সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি পর্ব ৫০
neela_rahman
পর্ব_৫০
রাত বাজে এগারোটা এখনো রুমে কেউ ঘুমায়নি। হুমায়ুর রহমান বিছানায় এদিক ওদিক করছিলেন ।নওরিন আফরোজ বিছানায় বসে বললেন ,”আপনাকে যে কয়েকদিন আগে একটা কথা বললাম কি চিন্তা ভাবনা করে দেখেছেন?”
হুমায়ুন রহমান বলল ,”কোন ব্যাপারে ?”
নওরিন আফরোজ বিরক্তি ভরা চোখে বলল ,”ন্যাকামি করবেন না ।আপনি ভালো করে জানেন কোন ব্যাপারে কথা বলছি আমি।”নীলা রহমান
হুমায়ূন রহমান একটু নড়েচড়ে উঠলেন তারপর বিছানায় উঠে বসলেন গম্ভীর চিন্তা মগ্ন অবস্থায় বললেন আচ্ছা সাদাফ নুর কে কেন চ*ড় মেরেছে তুমি বলতে পারবে?”
নরিন আফরোজ গম্ভীরভাবে উত্তর দিলেন ,”না তবে এতোটুকু জানি এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
যদি নাই হতো তাহলে নুর কেঁদে কেঁদে আপনাদের কাছে বিচার দিত নালিশ করত ।যেহেতু কোন নালিশ করেনি বিচার দেয়নি তার মানে এটা ওদের দুজনের ব্যক্তিগত ব্যাপার ওদের দুজনের মধ্যেই থাকতে দিন।
আর তাছাড়া আমি নূরের চোখে সাদাফের জন্য ভালোবাসা দেখতে পারি যা আপনারা পুরুষ হয়তো ওকে ছোট বাচ্চার নজরে দেখেন তাই বুঝতে পারেন না ।
নুর সাদাফকে অধিকার করে ।সব সময় অধিকার করে কথা বলে।
হয়তো খেয়াল করলে দেখবেন সাদাফ বিয়ের কথা বললে নূর কি রকম উত্তর দেয় ।কেমন রিয়েকশন দেখায় ।ও কিন্তু চায়না সাদাফ বিয়ে করুক।
আর আমার কেন যেন মনে হয় সাদাফ বারবার বলে পাত্রী নিজে এসে বিয়ের প্রস্তাব দেবে সেই পাত্রী আর কেউ না আপনার মেয়ে আদরের মেয়ে নূর।”
হুমায়ূন রহমান সবগুলো কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনলেন ।গত কয়েকদিনে নূরের আচরণ ওনার কাছেও অবাক লেগেছে তবে ফজলুরের সাথে কথা বলতে হবে ।নুরকে যতই আদর করুক যতই মেয়ে বলুক আসলে তো নূরের জন্মদাতা পিতা ফজলুর রহমান ।তাই ওর সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তারপর বিছানায় শুয়ে নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ঠিক আছে আমি আগামীকাল ফজলুরের সাথে কথা বলবো দেখি ও কি বলে ।”
নওরিন আফরোজ খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন ,”সত্যি বলবেন ?তবে আমি কিন্তু সামিহার সাথে কথা বলে ফেলেছি ।সামিহা কিন্তু সাদাফকে খুব পছন্দ করে মেয়ের জামাইয়ের মতই দেখে।”
হুমায়ূন রহমান অবাক হয়ে তাকালেন স্ত্রীর দিকে ।তারপর বললেন ,”তোমরা মহিলা মানুষ পারো ও বটে।যা আমরা চিন্তাভাবনাও করতে পারছি না তা নিয়ে তোমরা কথা বলে ফেলেছ অলরেডি। ঘুমাও এখন কাল কথা বলব ফজলুরের সাথে।”
বলে ঘুমিয়ে পড়ল হুমায়ূন রহমান ।সাথে সাথে বিছানায় শুয়ে পড়লো নওরিন আফরোজ। নীলা রহমান লেখিকা
এদিকে সামিহা বেগম অনেকক্ষণ ধরেই উসখুস করছে বিছানায় কিছু একটা বলার জন্য ।ফজলুর রহমান বুঝতে পারলেন ।কিছুক্ষণ পর বিরক্ত হয়ে বললেন,” কি বলবে বলে ফেলো না এমন উসখুস করছ কেন?”
সামিহা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন ,”বলছিলাম যে সাদাফ কে আপনার কেমন লাগে?
ভাতিজা হিসেবে ভালো লাগে সেটা আমি জানি আর আপনি এও জানেন সাদাফকে আমার খুব পছন্দ নূরের জন্য ।কিন্তু আপনার কেমন লাগে আপনার কথা তো কোনদিনও শুনলাম না?”
