সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
neelarahman
পর্ব_৮৭
সাদাফ পার্কের বেঞ্চে বসেই আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ,”তুই সব সময় মিসেস সাদাফ ছিলি নুর। ৬ বছর আগে যখন আমার কোলে বসে কবুল করেছিস তখনও মিসেস সাদাফ ছিলি ।
প্রথম যখন কথা বলা শিখেছিস কত শতবার তোকে কবুল বলিয়েছি তখনও তুই মিসেস সাদাফ ছিলি ।প্রথম যখন হাঁটতে শিখেছিস তোকে কোলে নিয়ে আমি এখানে সেখানে যেতাম কত শত কিছু বায়না ধরতি দেওয়ার আগে তোকে তিনবার করে কবুল বলাতাম।তুই তখনো মিসেস সাদাফ ছিলি।শুধু তুই বুঝতে পারিস নি নুর।”
রাতটা সাদাফ সোহান নামে একটি বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে দিবে।অন্য কোন বন্ধুদের এখনো জানায়নি সোহানের সাথে বিদেশে লেখাপড়া করেছিল এবং সোহান সবকিছু জানে তাই সোহানের বাসায় থাকাটাই ভালো মনে করেছে সাদাফ । নীলা রহমান
পরদিন থেকে একটি বাড়ি ভাড়া নিবে এভাবে অন্যের বাসায় থাকাটা সাদাফে ভালো লাগে না ।সাদাফ হোটেলে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু সোহান বাধ্য করেছে সোহানের বাসায় আজ রাতটুকু আতিথেয়তা গ্রহণ করার জন্য।
সোহানদের বাসায় রাতে ডিনার শেষে ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল সোহান এবং সাদাফ ।আজকে বাসায় কেউ নেই সবাই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে এক সপ্তাহের জন্য আর তাই সাদাফ না করেনি যেহেতু বাড়ি খালি তাই থাকাই যায় ।
তবে শুধুমাত্র একদিনের জন্য ।
সোহান বলল ,”তাহলে কেমন বাড়ি খুজছিস বড় ছোট কেমন ধরনের বাড়ি খুঁজছিস?
বউ এসে মাঝেমধ্যে থাকতে পারবে এমন বাড়ি নাকি দুই বেডরুম ড্রইং ডাইনিং হলেই হবে?”
সাদাফ সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”দুই বেডরুমও বেশি হয়ে যায় বেডরুম দরকার একটা ।বাকি চার-পাঁচটা রুম থাকুক সমস্যা নেই যাতে বউ আসলে আমার বেডরুম ছাড়া অন্য কোথাও থাকতে না পারে ।”বলেই হেসে দিল সাদাফ।
“এক বউকে এই জীবনে কতবার বিয়ে করবি ?সামনেও তো বিয়ে হবে যখন সবাই মেনে নিবে তখন বিয়ে হবে ।আচ্ছা সাদাফ তুই বাড়ি থেকে বের হলি কেন ?এমন তো না যে তোর চাচার এটা একার বাড়ি ।”
সাদাফ সাথে সাথে সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,” আমার বা চাচার বলে কোনো কথা না চাচা আমার বাবার মত চাচা যখন বলেছে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে তাই বের হয়ে যাওয়াটা আমার কর্তব্য।
আমি জানি আমি অন্যায় করেছি আর আমার চাচা আমার বাবার মত তাই আমাকে শাস্তি দেওয়ার শতভাগ অধিকার ওনার আছে। নীলা রহমান
সবসময় সবকিছুতে সায়মনের আগে আমাকে প্রাধান্য দিয়েছে আমার ছোট বাবা ।তাই উনি আমাকে অধিকার নিয়ে একটি কথা বলেছে সেখানে যদি আমি বেয়াদবি করি তাহলে তো আমি ওনার ছেলে হওয়ার যোগ্য না।”
সোহান মুচকি হেসে বললো ,”বাবা খুব বাধ্য ছেলে দেখছি ।তাহলে একা একা বিয়েটা করলি কেন উনার অমতে ?উনার জন্য অপেক্ষা করতি একদিন না একদিন তো মেনেই নিতো।নুরের হাত তোর হাতে দিত সেটা তুই ও ভালো করেই জানিস।”
“হ্যাঁ জানি দিত কিন্তু আমার এটা সহ্য হচ্ছিল না নুর কেন জানবে না আমি ওর স্বামী ।ও সজ্ঞানে হোক বা অবচেতন মনেই হোক ও সব সময় জানবে আমি ওর স্বামী ।বাকি যার যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিতে পারে পুরো দুনিয়া সাথে আমি বোঝা পড়ে করে নিব কিন্তু নূর এখন থেকে আমাকে নিজের স্বামী মানবে।”
পরদিন সকালের দিকে ধানমন্ডি এরিয়ার মধ্যে সুন্দর একটি বাসা দেখে ফেলল সাদাফ এবং অটবি থেকে কিছু সিম্পল ফার্নিচার এনে লোকজন দিয়ে সাজিয়ে ফেলল ।বেলা দুপুর ২ টার কাছাকাছি।
বাসায় মোটামুটি সব বন্ধুরা সাবা সোহান আরো দু’একজন বন্ধু-বান্ধব এসে বাসা গোছগাছ করে দিচ্ছে ।সাদাফ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তৈরি হয়ে নিল ।বলল ,”তোরা সবাই বাসা গুছিয়ে রাখ আমি একটু নূরের স্কুলে যাব ।কাজ আছে আর আসার সময় তোদের সবার জন্য বিরিয়ানি নিয়ে আসবো খাওয়া-দাওয়া করে তারপর যাবি।”
অনেকক্ষণ ধরেই স্কুলের গেটে অপেক্ষা করছে সাদাফ।নুরকে জানিয়ে দিয়েছিল স্কুলে আসতে ।আজ স্কুল থেকে পিক করবে নুরকে ।যেহেতু সাদাফ অফিস যাচ্ছেনা তাই ছোট বাবা এবং বাবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে থাকতে হবে আর বাসায় অন্য কারো সমস্যা নেই ।মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সাদাফ নূরকে নিয়ে একটু বাইরে বের হবে।
নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম জানে তাই বাসা তারা মেনটেইন করতে পারবে।
দূর থেকে সাদাফ দেখতে পেল দুই পাশে দুই বেনি ঝুলিয়ে হেলে দুলে হেঁটে আসছে নূর ।হাতে একটি পাইপ আইসক্রিম ।
সাদাফ মনে মনে হাসলো বিয়ে হয়ে গেছে গতকাল মেয়েটা আজকে রাস্তায় পাইপ আইসক্রিম খেতে খেতে আসছে ।অবশ্য গরম পড়েছে অনেক এজন্যই হয়তো ঠান্ডা আইসক্রিম খেতে খেতে আসছে।
নুর গেইট পার করেই দেখতে পেল সাদাফ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । নুর দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বলল ,”আপনি কখন এসেছেন ?অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন আমার জন্য ?সরি আমি একটু আইসক্রিম খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
বলেই সাদাফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি দরজা খুলে সামনে সিটে বসে পড়লো নূর ।তারপর বলল আমরা কোথায় যাব?”
সাদাফ বললো,”চল গেলেই দেখতে পারবি ।”
নুর বলল ,”কোথায় যাচ্ছি বলেন না ?”
সাদাফ বললো ,”তোর স্বামীর বাড়ি।”
“স্বামীর বাড়ি”কথাটা শুনেই নূর লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেল ।তারপর কিছুক্ষণ পর বলল ,”আপনি বাড়ি কিনেছেন ?”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”বাড়ি কিনবো কেন ?ভাড়া নিয়েছি ।তোর কি সারা জীবন বাইরে থাকার ইচ্ছা নাকি? তোর বাবা যদি জানত তোর মত মেয়ে সারা জীবন স্বামী নিয়ে বাইরে থাকতে চায় আলাদা ,তাহলে আমাকে বের না করে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিত।”
কথাটা শুনে নূরের মন খারাপ হয়ে গেল ।সাদাফ ভাইকে যে ফজলুর রহমান বের করে দিয়েছে তা নূর শুনেছে ।জানে তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইল ।
সাদাফ বুঝতে পারল নূরের মন খারাপ হয়েছে তাই নূরের মন ভালো করার জন্য বলল ,”আচ্ছা চল বাসায় চল বাসায় গিয়ে কি কি করব সেটা চিন্তা কর।
স্বামীর বাড়িতে আজকে প্রথম যাচ্ছিস ।বিবাহিত জীবনের প্রথম দিন ।কিভাবে সংসার করবি ভেবে দেখেছিস?”
চলবে________
Neela Rahman।
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭+৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৭+২৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৫+৩৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯+১০