bhooter golpo

ভর দুপুর বেলা(এক বাস্তব ধর্মীয় অভিজ্ঞতার গল্প)


ভর দুপুর বেলা

(এক বাস্তব ধর্মীয় অভিজ্ঞতার গল্প)

ঘটনাটা শুনেছিলাম আমার দাদার মুখে। তিনি নিজেও বলেছিলেন—
“এই ঘটনা আমি কসম করে বলছি… গল্প নয়, আমি নিজ চোখে দেখেছি।”

সময়টা ছিল ১৯৮৩ সালের এক শ্রাবণের দিন।
মাঠে ধান কাটা চলছিল। আকাশ ছিল মেঘলা, তবে বৃষ্টি হয়নি।
দাদার বয়স তখন বিশের কোঠায়। তিনি আর তার দুই বন্ধু মিলে পাশের গ্রাম “পটাশপুর”-এ গিয়েছিলো এক আত্মীয়ের বাড়ি। ফেরার পথে তাদের পড়লো দুপুর—ভর দুপুর বেলা, প্রায় ১টা ৪০।

সবাই বলতো, এই সময়টা নাকি ভয়ের।
জ্বীন-ভূতের চলাচল বাড়ে, আর যাদের ভাগ্যে থাকে, শুধু তারাই দেখে।
তবে তিন বন্ধু তা পাত্তা দেয়নি।

রোদটা অদ্ভুত ছিল। গা-জ্বালানো নয়, বরং হালকা হিমশীতল। বাতাস ছিল না এক ফোঁটাও।
পথে একটা পুরনো শ্মশান ঘাট পড়ে—যেখানে আগে এক সময় হিন্দু-মুসলিম উভয়েই দাহ-কবর করতো।

দাদা বলেন,

“যখন আমরা শ্মশান পার হচ্ছিলাম, একটা খুব সুন্দর গানের সুর ভেসে এলো।
এক নারীকণ্ঠ… যেন কেউ খুব বিষাদময় একটা গান গাইছে।”

তিনজন থমকে দাঁড়াল। গলার দিক ধরে শ্মশানের একটা কোণায় গিয়ে দেখে,
একজন মহিলা শাড়ি পরে বসে আছে।
পিঠের দিকে বসে, মাথা নিচু, চুল মাটিতে ছড়িয়ে আছে।
আরো কাছ থেকে দেখল—তার শরীর আধা ভেজা, আর সাদা শাড়ির নিচে কাঁধটা কাঁপছে, যেন কাঁদছে।

তারা ভাবল, কেউ মারা গেছে—আত্মীয় হতেই পারে।

দাদা একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“আপনি ঠিক আছেন?”

কিন্তু মহিলা তখনও মাথা না তোলে, শুধু ধীরে ধীরে মাথা নাড়ে।
তারপর হঠাৎ, খুব শান্ত গলায় বলে—
“তিনজন আসছে… কিন্তু ফিরবে কয়জন?”

এই কথা শুনেই তিনজন স্তব্ধ!
এক বন্ধু তখন বলে—”চল দাদা, কিছু গণ্ডগোল আছে।”

তারা ঘুরে দাঁড়াতেই দাদার পেছনে থাকা বন্ধুটি হঠাৎ জোরে চেঁচিয়ে ওঠে—
“ওরে… পা নাই! ওর পা উলটো!”

দাদা ঘুরে তাকাতেই দেখে, সেই মহিলা তখন উঠে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু তার পা উলটো, হাঁটছে কিন্তু মুখ এই দিকেই।
চোখে নেই কোনো সাদা, শুধু কালো গহ্বর।
আর তার ঠোঁটে এক টানা, ঠান্ডা হাসি।

তারা দৌড়ে পালায়—কিন্তু পালাতে গিয়ে যে বন্ধু চিৎকার করেছিল, সে হঠাৎ পড়ে যায়।

বাকি দুজন কোনো মতে বাড়ি ফেরে।

পরের দিন সেই বন্ধুকে পাওয়া যায় এক কাকতাড়ুয়ার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায়।
জ্ঞান ফিরতে তিনদিন সময় লেগেছিল।

সে আজও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না।

আর দাদা?
তিনি আজীবন দুপুরবেলা বাইরে বেরোতেন না।
বলতেন,
“ভর দুপুর বেলা রোদ যেমন নিস্তব্ধ হয়… তেমন কিছু কিছু আত্মা থাকে, যারা আলোয় লুকিয়ে থাকে।”

আজও শ্মশান ঘাটের পাশ দিয়ে কেউ দুপুরে যায় না।
গান শোনা গেলে… কেউ আর তাকায় না।
কারণ সবাই জানে—ওটা মানুষের গান না।

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply