নিষিদ্ধ_চাহনা
পর্ব_২০
লেখিকাসারাচৌধুরী
🚫অনুমতি বাদে কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ🚫
পিহু রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেই ঠাশ করে। গলা থেকে উড়না খুলে ছুড়ে মারে অদুরে।দরজায় ঠেশ দিয়ে বসে পড়ে বড্ড ক্লান্ত সে এখন এই জীবন নিয়ে।আর কতো।আর কত মার খাবে ওই মানুষটার কাছে সে।সামনে পেলেই মারছে।আজ সকাল থেকে মেরেই চলেছে মেরেই চলেছে।
পিহুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। কিছু ভালো লাগছে না তার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার চিন্তা।মন মতো ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে।লাল লাল চোখ গুলো আরো লাল হচ্ছে।শরীরে শক্তি পাচ্ছে না সে।ওয়াশরুমের দরজা থেকে গায়ের জোরে তোয়ালে টা ছুড়ে দিলে বিছানার দিকে তবে রাগ মিশ্রিত অবস্থা ছুড়ার কারনে নিচ দিয়ে না গিয়ে উপর দিয়ে গিয়েছে সাথে সাথে ফ্যানের পাখায় বেধে যায়।
পিহু সেদিকে তাকিয়ে এই দু:খের মাঝেও একটু হাসে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে। মনের মধ্যে কি চলছে নিজেও বুজতে পারে না।শরীর মন দুটোই একটু শান্তি চাচ্ছে আজ।পিহু নিজের পড়ার টেবিল এর পাশ থেকে চেয়ার নিয়্যে সেটা বিছানার উপর দাড় করায়।তারপর সে চেয়ারে উঠে পড়ে। তারপর ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকা তোয়ালের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে..
-“আল্লাহ মাফ করে দিও..!
পুলিশ সব ঘটনা শুনে থানাই চলে গেছে।নাবিল বিছানায় সুয়ে আছে।একটু পর জেরিন এলো দেখতে। তবে নাবিল কে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।জেরিন বেশ কিছুক্ষন নাবিলের পাশে বসে রইলো দৃষ্টি করুন।এদিকে সেই সকাল থেকে পিহুর ফোন অফ।কথা বলতে বলতে কেটে গেলো আর ঢুকলোই না।
নাবিলের মা এখোনো কেদে চলেছে একাধারে।এক মাত্র ছেলেটার এমন শত্রু কোথা থেকে হলো যারা প্রানে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে।নাবিলের ভুল কি।জেরিন ও চুপচাপ ভেবে চলেছে তার ভাইয়ের তো কারোর সাথে খারাপ সম্পর্ক নেই তাহলে কারা এই নতুন শত্রু। এমন মারা মেরেছে যে হাটার ক্ষমতা বন্ধ করে দেছে কয়েক মাসের জন্য।
জেরিন বেরিয়ে আসে হসপিটাল থেকে বেশ কিছুক্ষন থেকে।নাবিল ভাইয়ের কথা জানানো প্রয়োজন পিহুকে।মেয়েটা নিশ্চয় চিন্তায় আছে। না থাক বলবো না এমনিতে নাবিল এর এমন অবস্থা শুনলে আবার পিহুর চিন্তা বেড়ে যাবে কি সন্দেহ।তার চেয়ে না বলাই ভালো ফাও ফাও এখন চিন্তা দিয়ে লাভ নেই।যখন নিজে থেকে বলবে তখন না হয় বলা যাবে।
জেরিন রিকশা ডেকে নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে পড়ে।রিকশা চলতে শুরু করে।জেরিন ও তার কাধে থাকা কলেজ ব্যাগটা কোলে রাখে।আজ আর পড়া হলোনা বৃষ্টির কারনে। তার উপর সার বাড়ি নেই।নাবিল ভাইয়ের এই অবস্থা।পিহু কল ধরছে না।
রিকশা কিছুদূর যেতেই বিশাল বড় একটা জ্যাম এ আটকে যায়।জেরিন সব সময় এই জ্যাম ভয় করে।ঢাকা শহরের যানজট মানে তা আর ছাড়াবার নয়।একবার বাধলে।জেরিন অধৈর্য হয়ে নিজের ব্যাগের উপরের চেন খুলে নিজের স্মার্ট ফোনটা বের করে। আবার ঢুকিয়ে দেই টাইম দেখে।এখানে মোবাইল চালানো রিস্ক।জ্যাম এর আশে পাশে অনেক চোর ছাচড়া থাকে মোবাইল দেখলেই ছিনতাই করে নেই।আর জেরিন মেয়ে মানুষ ধরতে পারবে না।
জেরিন মোবাইল টা ব্যাগে ভরে রাখতে কোথা থেকে একটা ছয়-সাত বছর বয়সি দুরন্ত বাচ্চা দৌড়ে এসে জেরিনের হাতে একটা চিঠি গুজে দিয়ে আবার দৌড় লাগালো জেরিন কিছু বলার আগেই বাচ্চাটি বলে উঠে..
-“ভাই দিয়েছে..!!
জেরিন বুজলো না কি ভাই কার ভাই দিয়েছে।চিঠি টা ফেলে দিতে চাইলো তবে কি মনে করে যেনো ফেললো না।বাচ্চাটিকে দেখে মনে হলো পথ শিশু,,গায়ে ময়লা জামা,, হয়তো কেও টাকার বিনিময়ে চিঠিটা তার কাছে পাঠিয়েছে যেহেতু চিঠিটা সুন্দর করে খামে ভরা।খামের উপরে ছোট্ট করে লেখা..
-“প্রেরক জেরির টম..!!
লেখা টুকু পড়ে কৌতুহল হলো জেরিনের মনে,, সাথে হাসিও লাগলো বেশ।জেরিন রাস্তার জ্যাম এর দিকে একবার তাকালো তার পর আবার হাতে থাকা চিঠির উপরে।রাস্তায় এখোনো বেশ যানজট।কখন ছাড়বে জানা নেই জেরিনের যত দূর চোখ যাচ্ছে জ্যাম আর জ্যাম।জেরিন বিরক্ত ভিষন বিরক্ত আগে জানলে জিবনেও আসতো না হসপিটালে দেখা করতে।আর এসে এই যানযটের ঝামেলা।
জেরিন চিঠি টা খুললো যেহেতু এখানে মোবাইল চালানো রিস্ক তাই চিঠি পড়েও টাইম পাচ করা যাবে।আকাশ এখনও মেঘলা।চিঠি টা খুললো খাম থেকে বের করতেই করতেই সাদা রঙের একটা চিঠি বেরিয়ে এলো।জেরিন খাম টা ব্যাগ এ ভরে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো…
প্রিয় লিটল জেরি….
প্রথমেই তোমাকেই বর্ষার স্নিগ্ধ সকালের এক গুচ্ছ কদম ফুলের সুভেচ্ছা।আমি জানি কদম ফুল তোমার অনেক পছন্দের।তোমাকে লিটল জেরি বলেছি বলে রাগ করিও না।করলেও সমস্যা নেই। তোমার রাগী ছোট ছোট চোখ আমার কাছে বেশ ভালোই লাগে।যখন তুমি রেগে যাও তোমার নাকের পাটা ফুলে যায় তুমি কি যানো।হয়তো জানো হয়তো না।তোমারে আমি পুরো সাত মাস লক্ষ করেছি।তুমার খুব আশে পাশে থেকে।জানি এই কথাটা শুনে অবাক হয়েছো। তবে হ্যা আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলি।তবে প্রথমে ভাবতাম তুমি অন্য কারোর পরে দেখি না।তখন থেকেই রোজ তোমাকে ফলো করা আমার শখ হয়ে দাড়িয়েছে। আমি চাইলেও এই শখ বাদ দিতে পারবো না।আচ্ছা তুমি জানো আমি তোমাকে জেরি কেন বলি।কারন আমি হলাম তোমার টম আর তুমি আমার জেরি। আমাদের খুনশুটি হবে কোনো একদিন।তোমার নামের সাথে জেরি শব্দটা বেশ মানান সয়।যানো যেমন সুর্য ছাড়া চাদের আলো নেই।নোবিতার ডোরিমন এর মতো আর বেস্ট ফ্রেন্ড নেই।ঠিক তেমন ই আমার তুমি ছাড়া গতি নেই।এই টম তার জেরিকে সব সময় লুকিয়ে দেখে যাবে।তবে একটা সিক্রেট জানোতো তুমি আমাকে খুব ভালো করেই চিনো তবে..
বাকি টুকু তোলা থাক প্রিয়তমা..অন্য কোনো একদিন বলে দিবো।এটা আমার প্রথম লেখা চিঠি।মানিয়ে নিও।শুনো চিঠি যদি অসম্পুর্ন না রাখি তুমি আমাকে মনে রাখবা কিভাবে।
ইতি…
প্রনয় পুরুষ টম..!
চিঠিটা পড়ে জেরিনের ঠোঁটে হাসি খেলে গেলো খুব কাচা হাতে চিঠি লিখেছে দেখেই বোজা যাচ্ছে।তবে চিঠি টা আর একটু বড় হলে কি হতো জেরিনের যেনো আরো একটু পড়তে ইচ্ছা করছে।আচ্ছা এর পরে সে কি লিখতো।এমন ভাবে অসম্পুর্ন রাখলে মনের মধ্যে কেমন লাগে।জেরিনের মন এর মধ্যে খচ খচ করছে চিঠিটা ভাজ করে খামের ভিতরে পুরে ব্যাগ এ ঢুকিয়ে দিলো।জ্যাম ছাড়তে শুরু করেছে।
রিকশা চলতে শুরু করলো তবে জেরিনের কোতুহল কমলো না।আচ্ছা ছেলেটা কে।আমি তাকে কিভাবে চিনি।আচ্ছা সে কি আমার বাড়ি ও চেনে।ধুর ছাই কি ভাবছি সে আমাকে ফলো করে তাহলে বাড়ি চেনাটা সাভাবিক।জেরিনের মাথায় ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তা ঢুকে গেলো। সারা রাস্তা জেরিন ছেলেটাকে সেটা ভাবতে ভাবতেই এসেছে।
সাদি ও সাদ থেকে নেমে আসে।তার এর মধে হাচি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে।নাক হয়তো লাল হয়ে গেছে।নিজের চোখ সাদি নিজেই বুজতে পারছে যে লাল হয়েছে যে কারনে চোখ জালা করছে।সাদি সাদের গেট লাগিয়ে দিয়ে ভেজা অবস্থায় নামতে থাকে সিড়ি বেয়ে।মনে মনে আফসোস হচ্ছে মেয়েটাকে এমন মারার জন্য। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই যে একবার না হয় মাফ চাইবে।
সাদি দূর থেকেই দেখতে পাই পিহুর ঘরের দরজা বন্ধ৷ সাদি বেশ বিরক্ত হয়।মেয়েটা নি:শ্চয় এখন দরজা লাগিয়ে মরা কান্না জুড়েছে।করুক কান্না এমনিতেই মন ঠিক হয়ে যাবে। সাদি বিড়বিড় করতে করতে পিহুর ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো।পিহুর রুম পার হলেই সাদির রুম।দুজনের দরজার মাঝখানে খুব বেশি দুরুত্ব নেই।সাদি পিহুর দরজার কাছে আসতেই ভিতর থেকে জোরে চেয়ার পড়ার শব্দ পেলো।
সাদি কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো বুজার চেষ্টা করলো কিছু।হুস আসতেই সাদি দৌড়ে পিহুর দরজার সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর সাথে জোরে জোরে ডাকা শুরু করলো।সাদি উন্মাদ এর মতো দরজায় লাথি দেওয়া শুরু করলো। সাদির মনে পড়তে থাকলো পিহুর বলা কথা গুলো বিশেষ করে পিহু সাদিকে বলেছিলো..
-“আমি আপনার চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়ার পর যেনো আপনাকে আফসোস করতে না হয়।
সাদি তখন হেসে পিহুকে বলেছিলো রাগের মাথায়..
-“তুই যাতো তোর জন্য আফসোস জিবনে মনেও পড়বে না আমার।
সাদির এমন চিল্লানো শুনে নিচ তলা থেকে আতিয়া বেগম ছুটে এসেছেন কিছু বলার আগেই তিনি খেয়াল করলো পিহুর দরজা বন্ধ সাদি ভেজা শরীর নিয়ে দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে সাথে। আতিয়া ব্বেগমের বুজতে বাকি রইলো না কিছু। ইলিয়াস চৌধুরী সিড়ি অব্দি এসে থেমে রয়েছেন।আর আসতে লারছেন না তিনি।
সাদি আতিয়া বেগম কে দূরে সরিয়ে গায়ের জোর দিয়ে দরজায় লাথি মারতেই দরজার ছিটকানি ভেঙে গেলো।আতিয়া বেগমের আগে সাদি ছুটে রুমে প্রবেশ করলো।সাথে সাথে সাদির পা থমকে যায়।দুজনের চক্ষু স্থির হয়ে গেলো।সাদি ভাঙা গলাই জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো….
-“পিহুউউউউউউউউ…
চলবে….
-(কেও বাজে মন্তব্য করবেন না।গল্পের শেষ অব্দি না পড়ে। এক পর্ব পড়ে বাজে কমেন্ট করবেন না।আজকের পর্ব কেমন হয়েছে বলে জাও আশা করি ভালো লাগবে)-
Share On:
TAGS: নিষিদ্ধ চাহনা, সারা চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ৬
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৮
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ২৩
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১২
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১১
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৪
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ২২
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ৪
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১৩