নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
পর্ব_১৩
সিকান্দার গর্বিত দৃষ্টিতে আড়চোখে পুত্রের দিকে তাকালেন। সন্তপর্ণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।তাইমুর তার বংশের ঐতিহ্য রক্ষা করতে প্রস্তুত। তিনি বললেন,
- এই গজনবী এস্টেট একটি ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য। এখানকার সুখ-শান্তি রক্ষা করার দায়িত্ব আমার এবং আমার পুত্রের।
রাজস্বের ক্ষতি মানে আমাদের ক্ষমতার ভিত্তি দুর্বল হওয়া। আমি আমার এস্টেটে অন্য কোনো কর্তৃত্ব বা আইনি জটিলতা চাই না। আমার এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য আমার।
এই চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারলেন না রবিনসন। সংঘাতের সূচনা টের পেলেন তিনি।
জমিদার এবং জমিদারপুত্র শুধুমাত্র অর্থ নিয়ে নয়, কর্তৃত্বের সার্বভৌমত্ব নিয়েও যথেষ্ট সচেতন।
তিনি শেষ চেষ্টা করলেন। কথার সুরে বেজে উঠল রাজনৈতিক চাপ।
- ঠিক আছে, মিস্টার গজনবী। যদি রাজস্বই আপনার চিন্তা হয়, তবে আমরা চুক্তি করতে পারি।
- কেমন চুক্তি?
জানতে চাইলেন সিকান্দার। - আমরা চুক্তি করব সরাসরি আপনার সঙ্গে। চাষীদের সাথে নয়। আমরা আপনাকে আইনগত সুরক্ষা দেব। যা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী জমিদারদের বিরুদ্ধেও কার্যকর হবে। আপনি বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী জমিদার হতে পারবেন আমাদের সহায়তায়।
সিকান্দার এবার দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়লেন। সামান্য হেসে বললেন,
- সুরক্ষা দেবার জন্য আমার পাইক-বরকন্দাজ আছে, জনাব। আমার এস্টেটে অন্য কোনো বাহিনীর প্রয়োজন নেই।
সিকান্দার এবার সরাসরি রবিনসনের চোখে চোখ রাখলেন। বললেন,
- বরং আমি আপনাদের জন্য একটি বিকল্প প্রস্তাব দিচ্ছি। আমার এস্টেটে কিছু অংশে তুলা, রেশম, বা পাট চাষ করাতে পারি। যা ব্রিটিশ বাণিজ্যের জন্যও লাভজনক হবে। কিন্তু নীল নয়। আমার এক ইঞ্চি জমিও আমি নীলচাষের জন্য দেব না। এবং আমার এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
তাইমুর পিতার বক্তব্যকে আরোও জোরালো করবার উদ্দেশ্যে বললেন,
- আমাদের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়, মিস্টার রবিনসন। আমরা আপনাদের বাণিজ্যিক সহযোগী হতে পারি কিন্তু শাসনকার্যে কোনো অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী নই। কাজেই, আপনাদের এই অনুপ্রবেশের চেষ্টা পরবর্তীতে আমরা সহ্য করব না।
রবিনসনের মুখ অপমানে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার কর্তৃত্বকে এমন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার দুঃসাহস এর আগে কোনো জমিদার করেন নি। তিনি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে সিকান্দারের দিকে তাকালেন।
- আপনি আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, জমিদার!
রবিনসনের কথাগুলো হুমকি ন্যায় শোনালো।
- মনে রাখবেন, স্বেচ্ছায় তৈরিকৃত এই বিচ্ছিন্ন নীতি আপনাদের জন্য রাজনৈতিক বিপদ ডেকে আনবে। এই এস্টেটকে চারপাশ হতে ঘিরে ফেলা কিন্তু আমাদের পক্ষে কঠিন কিছু নয়। আমরা চাইলেই আপনাদের রাজস্ব আদায় কঠিন করে তুলতে পারি। আইন আমাদের পক্ষে।
তাইমুর তৎক্ষনাৎ দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল,
- আইন আপনাদের পক্ষে থাকতে পারে, মিস্টার রবিনসন, কিন্তু আমার পিতা, নবাব সিকান্দার গজনবী তার প্রজার পেটে লাথি মেরে, নিজের কর্তৃত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি করবেন না।
বাণিজ্যের লোভ দেখিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে গ্রাস করতে পারবেন না। আজ থেকে, এই মুহুর্ত থেকে, গজনবী এস্টেটের সীমা আপনাদের জন্য চিরতরে রুদ্ধ হলো। আপনারা এখন আসতে পারেন।
রবিনসন আর কোনো কথা না বলল না। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে একবার পিতা- পুত্রের দিকে তাকিয়ে তার দেওয়ানকে নিয়ে দ্রুত বৈঠকখানা ত্যাগ করলেন। সিকান্দার পুনরায় আসন গ্রহণ করলেন।
তাইমুর এবার আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলেন। তার চোখে জন্ম নিল পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং গর্ব।
তিনি আবেগভরা কণ্ঠে বললেন,
- পিতা, আজ আপনি নীলকরদের সামনে যে সাহস দেখালেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। আমি গর্বিত যে গজনবী বংশের জমিদার এমন দূরদর্শী।
আপনার দূরদর্শিতা কেবল আমাদের রাজস্ব রক্ষা করেনি বরং বাংলার কৃষকের মর্যাদা রক্ষা করছে। আপনি প্রজাদের জীবন নিয়ে এত ভাবেন!
এটিই আমাদের বংশের আসল জৌলুস।
তাইমুরের চোখে-মুখে ছিল তারুণ্যের নির্ভেজাল সারল্য। তিনি ভাবলেন, তার পিতার এই সিদ্ধান্ত শত শত লাঞ্ছিত কৃষকের প্রতি সহানুভূতি থেকে এসেছে।
সিকান্দার তার পুত্রের প্রশংসা হাসিমুখে গ্রহণ করলেন। পুত্রের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
- তুমি আমার যোগ্য উত্তরসূরি, তাইমুর। তোমার এই চেতনা আমাকে ভরসা জোগায়।
তবে, সিকান্দারের অন্তর তখন ভিন্ন হিসাব কষছিল। পুত্রের সরলতা দেখে তিনি মনে মনে মৃদু হাসলেন। তাইমুর বোঝেনি, জমিদারী শাসনের মূলনীতি কখনো প্রজাসুবিধা কিংবা মানবতা হয় না। বরং এর মূলনীতি হলো ক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব।
সিকান্দারের নীলচাষ প্রত্যাখ্যানের মূল কারণ ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষমতা এবং জৌলুস হারানোর ভয়।প্রজাদের প্রতি প্রেম নয়।
নীলচাষ শুরু হলে প্রজারা খাজনা দিতে পারত না। অথচ তার অফুরন্ত বিলাসবহুল জীবন নির্ভর করে নিয়মিত খাজনার ওপর। রাজকোষ শূন্য হলে তার জৌলুস থাকবে না। অন্য জমিদারদের কাছে তার ক্ষমতা দুর্বল বলে গণ্য হবে।
এছাড়া নীলকররা তাদের পাইক নিয়ে আসত। তারা অবশ্যই জমিদারের হুকুমের তোয়াক্কা করত না। সিকান্দার গজনবী তার রাজ্যে বংশের রক্ত ছাড়া অন্য কারও আধিপত্য মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।নীলকরদের উপস্থিতি মানে তাঁর একচ্ছত্র শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত!
প্রজারা অনাহারে থাকুক কিংবা সুখে থাকুক, সে বিষয়ে সিকান্দার কখনোই বিশেষ চিন্তিত ছিলেন না। তার একমাত্র চিন্তা ছিল ক্ষমতা যেন কোনো বিদেশির হাতে ক্ষুণ্ণ না হয়।
সিকান্দার আলতো করে তাইমুরের হাত ধরলেন। বললেন,
- তাইমুর, তুমি ভাবি জমিদার! মনে রাখবে, একজন জমিদারের প্রথম দায়িত্ব হলো তার গৌরব এবং ক্ষমতা রক্ষা করা। সেই ক্ষমতা রক্ষা করতে গিয়ে যদি প্রজাদের ভালো হয়, তবে তা উপস্থিত বুদ্ধির ফল। কিন্তু ক্ষমতাই হলো প্রথম ধর্ম।
কথাগুলো বলে সিকান্দার সামান্য হাসলেন। তিনি জানতেন, তাইমুর এই গভীর রাজনৈতিক কৌশল এখনি বুঝবেন না। শাসনের ভার কাধে পড়লে ধীরে ধীরে সবটা আয়ত্ত করে ফেলবেন তিনি।
- তাইমুর, আগামীকাল এই এস্টেটের সকল খ্যাতিমান ব্যবসায়ীরা আমাদের জমিদারবাড়িতে আসবেন।
- এর পেছনে বিশেষ কোনক কারণ আছে পিতা?
- আছে। এ সম্পর্কে তোমায় আগামীকাল অবগত করা হবে। আজকের দিনটি বেশ কঠিন ছিল। যাও, তুমি নিজ কক্ষে যেয়ে বিশ্রাম নাও।
তাইমুর মাথা নত করে বৈঠকখানা প্রস্থান করলেন।
সিকান্দার একা বসে রইলেন। পানপাত্রটি হাতে তুলে নিলেন। তার মনে কোনো দ্বিধা ছিল না। নিজের স্বার্থ এবং জৌলুস বজায় রাখার জন্যই তিনি নীলকরদের বিরুদ্ধে গিয়েছেন। অন্য সব কারণ, কেবলই কূটনৈতিক আবরণ মাত্র।
★★★★
নিস্তব্ধ রাত। বাঈজী মহলের বারান্দা জুড়ে যেন চাপা দীর্ঘশ্বাসের আবহ। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ আজ বড় কৃপণ, সামান্য আলোও সে ছড়ায়নি। শুধু সুউচ্চ দেওয়ালের ওপার হতে প্রহরীর হাঁক আর শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। সেই শব্দই যেন জানান দিচ্ছে রাতের গভীরতা।
হেমাঙ্গিনী তার কক্ষের লাগোয়া বারান্দার ঠান্ডা মেঝেতে চুপচাপ বসেছিল। সিল্কের ওড়নাটি আলগাভাবে তার কাঁধ থেকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে। তার শরীর স্থির থাকলেও মস্তিষ্কের ভেতরে হাজারো চিন্তার ঘূর্ণিপাক চলছে। বাইরের পরিবেশ শীতল হলেও তার কপালে জমেছিল সূক্ষ্ম ঘামের বিন্দু।
আর মাত্র দুই রাত। তারপরই গজনবী মাহফিলে সেই চূড়ান্ত দ্বৈরথ। সিমরানের চোখে সে যে উপহাস দেখেছিল, তা যেন এখনো তার রক্ত গরম করে দিচ্ছে। আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে সর্বস্থানে।
বিলকিস বানুর প্রতি সিমরানের অসম্মান, তার নিজের শিল্পের প্রতি তাচ্ছিল্য, সবকিছু মিলিয়ে অভ্যন্তরে এক কঠিন সংকল্প তৈরি হলেও, তার মন আজ বড় দুর্বল।
হেমাঙ্গিনী চোখ বন্ধ করল। মানসচক্ষে ভেসে উঠল সিমরানের দ্রুতগতির, শরীরী ভাষার সেই জটিল নৃত্যশৈলী। সিমরান প্রতিটি পদক্ষেপে যেন এক বিদ্যুতের ঝলক। তার নাচে আছে নতুনত্বের উন্মাদনা, যা আজকের পৃষ্ঠপোষকেরা খুঁজে বেড়ায়। তারপরই হেমাঙ্গিনীর মনে এলো নিজের নাচ। সে বিড়বিড় করে বলল,
- আমার নৃত্য বড়ই একঘেয়ে। সিমরান ভুল কিছু বলে নি।
সিমরানের কথাগুলো বিষাক্ত তীরের মতো তার বুকে বিঁধে ছিল বটে। তবে সে জানে, এই অপবাদ পুরোপুরি মিথ্যা নয়।
দীর্ঘদিন ধরে সে উস্তাদ বিলকিস বানুর কাছ থেকে ‘ঠুমরি’ ঘরানার শিক্ষা পেয়েছে। যেখানে আবেগ, ভঙ্গি ও সূক্ষ্মতা প্রধান। বিলকিস বানুর নৃত্য নিসন্দেহে দীর্ঘ প্রস্তুতি আর গভীর সাধনার ফল।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঈজী মহলের দর্শক বদলেছে। তাদের রুচি দ্রুত ও চটকদার শিল্পের দিকে ঝুঁকেছে। হেমাঙ্গিনীর নাচে যে গভীরতা আছে, তা ধৈর্যশীল দর্শকের জন্য। কিন্তু গজনবী মাহফিলের ধনী পৃষ্ঠপোষকেরা এখন আর অপেক্ষা করতে রাজি নন। তারা চান দ্রুত বিনোদন।
হেমাঙ্গিনী পুনরায় ফিসফিস করে বলে উঠল,
- আমি পারবো না উনাকে হারাতে! কোনোদিন পারব না।
নিজের ভেতরের এই দ্বিধা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। সিমরানকে টেক্কা দেওয়ার মতো কোনো নতুন কোনো নৃত্য তার জানা নেই।
হেমাঙ্গিনীর পাশেই পড়ে ছিল একজোড়া নুপূর।
ধীরে ধীরে সেই নুপূরজোড়া হাতে নিল হেমাঙ্গিনী। ধাতব ঠান্ডা স্পর্শ। এই নুপূর কত শত জলসায় বেজেছে! কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এর আয়ু বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে।
- আমি হেরে যাবো। আর হারলে শুধু আমার নয়, বিলকিস খালার জীবন, তার সবটুকু সম্মান শেষ হয়ে যাবে। উস্তাদনীর পদ ফিরে পাবার আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। এ পদে রাজত্ব করবে এক অহংকারী অল্পবয়স্কা যুবতী।
ঠিক এমন সময়, কক্ষের ভেতর দিক থেকে মৃদু পদধ্বনি শোনা গেল। হেমাঙ্গিনী দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নিল। দরজায় মৃদু করাঘাতের পর বিলকিস বানু কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করলেন। প্রবীণ শিল্পীর মুখে ক্লান্তি থাকলেও চোখে দৃঢ় প্রত্যয়ের অভাব ছিল না।
বিলকিস বানু বারান্দার কাছে এসে দাঁড়ালেন।
শান্ত স্বরে জানতে চাইলেন,
- এত রাতে এখানে একা কেন, বেটি? ঘুমাস নি?
হেমাঙ্গিনী উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নত করল। বলল,
- ঘুম আসছে না, খালা।
- ওই সিমরানের কথা ভেবে চিন্তা করছিস? কিচ্ছু হবে না বেটি। তুই হল এই মহলের চাঁদ। চাঁদকে হারানো এত সহজ?
হেমাঙ্গিনী কণ্ঠে তীব্র হতাশা মিশিয়ে বলল,
- খালা, আমি জানি তুমি আমাকে সাহস দিতে এসেছো। কিন্তু মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে কি লাভ বলো? তুমি নিজের চোখেই দেখেছো, সে কী ধরনের নৃত্য পরিবেশন করে। আমি আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে নাচ শিখলেও, আমার এই ধীরগতির নৃত্য দিয়ে ওই নতুন ধারার চটকদারিকে হারাতে পারবো না।
বিলকিস বানু ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হেমাঙ্গিনীর পাশে বসলেন। তার হাত ধরে আলতো চাপ দিলেন।
তিনি ধীরে কণ্ঠে বললেন,
- আমার দিকে তাকা, হেমা। তোর এই দুশ্চিন্তা আমি বুঝতে পারছি। হ্যাঁ, সিমরানের নাচে গতি আছে। শরীরী প্রদর্শন আছে। কিন্তু তার নাচে ‘প্রাণ’ নেই রে, বেটি! তার নাচ শুধু চোখের ক্ষুধা মেটায়, আত্মার ক্ষুধা নয়।
হেমাঙ্গিনী মাথা নিচু করে উত্তর দিল,
- কিন্তু খালা, মাহফিলের সকলে চোখের ক্ষুধা মেটাতেই কি বেশি আগ্রহী নয়? আমার মায়ের নৃত্যবিন্যাস ছিল আমার শেষ ভরসা। কিন্তু সিমরান তো আমার শেষ ভরসাটুকুও কেড়ে নিয়েছে! তাকে টেক্কা দেওয়ার মতো আর কোনো অস্ত্র আমার কাছে নেই। হার স্বীকার করে নেওয়াই বরং উত্তম।
হেমাঙ্গিনীর কণ্ঠে হতাশা আর যন্ত্রণা। এই প্রথম সে গুরুর সামনে প্রকাশ করল নিজের অসহায়তা।
বিলকিস বানুর চোখে এক ঝলক আগুন জ্বলে উঠল। তিনি মৃদু হাসলেন, সে হাসিতে ছিল গভীর স্নেহ এবং কিছুটা মৃদু বকুনি।
- তুই একথা কিভাবে বলতে পারলি?
বিলকিস প্রায় ধমকের সুরে বললেন,
- ভুলে যাস না, তুই জন্মসূত্রে বাঈজী। তুই একজন জাত শিল্পী!
তিনি হেমাঙ্গিনীর দিকে সামান্য ঝুঁকে আসলেন। দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,
- শোন। একজন সত্যিকারের শিল্পীর অস্ত্র কখনো পুরনো হয় না। তোর মায়ের নৃত্য ছিল তোর প্রথম অস্ত্র। সেই অস্ত্রকে শাণ দিয়ে এখন তোর নিজস্ব অস্ত্র তৈরি করতে হবে! তুই কেন ভাবছিস যে তোকে সিমরানের মতোই নাচতে হবে? না, হেমাঙ্গিনী। তোর শক্তি তোর আবেগে, তোর ভঙ্গিমায়। তোকে দ্রুততা আর চটকদারিকে হারাতে হবে গভীরতা আর নতুনত্বের সংমিশ্রণে।
হেমাঙ্গিনীর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
- তোমার মায়ের যেমন নিজের নৃত্যবিন্যাস ছিল, তোরও থাকতে পারে, বেটি!
বিলকিস বানু তার শিষ্যার মাঝে প্রেরণা যোগাতে লাগলেন।
- এই প্রতিযোগিতার জেতার জন্য তোর এখন চাই হেমাঙ্গিনীর আপন শৈলী। এমন কিছু যা তারা আগে কখনো দেখেনি। এমন কিছু যা একইসঙ্গে তোর ঠুমরি নৃত্যের গভীরতা বজায় রাখবে, আবার বর্তমান সময়ের দ্রুততাকে অস্বীকার করবে না কোনোক্রমেই।
বিলকিস বানু দেয়াল থেকে লন্ঠন নিজের হাতে নিলেন। হেমাঙ্গিনীর মুখের সামনে ধরলেন। হলদে আলোয় হেমাঙ্গিনীর মুখে নতুন করে সংকল্পের রেখা ফুটে উঠল।
তিনি বললেন,
- মাত্র দুই রাত। এর মাঝেই তোর মস্তিষ্কে আগুনের মত প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠতে হবে। সেই স্ফুলিঙ্গকে দিয়ে তৈরি করতে হবে এমন এক নৃত্যবিন্যাস, যা সিমরানের ঔদ্ধত্যকে চিরতরে চূর্ণ করে দেবে।
হেমাঙ্গিনীর মন থেকে দ্বিধার ঘন কালো মেঘ ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগল। তার ভেতরের শিল্পী সত্তা জাগ্রত হতে লাগল। সে দ্রুত বিলকিস বানুর হাত ধরে বলল,
- খালা, কেমন হবে সেই নৃত্য? আমি কোথা থেকে শুরু করব?
প্রবীণ গুরু মৃদু হেসে উত্তর দিলেন,
- শুরু করবি তোর পায়ের নুপূর থেকে। এখন থেকে তোর ঘুঙুরের শব্দ যেন না থামে। তোর মন যা বলবে, তোর আত্মা যা প্রকাশ করতে চাইবে, তাই হবে তোমার আপন নৃত্যবিন্যাস।
হেমাঙ্গিনী বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মাথা নাড়ল। তার চোখে এখন আর হতাশা নয়, জ্বলছে এক অদম্য যুদ্ধের অঙ্গীকার। তার মস্তিষ্কও নীরব নেই। সেখানে শুধুমাত্র প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ নয়, এখন যেন নতুন সৃষ্টির উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে।
অসুস্থ ছিলাম। ৪৫০০ লাইক এবং ৫০০ কমেন্টস সম্পন্ন করবেন, এরপর পরবর্তী পর্ব আসবে।
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
লেখনীতে, Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
TAGS: আতিয়া আদিবা, নিষিদ্ধ রংমহল
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১০
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৭
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৮
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৫
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল গল্পের লিংক
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৬
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৭