Golpo romantic golpo নিষিদ্ধ চাহনা

নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ২৪


নিষিদ্ধ_চাহনা

পর্ব_২৪

লেখিকাসারাচৌধুরী

🚫অনুমতি বাদে কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ🚫

ইশানের ফিরে আশা টা সব থেকে বেশি রাগিয়ে দিয়েছে সাদিকে।তবুও নিজের বাবার খুশি দেখে মুখ ফুটে কিছু বলেনি।বলেনি মানে বলেনি একটা কথাও বলেনি।ফারজু অনেক বার সাদির সাথে কথা বলতে চেয়েছে তবে সাদি সব সময় ইগনোর করে গিয়েছে।ইশানকেও শুধুমাত্র ভালো আছে কিনা সেটাই জিজ্ঞাসা করেছে বাকি আর কোনো শব্দ করেনি সাদি।

ঘুম থেকে উঠেই বাড়িতে তাদের আগমন দেখে মেজাজ বিগড়ে গেছিলো সাদির।যে সন্তান বাবাকে মৃত্যুসয্যায় ফেলে রেখে চলে যায় দ্বিতীয় বার পিছু ফিরে তাকায় না।সে সন্তান কে মাফ করতে নেই।
সেজন্য সাদি সকালে খায়নি।নিচেও নামেনি।পিহুর দেওয়া এক কাপ কফি ই খেয়েছে।এর মাঝে ফারজু তার রুমের চারপাশে অনেক বার ঘুরে গিয়েছে।সাদি শেষ পর্যন্ত ঘরের দরজা আটকিয়ে দিয়েছে ভিতর থেকে।


বিশাল দেয়াল ঘড়ির সময় অনুযায়ী এখন দুপুর দুটো বেজে এগারো মিনিট।চৌধুরী বাড়ির বিশাল ডাইনিং টেবিল এ দুপুর এর খাবার খেতে বসেছে সকলে।সাদি কারোর দিকে না তাকিয়ে নিঃশব্দে খেয়ে যাচ্ছে।সকলে খাওয়ার মাঝে দু-একটা কথা বললেও কথা নেই সাদির মুখে।

আতিয়া বেগম যানেন তার ছেলের রাগ সম্পর্কে। তবে তিনি এসব নিয়ে মাথা ঘামালেন না।সাদির প্লেটে ভাত দিয়ে মাংস নামিয়ে দিলেন।পিহু ও খাচ্ছে একাধারে আর মাঝে মাঝে আতিয়া বেগমের সাথে কিছু কিছু কথা বলছে।সবাই খাওয়ায় ব্যাস্ত থাকলেও ফাইজ ব্যাস্ত পিহুকে দেখার তাড়নায়।খাবার চিবানোর বাহানায় চোরাচোখে অগোছালো পিহু কে দেখছে সে।

কালো চুড়িদার।লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। মাথার উড়না পড়ে গেছে।ছোট্ট চুল গুলো সামনে এসে বিরক্ত করছে পিহুর খাওয়ায়।ফাইজ এর খুব ইচ্ছা করছে পিহুর ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিতে।কানের পাশে একটা গোলাপ গুজে দিতে।হুট করেই মেয়েটাকে কেমন ভালো লেগে গেলো ফাইজ এর।দেখতে পিচ্চি পিচ্চি লাগলেও তার মনে জায়গা করে নিয়েছে মেয়েটি।

ফাইজের চোরা চোখে পিহুর দিকে বার বার তাকানো কেও খেয়াল না করলেও সাদির চোখ তা খেয়াল করেছে।বেশ ভালো ভাবেই পরখ করেছে।প্রথমে কিছু মনে না করলেও পরক্ষনে পিহুর দিকে তাকিয়ে সাদি যখন দেখলো পিহুর মাথায় কাপড় নেয়। তখন সাদির রাগ উঠে গেলো মাথায়।উড়না সরে যাওয়ার কারনে সাদির চোখ পিহুর গলার কাছে কালো কুচকুচে তিলটার উপরে পড়লো।এটা ছিলো হয়তো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো।

সাদি মাখা ভাত এ পানির গ্লাস উবুড় করে দিয়ে হাত ধুয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে উঠে দাড়ালো।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে ফাইজ এর চোখ দুটো তুলে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিতে।সাদিকে এমন না খেয়ে খাবারে পানি ঢেলে উঠতে দেখে আতিয়া বেগম এগিয়ে এসে উৎকণ্ঠা হয়ে বললে..

-“এ কি খেলি না কেন পানি ঢেলে দিলি যে..?

-“খাওয়া শেষ আম্মু..!

কথাটি বলেই সাদি চলে যাওয়া ধরলো।আতিয়া বেগম বুজলেন কি হয়েছে হটাৎ। তবে এটা বুজলেন সাদির মেজাজ অনেক গরম।তাই আর বেশি নাড়লেন না।কথায় আছে,,ধোয়া উঠা ছাই ঘাটলে হুট করে বিশাল ভাবে আগুন জ্বলে উঠে।
আতিয়া বেগম সাদির মতিগতি দেখে বুজলো ঠিক তেমন ই কিছু হবে।

সাদি কিছুদুর যেতেই কানে এলো ফাইজ এর গলা।ফাইজ ধীর অথচ শান্ত কন্ঠে পিহুর উদ্দেশ্যে বললো,,
-“পিহু পানির গ্লাস টা একটু এগিয়ে দাও তো.?

পিহু ও খাওয়া থামিয়ে কপাল কুচকে তাকালো ফাইজ এর দিকে। তারপর পানির গ্লাস এগিয়ে দেওয়ার জন্য হাতে নিয়ে ফাইজ এর হাতে দিতেই সাদি উলটো দিকে ঘুরে রাগী কন্ঠে আতিয়া বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,

-“আম্মু যাস্ট পাঁচ মিনিট এর মাঝে ওই স্টুপিড কে আমার রুমে পাঠাবা।আমার যদি না আসে ওর কপালে শনি ডাকবে আজ।

সাদি আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ধপাধপ পা ফেলে উপরে চলে গেলো। মাথায় রক্ত উঠে গেছে তার।সাদির চলে যাওয়ার দিকে বাড়ির সকলে হা করে তাকিয়ে আসে।কেও কিছু না বুজলেও আতিয়া বেগম ও পিহু বুহেছে কোনো না কোনো কারন তো আছেই।সাদির কথা শুনতেই পিহুর খাওয়া থেমে গেছে গলা দিয়ে আর খাবার নামছেনা।কোনো মতে পানি দিয়ে জোর করে গিলে নিলো গালের খাবার টুকু।

পিহুর কলিজা শুকিয়ে গেছে।সে শিওর জানে আজ আবার চড় খাবে।কার মুখ দেখে উঠেছিলো কে জানে।তার উপর সে আবার সাদির কোন পাজা ধানে মই দিলো।পিহু চেয়ার থেকে উঠে দাড়াতেই ইলিয়াস চৌধুরী পিহুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন..
-“পিহু মামনি খাবার থুয়ে কোথায় যাচ্ছো..?

পিহু জবাব দিতে পারলো মাথা নিচু করে রইলো। হটাৎ পিহুর খেয়াল হলো তার মাথার কাপড় পড়ে গেছে চুল গুলো উড়ছে।পিহুকে চুপ থাকতে দেখে ইলিয়াস চৌধুরী আবারো বলে উঠলেন..
-“মামনি খাওয়া শেষ করো তারপর উঠবা।এখানে আমি আছি ওর কোনো কিছু বলার সাহস নেই।

ইলিয়াস চৌধুরীর কথায় ইশান ও সুর মিলিয়ে বললো..
“পিহু তুই কি সাদির চাকর যে সাদি বলেছে আর তুই ভয় পেয়ে উঠে যাচ্ছিস..?

পিহু কিছু বলার সাহস পেলো না।বুক ধুকধুক করছে তার।আতিয়া বেগম ও কিছু বললেন না।আসলেই তো মেয়েটা কি ওর চাকর নাকি যে ওর কথা শুনবে।কথায় কথায় মেয়েটার উপর হাত তুলে।আতিয়া বেগমের ইশারায় পিহু আবার খেতে বসলো তবে তার খাওয়া হলো না।গলা দিয়ে খাবার নামছে না।

সাদির ধমকে ফাইজ ও ভড়কে গেছিলো।তবে পরক্ষনে রাগ ও হলো পিহুকে ওভাবে ধমক দেওয়ার জন্য। এটাও বুজলো পিহু সাদির বোন। এক কথায় কাজিন সিস্টার।একই বাড়িতে থাকে।এটা সাভাবিক বকা সকা।তবে ফাইজ তো এখানে মাত্র এক সপ্তাহ থাকবে তারপর তারা সবাই কানাডা চকে যাবে।সেখানে ফাইজ নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করবে। কিন্তু তার আগে ওই পিহুকে তার চাই।

ফাইজ এর লালসা ভরা চোখ ইশান ও খেয়াল করলো তবে কিছু বললো না।এসবে সে অভ্যাস্ত। নতুন মেয়ে দেখলে ফাইজ পাগল হয়ে যায়।আর সেখানে পিহু তো সুন্দরী বালিকা।ফাইজ কি ঠিক থাকবে।যদিও ফারজু নিজের ভাই বা স্বামির সম্পর্কে সব জানে না। তবে এটুকু বিশ্বাস তার মনে প্রানে তার স্বামি আর ভাই সব দিক দিয়েই বেস্ট।

সবাই এক এক করে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেলো।ফাইজ টেবিল এ বসে এখোনো প্লেটে হাত ঘুরানো পিহুর দিকে হাসলো তারপর ইশান কে ইশারা করলো।ইশান ফাইজ এর ইশারা পেয়ে ফারজু কে বুজিয়ে রুমে পাঠিয়ে নিজে চললো ফাইজ এর রুমের দিকে।রুমে ঢুকেই ফাইজ ভিত্র থেকে দরজার ছিটকানি লাগিয়ে লক করে দিলো দরজা।


আতিয়া বেগম ইলিয়াস চৌধুরী কে ওষুধ খাইয়ে রুমে সুইয়ে রেখে এসে পিহুর পাশের চেয়ারে বসলেন।সকাল থেকে হাসি হাসি থাকা মুখ টা মলিন হয়ে গেছে।দেখেই বোজা যাচ্ছে পিহু ভয়ে শেষ। আতিয়া বেগম পিহুর ঘাড়ে হাত দিতেই পিহু লাফিয়ে উঠলো সহসা আতিয়া বেগমের দিকে তাকালো।

আতিয়া বেগম পিহুকে হাত ধুয়ে উপরে যেতে বললেন।সাদির রুমে আপাতত না যেতে বললেন।পরে যদি ডাকে তখন তিনিও যাবেন সাথে।আতিয়া বেগমের কথায় পিহু কিছুটা ভরশা পেলো।তবে মনের এক কোনে ভয় রয়েই গেলো।পিহু বেসিন থেকে হাত ধুয়ে পা টিপে টিপে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলো।

তারপর ধীরে ধীরে পা ফেলে সাদির রুম পার করে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।দরজা বন্ধ করে পিছু ফিরতেই পিহু ভুত দেখার মতো চমকে দরজার সাথে সেটে গেলো।রক্ত চক্ষু নিয়ে বুকে দুই হাত গুজে তার দিকে আছে সাদি।মাথার চুল গুলো এলো মেলো।মাথার শিরা গুলো ফুলে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে।

পিহু শুকনো ঢোক গিললো। সে জানে তার কপালে দুঃখ আছে আজ।অতি বিপদের সময় চোখের পানিও বেইমানি করে।পুহুর এখন খুব কাদতে ইচ্ছা করছে তবে কাদতে গেকেও চোখ দিয়ে পানি আসছে না তার।মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করলো।

সাদি বুকে হাত গুজে রেখেই সরু চোখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করলো পিহুর।তারপর পিহুর ভীত মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো…

-“ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার দিকে তাকা।কিছু বলবো না।

পিহু চোখ পিট পিট করে খুললো। সে এটা জানে সাদি এক কথার মানুষ। আর তার কথার দাম সে রাখে।পিহু চোখ পিটপিট করে খুলতেই। সাদি বলে উঠলো..

-“আমি জানি আমার উপরে তোর রাগ আছে বা ভয় কাজ করে।তার প্রধান কারন আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তোকে একটা দুটো চড় থাপ্পড় দেই।আর দিবো না।জীবনেও না।কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

পিহু বেশ অবাক হলো জন্মের পর এয়াজ প্রথম হয়তো সাদিকে এতো ঠান্ডা মেজাজে কথা বলতে দেখছে সে।তবে সে বুজলো ঝড়ের আগে পরিবেশ ঠান্ডা থাকে।পিহু মাথা নিচু করেই বললো..
-“কী শর্ত..?

-“অতি সামান্য শর্ত। প্রথমমত একটা সেলফি তুলতে চাই।আর দ্বিতীয়ত তুই এই কাগজে সিগবেচার করবি!

বলেই সাদি একটা কাগজ এগিয়ে দেয়।পিহু সেদিকে তাকায় তবা বুজতে পারে না কিসের কাগজ তাই আবারো জিজ্ঞাসা করে উথে..

-“এটা কিসের কাগজ আর কিসের সিগনেচার..?

-“এটা দলিল। আর এতে লেখা আমি বা তুই কেও কারোর লাইফ এ কোনো সমস্যা করবো না।আর আমি তোকে কখোনো মারবো না।

-“ওহ আচ্ছা..!

-“এখন বল কি করবি মার খাবি না সিগনেচার করবি।

পিহু আর কিছু ভাবলো না।মনে মনে বেশ খুশিই হলো এমন কিছুই চেয়েছে সে।সাদি তার জীবনে মাথা না ঘামাক।তাহলে সে নাবিল এর সাথে ভালো থাকবে।তবে সেকফি তোলা না নিয়ে কেমন একটা লাগলো।তবুও সাদির হাতের ভয়ংকর মার খাওয়ার হাত থেকে বাচতে প্রথমে দুজনে একয়া সেলফি তুললো।

সেলফি তোলা শেষে সাদি ক্যামেরায় ভিডিও চালু করে দিলো।পিহু কিছু না ভেবেই কাগজে স্বাক্ষঅর করে দিলো। সিগনেচার করা শেষ হতেই সাদি ঠোঁটে সয়তানি হেসে নিজেও স্বাক্ষর করলো।তারপর কাগজ আর মোবাইল পকেটে পুরে দাড়াতেই পিহু কপাল কুচকে বলে উঠলো….

চলবে…..

-(আচ্ছা ওটা কিসের কাগজ ছিলো।সাদি আজ রাগ না করে হটাৎ ভালো কেন হয়ে গেলো।আর ইশান এর উদ্দেশ্য কি।বলে জাও দেখি কার টা সঠিক হয়।আজকের পর্ব বেশ বড় দিয়েছিমাশা করি ভালো লাগবে কেও বাজে মন্তব্য না করে উৎসাহ মুলক কমেন্ট করুন প্রতিদিন গল্প দিবো)-

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply