#আড়ালে_তুমি |১৬| (বিয়ে স্পেশাল)
#সাইদা_মুন
ভার্সিটি থেকে ফিরে পিহু মেঘের নাম্বারে অনেকবার ট্রাই করেছে তবে বন্ধ দেখায়। লাস্টে সন্ধ্যার দিকে একবার কল দিতেই রিং হয়। তাই আবার কল দেয় সাথে সাথে কল ধরে,
-“হ্যালো মেঘ তুই ঠিক আছিস? মোবাইল বন্ধ ছিল কেনো?”
অপাশ থেকে অপরিচিত কেউ বলে,
-“আমি মেঘ না, রিমি। মেঘের ফোন আম্মু নিয়ে নিয়েছে তাই বন্ধ ছিল..”
-“ও, মেঘের কাছে একটু মোবাইল দেওয়া যাবে?”
-“কেনো..”
-“একটু কথা ছিলো”
-“যা বলার আমাকে বলো মেঘকে ফোন দেওয়া নিষেধ “
পিহু বেশ বুঝতে পারছে মেয়েটা হেব্বি শয়তান তাই বাধ্য হয়ে তাকেই প্রশ্ন করে,
-“মেঘ ক্লাসে আসবে কবে থেকে.. “
পিহুর কথায় মেয়েটি হাসতে শুরু করে, পিহু কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। মেয়েটি মজার ছলে বলে,
-“মেঘের আজ গায়ে হলুদ কাল বিয়ে। তারপর বুড়া জামাইর সেবা করতে করতেই জীবন যাবে। পড়ালেখা শেষ.. “
পিহু চমকে উঠে বিয়ে মানে কি,
-“কি বলছো মেঘের বিয়ে মানে… “
-“হ্যাঁ, ৪০ বছরের এক লোকের সাথে..”
পিহু অবাক হয়ে যায়,
-“তুমি কি মজা করছো? মেঘকে বাপের বয়সি লোকের সাথে বিয়ে দিবে নাকি “
রিমি কিছুটা ভেঙ্গ করে বলে,
-“হুঁ যেই আকাম করেছে তারপর এই বিয়ে যে করতে পারছে সেটাই তার কপাল..”
বলেই খট করে কল কেটে দেয়।
পিহু সিঁড়ি বেয়ে নামছিলো লাস্ট সিঁড়িতে হঠাৎ স্লিপ খেয়ে পড়ে যেতে নেয় তবে রুদ্র এদিকেই আসছিলো তাকে ধরে ফেলে,
-“দেখে চলতে পারিস না, হিরো আলমের কথা পড়ে ভাবলেও চলবে..”
ভাইয়ের কথায় পাত্তা না দিয়েই পিহু মন খারাপ করে বলে,
-“জানো ভাইয়া মেঘকে আর পড়তে দিবেনা, বিয়ে ও ঠিক করে ফেলেছে তাও এক ৪০ বছরের লোকের সাথে.. “
রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“সে রাজি বিয়েতে?”
-“কল করেছিলাম তার ছোট বোন তো বললো রাজি।”
রুদ্র মনে মনে আওড়ায় “নিশ্চয় টাকা আছে তাই রাজি”। রুদ্র বলে,
-“কবে..”
-“শুক্রবারেই বিয়ে… “
রুদ্র চমকে যায়,
-“কালকে?”
-“হ্যাঁ…”
রুদ্র হালকা হেসে চলে যেতে নেয় তবে কিছু একটা মাথায় আসতেই পিহুকে জিজ্ঞেস করে,
-“পিহু…”
-“হুম ভাইয়া…”
-“ওইদিন অফিসে যারা এসেছিল, তারা কি মেঘের আসল মা বাবা না?”
-“মা আসল তবে বাপ না। মেঘের বাবা সে ছোট থাকতে মারা যায়। আর কয়েকবছর পর মেঘের মা এই লোককে বিয়ে করেন।”
-“ওহহহ… আচ্ছা শোন তুই যে ফেইসপ্যাক ইউজ করিস আমাকেও একটি লাগিয়ে দিস তো। রুমে যাচ্ছি ফাস্ট আসবি”
পিহু অবাক হয়ে যায়,
-“ভাইয়াকে কি ভূতে ধরলো নাকি…”
.
.
.
.
অন্যদিকে মেঘের গায়ে হলুদ। যদিও অনুষ্ঠান করছে না, তবে ঘরোয়া ভাবে তাকে হলুদ দেওয়া হচ্ছে। হলুদ দেওয়া শেষ করে হাতে একটু মেহেদিও দিয়ে দেয়।
এদিকে মেঘ রোবট এর মতো যা করাচ্ছে তাই করছে, কিছুতে বাধা দিচ্ছে না। তার চোখ-মুখে না আছে খুশির ঝলক, না আছে কষ্ট। অনুভূতি শূন্য সে।
এসব শেষ হতেই মেঘকে রুমে পাঠিয়ে দেয় গোসলের জন্য। মেঘ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। নিজেকে দেখে সে নিজেই বলে উঠে,
-“বাহ হলুদ শাড়িতে তো বেশ মানিয়েছে তোকে মেঘ। বউ বউ লাগছে,”
পরক্ষণেই চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করে,
-“একটা মেয়ের বিয়ে স্বামী নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে। আমারও তো ছিলো, তবে এমনটা হলো কেনো। আমার দোষটা কী? মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া?”
গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় যায় মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-“দেখো তো আব্বু তোমার লিটল প্রিন্সেসকে বউ সাজে কেমন লাগছে। জানো আজ আমার গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে। আমি না ভেবে রেখেছি এই বাড়ি থেকে একবার বের হলে আর পা রাখবো না। আর ভবিষ্যতে আমি যদি মেয়ের মা হই, তাকে এত ভালোবাসা দিয়ে রাখবো যে সে সবাইকে বলবে মাই মাম্মাম ইজ দ্য বেস্ট মাম্মা। আমি যা কষ্ট সহ্য করেছি না তার তিল পরিমাণ ও তাকে পেতে দিবো না….”
এরকম একা একা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে আসে। গোসল সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখটা বন্ধ করতেই হঠাৎ রুদ্রের হাসিখুশি মুখটা ভেসে উঠে। সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে। বুকের মধ্যে ব্যথা শুরু হয়। সে বুঝছে না এমন কেনো হচ্ছে। সেভাবেই বাকি রাতটা কাটে তার।
সকাল থেকেই সিকদার বাড়িতে রান্নার তোড়জোড়। ১১টার দিকে দুজন পার্লারের মেয়ে এসে মেঘকে বরপক্ষ থেকে দেওয়া শাড়ি গহনা পড়িয়ে সাজিয়ে দেয়। পার্লারের মেয়েগুলো বলে,
-“মাশাল্লাহ, কী সুন্দর পুতুলের মতো লাগছে। তোমার বর দেখে তো পাগল হয়ে যাবে..”
মেঘ তাদের কথা শুনতেই তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে মুখে। তারা চলে যেতেই পিহু সুমনাদের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। মাঝে মাঝেই বলতো “মেঘ তর বিয়েতে আমি সুমনা রিক সেইম পড়বো আর ডান্স ও শিখে রাখছি”। হঠাৎ তাদের সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। তখনই মাহমুদা বেগম হাতে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে হাজির হয়। মেঘের পাশে বসে এক লুকমা ভাত তার মুখের সামনে ধরে।
মেঘ যেনো স্বপ্ন দেখছে, অবাক হয়ে তার মায়ের মুখের দিকে তাকায়। তিনি ইশারা করে মুখে নিতে, সেও হা করে খেয়ে নেয়,
-“একটু পরই পাত্রপক্ষ চলে আসবে আর ভালো মতো কিছু খেতে পারবি না তাই নিয়ে আসলাম।”
মেঘ যেনো অবাকের চরম সীমানায়। এটা কি কুরবানির আগের যত্ন? চোখ দিয়ে দু-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে তা মুছে নেয়। যেই উছিলায় হোক মায়ের হাতে তো খেতে পারছে। খাওয়া শেষে মেঘ বলে,
-“মা আমার মোবাইলটা একটু দিবা?”
সাথে সাথে তিনি রুক্ষ কণ্ঠে বলে,
-“কেনো, মোবাইলে কী। কোনো মোবাইল দেওয়া হবেনা বিয়ের পর যা ইচ্ছে।”
বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।
১টার দিকে পাত্রপক্ষ চলে আসে। এদিকে মেঘের ভেতরে ভেতরে ভয় আর খারাপ লাগা বাড়ছে। তার এখন ইচ্ছা করছে পালিয়ে যেতে। এতক্ষণ যা চিন্তা ছিলো সব বদলে যাচ্ছে সময় যত এগোচ্ছে। এমন বাবার বয়সি লোককে বিয়ে করবে মানতে পারছে না।
পাত্রপক্ষ থেকে ২০ জন এসেছে। কয়েকজন মহিলা এসে মেঘকে কয়েকবার করে দেখে গেছে। হঠাৎ দুটো মেয়ে এসে মেঘকে নতুন মা বলে সম্বোধন করে, সে চমকে তাকায়। ক্লাস টেনে পড়া একটি মেয়ে আরেকজন হয়তো ৬/৭ এ হবে। মেয়েগুলো বকবক করছিলো দেখে একটি মহিলা তাদের সেখান থেকে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর মেঘের ডাক পড়ে, নিতে আসেন মাহমুদা বেগম কাজি চলে এসেছে। মেঘের যেনো পা আটকে আছে সে হাঁটতেই পারছে না। বারবার ইচ্ছে করছে ছোটে কোথাও পালিয়ে যেতে। তবে এখন কিছুই করার নেই। মায়ের সাথে ধীরে ধীরে নেমে আসে। বরের রূপে সেই আধবুড়ো লোকের পাশে মেঘকে বসিয়ে দেয়। লোকটি দাঁত বের করে হাসছে পান খাওয়ার ফলে লাল লাল দাঁত স্পষ্ট। মেঘের গা গুলিয়ে ওঠে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়, নিজেকে একদম গুটিয়ে নেয়।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। রিমিকে পাঠায় কে আসলো দেখতে। সে দরজা খুলতেই থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে, সামনে সুদর্শন এক পুরুষ, ব্ল্যাক কোর্ট প্যান্ট পড়ে ফরমাল লুক। রিমি বড়সড় ক্রাশ খেয়ে বসে আছে, চোখ বড় বড় করে সামনে ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করছে। তা দেখে ছেলেটি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“দেখা শেষ হলে সামনে থেকে সরবেন?”
রিমির ঘোর কাটে, তবে কনফিউজড নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“আপনি কে?”
-“রুদ্র চৌধুরী…”
বলেই পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়ে পেছন পেছন রাহুল শান্ত সায়ানরাও প্রবেশ করে। সবার হাতেই কিছু না কিছুর ব্যাগ।
হঠাৎ এতোজনের আগমনে ড্রয়িং রুমের সবাই বিয়ে পড়ানো রেখে তাদের দিকে তাকিয়ে। মেঘও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, মনে মনে ভাবছে “উনি এখানে কী করছেন”।
রুদ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“রুমডেট করলে আমার সাথে আর বিয়ে করছো আরেকজনকে, দিস ইজ নট ফেয়ার জান”
মেঘ বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় রুদ্রের দিকে। কীসব বলছে সে। তবে এই কথাটি যেনো সেকেন্ড এর মধ্যে বোমার মতো ফেটে গেছে। সবাই চমকে ফুসুর ফুসুর করছে মেঘের চরিত্র নিয়ে।
মিজানুর সাহেব দ্রুত উঠে রুদ্রের সামনে গিয়ে বলে,
-“কীসব বলছো বাবা,”
-“আগে বসি তারপর বাদ বাকি বলছি”
বলেই মেঘের সামনে গিয়ে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“হেই আঙ্কেল অন্য জায়গায় গিয়ে বসেন…”
লোকটিকে আঙ্কেল বলায় মুখটা চুপসে যায়, চুপচাপ মেঘের পাশ থেকে উঠে পড়ে। আর রুদ্র ধপ করে বসে পড়ে মেঘের পাশে। সোফায় হাত ছড়িয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে। ছেলেপক্ষ থেকে একজন রেগে বলে উঠে,
-“মেয়ের চরিত্র যে এমন ফুলের মতো পবিত্র আগে বলেননি তো আমাদের?”
পাশ থেকে আরেকজন বলে,
-“ছি কী নষ্টা মেয়ে হলে তার বয়ফ্রেন্ড বিয়ের আসরে এসে এসব বলে..”
-“এমন মেয়ের কাছে আমাদের ছেলে বিয়ে দিবোনা, এই চলো চলো।”
এরকম কটাক্ষ করে কথা বলছে একের পর এক। বিয়ে ভেঙে দিতে চাচ্ছে, তা দেখে মাহমুদা বেগম সামলানোর চেষ্টা করছে। তবে শোনেনি কেউ কিছু, যা নয় তা অপমান করে চলে যায় তারা।
এদিকে মেঘ পাথর হয়ে বসে আছে। শান্ত সরে রুদ্রকে প্রশ্ন করে,
-“কেনো করলেন এমন?”
রুদ্র কোনো উত্তর দেয় না শুধু মুচকি হেসে একটা চোখ টিপ মারে। মাহমুদা বেগম তো রেগেমেগে তেড়ে আসেন রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“তোমার জন্য বিয়েটা ভেঙে গেলো..”
রুদ্র ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
-“তাহলে, আমি ফিক্সড করে দিচ্ছি..”
-“মানে?”
-“মানে সিম্পল আমি মেঘকে বিয়ে করবো”
মেঘ সহ রাহুল শান্ত সায়ান সবাই চমকে যায়। রাহুল ফট করে বলে উঠে,
-“তুই মেঘকে বিয়ে করবি মানে..? প্লান তো ছিলো জাস্ট বিয়ে ভাঙার..”
রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
-“এখন প্লান চেঞ্জ করলাম…”
বলেই সোফার পাশে রাখা কয়েকটা প্যাকেট বের করে মাহমুদা বেগমের হাতে ধরিয়ে দেয়,
-“নিন শাশুমা, আপনার মেয়েকে এগুলো পড়িয়ে দিন, অন্যের দেওয়া শস্তা কাপড়ে বউ তুলে নিতে পারবো না..”
মেঘ সাথে সাথে বলে উঠে,
-“আমি এই বিয়ে করবো না…এই আপনার মাথা ঠিক আছে?”
মাহমুদা বেগম রেগে মেঘকে থাপ্পড় মারে। বলতে লাগে,
-“নষ্টা মেয়ে নষ্টামি করতে পারো বিয়ে করতে পারবে না। আর কিভাবে আমাদের পরিবারের মাথা ছোট করবি? এক্ষনি বিদায় হবি এই বাড়ি থেকে”
বলেই তার হাত টেনে নিয়ে যায়। পিছু পিছু রিমিও যায়। ব্যাগ খুলতেই দেখতে পায় অনেক সুন্দর ব্রাইডাল লেহেঙ্গা, সাথে অনেক জুয়েলারি। তা দেখে রিমি অবাক হয়ে বলে,
-“মা কী দামী দামী জুয়েলারি, এই লেহেঙ্গার দাম ও অনেক।”
-“ছেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে বাপের টাকা আছে। বড় জায়গা দেখেই শরীর বিলিয়ে দিয়েছে এই মেয়ে। এমন মেয়ে যে আমার পেটে ধরেছিলাম আগে জানলে জন্মের পরে নুন খাইয়ে মেরে ফেলতাম।”
মায়ের মুখে এমন কথা শোনে মেঘ নিজেকে শক্ত করে রেখেছে, তাদের সামনে আর এক ফোঁটাও পানি ফেলবে না।
এদিকে রিমির মনে চলছে অন্য কাহিনী।
মেঘকে আবার রেডি করিয়ে আনে। নিচে নামতেই রুদ্র সেদিকে তাকাতেই একটুর জন্য থমকে যায়। লাল টুকটুকে বউ চোখ ফেরানো মুশকিল। তবে রাহুলের ডাকে ভাবনা থেকে বের হয়,
-“রুদ্র প্লিজ এই বিয়েটা করিস না,”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“হোয়াই?”
-“আমি তোকে সব খুলে বলবো তাও এই বিয়ে করিস না..”
রুদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগে মেঘকে এনে তার পাশে বসিয়ে দেয়। রুদ্র আর রাহুলের কথায় পাত্তা দেয় না। এদিকে কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। রাহুল অসহায় চোখে তাকিয়ে মেঘের দিকে। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, সে কি মেঘকে হারিয়ে ফেলছে। সে তো মেঘকে নিয়ে ছোট একটা সংসারও চিন্তা করে ফেলেছে তবে…
রুদ্র সাথে সাথে বলে ফেললেও মেঘ একটু লেট করে কবুল বলে। বিয়ে পড়ানোর পর কাজি বলে উঠে,
-“আলহামদুলিল্লাহ আজকে থেকে আপনারা ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী।”
সাথে সাথে রুদ্র উঠে দাঁড়ায় মাহমুদা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“কিছুক্ষণ আগে মেঘের উপর হাত তুলেছেন তখন কিছু বলিনি কারণ অধিকার ছিল না, তবে এবার আমার পুরো অধিকার আছে। নেক্সট টাইম আমার বউ এর গায়ে কেউ হাত তুললে তার হাত মোচড়ে দিতে একবারও ভাববো না।”
মাহমুদা বেগম থতমত খেয়ে যায়। রুদ্র আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে মেঘের হাত ধরে হাঁটা দেয়। লেহেঙ্গার জন্য হাঁটতেও পারছে না মেঘ, তা দেখে কিছু না বলেই কোলে তুলে নেয়। মেঘ হঠাৎ এমন কাজে পড়ে যাওয়ার ভয়ে গলা চেপে ধরে। মেঘকে এনে গাড়িতে বসিয়ে সেও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে আচমকা মেঘের দিকে রুদ্র ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে, মেঘ ভয়ে আরও পিছিয়ে যেতে গিয়ে একদম সিটের সাথে লেগে যায়। রুদ্র একদম তার সামনে, তাদের মাঝে ১ আঙুলের ব্যবধান হবে। মেঘ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে,
-“ক..কি কি করছেন..”
রুদ্র একপলক তার মুখের দিকে তাকিয়ে পাশ থেকে সিট বেল্টটা নিয়ে লাগিয়ে দিয়ে বলে,
-“তোমার মাইন্ড তো হেব্বি খারাপ, হোয়াটেভার আই এম নট ইন্টারেস্টেড অন ইউ..”
মেঘ কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। কিছুক্ষণ পর মেঘের নাক টানার শব্দে পাশে ফিরে তাকায়, দেখে মেয়েটি কাঁদছে তবে যথাসম্ভব শব্দ না করার চেষ্টা করছে। রুদ্র বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“যা প্ল্যান করেছিলে সেই অনুযায়ী তো হলো তাহলে আবার কাঁদছো কেনো?”
মেঘ কান্না থামিয়ে অবাক চোখে তাকায় রুদ্রের দিকে,
-“কিসের প্ল্যান?”
-“হাহ নাটক এখন কিছুই জানে না..”
বলেই গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দেয়। চৌধুরী বাড়িতে গাড়ি ঢুকতেই নেমে পড়ে, মেঘও নেমে আসে। তার হালকা হালকা ভয় হচ্ছে। রুদ্র এগিয়ে যায়, তার পিছু পিছু মেঘও। কলিং বেল বাজাতেই আসমা খালা দরজা খুলেন। রুদ্র আর তার পাশে বউ বেশে কাউকে দেখে সে চমকে যায়, জিজ্ঞেস করে,
-“রুদ্র বাবা এইডা কেডা..?”
রুদ্র ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
-“আমার বউ”
কথাটি শোনতেই মহিলা চিল্লিয়ে সবাইকে জড়ো করে ফেলে। রুদ্রের মা দ্রুত আসে,
-“কি সমস্যা আসমা, বাড়িতে কি ডাকাত পড়েছে এভাবে চেঁচাচ্ছিস..”
-“ম্যাডাম গো দেখেন, রুদ্র বাবায় বিয়া কইরা বউ আনছে..”
তার কথায় এবার সবাই দরজার দিকে তাকাতেই সবাই চমকে যায়। পিহু এসব চেঁচামেচি শোনে নিচে নেমে আসে, দরজার দিকে তাকাতেই সে নিজেও টাস্কি খেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে দৌড়ে যায়,
-“ভাইয়া মেঘ এখানে? মেঘের না আজ বিয়ে..”
-“হ্যা, বিয়ে করেছে..”
-“তো ও এখানে কি করছে, জামাইর বাড়ি থাকার কথা না?”
-“তো জামাইর বাড়িতেই তো এসেছে।”
এবার রুদ্রের মা বলে উঠে,
-“এটা তো পিহুর ফ্রেন্ড, তুমি কি মজা করছো রুদ্র?”
-“মা মজা করতে যাবো কেনো, আমি ওকে বিয়ে করেছি, বিয়ে করা বউ আমার”
তখন সামিয়া বলে উঠে,
-“রুদ্র ভাইয়া তুমি এমনটা করতে পারো না..”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। এদিকে মেঘ ভয়ে রুদ্রের পেছনে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে। নীরবতা ভেঙে রুদ্র বলে,
-“আমি কি করতে পারি না পারি তা আমি ভালো জানি। তা ভেতরে কি আসতে দিবা? পা ব্যথা হয়ে আছে..”
বলে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায় মেঘের হাত ধরে। এদিকে রুদ্রের মা বলে উঠে,
-“আমি এই বিয়ে মানি না..”
চলবে…….
[অনেক বড় করে দিলাম, কমেন্ট না করলে বিয়ে হবেনা গায়েজ।।।]
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE