরেশন বাকি যার জন্য নুরকে একটু রুমে থাকা দরকার ছিল ।এখনো রুম আটকে বসে থাকবে এটা আমাদের সুবিধা হবে।”
সাদাফ বলল ,”কিন্তু না খেয়ে বসে থাকলে তো হবে না খাওয়াতে হবে।”
তারপর নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বলল ,”মা আমি কি নুরকে খাবারটা দিয়ে আসব আমাকে না করতে পারবে না ।আমাকে একটু ভয় পায়।”
সামিহা বেগম সাথে সাথে বললেন ,”হ্যাঁ ভাবি ওর কাছে দেন ।একমাত্র ও গেলেই ভয় এবং লজ্জায় খাবে আমরা গেলে তো ভাব ধরে বসে থাকবে।”
নওরিন আফরোজ খাবারের ট্রে এনে সাদাফের হাতে দিয়ে বলল ,”যা সবটুকু খাবার শেষ করিয়ে তারপর আসবি ।আমরা এখানে সবকিছু করছি চিন্তা করতে হবে না ।যেয়ে সুন্দর করে যেন খায় বসে থেকে খাইয়ে তারপর আসবি।”
সাদাফ খাবারের ট্রে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেল নূরের রুমের দিকে ।নুরের রুমে দরজা আজকে লাগানো তাই চাইলে ও সাদাফ রুমে ঢুকতে পারছে না তাই সাদাফ রুমের দরজা নক করল । নীলা রহমান লেখিকা।নূর ভিতর থেকে কোন সাড়াশব্দ করছে না তাই সাদাফ আবার দরজা নক করলো ।
নুর এবারও চুপ ।এবার সাদাফ বললো ,”নূর দরজা খোল এখন দরজা খোল বলছি।”
নুর উঠে এসে দরজা খুলেই আবার একটি কথা না বলেই বিছানায় গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল ।সাদাফ খাবার নিয়ে ভিতরে ঢুকেই দরজা লক করে দিল ।
নুর তাকিয়ে দেখলো না সাদাফের দিকে ।সাদাফ বিছানায় বসে খাবারের ট্রে দুজনে মাঝখানে রাখল ।তারপর বলল ,”যা হাত ধুয়ে আমার সামনে বসে বসে খেয়ে শেষ করবি সব।”
নুর বলল ,”খাব না ।”
সাদাফ বললো,” থা*প্পর খাওয়ার আগে চুপচাপ খাবার শেষ কর না হলে আমি কিন্তু থা*প্পর ও মারতে জানি।”
কেন যেন নূর ভয় পেয়ে গেল ।তাকালো দরজার দিকে ।দেখল দরজা লাগানো ।এই লোক যে কোন মুহূর্তে থা*প্পড় মেরে বসতে পারে তাই চুপচাপ উঠে গিয়ে জি‘দ দেখিয়ে হাত ধুয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো।
কিছুটা খেয়ে রেখে দিতে চাইলেই সাদাফ আবার বলল ,”চুপচাপ বাকি খাবারটুকু শেষ কর।”
নুর বলল ,”আমি সত্যি আর খেতে পারছি না ।আর খাব না ।”
সাদাফ বললো আর একটু খা।
নূর এবার বিরক্ত হলো ভীষণ বিরক্ত হলো ।বিরক্তি নিয়ে খাবারটুকু শেষ করল।
সাদাফ তাকিয়ে আছে নুরের দিকে।নুর হাত ধুয়ে এসে বললো,” হয়েছে।”
“কি হয়েছে? এমন করছিস কেনো??”বললো সাদাফ।
নুর বললো কি করেছি??
সাদাফ বললো,” জানিস না কি করছিস??এতো রা*গ এতো অভিমান কার জন্য?”
নুর বলল ,”কই না তো ।আমি তো কারো উপরে রা‘গ অভিমান করিনি ।আর আপনার উপরে রা‘গ কেন করব?”
সাদাফ নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।তারপর একটু কাছে এসে কানে কানে বলল ,”সেটাই তোকে জিজ্ঞেস করেছি। আমার উপরে এত রা*গ এত অভিমান আসে কোত্থেকে তোর ?কি এমন অধিকার আছে তোর আমার উপরে যে এত রা‘গ আসে আমার উপরে ?তুই উত্তর দে আমাকে?”
নুর চুপ করে রইল ।”আসলেই তো কি অধিকার আছে ?নুর তো জানে না আর এত রা‘গ অভিমান বা কোত্থেকে আসে সাদাফ ভাই তো কখনো নূরকে বলে ও নি ভালোবাসে।
শুধুমাত্র চাচাতো ভাই এর জন্য যদি অভিমান আসে তাহলে সাইমনের উপর আসলো না কেন বা রিমার উপর আসলো না কেন ?বা বাকি সবার উপরে এত রা‘গ অভিমান কেন হলো না ?শুধু সাদাফের উপরে কেন এত রা‘গ কেন এত অভিমান?”
সাদাফ ধীরে ধীরে কিন্তু স্পষ্ট স্বরে বলল ,”নিজেকে প্রশ্ন কর নুর। শুধুমাত্র আমার উপরে কেন তোর এত অভিমান জমে ?অন্য কারো উপরে জমে না কেনো?প্রশ্ন করে উত্তরটা আমাকে দিবি ।”
বলেই খাবারের ট্রে নিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল সাদাফ।
নূর তাকিয়ে রইল সাদাফের যাওয়ার পানে ।নিজেকে প্রশ্ন করল নুর ।আসলেই সাদাফ এর উপরে কিসের এত অধিকার বা কিসের এত অভিমান জমে সব সময় ?কেন সাদাফের উপর নূর প্রত্যাশা বেশি করে? নীলা রহমান ছাড়া আমার আর কোন পেইজ নেই।নুর কি অবচেতন মনে সাদাফকে নিজের মনে করে? নুর কি নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছে সাদাফ কে যার কারনে সাদাফ থেকে প্রত্যাশা বেশি করে ?”
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে নূর কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছে না।
সন্ধ্যা থেকে রুমে বসে রইল নূর ।আর নিচে গেল না ।রাত বাজে দশটা ।নূরের খুব ঘুম পাচ্ছে তবে সাদাফের করা প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে নূর কখন ঘুমিয়ে গেল বলতেই পারেনা।
এদিকে সাদাফ সবাইকে বলে দিয়েছে বারোটার সবাই ছাদে চলে যাবে সব প্রিপারেশন করবে।ঠিক বারোটার দিকে সাদাফ নুর কে নিয়ে ছাদে আসবে।
তাই সবাই সেই প্রিপারেশনের জন্য আগে থেকেই ছাদে গিয়ে বাকি কা*জগুলো করে ফেলছে ।যাতে নুর টের না পায় ।খুব ধীরে সুস্থে সবাই কা*জ করছে এদিকে সাদাফ নূরের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো ।নূরের রুমের দরজাটা হালকা খোলা।
দরজা একটু ফাঁ*ক করে দেখল নূর ঘুমাচ্ছে। নুরকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখার ভীষণ লোভ জাগলো সাদাফের ।তাই রুমে ঢুকে দরজা লক করে নূরের সামনে এসে দাঁড়ালো ।সাদাফ জানে সবাই এই মুহূর্তে ছাদে কা*জ করছে তাই কোন সমস্যা হবে না।
সাদাফ নুরের শিয়রের পাশে এসে হাঁটু ভে*ঙ্গে বসে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ।মনে মনে ভাবল ,”এত তো ছোট নস নুর তুই আমার অনুভূতি বুঝতে পারিস না কেন ?ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তরও তুই নিশ্চয়ই খুঁজে পাসনি এখনো?”
হঠাৎ নুর নড়ে চড়ে উঠলো ।সাথে সাথে সাদাফের হাত ধরে বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো।সাদাফ এর হাত ঠিক নুরের বু*কে স্পর্শ করে আছে।সাদাফের অস্বস্থি হচ্ছে।হাত সরাতে চাইলে নুর আরো জোরে চে*পে রাখলো নিজের স্পর্শ*কাতর স্থানে।সাদাফ ঘামছে। শরীর শিহ‘‘রিত হচ্ছে। হঠাৎ টের পেলো নুর বলছে,”আপনি আমার সাথে আজকে সারাদিন অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন সাদাফ ভাই। নীলা রহমান লেখিকা।আপনার জন্য আমি একটু সেজেছিলাম আপনি আমার দিকে ফিরেও তাকাননি বরং আমাকে আর উল্টাপাল্টা কত কথা বললেন ।ঘুমন্ত অবস্থায় কথাগুলো ধীরে ধীরে বলছে নূর।”
সাদাফ একটু ঝুঁকে এসে কথা গুলো শোনার চেষ্টা করলো।নুর আবার বলতে শুরু করল।
সাদাফ মুচকি হেসে কথাগুলো শুনতে লাগলো কান খা*ড়া করে । নূর আমতা আমতা করে আবার বলল ,”আপনি আমার কে হন সাদাফ ভাই ?আপনি আমার কি হন?আপনি আমার কাছে আসলে আমার এমন লাগে কেনো?”
সাদাফ দুস্টুমি করে জানতে চাইলো,” কেমন লাগে নুর?”
নুর সাদাফের হাত আরো জোড়ে নিজের বুকের সাথে চে*পে ধরে বললো ,” সুরসুরি লাগে।”
বলেই সাদাফের হাত নিয়েই নুর ওপাশ ফিরলো।হাত টান দিলে সময়ের আগে নুরের ঘুম ভেং*গে যাবে তাই সাদাফ বিছানায় উঠে আধশোয়া হয়ে বসে রইলো নুরের পাশে।সাদাফেরও কেমন সুরসুর অনুভূতি হচ্ছে।নুর হাত ছাড়ছে না। নীলা রহমান লেখিকা।এভাবে সাদাফ নুরের সাথে শুয়ে রইলো।নুরের নিঃশ্বাস এর বু*কের উঠানামা সাদাফ স্পস্ট অনুভব করছে।সাদাফের হাত কাঁপতে লাগলো ধীরে ধীরে।
এমন সময় একটি মেয়ের স্পর্শ*কাতর স্থানে হাত থাকা অবস্থায় একটি পুরুষ মানুষের পক্ষে কতটুকু অস্বস্তিকর এবং যন্ত্র*ণাদায়ক তা কেবল টের পাচ্ছে সাদাফ।
চলবে………………
Neela Rahman
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩+২৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৫+২৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৭+৩৮
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৭+২৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৩+১৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১+৩২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৫+৩৬