প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব১০
ওয়াশ রুম থেকে উল্টো টি শার্ট আর কোমড়ে টাওয়েল পেঁচিয়ে বেড়িয়েছে তাজ। তাজকে এই অবস্থায় দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো মৌমিতা। তাজ ঢুলু ঢুলু পায়ে মৌমিতার সামনে এসে দাঁড়ালো। মৌমিতা নিজের হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে বলল – এই কি অবস্থায় আপনি রুমে এসেছেন? প্যান্ট কোথায়?
তাজ ঠোঁট উল্টে দিল, কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল – প্যান্ট বাথটাবে পড়ে ভিজে গেছে তো।
মৌমিতা চোখ চেপে ওয়ার ড্রপ হাতরে একটা ট্রাউজার বের করে তাজের হাতে ধরিয়ে দিল।
- দ্রুত পড়ে নিন।
তাজ মৌমিতার সামনেই ট্রাউজার পড়া শুরু করল। চেঁচিয়ে উঠলো মৌমিতা ঠেলেঠুলে ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দিল। এক রাতেই পাগল করে দিবে এই লোক। মৌমিতা জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কিচেনে গেল কিছু রান্না করার উদ্দেশ্যে। তাজকে তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিতে হবে। জ্বরটা আরও বেড়েছে। গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
খাবার দেখেই নাক মুখ কুঁচকে রেখেছে তাজ। এক ঠোঁট দিয়ে অন্য ঠোঁট চেপে রেখেছে সে কিছুতেই খাবে না। মৌমিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই লোকের থেকে একটা বাচ্চা পালন করাও মনে হয় সহজ, এটা তো একটা বুড়ো দামড়া বাচ্চা। জ্বর না এলে বোঝাই যেত না এই বুড়ো দামড়া মানুষটার মধ্যেও একটা বাচ্চা লুকিয়ে আছে।
মৌমিতা আদুরে কন্ঠে বলল – খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হবে তো না হলে আপনি সুস্থ কি করে হবেন?
- না আমি খাব না। কিছুতেই খাব না। এই দেখো আমার পেট একদম ভর্তি বলেই পেটের উপর থেকে টি শার্টটা সরিয়ে পেট দেখালো মৌমিতাকে। মৌমিতা লাফিয়ে উঠলো। চেঁচিয়ে বলল – লজ্জা করছে না একটা মেয়েকে এভাবে নিজের ফর্সা পেট দেখাচ্ছেন?
- তোমার পেট বুঝি ফর্সা না, আমার পেট দেখে হিংসা হচ্ছে।
বিরক্ত হলো মৌমিতা। এই লোকের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। জ্বরে এই লোকের মাথার তার ছিঁড়ে গেছে। রিনরিনিয়ে বলল – আপনি না খেলে আমি এখনই বাসায় চলে যাব।
মেকি হাসলো তাজ, খাবারটা হাতে নিয়ে বলল – কে বলল খাবো না, এখনই খেয়ে নিচ্ছি। তুমি প্লিজ আমার কাছেই থাকো।
হাত কাঁপছে তাজের। খেতে পারছে না। মায়া হলো মৌমিতার। এগিয়ে গিয়ে তাজের হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিল, বলল – দেখি হা করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
বাধ্য ছেলের মতো হা করলো তাজ। মৌমিতাও সযত্মে তাকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে শরীরে কাঁথা টেনে দিয়ে শুইয়ে দিল তাকে । তাজ টেনে ধরলো মৌমিতার হাত, করুন কন্ঠে বলল – আমার কাছে থাকো না আমার ভয় লাগছে।
মৌমিতা মুচকি হাসলো, তাজের পাশে বসলো। বলল – কোথাও যাচ্ছি না আমি , আপনার পাশেই আছি।
তাজ উঠে চট করে মৌমিতার গালে একটা চু’মু খেল। মৌমিতা হতবাক, কি হলো এটা? তাজ ওকে চু’মু খেয়েছে? গোল গোল চোখে তাজের দিকে তাকালো মৌমিতা। তাজ নিজের গালটাও এগিয়ে দিল। হাসিমুখে বলল – আমাকে একটা দেও।
মৌমিতা আরেক দফায় চমকে উঠলো। তাজ ওকে চু’মু দিতে বলছে? মৌমিতা ভরকে গেল। আমতা আমতা করে বলল – আআআমি আপনাকে চু’মু দেব না।
তাজ গাল ফুলিয়ে বলল – তুমি আমাকে গুড নাইট পাপ্পি না দিলে আমি ঘুমাবো না।
সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো মৌমিতা। এটা তাহলে গুড নাইট পাপ্পি ছিল। ও তো ভুলেই গিয়েছিল জ্বর এসে এই লোক বাচ্চা হয়ে গেছে। একজন বাচ্চার কাছে গুড নাইট পাপ্পি স্বভাবিক। না চাইতেও তাজের গালে ঠোঁট ছোঁয়াতে হলো মৌমিতাকে। লজ্জায় মৌমিতার গাল দুটো লাল বর্ন ধারন করেছে। তাজ দুই হাত দিয়ে মৌমিতার গাল টিপে ধরেছে, গালের দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলল – তোমার গালে কিসে কামড় দিয়েছে লাল হয়ে আছে কেন?
মৌমিতা উত্তর দিল না, তাজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল – আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।
( মাঝরাত )
নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। বিছানার পাশের টেবিলটায় টেবিল ল্যাম্পটা টিপটিপিয়ে জ্বলছে। জঙ্গলে ঘেরা চারপাশ। দূরে দূরে শিয়াল ডাকছে। তাজের শিয়রে গুটিসুটি মেরে বসে আছে মৌমিতা। কেমন ভয় ভয় লাগছে তার। শিয়ালের ডাকগুলো হৃদয়ে ভয়ের সৃষ্টি করছে। হঠাৎ তাজ মৌমিতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। ছেলেটার জ্বর বেড়েছে, শীতে কাঁপছে। মৌমিতা সাবধানে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল তাজের বন্ধন থেকে। গায়ে কম্বল পেঁচিয়ে দিল। উঠে গিয়ে একটা বাটিতে পানি আর কাপড় নিয়ে এলো। তাজের শিয়রে বসে জল পট্টি দিতে শুরু করলো তাজের মাথায়। বারবার শরীরে হাত দিয়ে দেখছে তাজের জ্বরটা কমেছে কিনা। ছেলেটার এই অবস্থা মোটেই সহ্য হচ্ছে না মৌমিতার। কলিজাটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নিশ্চই ছেলেটার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই মুহূর্তে ভয়ংকর কিছু করার ইচ্ছে জাগছে। জাগুগ না , কেউ তো দেখছে না। কখনও কখনও নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে নেই। হয়তো এমন সময় , এমন দিন আর ফিরে নাও আসতে পারে। তখন আক্ষেপ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। মৌমিতা নিজের ঠোঁট দুটো এগিয়ে তাজের ললাটে গভীর এক চুম্বন করে বসলো। মাথা রাখলো তাজের বক্ষে। দুই হাত দিয়ে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জামালো।
রাতের আঁধার কেটে সূর্য উঁকি দিয়েছে। পাখিরা কিচিরমিচির কলধ্বনিতে ভোরের জানান দিচ্ছে। বাইরে ডালপালা ভেঙে পড়ে আছে। এসবই গতকালকের কাল বৈশাখীর তান্ডবের ফলাফল। তবে আকাশটা এখন বেশ পরিষ্কার। পরিষ্কার আকাশ সূর্যটা যেন জ্বলমল করে হেসে উঠছে।
ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাসের অনুভুতিতে ঘুম ভাঙলো তাজের। জ্বরটা এখন আর নেই। কাল সারারাত মৌমিতার সেবায় জ্বরটা ছেড়ে পালিয়েছে। পিটপিট করে চোখ খুলে পাশে তাকালো তাজ। সাথে সাথেই চমকে উঠলো, ভুল দেখছে না তো। মৌমিতা এখানে আসবে কোথা থেকে তাও ওর এত কাছে? চোখ দুটো আবার তাকালো হ্যা মৌমিতাই তো ওর সাথে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। লাফিয়ে উঠলো তাজ। তাজের লাফানোতে মৌমিতার ঘুমও ভেঙে গেল । ধপ করে চোখ দুটো খুলে ফেলল। তাজ আমতা আমতা করে বলল – ততততুমি এখানে?
- কাল সারারাত আমাকে গাধার মতো খাটিয়ে এখন এখানে অন্য কাউকে আশা করছিলেন বুঝি?
তাজ অবাক হয়ে বলল – কাল সারারাত মানে?
মৌমিতা কিছু বলল না। ঢুলু ঢুলু পায়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলো। তাজ ফ্যালফ্যাল করে মৌমিতার দিকে তাকিয়ে আছে। কাল সারারাত মানে কি? কাল রাতে কি হয়েছে? কিছুই মনে পড়ছে না তাজের। কাল সারারাত কি মৌমিতা এখানে তাদের সাথেই ছিল? হয়তো না হলে এত সকালে এখানে কিভাবে এলো। ভাবতে ভাবতে টেবিলে চোখ পড়লো তাজের। টেবিলে পানি আর কাপড় রাখা সাথে থার্মোমিটার। এগুলো এখানে কেন? ওর কি কাল জ্বর এসেছিল?
সকালের নাস্তা খাইয়ে বেড়িয়ে পড়েছে মৌমিতা এখন বাসায় ফিরতে হবে তারপর আবার কলেজ। তাজ এখন বেশ সুস্থ তবুও খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে তবেই বাসায় ফিরেছে মৌমিতা।
কলেজে ঢুকতেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তাজ। কিছুক্ষণ উসখুশ করে বলল – ধন্যবাদ কাল সারারাত আমার খেয়াল রাখার জন্য।
- ধন্যবাদের আশায় আমি কিছুই করিনি।
- তবুও একটা ধন্যবাদ তোমার প্রাপ্প।
মুচকি হাসলো মৌমিতা, ঠোঁটে হাসির রেশ টেনেই বলল – ধন্যবাদের থেকে বড় কিছু কাল রাতে আমি পেয়ে গেছি।
চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাজ জিজ্ঞেস করল – মানে?
মৌমিতা হাঁটতে হাঁটতে বলল – কালকে রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করুন তাহলেই পেয়ে যাবেন।
তাজ তো সেই সকাল থেকেই কালকে রাতে কি হয়েছে সবটা মনে করার কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না। ও মৌমিতার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎ বৃষ্টি নেমেছিল তারপর ও ভিজছিলো তারপর কি হয়েছে? আর কিছু মনে নেই। কেন মনে নেই? মৌমিতাকে সকাল থেকে অনেকবারই জিজ্ঞেস করেছে কাল রাতের সম্পর্কে সে শুধু বলেছে জ্বর এসেছিল আর বাকিটা তাকে নিজে নিজে মনে করে নিতে বলেছে।
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে তাজ অপেক্ষা মৌমিতার। ইদানিং মৌমিতাকে চোখে হারায় সে। মেয়েটার প্রতি বড্ড টান জন্মে গেছে তার। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে। নিজের অনিশ্চিত জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণই অবগত সে। কিন্তু মন যে মানতে চায় না। মনটা যে বড্ড অদ্ভুত নিজের খেয়ে নিজের পড়ে অন্যকে নিয়ে চিন্তা করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাজ, মৌমিতা এখনও আসছে না। নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা একবার দেখে নিল। একটু পরই কলেজ শুরু হবে এখনও মৌমিতা আসেনি তাহলে আজ কি আসবে না?
একবার কল করবে মৌমিতাকে ? মৌমিতার নাম্বারটা অনেক আগেই নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিল তাজ কিন্তু কখনও কল দেওয়া হয়নি। নাহ একটা কল দিয়েই দেখা যাক কলেজে কেন আসেনি আজ। হতে পারে অসুস্থ। আর না ভেবে কল লাগালো মৌমিতার নাম্বারে। প্রথমবার কলটা রিসিভ করলো না কেউ। ভ্রু কুঁচকে এলো তাজের আবার কল লাগালো মৌমিতাকে। একটু রিং হতেই কলটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে মিষ্টি স্বরে বলল – হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম, কে বলছেন?
চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২