Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৬


সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

পর্ব_৫৬

neela_rahman

অফিসে সাদাফের কেবিনে বসে আছে হুমায়ূন রহমান ।কিছু ফাইল রেখে গিয়েছিল যেগুলো হুমায়ূন রহমান দেখে সাইন করার কথা ঠিক সেই মুহূর্তে ক্যাবিনের ভিতরে প্রবেশ করল ফজলুর রহমান।

ছোট ভাইকে দেখে মুখ তুলে একবার তাকালেন ।তারপর বললেন ,”কিরে কিছু বলবি ?”

ফজলুর রহমান সামনে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন ।তারপর বললেন ,”কিছু জরুরী কথা ছিল।”

হুমায়ূন রহমান ছোট ভাইকে ভালো করে চিনেন ।যদি অফিসিয়াল কোন বিষয় হতো তাহলে এরকম আমতা আমতা করত না ।হয়তো পারিবারিক বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পরিবারের বাইরে তাই ফাইল টা বন্ধ করে তাকালেন ছোট ভাইয়ের দিকে।

ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন চেহারায় যেন চিন্তার ভাঁজ পরে গিয়েছে ।চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতজাগা হচ্ছে ঘুম হচ্ছে না ঠিকমতো ।হুমায়ুন রহমান ভালো করে অবজার্ভ করলেন ছোট ভাইকে ।তারপর বললেন ,”ঘুমাচ্ছিস না মনে হয় ।কি হয়েছে বল আমাকে।”নীলা রহমান লেখিকা

ফজলুর রহমান বড় ভাইয়ের দিকে মুখ তুলে তাকালেন ।তারপর টেবিলে দুটো হাত রেখে বললেন ,”সাদাফ এর ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”

হুমায়ূন রহমান চুপ রইলেন ।সহসায় চেয়ে রইলেন ছোট ভাইয়ের দিকে ।ফজলুর রহমান আমতা আমতা করে বড় ভাইয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন ,”আপনি সেদিন কেন বলেছিলেন ভাইজান সাদাফ যদি নূরকে চায় তখন আমি কি করব? এই কথার মানে কি ভাইজান ?ছোটবেলা যখন সাদাফ নুরকে চেয়েছিল আমি ওর কোলে তুলে দিয়ে বলেছিলাম ,”হ্যাঁ নুর আজকে থেকে ওর ।তখন ও কি হিসেবে চেয়েছিলো আমি জানিনা ।আমি তো বোন হিসেবে ওকে দিয়ে দিয়েছিলাম ওর পুতুল হিসেবে ওর খেলার সাথী হিসেবে ।কিন্তু বড় হয়ে সাদাফ আসলে কি হিসেবে চাইবে নুরকে?

সাদাফ কি নুরকে পছন্দ করে ?ভালবাসে?”

হুমায়ূন রহমান মুচকি হাসলেন ।হুমায়ূন রহমান ভালো করে জানেন ছোট ভাই চিন্তিত।সেদিনে পর থেকে গত দুদিন ধরেই ফজলুরকে অবজার্ভ করছে দেখেছে ওর চিন্তিত চেহারা ।ও কিছু একটা নিয়ে ভাবছে খুব ভাবছে এবং সে ভাবনাটা যে নূর ও সাদাফ কে নিয়ে সেটি বুঝতে এক চুল পরিমাণ ভুল হয়নি হুমায়ূন রহমানের।

ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,”তোর মনে আছে যেদিন সাদাফের জন্ম হয়েছিল ?তুই কোলে নিয়ে কি বলেছিলি ?ভাইয়া আপনি ওকে জন্ম দিয়েছেন কিন্তু ও কিন্তু সব সময় আমার ছেলে থাকবে ।সেদিন আমিও বলেছিলাম যে সাদাফ আজ থেকে তোর সন্তান ।

নিশ্চয় এটাও মনে আছে সাইমন তো তোর সন্তান অনেক পরে হয়েছে জীবনে প্রথম বাবা ডাক তুই আমার সাদাফের মুখ থেকে শুনেছিস ।সেই হিসেবে তোর বা আমার প্রথম সন্তান হিসেবে আমার বংশের বড় সন্তান হিসেবে কিন্তু সাদাফ।

আমি এও জানি আমি আমার সাদাফকে যতটা ভালবাসি তুই তার চেয়ে একচুল পরিমাণ কম বাসিস না ।যেমন টা আমি নুরকে ভালবাসি ।তুই জন্ম দিলেও নুর কিন্তু আমার মেয়ে।

আমি রিমা এবং নুরের মধ্যে কখনো কোন পার্থক্য করিনি বললে ভুল হবে পার্থক্য করেছি ।যে কোন কিছু যেকোনো আবদার আগে আমি নূরের টা পালন করেছি ।তারপর রিমার ।রিমা খুশি খুশি মেনে নিয়েছে ওকে ছোট বোন হিসেবে ।আমার প্রথম প্রায়োরিটি হিসেবে।

তাহলে সাদাফ যদি তোর প্রথম সন্তানের মত হয়ে থাকে তুই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবি তোর কাছে কিছু আবদার করলে তুই ওকে না করতে পারবি?”হুমায়ন রহমান একটু থামলেন থেমে আবারো বলতে শুরু করলেন

“নুরকে কেন ?আমি জানি আমার ভাই কে আমি চিনি ।ও তোর কাছে তোর জান টা চাইলেও তুই বিনা দ্বিধায় দিয়ে দিবি ।তারপরও তুই জিজ্ঞেস করেছিস একটি প্রশ্ন করেছিস তার উত্তর আমি দিব তবে আমি মুখ ফুটে উত্তর দিব না ।তোকে একটা চাবি দিব সেই চাবিটা দিয়ে এই ড্রয়ার টা খুলবি খুলে তোর উত্তর তুই নিজেই খুঁজে নিবি।

আমার ছেলে চাবিটা খুব যত্ন করে এক জায়গায় গুছিয়ে রাখে।ও ভাবে হয়তো কেউ জানে না কিন্তু আমি ওর বাবা ওর প্রত্যেকটা রগে রগে আমি ওকে চিনি ।ও যতটুকু যত্ন করে চাবিটা আগলে রেখেছে ভিতরে কি আছে দেখলে তুই বুঝে যাবি তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।”

বলেই সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালেন ।দাড়িয়ে আলমারির একটি ড্রয়ার খুলে সে ড্রয়ার থেকে একটি বক্স বের করলেন ।বক্সের ভিতর থেকে একটা চাবি বের করে সেই চাবিটা ফজলুর রহমানের হাতে দিয়ে বললেন ,”ওর টেবিলের ড্রয়ারটা খোল।”

ফজলুর রহমান হাতে চাবিটা নিলেন ।চাবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন সত্যি হয়তো আজ সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে তাই চাবি নিয়ে এগিয়ে গেলেন ড্রয়ারের সামনে।

এদিকে দুপুরে রান্নার আয়োজন করছে নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম ।নওরিন আফরোজের আজ মনটা ভীষণ খুশি ।গতকাল রাতে হুমায়ুল রহমানের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন ।সংসারে চাপে আসলে স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনকে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না তবে গতকাল উনার কি হয়েছিল কে জানে অনেকক্ষণ কথা বলেছে ।পুরনো স্মৃতি মনে করে হেসেছে দুজন। নীলা রহমান

নওরিন আফরোজ এর মুখটা খুশি খুশি দেখে সামিহা বেগম পাশে দাঁড়িয়ে বললেন ,”ভাবিকে আজকে খুশি খুশি লাগছে কি ব্যাপার?

হঠাৎ এত খুশি খুশি কারণটা কি শুনি?”

নৌরিন আফরোজ সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”না রে তেমন কিছু না ।সংসারে চাপে আমরা তো স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের সাথে সাংসারিক কথা ছাড়া যেন কথা বলে ভুলে গিয়েছিলাম ।কাল অনেকক্ষণ দুজন কথা বললাম নিজেদের পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করলাম এই তো।”

সামিহা বেগম আহ্লাদে গদ গদ হয়ে বললেন ,”ও তাই এই কথা ?কিছুদিন পরে দাদী হবে মনে রাখবেন। এখনই যা রোমান্স করার করে নিন ।পরে যখন ছেলের ঘরে নাতি নাতনী আসবে পরে আর কোন রোমান্স করতে পারবেন না

দিনভরা তাদের পেছনেই দৌড়াতে হবে।”

বলেই হেসে ফেলল সামিহা বেগম ।নওরিন আফরোজ সামিহার দিকে তাকিয়ে বললেন ,”ও আচ্ছা তা আমি দাদী হবো আর আপনি বুঝি আরামে থাকবেন ?ভুলে যায়েন না আমার ছেলের ঘরে নাতি পুতি আপনার মেয়েকে দিয়েই আসবে।”

কথাটি বলেই দুই জা একত্রে হেসে ফেলল ।তারপর সামিহা বেগম নওরিন আফরোজ কে জড়িয়ে ধরে বললেন ,”ঠিক বলেছ ভাবি ।আসলে আমি চিন্তাই করতে পারি না আমাদের নূর এক সময় মা হবে আমাদের সাদাফ বাবা হবে ।আমরা এই অল্প বয়সে বুড়ো বুড়ি হয়ে গেলাম তাই না?”

রাত বাজে ১১ টা ।সায়মন একটু রিমার সাথে কথা বলার জন্য রিমার রুমের দিকে আসতেই শুনতে পেল রিমা ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে ।সাথে সাথে মাথাটা গরম হয়ে গেল সায়মনের ।সাথে সাথে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে বলল ,”কার সাথে কথা বলছিলি?”

রিমা সরল মনে উত্তর দিল বন্ধু ।সাইমন বলল ,”ছেলে বন্ধু?”

রিমা সায়মনের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কি সমস্যা তোর ?ছেলে হোক আর মেয়ে হোক দরকারেই তো ফোন দিয়েছে।”

“অনেক সমস্যা আমার ভুলে যাস না তোর জন্য বিয়ে করা ক্যানসেল করেছি আমি ।তাই বউয়ের সব দায়-দায়িত্ব তুই পালন করবি।”বলেই সায়মন রিমার বিছানায় গিয়ে চট করে শুয়ে পড়ল ।রিমা দাঁড়িয়েছিল ড্রেসিং টেবিলের সামনে ।চুল বাধছিলো।বলল ,”আরে আরে এখানে ঘুমাচ্ছো কেন যা নিজের রুমে যাও।”

সাইমন বলল ,”এই মুহূর্তে যাওয়ার মুড নেই ।মাথাটা ধরেছে খুব ।মাথায় একটু বিলি কে*টে দে চুলে তেল দিয়ে দে।”

“পারবো না আমি ।যাও তো নিজের রুমে যাও ।”বললো রিমা।

সাইমন অবাক হয়ে বলল ,”তোর ভাই তো ঠিকই আমার ছোট্ট বোনটাকে দিয়ে মাথায় তেল মালিশ করায়।তুই কেন আমার মাথায় তেল দিবি না ।আজকে এটা শোধ হবে তোর ভাই যেমন আমার বোনকে খাটায় তুই আমার এখন থেকে প্রতিদিন মাথায় তেল দিয়ে দিবি।”

“সাহস থাকে তো এই কথাটা ভাইকে গিয়ে বল ।ভুলে যেও না আমার ভাই তোমারও বড় ভাই।”বললো রিমা।

সায়মন আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল ,”এখানেই তো ঠেকে গিয়েছি ।চাইলেও কিছু বলার উপায় নেই ।বড় ভাই বলে কথা ।কিন্তু তোর উপরে তো শোধ তুলতে পারব ।এক্ষুনি আয় চুলে তেল দিয়ে দে না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে রিমা।”

“দিব না কি করবে ?”বললো রিমা।

সায়মন একবার তাকালো রিমার দিকে ।সাথে সাথে উঠেই রিমাকে হাত ধরে টেনে বিছানায় ফেলে বলল ,”সেদিনে শোধ টা আজকে নিব?”

রিমা ল*জ্জায় সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে রিমা ।এভাবে হুটহাট সাইমন রিমাকে ছুঁয়ে দিলে রিমা যেন ল*জ্জায় থতমত খেয়ে যায় আর কিছু বলতে পারেনা ।সাইমন তাকিয়ে রইল রিমার দিকে ।তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলল ,”তোকে এভাবে দেখে একটু ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে রিমা দিব অল্প একটু বেশি না?”

রিমা সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল ।সায়মন যেনো অনুমতি পেয়ে গেলো।রিমার হাত দুটো নিজের হাতে আঙুলের ভাজে ভাজে নিয়ে রিমার ঠোঁটে হালকা একটু পরশ দিল।

তারপর রিমার দিকে তাকালো ।তাকিয়ে বলল ,”আরেকটু দেই প্লিজ?”

বলে আর অনুমতির অপেক্ষা করলো না ।সাইমন রিমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিল ।পরম ভালোবাসার সাথে চু*মু খেতে লাগলো সাইমন।

এদিকে রাত 11:30 বাজে ।সাদাফ সব কাজকর্ম শেষ করে হোটেলে ঢুকেছে দশটায়।

হোটেলে এসেই কাপড়চোপড় চেঞ্জ করে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে মাত্র শুয়েছে ।তবে ঘুমায়নি সাদাফ ।জানে ঘুমানোর আগে নূর আরেকবার ফোন দিবে।

চলবে………….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply