নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
পর্ব_১৯
মঞ্চের ঠিক উপরে মখমলের আসনে উপবিষ্ট জমিদার সিকান্দার গজনবী তখন এক পাথরের মূর্তির মতো স্থির। তার হাতের পানপাত্রটি ঠিক কখন হেলে পড়েছে আর সেখান থেকে মূল্যবান মদিরা কার্পেটে চুইয়ে পড়ছে, সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। তার চোখের সামনে কেবল ভাসছে গতরাতের সেই দৃশ্য _
সিমরান তার শয়নকক্ষে বসে অত্যন্ত দম্ভের সাথে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আজ সে ভরা মাহফিলের মঞ্চে হেমাঙ্গিনীর শিল্পকে ‘একঘেয়ে’ প্রমাণ করবে। সে বলেছিল, হেমাঙ্গিনীকে জনসমক্ষে এমনভাবে অপদস্থ করা হবে যে, লজ্জায় সে নিজেই এই রাজ্য ত্যাগের সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।
কিন্তু আজ রাতের এই দৃশ্যপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, বিপরীত। সিকান্দার গজনবী আজ কেবল এক বাঈজীর নাচ দেখেননি, তিনি চাক্ষুষ করেছেন এক অবিশ্বাস্য গণজাগরণ। আমন্ত্রিত সকল অতিথিরা যখন একে একে দাঁড়িয়ে হেমাঙ্গিনীকে কুর্নিশ জানাচ্ছিলেন, তখন সিকান্দার বুঝতে পারলেন, আজ সিমরানের অতি নিখুঁত শিল্পও হেমাঙ্গিনীর নিকট হেরে গেছে।
অতিথিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া এই উন্মাদনার পর হেমাঙ্গিনীকে ‘অযোগ্য’ বলে বিতাড়িত করার কোনো যুক্তিই আর ধোপে টিকবে না। বরং তাকে বহিষ্কার করলে গজনবী বংশের বিচারের ওপর কলঙ্ক লেপন করা হবে।
সবচেয়ে বড় বিপদের সংকেত তিনি পেলেন তার নিজের বড়পুত্রের নিকট হতে। সিকান্দার আড়চোখে দেখলেন,
নবাব তাইমুর গজনবী তার রাজকীয় গাম্ভীর্য বিসর্জন দিয়ে আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তার দুহাতের করতালি যেন থামতেই চাইছে না। তাইমুরের চোখেমুখে আজ কোনো লুকোছাপা নেই। বরং সেখানে বিরাজমান হেমাঙ্গিনীর প্রতি এক প্রগাঢ় এবং পবিত্র ভালোবাসা।
সিকান্দারের শঙ্কা আজ পূর্ণতায় রূপ নিল।
তাইমুর তো কেবল মোহাচ্ছন্ন নয়! বরং সে আজ সকলের সামনে এই বাঈজীর প্রেমে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। জমিদারের প্রশস্ত কপালে ঘামের রেখা ফুটে উঠল। ভরা মাহফিলে এই দৃশ্য তার বহু বছরের সুকৌশলী ক্ষমতার ভিতকেও যেন এক নিমেষে টলিয়ে দিল।
হেমাঙ্গিনী যখন মঞ্চ থেকে নেমে ধীর পায়ে পেছনের অলিন্দের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল একজন বিজয়ীর মতো। তার সেই ঘর্মাক্ত মুখাবয়বে কোনো ক্লান্তির রেশ ছিল না, বরং ছিল এক স্বর্গীয় প্রশান্তি।
অলিন্দে প্রবেশ করতেই তার চোখাচোখি হল সিমরানের সাথে। সিমরানের মুখমণ্ডল তখন রাগে আর অপমানে নীল হয়ে গেছে। তার হাতের মুঠোয় থাকা রেশমী রুমালটিও প্রায় ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম!
হেমাঙ্গিনী এক মুহূর্তের জন্য থামল। সে সিমরানের সেই বিষাক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে তার ওষ্ঠের কোণে এক শীতল বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলল। কোনো বাক্য ব্যয় না করেই সেই একটি হাসি যেন সিমরানকে বুঝিয়ে দিল,
- আপনার সকল অহংকার, শিল্পের দম্ভ আজ আমার পায়ের নূপুরের ধ্বনির কাছে পরাজিত, উস্তাদনী!
সিমরান হেমাঙ্গিনীর হাসির অর্থ বুঝতে পারল। সে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এছাড়া কি করার-ই বা আছে? তার দর্প যে আজ ধুলোয় মিশে গেছে!
পেছনের সাজঘরে পৌঁছাতেই বিলকিস বানু ঝড়ের বেগে ধেয়ে এলেন হেমাঙ্গিনীর পানে। তিনি দুই হাত প্রশস্ত করে হেমাঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরলেন। প্রবীণ উস্তাদনীর চোখে আজ জল! তিনি আবেগমথিত কণ্ঠে বললেন,
- আজ তুই কেবল নৃত্য পরিবেশন করিস নিরে বেটি! আজ তুই আমার হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করেছিস। গজনবী মাহফিল আজীবন তোর এই নীল বসনার স্মৃতি বয়ে বেড়াবে। সাবাশ বেটি!
হেমাঙ্গিনী বিলকিস বানুর বুকে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল,
- খালা, আজ আমি তোমার দেওয়া শিক্ষাকে অমর্যাদার দ্বারগোড়ায় পৌঁছাতে দেইনি। এই জয় আমার নয়, এই জয় আমাদের সত্যের জয়। আমাদের শিল্পের জয়।
ওদিকে বড় হলঘরে তখন এক ভিন্ন রকমের আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের অপেক্ষায়। হেমাঙ্গিনী মঞ্চ থেকে নামার পর আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে
বিপুল সাড়া পড়ে গেল। বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী জমিদার এবং উচ্চপদস্থ ইংরেজরা তাদের আসন ছেড়ে সরাসরি হেমাঙ্গিনীর সন্ধানে পেছনের অলিন্দের দিকে এগিয়ে গেলেন।
তারা হেমাঙ্গিনীকে ঘিরে ধরলেন, কেউ তার হাতের মুদ্রা নিয়ে বাহবা দিলেন, কেউ বা তার সারেঙ্গীর লয় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। অতিথিদের এই ভিড় আর হেমাঙ্গিনীর সাথে তাদের এই অতি অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন জমিদারপুত্র তাইমুর গজনবী।
এতক্ষণ যে চোখে কেবল মুগ্ধতা ছিল, সেখানে এবার ভর করল এক প্রলয়ঙ্করী ঈর্ষা। তাইমুরের অন্তঃরাত্মা তখন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবার যখনই কোনো অপরিচিত পুরুষ হেমাঙ্গিনীর খুব কাছে গিয়ে কথা বলছিল, তাইমুরের মুষ্টিবদ্ধ হাতদুটো রক্তিম হয়ে উঠছিল।
তার মনে হচ্ছিল, যে হেমাঙ্গিনী-র নৃত্য শুধুমাত্র তারই জন্য উৎসর্গ হবার কথা, যার প্রতিটি চোখের ইশারা কেবল তার হৃদয়ে ঠাঁই পাওয়ার কথা, তাকে কেন পরপুরুষের প্রশংসার পাত্রী হতে হবে?
প্রেমিক পুরুষেরা যেভাবে আপন ভালোবাসার ওপর চূড়ান্ত মালিকানা দাবি করে, তাইমুরের ভেতরে সেই আদিম অধিকারবোধ আজ গর্জে উঠল। তিনি মনে মনে চাইলেন মাহফিলের সকল অতিথিকে মুহুর্তেই বিদায় করে দিতে, যেন হেমাঙ্গিনী কেবল তার দৃষ্টির সীমানায় বন্দী থাকে।
তার চোখের মনিতে এক ধরনের আঁধার নেমে এল। হলঘরের ঝাড়বাতির আলো তার কাছে তখন অসহ্য মনে হতে লাগল। হেমাঙ্গিনীর এই সাফল্য তাকে যেমন গর্বিত করেছে, তেমনি এই আগত মেহমানদের লোলুপ প্রশংসা তার হৃদয়ে তপ্ত সিসার মতো বিঁধছে।
নবাব তাইমুর গজনবী বুঝতে পারলেন, তিনি হেমাঙ্গিনী-র সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটি বস্তুর প্রতি আসক্ত। তার মোহ, তার রূপ, শ্বাসপ্রশ্বাস কিংবা তার দেহ! – সবটা তার চাই। এক চিলতে ভাগাভাগির স্থান নেই এখানে।
পুরো মাহফিল তখনো গুঞ্জনে মুখর। জমিদার সিকান্দার গজনবী যখন দেখলেন পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তিনি ইশারায় দাউদকে মাহফিল সমাপ্তির ঘোষণা দিতে বললেন।
ঘোষণার পর অতিথিরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদায় নিতে শুরু করলেন। কিন্তু তাদের মুখে কেবলমাত্র একটিই নাম ধ্বনিত হতে লাগল, ‘হেমাঙ্গিনী’।
★★★
মাহফিলের শেষ হতেই বাঈজীরা সারিবদ্ধভাবে নিজ মহলে ফিরে এলো। প্রধান কক্ষের সেই বিশাল আয়নার সামনে, যেখানে আজ সন্ধ্যায় সিমরান দর্পভরে নিজের রূপ নেহার করছিল, সেখানে বিরাজ করতে লাগল এক অখণ্ড নীরবতা। সিমরান পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার সেই টকটকে লাল জরির পোশাক এখন আর রক্তের মতো লাল দেখাচ্ছে না। বরং পরাজয়ের এক জরাজীর্ণ স্মারক হয়ে তার গায়ে ঝুলে আছে।
সিমরানের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অনুগত নর্তকীরাও মস্তক অবনত করে রেখেছে। তাদের চোখেমুখে সেই শাণিত ঔদ্ধত্যের লেশমাত্র নেই।
হেমাঙ্গিনী ধীর পায়ে কক্ষের মাঝখানে এসে দাঁড়াল। তার ঘর্মাক্ত ললাটে এখনো সেই আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি। নীল বসনের সেই সাধারণ মেয়েটি আজ যেন এক অলৌকিক শক্তিতে বলীয়ান। তার পেছনে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছেন বিলকিস বানু। তার দুচোখেও আজ জয়লাভের প্রশান্তি খেলা করছে।
হেমাঙ্গিনী কক্ষের নিস্তব্ধতা ভেঙে মৃদুস্বরে বলতে শুরু করল।
- উস্তাদনী সিমরান, কক্ষের বাতাস বড় ভারী ঠেকছে না আপনার কাছে? আজ সন্ধ্যায় বাঈজী মহলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে আকাশচুম্বী সংকল্পের কথা আপনি বলছিলেন, তার প্রতিধ্বনি কি এখনো আপনার কানে বাজছে? নাকি মাহফিলের সেই অজস্র মোহর আর রত্নবৃষ্টির শব্দে আপনার নিজস্ব স্বর হারিয়ে গেছে?
হেমাঙ্গিনীর উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ছিল শাণিত তীরের মতো, যা সিমরানের দম্ভের বর্ম ভেদ করতে যথেষ্ট। তবুও সে কোনো উত্তর দিল না। তার চোয়াল শক্ত, দৃষ্টি মেঝের কার্পেটে নিবদ্ধ।
হেমাঙ্গিনী এক কদম এগিয়ে এল। তার কণ্ঠস্বরে এবার মিশল এক অদ্ভুত তুচ্ছতাচ্ছিল্য, যদিও তা অতি ভদ্রতার আবরণে ঢাকা।
- আজকের মাহফিলে সুর আর তালের যে সংঘাত হলো, তাতে কে শ্রেষ্ঠ আর কার শিল্প আজ ধূলিলুণ্ঠিত, তা নিয়ে কি এখানে উপস্থিত কারো মনে কোনো সংশয় আছে? যারা আজ মঞ্চে মোহর ঢেলেছে, তারা কি কেবল রূপের কাঙাল ছিল? নাকি তারা আজ প্রথমবারের মতো শিল্পের সেই রুদ্রমূর্তি দেখেছে যা কেবল আত্মার গহীন থেকে উৎসারিত হয়?
হেমাঙ্গিনী কক্ষের বাকি বাঈজীদের দিকে দৃষ্টি ফেরাল।
- আপনাদের কি কোনো দ্বিমত আছে? উস্তাদনী সিমরানের সেই জ্যামিতিক নিখুঁত চক্কর আর আমার এই অলঙ্কারহীন আর্তি, এই দুয়ের মাঝে গজনবী মাহফিলের মেহমানরা কাকে বেছে নিয়েছে, তা কি পুনরায় বলার প্রয়োজন আছে?
প্রত্যুত্তরে কেউ কোনো কথা বলল না। নর্তকীরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিল। তারা স্বচক্ষে দেখেছে, হেমাঙ্গিনী যখন নাচছিল, তখন খোদ জমিদারপুত্র তাইমুর গজনবী তার গদি ছেড়ে সামনে ঝুঁকে পড়েছিলেন। নৃত্য শেষ হতেই তিনি আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তার এই মুগ্ধতার মাঝে ছিল হেমাঙ্গিনীর প্রতি বশ্যতা স্বীকার!
সিমরানের নিরবতা দেখে হেমাঙ্গিনী পুনরায় বলতে শুরু করল, তার স্বরে এবার কাঠিন্য ফুটে উঠল।
- আমাদের মাঝে যে দ্বৈরথ হয়েছিল, তার শর্তগুলো কি আপনার মনে আছে? আপনি বলেছিলেন, আমি আর বিলকিস বানু হারলে আমাদের এই মহল ত্যাগ করতে হবে, আর আপনি যা বলবেন তাই শিরোধার্য হবে। কিন্তু নিয়তি আজ বড় বিচিত্র এক পাশা খেলেছে। আজ পরাজয়ের তিলক আপনার ললাটে, উস্তাদনী৷ কাজেই, আমার শর্ত অনুযায়ী এই মুহূর্ত থেকে বিলকিস বানুর সেই হারানো গৌরব এবং পদের মর্যাদা আপনার ফিরিয়ে দিতে হবে। স্বেচ্ছায় নিজের উস্তাদনীর পদ ত্যাগ করতে হবে।
হেমাঙ্গিনী সিমরানের চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আরোও বলল,
- আমি আশা করি, আপনি আপনার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন। আপনি নিশ্চয়ই এতটা দ্বিমুখী নন যে নিজের পরাজয়কে অস্বীকার করে বেইমানির আশ্রয় নেবেন? আভিজাত্য কেবল পোশাকে থাকে না বাঈজী সিমরান, আভিজাত্য থাকে কথার ওজনে। আমি বিশ্বাস করি, সেই ওজনের মর্যাদা দিতে আপনি কার্পণ্য করবেন না।
সিমরান এতক্ষণ স্থির ছিল, কিন্তু হেমাঙ্গিনীর এই শেষ কথাগুলো তার বুকের গহীনে তপ্ত অনলের ন্যায় জ্বলে উঠল। সে ধীরে ধীরে মাথা তুলল। তার চোখে পরাজয়ের গ্লানি থাকলেও, অন্তরে এক বিষাক্ত সাপের হিস হিস ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। তবে সে কোনো চিৎকার করল না, প্রতিবাদও করল না। সে জানে, আজ পুরো মহলের জনমত প্রকাশ্যে না হলেও অভ্যন্তরে তার বিপক্ষে।
সে ধীর হাতে ছোট সিন্দুক থেকে চাবির গোছাটি বের করে নিল। এই চাবির গোছাটি কেবল ধাতুর টুকরো নয়, এটি ছিল এই বাঈজী মহলের একচ্ছত্র আধিপত্যের প্রতীক।
সিমরান অতি কষ্টে চাবি সমেত নিজের কম্পিত হাতটি বিলকিস বানুর দিকে এগিয়ে দিল।
বিলকিস বানু যখন সেই চাবির গোছাটি গ্রহণ করলেন, তখন তার হাতও সামান্য কাঁপছিল।
সিমরান চাবি হস্তান্তর করেই দ্রুত পায়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। তার মনে হচ্ছিল, এই কক্ষের প্রতিটি দেয়াল তাকে বিদ্রূপ করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে বিলকিস বানুর গম্ভীর কণ্ঠস্বর কক্ষের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হলো।
- দাঁড়ান, বাঈজী, সিমরান।
সিমরান থমকে গেল। পেছনে না ফিরেই সে হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। বিলকিস বানু ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন তার সম্মুখে। বললেন,
- আমি চাইলে আজই আপনাকে এবং আপনার এই দাম্ভিক দলকে মহল থেকে বিতাড়িত করতে পারতাম। কিন্তু শিল্পের সাধনায় প্রতিশোধের কোনো স্থান নেই। আমি চাই আপনি এই মহলেই থাকবেন। আপনার শিল্পচর্চা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, শিল্প যখন ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে যায়, তখন তার পতন অনিবার্য। আজ থেকে এই মহলের শৃঙ্খলা আর রীতিনীতি পুনরায় আমার নির্দেশে চলবে।
বিলকিস বানুর প্রতিটি কথা সিমরানের কানে সিসার মতো বিঁধল। প্রবীণ উস্তাদনীর এই মহানুভবতা তার নিকট হাজারো ভর্ৎসনার চেয়েও বেশি অপমানজনক বলে মনে হলো। সে মনে মনে ভাবল,
- ক্ষমা? এই ক্ষমা আমার শোধের আগুনকে আরও বাড়িয়ে দিল বিলকিস বানু। হেমাঙ্গিনী, আপনি আজ জিতেছেন ঠিকই, তবে যুদ্ধের ময়দান এখনো শেষ হয়নি। এর শোধ আমি নিবই নিব।
সিমরান দ্রুত কদম ফেলে অন্ধকার করিডোরের দিকে মিলিয়ে গেল। তার দলের বাকি বাঈজীরাও মাথা নিচু করে তাকে অনুসরণ করল।
কক্ষটি এখন শূন্য। কেবল প্রদীপের আলোয় হেমাঙ্গিনী আর বিলকিস বানু দাঁড়িয়ে আছেন। বিলকিস বানু হেমাঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,
- বেটি, তুই আজ অসাধ্য সাধন করেছিস। তোকে নিয়ে আমার গর্ব হচ্ছে!
হেমাঙ্গিনী খালার কাঁধে মাথা রাখল। কিন্তু তার মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। সে ভাবছিল উক্ত মুহূর্তটির কথা, যখন সে মঞ্চে নাচছিল আর তাইমুরের চোখের মণি তাকে অনুসরণ করছিল।
হেমাঙ্গিনী জানে, তার আসল লড়াই এখন শুরু হবে। একজন বাঈজীর কপাল থেকে ‘নিষিদ্ধ’ তকমা মুছে ফেলে অন্দরমহলে নিজের স্থান পোক্ত করতে হবে।
হেমাঙ্গিনী মনে মনে তাইমুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
- হুজুর, আজ থেকে আপনার বেগম হবার এক মরণপণ সংগ্রাম শুরু হলো আমার। দুনিয়ার সকল পুরুষ যখন নারীদেহের কাঙাল, একমাত্র আপনিই তখন এই নশ্বর শরীরকে ছাপিয়ে আমার মনকে নিজের করে পেতে চেয়েছেন। ভাগ্যের নির্মমতায় যদি আপনার দ্বিতীয় বেগম হতে হয়, আমি রাজি। এমনকি নিয়তি যদি আমায় আপনার তৃতীয় বেগমের আসনেও বসিয়ে দেয়, আমি অবনত মস্তকে তা মেনে নেব। তবুও আপনার এই অনুরাগ আমি বিফলে যেতে দিব না! কপাল হতে ‘নিষিদ্ধ’ তকমা মুছে আপনার অন্দরমহলের সম্রাজ্ঞী হয়েই ছাড়ব।
এই গল্পের লেখক আমি। পরবর্তী পর্ব পড়তে আমার পেইজ – Atia Adiba – আতিয়া আদিবা ফলো করবেন।
এবং ৪০০০ লাইক, ৬০০ কমেন্টের টার্গেট পূরণ করবেন। টার্গেট পূরণ হলে আগামীকাল এই সময় পর্ব ২০ আসবে।
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
লেখকঃ Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
TAGS: আতিয়া আদিবা, নিষিদ্ধ রংমহল
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৭
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ২১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ২২
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ২০
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১০
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৭
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৫