Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি (সারপ্রাইজ পর্ব শেষাংশ)


#আড়ালে_তুমি (সারপ্রাইজ পর্ব শেষাংশ)

#_সাইদা_মুন

সকাল থেকে চৌধুরী বাড়িতে যেন উৎসবের আমেজ। কারণ আজ দুই মেয়ের জামাই আসবে। বাড়ির দুই পুত্রবধূ সকাল থেকেই ব্যস্ত রান্নার আয়োজনে। মেঘকে বারবার কড়া ভাষায় বলে দিয়েছে রুদ্র “বেশি কাজকাম করো না, ভাড়ি কাজ তো একদমই না।” কিন্তু কে শোনে কার কথা। একের পর এক প্রিয় রান্না তৈরি হচ্ছে, জামাইদের আপ্যায়নে যেন কোনো ত্রুটি না থাকে।

মেঘ সেই থেকে একটানা হেসেই চলেছে। তার এ হাসি সুমনার চোখে যেন বাড়তি খোঁচা। গাল ফুলিয়ে তরকারি নাড়তে নাড়তে সে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সুমনার সেই “পেঁচার মতো মুখ” দেখে মেঘ আর সামলাতে না পেরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল,

-“বলেছিলাম ফু দিয়ে খা, তা না, গরমটাই মুখে নিলি। জিহবা কার পুড়েছে?”

সুমনা ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তর দিল,

-“হুহ, আমার মুখ পুড়েছে আর তুই হাসছিস। আসলেই ঝা-রা শয়তান হয়, হিংসুটে হয়। আমার খাওয়া দেখে তুই হাসছিস।”

কিছুক্ষণ আগেই তরকারির ঘ্রাণে লোভ সামলাতে না পেরে সুমনা তড়িঘড়ি করে গরম তরকারিই মুখে তুলে নেয়। ফলস্বরূপ মুখ পুড়ে যায়। আর সেই দৃশ্য দেখে মেঘের হাসি। তবে এটাও সুমনার নতুন কিছু নয়। প্রায়ই রান্না করতে করতে না দেখে, না ফুঁ দিয়ে গরম খাবার মুখে তুলে ফেলে। প্রতিবারই মুখ পুড়ে যায়, আর মেঘ বারবার সাবধান করে। যাই হোক, তাদের দুই ঝা-য়ের সংসার এভাবেই চলছে, খুনসুটি আর হাসিঠাট্টার ভেতর দিয়ে। বেশ মিলেমিশে কাটিয়ে দিচ্ছে। 

দুপুর ১২টার মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যায় দুই মেয়ে আর তাদের জামাই। সবাই মিলে ওয়েলকাম করে নেয় অতিথিদের। পিহু-সামিয়া একে অপরের মুখের দিকে তাকায় কয়েক পলক। দু’বোনের চোখের ভাষা একই। কই ছিলো এ বাড়ির মেয়ে, আর এখন মেহমান হয়ে আসতে হয়। মেঘ আর সুমনা তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, আর বাকিরা মেয়ে-জামাইদের নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। এর কিছুক্ষণেএ মধ্যেই রুদ্ররাও এসে পড়ে। আজ বিশেষ করে পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্যই কাজ ফেলে এসেছে তারা।

সকলের কোলাহলের মাঝেই হঠাৎ রুদ্র গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে দাঁড়াল। 

-“বাড়িতে নতুন মেহমান আসতে চলেছে।”

কথাটা বলতেই সবাই চুপ হয়ে যায়, কৌতূহলী দৃষ্টি একসাথে ছুটে আসে রুদ্রর দিকে।

-“কে আসবেরে, রুদ্র?”

মায়ের প্রশ্নে রুদ্র একবার মেঘের দিকে তাকায়। মেঘ তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। পিহু, সাদ, সামিয়া, তাহমিদ একে একে সবাই প্রশ্নের ঝড় তুলতে থাকে। রুদ্র তাদের কৌতূহলকে থামিয়ে মৃদু হাসিতে বলল,

-“এ বাড়ি মাতিয়ে রাখতে আসবে কেউ একজন।”

মুহূর্তেই ঘরে নেমে আসে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, সকলের চোখের চাহনি অবাক। রুদ্র উঠে মিষ্টির বক্স এনে দাদি আর এরশাদুল চৌধুরীর সামনে ধরল,

-“বুড়ি, তোমার নাতির ঘরে পুতি আসতে চলেছে। আব্বু, তুমি দাদা হতে যাচ্ছো।”

কয়েক সেকেন্ড যেন সময় থমকে দাঁড়াল। সবাই অবাক হয়ে যায়, বুঝে ওঠে না কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। পরপরই পিহুরা চিৎকার করে লাফিয়ে ওঠে খুশিতে। মেঘকে ঘিরে ধরে চারপাশ মাতিয়ে তোলে তারা। তাহমিদ, সাদ, পিহু যেন পারলে এখনই মেঘকে মাথায় তুলে নাচে। ফুফু-চাচা হওয়ার আনন্দে কেউ জায়গায় স্থির থাকতে পারছে না।

সিদ্দিকা বেগমের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। তিনি দাদি হবেন, সঙ্গে সঙ্গে নিজের গলার স্বর্নের চেইন খুলে মেঘের গলায় পড়িয়ে দেয়। তার পুরো মুখ জুড়ে আদরে ভড়িয়ে দেন তিনি। এমনকি তখনই কড়া গলায় ঘোষণা করে বসেন,

-“আজকের পর থেকে তোমার রান্নাঘরে ঢোকা নিষেধ।”

তাহেরা বেগমও একই সুরে সায় দিলেন। অন্যদিকে পিহুরা তো আর থেমে নেই, বাচ্চার নাম রাখা থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের সব প্ল্যান ঠিক করা শুরু করে দিয়েছে। যেন এখনই বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

এরশাদুল চৌধুরী আনন্দে উদ্বেল হয়ে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মিষ্টি বিলাতে বেরিয়ে গেলেন। চৌধুরি পরিবারের প্রথম বংশধর আসতে চলেছে বলে কথা। ভাই-বোন, মা-বাবা সবার চোখেমুখে তখন এক অপার উল্লাস। এই আনন্দ-উন্মাদনার ভিড়ে দাঁড়িয়ে রুদ্র এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। হয়তো সেই নিঃশ্বাসে মিশে ছিল স্বস্তি, তৃপ্তি আর অদ্ভুত এক দায়িত্ববোধের ছোঁয়া।

–––

৭ বছর পর

-“আম্মু, বনু কাদে, আম্মুউউউউ!”

বলতে বলতে অধৈর্য হয়ে ছয় বছরের ছোট্ট শেহরোজ চৌধুরী রুদ্রান নিজেই তার এক মাস বয়সি ছোট বোনটাকে কোলে তুলে নেয়। কাঁপতে থাকা ক্ষুদ্র হাতদুটো দিয়ে বোনকে সাবধানে আগলে রাখে, তারপর আস্তে আস্তে কোলে দোলায় ছোট্ট রোদেলাকে।

-“না না, বনু, ডোন্ট ক্রাই। এই তো ভাইয়া আছি। তোমাল ভাইয়া আছে তো, স্টপ ক্রাইয়িং, স্টপ। ভাইয়া থাকতে কেউ কিছুও করতে পারবে না।”

অদ্ভুতভাবে তার কণ্ঠেই থেমে যায় ছোট্ট রোদেলার কান্না। ছোট ছোট চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে ভাইয়ের দিকে। দৃশ্যটা দেখে শেহরোজের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে খুশিতে। বোনের গালে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে সে বলে ওঠে,

-“দ্যাটস মাই গুড বনু। ম্যাম বলেছে, যারা কথা শোনে তারা গুড হয়। তুমিও আমার কথা শুনবে, ওকে?”

এক মাসের শিশু হয়তো পুরোটা বোঝে না, কিন্তু ভাইয়ের কথায় অকারণেই হেসে ওঠে। আর বোনের হাসিতে শেহরোজ ও হেসে উঠল। তাদের সেই হাসি যেন ভাইবোনের বন্ধনকে এক অদ্ভুত মায়ায় বেঁধে ফেলে। দরজায় দাঁড়িয়ে মেঘ আর রুদ্র চুপচাপ উপভোগ করছে এ দৃশ্য। ছেলের ডাকে ছুটে এসেছিল মেঘ, কিন্তু রুদ্র হাত ধরে আটকে দেয়। মুহূর্তটা এতটাই অনন্য যে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে ভিডিও করতে ভুল করেনি সে।

রুদ্রের মনে পড়ে যায় শৈশবের দিন। সেও তো ঠিক এভাবেই আগলে রাখত নিজের বোনকে। হঠাৎই বোনের কথা মনে পড়তেই ভিডিওটা পিহুর কাছে পাঠিয়ে দেয়।

–––

পিহু নিশ্চুপ বসে ছিল। হঠাৎ নোটিফিকেশনে ভেসে ওঠে রুদ্রের পাঠানো ভিডিও। সাথে একটি মেসেজ,

“ঠিক যেনো ছোট্ট রুদ্র আর পিহু।”

প্লে করতেই চোখ ভিজে ওঠে তার। ভিডিওর দৃশ্য যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবে। চোখের সামনে ভাসতে থাকে তাদের ভাই-বোনের ছোট থেকে বড় হওয়ার মুহুর্তগুলো। ভাইয়ের আগলে থাকা ছোট্ট পিহু আজ সংসার, স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। সময় কত দ্রুত পেরিয়ে যায়, ভাবতেই অবাক লাগে।

-“আম্মুউ, কাদছো কেনো? কি হয়েছে? তোমাকে কেউ কিছু বলেছে? একবার খালি বলো, আমি গিয়ে ওকে মেলে আসবো। এত সাহস আমার আম্মুকে কাদায়।”

ছেলের সরল উক্তিতে পিহুর ভাবনায় ভাঙন ধরে। চোখ মুছে ফাজানকে টেনে কোলে বসায়,

-“এসব বলে না, ফাজান। মারামারি খুব খারাপ কাজ।”

-“কিন্তু আম্মু, তোমাকে কেউ কষ্ট দিলে আমি মারবো।”

ছেলের দৃঢ় কণ্ঠে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে। রাগ ঠিক বাপের মতোই পেয়েছে। হালকা হেসে গালে চুমু খায়,

-“আম্মুকে কেউ কষ্ট দেয়নি। দেখো, রোদেলা ভাইয়ার সাথে কতো খেলা করছে।”

ভিডিও দেখতেই ফাজান হঠাৎ আবদার করে বসে,

-“আম্মু, আমালও একটা বনু লাগবে।”

ঠিক তখনই ফারহান ঘরে ঢোকে। মা-ছেলেকে একসাথে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে। ছেলেকে কোলে তুলে পিহুর পাশে বসে গম্ভীর গলায় বলল,

-“তোমাকে না কতোবার বলেছি, এই অবস্থায় ফাজানকে কোলে নেবে না।”

কিন্তু ফাজান তার আবদার বাবার কাছেও চালিয়ে যায়,

-“আব্বু, আমারও একটা বনু লাগবে।”

ছেলের কথায় হেসে ফারহান উত্তর দেয়,

-“আর কটা দিন ওয়েট করো বাবা, তোমার ছোট্ট বোন আসতে যাচ্ছে আমাদের মাঝে।”

বাবার কথায় ফাজান আনন্দে লাফিয়ে ওঠে,

-“ইয়েএএ, আমারও বনু আসবে। আমিও কোলে নেবো। ইয়ে ইয়ে…”

ছেলের উচ্ছ্বাস দেখে পিহু-ফারহানও হেসে ওঠে। সব সুখ তো এখানেই, ছেলের হাসিতেই। 

-“এবার জলদি রেডি হও। নানুর ওখানেও তো যাবো, তোমার মেঝো মামার বাবু আসবে আজকে।”

-“ইয়েএ… খালি বাবু আর বাবু।”

ছেলের সরল মন্তব্যে পিহু-ফারহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে জুড়েই হেসে উঠে। 

–––

-“বললাম শাড়ি পড়তে হবে না।”

মিষ্টি আঁচল গুছাতে গুছাতে হেসে উত্তর দিল,

-“এহ, তাই বললেই হয় নাকি। শাড়ি ছাড়া বউ বউ ফিল আসে না।”

রিক এগিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। যত্ন করে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বলল,

-“এই অবস্থায় শাড়ি না পড়লেও চলে। একটু এদিক-সেদিক হলেই তো বিপদ।”

-“উহু, এতো ভেবো না তো। কিছু হবেনা। তুমি তো আছোই, আমাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবে নাকি?”

রিক উঠে দাঁড়িয়ে মিষ্টির গাল টেনে বলল,

-“তা তো আছিই, তবু ভয় হয় যে।”

মিষ্টি মৃদু হেসে রিকের গলা জড়িয়ে বলল,

-“ও কিছু হবে না মশাই। দেখবে, আমাদেরও রোদেলার মতো একটা মেয়ে হবে।”

রিক হেসে জিজ্ঞেস করল,

-“তোমার এতো মেয়ের শখ?”

-“হুমম, তবে ছেলে হলেও আলহামদুলিল্লাহ।”

রিক হেসে বলল,

-“আল্লাহ যেনো আমার মিষ্টি বউয়ের সব আশা পূর্ণ করেন, আমিন। এবার চলো…”

–––

সামির আর সাফাত মন খারাপ করে বসে আছে। তাদের মুখের মলিনতা দেখে শেহরোজ এগিয়ে আসে। দুই ভাইকে জড়িয়ে ধরে ছোট্ট কণ্ঠে সাহস জোগায়,

-“চিন্তা করিস না। আব্বু বলেছে তোদের একটা বনু আসবে। মেঝো আম্মুও সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।”

পাঁচ বছরের শেজওয়ান চৌধুরী সামির আর তিন বছরের মারিস চৌধুরী সাফাতকে শেহরোজের এভাবে আগলে রাখা যেনো ঠিক রুদ্রের প্রতিচ্ছবি। পাশেই বসা এরশাদুল চৌধুরী আর এনামুল চৌধুরী বিস্ময়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছেন। রুদ্রের ছেলে দেখতে যেমন বাবার মতো, তেমনি বুদ্ধি আর দায়িত্বেও হুবহু তার ছায়া। কেমন ঢাল হয়ে দাঁড়ায় ভাইদের জন্যে। 

তখনই তামান্নার ডাক পড়ে,

-“দ্রুত চলে আসো তো বাবারা। খেতে হবে নাকি।”

ছোট চাচির ডাক পেয়ে শেহরোজ ভাইদের নিয়ে দৌড়ে যায় টেবিলের দিকে। তারা বসতেই তামান্না একে একে খাবার তুলে দেয়, যত্ন করে খাইয়েও দেয়। চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ মানে তাহমিদের একমাত্র স্ত্রী তামান্না শেখ। ভীষণ প্রাণবন্ত আর মিশুক স্বভাবের। বড় ঝা-দের অনুপস্থিতিতে সে-ই চেষ্টা করে সব আগলে রাখার।

–––

সাদ ভয়ার্ত মন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে। অল্প কিছুক্ষন আগেই সুমনাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঠিক তখনই রুদ্র এসে উপস্থিত হয়। ভাইকে এমন মনমরা দেখে কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় বলল,

-“চিন্তা করিস না, দোয়া কর শুধু।”

পাশ থেকে রাহুল আর সাফা এগিয়ে আসে। রাহুল ঠাট্টার সুরে বলল,

-“আমি একটা নিয়েই আর আগ বাড়াচ্ছি না, আর তুই কি কাণ্ড করছিস বাপ। একের পর এক ডাউনলোড দিয়েই যাচ্ছিস। দুই ছেলে, এখন আবার…”

সাফা সঙ্গে সঙ্গেই হালকা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল,

-“চুপ করো তো, কিসব আজেবাজে বকছো। ছেলে সাথে ভুলে গেছো?”

তাদের কথার মাঝেই রুদ্র হেসে এগিয়ে এসে ছয় বছর বয়সি রাদিফকে কোলে তুলে নিল। রাদিফ ও খুশি মনে রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে। এর মাঝে সাদ রাহুলকে পিঞ্চ মেরে বলল,

-“বড় ভাইয়ের থেকে ছোট ভাইয়ের জুড় বেশি হলে তো জ্বলবেই।”

সাদের কথায় রাহুল কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। সাফা চোখ কুঁচকে থাকে এই লাগামহীন কথোপকথন শুনে। বিরক্ত হয়ে চলে যায় তাহেরা বেগম আর সিদ্দিকা বেগমদের দিকে। এরা একসাথে থাকলেই যা তা বলে মুখের কোনো লেহাজ নেই। সেখানে গিয়ে দেখে সুমনার মাও বসে আছেন। তাদের সাথে টুকটাক গল্পগুজবে মেতে ওঠে সে।

এমন সময় রাফান এসে হাজির হলো। তার কোলে সাফিনকে দেখে সাদ এগিয়ে গিয়ে আদর করে ভাগনেকে কোলে নিল।

রুদ্র আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে বলল,

-“সাবা কোথায়?”

রাফান উত্তর দিল,

-“সাবা গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। মা-মেয়েকে ও বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।”

-“ভালো করেছিস।”

কথার মধ্যে রিকও হাজির হলো মিষ্টিকে নিয়ে। বান্ধুবির বাবু হবে বলে কথা, সে না এলে চলে? মিষ্টিকে দেখে সাফা ছুটে গিয়ে তাকে বসতে দিল,

-“এ অবস্থায় আসতে গেলে কেনো।”

মিষ্টি মুচকি হেসে বলল,

-“সবাই একত্র হবে আমি না আসলে যে এই মজা মিস করে ফেলবো।”

সাফাও হেসে উঠে তার সাথে। কিছুক্ষণ পর ফারহানও চলে আসে। পিহুর ডেলিভারির তারিখ ঘনিয়ে আসায় তাকে চৌধুরি বাড়িতেই রেখে এসেছে, যদিও পিহু জেদ করেছিল এখানে আসতে। ফারহানকে দেখে রুদ্র এগিয়ে যায় পিঞ্চ মেরে বলল,

-“কিরে লেটলতিফ, আমার ভাগনে কই?”

ফারহান চোখ ছোট করে বলল,

-“আগে গেলে বাঘে খায়…”

রুদ্র হো হো করে হেসে উঠল, ভাব নিয়ে বলল,

-“ছেলেও তোর কয়েক মাস আগে জন্ম দিছি, মেয়েও। আবার আমিও তোর থেকে তিন দিনের বড়। এবার মানতে শিখ, আব্বা কেডা।”

ফারহান রুদ্রের পিঠে চাপড় মেরে বলল,

-“মুখটা বন্ধ রাখ শা*লা, নয়তো আরও আব্বা ডাক শোনার আগে বংশের বাতি নিবাই দিবো।”

রিক মাঝে বলে উঠল,

-“সে যাই বলেন, দুলাভাই’স রিয়েল আব্বা কিন্তু আমার সাদ দুলুলু। ভবিষ্যতে ক্রিকেট টিম নিয়ে বাংলাদেশ মাঠে নামবে। প্রথম বিশ্বকাপ সাদ ভাইয়ের ঘর থেকেই আসবে।”

মুহুর্তেই, রিকের কথায় একেকজন হেসে উঠে। এদিকে বেচারা সাদ কড়া চোখে তাকিয়ে রিকের দিকে। তার লুক কিছুটা এমন “তোকে খালি একবার হাতে পাই”। হাসি-ঠাট্টা, আর কিছুটা ভয়ের মাঝেই সবাই অপেক্ষা করছে চৌধুরী বংশের নতুন অতিথির জন্য। করিডোর ভরা শুধু তাদের আত্মীয়-স্বজনের মুখে।

অবশেষে আধা ঘণ্টার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। ভেসে এল ছোট্ট শিশুর কান্না। মুহূর্তেই সবার মুখে ফুটে উঠল আনন্দের হাসি। সাদের চোখ টলমল করছে অশ্রুতে। ঠিক তখনই এক নার্স সাদা তোয়ালে জড়িয়ে ফুটফুটে এক বাচ্চা নিয়ে এসে বলল,

-“মেয়ে হয়েছে।”

শুনেই সবাই একসাথে বলে উঠল, আলহামদুলিল্লাহ। তাহেরা বেগম এগিয়ে গিয়ে নিজের নাতনিকে প্রথম কোলে নিলেন। আদরে ভরা চোখে বললেন,

-“সাদের মতো হয়েছে।”

সাদ মুগ্ধ চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে, পরমুহূর্তেই ডাক্তারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,

-“আমার ওয়াইফ কেমন আছে?”

ডাক্তার হেসে উত্তর দিলেন,

-“চিন্তার কিছু নেই, একদম ঠিক আছেন।”

এরপর সবাই নতুন অতিথিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। যেহেতু নরমাল ডেলিভারি হয়েছে, সেদিনই মা-মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো। চৌধুরী পরিবারে আরও এক নতুন পরীর আগমনে আনন্দের হাওয়া যেনো আরও দীর্ঘ হলো।

তাহমিদ ভাতিজিকে কোলে নিয়ে বসে আছে অনেকক্ষণ, একবার তকে আদর করছে তো একবার রোদেলাকে আদর করছে। বেশ কিছুক্ষন তাদের সাথ্র সময় কাটিয়ে শেষে সাদের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে নিজ ঘরে চলে যায়।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাহমিদ। আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই চোখ ভিজে উঠল তার। তামান্না বারান্দায় এসে পাশে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে যায়। তাহমিদের তার চোখে পানি।

চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,

-“কি হয়েছে তোমার? ঠিক আছো?”

তাহমিদ নিজেকে সামলে হেসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

-“সখ ছিল আমারও একটা মেয়ে হবে। মেয়েকে আর বুড়িকে একরকম সাজাবো। কিন্তু বুড়িটা সেই অব্দি অপেক্ষা করলো না। কোনোরকমে আমার বিয়েটা খেয়ে ফাঁকি দিয়ে যে চলে গেল, আজ দুই বছর হতে চললো। আমার সখ পূরণ হওয়ার আগেই চলে গেলো।”

তামান্না তার কাঁধে হাত রেখে আলতো করে বলল,

-“এভাবে বলো না। সবাইকেই মরতে হবে একদিন না একদিন। শুধু দোয়া করো দাদির জন্য।”

–––

মেঘ পিহুদের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে, সবেমাত্র ঘরে এসেছে। লাইট নিভানো দেখে, মোবাইলে তাকাতেই চোখে পড়ে রাতের বারোটা। মহিলাসমাজের আড্ডা কি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তার উপর এখন সকলের সংসারের গল্পসল্প একটু তো সময় লাগবেই।

নিজে নিজেই হেসে এগিয়ে যায়, রুমের লাইট অন করতে। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই থেমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের টর্চ অন করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অপরূপ সুন্দর দৃশ্য। মেঘ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে বিছানার দিকে। সেভাবেই ঠিক কতোক্ষন সে তাকিয়ে ছিলো নিজেও জানেনা, দৃশ্যটাই এমন যে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে।

রুদ্র এক হাতে পরম যত্নে মেয়েকে আগলে রেখেছে, তার বুকের উপর ছোট্ট রোদেলা আরামে ঘুমাচ্ছে। অন্য হাতের বাহুতে শেহরোজ, দুই হাতে বাবাকে আঁকড়ে ধরে, গভীর নিদ্রায় সে স্বপ্নিল ঘুমে নিযুক্ত। হয়তো রুদ্রেরও চোখ লেগে এসেছে, ছেলে-মেয়েকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজের শরীরও বিশ্রাম পেতে শুরু করেছে। মেঘের চোখ বেয়ে অজান্তেই এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে তার সব সুখ যেনো এক জায়গায় মিলিত হয়ে, কত সুন্দর একটি দৃশ্য গড়ে তুলেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে ছবি তুলে নেয়, স্মৃতির পাতায় এই মনোমুগ্ধকর মুহুর্তটিও ঝুলিয়ে রাখতে।

তাদের আর ডিস্টার্ব না করে, ধীর পায়ে বারান্দায় চলে যায় মেঘ। আজকের আকাশও ভীষণ পরিস্কার, চাঁদটি স্পষ্ট। আকাশের পানে তাকিয়ে বুক ফুলিয়ে আনন্দের সহিত মেঘ বলে উঠল,

-“আব্বু দেখো তোমার মেয়ে কত্তো সুখে আছে। এখন আর তোমার কাছে দুঃখ বলতে আসতে হয় না, সুখ বলতে আসি।”

–––

দেখতে দেখতে চোখের নিমিষেই কেটে গেল আরও ছয়টি বছর। সময় নদীর স্রোতের মতো গড়িয়ে যাচ্ছে। কোনো থামা থামির নাম নেই। 

সকাল ৮টা,

চৌধুরী বাড়ির ডাইনিং টেবিলে বসে নাতনিদের নিয়ে গল্পে মগ্ন এরশাদুল চৌধুরী ও এনামুল চৌধুরী। আজ বাড়ির সবচেয়ে ছোট দুই সদস্যের প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিন। সেই নিয়ে হাজারো প্রশ্নে দাদাদের কানে ঝড় তুলছে তারা।

-“দাভাই মানুষ স্কুলে কেনো যায়..?”

রোদেলার কৌতূহলী প্রশ্নে এরশাদুল চৌধুরী হেসে বললেন,

-“স্কুলে যায় পড়াশোনা করতে।”

উনার উত্তর শুনে পাশ থেকে আরেকজন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

-“তো পড়াশোনা করে কি হয়?”

সেহেরের জিজ্ঞাসায় দাদা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,

-“পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে।”

কথাটা শুনে সেহের খানিক ভেবে হঠাৎ বলে উঠল,

-“কিন্তু আমরা তো পড়াশোনা না করেও পাপার গাড়িতে চলি”

নাতির সরল যুক্তিতে দাদারা দু’জনেই থমকে গিয়ে একে অপরের দিকে তাকালেন, তারপর মুহূর্তেই হাসিতে ভেঙে পড়লেন। তাদের হাসির শব্দে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকা তাহেরা আর সিদ্দিকা বেগম ব্রু কুচকে বললেন,

-“আমাদের রেখে কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে শুনি?”

ওদিকে মেঘ আর সুমনা রান্নাঘর থেকে নাশতা এনে টেবিলে রাখছিল। মেঘ এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে হেসে বলল,

-“ওদের আজগুবি কথা শুনেই। মা, আপনারা বসে পড়ুন। আমি ওদের খাইয়ে দিচ্ছি, স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে।”

মেঘের কথা শুনে সেহের ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

-“আমরাই শুধু স্কুলে যাবো? তাতান যাবেনা?”

তামান্না ছেলেকে ফিডার খাওয়াতে খাওয়াতে এসে বসল, 

-“তিহান এখন অনেক ছোট একটু বড় হলেই তোমাদের সাথে সেও যাবে।”

তা শুনে সেহের ফের প্রশ্ন করল,

-“আর শার্ক ভাইয়া যাবেনা..?”

মেঘ কিছু বলার আগেই চেয়ারে বসতে বসতে কেউ গম্ভীর স্বরে বলল,

-“তোকে কতবার বলেছি আমার নাম শেহরোজ। শেহরোজ চৌধুরী রুদ্রান। শার্ক আবার কি স্টুপিড।”

শেহরোজের কথায় সাফাত পাশ থেকে বলল,

-“হ্যাঁ ভাইয়া, এই বনুটা না নামের বারোটা বাজিয়ে দেয়।”

ভাইয়ের কথায় সেহের নাক ফুলিয়ে তাকাল। রোদেলা খিলখিল করে হাসতে লাগল, তাতে সেহেরের রাগ যেন আরও বেড়ে গেল। দুই হাত গুটিয়ে গাল ফুলিয়ে বলল,

-“যাও, আমি খাবো না। সবার সাথে আড়ি।”

বোনের অভিমানি মুখ দেখে সামির তার পাশে বসতে বসতে আদুরে সুরে গাল টেনে বলল,

-“আমার বনুকে কে কি বলেছে?”

সেহের ঠোঁট উল্টে বিচার দিয়ে উঠল,

-“দেখো না ভাইয়া, সাফুর বাচ্চা আমাকে বকেছে।”

সামির মিথ্যা হুঙ্কার দিল,

-“এই সাফাত, আমার বোনকে বকবার সাহস কে দিলো তোকে? আজকে তোকে দিবো ইচ্ছে মতো।”

ভাইয়ের কথায় ছোট্ট সেহেরের গালে ফুটে উঠল অমায়িক হাসি। এভাবেই ভাইবোনদের খুনসুটিতে ভরে গেল সকালের নাশতার টেবিল। এরমধ্যেই সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করল। রুদ্র দুই মেয়েকে নিয়ে বের হল স্কুলের উদ্দেশ্যে, সঙ্গে সুমনাও যাবে। প্রথম দিন, স্কুলে যদি কান্নাকাটি করে সেই চিন্তায় এসেছে। একেবারে ছুটি অব্দি তাদের সাথেই থাকবে।

–––

রুদ্র ছেলের স্কুলে হাজির। অফিস রুম থেকে বেড়িয়ে রাগে টেনে শেহরোজকে নিয়ে বের হচ্ছে স্কুল থেকে। 

-“এসব কি শেহরোজ? তুমি তাকে মারলে কেনো?”

শেহরোজ গম্ভীর গলায় উত্তর দিল,

-“বিকজ হি ডিজার্ভড ইট, আব্বু।”

ছেলের এই কঠিন স্বভাব দেখে রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শান্ত হয়ে বলল,

-“তাই বলে একদম মেডিকেল পাঠাবি?”

শেহরোজের চোখ লাল হয়ে উঠল। গর্জে উঠল,

-“আব্বু, ও আমার বনুকে টাচ করবে বলেছে। তার এতো সাহস।”

রুদ্র ছেলেকে গাড়িতে বসিয়ে ঠোঁটের কোণে জমে থাকা রক্ত পরিষ্কার করতে করতে বলল,

-“টাচ তো করেনি। এতো এগ্রেসিভ না হতে কতবার বলেছি তোমাকে। মারার বদলে প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিতে পারতে।”

শেহরোজ ফুঁসে উঠল,

-“আমি কিছু জানিনা। কেউ আমার জিনিসের দিকে চোখ তুললে তার চোখ উপড়ে ফেলতেও আমি পিছপা হবো না। বিকজ আমি আমার জিনিস হেফাজত করতে জানি।”

রুদ্র থম মেরে গেল। এই ছেলেটা তার থেকেও তিনগুণ জেদি হয়েছে। আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। পথে হঠাৎ শেহরোজ গলার স্বর চেঞ্জ করে, মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

-“আম্মুকে ম্যানেজ করবে কিভাবে?”

রুদ্র ছেলের দিকে একবার তাকিয়ে নির্লিপ্ত স্বরে বলল,

-“তুমি কাজ ঘটিয়েছো, তুমিই জানো। তোমাদের মা-ছেলের মাঝে আমি নেই।”

শেহরোজ দুষ্টু হাসল,

-“ওকে দ্যান আমিও আম্মুকে বলবো, তুমি যে ফারহান চাচ্চু আর রাহুল চাচ্চুর সাথে বসে সেদিন সিগারেট খেয়েছিলে।”

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গাড়ি থামাল,

-“কিইই, তুমি দেখলে কিভাবে?”

-“যেমনেই হোক, দেখেছি। এখন ডিল করো, তুমি আমাকে বাঁচাবে, আমিও তোমাকে বাঁচাবো।”

রুদ্র ছেলের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল,

-“ওকে ডিল ফাইনাল।”

বাসায় ঢুকতেই তাদের স্বাগত জানাল মেঘ, খুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে, চোখে রাগের ছাপ। মাকে রেগে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রের পেছনে লুকিয়ে পড়ে শেহরোজ। রুদ্র ও মিয়িয়ে যায়, ছেলের সাথে যে স্বামীকেও ছাড়বে না, সেটা ভালো করেই জানে।

মেঘ রেগে বলে উঠল,

-“আসুন আসুন গুণধর বাপ-বেটা। ছেলেকে শাসন না করে করে মাথায় তুলেছেন না? এখন…”

মেঘ রেগে আর কিছু বলতে যাবে এর আগেই, বাপ-ছেলে হাতের পেছন থেকে একে একে গোলাপ আর আইসক্রিম বের করে মেঘের সামনে ধরল। দুজনের মুখে একইসাথে টেডি-স্মাইল। তাদের এহেন কান্ডে মেঘ থেমে যায়। আস্তে আস্তে যেনো রাগ গলতে শুরু করল মেঘের। আনমনেই মুখে হাসি ফুটে উঠল, সুযোগ বুঝে শেহরোজও গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল,

-“আ’ম সরি আম্মু, আর এমন হবেনা।”

রুদ্রও তাড়াতাড়ি বলল,

-“হ্যাঁ হ্যাঁ, ভুল করেছে। এবারের মতো মাফ করে দাও বউ।”

সুমনা রান্নাঘর থেকে তাদের কথা শুনছিলো হাসিমুখে বলল,

-“বাদ দে না মেঘ, ছেলেটা মাত্রই স্কুল থেকে ফিরল।”

মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুল-আইসক্রিম নিয়ে ভেতরে চলে গেল। যেতে যেতে বলে গেল,

-“আর একবার যদি এমন হয়, ছেলের সাথে বাপকেও কানে ধরে দাঁড় করাবো। এখন চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে যেনো বসে দুজন। “

মেঘের মুখে হাসি লেগেই আছে, বাপ ছেলে যে ফন্দি এটে এসেছে সে ভালো করেই জানে।

–––

শেহরোজ সবে গোসল সেরে রুমে ঢুকেছে। হঠাৎ তিন বিচ্চু এসে হাজির হয়, রোদেলা, সেহের আর সাফাত।

রোদেলা উত্তেজিত স্বরে বলল,

-“ভাইয়ু, সেহের এখন গান পারে। তোমাকে শোনাবে।”

সাফাতও লাফিয়ে উঠল,

-“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া, বনু অনেক সুন্দর গান শিখেছে। শুরু কর বনু।”

সঙ্গে সঙ্গে সেহের ভাবসহ চিরুনি হাতে মাইক বানিয়ে গেয়ে উঠল,

-“হামকো তুমসে পিয়ার হ্যায়এএএ…”

রোদেলা আর সাফাত সঙ্গে চিল্লিয়ে উঠল,

-“টুরুরু রু রু রু রুউউউ…”

আবার সেহের চেঁচিয়ে গাইল,

-“জিয়া বেকারার হ্যায়এএএএ…”

আবারও তারা,

-“টুরুরু রুরু রুরুউউউ…”

এবার সেহের ডান হাত উঁচিয়ে গান ধরল,

-“এইইই আজা মেরি বুলবুল…”

রোদেলারা বাকি সুর দিতে যাবে তার আগেই শেহরোজ রাম ধমক দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে তিনজনেই থরথর করে কেঁপে উঠল। সেহের ভয়ে দৌড়ে গিয়ে সাফাতের পিছে লুকাল।

-“স্টুপিডের দল, গান গাচ্ছিস না শব্দদূষণ করছিস। যা, এক্ষুনি বের হো আমার রুম থেকে। গো…..”

শোনামাত্রই সবাই ভয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেল। তবে সেহের আবার ফিরে এসে দরজা ফাঁক করে হালকা উঁকি দিয়ে বলল,

-“শের ভাইয়া.., আমি তো এখন গান গাইতে পারি, তোমার ওই গিতালটা চালাতে দিবে না?”

শেহরোজ আবার ধমক দিতেই সে এক দৌড়ে উধাও।

–––

-“এইইইইই”

-“এইইইই..”

-“সম্মান দিয়ে কথা বল, আমি তোর দুই মাসের বড়।”

-“সর, তুই কোন ক্ষেতের মুলা, তোকে সম্মান দিবো?”

-“তোর নানার ক্ষেতের।”

-“এইই যা হাটটট…”

-“তুই যা ফুটটট…”

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শেহরোজ আর ফাজান। ছোট থেকেই যেন এদের একে অপরের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। তবে বাইরের কেউ তাদের মাঝে কিছু বলতে আসলে মুহূর্তেই জুট বেঁধে যায়।

-“এই এই কি হচ্ছে কি…”

রুদ্র এগিয়ে এসে শেহরোজকে সরায়, ফারহানও পেছন থেকে দ্রুত এসে ছেলে টেনে নেয়। একজন দরজা দিয়ে বেড়োতে যাচ্ছিলো আর একজন ঢুকতে যাচ্ছিলো, ব্যাস এতেই লেগে গেছে। রুদ্র-ফারহান একে অপরের দিকে তাকাতেই, পেছন থেকে পিহু প্রিতিকে নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে মেকি রাগে বলল,

-“তোমাদের থেকেই শিখেছে। একজন আরেকজনের সাথে সতিনের মতো লেগে থাকতে। তো ছেলেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে নাকি?”

এর মাঝে সেহের আর রোদেলা দৌড়ে গিয়ে প্রিতির গলায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে সবাই জড়ো হল ড্রয়িংরুমে। এরই মধ্যে সামিয়াও তার ছেলে-মেয়ে নিয়ে উপস্থিত হয়। আজ তাহমিদের ছেলের দুই বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ছোট্ট আয়োজনে সবাই একত্রিত হয়েছে। একদিকে বড়দের আড্ডা, অন্যদিকে ছোটদের হৈ-হুল্লোড়ে জমে উঠল চৌধুরী মেনশন।

                                (সমাপ্ত)

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply