bhooter golpo

গোবিন্দ মন্ডল


✍️ গোবিন্দ মন্ডল

রাত তখন প্রায় পৌনে বারোটা। চারপাশটা নিস্তব্ধ, শুধু জঙ্গলের ভেতর থেকে মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে শিয়ালের হাহাকার। পুরুলিয়ার এক পাহাড়ঘেরা গ্রামের শেষপ্রান্তে একটি পুরনো পোড়োবাড়ি। বহু বছর ধরে সেটি খালি পড়ে আছে।

লোকমুখে শোনা যায়, সেই বাড়ির ভেতর এক সময় নিয়মিত তন্ত্রযজ্ঞ হত।

কিন্তু সেসব তো অনেক পুরোনো কাহিনি।

তবু এই বাড়িতে আবার লোক এসেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র অনির্বাণ, তার গবেষণার জন্য আদিবাসী সংস্কৃতি ও লোকবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এখানে উঠে এসেছে কিছুদিনের জন্য।

প্রথম দুই দিন শান্তিতে কাটল। তৃতীয় দিন রাতেই শুরু হলো অদ্ভুত সব ঘটনা।

রাত দশটার দিকে সে বাইরে বসে কেরোসিন ল্যাম্পের আলোয় পুরোনো নথিপত্র পড়ছিল। হঠাৎ শুনল—

কেউ যেন সিঁড়ি দিয়ে নামছে ধীরে ধীরে।

কিন্তু বাড়িটা তো একতলাতেই!

সে থমকে গেল।

হঠাৎই বাতাস থেমে গেল। ঝিঁঝিঁর ডাক বন্ধ। সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল।

তারপর একটাই শব্দ—

“সিদ্ধি… সিদ্ধি চাই…”

শব্দটা ভেসে এল বাড়ির ভিতর থেকে।

কাঁপতে কাঁপতে অনির্বাণ উঠে দাঁড়াল। হাতে টর্চ।

দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়েই তার চোখ ছানাবড়া—

ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা আগুন জ্বলছে।

চারপাশে কালো ছায়ামূর্তি—মাথায় খোঁপা, গলায় রুদ্রাক্ষ, চোখে আগুন।

তারা যজ্ঞ করছে!

আলপনায় লাল রঙে আঁকা এক অচেনা দেবীর প্রতিমা—দাঁত বার করা, জিহ্বা বের করা, আর চতুর্ভুজী।

আর তার চোখের সামনেই, আগুনের পাশে বসে আছে—

তারই মতো দেখতে আরেকটা “অনির্বাণ”!

অনির্বাণ আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল—

“কে আছো? কে ওটা?”

চোখের নিমেষে আগুন নিভে গেল।

সব মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

পরদিন সকালে গ্রামের মোড়ল এল।

বৃদ্ধ লোকটা একদৃষ্টে অনির্বাণকে দেখেই বলল—

“তুমি কাল রাতে ওদের জাগিয়েছো।

ওরা এখন তোমাকেই চায়।

তোমার শরীর, তোমার আত্মা।

কারণ তুমি সেই পূর্বজ—যার শেষ যজ্ঞ অসম্পূর্ণ ছিল।”

অনির্বাণ কিছু বলার আগেই লোকটা এক মোটা ঝোলার ভিতর থেকে বার করল এক ছেঁড়া তালপাতার পুঁথি।

তাতে আঁকা— একই মুখ,

একই চোখ,

একই অনির্বাণ,

কিন্তু কালীপূজার যজ্ঞমণ্ডপে আগুনের পেছনে দাঁড়িয়ে!

রাত বাড়তেই আবার সেই সিঁড়ির শব্দ…

এইবার অনির্বাণ নিজেই ঢুকল ঘরের ভিতর।

আগুনটা আবার জ্বলছে।

তার জায়গা ঠিক মাঝখানে রাখা—

একটা মানুষের মাথা।

আর মাথাটা তাকিয়ে আছে তার দিকেই।

ভয় পেয়ে সে ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইলে দরজা বন্ধ!

ঘরজুড়ে প্রতিধ্বনি হতে থাকল—

“তুই-ই অনির্বাণ! তুই-ই আমাদের যজ্ঞের বলি!”

সেই রাতের পর থেকে আর কেউ অনির্বাণকে দেখেনি।

শুধু পূর্ণিমার রাতে গ্রামের শেষপ্রান্তে পোড়োবাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসে—

যজ্ঞের ধোঁয়া, ঢাকের শব্দ, আর একটা মানুষের চিৎকার।

“আমি বলি হতে চাই না… আমি বলি হতে চাই না!”

—-গল্পটা‌ কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন ।

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply