নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
পর্ব_১৬
গজনবী মহলের প্রধান শয়নকক্ষ তখন এক নিবিড়, সুগন্ধময় নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন। কক্ষের অভ্যন্তরে জ্বলছে মৃদু প্রদীপ।
জমিদার সিকান্দার গজনবী তার বিশাল পালঙ্কে অর্ধশায়িত ভঙ্গিতে বসে আছেন। তার এক হাতে রয়েছে বিদেশী মদের রূপালী পাত্র, যা তিনি বিরতি দিয়ে পান করছেন। তার দুচোখে প্রতিফলন হচ্ছে সারাদিনের ক্লান্তি।
তার ঠিক সামনে কক্ষের মেঝেতে পাতা জমকালো কার্পেটের উপর, একান্তে নৃত্য পরিবেশন করছে বাঈজী মহলের নতুন উস্তাদনী, সিমরান।
সিমরানের আজকের সজ্জা ছিল অন্য দিনের চেয়েও মোহময়। তার প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল আহ্লাদ, লাস্য এবং গভীর নৈপুণ্য। যা তার মাঝে কেবলমাত্র জমিদারকে ব্যক্তিগতভাবে তুষ্ট করার জন্যই সংরক্ষিত। সিমরানের ঘুঙুরের ধ্বনি গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করছিল। সেই ধ্বনি কখনও ছিল আবেদনময়, আবার কখনও ছিল তীক্ষ্ণ এবং দ্রুতগামী।
সিকান্দার গজনবী মদিরার পাত্রে চুমুক দিতে দিতে সিমরানের সর্পিল অঙ্গভঙ্গি মন ভরে দেখছিলেন। তার মুখমণ্ডলে ছিল স্পষ্ট বিলাসের ছাপ, প্রতীকী হাসি।
নৃত্য শেষে সিমরান যখন জমিদারের পাশে এসে বসলেন, তখন তার সুগন্ধি শরীর থেকে নির্গত উষ্ণতা যেন কক্ষের বাতাসকে আরও মদির করে তুলল। জমিদার সিকান্দার গজনবীর চোখজোড়াও স্থির ছিল সিমরানের লাস্যময়ী ভঙ্গিমায়।
তিনি ভারী স্বরে বললেন,
- সিমরান, আপনার নৃত্য আমার এই চঞ্চল মনের একঘেয়েমি দূর করে। শুধুমাত্র আপনার নূপুরের ধ্বনি নয়, বরং আপনার ওই হরিণী চোখের আহ্বান আমায় উন্মাদ করে তোলে।
সিমরান আহ্লাদি ভঙ্গিমায় সামান্য ঝুঁকে এসে বলল,
- হুজুর, আমার সকল শিল্প এখন তো কেবল আপনাকেই তুষ্ট করার জন্য। আমার জীবনের সার্থকতা তো আপনার দৃষ্টির মূল্যায়নেই নিহিত!
সিমরান এবার পালঙ্কের পাশে অবস্থিত কারুকার্যখচিত রূপালী টেবিলের ওপর রাখা ফলপাত্র হতে একটি তাজা আঙুর তুলে নিল। আঙুরটি সে নিজের অধরে রাখল, কিন্তু চিবালো না। তার দৃষ্টি তখন জমিদারের চোখে স্থির। সিমরানের এই নীরব ভঙ্গিমা ছিল এক খোলা আমন্ত্রণ।
সিমরান চাপা কণ্ঠে লাস্যময় স্বরে বলল,
- আমার শিল্পে যে মিষ্টতা আছে, তা কি কেবল এই আঙুরের মতোই ক্ষণস্থায়ী, হুজুর?
এই কথা বলতে বলতেই সিমরান সেই রসময় আঙুরটি অত্যন্ত ধীর এবং ইঙ্গিতপূর্ণ ভঙ্গিমায় সিকান্দার গজনবীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে ধরল।
তার উষ্ণ নিঃশ্বাস তখন জমিদারের মুখের ওপর পড়ছিল।
সিকান্দার গজনবী সেই খোলা আমন্ত্রণে মগ্ন হয়ে গেলেন। তিনি সরাসরি নিজের অধর এগিয়ে নিয়ে এলেন। সিমরানের ওষ্ঠজোড়ায় আঁটকে থাকা সেই ফলটি তিনি আলতো করে ঠোঁট দিয়ে গ্রহণ করলেন।
সেই মুহূর্তে তাদের দুজনের অধরে সামান্য ছোঁয়া লাগল। তাদের মাঝে তৈরি হলো এক গভীর ব্যক্তিগত সংযোগ। সেই সংযোগ ছিল কামনা ও অধিকারবোধে মেশানো। সিমরানের ঠোঁটের কোণা বেয়ে সামান্য আঙুরের রস গড়িয়ে পড়ল।
সিকান্দার গজনবী সেই রসের স্বাদ নিতে চাইলেন। তিনি সিমরানের সেই রসের বিন্দুটি নিজের ঠোঁট দিয়ে আলতো করে শুষে নিলেন।
তাদের মুখ তখন একে অপরের অত্যন্ত কাছে।
সিকান্দার গজনবী ফিসফিস করে বললেন,
- আপনার লাস্য বড় বিপজ্জনক, সিমরান। এই লাস্যের স্বাদ কোনো মদিরাতেও নেই। এটি মৃত্যুর চেয়েও মিষ্টি। এই স্বাদের জন্য একজন জমিদার তার সিংহাসনও বাজি ধরতে পারে।
সিমরান হাসল। সে অতি সন্তর্পণে সিকান্দার গজনবীর ঠোঁটের কাছে নিজের অধরের স্পর্শ বজায় রেখে বলল,
- মৃত্যু কি তবে এতই আকর্ষণীয়, হুজুর? আপনি তো ক্ষমতা ও অমরত্ব খোঁজেন। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী লাস্যই আপনাকে আমার কাছে বেঁধে রাখবে। ঠিক সেই নিষিদ্ধ মদিরার মতো। আমাকে ভুলে যাওয়া আপনার জন্য অসাধ্য হবে, হুজুর।
সিকান্দার গজনবী মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিমরানের দিকে তাকালেন। তিনি তার ঠোঁটজোড়া সিমরানের অধরের ওপর জোরে চাপলেন। উষ্ণ কণ্ঠে বললেন,
- তবে তাই হোক। যদি তা ক্ষণস্থায়ীও হয়, তবু এই মুহূর্তে আমি কেবল আপনাতেই আসক্ত, আপনার লাস্যই হোক আমার একমাত্র রাজত্ব। আমার অধিকার এখন শুধুমাত্র আপনার ওপর।
সিকান্দার গজনবী এবার সিমরানকে শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিলেন। তাদের মৃদু কথোপকথন একসময় থেমে গেল এবং শারীরিক সান্নিধ্যের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কক্ষের গুমোট বাতাসকে গ্রাস করল।
কিছুক্ষণ পর, যখন কক্ষের পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলো, সিকান্দার গজনবী পালঙ্ক ছেড়ে উঠে বসলেন। তিনি তার হুক্কায় অগ্নিসংযোগ করলেন। তার চোখে ফিরে এসেছে রাজনৈতিক চিন্তার কালো ছায়া।
তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সিমরানের দিকে তাকালেন। এরপর ধীর লয়ে কথা বলতে শুরু করলেন,
- সিমরান। আজ আপনাকে আমি একটি বিশেষ প্রয়োজনে ডেকেছি। বাঈজী মহলের অতি ক্ষুদ্র একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
সিমরান ততক্ষণে নিজের পোশাক পরিপাটি করে নম্র ভঙ্গিমায় বসেছে। সে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করল,
- আদেশ করুন, হুজুর। আমি আপনার আজ্ঞা পালনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত।
জমিদার হুক্কায় একটি দীর্ঘ টান দিলেন। ধোঁয়ার আড়ালে তার মুখমণ্ডল আরও কঠোর দেখাল।
- সমস্যা হল আপনার মহলের বাঈজী হেমাঙ্গিনী।
সিমরান বিস্মিত হল। শুধালো,
- কি করেছে সে? তার নৃত্যশৈলী কি আপনার পছন্দ নয়, হুজুর?
সিকান্দার মাথা ঝাঁকালেন। বললেন,
- তার নৃত্যশৈলী নয়, সমস্যা অন্যত্র।
এবার তার কণ্ঠস্বরে গভীর বিরক্তি ও ক্ষমতার শঙ্কা স্পষ্ট হলো।
- আমার বড় পুত্র, তাইমুর গজনবী, ঐ সামান্য বাঈজীর মোহে আচ্ছন্ন হয়েছে। সে এখন প্রথা লঙ্ঘন করতে চায়। হেমাঙ্গিনীকে বেগমের মর্যাদা দিতে চাইছে! আপনি তো জ্ঞানী, চতুর। এর ফল কী হতে পারে তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়? তাইমুরের অর্বাচীন খেয়াল আমার বহু বছরের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেবে। আমাদের ঐতিহ্যকে অপমান করবে।
সিকান্দার এবার সরাসরি সিমরানের দিকে তাকালেন। চোখে একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে বললেন,
- তাকে যদি মাহফিলে প্রয়োজন না পড়ে, তবে আমি চাই আপনি কৌশলে হেমাঙ্গিনীকে বাঈজী মহল থেকে বের করে দিন। তাকে এমনভাবে অপদস্থ করুন যেন সে লজ্জায় নিজেই আমার রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এই বিষাক্ত কাঁটা আমার পুত্রের দৃষ্টির আড়াল হওয়া আবশ্যক। আমি ইতোমধ্যে তার বিবাহর পরিকল্পনা শুরু করেছি।
সিমরানের মুখমণ্ডল শান্ত রইল। ঠোঁটের কোণে এক ঝলক ঈর্ষার ও জিদের হাসির দেখা মিলল। জমিদারের এই আদেশ তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার জিদকে আজ বৈধতা দিল। বিষয়টি আশ্বস্ত করল তাকে।
সিমরান জমিদারের হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে দৃঢ়তায় সাথে বলল,
- হুজুর, আপনি এত চিন্তিত হবেন না। আপনি জানেন, বাঈজী মহলে আমিই শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। হেমাঙ্গিনীর মতো একজন সাধারণ, অনভিজ্ঞ বাঈজীর গজনবী মাহফিলে এক মুহূর্তের জন্যও প্রয়োজন নেই, তা আমি প্রমাণ করে দেব।
সিমরানের চোখে তখন ক্রোধ খেলা করছে। সে আত্মবিশ্বাসের সহিত আরোও বলল,
- আসন্ন মাহফিলেই আমি আপনার মনের আশা পূর্ণ করব, হুজুর। সকল আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে আমি হেমাঙ্গিনীর শিল্পের দীনতা এমনভাবে তুলে ধরব যে সে মুখ দেখানোর সাহস পাবে না। তার সমস্ত ঔদ্ধত্য ও চটক চূর্ণ হবে। আমার নৃত্যই প্রমাণ করবে, বাঈজী মহলের আসল সম্রাজ্ঞী কে! আপনার মান রক্ষা হবেই।
জমিদার সিকান্দার গজনবী সিমরানের এই অবিচল আত্মবিশ্বাস এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে আশ্বস্ত হলেন। তিনি তীব্র আনন্দ সহকারে হাসলেন।
- সিমরান! আমি আপনার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি। আপনার দক্ষতা এবং এই মহলের রাজনীতি উভয়ই আমার জানা আছে। আমি জানি হেমাঙ্গিনীর মতো অতি সামান্য একজন বাঈজী আপনার প্রতিভার সামনে টিকতে পারবে না।
সিকান্দার গজনবী পালঙ্কের পাশে রাখা একটি ক্ষুদ্র কাঠের সিন্দুক খুললেন। সেখান থেকে বের করলেন একটি মহামূল্যবান রত্নখচিত মালা। হীরক ও পান্না দিয়ে নির্মিত।
জমিদার মালাটি নিজ হাতে সিমরানের গ্রীবায় পরিয়ে দিলেন। মালাটি যেন সিমরানের সৌন্দর্য এবং গর্বকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলল।
সিকান্দার গজনবী বললেন,
- এই উপহার আপনার বিশ্বস্ততার প্রথম প্রতিদান। যখন আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন, তখন আপনার জন্য আরও মূল্যবান পুরস্কার অপেক্ষা করবে।
সিমরানের চোখ চিকচিক করে উঠল। সে মালাটি ছুঁয়ে দেখল। এরপর নত হয়ে জমিদারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করল,
- হুজুর, আপনার বিশ্বাস আমি প্রাণ বিসর্জন দিয়েও রক্ষা করব।
প্রত্যুত্তরে সিকান্দার সিমরানের গলায় আলতোকরে চুমু খেয়ে তাকে কক্ষ ত্যাগের হুকুম করলেন।
★ ★ ★ ★ ★
জমিদার সিকান্দার গজনবীর শয়নকক্ষের উষ্ণতা থেকে বেরিয়ে সিমরান বাঈজী মহলে ফিরে এল। মহলের অন্যান্য কক্ষগুলো তখন নীরব। দূর থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। সহসা এক অপরিচিত ছন্দের শব্দ সিমরানের পদশব্দকে থামিয়ে দিল।
ঘুঙুরের ধ্বনি। কিন্তু সে ধ্বনিতে তো পুরনো ঠুমরির দুর্বলতা নেই! সিমরান বুঝতে পারল এই শব্দ আসছে হেমাঙ্গিনীর কক্ষ হতে।
তার ঠোঁটের কোণে এক ক্রূর হাসি ফুটে উঠল। সে ধীরে ধীরে হেমাঙ্গিনীর দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজায় আঘাত করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না সে। সিমরান সামান্য ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। সে কক্ষে প্রবেশ করল।
হেমাঙ্গিনী তখন মেঝেতে বসে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায়, ঘামে ভিজে, তীব্র বেগে নতুন নৃত্যভঙ্গিমা অনুশীলনে মগ্ন। সিমরানের অপ্রত্যাশিত আগমনে সে দ্রুত চোখ খুলল এবং তৎক্ষণাৎ নিজের আঁচল টেনে নিল। বিস্মিত হেমাঙ্গিনী তীব্র কণ্ঠে প্রতিবাদ করল,
- আপনি অনুমতি ব্যতিত আমার কক্ষে কেন প্রবেশ করলেন? এমন অশিষ্ট আচরণ মোটেও কাম্য নয় উস্তাদনী।
সিমরান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। তার রত্নখচিত মালার দ্যুতিতে কক্ষের মৃদু লন্ঠনের আলো যেন আরও ম্লান হল। সিমরান অত্যন্ত কর্তৃত্বপূর্ণ স্বরে বলল,
- আপনি কি ভুলে গেছেন, আমি এই বাঈজী মহলের প্রধান? এই প্রশ্ন করবার দুঃসাহস, এই দম্ভ আপনার সাজে না, বাঈজী হেমাঙ্গিনী।
সিমরান এবার হেমাঙ্গিনীর ঘামসিক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হাসল। শুধাল,
- এই যে নিরন্তর পরিশ্রম তা কি কেবলমাত্র আগামী মাহফিলের জন্যই? নাকি আপনি আমাকে পরাজিত করার আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখছেন?
হেমাঙ্গিনী চুপ করে রইল।
সিমরান এবার ঘরময় পায়চারী করতে করতে বলল,
- থাক এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না। তবে আরেকটি প্রশ্ন আমি না করে থাকতে পারছি না। আপনি কি সত্যিই মনে করেন, আপনি সামান্য বাঈজী হয়েও জমিদারপুত্র তাইমুর গজনবীকে নিজের করতে পারবেন?
হেমাঙ্গিনীর ভ্রুঁ কুঞ্চিত হল। সে জানতে চাইল,
- এবিষয়ে আপনি কিভাবে অবগত?
- তা আপনার বোধগম্য হবে না। তবে বলে রাখছি, নবাব তাইমুর গজনবী তার স্ব-বংশমর্যাদার ভিত্তিতে বিবাহ করবেন। রংমহলের ক্ষণস্থায়ী প্রেমের ভিত্তিতে নয়।
হেমাঙ্গিনীকে এবারো বিচলিত দেখালো না। তাইসিমরান তখন তার চূড়ান্ত আঘাত হানল,
- জানেন তো? জমিদার সিকান্দার গজনবী ইতিমধ্যেই তার পুত্রের অন্যত্র বিবাহ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন?
শেষ কথাটি হেমাঙ্গিনীর কোমল বুকে বিষাক্ত তীরের ন্যায় আঘাত হানল। তবে সিমরানের ঔদ্ধত্য তার ভেতরের প্রেম ও সংকল্পকে পুনরায় জাগ্রতও করল।
হেমাঙ্গিনী এবার কঠোর গলায় বলল,
- আপনার কথা আমি শুনলাম, উস্তাদনী। ক্ষণিককাল আগ অব্দিও আমার মন দ্বিধায় ভুগছিল। নবাব তাইমুর গজনবীর মতো মহৎ হৃদয়ের একজনকে এই নিঃস্ব জীবন দিয়ে কী দেব, এই ভাবনায় আমি আচ্ছন্ন ছিলাম।
হেমাঙ্গিনী একটু থামল। মেঝে থেকে উঠে দাঁড়াল। তার শরীরী ভঙ্গিতে প্রাধান্য পেল অহংকার। সে সিমরানের চোখে চোখ রেখে বলল,
- কিন্তু এখন আর নয়। আপনার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বাক্যগুলোই আমার ভেতরের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করল আজ। যে মানুষটি নিজের বংশমর্যাদা ভুলে আমার কাছে মাথা নত করে আমাকে তার বেগম রূপে দেখতে চেয়েছেন, সেই নিষ্কলুষ প্রেমকে আমি ফিরিয়ে দেব না।
হেমাঙ্গিনীর চোখে তখন গভীর প্রেম। সে আবেগমাখা কণ্ঠে বলল,
- আমি এই জীবনের লাঞ্ছনা মেনে নিয়েছি, কিন্তু হুজুর তাইমুরের হৃদয়ের সত্যকে অপমানিত হতে দেব না। তার নিঃশর্ত প্রেম আমার কাছে এক রাজকীয় অঙ্গীকার।
এবার সে সিমরানের মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। দৃঢ়তা মিশিয়ে বলল,
- আমি আপনাকে পরাজিত করব, উস্তাদনী।আপনার শ্রেষ্ঠত্বের দম্ভ চূর্ণ করব। বিলকিস বানুর উস্তাদনীর পদ আমি পুনরুদ্ধার করব এবং আমি ভাবী জমিদার তাইমুর গজনবীর বেগম হব!
মনে রাখবেন, ভালোবাসা যখন সত্য হয়, তখন প্রথা বা সিংহাসন কোনোটাই তাকে বেঁধে রাখতে পারে না।আপনার মতো ঈর্ষাকাতর এবং ক্ষমতার দাসীকে এই রাজ্য থেকে চিরতরে বহিস্কার করব আমি।
হেমাঙ্গিনীর এই কঠিন প্রতিজ্ঞা শুনে সিমরান এক মুহূর্তের জন্য বিস্মিত হল। পরক্ষণেই তার চোখে দেখা মিলল ক্রূর উপহাসের। সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। সেই হাসি ছিল তিক্ততা মেশানো এবং গভীর তাচ্ছিল্যপূর্ণ।
সিমরান হেমাঙ্গিনীকে উপেক্ষা করে কক্ষের দরজার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
- বিলাসিতা! আপনার মতো অনভিজ্ঞ বাইজী কেবল স্বপ্ন দেখতে পারে। ভালোবাসা দিয়ে জমিদারি চলে না। আপনার স্বপ্ন আমার খুরের নিচে চূর্ণ হবে। অপেক্ষা করুন। আগামী মাহফিলে আপনার পতন হবে।
সিমরান আর এক মুহূর্তও না থেমে, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভঙ্গিমায় কক্ষ হতে বেরিয়ে গেল।
[ ৩৫০০ লাইক এবং ৬০০ কমেন্ট সম্পন্ন করে দিবেন। টার্গেট পূরণ হলে আগামীকাল ৫:৩০ এ পরবর্তী পর্ব আসবে। ]
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
লেখনীতে, Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
TAGS: আতিয়া আদিবা, নিষিদ্ধ রংমহল
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১০
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৬
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৯
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৫
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৮
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ২
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৩
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১