৪বছরেরচুক্তির_মা
পর্ব_১৩
লেখিকাসারাচৌধুরী
🚫কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ🚫
মিসেস মনিরা খাটের নিচে তাকিয়ে আৎকে উঠলো..শান্তার সবচেয়ে পছন্দের শাড়ি টুকরো টুকরো করে ফেলছে..যে শাড়িটা এত দিন আলমারি থেকে বের পর্যন্ত করেনি.. কিন্তু এ নিয়ে আপাতত ভাবলেন না তিনি পরে শান্তা কে জিজ্ঞাসা করলেই সত্যি বলে দিবে..শান্তা ছোট থেকে মনিরা তালুকদার এর কাছে খুব বন্ধুত্বপুর্ন.. মা মেয়ের সম্পর্ক খুব কম এমন দেখা যাই…মিসেস মনিরা শান্তা কে নিচে আসতে বলে চলে গেলেন চুপচাপ..!
ডাইনিং টেবিল এ বসে আছে.. শুভ্র..সারা বাড়ির সকলের প্রায় খাওয়া শেষ.. পুরুষেরা খেয়ে অফিস এ চলে গেছে শুভ্ররা আসার আগেই..দুপুরে সবাই চলে আসবে কারন আজ বৃহস্পতিবার..হাফ অফিস..শ্রাবন তো অনেক খুশি শুভ্র বাড়ি আসাই.. শুভ্র আর শ্রাবন এর গলাই গলাই ভাব..বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতো কিছুটা তারা…!
সারা চুপচাপ অল্প করে খেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে আসতেই মিসেস আনিতা শুভ্র মা সারার হাত ধরে তার নিজের রুমে গেলো..সারা শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্র চোখ দিয়ে ইশারা কতে যেতে বললো..সারা ও বিনা কথায় শাশুড়ীর সাথে চলে গেল শাশুড়ীর রুমে..!
সারা খাটের এক কোনে বসে আছে অরু কে কোলের মাঝে নিয়ে পা গুটিয়ে বসেছে.. চোখ তার শাশুড়ীর হাতের দিকে..মিসেস আনিতা এক জোড়া চিকন সর্নের চুরি সারার হাতে পরিয়ে দিলো..সারা শাশুড়ীর দিকে তাকাতেই.. মিসেস আনিতা বললো আমি শুভ্রর কাছে শুনেছি তুমি আমাদের অরুর জন্য চুরি পরো না..তাই বলছি এই চুরি টা পরো এতে অরুর কোনো সমস্যা হবে..আর চুরি আর নাক ফুল স্বামির মঙ্গলের জন্য পরতে হয়..চুরি খুলবা না এতে শুভ্রর অমঙ্গল হবে..সারা চুপ চাপ মিসেস আনিতার কথা গুকো শুনে যাচ্ছে..!
মিসেস আনিতার সারাকে খুব পছন্দ হয়েছে..মেয়েটা ভিষন সরল..কোনো উত্তর করে না..সে আজ পর্যন্ত মানুষ চিনতে ভুল করে নাই..মেয়েটা শুভ্রর জন্য একেবারে পার্ফেক্ট।
মিসেস আনিতা অরুকে নিজের কোলে নিয়ে ফাতিহা আর আনিসা কে ডেকে পাঠালো..তারা দুজন আসতেই তিনি জোর গলায় বলে উঠলো:-
-ফাতিহা মা আর আনিশা মা.. এ হলো সারা তোমাদের ছোট বোন.. কখোনো ভাবি নয় ছোট বোন করবে..তখনই অন্তু পিছন থেকে এসে বললো তাহলে বড় আম্মু আমার ও কি ছোট বোন হবে..মিসেস আনিতা সল্প হেসে বললেন ও তোমার আপু হয়..যাও এখন সারাকে নিয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাও…মিসেস আনিতা ইচ্ছা করে শান্তা কে বলেনি কারন সারার বয়স অল্প সেহেতু ছোট দের সাথে অল্পতেই মিশতে পারবে..তার বুদ্ধি কাজে লাগলো.. ফাতিহা বলে উঠলো তাহলে সারা আসো যাই..সারা শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে অনুমতি নিয়ে ওদের সাথে চলে গেলো..!
শুভ্রদের বাড়ির সামনে বিশাল এক ফুলের বাগান আর এক পাশে ছোট্ট একটা পুল..বাড়ির পিছন দিকে ফলের গাছ..সারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সাদ থেকে.. সাদ ফুলের গাছে ভরপুর সবগুলোই ফাতিহা আর আনিসা মিলে লাগিয়েছে..তিনতলাই একটা চিলেকোঠা রুম আর বাকি টা পুরো খোলা সাদ..দুতলায় চার টা রুম..সিড়ি দিয়ে উঠতেই প্রথম রুমটা শুভ্রর তার ডান পাশের টা শ্রাবন এর..আর বআম পাশের টা ফাতিহা আর আনিসার আর শ্রাবন এর পাশের টা শান্তার..আর বাড়ির বড় রা সকলে নিচের তলাই থাকে..!নিচ তলাই বিশাল ডাইনিং.. এক পাশে রান্নাঘর আর তার বিপরীত পাশে ড্রয়িং রুম..সিড়ি দিয়ে সোজা মেইন দরজা..!
শুভ্র রুমে এসে পুরো রুম টা পর্দা টেনে অন্ধকার করে দিলো.. মিসেস আনিতাকে বলে এসেছে কেও জেনো বিরক্ত না করে তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে সে ঘুমাবে…শুভ্র বিছানায় সুয়ে পড়লো..সফেদ নরম বিছানায় তলিয়ে গেলো শুভ্রর শক্তপোক্ত পুরুষালী শরীর..।শুভ্র কপালের উপর এক হাত রেখে ভাবতে লাগলো সারার কথা.. সে কি মেয়েটার সাথে চুক্তির কথা বাড়িতে বলে ভুল করেছে..আচ্ছা সে কি এই মেয়ে কখোনো ভালোবাসবে..সারার সাথে কি তার মনে মন মিলবে..শুভ্রর মুখ থেকে এক্টাই শব্দ বেরোলো.. ❝নাহ❞ শুভ্র জানে না কোন প্রশ্নের উত্তর এটা তবে সে ভেবে নিছে সবগুলোর উত্তর ই তারপর আর কথা না ভেবে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে…!
ফাতিহা আর আনিসার সাথে সারা গভীর এক ভাব জমে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই.. আর অন্তু সে তো সারাকে আপু আপু করে পাগল করে দিছে আগে আগে সব জিনিস দেখাচ্ছে..সারা ও খুব খুশি অন্তুর মতো একটা ছোট ভাই পেয়ে যে আপু বলে ডাকছে..মামাবাড়ির সবাই তো তাকে নাম ধরে ডাকতো আর মামি তো বেশির ভাগ পুড়ামুখি বলতো..ক্ষনিকেই সারা মন খারাপ হয়ে গেলো..তাও প্রকাশ পেলো না বাইরে..!
ফাতিহা আনিশা মিলে সারাকে বাড়ির সামনে বাগানে নিয়ে গেলো.. সব কিছু ঘুরে দেখতে লাগলো সারা..ফাতিহা হটাৎ বলে উঠলো সারা জানো..এইজে ফল গাছ গুলো দেখছো সব গুলোই শ্রাবন ভাই এর হাতের..নিজেই পরিচর্যা করে..সারা জিজ্ঞাসা করে উঠলো শ্রাবন কে..তখন অন্তু বলে উঠলো আমার আর একটা ভাইয়া এখন অফিসে আছে..বাসাই আসবে একটু পরেই তোমরা এসেছো বলে আজ বাসাই চলে আসবে ছোট ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড.. অন্তু শুভ্র কে ছোট ভাইয়া বলে আর শ্রকবন কে বড় ভাইয়া…সারা মৃদু হেসে বললো আচ্চা..!
ফাতিহা আর আনিশা মিলে সুইমিংপুলে অনেক্ষন পা ভিজিয়ে রাখলো সারাকে নিয়ে স্কুল কলেজ বন্ধুবান্ধব সব কিছু নিয়েই গল্প করলো.. সারা চুপচাপ শুনছে..আগে কখোনো এমন ভাবে কেও গল্প করেনি..এত অল্প সময়ে কেও আপন করে নেই নি তাকে..সারা অনেক খুশি মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো..!
ভালো সময় গুলো খুব তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হয়ে যায় এটা সারা ধারনা..দেখতে আজান দিয়ে দিয়েছে..আকাশে মেঘ থাকার কারনে রোদের তেমন দেখা নেই..তখনই মিসেস সুমনা অন্তুর মা ডাক দিলো সবাইকে সবাই এক এক করে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য হাটা দিলো..বাড়ির দরজার সামনে আসতেই পায়ে কাটা বিধে পা পিছলে গেলো সারার..ফাতিহা আনিশা অন্তু সবাই আগে আর সে পিছে..সারা ভড়কে চিল্লানি দিলো মৃদু..!
সারার ধারনা এই জায়গায় পড়ে তার মাজার হাড় ভেঙে যাবে..নইতো মরে গিয়ে ভুত হয়ে যেতেও পারে..অনেক্ষন কোনো ব্যাথা অনুভব করতে না পেরে চোখ বন্ধ রেখেই সারা ভেবে নেই সে হয়তো মরে গেছে তাই পড়ে গিয়েও তার ব্যাথা লাগছে না..সারা ভাবনার মাঝেই অন্তুরা সবাই দৌড়ে আসলো আরে সারা আপু সাবধানে আসবে না ওইখানে আমার হাত থেকে মাত্র পানি পড়ছে তুমি তাতেই পড়ে যাচ্ছিলা..?
অন্তুর কথা শুনে সারা চোখ খুলতেই দেখতে পেলো কারোর হাতের বাধনে আবদ্ধ সে..মুখ উচু করে তাকাতেই দেখতে পেলো গম্ভীর মুখের এক পুরুষকে..এ জেনো শুভ্রর উলটো..শুভ্রর মুখে হাসি আটকে থাকে প্রায়শই..আর এ তো গম্ভীর..সারার ভাবনার মাঝে ফাতিহা আর আনিশা এসে সারাকে ধরলো শ্রাবন ভাইয়ের কাছ থেকে.. তারপর ফাতিহা বলেআরে ভাইয়া কখন এলে..শ্রাবন মুখ গম্ভীর রেখেই বলে উঠলো মাত্রই এসেছি এই মেয়েটা কে..?
ফাতিহা শান্ত স্বরে বললো ও সারা শুভ্র ভাই নিয়ে এসেছে..আর কিছু না বলে শ্রাবন এর কাছ থেকে সারাকে নিয়ে বললো সারা লাগে নিতো..চলো ভিতরে চলো..সারা এক পা বাড়াতেই পায়ে ফুটে থাকা কাটা টা পুরো পায়ের ভিতর ঢুকে গেলো সারা ছিটকে পড়ে গেলো ব্যাথায় জোরে কেদে উঠলো..সবাই সারার পায়ের দিকে লক্ষ করতেই সবাই আৎকে উঠলো পা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তরল রক্ত.. রক্ত দেখেই শ্রাবন এক অদ্ভুত কাজ করে ফেললো..সে সারার দিকে এগিয়ে গিয়েই…..
চলবে……
-(তোমাদের এতো রেসপন্স পেয়ে আমার লেখার অনেক আগ্রহ পাচ্ছি..গল্পে সামনে ভরপুর টুইস্ট পাবে..আজকের পর্ব কেমন লেগেছে বলে জাও আশা করি ভালো লাগবে)-
Share On:
TAGS: চার বছরের চুক্তির মা, সারা চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৪
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১২
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৮
-
চার বছরের চুক্তির মা গল্পের লিংক
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৯
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৫
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১১
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৬