Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯০


#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

#neela_rahman

#পর্ব_৯০

নূরের কান্না শুনে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল সাদাফ।সাথে সাথে সোহান বলে উঠলো ,”দাঁড়া এখন ভিতরে যাবি না ।নুরকে স্বাভাবিক হতে দে ।আমি জানি কি হয়েছে এতক্ষণ সাবার সাথে আমার কথা হয়েছিল ।তোরা যা করেছিস এগুলোকে বলে বাচ্চামো।ছোট্ট একটা মেয়ে ওর সাথে এভাবে না করলেও তো পারতি। অন্য কোনভাবে বুঝাতি।

সাদাফ বিচলিত হলো।মনে মনে কেমন যেন লাগছে নূরের কান্না ওর সহ্য হচ্ছে না ।তবুও সাদাফ সোফায় বসলো ।সাবা আছে হয়তো সামলে নেবে ।সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”এতদূর পর্যন্ত বিষয়টা গড়াবে মাথা থেকে চলে গিয়েছিল ।শুধু দু একদিন ওকে একটু বলেছিলাম সাবা আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করবে ।আমি জাস্ট নূরের অনুভূতি জানতে চাচ্ছিলাম ।আমাকে নিয়ে ও কি ফিল করে বুঝতে চাচ্ছিলাম। নীলা রহমান লেখিকা

পরবর্তীতে এমন এমন ঘটনা কিছু ঘটল মাথা থেকে চলে গিয়েছে বিষয়টা ক্লিয়ার করা দরকার ।আজকে এখানে না আনলে হয়তো এটাও মাথায় আসতো না বিষয়টা যে ক্লিয়ার করা হয়নি ক্লিয়ার করা দরকার।”

সোহান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”মেয়েটার বয়স অনেক অল্প ভালোবাসি বুঝতে একটু সময় তো লাগতোই ।এত বছর ধৈর্য ধরেছিস আর না হয় কিছুদিন ধৈর্য ধরতি? তা না তোর তো আর ধৈর্য্যে কুলাচ্ছে না।”

সাদাফ সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল বাজে কথা রাখত। ধৈর্য্য কুলাচ্ছে না মানে?

নূরের জন্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করতে রাজি আছি শুধু চাচ্ছিলাম ও আসলে কি আমাকে ভালবাসে কিনা বা আমার প্রতি ওর কোন অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা জানতে।”

এরমধ্যে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো সাবা।সাবা হাসিখুশি মুখ দেখে সাবার দিকে তাকিয়ে যেন সাদাফ একটু আশ্বস্ত হলো ।নূরের কান্নাও থেমে গিয়েছে ।সাদাফ উঠে দাঁড়ালো। নুরের রুমের দিকে পা বাড়াবে ওমনি সাবা বলল ,”দুই মিনিট পরে যা নূর কান্না করেছে । ও বুঝতে পেরেছে যাই হয়েছে ওর আর আমার মধ্যে কথা হয়েছে তুই এগুলো কিছুই জানিস না ওকে এগুলো কিছুই বুঝতে দিবি না। নুরকে একটু নরমাল হতে দে দুই মিনিট পরে রুমে যাবি কেমন?

আর শোন এতদিন শুধু তোর ভালোবাসার কথা জেনে এসেছি ।মেয়েটা অনেক ছোট কিন্তু এই ছোট্ট হৃদয় তোর জন্য বিশাল ভালোবাসার অট্টালিকা গড়ে রেখেছে। তোকে ভালোবেসে সেই অট্টালিকায় একটি ছোট্ট বাগান করেছে ।যেখানে অসংখ্য ভালোবাসার কলি নুর তোকে ভালোবেসে ফুটিয়েছে ।

এখন তুই সে কলি গুলোকে যত্ন নিয়ে ফুল করে দিস।”

সাদাফ কোন কথা বলল না ।বিনিময় শুধু মুচকি হাসলো ।তারপর এক পা দু পা করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল নুরে রুমের দিকে ।দরজা হালকা চাপানো ছিল ।দরজা ধীরে ধীরে ধাক্কা দিয়ে খুলে নিঃশব্দে ভিতরে ঢুকলো সাদাফ।নূর নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল ।সাদাফের উপস্থিতি বুঝতে পেরেছে কিন্তু মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।

সাদাফ ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো নুরের পানে ।দুই হাতের আঁচলে নূরের মুখটা ধরল ।ধরে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলে দেখল সদ্যই কান্না করেছে চোখে পানি নেই কিন্তু চোখের কোনে চিক চিক করছে অস্রু কণা ঠিক তারার মত।

সাদাফের আর কোন কথা বলার ইচ্ছে হলো না। কোন কথা বলতে ইচ্ছে হলো না চুপচাপ নূরের মাথাটা নিজের বুকে রাখল ।রেখে বলল ,”শুনতে পাচ্ছিস আমার হৃদয়ের স্পন্দন ?আমার হৃদয় প্রত্যেকটি স্পন্দন শুধু তোর কথা বলে নূর ।এ হৃদয়ে কখনো কেউ ছিলনা থাকবে ও না।

যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি এটা আমার হৃদয় এটি কারো নামে স্পন্দিত হতে পারে সেদিন থেকে শুধু তোর নামে স্পন্দিত হয়েছে নূর ।আমার প্রত্যেকটা হৃদয় স্পন্দন শুধু তোর নামেই হয়েছে।

যখন তুই আমার বুকে এসেছিস আমার হৃদয়ের স্পন্দন যেন আরো বেড়ে গিয়েছে যখন তুই আমার থেকে দূরে গিয়েছিস আমার হৃদয়টা কেঁপে উঠতো।

তুই কি করে ভাবলি এই হৃদয়ে তোকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে স্থান দিয়েছি? যেদিন তুই পৃথিবীতে ভুমিষ্ট হলি প্রথম আমার হাতে আমি তোকে নিলাম সেদিন থেকে আমার হৃদয় আমার জীবন আমার সবকিছু আমি তোর নামে দিয়ে দিয়েছিলাম নূর।”

নূর আর কোন কথা বলতে পারছে না ।সাদাফের বুকে কান পেতে শুধু সাদাফের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করছে আর সাদাফের কথাগুলো শুনছে। নিঃশব্দে নুরের চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে টুপটুপ করে।

সাদাফ এক হাত দিয়ে নূরের গালে পানি গুলো মুছে দিয়ে নুরের মাথাটা তুলে নুরের দিকে তাকালো ।তাকিয়ে দুই চোখের পাতায় দুটি চুমু একে বলল ,”আর কাঁদিস না আর কত কাঁদবি ?মানুষ দেখলে কি বলবে বল ?তোকে আমি নিয়ে আসলাম তোকে একটু খুশি করার জন্য এখানে এসে তোকে এক সমুদ্র কষ্ট দিয়ে দিলাম।

এবারে মতো না হয় তোর স্বামীকে ক্ষমা করে দে ।মনে কর এটাই তোর স্বামীর প্রথম এবং শেষ ভুল ।এরপর আর কোন ভুল করবো না।”

নুর কথাটি শুনেই সাথে সাথে সাদাফকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল ।সাদাফের মরুভূমির মতো শুস্ক হৃদয় যেন এক পসলা বৃষ্টির মতো ঝড়ে শীতল করে দিল।

সাদাফ নুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

বাহিরে সাবা সোহান রনি সবাই মিলে খাবারে প্যাকেট গুলো খুলে খাবারের আয়োজন করল ।সোহান বলল ,”তাড়াতাড়ি খাবার আয়োজন কর ।সাদাফ তো বউ নিয়ে ব্যস্ত আমাদের যে ক্ষুধা লাগছে এদিকে দিনভর কাজ করলাম এদিকে তোর বন্ধুর কোন খেয়ালই নেই ।”

“চুপ করতো মেয়েটা কান্না করছে একটু সময় তো লাগবেই ।আর আমরা আছি না আমরা রেডি করে দিচ্ছি ওরা বের হলেই সাথে সাথে খেতে পারবে।”বললো সাবা।

সোহান সাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”তা তোর বিবাহিত জীবনের কি খবর ?তোর স্বামী কি দেশে আসছে নাকি এখনো বিদেশে পড়ে আছে ?”

সাবা বললো ,”এই তো আর কিছুদিন হয়তো মাঝখানেক লাগবে তারপর চলে আসবে।

তাছাড়া মায়ের শরীরটা ভালো ছিল না সবকিছু মিলিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছিলাম ।এই দু একদিন ধরে একটু সাদাফের সাথে আবার যোগাযোগ হল এখন একটু ভালো লাগছে বাইরে বের হতে পেরে তোদের সাথে দেখা করতে পেরে।”

ঠিক এমন সময় নূরের হাত ধরে রুম থেকে বের হলো সাদাফ। নূরের কেমন যেন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে ।প্রথম যখন আসলো তখন তো মন খারাপ ছিল এসব কিছু বুঝতে পারিনি কিন্তু এতক্ষন দুই জন এক রুমে ছিল তাই এখন খুব লজ্জা লাগছে কে কি ভাববে এসব ভেবে।

রনি সাথে সাথে বলে উঠলো ,”আসেন ভাবী সাব আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।শালার কি দিন আসলো হাঁটুর বয়সী এক মেয়েকে এখন ভাবি সব বলে ডাকতে হবে। সব আমাদের সাদাফের কৃপায়।”নীলা রহমান লেখিকা

নূর সাথে সাথে তাকালো সাদাফের দিকে ।তার মানে কি সবাই জানে নূরের সাথে সাদাফের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ?

সোহান বুঝতে পারল নুরের মনের কথা ।বলল ,”হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবী আমরা সবাই জানি আপনাদের যে গতকাল বিয়ে হয়েছে। আর আপনার বাবা মানে আমাদের সাদাফের শ্বশুরমশাই ওকে যে ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তার জন্যই তো এই বিশাল আয়োজন।

“এখন আসুন আপনার সিট গ্রহণ করুন আমাদের অনেক ক্ষুধা পেয়েছে ।দেবর গুলোর দিকে একটু চোখ তুলে তাকান ক্ষুধার্ত দেবর গুলো সারাদিন কাজ করেছে।” বললো রনি।

কথাগুলো শুনে লজ্জায় নুর মুচকি হাসলো ।সাদাফ তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।

“তাড়াতাড়ি এসো আমাদের আসলে অনেক ক্ষুধা লেগেছে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই বারান্দায় বসবো ।বারান্দাটা কিন্তু বিশাল বড় সেখানে বসে গানের আড্ডা করব কেমন?”বললো সাবা।

নূর ছোট্ট করে উত্তর দিল জ্বি।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যথারীতি সবাই বারান্দায় আড্ডার জন্য বসে এসে বসেছে।

সোহান গান গাইতে পারে সোহান গান গাইবে ।সাবা একটি কোকের বোতল আনতে গেল। মোটামুটি দুজনের জন্য ছোট্ট একটি ফ্রিজ কিনেছে যাতে একদিন রান্না করে দুই একদিন রেখে খেতে পারে এমন।

রনি সোহানের গিটারটা হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখছিল ।এদিকে সোহান এবং সাদাফ রুমে সিগারেট খাচ্ছিল আর কথা বলছিল।

সোহান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কিরে যাওয়ার সময় কি রুম-টুম সাজিয়ে দিয়ে যাব? না মানে যদি কিছু মিছু করার ইচ্ছা হয় । নতুন বাড়ি নতুন বউ নতুন বিয়ে সবকিছুর নতুন নতুন তাই বলছিলাম আর কি।”

“বাজে কথা রাখত ।নুর শুনতে পারবে শুনতে পেলে ভয় পেয়ে যাবে ।এসব বাজে কথা এখন বলছিস কেন?”বললো সাদাফ।

“আমি এখন বললেই দোষ ?আমাদের গ্রেট অধৈর্য্য মহৎ পুরুষ সাদাফ ১০ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে ললিপপের লোভ দেখিয়ে কবুল বলিয়েছে সেই মেয়ে আজকে ওর পুনরায় বিবাহিত বউ ।নতুন বাড়িতে এসেছে কিছু করার যে কা*মনা বা*সনা জাগবে না সেটা তো বুঝতে পারিনি। বন্ধু তুমি মহৎ তোমাকে তো বসিয়ে রেখে পা ধুয়ে পানি খাওয়া দরকার।

তা বলছিলাম যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকে তোর তো আবার ঘরে মিউজিক সিস্টেম নেই না মানে আশেপাশে তোর আশেপাশে আরো তিন চারটা ফ্লাট আছে তো বুঝতেই পারছিস বন্ধু একটু রয়ে সয়ে।তোর বউ ছোট্ট বুঝবে কম চিল্লাবে বেশি।” হেঁসে হেঁসে কথাগুলো বললো সোহান।

সাদাফ বুঝতে পারছে না কি বলবে সোহানকে তাই চুপচাপ সোহানের দিকে তাকিয়ে রইল ভ্রু দুটো কুঁচকে।

চলবে_______

Neela Rahman

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply