উড়ালমেঘেরভেলায়
লেখনীতে— #ঝিলিক_মল্লিক
পর্ব_১২
[কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।]
“আভিয়ান।”
আভিয়ান রুমে ওর লাগেজ গোছগাছ করছিল। বিশেষত, ল্যাপটপটা সতর্কভাবে ঢুকিয়ে রাখছিল ল্যাপটপের ব্যাগে। তখনই পেছন থেকে চেনা-পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে ঘুরে তাকালো। দেখলো, দরজার সামনে হিয়া আর তাফসির দাঁড়িয়ে আছে। তাফসিরকে দেখে মৃদু হাসলো আভিয়ান। এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে করমর্দন করলো৷ তাফসির আর হিয়া ঘরের ভেতরে এগিয়ে গেল। হিয়া বললো, “আমাদের লাগেজ ড্রয়িংরুমে। আন্টির কাছে দিয়ে আসলাম। গাড়িতে তুলবেন নাকি।”
“হ্যাঁ।”
আভিয়ান ছোট্ট করে জবাব দিয়ে ল্যাপটপটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। তারপর হঠাৎ কী মনে করে তাফসিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “তোকে যেটা আনতে বলেছিলাম, সেটা এনেছিস?”
তাফসির এগিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে জবাব দিলো, “তুই রাত থেকে মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে ওটা নেওয়ার জন্য মনে করিয়ে দিয়ে মাথা খারাপ করে দিয়েছিস আমার। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিনি টেনশনে৷ আনবো না আবার? আলবাত এনেছি। জানি তো, ওই দরকারি জিনিসের কথা ভুলে গেলে তুই আমাকে সুরমা নদীতে ছুঁড়ে ফেলতিস।”
কথাটা বলেই তাফসির হাসতে হাসতে হিয়ার কাঁধে একটা চড় মেরে বসলো। হিয়া ব্যাথা পেল বেশ। বিরক্ত হয়ে তাফসিরের হাতের ওপরে একটা বা’রি মেরে বললো, “একটু আস্তে-ধীরে হাসো। তোমরা হাসি শুনে গাছে চুপচাপ বসে থাকা পাখিও উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। দেখো দেখো।”
তাফসির এবার চুপ হয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে হিয়াকে দেখতে লাগলো। হিয়া ওকে ম্যানিপুলেট করতে পেরেছে ভেবে হাসলো খুব। আভিয়ান তৈরি হয়েই আছে। বাইরে খুব শীত। একটা হোয়াইট শার্ট পড়ে তার ওপর ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট চড়িয়েছে। পরনে ফর্মাল ব্ল্যাক প্যান্ট। গলায় মাফলার ঝুলছিল। সেটাকে খুলে হাতে ধরলো। চোখে সানগ্লাসটা পড়ে লাগেজ নিয়ে বাইরে যেতে যেতে বললো, “মেসেজে যা বলেছিলাম, সব মনে রাখবে দু’টোতে। আর কনভারসেশন অল ডিলিট দাও গাড়িতে ওঠার আগে।”
আভিয়ানের কথা মোতাবেক অল-কনভারসেশন ডিলিট করে দিলো হিয়া ও তাফসির। এরপর ওর সাথে ড্রয়িংরুমে গেল।
সবাই তখন সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে তৈরি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে ছিল। রাতে ভালো ঘুম হয়নি একটারও। এজন্য ওরা সোফার ওপরেই একটা আরেকটার গায়ের ওপর ঢুলে পরছে ঘুমে। কাঁকন হাই তুলতে তুলতে ওর হাই পাওয়ারের চশমাটা খুলে চোখ ডলে পুনরায় চশমা পরে নিল। মাইশা আর আলিশা একজন আরেকজনের কাঁধের ওপর শুয়ে পরেছে। সামনেই ছোট মামি তাড়াহুড়ো করে খাবারের টিফিন বক্সগুলো ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন। জার্নিটা বেশ দীর্ঘ হবে। ছয় থেকে সাত ঘন্টার জার্নি। বাচ্চাদের নিশ্চয়ই পথে খিদে পাবে আর এরজন্য যথেষ্ট হাউকাউ করবে ওরা। ছোট মামি বড্ড খেয়ালি, ধৈর্যশীল এবং তাড়াহুড়োর মানুষ। মনে করে সব জিনিস নিচ্ছেন তিনি। ওদিকে ছোট খালামণি নাকি এখনো ঘুমাচ্ছেন। কাঁকন সেই সময় সোফা থেকে লাফিয়ে উঠে একটা পিঠা কেঁড়ে নিলো মায়ের হাত থেকে। ওর মা চিল্লাপাল্লা শুরু করলেন। রানিয়া আলিশার কাঁধে হাত ঠেকিয়ে বসে হাই তুলছিল আর ফোন স্ক্রল করছিল। মাত্রই ঘর থেকে তৈরি হয়ে এসেছে ওরা। হাঁটাচলা করলেও ঘুমের ভাবটা কোনোভাবেই কাটছে না। ও বসে বসে বোরিং হয়ে সবার কার্যক্রম দেখতে লাগলো। ছোট খালামণি উঠলে এবং শ্বশুর-শাশুড়ি তৈরি হলে পরেই সবাই বেরিয়ে পরবে।
ঘাড় ঘুরাতেই হঠাৎ রানিয়ার চোখ আঁটকে গেল ড্রয়িং রুমের পেছনের বারান্দার দরজার দিকে। আভিয়ান দাঁড়িয়ে আছে সামনে। তার ঠিক পাশেই দু’জন মানব-মানবী। অপরিচিত মানুষ। এদেরকে চেনে না রানিয়া। কখনও দেখেওনি এর আগে। বা এবাড়ির কারো কাছে শোনেওনি। পাশের মেয়েটার দিকে চোখ গেল রানিয়ার। একটা মেরুন রঙের লেডিস শার্ট আরেকটা ঢোলাঢোলা ব্যাগি জিন্স পরিহিত মেয়েটা। হাতে ওয়াচের সাথে কতগুলো ব্রেসলেট, দুই হাতে তিনটা করে রিং, গলায় একটা লকেট ঝুলছে। শার্টের গলার কাছের দু’টো বোতাম খোলা। রানিয়া ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখতে গিয়েই লজ্জা পেল। এই কি সেই মেয়ে? যার সাথে আভিয়ান আধঘন্টা আগেও কথা বলছিল! এরা কখন আসলো? রানিয়া তো দেখেনি ভেতরে আসতে। তারপর ওর মনে পরলো, ওরা তৈরি হওয়ার জন্য ভেতরের ঘরে ছিল। তখনই এসেছে নিশ্চয়ই। আভিয়ান এগিয়ে ড্রয়িংরুমের ভেতরে এসে আলিশাদের ডাক দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতে বললো, “ওরা হচ্ছে আমার কলিগ, ফ্লাইং অফিসার হিয়া খান এন্ড ফ্লাইট তাফসির হাসান। তাফসির, এরা হচ্ছে আমার কাজিন। আর ও—”
রানিয়ার দিকে আঙুল তাক করতেই রানিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আভিয়ানের দিকে। আভিয়ান রানিয়ার ওরকম চাহনি দেখে প্রথম থমকে গেলেও পুনরায় বললো, “ও আমার ওয়াইফ, রানিয়া মাহমুদা।”
হিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে বসলো রানিয়ার পাশে। তারপর ওর হাত টেনে ধরে বললো, “তুমি-ই রানিয়া? মাশাআল্লাহ, ভারী মিষ্টি মেয়ে তো। জানো, কত শুনেছি তোমার কথা। তোমাকে সামনাসামনি দেখার বড় ইচ্ছে ছিল আমার। আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। ফটোতে তো কতোবার দেখেছি। আভিয়ানের ফোনের ওয়ালপেপারেও দেখেছি বহুবার। কিন্তু বাস্তবে এই প্রথম।”
রানিয়া চমকের পর চমক পাচ্ছে। ফটোতে দেখেছে বহুবার, ওর কথা শুনেছে মেয়েটা অনেক, আবার আভিয়ানের ফোনের ওয়ালপেপার —• ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছে না ও। বরং অবাক হচ্ছে বেশি। মুখের সেই প্রতিক্রিয়া লুকানোর চেষ্টায় সৌজন্যতামূলক হাসি দিলো। হিয়া মেয়েটা ওর হাত ছাড়লো না। বরং, গাড়িতে ওঠার আগে পর্যন্ত ধরে রাখলো। রানিয়া আরেকটা বিষয় বেশ ভালোভাবে খেয়াল করেছে অগোচরে। হিয়া যখন ওকে এসব কথা বলছিল, তখন আভিয়ানের মুখটা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল। বেশ রেগে কটমট চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল ও। ওর ওই চাহনি দেখেই তো হিয়া চুপ হয়ে গেল। ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে লাগছে রানিয়ার। আভিয়ান কেন ওর কথা বলবে? আর ওর ফটোই বা কেন রাখবে? আর ওয়ালপেপারে ওর ফটো মানে? মেয়েটার মাথায় কি গন্ডগোল আছে নাকি? রানিয়া সন্দিহান হলো এটা ভেবে। কারণ, আভিয়ানকে যথেষ্ট ভালোভাবে চেনে ও। ওই লোক এই জীবনে কখনো ওর প্রতি আকৃষ্ট হবে না— এতোটুকু নিশ্চিত রানিয়া। আর হলেও বা ওর কি! এসব নিয়ে একদমই মাথা ঘামাতে চায় না ও। এই কয়েকদিনের মধ্যেই সময়-সুযোগ বুঝে আভিয়ানের কাছ থেকে ডিভোর্সটা চেয়ে নেবে ও। তবে বাচ্চার কথা ভুলেও জানতে দেবে না ডিভোর্সের আগে। জানলে আভিয়ান ডিভোর্সে বাঁধা না দিলেও ওর পরিবারের লোকজন নিশ্চয়ই দেবে। কারণ, একদিক থেকে দেখতে গেলে রানিয়া বর্তমানে বংশের বড় ছেলের বউ, এই বাড়ির একমাত্র বউ। তার পেটে এদের উত্তরাধিকার। তারা কোনোভাবেই ছাড়বে না। এটুকু তো রানিয়া অবগত আছে। আর এজন্যই বেশি ভয় ওর। শুধুমাত্র শ্বশুরবাড়ির স্বার্থের জন্য এবং তাদের মন জোগাতে একজন নিষ্ঠুর, একগুঁয়ে এবং জেদি বেপরোয়া স্বভাবের পুরুষ মানুষের সাথে নিজের সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়ে সেক্রিফাইস করতে রাজি নয় রানিয়া। অনেক মেয়েলোকের মতো “অ্যাডজাস্টমেন্ট মানেই হেরে যাওয়া নয় গো দিদিভাই”— এই উক্তিতে বিশ্বাসী নয় ও। তাছাড়াও ও শিক্ষিত মেয়ে। পড়াশোনা করছে। পড়াশোনা চালিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ঠিক নিজের সন্তানকে বড় করতে পারবে। এরজন্য ওর সন্তানের তার বাবার কাড়ি কাড়ি টাকার কোনো জরুরাত পরবে না। সন্তানকে সেই শিক্ষায় বড়ও করবে না রানিয়া।
ভাবনার জগতে ডুবে থাকার কারণে কখন যে সবাই গাড়িতে উঠে বসেছে, সেটা খেয়াল-ই করেনি রানিয়া। ওর সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, ওর ঠিক পাশের সিটেই আভিয়ান বসেছে। রানিয়া একবার আড়চোখে লোকটাকে দেখলো বিরক্তি সহকারে। অথচ তার কোনো পরোয়া-ই নেই। পানির বোতল বের করে পানি খাচ্ছে। ওরা একেবারে পেছনের ধাপের সিটে বসেছে। ওদের পাশে তখনও দু’টো সিট খালি ছিল। সেখানে বেশকিছু মালপত্র রাখা হয়েছে, যেগুলো অন্যখানে রাখার জায়গা হচ্ছিল না। সামনের সিটে বসেছে আলিশা, মাইশা এবং হিয়া। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে তাফসির। হিয়া মেয়েটা বেশ মিশুক। সবার সাথে ইতিমধ্যে বেশ ভালোই মিশে গেছে ও।
আরেকটা মাইক্রোবাসে বড়রা সবাই আছেন। তাদের সাথে কাঁকনও। তাদের মাইক্রোবাসটা আগে চলতে লাগলো। রানিয়াদেরটা পেছনে। ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়ে গেল।
.
.
মাইক্রোবাস তখনও ঢাকার রাস্তায় চলছে। ঢাকার বাইরে গিয়ে পৌঁছায়নি এখনো। হাইওয়ের মাঝখান থেকে ছুটে চলেছে।
আভিয়ানের প্রচন্ড মাথাব্যথা করছিল। ও মাথা চেপে ধরে নিচু হয়ে বসে ছিল। সিটের একপাশে পড়ে আছে সেলফোনটা। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ওর। রানিয়ার দৃষ্টি এতোক্ষণ বাইরে ছিল। রাস্তাটা দুইভাগের। মাঝখানের ব্যারিয়ারে সারি সারি বনসাই, রঙ্গনসহ হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো গাছ। কিছু লম্বা গাছও আছে। কিছুক্ষণ পরপর দেখা যাচ্ছে সেগুলো। গাছগুলোর নাম জানা নেই রানিয়ার। তবে ও এই পরিবেশ খুব ভালোভাবে উপভোগ করছে। এজন্যই এতোক্ষণ আভিয়ানের দিকে কোনো খেয়াল ছিল না ওর। এরমাঝে একবার অবশ্য তাকিয়েছিল। তখন দেখেছিল, লোকটা ফোনে সম্ভবত কোনো জরুরি কাজ করছিল।
অনেকক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় এবার ও জানালার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল, আভিয়ান সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে বসে আছে। আভিয়ানের কপাল কুঁচকে আছে। এক হাত কপালে রাখা। মুখ দেখে তেমন কিছু বোঝা যায় না। মুখের হাবভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া-ই নেই। রানিয়ার কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকলো।
“আভিয়ান।”
রানিয়া কিছু একটা মনে করে ধীর স্বরে আভিয়ানকে ডাক দিলো। ওর কন্ঠস্বর শুনে তৎক্ষনাৎ আভিয়ান চোখ মেলে তাকালো। তবে সিট থেকে মাথা তুললো না। আভিয়ানের চোখ লাল। ওই চোখ জোড়া রানিয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রানিয়া বিরবির করে প্রশ্ন করলো, “কিছু কী হয়েছে?”
“মাথাব্যাথা করছে। একটু ম্যাসাজ করে দিবে প্লিজ?”
আভিয়ানের সহজ-সরল স্বীকারোক্তি। এমনভাবে অনুরোধ করলো যে, রানিয়া না করতে পারলো না। এরমধ্যে অবশ্য একটা কারণও আছে আভিয়ানের অনুরোধ রাজি হওয়ার। রানিয়ার মনে সেই বের হওয়ার আগে থেকেই একটা ব্যাপার ঘটে চলেছে। অনবরত নাড়া দিচ্ছে ওর মনে। মস্তিষ্ক থেকে কোনোমতেই সেই ভাবনা শত চেষ্টা করেও ফেলতে পারছে না ও। অনবরত ঠোকরাচ্ছে যেন। বিষয়টা খতিয়ে না দেখা অবধি মন শান্ত হবে না। রানিয়া মাথা নেড়ে আভিয়ানকে বোঝালো, সে ওর মাথা ম্যাসাজ করে দেবে। ঘাড়ত্যাড়া মেয়েটা যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে, তা ভাবতেও পারেনি আভিয়ান। ভ্রু কুঁচকে একপলক তাকালো ওর দিকে। তবে দ্বিতীয়বার আর ভাবলো না। আচনক রানিয়ার কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পরলো। রানিয়া একটু চমকে কেঁপে উঠলেও পরমুহূর্তে স্বাভাবিক হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত আভিয়ানের চুল টেনে দিতে লাগলো, আবার কতক্ষণ পরপর কপালও ম্যাসাজ করে দিলো। আভিয়ান চোখ বুঁজে উপভোগ করতে লাগলো। হঠাৎ রানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, “তুমি তো বেশ এক্সপার্ট। এর আগে কাউকে এভাবে ট্রিটমেন্ট দিয়েছো নাকি?”
এই প্রশ্ন শুনে রানিয়ার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে লাগলো যেন। ওর মন চাইলো, এই হাত দিয়েই আভিয়ানের গলা টিপে ধরতে। ও তাঁরস্বরে আভিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আপনি তো সেই রকমের টক্সিক! রেড ফ্ল্যাগ একটা। নাহ, পুরোপুরি একটা রেড ফরেস্ট।”
“কেন? তুমি কি আমাকে গ্রিন ফ্ল্যাগ ভেবেছিলে নাকি? ভেরি ব্যাড জানেমান। আমাকে গ্রিন ফ্ল্যাগ ভেবে ভুল কোরো না। তোমার কথায় ওই টক্সিক, রেড ফরেস্ট ব্লাব্লাব্লা — এসবই বেটার আছে।”
আভিয়ানের ঠোঁটের কোণে লেপ্টে আছে মৃদু হাসি।
রানিয়ার রীতিমতো মেজাজ খারাপ হলো এই লোকের শরীরে পেট্রোল ঢেলে দেওয়ার মতো ঝাঁঝালো কথাবার্তা শুনে। তবে তার সাথে মুখে মুখে তর্ক করা মানেই হেরে যাওয়া। ও এতোদিনে এটা তো বুঝে গেছে, ও যতোটা না জেদি ; তার চাইতে শতগুণ বেশি জেদি আহমেদ আভিয়ান। পুরুষ মানুষেরও যে এমন জেদ থাকতে পারে, তা এর আগে কখনো দেখেনি ও। আভিয়ানকে দেখে এজন্যই মাঝেমধ্যে খুব বেশি অবাক হয় ও। মুখের জোর বেকার বলেই এবার হাতের জোর বাড়িয়ে দিলো রানিয়া৷ আভিয়ানের চুল জোরে জোরে টানতে লাগলো। আভিয়ান ব্যাথা পেল অনেক। বিরক্তি সহকারে ধমকে বললো, “উফ আস্তে টানো! ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
রানিয়া ধমক খেয়ে এবার আস্তে আস্তে টানতে লাগলো। হঠাৎ একটা বিষয় ভেবে ও আশ্চর্য হলো, ওর কোলের ওপরে রাখা আভিয়ানের মাথাটা অজান্তেই ওর পেটের ঠিক সেই জায়গাটায় স্পর্শ করছে, যেখানে ওর বাচ্চা অবস্থান করছে। রানিয়ার হঠাৎ কেমন যেন অনুভূতি হলো। শিউরে উঠলো ও। উপলব্ধি করলো, ওর গলায় কান্নারা এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। আওয়াজ বের হচ্ছে না কোনো। যেন বোবা হয়ে গেছে ও। তখনই আভিয়ানের গলা শোনা গেল। আভিয়ান ওকে উদ্দেশ্যে করে বললো, “আমি একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছি। ঘন্টাখানেক পরে ডাক দিও তো। আর একটা কথা, নড়াচড়া করা হয় না যেন। আমার ঘুমে ডিস্টার্ব হলে তোমার রাতের ঘুম হারাম করে ছাড়বো।”
রানিয়া মুখ ভেংচি দিলো। তবে মনে মনে খুশিও হলো খুব। এই-ই তো সুবর্ণ সুযোগ। ওইযে আভিয়ানের সেলফোনটা দেখা যাচ্ছে, ওর হাতের মুঠোয় আলগা হয়ে আছে।
.
.
আধাঘন্টা কেটে গেছে। আভিয়ান নিশ্চয়ই এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পরেছে। রানিয়া এতোটা সময় অপেক্ষা করছিল, লোকটা একটু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেই তার ফোনটা হাতে নেওয়ার। সামনে বসা আলিশা, মাইশা আর হিয়া সেই যাত্রার শুরু হতেই নিজেদের মধ্যে গল্প-আড্ডায় ব্যস্ত। পেছনে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে ওদের কোনো খেয়াল নেই। তাফসির তো ফোনে গেইম খেলছে বোধহয়। রানিয়া একবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলো সামনে। এরপর আরেকবার আভিয়ানের মুখের দিকে তাকালো। লোকটা কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে! ঘুমিয়ে থাকলে তাকে কতোটা শান্ত-শিষ্ট আর নিষ্পাপ মনে হয়। এখন এই লোককে দেখে কে বলবে, সে এতোবড় রেড ফ্ল্যাগ! রানিয়ার অজান্তোই মৃদু হাসি পেল। ওর হঠাৎ কাজের কথা মনে পরলো। এবার তড়িঘড়ি করে দ্রুত আভিয়ানের ফোনটা আস্তে-ধীরে ওর হাতের মুঠো থেকে নিয়ে নিলো। মুঠো আলগা থাকায় নিতে কোনো অসুবিধা হলো না। রানিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করে দেখলো, পিন এবং ফিঙ্গার লক সিস্টেম রয়েছে খোলার জন্য। পিন তো জানা নেই রানিয়ার। ফিঙ্গারের কথা খেয়াল আসতেই ওর মনে পরলো, কিছুক্ষণ আগেই তো আভিয়ানকে ডান হাতের শাহাদাত আঙুল দ্বারা ফিঙ্গার লক খুলতে দেখেছে। রানিয়া সুবর্ণ সুযোগ পেল যেন! ও আভিয়ানের হাত টেনে নিয়ে আভিয়ানের আঙুল দিয়ে ফিঙ্গার লক খুললো। লক স্ক্রিনে ওয়ালপেপারে ওর ফটো নেই। হোম স্ক্রিনেও নেই৷ রানিয়া হতাশ হলো। তাহলে কি হিয়া মিথ্যা বললো? এবার ওর গ্যালারির কথা মনে পরলো হঠাৎ। সেখানে হয়তো কিছু পেতে পারে। গ্যালারিতে ট্যাপ করতেই দেখলো, সেখানেও লক দেওয়া। ও এবার গ্যালারির লক খোলার জন্য আভিয়ানের হাত টেনে ধরে আঙুলটা ধরতেই আচনক খেয়াল করলো, আভিয়ানের চোখ খোলা। চোখ দু’টো লাল বর্ণ ধারণ করে আছে৷ ঘুমানোর জন্য নাকি অন্য কোনো কারণে তা জানে না রানিয়া। আভিয়ানের চোখজোড়া রানিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। ওই চোখে চোখ পরতেই ঘাবড়ে গেল রানিয়া। শুকনো ঢোক গিললো একটা। আভিয়ান ওকে আরো বেশি ভয় পাইয়ে দিয়ে তড়াক করে উঠে বসলো। রানিয়ার শরীর একইসাথে ঠান্ডা হয়ে গেল আবার ঘামতেও শুরু করলো। ও দ্রুত হাতটা সরিয়ে নিতে যাবে তার আগেই আভিয়ানের ফোনটা ওর হাত থেকে সিটের ওপরে গিয়ে পরলো। আভিয়ান সেটা দেখলো। রানিয়া ওর দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, আভিয়ানের লালবর্ণ ধারণ করা চোখ দু’টো ওর দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রানিয়া আমতাআমতা করে বলার চেষ্টা করলো, “আভিয়ান আসলে—”
আভিয়ান ওকে কোনো কথা বলতে দিলো না। ওর ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে থামিয়ে দিলো।
চলবে
🔹 বিভিন্ন কারণে মন-মেজাজ খারাপ, ক্লান্তি — সবকিছু নিয়ে বেশ ভালোই বড় পর্ব দিয়েছি৷ আজকে রেসপন্স না করলে সবকটার খবর আছে কিন্তু, হুহ!
🔹নিচের এই পেইজে আমার লেখা সকল গল্পের লিংক দু-একদিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন।
Share On:
TAGS: উড়াল মেঘের ভেলায়, ঝিলিক মল্লিক
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৮
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৫
-
উড়াল মেঘের ভেলায় গল্পের লিংক
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৪
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৬
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ১১
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৩
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ৭
-
উড়াল মেঘের ভেলায় পর্ব ২