সুখময়যন্ত্রনাতুমি পর্ব ১২০+১২১+১২২
neela_rahman
motivation
Romantic
পর্ব ১২০
সাদাফ বসে আছে বন্ধুদের সাথে এখানে সোহান সাবা রাকিব অনেক ফ্রেন্ড আছে সোহান বললো,” কিরে তোর ছোট বউ এর কি খবর ?শুনলাম কদিন আগে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলো?
কি এমন করলি বাড়িতে এনেই সোজা হসপিটাল?”
সাদাফ বললো ,”বাজে কথা বলবি না।আর আমার সেই কপাল কোথায়? আমার জ্বর ছিল প্রচন্ড অসুস্থ ছিলাম আমার সেবা করতে এসে মহারানী নিজে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল ।তাই ওর কন্ডিশন ভালো না থাকায় হসপিটালে ভর্তি করে দিয়েছিল।আমি অফিসে ছিলাম।পরে জানতে পারি।”
রাকিব বলে উঠলো ,”বেচারা সাদাফ কয়টা দিন হলো বিয়ে করেছে এখনো বউকে ঠিকঠাক মতো কাছে পেল না !তা তুই বললে আমরা ব্যবস্থা করে দিতে পারি ।করবো না কি ব্যবস্থা?”
সাদাফ মুচকি হেসে রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললো কি ব্যবস্থা করবি ?”
রাকিব আমতা আমতা করে বললো,” না তেমন কিছু না ।তোর বাড়িটাকে একটু বাসর ঘর সাজিয়ে দিতাম।
বাকি কাজ তো তোরই করতে হবে বন্ধু সেসব কাজে তো আর আমরা সাহায্য করতে পারবো না ।”বলে রাকিব সহ সবাই হেসে দিল ।সোহান হাসতে হাসতে সাদাফের দিকে তাকালো।
সাবা বলে উঠলো ,”রাখ তো তোদের বাজে কথা ।দেখ নুর ছোট ছোট এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই ।”
রাকিব বললো,” তুই তোর বাজে কথা রাখ ।১৭ বছরের মেয়ে আবার ছোট হয় কি করে ?তাও আবার বিবাহিত !গ্রামের দিকে যেয়ে দেখ ১৭ বছরে মেয়েরা দুইটা বাচ্চার মা হয়ে গেছে।”
আমাদের মা খালারা কত বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল ?১৭ বছর কি ছোট নাকি ?আমরা শহরের মানুষেরা একটু ফার্মের মুরগির মত তুলু তুলু করে পালি তাই মনে হয় ১৭ বছর অনেক ছোট ।কিন্তু ১৭ বছর যথেষ্ট ম্যাচিউর বয়স ১৮ থেকে জাস্ট একটু কম।
রাকিব বললো,” দোস্ত তুই নির্ভয়ে এগোতে থাক কিছু হলে আমরা পিছনে আছি কোন সমস্যা নেই।
বলিস তো রাতভর এম্বুলেন্স নিয়ে তোর বাড়ির নিচে আমরা পাহারা দিব ।কিছু হলেই হসপিটাল।”
“থাম থাম এবার ।বাজে কথা রাখ ।”সোহান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” তুই কি চাচ্ছিস?”
সাদাফ বললো,” আমি আবার কি চাইবো ?”
সোহান বললো,” রংঢং রাখ তুই কি চাইছিস সেটাই বল ।বাসর রাত বলে কথা ।সেটা জীবনে দ্বিতীয় বার আসবে না ।১৪ বার বিয়ে করালেও আসবে না ।তাই তুই যদি চাস আমরা আগামীকাল তোর বাড়ির সাজিয়ে গুছিয়ে দিব বাকিটা তোর ইচ্ছা।”
সাদাফ চুপ করে রইলো। মুচকি হাসলো।
উত্তর পেয়ে গেল সোহান।বললো,” ঠিক আছে দোস্ত এটা আমাদের তরফ থেকে তোর জন্য গিফট ।সারপ্রাইজ ইজ গেটিং রেডি।”
সাবা বললো ,”কিন্তু তোর বাবা বা ছোট বাবা তো কেউ এখনো বিয়েটা ঐভাবে মেনে নেয়নি কি করবি?”
সাদাফ সাথে সাথে ফোন বের করে ফোন দিল হুমায়ুন রহমানকে ।হুমায়ুন রহমান ফোন রিসিভ করতেই সাদাফ বলে উঠলো ,”আগামী কালকে তোমরা বগুড়া যাচ্ছ তুমি আর ছোট বাবা।”
হুমায়ূন রহমান বললেন ,”আগামীকাল বগুড়া যাচ্ছি মানে হঠাৎ করে কিভাবে? আর কেন যাব ?”সাদাফ বললো,”কাজ আছে অফিসিয়াল টুর এমনি পাঠাচ্ছি না ।তোমাদের যেতে হবে আর আমার এখানে থাকতে হবে জরুরী কাজ আছে।”
হুমায়ূন রহমান বললো,” সব ঠিক আছে বুঝলাম কিন্তু তোর সাথে আমাদের একটু কথা ছিল ।”
সাদাফ বললো,” কথা পরে হবে বাবা আগামীকালকেই তোমরা দুজন বগুড়া যাবে।”
“সে না হয় যাওয়া যাবে কিন্তু কারণটা কি ?” জানতে চাইলো হুমায়ূন রহমান।
সাদাফ বললো,” কারণ এতবার জিজ্ঞেস করছ কেন ?যাও আগামীকাল তোমার ছেলের বাসর । বাবা হিসেবে তোমার একটা দায়িত্ব-কর্তব্য তো আছে নাকি?”
সাদাফের কথা শুনে সোহান রাকিব সাবার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল ।বাবাকে এগুলো কি বলছে ?সবাই ফোনের মধ্যে কান পাতলো।
হুমায়ূন রহমান ওপাশ থেকে বললেন,” বাপ হই তোর বেয়াদব লজ্জা কর ।একটু লজ্জা শরম থাকা উচিত বাপকে কোন ছেলে বলে বাসরের কথা?”
সাদাফ বললো,” ঠিক আছে তাহলে তুমি ফোন রাখ ।ফজলুর রহমানকে ফোন দিচ্ছি ।তোমার ছোট ভাইয়ের সাথে কথা হবে ।”
“খবরদার কাউকে ফোন দিবি না।বেশরম ছেলে ।”বললো হুমায়ূন রহমান।
সাদাফ বললো,”তাহলে চুপচাপ দুই ভাই কালকে সুন্দর শান্তিতে বগুড়া চলে যাও ।আমি টিকিটের ব্যবস্থা করে রাখবো ঘুমাতে ঘুমাতে বগুড়া চলে যাবে।”
হুমায়ুন রহমান আফসোসের সরে বললেন ,”কোন জনমের শত্রুতামি যে তুই আমার সাথে বের করছিস আল্লাহই জানে ।না হলে এরকম ছেলে আমি কেন পয়দা করব?”
“ভুলটা ছিল তোমার বাবা তাই এর দোষ আমাকে দিয়ে লাভ নেই ।এরকম ছেলে তুমি পয়দা করেছ তাই এর দায়ভার এখন তোমাকে নিতে হবে ।আর কোন কথা শুনতে চাই না ।কালকে তোমরা দুজন বগুড়া যাচ্ছো বাস ।কাজ আছে কাজেই পাঠাচ্ছি আবোল-তাবোল কোন চিন্তা ভাবনা করো না ।তোমার মাথায় তো শুধু আবোল তাবোল চিন্তাভাবনা ঘুরে।আর শোনো ছেলে বড় হয়েছে ছেলের সব ব্যাপার জানতে চাবে না ।আবার বললে আমাকে বলবে আমার লজ্জা নেই।”
ফোন রেখে দিল সাদাফ। হুমায়ণ রহমান হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন ফোনের দিকে ।”কি বলল এই মাত্র ছেলে ?ছেলে বড় হয়েছে আর জানতে চাওয়া দোষের হয়ে গেছে ?তাই এমন ঠোঁট কাটা কথা বলবে বাপের সাথে?”
মনে মনে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হুমায়ূন রহমান ।তারপর ভাবলেন নূরের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছেন কিন্তু কাল যদি বগুড়া চলে যায় তাহলে হয়তো আরো দুই তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে নুরের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ।পর মুহূর্তে ভাবলেন নুরও একটু সুস্থ হোক আর তাছাড়া অনেক টেনশন থেকে মাত্র উঠেছে দুইটা দিন না হয় যাক তারপর নূরের ব্যাপারে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে সোহান রাকিব সাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সাদাফের দিকে । বললো,” তুই তো জিনিয়াস রে দোস্ত নিজের বাপকে এরকম থ্রেড দিয়ে রাজি করিয়ে ফেললি ! সত্যি কথাও বলে ফেললি যে বাসর করবি ।তোকে তো আসলে দিনরাত মনে কর পূজা করা উচিত।”
আড্ডা শেষে বাসায় চলে আসলো সাদাফ।বাসায় আসতে আসতে রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে ।বাসায় এসে মনে পড়লো নুরকে ফোন দেওয়ার কথা ।তাই সাথে সাথে ফোন বের করে নূরকে ফোন দিল।
দুই তিন রিং হওয়ার সাথে সাথে নূর ফোন ধরলো। সাদাফ ফোন ধরার সাথে সাথে বললো ,”আমার নুরজাহান বেগম কি করছিলেন? আমাকে মিস করছিলেন?”
নুর কিছু বলল না ।লজ্জায় চুপচাপ রইলো ।এমনিই সন্ধ্যার পর ফোনে যা বলেছে তার উপর আবার এখন এসব নির্লজ্জ মার্কা কথাবার্তা ! নূর ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে তাই কিছু বলল না।
সাদাফ বলল ,”আচ্ছা নুর তোর কোন ফুল সব থেকে পছন্দ ?”
নুর কিছু না বুঝেই বলে দিল ,”বেলী ফুল আমার সবথেকে বেশি পছন্দ।
আর গোলাপ ফুলও পছন্দ।”
সাদাফ বললো,” ঠিক আছে আমার নুরজাহান বেগম সবকিছু এরেঞ্জ করা হবে।”
নূর জানতে চাইলে কেন ফুল দিয়ে কি করবেন ?সাদাফ আর কিছু বলল না । বললো,” এমনি জেনে রাখলাম তোর কোন কোন ফুল সব থেকে বেশি প্রিয়।”
নূর জানতে চাইলো আপনার কোন ফুল প্রিয় ?
সাদাফ এক কথায় বলে দিল আমার নুরজাহান ফুল ভীষণ প্রিয়।
নুর লজ্জা পেয়ে বলল ,”আমি তো নুর ফুল না ।”সাদাফ বললো,” আমার জন্য আমার নুরজাহান বেগম ই আমার ফুল।”
নুর কোন কথা বলছে না ।সাদাফ বললো,”এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন ?কোন কথাই তো উত্তর দিতে পারছিস না ।অবশ্য লজ্জা পাওয়া ভালো তুই যত লজ্জা পাস তোর লজ্জা ভাংতে আমি ততটাই উদগ্রীব হয়ে আছি।”
নুর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে ফেললো । বললো,” চুপ করুন প্লিজ !”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।তারপর বললো,” ঠিক আছে আজকে চুপ করলাম আজকে ঘুমা বেশি করে ঘুমা।আজকে রাত টা তোর।
আগামী কাল আমার।তোকে জাগিয়ে রাখার দায়িত্ব আমার। আর তুই তো জানিস আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করব।”
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব_১২১+১২২
পরদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে নুর সহ নাস্তা করছে সবাই। বড় বাবা এবং বাবা বগুড়া যাবে কিন্তু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না ।সাদাফ জানিয়ে দিয়েছে এই নিয়ে কথা বলার কিছু নেই যা বলার সাদাফ বলবে।
হুমায়ুন রহমান খেতে খেতে তাকালেন নূরের মুখের দিকে।এখন অনেক সুস্থ লাগছে ।তিন চারদিন আগেও এতটা অসুস্থ ছিল দেখে কেউ বলতে পারবেনা।
ফজলুরের কথা গুলো মনে করতেই ভেতরটা কেঁপে উঠল হুমায়ন রহমানের ।নূরের চেহারা দিকে তাকিয়ে উনি মানতেই পারছেন না নূরের ভাগ্যটা এত খারাপ করে নিয়ে এসেছে নূর ।যদিও তাদের কিছু যায় আসে না ছেলেমেয়ে হোক বা না হোক কিন্তু নূর মানতে পারবে না ।শত হলেও মেয়ে মানুষ ।প্রত্যেকটা মেয়ে মাতৃত্বে স্বাদ পেতে চায় ।নূর ও চাইবে তাই নূরের কষ্টের কথা চিন্তা করেই হুমায়ূন রহমানের বুকটা কেঁপে ওঠে বারবার।
হঠাৎ নুর তাকাল হুমায়ূন রহমানের দিকে ।দেখলো নূরের দিকে তাকিয়ে আছে হুমায়ুন রহমান।নুর বললো,”কিছু বলবে বাবা ?”
হুমায়ূন রহমান বললেন,” না মা কিছু বলবো না তুমি খাও।”
ফজলুর রহমান জানেন হুমায়ূন রহমান কি চিন্তা করছে ?এতোদিন ধরে এই কষ্ট এ জ্বা*লা একা নিজের বুকে ধারণ করেছে ফজলুর রহমান ।এখন তার ভাগীদার হয়েছে হুমায়ূনুর রহমান ও।
এ কথাগুলো শেয়ার করতে পেরে একটু হলেও স্বস্তি পাচ্ছে ফজলুর রহমান ।আর যাই হোক কারো কাছে মনের কথা বলে একটু মনটা হালকা তো করতে পারবে ফজলুর রহমান।
নুর খুব খুশি আজকে ।সাদাফ ভাইয়ের বাড়িতে যাবে যদিও লজ্জায় একটু পরপরই ভেবে কাচুমাচু হয় মনটা তারপর ও খুশি।
ভাবতেই অবাক লাগে আজ দিন টা শুধু বাকি।রাতে থাকবে সাদাফ ভাইয়ের রুমে ।নুর এতোটুকু তো বুদ্ধিমতি হয়েছে জানে সাদাফ ভাই কিসের ইঙ্গিত দিয়েছে।
শাড়ি কাঠ গোলাপ ফুল বেলি ফুলের মালা কিনে দিবে ।নুর সবই বুঝতে পারছে বুকের ভিতর শুধু ধক ধক করছে নূরের ।কখন আসবে সেইখন নুর কি লজ্জায় ম*রে যাবে না ?কেন বুঝতে পারছে না সাদাফ ভাই ভীষণ লজ্জা লাগছে নুরের।
নরিন আফরোজ বললেন,” কি হলো নূর তুই খাচ্ছিস না কেন ঠিকমতো ?খাওয়া বেশি করে শরীরটা তো দুর্বল হয়ে যাবে এমনি তো দুইটা দিন হসপিটালে ছিলি। একটু নিজের যত্ন নে বড় হয়েছিস এখন সব সময় কি আমরা পিছে পিছে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে খাওয়াবো তোদের?
সামিহা বেগম বলে উঠলেন ,”যতটুকু জ্বালা আমাদের জ্বালিয়েছিস ততোটুকু তোর মেয়েও তোদের জ্বালাবে ।যা অভিশাপ দিয়ে দিলাম তোর মেয়ে ও তোদের খাওয়া নিয়ে এরকম জ্বালাবে। কম জ্বা*লাসনি আমাদের তুই আর তোর বাবা মিলে ।তোকে শাসন করতে গেলে তোর বাবা আমাদের বকা দেয় ।সাদাফ ও এরকম করবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল ।পরের মেয়েকে বকা খুব সোজা নিজের মেয়ে যখন বকা খাবে তখন বুঝবে।
নুরু লজ্জায় শেষ হয়ে গেল ।এমনি সারাটা দিন আজ লজ্জার দিন।
তার উপরে মা এরকম দুষ্টু মিষ্টি অ*ভিশাপ দিচ্ছে ।নুরু লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না।
সামন আর রিমা মুখ টিপে হাসছে। ভাবছে মায়ের আক্কেল নেই সবার সামনে কি কথা বলে ফেলল? নওরিন আফরোজ চোখ রাঙালেন সামিহা বেগমকে ।ছেলেমেয়েগুলি ছোট ছোট বড়দের সামনে এই কথা বলায় লজ্জা পাবে তাই।সামিহা বেগম দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বুঝালেন মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে।
সবাই খুশি হলেও হুমায়ূন রহমান এবং ফজলুর রহমান যেন হাসতে পারলেন না ।বুকের ভিতর ধক করে উঠলো এমন অভিশাপের কথা শুনে ।বারবার আল্লাহর কাছে বলতে লাগলেন আল্লাহ তুমি অভিশাপটা কবুল করে নাও।
ফজলুর রহমান চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললেন ।ওই প্রথম মনে হল আল্লাহ যেন এই অভিশাপ টা কবুল করে নেয় ।একটি দুষ্ট মেয়ে যেন নুরকে দেয় আল্লাহ তুমি অভিশাপ টা কবুল করে নাও ।মনে মনে দুই ভাই আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলেন।
দুপুরে খাওয়ার পর হুমায়ূন রহমান নিজ কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলো।উনি জানে যেতে হবে তবে এখনো ফজলুর রহমানকে জানায় নি। ঠিক এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ।ফোন রিসিভ করল কারণ ফোন দিয়েছে সাদাফ।
ফোন ধরার সাথে সাথে সাদাফ বলে উঠলো ,”আজ বিকালের দিকে টিকিট কে*টেছি যাচ্ছো তোমরা।”
হুমায়ান রহমান বললেন,”দেখ সাদাফ আমরা যাচ্ছি ।কিন্তু উল্টাপাল্টা কিছু করবি না ।নুর কিন্তু ছোট আর অসুস্থ ।ওর সময় দরকার ।আর তোকে কিন্তু বলেছি আমার অনেক জরুরী কিছু কথা আছে তোর সাথে।”
সাদাফ বললো,” উল্টাপাল্টা কিছু মানে ?কি বলতে চাচ্ছ তুমি ?আর তাছাড়া স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক বিষয় থাকে ।কেমন বাবা তুমি শ্বশুর হয়ে স্বামী স্ত্রীর মাঝখানে কথা বল কিছু তো লজ্জা কর।”
“ও এখন তুই আমাকে লজ্জা শেখাবি ?আর দিনভরা যে উল্টাপাল্টা কথা তুই আমাকে বলিস তখন ভুলে যাস আমি তোর বাবা।”প্রশ্ন করলেন হুমায়ূন রহমান।
সাদাফ হাসতে হাসতে বললো,” ছেলে মেয়ে অন্যায় করতে পারে তাই বলে তুমি কি এই বয়সে এসে এরকম ঠোঁট কা*টা কথা বলবে ?তাও নিজের ছেলেকে ?ছেলের সাথে কেউ এসব ছি মার্কা কথাবার্তা বলে?”
“ভুল হয়ে গেছে আমার ।কিন্তু কথাটা যেন মনে থাকে কোন কিছু উল্টাপাল্টা না ঠিক আছে?”বললো হুমায়ূন রহমান।
“তোমাদের কাজের জন্য পাঠাচ্ছি ।তুমি শুধু উল্টাপাল্টা কথা চিন্তা করো কেন ?তোমার মাথার মধ্যে শুধু আবোল তাবোল চিন্তাভাবনা ।মাথাটা ঠিক করো তো বাবা ।সবকিছু ভুলভাল ঠিক চিন্তা করো তুমি।
আবার আমি উত্তর দিলে বলবে ছেলে ঠোটকাটা বেশরম ।ছেলে হয়ে বাপের সাথে এসব কথাবার্তা বলি কিন্তু তুমি তো আমাকে এগুলো শিখিয়েছো।”
বিকালের দিকে ফজলুর রহমানকে সাথে নিয়ে বের হয়ে গেলেন হুমায়ূন রহমান।
যাওয়া ঠিক দশ মিনিট পরেই সাদাফ বাড়িতে আসলো নূরকে নেওয়ার জন্য ।নওরিন আফরোজ সামিহা বেগমকে আগে থেকেই বলে রেখেছিল শপিং এ নিয়ে যাবে তাই নুর আগে থেকেই রেডি ।গাড়ির হর্ন শুনেই নুর বারান্দায় এসে দাঁড়ালো ।দেখল সাদাফ ভাই এসেছে।
সাদাফ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো নুরের দিকে ।তারপরে মোবাইল বের করে ফোন দিল নুরকে ।নূর ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে সাদাফ বললো,” নুরজাহান বেগম আপনার সেলিম অপেক্ষা করছে আপনার জন্য ।তাড়াতাড়ি নামেন।”
নুর লজ্জা পেল মুচকি হাসলো ।তারপর বললো,” আসছি।”
চলবে__
হসপিটালে বসে বসে গল্পটা লিখলাম ।তাই ছোট বড় রোমান্স কেন দিলাম না এগুলো নিয়ে কেউ দয়া করে কমেন্টস করবেন না। রোমান্সের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় হুট করে রোমান্স দেওয়া যায় না।🥰🥰🥰🥰🥰
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
পর্ব_১২২
neela_rahman
নূর ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো ।নিচে ছিল নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম ।দুজনে নূরকে সুন্দর করে পরিপাটি করে রেডি করে দিয়েছে । বললো,” যা যা শপিং করার যা যা ইচ্ছে সব কিনে নিবি ।টাকার কথা চিন্তা করিস না আমার ছেলের কাছে কিন্তু টাকা আছে।”
সামিহা বেগম নুরের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন ,”আর বেশি জ্বালাবি না যা যা পছন্দ হবে কিনবি কিন্তু নকরামি করবি না ।ও যা তোকে পছন্দ করে তাই কিনবি।”
এমন সময় দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো সাদাফ ।বললো,”মেয়েকে শিখিয়ে দাও পুরো শপিংমল কিনে নিয়ে আসতে ।টাকার তো কোনো সমস্যা নেই ।ব্যাংকটা আমি পকেটে নিয়েই যাচ্ছি ।”বলেই হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকলো সাদাফ।সামনে এসে বললো,” রেডি?”
নুর হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বুঝালো রেডি ।
নওরিন আফরোজ বললো,” কিনবে না? প্রথম স্বামীর সাথে শপিং যাচ্ছে। ইচ্ছে মতো শপিং করবে আমার মেয়ে।”
সাদাফ নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বললো,”ও মেয়ে তাহলে আমি মেয়ের জামাই?”
নওরিন আফরোজ বললেন,”হে তাই।”
সাদাফ নওরিন আফরোজ এর দিকে তাকিয়ে বললো,” তাহলে যাই আম্মু দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
নওরিন আফরোজ বললো,”হ্যাঁ যাও যা যা কিনতে চায় সবকিছু কিনে দিস কেমন ?”বলেই নুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন এবার যা দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নূরকে নিয়ে নওরিন আফরোজ ও সামিয়া বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল সাদাফ।সাথে সাথে গাড়ির আধা ঘন্টা ড্রাইভ করে পৌঁছে গেল শপিংমলে।
শপিংমলে পৌঁছে প্রত্যেকটি দোকান ঘুরে ঘুরে সাদাফ দেখছে ।নুর কিছুই বলছে না ।যেন শপিং নুর না সাদাফ করবে ।নুর শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে।
সাদাফ দুইটা শাড়ী ধরলো নুরের সামনে।বললো কোনটা সুন্দর?
নুর বললো জানি না।একটা শাড়ী লাল আরেক টা রয়েল অফহোয়াইট।নুর লজ্জা পেয়ে চুপ করে আছে।
সাদাফের দুইটাই পছন্দ।তাই বললো,” দুটোই দিন।”
নুর বললো ,”কেনো দুইটি?”
সাদাফ বললো,”কেন তুই কি শুধু একদিন আসবি?তুই তো মাঝেমধ্যে আসবি।”
নুর লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেল।এই লোক খালি লজ্জা দেয় নুর কে।
সাদাফ বললো,” পারলে তো তোকে যেতে দিতাম না। সারাদিন রাত আমার চোখের সামনে রাখতাম।”
নুর লজ্জায় মাথা নত করে রইলো।সাদাফ শাড়ী দুটো নিয়ে একে একে জুতা চুরি সালওয়ার কামিজ কিনলো। হঠাৎ মনে পড়লে পেটিকোট ব্লাউজ কিনে নি।
ব্লাউজের সেকশনে দাড়িয়ে নুরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।তারপর সেলস গার্ল কে বললো ,”৩৩ সাইজের রেড এন্ড অফহোয়াইট দুটো ব্লাউজ দিন।
নুর অবাক হয়ে গেলো।নিজেকে একটু আড়াল করে মনে মনে ভাবলো ,” সাদাফ ভাই কি করে জানলো নুরের সাইজ?”
সাদাফ মুচকি হাসলো।হেসে বললো,” আমার জিনিসের খোঁজ আমি রাখবো না ভাবলি কি করে?”
নুর পারছে না লজ্জায় ম*রে যেতে।
সাদাফ নুর কে দোকানের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে বললো,” তুই একটু দাঁড়া ।আমার একটু কাজ আছে ।”
বলেই ভিতরে গেল ।গিয়ে কিছু একটা কিনে প্যাকেট হাতে নিয়ে আসলো ।নুর জানতে চাইলো কি?
সাদাফ কিছুনা বলে নুরের হাত ধরে এগিয়ে গেল ফুলের সেকশনের দিকে।
কয়েক টা কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে নুরের দুহাতের মুঠোয় নিলো॥নুরের খুব পছন্দের ফুল।
সাদাফ বললো,” আরো চাই?”
নুর বললো,” না!”
সাদাফ: বেলী ফুলের মালা দিন।”
দোকানী ফুলের মালা দিলো।
সাদাফ ফুলের মালা গুলো হাতে নিয়ে নুরকে শাড়ী চুড়ি ফুলের মালা পরিহিত অবস্থায় কল্পনা করলো।
শপিং শেষ করে রাতে ডিনারের জন্য শপিং মলের ই ফুড কর্নারে বসলো সাদাফ এবং নূর ।নূর কে জিজ্ঞেস করল কি খাবে নূর?
নুর বললো,” পিৎজা।”
সাদাফ দুটো পিৎজা অর্ডার করলো।সাখে ড্রিংকস।আর দুটো ফ্রাইড রাইস চিকেন কারি বিফ স্টেক ভেজিটেবল কারি।
ডিনার শেষ করে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে পড়লো বাড়ির উদ্দেশ্যে সাদাফ নুর।৪০ মিনিট ড্রাইভ করে পৌঁছে গেল বাড়িতে ।নূরের কেমন যেন লজ্জা করছে ।লজ্জায় হাত পা কাপাকাপি করছে নূরের ।এখন এই বাড়িতে আর কেউ থাকবে না শুধু নুর আর সাদাফ।ভাবতেই ভিতরে কেমন কলিজা কেঁপে উঠছে নূরের।
চলবে__
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৭+১৮+১৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৩+৩৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৫+১৩৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫+১৬
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৬