ফজলুর রহমান চিন্তায় পড়ে গেলেন ।সাদাফ সবদিক থেকেই ভালো কিন্তু গতকালকের ঘটনা উনি ভুলতে পারছেন না ।কেন নূরকে ঐরকম মে*রেছিল সাদাফ?নুর যদি অন্যায় করে থাকত তাহলে তাদের কাছে এসে নালিশ না করে ঐরকম নূরকে থা*প্পড় মেরেছে কেনো?তা না হয় বুঝলাম শাসন করতে পারে কিন্তু নিজের হাতের এই অবস্থা কেন করেছে কি এমন হয়েছে হঠাৎ করে তার চিন্তা ভাবনায় আসলো।
নুর বড্ড অবুঝ ভবিষ্যতে যদি কখনো সাদাফের সাথে ওর বিয়ে হয় নূর যদি কোন অন্যায় করে নুরকে শাসন করবে এভাবে ?নাকি নিজের উপরে এভাবে কোন ক্ষতি করে বসবে ?সাদাফের এমন রাগ আগে তো কখনো দেখেনি ফজলুর রহমান ।কি এমন ঘটনা ঘটেছে বারবার চিন্তায় আসছে ফজলুর রহমানের।
শত হলেও নূরের বাবা মেয়ের স্বার্থটাই যে সবার আগে দেখা তার ধর্ম।
তবে উনি এটা বুঝতে পারে নুর কোন কিছু লুকাচ্ছে ।নূর হয়তো অবচেতন মনেই সাদাফের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিন ধরেই সাদাফের বিয়ে করার কথা শোনার পর থেকেই নূরের আচরণ উনার কাছে যেন কেমন খাপ ছাড়া লাগছে ।তাই ভাবল আগে নূরের মনে কি চলছে সেটা উনি জানতে চায় বুঝতে চায় তারপর এসব নিয়ে কথা বলবে।
রিমা ঘুমোতে যাচ্ছিল এমন সময় মোবাইলে ফোনে রিংটোন দেখে ফোনটা হাতে নিল ।ঠোঁটে খেলে গেল একটু মুচকি হাসি ।ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখল কল দিয়েছে সাইমন।
দুই তিন রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন ধরে কিছু বলবে তার আগে ও পাশ থেকে সায়মন বলে উঠলো ,”আজকে তুই আমার রুমে বিছানাটা গুছিয়ে যাস নি কেন ?বিছানা এখনো ধুলোবালি আমি এসে দেখলাম এখনো ধুলোবালি ঘুমাবো কি করে এখন?”
রিমা বিরক্ত হল ফোন ধরেই কেন কাজের কথা বলতে হবে !
তারপর বলল ,”আজকে যাওয়া হয়নি দেখলেই তো ভাইয়ের কি অবস্থা সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম একটু ঝেড়েও তো নিতে পারো বিছানাটা?”
সাইমন বলল ,”ঠিক আছে আজকের জন্য তোকে মাফ করলাম ।আগামীকাল থেকে যেন এমন না হয় ।আমি যেন আমার রুমে এসে সবকিছু টিপটপ দেখি।
সকালে একটা প্রেজেন্টেশন আছে আমার কাপড়চোপড় রেডি করে গিয়েছিলি ?”
রিমা হাসলো ।হেসে বলল হ্যাঁ করেছি সায়মনের মনে একটু দুষ্ট বুদ্ধি আসলো ।তারপরে কিছুক্ষণ পর আমতা আমতা করে বলল ,”আমার আন্ডারওয়্যার রেডি করেছিস? না মানে সবগুলো ধুয়ে বারান্দা শুকিয়ে দিয়েছিলাম আলমারিতে নিয়ে গুছিয়ে রেখেছিস ?কোথায় রেখেছিস সকালবেলা খুজে পাব তো নাকি আবার তোকে এসে বের করে দিয়ে যেতে হবে?”
রিমা যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেল ।ও সত্যি সত্যি আন্ডারওয়্যার গুলো বারান্দা থেকে এনে আলমারিতে গুছিয়ে রেখেছে আর একটি কাল সকালে পড়বে সেটি প্যান্টের সাথে ভাজ করে রেখেছে ।আমতা আমতা করে বলল ,”যেখানে রাখার সেখানে রেখেছি প্যান্টের সাথে আর এখন থেকে এসব কাজ তুমি করে নিবে আমাকে বলবেনা।”
সাইমন মনে মনে হাসলো ।তারপর বলল ,”বলবো না মানে জীবনে বিয়ে করব না এত বড় একটা স্যাক্রিফাইস করে দিলাম কি নিজের আন্ডার ওয়ার নিজের গুছিয়ে রাখার জন্য ?এখন থেকে শুধু গুছিয়ে রাখবি না এসে রুমে ধুয়ে দিয়ে বারান্দায় শুকিয়ে তারপর গুছিয়ে রাখবি ।আমি এগুলো ধুতে পারবো না ।তোর জন্য বিয়ে করবো না সেক্রিফাইস করে দিয়েছি সারা জীবন ব্যাচেলার থাকবো তাহলে এসব কাজকর্ম এখন এখন থেকে তুই করবি ।বিয়ে করলে যা যা বউ করতো তার সবগুলো কাজ এখন থেকে তুই করবি। সব মানে সব।”
লজ্জায় যেন রিমার চোখ কান সব লাল হয়ে গেল ।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো রিমা ।মোবাইলটা কে*টে সাথে সাথে বুকে ফোনটি নিয়ে জোরে জোরে হাপাতে লাগলো ।যেন আরেকটু হলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে ।বাজে লোক ছি এত লজ্জা দিয়ে কথা বলে।মনে মনে ভাবলো রিমা।
সাইমন ফোনটি সামনে ধরে দেখল ফোন কেটে দিয়েছে ।মুচকি হাসলো হেসে চুপচাপ বিছানাটা ঝেরে ঘুমোতে চলে গেল।
এদিকে সাদাফের বুকের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে নুর। সাদাফের উষ্ণ স্পর্শে যেন নূরের মনের ভিতর উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মতো শুরু হয়ে গেছে ।বুকের উঠানামা সাদাফ স্পষ্ট নিজের শরীরে নিজের হাতে অনুভব করতে পারছে।
নূরের কাঁধে হালকা করে ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিয়ে বলল ,”তোকে বলেছিলাম না শাড়ি পরবি না ?যেদিন শাড়ি পরবি আমি নিজ হাতে খুলে দিব ।তাহলে তুই নিজে নিজে খুললি কেন ?এই শাড়ি খোলার অধিকার শুধু আমার।”
নূর সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে ফেলল লজ্জায়।সাদাফ পিছন থেকে নূরের দুই হাত সরিয়ে ধীরে ধীরে নূরকে দেয়ালের সাথে চে*পে দাঁড় করিয়ে পিঠে দুটো চু*মু খেলো।
তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলল ,”তুই আমাকে এত জ্বা*লাচ্ছিস কেন? যখন তখন এসে জ্বা*লাচ্ছিস।
চোখের সামনে থেকেও জ্বা*লাস চোখের আড়াল হলেও জা*লাস দিনে দুপুরে জ্বা*লাস রাতে ঘুমের ঘোরে ও জ্বা*লাস।
তোর দহনে পু*ড়তে পু*ড়তে যে আমি অ*ঙ্গার হয়ে গেলাম নূর সেটা কি তুই বুঝতে পারছিস?”
নূর দেয়ালের সাথে হাত চে*পে রাখা অবস্থায় বলল কাঁপতে কাঁপতে ,”আমি কি করে আপনাকে জালা*লাম ?এখন তাহলে চলে যাই? আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ আমার কেমন যেন লাগছে।”
তুই এভাবে হুটহাট আমার চোখে সামনে এসে আমাকে যে কষ্ট দিস সেটা কি বুঝতে পারিস? নূরের কানের কাছে গালে নাক ঘষতে ঘষতে কথাটি বলল সাদাফ।সাদাফের উষ্ণ ছোঁয়ায় নূর যেন পুড়ে যাচ্ছে ।ছাই হয়ে যাচ্ছে আর সহ্য করতে পারছে না মেয়েটি ।বলল ,”আমি চলে যাই তাহলে আপনার আর কষ্ট হবে না।”
সাদাফ ঘোড় লাগা কন্ঠে বলল ,”তুই যাওয়ার পরও কষ্ট হবে অনেক বেশি কষ্ট হবে ।”
নুর বলল ,”তাহলে আমি কি করবো? আর আমি চলে গেলেও কষ্ট হবে কেন?”
সাদাফ নুরের দিকে একটু হালকা আড় চোখে চাইল ।চেয়ে ফিসফিস করে বলল ,”তুই যাওয়ার পর প্রত্যেকবার আমার রাত দুপুরে গোসল করতে হয় এজন্য কষ্ট হবে।”
বোকা নুর সাথে সাথে প্রশ্ন করলো ,”কেন কোথাও কি ময়লা লেগেছে আমাকে বলেন আমি ধুয়ে দিচ্ছি এখনই।”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।এই মেয়েকে কি সব বলছিল এখন কি বুঝাচ্ছিল ? সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আমি এখন সত্যি বললে তুই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবি?”
চলবে…………
Neela Rahman
লজ্জা লাগে লিখতে। ধ্যাত আর লিখমুনা।
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